মনের গহিনে পর্ব-১০

0
345

#মনের_গহিনে (১০)
Sarika Islam(mim)

ভিড়ের মাঝে বের হতে নিলেই গেটের কাছাকাছি এসে পরে যেতে নিলাম।এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত আমার কোমর পেচিয়ে ধরলো।আমাকে পরে যাওয়া থেকে বাচালো।ধরে থাকা ছেলেটিকে দেখে এক গাল হাসলাম সেও পুনরায় হাসি ফেরত দিল।
আমাকে দার করালো আমি ইমা আর রনি গেটের সাইডে দাড়ালাম।রনি হাসি রেখেই বলল,
-কোথায় ছিলে এই কয়দিন?দেখাই পাই না তোমার?

আমি হাল্ক হাসলাম রনির কথায়।বেচারা জানেই না আমার বিয়ে হয়ে গেছে জানলে কি করবে কি রিয়েকশন দিবে সেটা ভেবে আমি প্রথম থেকেই হেসে যাচ্ছি।
-আসলে বিয়ে হয়ে গেছে তাই আসতে পারিনি।

যা ভেবেছিলাম তার থেকেও ভয়ংকর ছিল রনির রিয়েকশন।চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে যেন এক্ষুনি চোখ খুলে যাবে।কিছুটা অভিমানী কন্ঠে বলল,
-আমাকে বললে ও না?
-আরে কি আর বলবো হুটহাট হয়ে গিয়েছিল।

আর কিছু বলবো পেছন থেকে জোরে জোরে হর্ন বাজাচ্ছে।বিরক্তি মুখে পিছে ফিরে তাকালাম মাথায় হেলমেট পরে বাইকে একটা ছেলে বসে জোরে জোরে হর্ন বাজিয়েই চলছে।আমরা রাস্তার সামনে থেকে কিছুটা সরে দাড়ালাম।বাইক মালিক আমাদের সামনে এসেই থামালো আর একটু হলে তো গায়েই পরে যেত।প্রচন্ড রাগ হলো এই বাইক ওয়ালারা ভাবে কি হ্যা?সমস্ত রাস্তা নিজেদের নাম করে নিয়েছে নাকি?লোকটির সামনে গিয়ে আংগুল তুলে বললাম,
-সাইডে রাস্তা কি চোখে পরে না?গায়ের উপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে?

কোন উওর করলো না হেলমেট ও খুলল না।আমার মিজাজ আর বিগড়ে গেল।ভেবেছিটাকি হ্যা?এক্ষুনি ধোলাই করছি ওর।
-বলুন?পুলিশ ডেকে একদম জেলের ভাত খাওয়াবো রাস্তাকি নিজের বাবার মনে করে চালান একদম গায়ের উপর উঠিয়ে দিবেন?

লোকটি হাত দুটো উচু করে বলল,
-ওয়েট ওয়েট,

হেলমেট খুলল।হেলমেটের ভিতরে থাকা ব্যাক্তিকে দেখে আমি পুরো হা হয়ে গেলাম।লজ্জায় শরমে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।ইফতি ভাইয়া!!আমি এতক্ষন তাকে এতকিছু বলে দিলাম?আই কান্ট বিলিভ।সব সময় কিছু বলার আগে ভাবা উচিত ধুররর।
লজ্জাজনক মুখশ্রী নিয়ে ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-সরি ভাইয়া ভেবেছিলাম অন্য কেউ।

ইফতি বরই অবাক হলো ফারাহর এমন কথাবার্তা শুনে বাড়িতে একদম লক্ষি বউ যেন একটা কথাও যানে না আর এইখানে?আল্লাহ আল্লাহ।ইফতি হেসে বলল,
-বাহ তুমি এত্ত কথাও বলতে পারো?কি সুন্দর করেই না থ্রেট দিলে আমায়।

আমি আমার কথা কাজে লজ্জিত হলাম সব কিছুই না ভেবে চিন্তা করে ঠুস করেই করে বসি।তারপর সেটার ফল ভোগ করতে হয় ধ্যাৎ এখন সে কি ভাববে আমার সম্পর্কে!!
-নাহ,,আসলে,,,

পেছন থেকে রনি আর ইমা এগিয়ে এলো তাদের কাছে।ইমা ইফতির দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে খুটিয়ে খুটিয়ে ইফতিকে দেখেই যাচ্ছে।সাদা গালে খোচাখোচা দাড়ি,চুলগুলো সেট করে কাটা বেশি বড়ও না বেশি ছোটও না,ঠোঁট গুলো গোলাপি গোলাপি।লাভ এট ফাস্ট সাইড হলো ইমার একদম পুরোপুরি ক্রাশে জরজরিত।

