মন পিঞ্জর পর্ব-২২

0
856

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২২

রাগে লাল বর্ন ধারন করে আছে আয়ানের চেহারা,একটু আগেই একটা কল আসলো আয়ানের নাম্বারে, লোকটার সাথে কথা বলার পর আয়ানের রাগে বেহাল দশা হলো,হনহনিয়ে আসলো বাড়িতে,ওর শ্বশুর শ্বাশুড়ি আর একমাত্র শালা বসে আছে ড্রায়িংরুমের সোফায় আরামছে,এদিকে আয়ান মাহির নামে গর্জন করতে করতে বাড়িতে ঢুকলো ,এতে ওর শ্বশুর শ্বাশুড়ি আর শালা অল্প অবাক হয়ে ওর গর্জনের কারন জানতে চাইলেন কিন্তু আয়ান তার জবাব দেওয়াটা এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করলো না, বর্তমানে কোনো জবাব দেওয়ার মানসিকতাই নেই ওর তাই সোজাসাপটা প্রশ্ন করলো মাহি কোথায়,অতপর মাহির মা-বাবার কথা অনুযায়ী আয়ান নিজের রুমে দিকে এগুতে লাগলো।রুমে ঢুকেই গর্জন করো মাহির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়লো।

মাহি,আমার একান্টের সব টাকা কোথায়?

মাহি আয়নার সামনে বসে নেইলপালিশ লাগাতে ব্যস্ত ছিলো এবার আয়ানের গর্জনের জবাব স্বাভাবিকভাবেই দিলো মাহি।

আরে বেবি কি হয়েছে তোমার?বলেছিলাম তো তোমাকে আজকে সপিং এ যাচ্ছি।এতো রিয়েক্ট কেনো করছো তুমি।

তাই বলে তুমি ৬ লক্ষ টাকার সপিং একদিনে করবে,আমার একাউন্টে মাত্র ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পড়ে আছে,এটা তোমার কাছে স্বাভাবিক কিছু মনে হচ্ছে যে আমি রিয়েক্ট করবো না?
________________

আদৃতকে আজ কেমন যেনো দেখাচ্ছে,প্রতিদিনের তুলনায় খুব বেশিই গম্ভীর, আঁখি অনেক্ষন যাবত আদৃতকেই লক্ষ্য করে যাচ্ছে,এমনিতে স্বাভাবিকভাবে ওর সাথে কতো কথা বলে কিন্তুু আজ কোনো কথাই বলছে না আদৃত,এমনকি ওর দিকে তাকাচ্ছেও না,আঁখি কয়েকবার ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তেমন আগ্রহ নিয়ে ওর সাথে কথা বলে নি শুধু নিয়ম রক্ষা করেছে এমন বোধগম্য হলো আঁখির।
এবার হনহনিয়ে ঘরে ঢুকতে লাগলো আদৃত,সায়েদা আঁখি ওর পিছনে, নোমান সেখানকার সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো, তখন আদৃতকে দেখে নোমান ওর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

ভাইয়া ভালো হয়েছে এসে গেছো, আমার একটু হেল্প লাগবে প্লিজ এদিকে আসবে একটু।

সব কাজে আমাকেই ডাকতে হবে কোনো?নিজে করে নিতে পারিস না?ডাক্তারি তো আমি আর একা পাশ করি নি।

অনেকটা ঝাঁঝালো কন্ঠে সবার সামনে কথাগুলো আদৃত নোমানকে শুনিয়ে দিয়ে চলে গেলো,নোমানের মুখটা মুহুর্তে পানসে হয়ে গেলো।

ভাইয়ার কি হয়ে গেলো এমনটা তো কখনো করেন না।

হ্যাঁ রে ছোট ভাইয়া,আজকে দুপুরের পর থেকেই ভাইয়া কেমন যানি হয়ে গেছেন,আমার তো মনে হয় নিশ্চয়ই কোনো বড় কিছু নিয়ে ভাইয়া অনেক ক্ষেপে আছেন।

আদৃত বরাবরই শান্ত স্বভাবের লোক,বড় কোনো কারন ছাড়া কখনো কারো উপর নিজের রাগ ঝাড়বে না এ বিষয়ে আঁখির খুব ভালো করেই জানা আছে, হয়তো আজকে খুব বড় কিছু হয়েছে যায় কারনে আদৃত এমনটা করছে আর সে কারনটা জানার খুব একটা আগ্রহ অল্পতেই সৃষ্টি হলো আঁখির মনে,যাই হোক আদৃতের মন খারাপের কারনতো আঁখিকে জানতেই হবে এই আশাতেই আদৃতের পিছু গেলো আঁখি।
_______

