মনের মানুষ পর্ব-২০+২১

0
416

#মনের_মানুষ❤️
#বিংশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸

ক্যামেরায় একটার পর একটা ছবি দেখে চলেছে প্রান্তিক…..প্রত্যেকটা ছবি শান্তিনিকেতনে তোলা।কাউকে না বলে ছবি তোলা অপরাধ কিন্তু প্রান্তিক সেই অপরাধ করে বিন্দুমাত্র দুঃখিত নয়…..আহেলির এই ছবিগুলো প্রায়ই প্রান্তিক দেখে।কিসুন্দর করে হেসে অনুশ্রীর সাথে কথা বলছে…..একেই বলে ক্যান্ডিড পোস।ক্যামেরাটা রেখে দিয়ে বিছানায় এসে বসে প্রান্তিক…..এপার্টমেন্টের সাততলার 3bhk ফ্ল্যাটে সম্পূর্ন একা প্রান্তিক,যদিও তাতে প্রান্তিকের আফসোস নেই।দিনের বেশিরভাগ সময়টা কেটে যায় হসপিটালে আর ফাঁক পেলেই চলে যায় মায়ের কাছে।প্রান্তিকের এই জীবনের মধ্যে হটাৎ করেই আহেলি প্রবেশ করেছে…..প্রান্তিক এরআগে বহু মেয়ের সম্মুখীন হয়েছে।ডাক্তারি করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত কতো মানুষের মুখোমুখি হয়…..তবে আহেলিকে দেখার পর থেকেই প্রান্তিক একেবারে অন্যরকম হয়ে গেছে।তবে মেয়েটা যে ওকে ভালোবাসে না সেটা প্রান্তিক ভালো করেই জানে……কাউকে ভালোবাসলে যে তার ভালোবাসাও পরিবর্তে পেতে হবে এমনটা মনে করেনা প্রান্তিক।তবুও আজকাল অবাধ্য মনটা আহেলি কে নিয়ে ভাবতে থাকে সারাদিন…..এমন কি হতে পারে না?আহেলি ভালোবাসলো প্রান্তিককে।এটা কি ভীষণ অসম্ভব কোনো কাজ?
🌸🌸🌸

ঋষভ যে হটাৎ করে কেনো আহেলি কে ডাকতে গেলো সেটা আহেলি বুঝতে পারছে না…..সেদিন ওতোকিছু বলার পরেও ছেলেটা ওর মুখোমুখি হতে চায়?কারণ কি?যা শেষ হওয়ার হয়েই গেছে….তবে কি বলবে সেটা অন্তত একবার শোনা দরকার।দুপুরের দিকে আহেলি নিজেই এলো ঋষভ এর পার্টি অফিসে……বাইরে কয়েকজন গার্ড ছাড়া আর কেউ নেই।দরজা ঠেলে আহেলি দেখলো ঋষভ একটা ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে….দরজার সামনে আহেলি কে দেখেই সোজা হয়ে বসলো আর আহেলি কে এসেও বসার কথা বললো।

সামনের চেয়ারে বসে আহেলি কিছু বলবে তার আগেই ঋষভ বললো,,

“আমি জানি তুই অবাক হয়েছিস….কিন্তু কিছু কথা তোর জানা ভীষণ দরকার।”

“এখনো কি বলার আছে?আমি সত্যিই আরকিছু শুনতে চাই না….আর হ্যাঁ ওইসব কথা তো নয়ই।”

“আই নো দ্যাট তুই ওসব কথা তুলতে চাস না…..কিন্তু পুরো ঘটনাটা জানার দরকার আছে তোর।ভেবেছিলাম ইলেকশন মেটার পর বলবো কিন্তু এখন না বললে এবার সত্যিই লেট হয়ে যাবে।তার আগে বল ছেলেটা কে?যে তোর সাথে সবসময় ঘোরে।”

“ওয়েট আ মিনিট….আমার সাথে কে ঘোরে না ঘোরে সেটা জেনে তোমার কি লাভ?আমি কোনোদিন জানতে চেয়েছি,তুমি জনসভার নামে কটা মেয়ের সাথে টাইম স্পেন্ড করতে গেছো?”

