মনের পিঞ্জরে পর্ব-৪৯+৫০

0
709

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_49

সোফায় বসে এক ধ‍্যানে ল‍্যাপটবে নিজের কাজ করছে সান।চেহারায় ফুটে উঠেছে তার ক্লান্তির ছাপ।সান কাজে এতোটাই ডুবে ছিলো যে কখন যে মিঃশিকদার তার সামনে এসে দাড়িয়েছে তা সে বলতেই পারে না।

—কালকে কি অফিসে কোন মিটিং আছে?

হঠাৎ কারো কথার আওয়াজ শুনে সান ল‍্যাপটবের থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে মিঃশিকদার দাড়িয়ে আছে।সান মিঃশিকদার কে দেখে অবাক হয়ে বলল…….

—পাপা এতো রাতে তুমি এখানে?কোন দরকার?কিছু লাগবে?

মিঃশিকদার সান এর পাশে বসে তার কাধে চাপর মেরে বলল……

—কুল বেটা কুল।ট্রাডি রুমে ছিলাম।বই পড়ার এতোই ডুবে ছিলাম যে কোন দিক দিয়ে এতো রাত হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।রুমে যাওয়ার সময় তোমার রুমে লাইট অন দেখে ভাবলান দেখে আসি এতো রাতে কি করছো।দরজা খোলা থাকায় বিনা নকেই চলে এলাম।আর এখানে এসে বুঝতে পারলাল বেটা আমার কাজে ডুবে রয়েছে।তা এতো রাত জেগে কি এমন কাজ করছো?আমার জানা মতে কাল তো কোন মিটিং ও নেই।তাহলে রাত জেগে কাজ করে শরীর খারাপ করছো কেন?

সান তার পাপার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তার পাপা আগে কিছুটা গম্ভীর থাকলেও এখন সেই গম্ভীর ভাবটা একেবারেই নেই।হুট করেই যেন তার পাপা চেঞ্জ হয়ে গেল।সান ক্লান্ত মাখা হাসি দিয়ে বলল…….

—রাত জেগে কাজ করে অভ‍্যাস হয়ে গেছে পাপা।তাই এখন আর তেমন সমস‍্যা হয় না।আর যদি বেশি ক্লান্ত লাগে তাহলে এক কাপ কফি খেয়ে শরীরের ক্লান্তি দূর করে আরামসে ঘুম দেই।

—এতো রাতে কফি?তুমি বাড়ির সার্ভেন্ট কে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে কফি করাও?

—সাভেন্ট কে ঘুম থেকে তুলতে যাবো কেন?আমি নিজেই কফি বানাতে পারি।

মিঃশিকদার অবাক হয়ে বলল……

—তুমি আর কফি?সেটা কি আদো সম্ভব?খাওয়া যাবে তো?

সান চোখ ছোট ছোট করে বলল……

—দেখো পাপা তুমি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছো?আমি কিন্তু গুড কফি বানাতে পারি ওকে?

মিঃশিকদার সোফায় আয়েশ করে বসে বলল…….

—তাহলে আজ টেষ্ট করেই দেখি তুমি কতোটা গুড কফি বানাতে পারো।

সান খুশি হয়ে বলল……

—ওকে।তুমি বস আমি ফটাফট কফি করে নিয়ে আসছি।

সান ল‍্যাপটব সাইডে রেখে কফি করতে চলে গেল।মিঃশিকদার ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বলল……

—আমি পেরেছি মা আমার সন্তানদের সাথে বন্ধু সুলুভ আচারন করে তাদের মুডি পাপা থেকে ভালো পাপা হতে।এখন আর আমার ছেলে,মেয়েরা আমাকে কিছু বলতে ভয় পায় না।নির্ভয়ে সব বলতে পারে।সন্তান যতই বড় হোক না কেন পিতামাতার কাছে তারা ছোটই থাকে।আমিও ঠিক তোমার কাছে ছোটই আছি।তোমার প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নেই মা।না আছে অভিমাম।বরং ভালোবাসাটা আরো কয়েক শত গুন বেড়ে গেছে।তুমি আরো আগে কেন আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমার ভুলটা দেখিয়ে দিলে না মা।যদি আগে আমার ভুলটা দেখিয়ে দিতে তাহলে হয়তো আরো কিছু সুন্দর মুহূর্ত স্মৃতির পাতায় থেকে যেত।