রনি হুট করেই আমার কাধে হাত রাখলো।আমাকে বিদায় জানালো একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে।আমি বুঝলাম না এইভাবে কেন বিদায় দিল?কখনো তো এইভাবে করে না তাহলে আজ?ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কেমন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।আবার রনির যাওয়ার দিকেও আমি প্রশংগ ঘুড়িয়ে অন্য কথায় গেলাম।
-ভাইয়া আমার ফ্রেন্ড ইমা।একদম চাইল্ডহুড ফ্রেন্ড।

ইফতি এক গাল হাসলো।ইমার সাথে হেন্ডশেক করলো।ইমা ইফতির হাত ধরেই রেখেছে ছাড়ার নামই নেই।ফারাহ ইফতির দিকে তাকিয়ে আলগা একটা হাসি দিয়ে ইমার দিকে ফিরলো।তাকে হাল্কা ধা*ক্কা দিতেই ছেড়ে দিল।ইফতি মুচকি হাসলো।ফারাহ বলল,
-ওহহ জিজ্ঞেস করাই হলো না আপনি এইখানে?

ইফতিও বলল,
-ওহহ হ্যা বলাই হলো না।আসলে এই সাইড দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম তোমাকে দেখে আটকে গেলাম।
-ওহহ।
-হুম চলো তাহলে একসাথেই যাই?

আমি মাঝা ঝাকালাম।ইমা মাঝ দিয়ে বল উঠলো,
-আমাকে নিয়ে যান।আপনি যেখানে আমিও সেখানে।
-যায়গা হবে না নেক্সট টাইম।

ইফতি ভাইয়া হাল্কা হেসে বলল।আমি ইমার দিকে চোখ গরম করে তাকালাম।কেমন বেহুদা কথা বলেই যাচ্ছে মেয়েটা।ভাইয়ার সাথে বাইকে উঠে বিদায় দিলাম ইমাকে।

————-

অনেক দখল গিয়েছে সারাদিন ইয়াদের উপর দিয়ে।প্রেজেন্টেশনের এত এত কাজ হেন্ডেল করতে যেন পুরোপুরি হাপিয়ে উঠেছে।সব শেষে সন্ধ্যায় নিজের কেবিনে বসে মাথা এলিয়ে দিল।স্ট্রং করে এক কাপ কফি আনতে বলল।দরজা ঠেলে কেউ ভিতরে ঢুকলো ইয়াদ চোখ বন্ধ রেখেই বলল,
-টেবিলে কফি রেখে যাও।

এখনো যেন মনে হচ্ছে দাড়িয়েই আছে।ইয়াদ চোখ মেলে তাকালো নীলা দাঁড়িয়ে আছে।ইয়াদকে তার দিকে তাকাতে দেখেই হাসি দিয়ে বসলো।ইয়াদ রেগে গেল এইভাবেই তো সারাক্ষন না চাওয়া সত্ত্বেও ওর মুখশ্রী সহ্য করতে হয়েছে আবার এখন এইখানেও শান্তি নেই নাকি?ইয়াদ কিছুটা উচু গলায় বলল,
-তোমাকে বসতে বলেছি?স্টান্ড আপ।বসের কেবিনে ঢুকতে হলে নক করে পার্মিশন নিয়ে ঢুকতে হয় এইটুকু ম্যানার্স নেই?

নীলা সাথে সাথেই উঠে দাঁড়িয়ে পরলো।সারাদিনের ইয়াদ আর এখন কার ইয়াদ যেন অনেকটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ কি হয়ে গেল ইয়াদের এমন কেন আচরণ করছে?নীলা কাপাকাপা গলায় বলল,
-স,,,সরি,,,

ইয়াদ বিরক্তি হয়ে বলল,
-কাল তোমার সাথে কথা বলবো তুমি কাম্পানিতে আসতে পারবে কি না!আজ যেতে পারো।

নীলা অবাক হয়ে গেল ইয়াদের কথায়।আসতে পারবে কি না মানি কি?সে এখনো কি ঝুলেই আছে পার্মানেন্ট হয়নি?ভ্রু কুচকে বলল,
-মানি?কাল তুমি আমাকে ডিসিশন বলবে মানি?
-তুমি নয় আপনি।আর তোমাকে জাস্ট আজকে অনেক জরুরি ছিল তাই এনেছিলাম এর মানি এইনা তুমি এইখানে এসে পরে থাকবে।

নীলার অনেক অপমান বোধ কাজ করলো মনে।সে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেল।ইয়াদ ডেস্কের উপর দুই হাত রেখে মুখ ঢাকলো।তখন আবারো নক করলো ইয়াদ রেগে খানিকটা চিৎকার করে বলল,
-বলেছি না আউট।

মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো হাতে কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিএ।তাকে দেখে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়ে বলল,
-সরি।ভিতরে রাখুন।

রেখেই চলে গেল।ইয়াদ নিজে নিজেকেই বকতে লাগলো।এই নীলা তার আশেপাশে থাকলে পুরো পাগল হয়ে যায় রাগে এই কাম্পানিতে কিভাবে সহ্য করবে তাকে?