“আহেলি……!!কিসব যাতা বলছিস তুই?”

“আমি একদম ঠিকই বলছি….কেনো?তুমি কাটাও নি কারোর সাথে সময়?”

“তুই আগে আমার থেকে সবটা শোন তারপর ব্লেম করিস আমায়।”

“আর কি বলার আছে তোমার?নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার কি কোনো উপায় পেয়ে গেছো?”

“আহেলি আমি কোনো দোষ করেনি….যেটা করেছি তা বাধ্য হয়ে দলের কথা ভেবে।”

“বাহঃ….আজকাল তোমার দল বুঝি তোমায় মেয়েদের সাথে ইন্টিমেট হওয়ার অর্ডার দিচ্ছে?এভাবেই টিকিট দেয় নাকি তোমার দল?জিগালোর থেকে ভালোই প্রফেশন।”

“আহেলি….এবার কিন্তু।”

“জাস্ট শাট আপ….একদম আমায় সামনে চিৎকার করবে না।তোমার কি মনেহলো?তুমি আমায় ডেকে এনে কতগুলো লেইম এক্সকিউস দেবে আর আমি মেনে নেবো?বাচ্ছা মেয়ে নাকি আমি?”

“আহেলি আমি শ্রেয়ার সাথে ইন্টিমেট হয়নি…..যা হয়েছে সবটাই নাটক।ওই মেয়েটা আমায় ফাঁসাতে চেয়েছিলো আর আমিও ওর পাতা ফাঁদে ধরা দেওয়ার নাটক করি যাতে ওকে প্রমানসমেত ধরতে পারি।শ্রেয়ার সাথে আমার কোনোরকম সম্পর্ক নেই…..তোকে আমি জানতে পারিনি কিন্তু এটাও ভাবিনি তুই ওরকম একটা ডিসিশন নিবি।”

ঋষভ এরকথায় ওরদিকে আহেলি কে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঋষভ শুরু থেকে সব ঘটনা খুলে বললো।আহেলি সবটা শুনে চুপ করে যাওয়ায় এবার ঋষভ বললো,,,,

“তোর যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তার প্রুফ আছে আমার কাছে…..আমি বাধ্য হয়ে এসব করেছি কিন্তু তোকে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইন্টেশন ছিলো না।তুই জানিস সেদিনের পর থেকে মা অব্দি আমার সাথে ভালো করে কথা বলেনা।আমি পারছি না এভাবে থাকতে,তোর চোখে এতো অপমান,ক্ষোভ আর ঘৃণা নিজের জন্য দেখে কিছুতেই স্থির থাকতে পারছি না।”

“ওই শ্রেয়ার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই?তুমি যা করেছো তোমার পার্টির জন্য করেছো?”

আহেলির প্রশ্নে ঋষভ ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলে,,
“হ্যাঁ….আমি আসলে ভাবিনি এরমধ্যে তুই জড়িয়ে যাবি।এবার তো তোর বিশ্বাস হলো যে আমি তোকেই ভালোবাসি…..”

ঋষভ কথাটা শেষ করার সাথে সাথে আহেলি চড় মারলো ঋষভ এর গালে।চোয়াল শক্ত করে কঠিন গলায় বললো,,,

“আর কোনদিন ভালোবাসি শব্দটা বলবে না।অন্তত আমার সামনে তো নয়ই…..তুমি কাউকে ভালোবাসতে পারো না ঋষভদা।আগে সকলে বলতো তবে আজ সত্যিই তার প্রমান পেলাম।তুমি ভীষণ স্বার্থপর একজন মানুষ….আমার ভাবতে খারাপ লাগছে যে তোমার জন্য আমি নিজেকে শেষ করতে গেছিলাম,তোমার জন্য দিনের পর কষ্ট পেয়েছি…..আই জাস্ট হেট ইউ।আর কখনও তোমার মুখটা যেনো আমি নো দেখি।”