ফ্লাসব‍্যাকঃ

সান যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে পরে ছিলো তখন মিঃশিকদার পুরোই ভেঙে পরেছিলো।ডাঃএর কাছে যখন শুনেছে,অতিরিক্ত রাগের কারনে সান এর এমন দশা হয়েছে তখন তার নিজেকে দুনিয়ার সব থেকে অসহায় ও খারাপ মানুষ মনে হয়েছে।যে কিনা নিজের সন্তানকে নিজের জিদ ধরে রাখতে মৃত‍্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।চেহারায় ফুটে উঠেছিল তার অনুতপ্তের ছাপ।মনে মনে নিজেকেই হাজার দোষারোপ করেছে সে।কেন সে তার ছেলের উপর জোর করে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইল।আজ যদি সে নিজের সিদ্ধান্ত তার ছেলের উপর চাপিয়ে দিতে না চাইত তাহলে না সান রাগ করতো আর নাই বা আজ সে হাসপাতালের বেডে পরে থাকতো।

সানকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরেও মিঃশিকদার সান এর সাথে তেমন কথা বলেনি।মিঃশিকদার মনে মনে অনুতপ্ত হলেও ছেলের সাথে ভালো করে দুটো কথা বলা হয়ে উঠেনি তার।হয়তো ভিতরে ইগো কাজ করছিলো নয়তো জরতা। মিঃশিকদার এর চেহারা দেখে তার মনের খবর আর কেউ বুঝতে না পারলেও তার মা ঠিকই বুঝতে পেরেছে ছেলের মনের খবর।তার ছেলে যে নিজের ছেলের এই দশা দেখে অনুতপ্তে ভুগছে সেটা সে ঢের বুঝতে পেরেছে।

সান এর দাদু মিঃশিকদারকে একদিন এই নিয়ে সরাসরি বললেন,কিরে চেহারার এমন বেহাল দশা বানিয়ে রেখেছিস কেন?তোর তো খুশি হওয়ার কথা।তোর ছেলে এখন অসুস্থ তুই যা বলবি যা জোর করে ওর ঘাড়ে চাপাতে চাবি তাই ও বাধ‍্য হয়ে মেনে নিবে।তাহলে তোর মুখে আমি খুশির রেশ দেখতে পাচ্ছি না কেন?

মিঃশিকদার নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বলল…..

—মা….!

দাদু তেজী গলায় বলল…..

—কিসের মা!সব সময় তোকে শিখিয়েছি আগে ফ‍্যামিলি পরে কাজ।কাজের পিছে ছুটটে ছুটটে যদি পরিবারকে সময় দিতে না পারিস তাহলে লাভ টা কোথায়?তুই তো এমন ছিলি না?হুট করে যে তোর সন্তানরা তোকে ভয় পায় সেটা কি তোর চোখে পরে?তোর বাবা তো সারাজীবন কাজ কাজ করে তোকে সময় দিতে পারেনি।সন্তানের কাছে একজন পিতার ভালো মুখে দুটো কথা,তাদের ইচ্ছাকে প্রধান‍্য দেওয়া যে সন্তানের কাছে কত মুল‍্যবান তা আর কেউ না বুঝলেও তো তুই বুঝিস।তাহলে তুই কেন নিজের ইচ্ছা ওদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছিস?আজ আমার দাদুভাই এর অবস্থার জন‍্য একমাত্র তুই দাই।আল্লাহ না করুক আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেত পারতি নিজেকে কোন দিন ক্ষমা করতে?এখনো সময় আছে সন্তানদেরকে বোঝতে শিখ।তাদের ইচ্ছাকে মূল‍্যায়ন করতে শিখ।ভুল কোন আবদার করলে বুঝের উপর বল সেটা ভুল।মনে রাখিস সব কাজ রাগারাগি করে হয় না কিছু কাজ বুঝের মাধ‍্যমেও হয়।

