মনের পিঞ্জরে পর্ব-০৭

0
857

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_07

ছাদের এক কোনে কফির মগ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে জিদান।দৃষ্টি তার ব‍্যস্ত নগরীর দিকে।হঠাৎ রাস্তায় এক ছোট মেয়ের দিকে চোখ পরতেই তার চোখ সেখানেই আটকে গেল।মেয়েটার বয়স অনুমানিক ৭/৮বছর হবে।মেয়েটা সুন্দর একটা লং গাউন পরেছে।দূরের থেকে মেয়েটাকে পুরো পুতুলের মত লাগছে।মেয়েটা পাশেষ একজন বয়ষ্ক লোকের হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।আর হাত নাড়িয়ে একেক কথা বলছে।মেয়েটাকে দেখের পর জিদানের চোখের সামনে ভেসে উঠলো পুরোন কিছু স্মৃতি।

—ভাইয়া,ভাইয়া দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে?

জিদান টেবিলে পড়াশুনা করছে।বইয়ের দিকে চোখ রেখেই বিরক্ত হয়ে বলল…..

—দেখ ইশু আমি পড়ছি আমাকে ডিস্টাব করিস না।

—পড়ছো তো কি হয়েছে।একটু কি তাকিয়ে দেখে বলা যায় না।

—তুই তো পেত্নী।নতুন করে তোকে কি দেখবো।পেত্নী যতই পরি সাজার চেষ্টা করুক না কেন তাকে পেত্নীই লাগবে।

ইশু কটমট করে বলল…..

—তুই পেত্নী ,তোর বউ পেত্নী।

—মাথা মোটা আমি কিভাবে পেত্নী হব?

—তুই পেত্নী হতে যাবি কেন তোর বউ হবে পেত্নী।

জিদান রাগ দেখিয়ে বলল…..

—ঠাটিয়ে দিব এক চর।তুই আবার আমার সাথে তুই তোকারি করছিস কেন?

ইশু ভেংচি কেটে বলল…..

—হুহ আমার মনে হয় হাত নাই।

—দেখ তুই কিন্তু ইদানিং বেশি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস।আমি কিন্তু চাচ্চুর কাছে বিচার দিব।

—দে বিচার না করলো কে।তুই আমার নামে একটা বিচার দিবি আর আমি তোর নামে বড় মার কাছে হাজারটা দিব।তাও বানিয়ে বানিয়ে হুহ…..

জিদান দাতে দাত চেপে বলল….

—বেয়াদব মেয়ে বের হ তুই আমার রুম থেকে।

ইশু বেডে আরাম করে বসে বিরবির করে বলল…..

—আসছে আমাকে এই রুম থেকে বের করতে।বিয়েটা শুধু হতে দে।তখন দেখবি কে কাকে রুম থেকে বের করে।

জিদান সব শুনেও না শোনার ভান করে ভ্রু কুচকে বলল…

—কি বিরবির করছিস।বললাম না রুম থেকে বের হ।

—ভাইয়া আসবো?

জিদান সামনের দিকে তাকিয়ে বলল…..

—অনুমতি নেয়ার কি আছে।আয় ভিতরে।

মেয়েটি গুটিগুটি পায়ে ভিতরে আসতেই জিদান হাসি মুখে বলল…..

—বাহ আমাদের বুচিকে তো মাশাল্লাহ্ অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িতে।তা হঠাৎ শাড়ি পরলি কেন?

মেয়েটি মুচকি হেসে বলল….

—ধন‍্যবাদ ভাইয়া।শাড়ির কথা আর বলোনা আসলে ও….

আর কিছু বলার আগেই ইশু জিদানের দিকে তেড়ে এসে কোমরে হাত রেখে বলল……

—ও আসতে না আসতেই ওরে সুন্দর লাগতাছে তা বললে।আর আমি যে কখন থেকে জিগ্যেস করছি আমাকে কেমন লাগছে তখন কিছু বললে না কেন?আমাকে সুন্দর লাগছে বলতে কি মুখে তোমার ফোসকা পরে?

জিদান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল…..

—বুচি আর তুই কি এক হলি নাকি।তাছাড়া বুচিকে সুন্দর লাগছে তাই বললাম।আমি আবার পেত্নীদের মন রক্ষার জন‍্য মিছেমিছে তারিফ করতে পারি না।

ইশু ছলছল চোখে জিদানের দিকে একবার তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

ইশুর কাজে জিদান অবাক হয়ে গেল।জিদান ভেবেছিল ইশু ওর সাথে ঝগড়া করবে।তা না করে যে এভাবে বের হয়ে যাবে তা ও ভাবতেও পারেনি।

—উফ ভাইয়া দিলে তো মেয়েটাকে কাদিয়ে।একটু সুন্দর বললে কি এমন হতো। তোমার জন‍্য কত কষ্ট করে শাড়ি পরলো সাজলো।সাথে দেখো আমাকেও বস্তা পরিয়ে রেখেছে।এখন যাও তার মান ভাঙাও।আমি কিন্তু কোন সাহায্য করতে পারবো না।