দেখো আয়ান আস্তে কথা বলো মম ডেড নিচেই আছেন, উনারা এসব কথা শুনলে ভাববেন উনাদের মেয়ের জামাই কতোটা চিপ,আসলে একটা ডায়মন্ড শপে ঢুকেছিলাম ওখান থেকে আমার আর মমের জন্য দুটো ডায়মন্ড নেকলেস নিয়েছি তাছাড়া আমার ভাইয়ের জন্য দামী ঘড়ি আরও কিছু কাপড়চোপড় আর মম ডেডের জন্যও।

হোয়াট ডায়মন্ড নেকলেস তাও আর মমের জন্যও।মাহি তুমি সর্ণেরও কিনতে পারতে,এতো টাকা তুমি কি করে একসাথে খরচ করে দিতে পারো,তোমাকে আমি কতোবার বলবো প্রফেশনে আমি নতুন এভাবে সব টাকা উড়িয়ে দিলে কি করে হবে মাহি?

বেবি তুমি আমায় বকছো,এ্যা হে হে,আমি কিছু টাকা খরচ করলাম বলে তুমি এমন করছো,লাগবে না আমার কোনো ডায়মন্ড নেকলেস এই নাও তোমার ডায়মন্ড নেকলেস।

মাহি উঠে এসে আলমারি থেকে ডায়মন্ড নেকলেস টা বের করে বিছানার উপর ছুঁড়ে মারলো, তখনি ওর মা-বাবা,ভাই রুমে প্রবেশ করলো,অতপর মাহির মমও এবার ন্যাকা কান্না করতে করতে বললেন।

আমি জানতাম না এই ডায়মন্ডের নেকলেস এর জন্য এমন কিছু হয়ে যাবো নয়তো আমি নিতামই না।এই নাও বাবা তোমার ডায়মন্ড নেকলেস।গলায় পড়ে ছিলেন তখন উনি ওটা এবার খুলে বিছানায় রেখে দিলেন।

ব্রো তোমাকে আমি এমনটা মনে করি নি,তোমার টাকায় আমি যা কিনেছি সব এনে দিচ্ছি এখনি।

হ্যাঁ বাবা আমিও এনে দিচ্ছি সব, তবুও তুমি আমার মেয়ের সাথে ঝগড়া করো না।কথাগুলো আয়ানকে খুঁচা মেরে বললেন শ্বশুরমশাই।এবার আয়ান নিজের রাগ অনেক কষ্টে দমন করে কোনোপ্রকার কন্ঠে নরম ভাব ফুঁটিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরানো অবস্থায়ই বললো।

এসবের আর কোনো দরকার নেই,কিনাকাটা হয়ে গেছে এখন তা ফিরিয়ে কি লাভ? আমার কথায় আপনাদের কারো খারাপ লাগলে আমি দুঃখীত।

এখন সরি বলে কি লাভ আমার মম ডেডের মনে কষ্ট দিয়ে এখন শুকনো সরিতে কি হবে তোমার,এ্যা হে হে।

হয়েছে মা আর কাঁদিস না,জামাই বাবা তো নিজের ভুল বুঝতে পেরে গেছেন তুই আর মনে কষ্ট নিস না,আমরাও নিবো না,এই রনি তোকে আর তোর জিনিস ফিরাতে হবে না আর ওগো তোমাকেও ফিরাতে হবে না আমিও না হয় নেকলেসটা নিয়ে নেই।

এবার হাসিমুখে কথাগুলো বলে মাহির মম নেকলেসটা নিয়ে নিলেন আয়ান হতবাক হলো উনার উক্ত কাজে,মাহির কথা অনুযায়ী উনারা তো অনেক আত্মসম্মানি তবে তার কোনো ছোঁয়া উনাদের ব্যবহারে আন্দাজ করতে পারলো না আয়ান,এবার আর কিছুই বললো না আয়ান বরং হনহনিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।

