#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২০
মেইন ডোর খোলা রেখে আদৃত পায়চারী করছে এদিকে ওর দৃষ্টি বাইরের দিকে অটল কাঙ্ক্ষিত রমনীর আগমনের আশায়,আদৃতের গম্ভীর মন পিঞ্জর খানা যে আজকে বড্ড চিন্তায় মশগুল আঁখি নামক রমনীকে নিয়ে,হঠাৎই আদৃতের অশান্ত মনে খনিক শান্তনার ছোঁয়া পাইয়ে ঘরে প্রবেশ করলো আঁখি,আঁখিকে দেখে অল্প উত্তেজনায় ছুটে গেলো আদৃত আঁখির পানে,ললাটে এখনও চিন্তার ছাঁপ স্পষ্ট ফুঁটে আছে যা আঁখির দৃষ্টির অগোচরে গেলো না।আদৃত এবার বেশ ধমক দিয়ে আখিঁকে বলতে নিলো।
এসব কোন ধরনের ম্যানার মিস আঁখি,এতো রাত্রে কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?কাউকে বলে যাবার প্রয়োজনও মনে করলেন না কোথায় যাচ্ছেন,ফোনটাও ধরছেন না,আপনার নিজেকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই ভালো কথা এর মানে তো এটা নয় অন্য কারো আপনাকে নিয়ে কোনো চিন্তা হয় না।
আঁখি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদৃতের পানে,লোকটার ধমকে যে লুকিয়ে আছে আঁখির জন্য একরাশ দুশ্চিন্তা, যে খেয়ালে নেই কোনো স্বার্থের লালসা, লোকটা যে নিঃস্বার্থ ভাবে আঁখিকে নিয়ে ভাবে,সময়ের সাথে আদৃতের জন্য আঁখির মনে থাকা সম্মানটা যে দিন দিন বাড়ছেই,আঁখি কখনো ভাবে নি কোনো পুরুষ মানুষও এতোটা পরিপূর্ণ হতে পারে,হয়তো আদৃতকে না দেখলে তা কখনো মেনে নিতেও ব্যার্থ হতো সে,এসব খেয়ালের বশে আঁখি একটা ঘোরে চলে গেছে ততোসময়ে আদৃতের পানে দৃষ্টি অটল রেখে,আঁখির হেলদোল না দেখে আদৃত একটু জোর গলায় ওকে ডাক দিলে আঁখি ঘোরের রাজ্য থেকে বেড়িয়ে এলো।
এই যে মিস আঁখি আমার কথা আপনার কানে যাচ্ছে না?কোথায় ছিলেন আপনি?
ওই,আসলে একটা কাজ পড়ে গেছিলো তাই যেতে হলো আরকি।
কথাটা বলে আঁখি ছাঁদের পানে হাঁটতে লাগলো,আদৃত কিছুসময় ঠায় দাঁড়লো নিজের জায়গায় তারপর কিছু একটা ভেবে আঁখির পিছু গেলো।
ছাঁদের প্রান্ত ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে আখি,মৃদ্যু বাতাস বয়ে যাচ্ছে ওর শরীর দোলিয়ে, আজকের বাতাস কেমন একটা শীতল শিহরণ তৈরী করছে আঁখির শরীরে,বড্ড ভালোই লাগছে ওর এই বাতাস,তবে মাথায় যে একরাশ দুশ্চিন্তাও নিজেদের অবস্থান পাকা করে বসে আছে,হঠাৎই পিনপিন নিরবতার রেশ কাটিয়ে পাশেই কারো উপস্থিতি টের পেলো,উক্ত ব্যক্তির দিকে না তাকিয়েই আঁখি তার অনুমানটা ঠিকই করতে পারলো,ও জানে লোকটা আদৃত ছাড়া আর কেউ হবেও না।
এদিকে আদৃত নীরবতা কাটালো নিজের কিছু কথা দিয়ে ।
আমি জানি মিস আঁখি হয়তো আমি আপনার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো জানার অধিকারটুকু রাখি না,তবে কিছু কিছু কথা কারো সাথে ভাগাভাগি করলে মনের বোঝাটা অনেকাংশে কমে যায়,আমার যতোটুকু অনুমানে আসছে আজকেও আপনাকে খারাপ কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে আপনি চাইলে আমার সাথে তা ভাগাভাগি করতেই পারেন।
আঁখি ঘন এক নিশ্বাস টেনে বললো,
আমিও যে নিজের মনের বোঝাগুলো দিয়ে কারো মনের শান্তি নষ্ট করতে চাই না,তবে হ্যাঁ আপনি যেহেতু জানতে ইচ্ছুক আমার বলতেও দ্বিধা নেই।
তারপর আঁখি সবটা আদৃতকে খুলে বলে……