কথাগুলো শেষ করেই আহেলি বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে….ঋষভ এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আহেলির যাওয়ার দিকে।
🌸🌸🌸
যখন.. নীরবে দূরে, দাঁড়াও এসে
যেখানে পথ বেঁকেছে।
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা
আমিও ছুটে যাই সে গভীরে
আমিও ধেয়ে যাই কি নিবিড়ে
তুমি কি মরীচিকা না ধ্রুবতারা।
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা।

কানে হেডফোন লাগিয়ে নিজের কেবিনে বসে গান শুনছিলো প্রান্তিক…..পরপর দুটো অপারেশন আর ওয়ার্ড ডিউটি শেষ করে ক্লান্ত দেহটা চেয়ারে এলিয়ে বসে ছিলো।কিন্তু গানটা মাঝপথে থামাতে বাধ্য হলো প্রান্তিক….কারণ কোনোপ্রকার কথা ছাড়াই আহেলি এসে দাঁড়িয়েছে সামনে।আহেলিকে দেখেই প্রান্তিক অবাক হলো…..হটাৎ করে মেয়েটার আবার কি হলো?

চলবে………

#মনের_মানুষ❤️
#একবিংশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি🌸

দুপুরের দিকে বেশ গরম আর গুমোট একটা ভাব ছিলো…..বিকেল হতেই আকাশটা মেঘলা করেছে,সাথে হাওয়া দিচ্ছে।প্রান্তিক আর আহেলি দুজনই বসেছে তাদের সবচেয়ে প্রিয় গঙ্গার ঘটে….এখানে তেমন কেউ নেই।প্রান্তিক এর ক্লান্ত দেহ বিশ্রাম চাইলেও মন তা চায় না।আহেলি হটাৎ করে ওকে এখনে কেনো নিয়ে এলো সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না প্রান্তিক…হটাৎ মুখের সামনে একটা আইসক্রিম দেখে প্রান্তিক মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলো আহেলি দুহাতে দুটো অরেঞ্জ স্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে।প্রান্তিক একটা স্টিক নিতে আহেলি বসলো প্রান্তিকের পাশে।আকাশের দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে বললো,,,,

“সন্ধের সময় বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে…..তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।”

“তা হটাৎ আইসক্রিম?”

“ট্রিট দিলাম…..এখন এটাই থাক বাকিটা তোলা রইলো।”

“ট্রিট দেওয়ার জন্য তো কোনো উপলক্ষ চাই তাই না?তো আপনার ট্রিট দেওয়ার কারণ সমন্ধে অবগত হতে পারি কি?”

“অফকোর্স হতে পারেন…..হতে পারেন বলেই তো হসপিটাল থেকে এখানে অব্দি টেনে আনলাম।একই….আপনি এখনো আইসক্রিম হাতে বসে আছেন কেনো?অরেঞ্জ স্টিক কম দামী বলে খাবেন না?”

“আরে না তা নয়…..আচ্ছা এই যে শুরু করলাম।”

“ভালো ছেলে,তো এবার কথাটা বলি?”

“প্লিস…..”

“আমার চাকরিটা হয়ে গেছে প্রান্তিক….আজই এপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পেয়েছি।”

“ওয়েট!!!হোয়াট?….আর ইউ সিরিয়াস আহেলি?”

“ইয়েস….এতদিনের পরিশ্রমের ফল আমি ফাইনালি পেয়েছি প্রান্তিক।আমি ভাবতেও পারিনি এই জবটা আমি পাবো।”

“আমি জানতাম আপনি পাবেন….কারণ আপনি অনেক খেটেছেন।তো আমাকে হটাৎ জানাতে এলেন যে?”

“প্রথমে তো বাবা মকেই বলেছি….আর তারপর আপনাকে কারণ আপনি যে আমার শুভাকাঙ্খী।”

“এটা ঠিক বলেছেন তবে আপনার বন্ধুরা….ওদেরকে জানিয়েছেন?”