————-

নিশি বেগম বেশ ভয়ে আছে এই নীলা তার ফারাহর জীবনে আবার কোন ঝড় আনে কিনা?সারাঘরে পাইচারী করছেন নীলা বেগম।তুর্য আম্মার এমন ঘাবড়ানো মুখ দেখে এগিয়ে এলেন,
-কি হয়েছে আম্মা?
-এই নীলাকে আমি কি করে বুঝাই ফারাহর জীবন থেকে দূরে থাকতে!!
-আবার কি করলো নীলাপু?

নিশি বেগম সবটা খুলে বললেন তুর্যকে।তুর্যও চিন্তায় পরে গেল ইয়াদ কেন তাকে ডাকলো কাম্পানিতে?সব কিছু মিলিয়ে জোট পাকিয়ে ফেলেছে তুর্য মাথা কাজ করছে না।আবার আম্মু এত্ত টেনশনে শরির আরো খারাপ হতে পারে!
তুর্য নিজের রুমে এসে ফারাহকে কল করলো।
ফারাহ সবে মাত্র কলেজ থেকে ফিরে গোসল সেড়ে বসেছে তখনি ভাইয়ের ফোন দেখে হাসি মুখে ধরলো।ফোন তুলায় তুর্য হচকচিয়ে গেল কিভাবে কি বলবে।আমতা আমতা করে বলল,
-কেমন আছিস ফারাহ?
-হুম ভালো।তুমি?আম্মুর শরির কেমন?
-হুম ভালো আছে সবাই।
-আসলে ভাইয়া একটু ব্যস্ত হয়ে পরেছি তো আবার কলেজ জয়েন করেছি আজ থেকে তাই আর ফোন করা হয়নি।
-কোন সমস্যা নেই।

তুর্য কিছুটা থেমে গলা খাকড়ে বললেন,
-ইয়াদ ভাই কই?
-সেতো অফিসে।কেন?
-নাহ এইভাবেই।

ফারাহ খুশি খুশি ভাইয়ের সাথে কথা বলে ফোন কাট করে দিল।তুর্যও আর কিছু বলে ফারাহ মুড নষ্ট করলো না।

————-

রাতে,
ইয়াদ টায়ার্ড শরির নিয়ে বাড়ি ফিরলো।সোফায় ইফতি,ফারাহ আর সোনিয়াকে গল্প করতে দেখে সেদিকে এক পলক তাকিয়ে উপরে গেল।নিজের দুর্বল দেহটাকে মন চাইছে এলিয়ে দিতে ফ্রেশ হতে মোটেও ইচ্ছে করছে না।খুব বেশিই দুর্বল লাগছে নিজেকে।আবার মেন্টালি ডিস্টার্বও।নীলার কথাই শুধু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার একটা ব্যবস্থা করতে হবে নাহয় নিত্যদিন ওর মুখ সহ্য করতে হবে।যা ইয়াদ একটুও চায়না।

ইয়াদকে আসতে দেখে আমিও উপরে গেলাম।ভেবেছিলাম আমাদের দেখে এইদিকটায় এগিয়ে আসবে কিন্তু আসলো না।রুমে গিয়ে তাকে পেলাম না এলোমেলো ভাবে পরে থাকা জিনিসগুলো দেখতে পেলাম।বিছানার উপর অফিস ব্যাগ পরে আছে,ড্রেসিংটেবিলের উপর টাই,আলমারিও ঠিকভাবে আটকায়নি।
সব ঠিকঠাক ভাবে রেখে বসলাম।ইয়াদ ওয়াশ্রুম থেকে বের হলো শাওয়ার নিয়ে চুল বেয়ে পানি পরছে ঠিকভাবে মুছেও নি।আমি ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আজ একটু বেশিই টায়ার্ড?

ইয়াদ মাথা ঝাকালো।আহারে বেচারা আজ কতই দখল গিয়েছে তার উপরে মায়া হলো তার প্রতি আমার।ইয়াদ বালিশ নিয়ে সোফায় যেতে নিলেই আটকে দিলাম।
-আজ থেকে বিছানায় ঘুমান।

ইয়াদ ঘুরে ভ্রু কুচকে বলল,
-তোমার কোন প্রব্লেম হবে নাতো?

আমি মাথা ঝাকালাম না হবে না।ইয়াদ অপর পাশটায় গিয়ে বালিশ রেখে পরম যত্নে নিজের ব্যস্ত শরিরটাকে এলিয়ে দিল।খুব আয়েশে ঘুমিয়েছে তার মুখশ্রী দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আমি হাল্কা হেসে বের হতে নিলাম।
-কোথায় যাচ্ছো?

ইয়াদের কথা আটকে গেলাম।ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-নিচে।আপনি খাবেন?খাবার আনবো?

ইয়াদ না সুচক মাথা ঝাকালো সে খাবে না।শুধু একটু ঘুমাতে চায়।ইয়াদ ঘুমিয়ে গেল ফারাহ নিচে চলে আসলো একটু আড্ডা দিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ফিরবে।

চলবে,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)