____________________

বেলকোনির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদৃত,
আদৃতের চোখের সামনে থেকে সরতে নারাজ হচ্ছে দুপুরে আঁখির আর আয়ানের দ্বারা সৃষ্ট সেই ক্ষনের ছবি,আঁখি আয়ানের এতোটা পাশে ছিলো ভেবেই গা জ্বলে উঠছে আদৃতের,পারছে না নিজেকে দমন করতে,বার বার এটাই মাথায় ঘুরছে হয়তো আয়ান তখন আঁখিকে কিস করেছে যা মেনে নিতে একদম ব্যার্থ আদৃতের মন,তবে এমন অনুভুতি ওর কেনো হচ্ছে তারও কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছে না আদৃত ,আঁখি তো আয়ানের স্ত্রী ছিলো এমন কিছুতো ওদের জন্য নতুন কিছু না তবে তাতে আদৃতের কেনো খারাপ লাগছে,ওর তো এতে মোটেও খারাপ লাগার কোনো কারন হয় না তবে কেনো ওর খারাপ লাগবে?মনের সাথে একপ্রকার যুদ্ধে লিপ্ত আদৃত তখনি ওর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আগমন হলো আঁখির।

ড.আদৃত আপনি ঠিক আছেন?কোনো কারনে কি আপনার মন খারাপ?

আমার মন খারাপ কি না তা দিয়ে আপনার কি আসে যায় মিস আঁখি?আপনার কেয়ার টা যে শুধু একজনের উপরই মানায়,সো তার খেয়াল টাই রাখেন আমার টা না হয় ছাড় দিলেন।

আপনি কি বলতে চাইছেন ড.আদৃত?

কি আর বলবো, আয়ানের কথা বলতে চাইছি,দুপুরের যে দৃশ্যটা দেখতে পেলাম তা থেকে তো একটাই দিক প্রমান হয় যে আয়ানের জন্য মনের টানটা একটুও কমে নি আপনার।

গায়ের জ্বলায় কথাগুলো বলে দিলো আদৃত,এটাও ভাবলো না কথাগুলো আঁখি কিভাবে নেবে।

তার মানে আপনি তখন ড.আয়ানের রুমের বাইরে থেকে সব দেখছিলেন ড.আদৃত?প্রথমত কারো কক্ষে তাক ঝাঁক করা মোটেও ভালো ব্যাপার না আর দ্বিতীয়ত আয়ানকে নিয়ে আমি কি ভাবি না ভাবি,ওর সাথে আমি কিভাবে থাকবো সেটা সিলেক্ট করে দেওয়ার কেউ আপনি নন,সেই অধিকারটুকু আপনার নেই।

আদৃতের কথায় আঁখির অনেকটা রাগ হলে আঁখিও বিবেচনা ছাড়া কথাগুলো বলে ফেললো যা তীরের মতো আঘাত করলো আদৃতের বুকে।

সরি মিস আঁখি,আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার আপনার উপর কোনো অধিকার নেই,ভুলে গেয়েছিলাম নিজের সীমান্তটা,ধন্যবাদ আমাকে আমার সীমানাটা দেখিয়ে দেবার জন্য,সামনে থেকে অবশ্য তা লঙ্ঘন করার আগে ১০ বার ভেবে নিবো আপনি তা নিয়ে আর চিন্তা করবেন না।

কথাগুলো বলার সময় আদৃতের কন্ঠে কেমন একটা বেদনাজনক ভাব আন্দাজ করতে পারলো আঁখি,এর সাথে তাও আন্দাজ করতে সক্ষম হলো যে এই ভাবটা আঁখির সেসব তিক্ত কথারই প্রতিফলন।

সত্যটা আঁখির বোধগম্য হয়ে উঠার আগেই আদৃত রুম থেকে কোথাও বেড়িয়ে গেলো।

_______

নোমান ওদের হলরুমের বড় জানালার সামনে বসে আছে,এটাকে জানালা বললেও হয়তো ভুল হবে বড় দরজার সমতুল্য করে জানালাটা দেওয়া হয়েছে যা দিয়ে বাড়ির বাগানের পরিবেশটা অনেক স্পষ্টভাবে চোখে ভাসে,ওদের বাগানটা যে অনেক সুন্দর করে সাজানো,জানালাটা সেই সুবাদেই দেওয়া যাতে মেহমানরা যখন এখানে বসবেন উনারা স্পষ্টভাবে বাগানের সেই সুন্দর রূপটার দ্বিধার করতে পারবেন,নোমান বসে আছে জানালার প্রান্তে,বাহির থেকে বয়ে আসা মিষ্টি বাতাস গায়ে মাখছে তখনি সেখানে কারো উপস্থিতি টের পায়,মাথা ঘুড়িয়ে দেখতে পায় আয়শাকে।ঠোঁটের কেনো মৃদ্যু হাসি ঝুলিয়ে এবার বলে উঠে।

আরে মিস আয়েশা আপনি?