“মাঝের এই কেটে যাওয়া তিনমাসে আমার বন্ধুর লিস্টটা ফিকে হয়ে গেছে প্রান্তিক…আর তেমন কেউ নেই।সকলের কাছে আমি স্বার্থপর একটা মেয়ে।”

“ঋষভ কে জানিয়েছেন কথাটা?”

“কাকে?ঋষিদা?আর ইউ ওকে প্রান্তিক…..আপনার মনেহয় ঋষিদার এতো টাইম আছে?সে এখন একজন মন্ত্রী।যখন রাস্তা দিয়ে যায় সামনে দুটো আর পেছনে দুটো গার্ডসদের গাড়ি থাকে,নিউস চ্যানেলের টক শো এর অন্যতম মুখ যে তার এতো সময় থাকতে পারে?যে প্রাক্তন প্রেমিকার খবর নেবে?”

“আপনি চাইলেই তো আবার সবটা ঠিক হয়ে যেতো আহেলি….ঋষভ তো আর ইচ্ছাকৃত ভুল করেনি বরং বাধ্য হয়েছে করতে।একবার নিজের রাগটা ভুলে ওর কাছে যেতেই পারতেন…..”

“শেষ অব্দি আপনিও একই কথা বললেন প্রান্তিক…..সত্যিই তো সবটা আমার দোষ।আমার জন্যই তো সম্পর্ক ভেঙে গেছে তাই না?এতদিন ঋষিদার মা,অনুশ্রী,সৌমিলি রিয়া বলতো কথাগুলো আর আজ আপনিও…..সত্যিই তো!যা হয়েছে সবটা আমার জন্য হয়েছে।”

“আপনি শুধু শুধু রাগ করছেন আহেলি….আমি তা বলিনি।তিনমাস আগেই তো ঋষভ আপনাকে সবটা জানিয়েছিলো যে ও কোন পরিস্থিতি তে এরকমটা করেছে।তাহলে এতদিন কেনো রাগ পুষে রেখেছেন?একবার সবটা ভুলে তো নতুন করে শুরু করতেই পারতেন তাই না?”

প্রান্তিকের কথায় হাসলো আহেলি….হাতে থাকা আইসক্রিমের স্টিকটা সামনে ছুড়ে ফেলে বললো,,,

“নতুন করে কি শুরু করতাম প্রান্তিক?যে সম্পর্কটা আদতে কোনোদিন ছিলোই না সেটার আবার নতুন শুরু কি?”

আহেলির কথায় প্রান্তিক ভ্রূ কুঁচকে তাকাতে আহেলি ম্লান হেসে বললো,,,

“আমার বাবা আর মামনি ক্লাসমেট ছিলো….সেই সূত্রে ঋষিদার বাড়িতে যাতায়াত ছিলো আমাদের।আর আমাদের বাড়ির মধ্যেকার দূরত্ব তেমন নয়…..ছোটো থেকে ঋষিদা একদম অন্যরকম ছিলো।নিজের মতো থাকতে ভালোবাসতো….আমি ওদের বাড়ি গেলে মামনি বলতো আমার সাথে খেলতে, কিন্তু ঋষিদা নিজের ঘরেই থাকতো।আমি জোর করে গেলে রাগী চেহারায় তাকিয়ে থাকতো…..বয়স বাড়ার সাথে সাথে মনের ভাব পাল্টে গেলো।একটা সময় আমি অনুভব করলাম,ওই বাউন্ডুলে রাজনীতি পাগল ছেলেটাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি…..হয়তো আমার ভালোবাসাটা একতরফা ছিলো।একদিন মামনির মুখেই শুনলাম ঋষিদার নাকি গার্লফ্রেন্ড আছে কলেজে…..আমি তখন ছোটো,স্কুলে পড়ি তাও ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম।কৈশোর বয়সের ভালোলাগাগুলোকে ভালোবাসায় পরিণত করার আগেই জানলাম সে অন্য কারোর।তারপর অনেকদিন কেটে গেছে….বরাবর ও বাড়িতে গেলেও তেমন একটা ঋষিদার সাথে দেখা হতো না আমার।আমিই এড়িয়ে চলতাম…..ঋষিদা কলেজ শেষ করে বাবা মায়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজিনীতি তে পাকাপাকি ভাবে প্রবেশ করলো তবে এই মানুষটা একটু অন্যরকম ছিলো।আমার সাথে নিজে থেকেই কথা বলতো….আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্কটা সহজ হয় আর তারপর একদিন হটাৎ করেই ঋষিদা জানায় সে আমায় ভালোবাসে।বিশ্বাস করুন প্রান্তিক সেদিনের মতো খুশি আমি আজ অব্দি হয়নি…..আমার একটা হাত ধরে বলেছিলো,’তোকে আমার খুব ভালোলাগে আহেলি!বিয়ে করবি আমায়?’।ব্যাস এটুকু যথেষ্ট ছিলো আমার জন্য…..যাকে এতদিন চেয়েও ভুলতে পারিনি যে যখন নিজেই এসে ধরা দিলো তখন তাকে ফেরাই কেমন করে?আমার সম্মতি পেয়ে ঋষিদা বাড়িতে জানায় সবটা….মামনি আমার ওপর ভীষণ খুশি ছিলো তার বাউন্ডুলে ছেলেকে ঘরমুখো করার জন্য।আমাদের দুবাড়ি থেকে ঠিক হয় আগে আমি পড়াশোনা শেষ করবো আর ঋষিদাও নিজের ড্রিম ফুলফিল করবে তারপর আমাদের বিয়ে হবে।”

