মন পায়রা পর্ব-০৫

0
380

#মন_পায়রা
#নুসাইবা_ইসলাম
#৫
#অতীত

তিথিঃ আপনি এখানে ভাই কই?

ফায়াজঃ তামিম তো ফিহা কে নিয়ে কোথায় না গেলো,আর আমাকে বললো তোমাকে খাইয়ে দিতে।

তিথিঃ আমি আপনার কাছে খাবো না, ভাইকে ডাকেন।

ফায়াজঃ এখন না বলে কি হবে খাওয়া তো প্রায় শেষ ই হ্যাঁ এতোক্ষন তো দিব্বি খেলে।

তিথিঃ আমি কি দেখছি এখানে আমার ভাই না আপনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। আমি তো ভাবছি ভাই,আর আমি তো গেমস খেলছিলাম।

ফায়াজঃ এই গেমস এ কি পাও তুমি হ্যা, এইসব খেলো কেনো?

তিথিঃ আমার ভালো লাগে আমি খেলবো আপনার কি? যান সরেন আমি আপনার কাছে খাবোনা।

ফায়াজঃ খেতে হবে নাহলে যেতে দিবোনা!

তিথিঃ ভাইয়াআআআআআআআ।

তিথির ডাক শুনে তামিম ও ফিহা চলে আসলো এক দৌড়ে,

তামিমঃ কি হয়েছে বোন চিৎকার করলি কেনো এই শালা আমার বোন কে কি করছিস?(ফায়াজ কে উদ্দশ্য করে)

ফায়াজঃ আমি কি জানি তোর বোনের মাথায় কখন কি চাপে এতক্ষণ তো দিব্বি খাচ্ছিলো, হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠলো নে ধর তুই ই খাওয়া।

তামিমঃ বাচ্চা মেয়ে কে খাওয়াতেও শিখিশ না সর শালা।

ফায়াজ আর কিছু না বলে তামিম কে খাবারের প্লেট টা দিয়ে দিলো,

তামিমঃ নে বোন হা কর।

তিথিঃ আমি আর খাবোনা (মুখ ফুলিয়ে)

তামিমঃ কেনো খাবিনা?

তিথিঃ তুমি কেনো তোমার ঐ উগান্ডা মার্কা বন্ধু কে খাবারের প্লেট দিয়া গেলেম?

ফায়াজঃ কিইইই বললি আমি কি?(রেগে গিয়ে)

তিথিঃ উগান্ডা উগান্ডা!(হাসতে হাসতে)

তামিম ফিহা সবাই হেসে দিলো,ফায়াজ আর কিছু না বলে নিচে চলে গেলো।তামিম ও তিথি কে খাইয়ে দিলো তারপর তারা বাসায় চলে গেলো।দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে এলো,তামিম তিথির রুমে গেলো।

তামিমঃ কিরে বিকেল হয়ে এলো শাকিল কে দেখতে যাবি না?

তিথিঃ হ্যা ভাইয়া যাবো তো চলো না এখনি যাই।

তামিমঃ তাহলে এই জামা টা পড়ে নে।(একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে)

তিথিঃ নতুন জামা থাংকু ভাইয়া কিন্তু এখন নতুন জামা কেনো ভাইয়া।

তামিমঃ এমনি ড্রেস টা পছন্দ হলো তাই কিনে নিলাম তোর জন্য।

তিথিঃ আচ্ছা ভাইয়া গাড়ী বের করো আমি ৫ মিনিটে রেডী হচ্ছি।

তামিমঃ আচ্ছা ভালোমতো রেডি হয়ে নে,

তিথিঃ আচ্ছা।

তামিম বাইরে চলে আসলো গাড়ী বের করলো,তিথি নতুন জামা পড়ে বাইরে আসলো নীল কালারের একটা সুন্দর জামা।নিচে ফায়াজ দাড়িয়ে ছিলো তিথি কে দেখে চোখ যেনো ফেরাতেই পারছে না।

ফায়াজঃ আজ বাচ্চা পরিটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে,!

তিথিঃ এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো হ্যা বজ্জাত বেডা মেয়ে মানুষ আগে দেখেন নাই?(ভ্রু কুচকে)

ফায়াজঃ দেখেছি তবে তোমার মতো ঝুগড়ুটে দেখি নাই।

এর মধ্যে তামিমের ডাক শুনে এবার দুইজন চুপ করে যায়।

তামিমঃ কই রে তারাতারি আয়?আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে

তিথিঃ আসছি ভাইয়া দাড়াও তো।

এই বজ্জাত এর জন্য আমার সবসময় লেট হচ্ছে,বেডা মানুষ যে এতো ঝগড়া কর‍তে জানে তা আমি জানতাম না।

তামিমঃ ফায়াজ তোর হাতে কিন্তু ১ ঘন্টা সময় যা করবি তুই ফিহা সম্পূর্ন ১ ঘন্টার মধ্যেই করে ফেলবি।

ফায়াজঃ i will try my best!(আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো)

তামিমঃ শালা কাজ হয়ে যায় যেনো,আমার একটা মাত্র আদরের বোন। ওর কাজে কি ত্রুটি চাই না,যাই এবার

ফায়াজঃ ওকে দেখেশুনে যা, আর আমাকে গিয়ে কল করিস আমি অপেক্ষায় থাকবো।

তামিমঃ ওকে।

বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলো আর রওনা হলো হসপিটালের দিকে,তখন তিথি তাকে এমন প্রশ্ন করলো তাতে তামিম ঘাবড়ে গেলো!

তিথিঃ ভাইয়া উনাকে কিসের কথা বললা?আমাকে বললা না তো?