মিঃশিকদার সেদিন মায়ের কথা চুপচাপ সব শুনে হজম করে নেয়।ঠান্ডা মাথায় সব ভেবে চিন্তে সান এর সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়।

পাশাপাশি বসে রয়েছে মিঃশিকদার আর সান।রুমের মধ‍্যে থমথম পরিবেশ বিরাজ করছে।কারো মুখেই কথা নেই।সান মিঃশিকদারের এর সামনে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে।মিঃশিকদার তার ছেলেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।কয়েক দিনের অসুস্থতায় মনে হচ্ছে তার হাসি-খুশি ছেলেটা কেমন যেন হয়ে গেছে।তাতেই যেন তার ভিতরটা আরো ভেঙে পরছে।নিরবতা ভেঙে মিঃশিকদার বলল…….

—তুমি এলিকে বিয়ে করতে চাও না কেন?

সান সরাসরি উওর দিল…..

—ওকে আমার পছন্দ না।

—তোমার কি পছন্দের কেউ আছে?

এবারো সান এর সোজা উওর….

—যদি বলি আছে।মেনে নিবে তাকে?

মিঃশিকদার সান এর মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…..

—তোমার কাছে আমি আগে না সে?

সান আগের মতই বসে থেকে জবাব দিল…..

—জ্ঞানী মানুষের মুখে এসব কথা সোভা পায় না।যার যেখানে স্থান তারা সেই স্থানেই আছে।

—সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।আমার স্থানটা কোথায়?

—মাথার উপরে।কথাটা বলে সান মিঃশিকদার এর দিকে তাকিয়ে বলল…..

—তোমার স্থান আমার মাথার উপরে।বৃক্ষ যেমন মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকে।যা উচ্চাতা কখনো মাপা হয় না।তুমিও আমার কাছে বৃক্ষের মত।শুধু এতোটুকু জানি তোমার স্থান মাথার উপরে।কতটুকু ভালোবাসি কতটা জুড়ে আছো,না কখনো বের করতে গিয়েছি আর না কখনো যাব।শুধু এতোটুকুই চাই এই ছায়া যেন সব সময় আল্লাহ্ আমার সাথে রাখে।

মিঃশিকদার সান এর কথা শুনে মনে মনে খুশি হয়েও গম্ভীর মুখে বলল……

—আর সে?

—সে আমার কতটা জুড়ে আছে সেটা আমি নিজেও জানি না।

কথাটা সান মনে মনে বললেও নিজের পাপার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে মাথা নিচু করে ফেলল।

মিঃশিকদার সান এর থেকে কোন উওর না পেয়ে মুচকি হেসে উঠে চলে যেতে নিলে সান বলল……

—তোমার কাছে কে আগে পাপা?বিজনেস পার্টনার না ছেলে?

মিঃশিকদার সান এর কথা শুনে থেমে গেলো।সান এর দিকে তাকিয়ে বলল…..

—আমি জানি আমার ছেলে বুদ্ধিমান।আমি চাই সে তার প্রশ্নের জবাব নিজেই খুজে বের করুক।

সান দাড়িয়ে বলল…….

—এলি মেয়েটা মোটেও ভালো না।অনেকটাই গায়ে পরা সভাবের।হেনার ফ্রেন্ড হবার সুবাদে আমাদের সাথে উঠা বসা হত।মেয়েটাকে পছন্দ না হলেও হেনার জন‍্য চুপ করে থাকতাম।কিন্তু পরে জানতে পারি হেনাকে ও ব‍্যাবহার করেছে শুধু মাত্র আমার সাথে বন্ধুত্ব করার জন‍্য।আমি জানি পাপা তুমি সব সময় আমার জন‍্য বেষ্টটাই খুজবে।কিন্তু তোমার এবারের খোজে একটু না অনেক ক্রটি পরে গেছে।

মিঃশিকদার ছেলের কথার প্রতি উওরে কিছু সময় চুপ থেকে বলল……

—এটা আমার ক্রটি না কি ভুল সেটা আমি জানি না।সেদিন তোমার উপর উল্টো রিয়েক্ট করে নিজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেবার জন‍্য সরি।আসলে সেদিন মিঃশেখ অফিসে এসে বিজনেস মিটিং শেষ করার পর এমন ভাবে আমাকে ফোস করেছে যে আমি তার কথার উপর কোন কথা বলতেই পারিনি।ভুলটা আমার আমার তোমার দিকটা দেখা আমার উচিত ছিলো।তোমার মতামত ছাড়া আমার কথা বলা উচিত হয়নি।মিঃশিকদার একটু চুপ করে থেকে আবার বলল………

