#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৩
আয়ান রেডি হচ্ছিলো হাসপাতালে যাবার জন্য তখনি ওর সুন্দরী রমনির মধ্যে অল্প প্রেমানুভুতি জেগে উঠলো যার ফলস্বরূপ ও আয়ানকে পরম আবেশে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো,তারপর নেশালো কন্ঠে বললো।
আজ অফিস না গেলে হয় না বেবি?চলো না আমি তুমি মম ডেড আর রনি মিলে বাইরে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি।
আয়ান স্বাভাবিক ভাবে মাহিকে নিজের থেকে ছাড়ালো তারপর বললো।
দেখো মাহি তোমার যেখানে ইচ্ছে যাও,যা ইচ্ছে তাই করো আমাকে এসবে টেনো না,আমার কাজ আছে।
শুধু কাজ নিয়ে পড়ে থাকলে হয় না কি বেবি?
তুমিই তো পরশুদিন বললো সারাদিন বাড়িতে পড়ে থেকে কি লাভ কাজে যাওয়াই ভালো,তবে তাই করছি।
আয়ান কথাগুলো বলে চলে গেলো।
আয়ান এমন বিহেইব করছে কেনো আমার সাথে?এই আয়ানকে নিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই,আট বছর আঁখির সাথে থেকে ওকে ছাড়তে সময় নেয় নি তবে আমাকে ছাড়বে না তার কি গ্যারান্টি,নাহ এভাবে হবে না আমাকে যা করার খুব জলদি করতে হবে।
বড় করে দেয়ালে টাঙানো আদৃতের একখানা ছবি আর তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাড়ি পরিহিতা এক রমনি,চোখ দিয়ে শ্রাবনের ধারা বয়েই চলেছে ওই রমনির,আলতো হাতে উপচে পড়া জল মুছে নিলো অতপর ব্যাথার্থ কন্ঠে বলতে লাগলো।
আর পারছি না আদৃত,আর না,জানি না তুমি ক্ষমা করবে কি না, তবে আমিও তার প্রাশ্চিত্যে কোনো কমতি রাখবো না,তুমি আমার ছিলে আর শুধু আমারই থাকবে আদৃত।
_____________
সকাল থেকে একটা কথা বলে নি আদৃত আঁখির সাথে,এমনকি ওর দিকে তাকায়ও নি,এদিকে আঁখি মেনে নিতে পারছে না আদৃতের এমন অভিমান,মনটা বড্ড খচখচ করছে ওর,অনেকবার আদৃতের সাথে কথা বলতে চাইলেও আদৃত তেমন একটা আগ্রহ দেখায় নি,এদিকে আঁখি মনে শান্তির দেখা পাচ্ছে না,কি করবে কিছু ভেবেও পাচ্ছে না।
ক্লাস শেষে আদৃত নিজের কেবিনে বসে ছিলো তখনি আঁখি ওর কেবিনে প্রবেশ করলো মুখে খনিক বিরক্তির ছাঁপ নিয়ে,এমনকি ঢোকার আগে আঁখি দরজা নকও করে নি,আঁখির এহেন কান্ডে আদৃতও চেহারায় বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো।
এই যে মিস আঁখি আপনি নক না করে ঢুকলেন যে?
বেশ করেছি, আপনি সারাদিন ধরে এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলে আমি কি করবো বলেন?