ঘটনার পর আমি আয়েশা আর মাকে আয়েশার একটা ফ্রেন্ডের বাড়িতে রেখে এসেছি,শুধু আজ রাতের জন্য,কাল সকালে কোথাও একটা ভালো ঘর দেখে ওদের থাকার ব্যবস্থা করবো।
আদৃত এবার দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে বললো।
ড.আয়ানকে নিয়ে এর থেকে ভালো কোনো চিন্তাধারা আমার মধ্যে ছিলো না,এসব কিছু উনার জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার, তবে এভাবে আয়েশা আর আন্টিকে অন্যত্র রাখা ভালো হবে না মিস আঁখি,এতো বড় শহরে ঘর কোথায় পাবেন এতো তাড়াতাড়ি ,তাছাড়া এডভান্স ছাড়া কোথায় ঘর পাওয়াও যাবে না,এমতাবস্থায় আপনি সবকিছু কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন?
দেখি কি করি।
আপনি বরং উনাদের এখানে নিয়ে আসেন।
সেটা কি করে হয়?আপনি একজন ভালো মানুষ বলে সবাই আপনার উপর চড়ে বসলে তো হবে না,তাছাড়া আয়েশা আর মা এভাবে করো কাছ থেকে সাহায্য নিতে কখনো রাজি হবে না।
সাহায্যের কথা কে বলছে,যদি উনাদের এতে অসুবিধে হয়,তবে আমাদের বাড়িতে আয়েশাকে একটা জব পাইছে দেই,আমাদের ঘরের একজন কেয়ারটেকার চলে গেছেন কারনবশত,নতুন কেয়ারটেকারের জায়গায় ওকে রেখে নিবো,নিজের পারিশ্রমিকের বদলে এখানে থাকাটা তো আত্মসম্মানে আঘাত লাগার কারন হতে পারে না মিস আঁখি।তাছাড়া ওরা এখানে থাকলে মা আর দ্বিদুর দিনটাও ভালো কাটবে, আমরা ঘরে না থাকায় উনাদের দিনগুলো কেমন একঘেয়ে হয়ে উঠে,উনারা এখানে আসলে সবার জন্যই ভালো হবে।ভেবে দেখেন মিস আঁখি বাইরে এতো জলদি করে কোনো জব পাওয়াও অনেক কঠিন ব্যাপার।
আপনি কথাটা অযুক্তিক বলেন নি ড.আদৃত,আমি আয়েশার সাথে কথা বলে দেখবো।
______________________
কেটে গেছে আজ অনেকটা দিন,সবকিছু ভালোই চলছে,আঁখি আয়েশাকে বুঝিয়ে বলে চৌধুরী ম্যানশনে নিয়ে এসেছে, এখন ও এখানে কেয়ারটেকার হিসেবে আছে,কিন্তু ঘরের সবাই ওদের নিজেদের পরিবারের একটা অংশই মনে করেন,নোমানও জানতে পারে আয়েশার বিষয়ে সবকিছু, আয়েশার এমন পদক্ষেপে ও আয়েশাকে যথেষ্ট সমর্থন জানায়।এদিকে সময়ের সাথে আয়েশার মনে নোমানকে নিয়ে আলাদা এক ভালোলাগার রাজ্য গড়ে উঠছে, আয়ান বার বার আঁখির আগ পিছন ঘোরা এখন অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছে,তবে ওকে আর আদৃতকে একসাথে দেখে ওর মনে খারাপ লাগা কাজ করা বন্ধ হয় নি এখনও বরং বাড়ছে সময়ের সাথে, কখনো কখনো আঁখিকে খুঁচিয়ে দু-চারটে কথা বলেই দেয় যা আঁখি নিজের গায়ে মাখে না, তবে মা বোনের আর কোনো খোঁজ নেয়নি ও,আয়ান কি চায় হয়তো সে নিজেও তা জানে না,আঁখি আর আদৃতের মধ্যে এ ফাঁকে অনেক ভালো বন্ধুত্ব স্থাপন হয়েছে তবে মাঝ দিয়ে ওদের খুনসুটি টা থেকেই যায়।
আজকে আয়ান একদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আছে,শরীরটা ওর বেশ ভালো না বেশ জ্বর জ্বর ভাব মাথা ধরেছে খুব তাই শুয়ে আছে এদিকে ওর সুন্দরী রমনী আধাআধো আধুনিক কাপড়ে সেজেগুজে একদম তৈরি, উনার এমন সাজগোজের কারন জানতে এবার আয়ান নিজের মস্তক তুলে নিজের সুন্দরী রমনীর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়লো।
মাহি কোথায় যাচ্ছো তুমি?