—থাক বাদ দাও এসব।আমি সবটা দেখে নিব।টেক কেয়ার।

মিঃশিকদার কথাটা বলে চলে যেতে নিলেই সান পিছন থেকে বলে উঠল……

—সরি পাপা।সরি ফর এভরিথিং

মিঃশিকদার সান এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল।

#চলবে,

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_50(#সারপ্রাইজ)

কাছের মানুষটার ছোট থেকে ছোট কিছু হলেই নিজেকে কেমন অসহায় অসহায় মনে হয়।সাথে মনে এসে বাসা বাধে তাকে হাড়ানোর রাজ‍্যের ভয়।

ইশফাকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে রয়েছে সান।ভয়ে সান এর শরীর থরথর করে কাপছে।সান এতোটাই ভয় পেয়ে রয়েছে যে,ইশফা যে সেন্সলেস হয়ে গেছে সেদিকে তার খবর নেই।এদিকে যে ইশফার হাত থেকে রক্ত পরছে সেটাও সে বেমালুম হয়ে গেছে।

কিছুক্ষন আগে ইশফা,তুশি ক্লাশ শেষ করে লাইব্রেরী থেকে কিছু প্রয়োজনীয় বই নিয়ে বের হবার পর একজন ছেলে ওদের সামনে এসে হাপাতে হাপাতে ইশফাকে বলল…..

—ভাবি ভাই আপনাকে সাছে যেতে বলেছে।

ইশফা ছেলেটাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল……

—কোন ভাই?

ছেলেটি কিছুটা আমতা আমতা করে বলল……

—কি যে বলেন না ভাবি।সান ভাই ছাড়া আপনাকে কে ডেকে পাঠাবে।

ইশফা কপালে ভাজ ফেলে বলল……

—কোন দরকার?

ছেলেটি বোকা হাসি দিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো।ইশফা পুনরায় কিছু জিগ‍্যেস করার আগেই তুমি বলল……

—ইফু বোকার মত প্রশ্ন কেন করছিস?ভাইয়া যখন ডাকছে তাহলে নিশ্চই কোন দরকার আছে।তুশি কিছুটা ফিসফিস করে বলল…..

—হয়তো কোন সারপ্রাইজ দিবে।

ইশফা বিরক্ত হয়ে বলল…..

—রাখ তোর সারপ্রাইজ।এখন আবার কিসের জন‍্য ডাকছে কে জানে।এমনিই দেড়ি হয়ে গেছে এখন আবার….।চল গিয়ে দেখে আসি।

তুশিঃতুই যা।এমনিতেও আজ এক্সট্রা ক্লাস করতে গিয়ে দেড়ি হয়ে গেছে।বাসায় ফিরতে অনেকটা দেড়ি হয়ে যাবে।তাছাড়া তোকে ডাকছে আমাকে না।আমার ভাই কাবাবে হাড্ডি হবার ইচ্ছা নেই।

ইশফা তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই তুশি করুন কন্ঠে বলল……

—বাসায় ফিরতে অনেক দেড়ি হয়ে যাবে।প্লিজ তুই যা।

ইশফা তুশিকে জোর না দিয়ে বলল…..

—ওকে তুই বাসায় যা।আমি বরং দেখে আসি মহারাজ তার সন‍্যকে দিয়ে কেন খবর পাঠিয়েছে।

ইশফার কথা শুনে তুশি ইশফার কাধে চাপর মেরে বাই বলে দুজন দুদিকে চলে গেলো।

ক্লাশ টাইম অনেক আগে শেষ হওয়ার কারনে ভার্সিটি অনেকটাই ফাকা হয়ে গেছে।ইশফা আস্তে আস্তে ছাদে গিয়ে হাজির হয়ে পুরো ছাদে চোখ বুলিয়ে নিল।কোথাও কোন লোকজন নেই।ইশফা সান কে না দেখে বিরক্ত হয়ে ছাদ থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।ইশফা উল্টোদিকে ঘুরতেই দেখে এলি ছাদের দরজার সামনে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে রয়েছে।

এলি এক পা দু’পা করে ইশফার দিকে বাড়াতে বাড়াতে বলল……

—সানকে এখানে না পেয়ে হতাশ হয়ে গেছো।একচুয়েলি তোমাকে সান এখানে ডেকে আনেনি আমি ডেকে এনেছি।

ইশফা কপালে ভাজ ফেলে বলল…..