আমি মুখ কোথায় ফুলালাম,আমি স্বাভাবিক আছি আপনি চলে যান।
যাবো আমি তবে এর আগে আপনাকে আমার সাথে ভালো করে কথা বলতে হবে।
দেখেন ড.আদৃত আমি জানি আমার তখন এমনটা বলা একদম ঠিক হয় নি,আসলে কালকে আয়ান হঠাৎ এমনভাবে আমার পাশে এলো যে মুহুর্তটা আমিও কেমন মেনে নিতে পারি নি,তখন কোনো অঘটন না ঘটলেও ওই ক্ষনের তিক্ত অনুভূতি আমার মেজাজটাও খারাপ করে রেখেছিলো তাই তখন আপনাকে এমনটা বলে দিলাম,আপনার যথেষ্ট অধিকার আছে আমাকে ভালো আর খারাপরার মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে দেওয়ার,বন্ধুত্বে এতোটুকু অধিকার তো থাকেই, তা তো আর আলাদা করে দিতে হয় না,নিয়ে নিতে হয়,আর খুব ভালো না হলেও বন্ধুত্ব নামক একটা সুন্দর সম্পর্ক তো আমাদের মধ্যে সৃষ্ট হয়েই গেছে,তাই প্লিজ আপনি আর ওটা নিয়ে মন খারাপ করে থাকবেন না,ক্ষমা করে দিন আমায়, সরি।
আদৃত এবার উঠে আসতে আসতে বললো।
দেখেন মিস আঁখি আপনার ওখানে কোনো দোষ নেই আমারই এতোটা অধিকারত্ব দেখানো ঠিক হয় নি।
আলবাদ আপনার অধিকার আছে, কেনো থাকবে না?যে ভালো চায় তার ভালো রাস্তাটাও দেখানোর যথেষ্ট অধিকার থাকে বুঝেছেন।প্লিজ আর রাগ করে থাকবেন না।
ইট’স ওকে বার বার সরি,প্লিজ এগুলো বলবেন না আপনার মতো মেয়েকে কারো কাছে এভাবে অনুতপ্ত হওয়া কেমনটা দেখায়।
আলতো হেসে বললো আদৃত।
দোষ করলে তা মেনে নেওয়ার আর তা শুধরানোরও ক্ষমতা আঁখি রাখে।
সে বিষয়ে আমারও কোনো সন্দেহ নেই,ওকে চলি।
কথাটা বলে আদৃত চলে যেতে নিলে আঁখি খপ করে আদৃতের হাত ধরে নিলো।
আয়ান কেবিনে বসে একধ্যানে ভাবছে আঁখির কথা,ওর বড্ড লোভ হচ্ছে আঁখিকে আবার নিজের কাছে পাওয়ার,ওর সাথে জীবনে আরও কিছু সুন্দর মুহুর্ত কাটাতে বড়ই মরিয়া হয়ে উঠছে আয়ানের মন,আঁখির সাথে থাকাকালীন কখনোই যে আয়ানের মন খারাপ থাকতো না,ওর জীবনের সব মুহুর্ত আঁখি নিজের রঙে রঙিন করে দিতে,সেই রঙিন জীবন ফিরে পাবার একটা তেজি লোভ আঁকড়ে ধরলো এবার আয়ানকে।
এদিকে আঁখি আদৃত……
আপনি কোথাও যাবেন না,আপনাকে আমাকে ক্ষমা করতেই হবে,এতো ঘাড়ত্যারা কেনো আপনি?কেউ সরি বলছে কিন্তু তাকে সরি না বলতেও বলছেন আর তাকে মাফও করতে চাইছেন না।
আরে মিস আঁখি আমি আপনার সাথে আর রেগে নয় ছাড়েন আমায়।
ছাড়বোনা আমি,আপনি রেগে নয়তো চলে যাচ্ছেন কেনো?
মিস আঁখি আমার একটা সার্জারী আছে তাই যাচ্ছি।
এবার আঁখি নিজের জিহ্বায় একটা আলতো কামড় দিয়ে আদৃতের হাত ছেড়ে দিলো।আদৃত অধরের কোনে মৃদ্যু হাসি ফুঁটিয়ে বললো।
আপনিও না।কখনো কখনো একদম বাচ্চামো অবস্থা করেন।
আর আপনি তো কোনো অবস্থা করতে জানেনই না,পৃথিবীতে এসেছেন শুধু কাটাকাটি করতে।
এবার ভ্রুযোগল কুঁচকে বললো আদৃত।
মানে?