বন্ধুদের সাথে ঘুরতে, কেনো?
আমার শরীরটা খারাপ আজকে বাইরে না গেলে হয় না।
দেখো আয়ান ঘরে তো একটা চাকর আছে কিছু লাগলে ওকে বলো।আমি থেকে কি করবো?
তোমার কমতি কি চাকর পুরন করতে পারবে?
আমি থেকেও কি আর করতে পারবো আমি আগেই বলেছি এসব সেবা যত্ন আমার স্ট্যাটাসের সাথে যায় না।
আমি সেবাযত্নের কথা বলছি না মাহি,মনের সাপোর্ট বলেও কোনো একটা জিনিস থাকে।
হা হা হা হা,মনের সাপোর্ট, কি যে বলো তুমি বেবি,আজকাল না তুমি কেমন ফিল্মি হয়ে যাচ্ছো,তুমি বরং রেস্ট করো আমি চলি তোমার এসব ফিল্মি ডায়লগ শুনতে আমি মোটেও ইচ্ছুক না,আর হ্যাঁ কালকে আমার মা বাবা আর রনি আসছে, ওরা যথেষ্ট আরামপ্রিয়, আমি ওদের খাতিরদারিতে কোনো কমতি রাখতে চাই না,আর ওরা এখানে এসে অনেকদিন থাকবে,তাই বলছি কি তুমি আরও দু-চারটে চাকর বাড়িয়ে দিয়ো ঘরে,এক চাকরে কি হয় আজকাল।
হোয়াট!কি বলছো মাহি এসব তুমি?এমনিতেই তোমার জন্য কোনো কাজের লোক ঘরে আসে না,অনেক কষ্টে একজনকে আনতে পেরেছি,আমি এদিকে প্রফেশনে নতুন চার পাঁচটা চাকর ঘরে রাখার মতো ক্ষমতা এখনও আমার হয়নি,এছাড়াও একাউন্টের টাকা তো আর তুমি বাঁচিয়ে রাখতেও চাও না।
সিরিয়াসলি আয়ান বেবি তুমি আমাকে এটা বলতে চাইছো যে আমি তোমার সব টাকা খরচ করে ফেলি?