—কেন ডেকেছেন?

এলি রাগি গলায় বলল…..

—অপমানের বদলা নিতে।কি ভেবেছো তুমি?আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব?এতোদিন সুযোগ আর সময় কোনটাই ছিলো না।তাই তো শিকারীকে টোপে ফেলতে বাঘ হয়েও এতোদিন বিড়াল হয়ে বসে ছিলাম।আর তোমার ঐ হিরো ভেবেছে আমি তার ভয়ে চুপ করে বসে আছি।

ইশফা ভ্রু কুচকে বলল……

—গন্ডার নাকি আপনি?এতোদিন পর বদলা নেওয়ার কথা মনে পরল?

এলি ধমক দিয়ে বলল…….

—চুপ একদম চুপ।একটা কথা বলবি না।একটু পর যখন মরন যন্ত্রণায় কাতরাবী তখন বুঝতে পারবি আমি কে?
আজ দেখবো তোকে আমার হাত থেকে কে বাচায়।

এলি ইশফারর চারোপাশে গোলগোল করে ঘুরে কথাগুলো বলছিলো।কথা বলা শেষ হতেই ইশফা কিছু বোঝার আগেই এলি ইশফার কাধে ইনজেকশনের পুষ করে দেয়।

ইনজেকশন পুষ করার একটু পর ইশফার মাথা ঘুরতে লাগলো।চোখের মধ‍্যে রাজ‍্যের ঘুম এসে ভর করতে লাগলো।ইশফা ঢুলুঢুলু শরীর নিয়ে অনেক কষ্টে চোখ টেনে মেলে রেখে নিজেকে ঠিক রাখার বৃথা চেষ্টা করছে।কিন্তু ইশফা কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না।এলি ইশফার কাহিনী দেখে পৌচাশিক হাসি দিয়ে ব‍্যাগ থেকে একটা নাইফ বের করে সেটা ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বলল….

—ভাবছি এটা দিয়ে কি করবো।হাত কাটবো নাকি গলা।গলা কাটতে তো বড় ছুড়ি লাগবে এটা তো ছোট তাহলে কি হবে?(একটু ভেবে)ব‍্যাপার না আগে হাত কেটে দেখি হাত কাটে কিনা।হাত কাটতে পারলে গলা কাটা যাবে।

কথাটা বলেই এলি,ইশাফ হাত ধরে হাতের উপর নাইফ দিয়ে একটা টান দিল।সাথে সাথেই হাত থেকে রক্ত বের হতে লাগলো।ইশফা ব‍্যাথায় কুকরিয়ে উঠল।কিন্তু প্রতিবাদ করার মত কোন শক্তি বা বল কিছুই সে পেলো না।

এলি আবার পৌচাশিক হাসি দিয়ে বলল……

—নাইফে তো বেশ ধার আছে।এটা দিয়ে তো দেখছি গলাও কাটা যাবে।

এলি,ইশফার দিকে নাইফ নিয়ে দু’কদম বাড়িয়ে থেমে গিয়ে বলল……

—গলা কাটলে তো খুব সহজে মরে যাবি।এতো সহজ মৃত্যু তো আমি তোকে দিচ্ছি না।তোকে আমি আধ মরা করে রেখে দিব।ছাদ থেকে ফেলে দিলে কেমন হয়?মরলে একে বারে উপরে না মরলে চার পাচ মাসেও বিছানা থেকে উঠতে পারবি না।এটাই বেষ্ট হবে।কি বলিস তুই?