হুম আমি,ঘুম আসছিলো না তাই এখানে চলে এলাম,এখানে এসে আপনাকে পাবো ভাবি নি,তা আপনি এখানে?আপনারও ঘুম আসছিলো না বুঝি?

না আসলে তা না,এমনিতেই এখানে বসে ছিলাম ভালো লাগছিলো না তাই।আসলে ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম,আজকে হঠাৎ করে এমন বিহেইব করলেন কেনো?এমনটা উনি কখনো করেন না।

কোনো বড় কিছু নিয়ে মন খারাপ হয়তো তাই এমনটা করলেন।

হুম হতেও পারে।

কিছুক্ষন পিনপিন নিরবতায় দুজনই বাহিরের দৃশ্যে মনোনিবেশ করলো,অল্প সময়ে নোমান নিরবতা ভাঙলো।

তার আপনার ঘুম না আসার কারন জানতে পারি,প্রিয় মানুষটির সাথে খনিক খুনসুটি বাঁধিয়েছেন না কি?

আমার প্রিয় মানুষ বলতে আমার পরিবারের লোক ছাড়া আর কেউ নেই নোমান সাহেব।

কথাটা খনিক মায়া মায়া ভাবে নোমানের দিকে দৃষ্টি অটল রেখে বললো আয়েশা,কথাটা যে সত্য হলেও মিথ্যে।

দুঃখীত আসলে কৌতুহলবশত আমি আপনাকে ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করে ফেললাম।

না না সমস্যা নেই, আমি কিছু মনে করি নি।
তা আপনার আছে কোনো প্রিয় মানুষ?

আয়েশার কথায় নোমান ললাটে বেশ চিন্তার ভাজ ফুঁটালো,খানিকক্ষণ ভাবনার পর নীরবতা কাটিয়ে বললো।

বলতে পারেন আছে আবার নেইও।

মানে?

ও আপনি বুঝবেন না,অনেক রাত হয়েছে চলি ঘুম পাচ্ছে, আপনিও বেশি রাত জাগবেন না,রাত জাগা শরীরের জন্য ভালো না।

এবার নোমান অল্প হেসে চলে গেলো,এদিকে নোমানের উক্ত কথা কিছু মাথায় ঢুকলো না আয়েশার,বরং বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো ও।
___________________

ঘড়িতে ২ টা ছুঁইছুঁই আদৃতের কোনো খবর নেই,তখন আদৃত রুম থেকে বেড়িয়ে যাবার কিছুসময় পর আঁখি জানতে পারে আদৃত তখনি বাড়ি থেকেও বেড়িয়ে কোথায় চলে গেছে,এখনও আসার নাম নেই,এদিকে আঁখির মনে আদৃতকে নিয়ে ধরা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের দুঃশ্চিন্তা,এ কদিনে আদৃতকে বেশ ভালো করে চেনা হয়ে গেছে আঁখির,লোকটা অনেক ভালো আর আঁখির যথেষ্ট সম্মান করে যা কখনো আঁখি আয়ানের থেকে পায় নি,আজকাল কোনো ছেলে মানুষই কোনো মেয়ের এতোটা সম্মান করতে জানে না যতোটা আদৃত জানে,সবকিছুতেই আঁখিকে মনোবল দেয়,সাহস যোটায়,একজন বন্ধু হয়ে সবসময় ওর পাশে থাকে,এতোকিছু করার পরও কি লোকটা আঁখির প্রতি খনিক অধিকারত্ব দেখাতে পারে না, লোকটা আঁখির প্রতি একটুখানি অধিকারত্ব দেখিয়ে কি খুব বড় ভুল করে ফেললো,আসলে তখন রাগের মাথায় আঁখি ওসব কথা বলে দিলেও এখন মনে তা নিয়ে খারাপ লাগার পরিমান সময়ের সাথে বাড়ছে,দরজার দিকে দৃষ্টি অটল রেখে বসে আছে আঁখি।অপেক্ষার ক্ষনে সমাপ্তি ঘটিয়ে হঠাৎই আগমন ঘটে আদৃতের,আদৃত আঁখির দিকে কোনোরুম চাহনি না দিয়ে সোজা বারান্দার দিকে চলে যায়,গিয়ে বারান্দার প্রান্ত ঘেষে দাঁড়িয়ে পড়ে,আঁখিও পিছু যায়।
অতপর নরম স্বরেই বলে।