“বেশ তো ভালোই চলছিলো সব….আর ঋষভ বাবুর এই সামান্য ভুলের জন্য আপনি ওকে এভাবে শাস্তি দেবেন না।সব মানুষই জীবনে সেকেন্ড চান্স ডিসার্ভ করে।”

“সেই…..সামান্য ভুল।নিজের দলের স্বার্থে একটা মেয়ের সাথে রাত কাটাতে যাওয়াটা সামান্য ভুল!”

“আপনি তো জানেন তেমন কিছুই হয়নি…..তাহলে কেনো ভুল বুঝছেন আহেলি?”

“একটা কথা কি জানেন তো প্রান্তিক?সহ্যেরও একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকে আর সেটা যখন পেরিয়ে যায় মানুষ কি করে সে নিজেও জানে না…আমাদের সম্পর্কটা প্রেমের ছিলো কি জানিনা কারণ তেমন কোনো কথা আমি ঋষিদার মুখে শুনিনি যদিও সেটা নিয়ে আমার কোনোরকম আক্ষেপ ছিলো না।আমি জানতাম ওই মানুষটা সকলের চেয়ে আলাদা…..ও নিজের কাজকেই প্রায়োরিটি দেয়।কিন্তু দিনের শেষে মানুষটা আমারই।আমি কোনোদিন আমাদের সম্পর্ককে আর পাঁচটা সম্পর্কের সাথে তুলনা করিনি….রিয়া আর সপ্তকের কেমিস্ট্রি দেখে মনে হতো ইসস যদি ঋষিদা আমার সাথে একটু এভাবে থাকতো,একটু সময় কাটাতো।এই কথাগুলো মনে এলেও কোনোদিন ঋষিদার সামনে প্রকাশ করিনি…..ঋষিদা কখনো আমার বার্থডে তে উইশ করেনি,মা নিমন্ত্রণ করলেও খেতে আসেনি।সারাদিনের এতো ব্যস্ততায় নাকি ও সময় পেতো না।তবে গিফ্ট ঠিকই পাঠিয়ে দিতো আর বলতো খাওয়ারটা বাড়িতে দিয়ে আসতে…..আর আমি ঋষিদার বার্থডে নিয়ে সবচেয়ে বেশি এক্সসাইটেড থাকতাম,নিজের হাতে রান্না করে গ্রিটিংস কার্ড বানিয়ে নিয়ে যেতাম…..অথচ সেই মানুষটার কাছে দুমিনিট সময় থাকতো না আমার জন্য।খুব জোড় করলে আমায় কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতো…..সেখানেও কতো ফোন আসতো,আমি যদি বলতাম কিছুক্ষণের জন্য ফোনটা সুইচ অফ করতে তাহলে রাগ দেখাতো আমায়।আমি যদি রাগারাগি করে ফোন কেটে দিতাম উল্টে কোনোদিন আমায় কল করেনি….আমিও অভিমান করে বসে থাকতাম।তিন চারদিন যাওয়ার পর যখন কোনো প্রতিক্রিয়া পেতাম না তখন লজ্জ্বার মাথা খেয়ে নিজেই কল করতাম….আর ঋষিদার সহজ ব্যবহার বুঝিয়ে দিতো যে সে জানেই না আমি রাগ করেছি।