এলি,ইশফাকে টেনে ছাদের শেষ সিমানায় দিকে নিয়ে যাচ্ছে।ইশফাও চেষ্টা করেও এলিকে বাধা দিতে পারছে না।ছাদের শেষ সিমানার পৌছানোর আগেই কেউ একজন পিছন থেকে এলির হাত ধরে এলিকে টেনে তার দিকে ঘুরিয়ে এলির গালে ঠাটিয়ে এক থাপ্পড় লাগালো।থাপ্পড়টা এতো জোরেই দিয়েছে যে,এলি নিজের বেলেন্স না রাখতে পেরে পরে গেলো।ইশফা নিভু নিভু চোখে সামনে তাকিয়ে সামনের মানুষটাকে দেখে অস্পষ্ট গলায় বলল…..

—সূ-র্য

আর কিছু বলার আগে ইশফা পরে যেতে নিলেই সান ইশফাকে ধরে ফেলল।

এলি সানকে এখানে দেকে রিতিমত ঘামতে লাগলো।এলি খবর পেয়েছে আজ সান অনেক আগেই ভার্সিটি থেকে চলে গেছে।এদিকে ইশফার এক্সট্রা ক্লাশ করতে দেখে সুযোগ বুঝে এতোদিনের জমানো ক্ষোভ উসুল করার জন‍্য মাথায় যা আসে তাতেই বুদ্ধি পাকিয়ে ইশফাকে এখানে ডেকে আনে।সান ভার্সিটি থেকে আগেই চলে গেছে সেটা ইশফা না জানার কারনে ইশফাও এলির ফাদে পা দেয়।এলি লক্ষন খারাপ দেখে পালানোর চেষ্টা করে দরজার সামনে যেতেই তার গালে আরেকটা থাপ্পড় পরে।থাপ্পড় টা আর কেউ না তুশি এলির গালে লাগায়।তুশি এলির চুলের মুঠি ধরে বলে……

—তোর মত বেহায়া,বেশরম,র্নিলজ্জ মেয়ে আমি জীবনেও দুইটা দেখি নাই।লজ্জা নেই তোর?এতো অপমান করার পরেও বেহায়ার মত কোন মুখে তোর এই চেহারা নিয়া তুই ইফুর সামনে আসোস।ইফুর কিছু হলে দেখিস তুই তোরে আমি কি করি।

এলি ব‍্যাথায় কুকরিয়ে উঠে তুশির হাত থেকে নিজের চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই তুশি এলির চুল হাতের সাথে পেচিয়ে টেনে ধরল যাতে পালাতে না পারে।

💦💦💦💦💦💦

হাসপাতালের বেডে শুয়ে রয়েছে ইশফা।মাথাটা তার খুব ভাড়ি ভাড়ি লাগছে।ইশফা পিটপিট করে চোখ খুলে আশে পাশে তাকাতেই পাশে সানকে দেখতে পেল।ইশফাকে তাকাতে দেখে সান উত্তেজিত হয়ে বলল…..

—তুমি ঠিক আছো?এখন কেমন লাগছে?হাতে পেইন হচ্ছে?ডাঃ কে ডাকবো?

ইশফা সান এর কথা শুনে উঠে বসার চেষ্টা করে বলল…….

—কাউকে ডাকতে হবে না।আমি ঠিক আছি।কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি ঠিক নেই।চেহারা এমন ফোলা ফোলা দেখা যাচ্ছে কেন?

সান ইশফার কথার উওর না দিয়ে ইশফাকে উঠে বসতে সাহায্য করল।

এমন সময় হেনা,তুশি একসাথে কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করল।হেনা ফোড়ন কেটে বলল……

—মেয়ে মানুষের মত কান্না করলে চেহারা ফোলা থাকবো না তো কি হবে।তুমি তো কামাল করে দিয়েছো ইশফা।পাথরকে পযর্ন্ত মমে পরিনত করে দিয়েছো।জানো ছোট থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি।কিন্তু কখনো একে আমি কান্না করতে দেখিনি।আজ সেই পাথরকে আমি কান্না করেতে দেখেছি শুধু মাত্র তোমার জন‍্য।