মানে আর কি হাসতে টাকা লাগে না,তাই কৃপণতা ছেড়ে
ঠোঁট বাকিয়ে হেসে নিবো তাই তো।
আঁখির বাকি কথা আদৃত পুরো করে ফেলে যার ফলাফলে দুজন অল্প থেমে খিক করে হেসে দেয়।
এই হাসিটাই তো চাইছিলাম আমি।
আপনি পারেনও বটে……..তবে আসি।
কথাগুলো হাসিমুখে বলে চলে গেলো আদৃত,আঁখিও হাসতে হাসতে স্থান ত্যাগ করলো।
_________________
আদৃত হাসপাতালে আছে আঁখি রুমে বসে পড়াশুনা করছিলো তখনি হঠাৎ ওর মনে পড়লো ও ওষুধ খায় নি উঠে গিয়ে ওষুধ খেতে খেতে গতকালকের সেই রিপোর্টগুলোর কথাও ওর মনে ধরা দিলো,যেগুলো ছবি তুলে আনলেও দেখার কথা ভুলেই গেছিলো আঁখি,তাই আর দুদিক ভাবলো না চট করে ফোনের গ্যালারিতে ঢুকে পরলো,অতপর ছবিগুলোতে যা দেখলো তা দেখার পর আঁখি নিজের চোখে বিশ্বাস করার মতো অবস্থায় আর থাকলো না।
রিপোর্টগুলো যে আরোহীর লাশ শনাক্তকরণ রিপোর্ট,যাতে স্পষ্ট লিখা ডিএনএ মেচ, এই যে সেই একই রিপোর্ট যার জলন্ত এক টুকরোর অবশিষ্ট অংশ আঁখির কাছে আছে তবে রিপোর্ট দুটির মধ্যে একটাই পার্থক্য, ওই রিপোর্টে ডিএনএ মেচ হয়নি আর এটাতে স্পষ্ট মেচ হয়েছে তাই দমশ্যমান।তবে কোনটা আসল।যদি এটা আসল হয়ে থাকে তবে আদৃত সেদিন কিসের রিপোর্টগুলো জ্বালিয়ে দিলো,ওই টুকরাটাতে ডিএনএ মেচ না হওয়ার কথা কেনো লিখা থাকবে।
এটা কি দেখছি আমি,তবে কি আরোহী মারা যায় নি?কিন্তু বেঁচে আছে তারও তো কোনো প্রমাণ নেই,আর আদৃত স্যার এসব কি করছেন? কি লুকাতে চাইছেন?উফ কিছুই মাথায় ঢুকছে না,না আর ভাবতে পারছি না,হোক না হোক সেদিন যে ডায়রি,এলবাম আর রিপোর্টগুলো ড.আদৃত আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিয়েছিলেন সেগুলাতেই হয়তো কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে, আমার সেগুলো খোঁজা উচিৎ।
তারপর আঁখি ওগুলার খোঁজে আদৃতের কাবার্ডের কাপড়ে হাত দিতে গেলেই আদৃত রুমে প্রবেশ করে।
আঁখিকে ওর কাপড়ে হাত দিতে দেখে ললাটে সন্দেহের ভাজ পড়ে আদৃতের, ওকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে এবার।
আপনি ওখানে কি করছেন মিস আঁখি?
হঠাৎ আদৃতের কন্ঠ শুনে হকচকিয়ে উঠে আঁখি, পরিস্থিতির বেগ সামলাতে আমতা কন্ঠে বলে উঠে।
ওই আপনার কাপড় ভাজ করছিলাম আরকি।
আমি বলেছিলাম না এসব কাজ আপনাকে করতে হবে না।
আদৃত এসে কাভার্ড টা লাগাতে লাগাতে গম্ভীর কন্ঠে বললো কথাটা।
আঁখি আর কিছু বললো না ওকে,চুপচাপ গিয়ে পড়তে বসলো।আদৃতও অল্প ক্ষনের জন্য সন্দেহের দৃষ্টি ওটল রাখলো আঁখির উপর।
আয়ান বিছানায় হেলান দিয়ে ল্যাপটপ টিপছিলো তখনি মাহি একটা বেশ উন্মুক্ত নাইটি পড়ে এসে ওর কোলে বসে গেলো।এতে বিরক্তি ভাব ফুঁটে উঠলো আয়ানের চেহারায়।
কি হয়েছে এমন করছো কেনো?দেখছো না কাজ করছি?