এতকিছুর পরেও আমি কোনোদিন অভিযোগ করিনি….কারোর সাথে তুলনা করিনি।আমি জানতাম মানুষটা আমায় ভালোবাসে আর কি চাই?প্রান্তিক আপনি ভাববেন না যে আমি ঋষিদা কে অবিশ্বাস করে সেদিন ওর গায়ে হাত তুলেছিলাম….আমি বিশ্বাস করি ঋষিদাকে।হয়তো নিজের থেকেও বেশি।ও ঠিকই বলছে….পার্টির জন্যই হয়তো শ্রেয়ার সাথে একটা মিথ্যে সম্পর্ক তৈরি করেছিলো।কিন্তু একবারও কি ভাবে দেখেছেন প্রান্তিক এতে আমাদের সম্পর্কটাকে ঋষিদা কোথায় নামিয়ে এনেছে?আজ পার্টির জন্য ও একটা মেয়ের সাথে রাত কাটাতে যাওয়ার অভিনয় করলো….কাল যদি পার্টি থেকে বলে সত্যিই একজনের সাথে রাত কাটিয়ে আসতে তখন কি করবে ঋষিদা?তার সাথে রাত কাটিয়ে এসে আমার সামনে বলবে এটা ওর পার্টির প্রতি কর্তব্য।তাই তো?ও রক্তর ব্যবস্থা করে রেখেছিলো বলেই আমি বেঁচে উঠেছি…প্রান্তিক আপনি তো জানেন আমার শরীরটা বাঁচলেও আমার মানসিক অবস্থা কেমন ছিলো?আমি না পারছিলাম শান্ত হতে আর না পারছিলাম রিএক্ট করতে।বারবার ওই লিপকিসের কথাটা মাথায় আসছিলো…..আমি তখন কতটা কষ্ট পেয়েছি তা জানে ঋষিদা?আর সেদিন যদি আমার সত্যিই কিছু হয়ে যেতো তাহলে কি করতো ঋষিদা?আসলে ও ভেবেই নিয়েছে আহেলি কে যখন যেমন ইচ্ছা ব্যবহার করা যায়।আমি কি এতটাই ফেলনা প্রান্তিক?ভালোবাসার জন্য আর কতো নিচে নামবো বলতে পারেন?আমিই কেনো সবসময় এডজাস্টম্যান করবো?বারবার ঋষিদার দেওয়া আঘাত ভুলে ওকে কাছে টানবো?ভালোবাসি বলে কি সব সহ্য করা যায়?”

কাঁদতে কাঁদতে বলা আহেলির কথা শুনে প্রান্তিকের নিজের ওপরই রাগ হলো।আহেলির কাঁধে হাত রেখে বললো,,,

“প্লিস শান্ত হন আহেলি….এভাবে কাঁদবেন না।”

“আমি শান্ত হতে পারছি না প্রান্তিক…..সবাই আমাকেই ব্লেম করতে ব্যস্ত।মামনি থেকে শুরু করে আমার বন্ধুরা অব্দি…ওদের ধারণা আমি নাকি কোনোদিন ঋষিদাকে ভালোবাসিনি।আপনি বলুন না..আমি কি নিজেকে নিয়ে ভেবে খুব ভুল করেছি?”