সান হেনাকে ধমক দিয়ে বলল……

—হেনা চুপ করবি তুই।

হেনা উল্টো সানকে ধমক দিয়ে বলল……

—তুই চুপ থাক।বেশি কথা বলবি ইশফাকে দিয়ে মার খাওয়াবো।জানো ইশফা সান তোমাকে ঐ অবস্থায় দেখে কি পাগলোটাই না করেছে।তোমাকে হাসপাতালে আনার সময় গাড়িতে সে কি কান্না।চারঘন্টা পর তুমি চোখ খুলেছো এই চার ঘন্টায় নার্স,ডাঃ দের কান ঝালাপালা করে দিয়েছে তোমার কথা জিগ‍্যেস করতে করতে।এলিকে তো…..

হেনা আর কিছু বলার আগে সান হেনার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই হেনা শুকনো ঢোক গিলে বলল…….

—আমি আশি ইশফা।টেক কেয়ার।

কথাটা বলেই হেনা তড়িঘড়ি তুশিকে নিয়ে বের হয়ে গেলো।

ইশফা সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।সান কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে।ইশফা কিছুটা রাগি গলায় বলল……

—এসবের মানে কি?আপনাকে দিয়ে এটা আশা করা যায়নি।এইটুকুতেই যদি এমন করেন তাহলে বড় কিছু হয়ে গেলে কি করতেন?যদি বড় কিছু হয়ে যেত তখন?

সান ইশফার কথার উওর না দিয়ে ইশফাকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইল।সানের এমন কাজে ইশফা স্টেচু হয়ে গেলো।কাধে ভেজা ভেজা অনুভব হতেই ইশফা সানকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল…..

—আরে কি হয়েছে আপনার?আপনি কান্না করছেন কেন?

সান গলা ঝড়ানো গলায় বলল…….

—বড্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।লাইভে ফাষ্ট আমি এমন ভয় পেয়েছি।তোমার কিছু হলে আমি…..।তুমি জানোনা তুশির মুখে যখন শুনেছি কেউ আমার নাম করে তোমাকে ছাদে ডেকে পাঠিয়েছে তখন যে কিভাবে আমি সেখানে পৌছেছি আমি নিজেও জানি না।এতো বোকা কেন তুমি?কেউ বলল,আমি তোমাকে ডেকেছি আর তুমি চলে গেলে?

—এখন আমি বোকা।হুট হাট কে নিজের চেলাদেরকে দিয়ে খবর পাঠায় শুনি।

সান কিছু না বলে চুপ করে রইল।

💦💦💦💦💦💦

দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো বেশ কিছু দিন।সবার দিন কাল ভালোই চলছে।ইশরা এখন অনেকটাই সুস্থ।কিন্তু হুট হাট তার পাগলামো শুরু হয়ে যায়।ইশরার সকল পাগলামো জিদানকে ঘিরেই শুরু হয় এবং জিদানকে ঘিরেই শেষ।এদিকে জিদান,ইশরার সকল পাগলামো হাসিমুখে মেনে নেয়।কখনো কোন বিরক্ত প্রকাশ করে না।

জিদান কলেজ শেষে ইশরার কথা মত তার জন‍্য শপিং করে বাসায় ফিরতে জিদানের অনেকটা রাত হয়ে যায়।নিজের কাছে এক্সট্রা চাবি থাকায় চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।জিদান নিজের রুমে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই পুরো থ’হয়ে গেলো।কেননা পুরো রুম সুন্দর করে প্রদিপ,মোম দিয়ে সাজানো।রুমের একপাশে একটা টেবিল সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো রয়েছে।টেবিলে রয়েছে ছোট একটা হার্ট সেপের কেক।জিদান পুরো রুমে চোখ বুলাতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো হুট করে এসব আবার কে করল।জিদানের ভাবনার মাঝেই ইশরা জিদানের সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে জিদানের দিকে একটি লাল গোলাপ ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বলল…….

—শুভ বিবাহবার্ষিকী।তুমি কি আবারো আমায় বিয়ে করবে জিদ ভাইয়া।সারা জীবনের জন‍্য আমার পাগলামো সহ‍্য করার জন‍্য তোমার পাগলীটাকে আবারো বিয়ে করবে?

#চলবে,

(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)