আপনি এতোসময় কোথায় ছিলেন ড.আদৃত?খাবেন না অনেক রাত হয়ে গেছে তো।

আমি খাবো না আমার ক্ষিদে নেই,আপনি গিয়ে শুয়ে পড়েন।

আসলে তখন রাগের মাথায় আপনাকে কি না কি বলে দিয়েছি তার জন্য আমি দুঃখীত,তাছাড়া দুপুরে তেমন কিছু হয় নি যেমনটা আপনি মনে করছেন,আয়ান আমাকে দূর্বল করতে চাইলেও আমি তো আর দূর্বল হবার পাত্রী নয়,আপনি বরং এসে খেয়ে নিন,অন্যের রাগ খাবারের উপর বের করতে নেই।

আমি কারো রাগ কারো উপর বের করছি না মিস আঁখি,আমি একটু একা থাকতে চাইছি শুধু, প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দিন।

সব কথাই উল্টোদিকে মুখ করে বললো আদৃত, একপলক আঁখির পানে ফিরেও তাকালো না যা আঁখির মনের অশান্তির পরিমাণটা আরও বাড়িয়ে দিলো,বড্ড খারাপ লাগলো আঁখির আদৃতের উক্ত ব্যবহারে,তাই আর কিছু না বলেই স্থান ত্যাগ করলো।

……………………..

সোফায় শোয়ারত অবস্থায় বার বার বারান্দার পানেই লক্ষ্য রাখছে আঁখি,হয়তো আদৃতের এক ঝলকের আশায়,অশান্ত মন পিঞ্জরকে যে কিছুতেই শান্ত করতে সক্ষম হচ্ছে না,তখন কি সেসব তিক্ত কিছু বানী আদৃতকে শুনিয়ে দেওয়া খুব বেশি জরুরি ছিলো আঁখির,আদৃত আঁখির কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছে যা অনুমান করতে পেরে আঁখির মন পিঞ্জরখানা বড়ই উতলা হয়ে উঠেছে।

এদিকে আদৃত বার বার আরচোখে কক্ষের পানে তাকাচ্ছে, হয়তো মনে একটা আশা আঁখি এসে ওর অভিমান ভাঙাবে,ওকে বলবে কৃপনতা না করে ঠোঁট বাকিয়ে একটু হেসে নিতে।তখন কি খুব বড় কোনো ভুল করে ফেলেছিলো আদৃত,একটুখানি অধিকারই তো খাটাতে চাইছিলো তা কি অনেক বড় কোনো চাওয়া।প্রশ্নটা বড়ই জ্বালাতন করছে আদৃতকে।

মাহি হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে,এদিকে আয়ান নির্ঘুম রাত্রি যাপন করছে,বেলকোনির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান,মনে পড়ছে ওর আঁখির সাথে কাটানো সুন্দর স্মৃতিগুলো,কোনোমতেই আঁখিকে ভুলতে সক্ষম হচ্ছে না,মনটা আজ বড়ই উতলা আয়ানের বার বার আঁখির নাম ঝপতে মশগুল,আজকে আঁখি আয়ানের কতোটা পাশে ছিলো এতোটা পাশে যদি প্রতিনিয়ত থাকতো তবে কি ক্ষতি হতো কোনো?নিজেই তো আঁখিকে তাড়িয়ে দিলো নিজের জীবন থেকে,তবে এখন যেনো ওকে ফিরে পাওয়ার লোভ আঁকড়ে ধরেছে আবার আয়ানকে।

আয়েশার চোখে ঘুমের দেখা নেই,নোমানের বলা কথাটা ঘোরপাক খাচ্ছে ওর মস্তিষ্কে,তবে কি নোমানের জীবনে সত্যিই অন্য কেউ আগে থেকে আছে

চারটে মন চার দিকে ব্যাথীত,চার কারনে।কারো মনেই সুখ নেই,আজকের বাতাসও যেনো নিজের সাথে বিরহের স্বাদ নিয়ে আসছে যে স্বাদ গ্রহনে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে সেই ব্যাথীত হৃদয়গুলো।

চলবে…………