“আপনি কোনো ভুল করেননি আহেলি….ঋষভকে যে এখনো আপনি ভালোবাসেন তা জানি আমি।আপনি নিজে এভাবে কতটা কষ্টে আছেন তাও জানি।আর এরপরেও সকলে আপনাকে দোষ দিচ্ছে,ইভেন আমিও।আচ্ছা কান্না থামান তো আগে….চোখ মুছুন।লেটস সেলিব্রেট ফর ইউর সাকসেস।”

“আর সেলিব্রেট!বাবা মা এখন থেকেই যা শুরু করেছে…”

“কেনো আঙ্কেল আন্টির কি সমস্যা?”

“বাবা মা চায় না আমি বাড়ি ছেড়ে দূরে গিয়ে কাজ করি।”

“আপনার অফিস কোথায় আহেলি?”

“আপাতত ট্রেনিংয়ের জন্য মুম্বাই যেতে হবে….ওখানে সাতমাস ট্রেনিং নিয়ে তারপর কলকাতার ব্রাঞ্চ জয়েন করবো।”

“ওহ…..”

প্রান্তিকের নিচু হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে আহেলি গলা ঝাড়লো তারপর হাসার চেষ্টা করে বললো,,,,

“সাতমাস অনেকটা সময়….বাইরে থাকলে হয়তো আমি নিজেও মেন্টালি স্টেবল হবো।নতুন শহর,নতুন মানুষের ভিড়ে এই শহরের তিক্ত স্মৃতি ভোলার চেষ্টা করবো।”

“সেইই….নতুন শহরে গিয়ে এই শহরের মানুষদের ভুলেই যাবেন”

“আমি তা কখন বললাম?আর বাদ দিন এসব….এবার কিন্তু আমি নিজে থেকে একটা ট্রিট দেবো আপনাকে।আর হ্যাঁ মুম্বাই থেকে ফিরে এসে দেখি যেনো সেটেল্ড হয়ে গেছেন।এতো হ্যান্ডসাম আর চার্মিং ডক্টর….পাত্রীর অভাব হবে নাকি?”

আহেলির কথায় ম্লান হাসলো প্রান্তিক।একবার ঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে বললো,,,

“এবার ওঠা যাক।আমার ডিউটি আছে…..”

“আর আমাকেও বাড়ি ফিরতে হবে….আর তিনদিন পরই যাওয়া।প্যাকিং সেরে ফেলতে হবে…যদিও কোয়ার্টার ওরাই দেবে তাই তেমন প্রবলেম নেই।আর হ্যাঁ এরমাঝেই ট্রিট পেয়ে যাবেন।”

প্রান্তিক আর আহেলি দুজনই ঘাট থেকে রাস্তার সামনে এসে দাঁড়ালো…আহেলি নিজের স্কুটিতে উঠে প্রান্তিককে বিদায় জানিয়ে ফেরার পথ ধরতে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো প্রান্তিক।ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে পায়ের সামনে পরে থাকা পাথরটা পা দিয়ে ছুড়ে দূরে পাঠালো।হটাৎ করেই ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে।প্রান্তিক নিজের বাইকের কাছে না গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো রাস্তায়…..রাস্তার ধারের একটা চায়ের দোকানে তখন বাজছে,,,,

কত কথা বলা হলো না প্রিয়
কত সূর্যমুখীর মন ভার,
আমার শহর জুড়ে কুয়াশা ঘুম
নীরবে জমা ব্যথার পাহাড়।

ভুলে যাওয়া গানের কলির মতো সময়
ফিরে ফিরে আসে শিশির ভেজা ঘাসে,
ভুলে যাওয়া গানের কলির মতো সময়
ফিরে ফিরে আসে শিশির ভেজা ঘাসে,
ছায়াপথ হেঁটে রোজ একা বাড়ি ফিরি
জোনাকিরা আমায় ভালোবাসে।

কত পথ হাঁটা বাকি রয়েছে প্রিয়
কত সন্ধ্যের পথ অন্ধকার,
হেঁটে চলি আজ সে পথ ধরে
যে পথ আমার একার।

চলবে……..