আমি সেটা বলতে চাই নি,তবে সেটাই তো সত্য, তুমি যখন তখন এটা ওটা শপিং করছো বন্ধুদের ট্রিটের উপর ট্রিট দিচ্ছো,পার্টি করছো, ক্লাব যাচ্ছো ফিউচার সেভিংস বলতেও কিছু থাকে মাহি।
সেভিংস করার মতো মেয়ে মাহি না,বিয়ে যখন করেছো তখন আমার সমস্ত চাহিদা তোমাকেই পুরন করতে হবে এবং সেটা কিভাবে হবে তা জানতে আমি আগ্রহী নই, চলি আমার দেড়ি হচ্ছে।
_______
আদৃত বড়ই মায়াভরা এক অপলকদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিজের ওয়ালেটে থাকা রমনীর ছবির দিকে,ওকে ভুলতে গিয়ে যে ওর সব স্মৃতি নিজ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে কিন্তু শত চেয়েও কিছু জিনিস নিজের থেকে দূর করতে পারে নি আদৃত,এই ছবিটাও যে সে সব জিনিসের একটা অংশ মাত্র,ছবি দেখারত অবস্থায় কারো কিছু কথা শ্রবন ইন্দ্রিয়তে নাড়া দিয়ে উঠলো আদৃতের।
পিছুটানে পড়ে থাকা ভালো না ডাক্তার সাহেব,এমন কিছু আপনার মতো গম্ভীর ব্যক্তিত্বকে শোভা দেয় না।
ছবিতে মগ্ন দৃষ্টি স্থাপনরত অবস্থায় আদৃত উত্তর দিলো।
হতে পারি আমি গম্ভীর ব্যক্তিত্বের অধিকারি তাই বলে আমি তো আর অনুভূতি শুন্য না।
হুম অনুভূতি…….অনুভুতি মনের অনেক সুন্দর একটা অংশ ,যা সবার মধ্যেই থাকে,হয়তো কারো ভিতর বেশি আর কারও কম,তবে অনুভুতি ছাড়া কোনো মানুষ হয় না,তাই আপনারও যথেষ্ট অনুভুতি আছে তা আমি মানতে কখনো নারায হবো না।কিন্তু একটা কথা জানেন তো ড.আদৃত তিক্ত অনুভূতির টানে কখনো পড়ে থাকতে নেই,হয়তো আমার এমন কিছু বলার অধিকার আপনাকে নেই তবুও একজন বন্ধু হিসেবে কিছু কথা বলতে চাই আপনাকে।
যেমন?
যেমন পিছুটানে না থেকে জীবনে এগিয়ে যাওয়া।দেখেন ড.আদৃত কারো জন্য তো জীবন থেমে যায় না,হয়তোবা আরোহী আপনার কাছে নেই,দূর্ভাগ্যবশত ও চলে গেছে অনেক দূর তাই বলে তো এই নয় আপনি ওর স্মৃতিতে বাকি জীবন কাটিয়ে দিবেন।জীবন কারো জন্য থমকে দাঁড়ায় না, বরং একা জীবনটা পার করা বড়ই দূরুহ।
আমাকে তো খুব ভালোভাবে বলেন দিলেন,সে জিনিসটা কি আপনি নিজে করতে পারবেন।
আঁখি এবার ঠোঁটের কোনে মৃদ্যু হাসি ফুঁটিয়ে উত্তর দিলো।
হয়তো প্রথম ভালোবাসার জায়গা কেউ নিতে পারে না, কিন্তু সে ভালোবাসা প্রাপ্তির মিষ্টি স্বাধ কোনো ভাগ্যবান ছাড়া কারো কপালেই আজকাল ঝুটে কোথায়,তাই বলে যে কেউ দ্বিতীয়বার সুযোগ পায় না তেমনও তো নয়,ভাগ্য সবাইকেই দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না ড.আদৃত, আপনার কাছে সুযোগ আছে নিয়ে নিন,সুযোগটা যদি জীবন আমায় দিতো তবে হয়তো আমিও তা হাত বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইতাম না।
কেনো? আপনার কেনো মনে হয় আপনি সুযোগ পাবেন না?