হুম আমিতো তাই দেখছি তবে তুমি কি দেখছো না রাত কটা বাজে,এখন তো এসব কাজের টাইম না বেবি এখন তো রোমান্সের টাইম।
নেশাক্ত কথাগুলো বলে মাহি আয়ানের অধরের পানে এগিয়ে যেতে নিলে আয়ান নিজের মুখখানা সরিয়ে নেয় তারপর ওকে স্বাভাবিকভাবে নিজে থেকে সরায়।
আমার আজকে মুড নেই।
মুড নেই বললে হয় না কি,আসো না বেবি।
বলি নি মাহি মুড নেই,জোর করো না তো প্লিজ।
হুম আমিও পুরাতন হয়ে গেছি না?আমাকে আর তোমার ভালো লাগছে না বুঝতে পারছি,এ্যা হে হে।
জানো তোমার এসব ন্যাকামি আমার একদম ভালো লাগে না আর,তাই ওগুলা একটু কম করো প্লিজ।
মাহির ন্যাকা কান্নায় আয়ান বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
মাহি এবার কান্না মুছে রহস্যময়ী ভাব নিয়ে বলে উঠে।
নাহ, পানি দেখছি মাথার উপর দিয়ে গড়াতে নিয়েছে,তা তো হতে দেওয়া যাবে না আর।
_____________________
অনেকটা অন্ধকারে চুপি চুপি ঘরে ঢুকছে কেউ যা স্পষ্ট গেলো সায়েদার নজরে,সায়েদা দেখতে পেলো সে লোকটা তাজবীর।
আরে এই পাজিটা এখানে আবার কি করছে?তাও এতো রাতে লুকিয়ে।
জবাবটা জানতে সায়েদা এগিয়ে যায় ওর দিকে, এদিকে তাজবীরের অসাবধানতাবশত দুজনের মধ্যে ধাক্কা লাগে,যাতে সায়েদা ফ্লোরে পড়ে যায়।
আরে মিস বাচ্চা তুমি?
এই যে পাজি লোক আপনি আমাকে প্রথমত বাচ্চা বলবেন না,আমি মোটেও বাচ্চা নই,আর দ্বিতীয়ত আপনি এতো রাতে আমাদের ঘরে কি করছেন তাও চুরের মতো লুকিয়ে।
এবার খনিক স্টাইল নিয়ে তাজবীর বললো।
ও হ্যালো মিস, তাজবীর তাওয়াফ খান পলক কখনো চোর হতে পারে না,সো তোমার তা বুঝে নেওয়া উচিত ছিলো আমার নিশ্চয়ই কোনো কারন থাকতে পারে লুকিয়ে আসার।তবে তোমার মতো টিউবলাইট,গাঁধা মেয়ে এসব কি করে বুঝতে সক্ষম হবে।
এই যে আপনি কিন্তু এখন অতিরিক্ত করছেন,প্রথমত আপনি আমাকে বাচ্চা বললেন আমি তেমন কিছু বলি নি এতে,এখন আপনি আমাকে টিউবলাইট, গাঁধা বলছেন আমি তা মোটেও মেনে নিবো না,আমি না আপনাকে।
আর কিছু বলার আগেই তাজবীর ওর মুখ চেঁপে ধরে।
আরে আরে করে কি টিউবলাইটটা,ধরা খাইয়ে ছাড়বে দেখছি,এই যে তুমি আস্তে কথা বলতে পারো না।
সায়েদা এবার তাজবীরের কাছ থেকে নিজেকে ছাঁড়িয়ে ওর হাতে দেয় একটা জোরালো কামড় বসিয়ে।
আহহহহহ।
আরে সায়েদা কি করছো তুমি? ওকে কাঁমড়াচ্ছো কেনো?
দেখ না আয়েশা পাগল মেয়েটা আমায় কামড়ে দিলো,আহ।
ইশ,তাজবীর ভাইয়া তুমি ঠিক আছো তো?আসলে ও বুঝে নি তো তাই এমনটা করেছে হয়তো।
বুঝবে কি করে গাঁধা একটা।
আপনার সাহস কি করে হয় আমায় গাঁধা বলার?
আরে আরে সায়েদা ঝগড়া ছাড়ো আর আমার কথা শুনো,উনি এখানে একটা কারনে এসেছেন উনাকে দরজা আমি খুলে দিয়েছিলাম।
………………
আঁখি রুমে বসে চিন্তা করছে কি করে আদৃতের সেই এলবাম, ডায়েরি আর রিপোর্টগুলোর সন্ধান পাওয়া যাবে তখনি আদৃতের নাম্বার থেকে ওর ফোনে একটা কল আসে,আঁখি ফোনটা রিসিভ করে।
মিস আঁখি একটু ছাঁদে আসেন আপনার সাথে দরকার আছে।
কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিলো আদৃত।
আঁখি কিছুই বুঝে উঠতে সক্ষম হলো না আদৃতের ভাবসাব,আর কিছুই চিন্তায় না এনে ছাঁদের দিকে রওয়ানা হলো সে।
চলবে…………..