কথাটা বলে মেয়েটি ও রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

জিদান অসহায় মুখ করে সেখানেই দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো,তার অভিমানির অভিমান কিভাবে ভাঙাবে।

পুরোন স্মৃতি মনে করে জিদান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো, এখনো বুঝি তুই এভাবেই গাল ফুলিয়ে,রাগ করে থাকিস তাই না?সেদিন তোকে দেখতে পুরো পুতুলের মত লাগছিল।মনে হচ্ছিল আমার সামনে একটা পুতুল দাড়িয়ে তার হাত নেড়ে কথা বলছে।আমার উপর তোর অনেক অভিমান জমেছে তাই নারে।তাই তো কোন খবর নিসনি আমার।তোর সব অভিমান,অভিযোগ ভাঙাতে আমি আসছি।আই এম ব‍্যাক।

💦💦💦💦💦

ইশফা,তুশি ভার্সিটির মাঠের এক কোনে বসে রয়েছে।ইশফাকে আজ অন‍্য দিনের থেকে একটু অন‍্য রকম লাগছে।তাই তুশি কিছু জিগ্যেস করার সাহস পাচ্ছে না।

ঝড়ের গতিতে রিধি ওদের কাছে এসে ওদের পাশে বসে হাপাতে হাপাতে বলল……

—সরি রে দেড়ি তে আসার জন‍্য।আজ ভার্সিটিতে আসার ইচ্ছে ছিলো না।কিন্তু এক উজবুকের তাড়ায় আমাকে আসতে হল।

রিধির কথা শুনে তুশি একটু মুচকি হাসলো।ইশফা সেই আগের মত বসেই রয়েছে। কোন কথা বলল না।রিধি ইশফাকে চুপকরে বসে থাকতে দেখে ইশারায় তুশিকে জিগ্যেস করল ইশফার কি হয়েছে?তুশি ইশারায় বলল,সে জানে না।রিধি নজর ইশফার হাতের দিকে পরতেই রিধি ইশফার হাত ধরে চিন্তিত শুরে বলল…..

—হাতে কি হয়েছে তোর?এতো বড় বেন্ডেজ করেছিস কেন?

ইশফা রিধির থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল…..

—হাত কেটে গেছে?

তুশি ইশফাকে রিধির সাথে কথা বলতে দেখে একটু সাহস করে বলল……

—কি হয়েছে তোর?মন খারাপ কেন?

—……….

তুশি কিছুটা আচ করতে পেরে বলল……

—তুই আবার কোন ঝামেলা করিস নি তো?

ইশফাঃকোন ঝামেলাই করি নি।সোজা গিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছি।

রিধি অবাক হয়ে বলল…..

—কি বলছিস তুই?কার হাত ভেঙেছিস?

ইশফাঃএক অমানুষের।

তুশিঃতুই কি একটু রাগটাকে কন্টল করতে পারিস না?

ইশফা রেগে বলল….

—ঐ অমানুষের জন‍্য তোমার এতো দরদ দেখাতে হবে না।বেশি কিছুই করিনি।শুধু হাত টাই ভেঙে দিয়েছি।ইচ্ছে তো করছিলো জানে মেরে দিতে।আফসোস পারিনি।

রিধিঃতোরা কিসের কথা বলছিস আমাকে একটু ক্লিয়ার করে বলবি প্লিজ।আমি তোদের কথা কিছুই বুঝছি না।

তুশিঃআমারও তো মাথা ভনভন করছে।কি হয়েছে পুরোটা ক্লিয়ার করে বল না ভাই।

ইশফাঃবলবো সব আগে আমার মাথা ঠান্ডা হতে দে।

ইশফা কথাটা বলে উদাস মনে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।ওরাও ইশফাকে আর কোন জোর করলো না।

ইশফা একজনকে হাসিমুখে ওদের দিকে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালো।চোখের ভুল ভেবে কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে পুনরায় সামনের দিকে তাকালো।ততক্ষনে লোকটি তার বড় বড় কদম ফেলে তার সামনে এসে দাড়ালো।ইশফা চোখ খুলতেই বুঝতে পারলো,না সে ভুল দেখছে না।তার সামনে সত‍্যি সত‍্যি সেই মানুষটি দাড়িয়ে আছে।সামনের মানুষটি আর কেউ নয় স্বয় জিদান।ইশফা দাড়িয়ে ছলছল চোখে জিদানের দিকে তাকিয়ে রইল।

জিদান হাসি মুখে বলল…..

—কেমন আছিস?

ইশফা কোন কথা না বলে চলে যেতে নিলেই জিদান ইশফার হাত ধরে করুন কন্ঠে বলল……

—সবাই আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকলেও আমি জানি তুই অন্তত মুখ ফিরিয়ে থাকবি না।তুই ও কি আমাকে ভুল প্রমান করে মুখ ফিরিয়ে নিবি?

ইশফা কোন কথা না বলে কিছুক্ষন ছলছল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে উল্টো ঘুড়ে জিদানকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠল।

(এখন সান বেচারা আর চিঠি ওয়ালার কি হবে?🤔)

#চলবে,

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)