ললাটে সন্দেহের ভাজ ফেলে প্রশ্ন করলো আদৃত,এবার আঁখি মৃদ্যু হেসে আমতা কন্ঠে বললো।
ও কিছু না এমনিতেই বললাম আরকি,ছাড়েন না এসব কথা দেখেন না আজকের দিনটা কতো সুন্দর, আর এই নিন কফি আমি কখন বানিয়ে এনেছি কিন্তু আপনাকে দিতেই ভুলে গেলাম,নিন খেয়ে নিন।
আঁখির শেষের কথাগুলো খুব একটা হজম হলো না আদৃতের,বুঝতে বাকি রইলো না আদৃতের আঁখি বড় কিছু লুকোচ্ছে তবে তা কি জানতে ইচ্ছুক হলো আদৃতের কৌতূহলী মন।
_________________
সচরাচর বাড়িতে থাকা হয় না আয়ানের তাই এতোদিনে কারো শুন্যতা মনে নাড়া দিয়ে উঠে নি ওর,রাত পোহালেই কাজে যায় আর দিনশেষে বাড়ি ফিরে এ ফাঁকে এতো কাজের চাপে কাউকে মনে করার সময় কোথায় ওর,কিন্তু আজ যে অনেক স্মৃতিই ধরা দিচ্ছে আয়ানের মন পিঞ্জরের এক কোনে,সারা বাড়িতে ভুতের মতো একা হাঁটছে, কোথাও কেউ নেই,একটা কাজের মেয়ে রান্না ঘরে টুকটাক শব্দ করে কি সব করছে,হয়তো রান্নায় ব্যস্ত সে,তবে সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই আয়ানের,জ্বরে শরীর জ্বলছে ওর,ওষুধ খাওয়ায় মাথা ব্যাথা একটু ধমলেও মনের ব্যাথা থামে নি,কেনো যেনো বুকে বড্ড চিন চিন ব্যাথা অনুভুত হচ্ছে জানে না এর মানে, মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে,রোগ সারাতে ওষুধের থেকেও তাড়াতাড়ি কাজ করে তৃপ্তির এক ঝলক হাসি,এই কথাটা আঁখি প্রায়ই বলতো,আয়ানের স্পষ্ট মনে আছে যখনি আয়ান অসুস্থ হয়ে বাড়িতে থাকতো আঁখি নিজের কাজ কর্ম সব ছেড়ে ওর পাশে থাকতো সারাদিন, শারীরিক সেবা থেকে শুরু করে মানসিক সেবা পর্যন্ত সব রকম সেবা করতো আয়ানের,ওর মন আর শরীর ভালো রাখতে আঁখি যেনো দিন রাত এক করে দিতে পারতো,আঁখি তো আঁখি সাথে যে ওর মা বোনও কম ছিলো না,আয়ানকে অল্প কাশতে দেখলেও আয়েশা গরম পানি নিয়ে খাঁড়া থাকতো ওকে খাওয়াবে বলে,এদিকে সেদিন তো আর ঘরের বাইরে যাওয়া হতো না আয়ানের শুধু মিরা রাহমানের কাকুতিতে,অল্প হাত কেটে গেলেও তিন তিন জন সেবিকা উপস্থিত থাকতো ওর পাশে,ওরা থাকতে কখনো এই ঘরকে একা মনে হতো না আয়ানের,পুরোদিন ঘরটা যেনো ঝুমঝুম নাচ করতো,হাসি খুশি আর হৈ-হুল্লোড়ে ভরে থাকতো এ ঘরখানা,কিন্তু আজ যে এ ঘরের কোনো কোনে কোনো হাসির ঝলক নেই,শুধু আছে নিস্তব্ধতা।
আয়ান যেদিকেই তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে এখনই আয়েশা আঁখি ছুঁটবে একে অন্যের পিছন আর মা ওদের দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি থামাতে ব্যস্ত হবেন, আজ আয়ানের সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে, আজ আয়ান অনেক একা,যেমনটা আয়ান চাইছিলো তেমনটাই তো হলো,আয়ান তো চায় নি আঁখি এখানে থাকুক,ও তো আয়েশাকেও ঘর থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছিলো বিয়ে দিয়ে,আর মার জন্য তো আলাদা টান আর ছিলো না ওর তবে আজ কোনো পিছুটানে মন ছুঁটছে?