তামিমঃ ঐ একটা কাজ আছে বুঝলি ফায়াজ তো জব এ ঢুকলো, ওর অফিসিয়াল কথা হচ্ছে।

তিথিঃ থাক অইগুলা শুনে আমার আর কাজ নাই হ্যা যা হওয়ার হক, শাকিল ভাইয়ার ওখানে যেতে আর কতোক্ষন লাগবে ভাইয়া?

তামিম মনে হয় হাফ ছেড়ে বাচলো, এভবাএ মিথ্যা বলা যে কতোটা মুশকিল তা বলা যায়। তার উপর তিথি যেই চালাক বুঝে যায় কখ কে জানে? আচ্ছা ফায়াজ এর তিথি এতো ঝগড়া কিভাবে করে? এতোকিছুত মধ্যে তামিম এর মন যে খারাপ তা কাউকে বুঝতে দিলো না,নিজের মধ্যে আকাশ সমান কষ্ট চেপে রেখে হাসি মুখে ঘুরছে।

তামিমঃ এইতো আর বেশি দেরি নেই, তুই চপচাপ বসে থাক,

তিথিঃ আচ্ছা।

তিথি এবার শান্ত হয়ে বসলো,তারপর তারা হসপিটালে পৌছে গেলো, শাকিলের কেবিনে গেলো। গিয়ে দেখে শান্ত ঘুমিয়ে আছে। তিথির গলার আওয়াজ পেয়ে শাকিল জেগে উঠে,

তিথিঃ শাকিল ভাইয়া এইভাবে কেমনে হইলো তোমার?

শাকিলঃ আর বলিশ না বুড়ী বাইক নিয়া বের হয়েছিলাম একটা গাড়ী এসে মেরে দেয়,আর অবস্থা হয়। শাকিল তিথি কে বুড়ি বলে ডাকে,

তিথিঃ কি বলো মারতে পারো নাই শালাকে,এই বলে সাথে সাথে জিব্বায় কামর দিয়ে দেয়। সে বুঝতে পারে বড় ভাইয়াদের সামনে বকা দিয়ে ফেলছে,

শাকিলঃ ধরতে পারিনাই রে বুড়ী তো তুই কেমন আছিস? পড়ালেখা কেমন চলে হ্যাঁ।

ওরা কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে আসলো। তামিম ভাবলো এবার তাদের বেরোনো উচিৎ,তাই বিদায় নিলো শাকিল থেকে।

তামিমঃ চল তিথি এখন বাসায় যাই ওকে তো ২/১ দিনের মধ্যে রিলেজ করে দিবে তারপর বাসায় আসবে।

তিথিঃ আচ্ছা শাকিল ভাইয়া আসবে কিন্তু।

শাকিলঃ অবশ্যই যাবো বুড়ী।

তিথিঃ আচ্ছা ঠিকমতো ঔষুধ খাবে কিন্তু আমি চলে গেলাম ঠিকমতো খাবার খাবে।

শাকিলঃ আচ্ছা বুড়ি আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করা লাগবে না বুঝলি।

তারপর তামিম তিথি কে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো, চারোদিকে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে,গাড়ির আওয়াজ। তিথি গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়লো,তিথির এটা বদঅভ্যাস যে গাড়িতে ঘুমাই পড়ে।তামিম বাড়ির সামনে এসে দেখে তিথি ঘুম এ তাই বোনকে না জাগিয়ে কোলে উঠায়, কোলে উঠানোর আগে৮ ফায়াজদের মেসেজ দিয়ে দেয় ছাদে যাওয়ার। তিথি ঘুমানে তাদের আরো সহজ হলো, তিথিকে নিয়ে লিফট উঠে সোজা ছাদে চলে আসলো,এসে তিথিকে দোলনায় বসালো,আর ডাকতে লাগলো। কারো ডাকে তিথি কাচা ঘুম থেকে কোনোরকম তাকায় আর যা দেখে তাতে তার চোখ ছানাবড়া বয়ে যায়! তার সামনে টেবিল এ কেক সাজানো রয়েছে, ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে পুরো ছাদ অনেক সুন্দর করে সাজানো। মা-বাবা-ভাইয়া-ফিহা আপু-ফায়াজ ভাইয়া-আংকেল আনটি সবাই এখানে। তিথির এসব দেখে ঘুম পালিয়ে যায় আর উঠে খুশিতে লাফাতে থাকে। যা দেখে সবাই জোরে হেসে দেয়।

সবাই একসাথে বলে উঠে, হ্যাপি বার্থডে প্রিন্সেস মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্ন অফ দা ডে।

তিথিঃ তোমাদের সবার মনে ছিলো? তাহলে আমাকে আগে জানাও নাই কেনো? সারাদিন আমি কতো মন খারাপ করে ছিলাম জানো?

তিথির মাঃ আরে আমি বলতে চাইছিলাম সোনা কিন্তু তামিম না করায় আর করিনি।

তামিমঃ তিথিপাখিকে তো আমরা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি, দেখো ন ফায়াজ আর ফিহা এসব সব ডেকোরেশন করেছে।

তিথি এবার ফিহা কে জরিয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বলে,থ্যাংকু ফিহুপি। আর ফায়াজেত দিকে তাকিয়ে বলে থ্যাংকু ভাইয়া! ফায়াজ মনেমনে ভাবে,ফিহার বেলায় জরিয়ে ধরা আর কিস আর আমার বেলায় শুধু থ্যাংকিউ? আনন্দের সাথেই কেক কাটা হলো সবাই অনেক মজা করলো কে জানতো এই মজাই তিথির জিবনের শেষ।

চলবে.?