এদিকে চৌধুরী ম্যানশনে হৈ-হুল্লোড় পড়েই আছে,আয়েশার গোপন ডায়েরি নিয়ে ছুঁটছে আঁখি আর আয়েশা পিছনে,এদিকে সায়েদা ওর লিখার কলম নিয়ে ছুঁটছে,আসলে আয়েশা তখন নিজের লুকন্ত ডায়রিতে মনের কিছু অব্যক্ত বানি ফুঁটিয়ে তুলছিলো তখনি সায়েদা আঁখি দুজন দুষ্টামি করে ওর ডায়েরি আর কলম নিয়ে ছুঁটতে লাগলো,ছুঁটতে ছুঁটতে ওরা হল রুমে চলে আসলো সেখানে দিদু, ইশা মা আর আমির চৌধুরী বসে ছিলেন,ওদের দুষ্টামি দেখে উনাদের হাসি থামছে না,আদৃত আর নোমান তখন হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে মাত্র এদিকে আয়েশা আঁখির হাত থেকে ডায়েরিটা ছিনিয়ে নিয়ে নিজেকে বাঁচাতে ছুঁটতে শুরু করেছিলো কিন্তু বেখালি হয়ে নোমানের সাথে ধাক্কা লাগলো ওর যাতে ডায়রিটা নিচে পড়ে গেলো,এদিকে আমাদের আঁখির ধাক্কাটা আদৃতের সাথে লাগলো,খনিকে আমাদের বাঘিনী ক্ষেপে উঠলো।
এই যে ড.আদৃত,যখন তখন কালো বিড়ালের মতো রাস্তা কাটার অভ্যাস আপনার যাবে না, না কি?আপনার জন্যই আমি আয়েশাকে ধরতে ব্যার্থ হলাম।
এতো বড় হয়া সত্ত্বেও বাচ্চাদের মতো ছুটাছুটি করছেন আপনি,দৌঁড়াতে গিয়ে এসে ধাক্কা দিচ্ছেন আমায় আর রাগটাও আমাকেই দেখাচ্ছেন।
তো দৌঁড়াবো না তো কি করবো, আপনার মতো কৃপনতা করে একটু হাসি ঠাট্টাও করবো না?
অকাজে এনার্জি লস্ট আদৃত করে না।
তবে যান মি.আদৃত হাসপাতালে গিয়ে কাটাকাটি করেন ওটাই আপনাকে স্যুাট করে।
আদৃত এবার আর কিছু বললো না আঁখিকে,বরং চোখ দুটি ছোট করে ওর দিকে তীক্ষ্ণ চাহনি দিয়ে চলে গেলো,আঁখিও সুযোগ বুঝে একটা ভেংচি কেটে দিলো ওকে।
এদিকে নোমানের পায়ের পাশে পড়লো ডায়েরিটা,নোমান তা উঠাতে গেলে এর আগেই হরবরি করে ওটা আয়েশা উঠিয়ে নেয়, আমতা আমতা করে এবার বললো।
সরি নোমান সাহেব আসলে খেয়াল করি নি,অতপর নোমানের কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করে সেখান থেকে পালালো আয়েশা,আয়েশার এমন কান্ডে কেমন একটা সন্দেহ জাগলো আঁখির মনে আয়েশাকে নিয়ে।
একটু পর কলিংবেল বেজে উঠলো,সায়েদা এগিয়ে গেলো দরজা খোলতে,দরজা খোলতেই সামনে খাঁড়া অবস্থায় পেলো সুদর্শন এক বলিষ্ঠ যুবক,ফর্সা চেহারায় কালো সানগ্লাস মানিয়েছে ভালো,এই প্রথম কোনো ছেলের দিকে ২০ সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে একধ্যানে তাকিয়ে আছে সায়েদা ,এবার ছেলেটি ওর সামনে তুড়ি বাজালে ওর ধ্যান ভাঙলো।
এই যে সরবেন আপনি ভিতরে যাবো,
সায়েদা এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো।
আপনি কে?
আমি তাসবীর তাওয়াফ খান পলক,আঁখির সাথে দেখা করতে এসেছি।
ওর সাথে কি কাজ আপনার?
সেটা আমি আপনাকে কেনো বলবো?তাছাড়া আমি বাচ্চাদের সাথে কথা বলি না।
হোয়াট! আপনাকে আমার বাচ্চা মনে হচ্ছে?আমি কোন দিক থেকে বাচ্চা।
হা হা হা হা,আপনি কোন দিক থেকে বাচ্চা না সেটা বলুন।
তারপর হাসতে হাসতে তাসবীর ভিতরে ঢুকে গেলো,আঁখি নিজের ভাইকে দেখে তো মহাখুশি,ও সবার সাথে নিজের ভাইয়ের পরিচয় করিয়ে দেয়, ওকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে থাকে,এদিকে সায়েদা তো রাগে ফুলছে,এতো বড় সাহস ওই ছেলেটা ওকে বাচ্চা বললো,ওকে এভাবে অসম্মান করলো,তাছাড়া গল্পের ফাঁক দিয়ে ওকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
চলবে………..