#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৪
আজ আকাশে পরিপূর্ণ চাঁদ,বিস্তার এক মাঠে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আয়ান হাত পা ছড়িয়ে,এক হাতে আঁখির ছবি,একধ্যানে তাকিয়ে আছে আঁখির ছবির পানে,চোখের পলকই ফেলছে না,আঁখিকে দেখতে ওর বড্ড ভালোই লাগছে আজ,ঠোঁটের কোনে একটা ভালোলাগার হাসিও ঝুলিয়ে রেখেছে,খানিকক্ষণ নিরবতা পালনের পর এবার মুখে বুলি ফুটিয়ে আয়ান বলে উঠলো।
শুভ জন্মদিন আঁখি,গত বছর এমন ক্ষনে সাথে ছিলো কিন্তু তখন আমার মনে ছিলো না তোমার জন্মদিনের কথা আর যখন আজ অনেক দূরে আছো তখন এই কথাটা মন থেকেই যাচ্ছে না, জানিনা কেনো।
দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করলো আয়ান কথাটা বলে,ওর কথায় ওর মন পিঞ্জরের ব্যাথার্থ অজানা একটা অনুভূতি স্পষ্ট প্রকাশ পেলো।
খুঁটখুঁটে অন্ধকার ছাঁদে প্রবেশ করে আঁখি বড়ই হতভম্ব হলো,আদৃত ওকে ডেকেছে ঠিকই কিন্তু কোথাও ওর ধিদ্বার করতে পারছে না আঁখি,আঁখি কিছু বুঝতে সক্ষম না হয়ে আদৃতকে ডাকতে শুরু করলো,হঠাৎই আঁখির চারিদিকে লাইট জ্বলে উঠলো পিছন থেকে বেলুন ফাঁটার শব্দ এর সাথে কানে ভেসে এলো অনেকের একসাথে বলে উঠা শুভ জন্মদিন ধ্বনির ফুলঝুরি , আঁখি পিছন তাকিয়ে দেখে আয়েশা, সায়েদা, তাজবীর, নোমান, মিস্টার এন্ড মিসেস আমির আর ইশা চৌধুরী,আর সবার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আদৃত।পুরো ছাঁদ বেলুন আর ফুলে খুব সুন্দর করে সজ্জিত, মাঝখানে স্টেজ বানানো আছে আর সেখানে একটা ছোট টেবিল রাখা,স্টেজটাও খুব সুন্দর করে সজ্জিত আছে আর সেই টেবিলখানাও।
টেবিলের ঠিক মধ্যেখানে আঁখির নামের কেক রাখা,সবাই এবার আঁখিকে নিয়ে হৈ-হুল্লোড় শুরু করেছে,সবাই ওর জন্য এতোকিছু করেছে দেখে খুশিতে আঁখির চোখে খনিক জল ঝলকালো যা আলতো হেসে মুছে নিলো আঁখি,সবার সাথে নিজেও খুশিতে মেতে উঠলো,অল্পের জন্য জীবনের সব শুন্যতা ভুলে গেলো,সবাইকে কেক খাওয়ানোর পর আয়েশা হঠাৎ চোখ দিয়ে ওকে আদৃতের দিকে ইশারা করলো,আঁখি দেখতে পেলো আদৃত এখনও সবার থেকে দূরে এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে ঠোঁটের কোনে আলতো হাসি ঝুলিয়ে। আঁখি এবার ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে হাত ধরে ওদের মাঝে টেনে আনলো,তারপর এক টুকরো কেক এগিয়ে দিলো ওর দিকে,আদৃতও তা ফিরিয়ে দিলো না,অতপর নিজেও আঁখিকে কেক খাইয়ে বললো।
শুভ জন্মদিন মিস আঁখি।
ধন্যবাদ ড.আদৃত।
আদৃত এবার জোর করে ঠোঁটের কেনো একটা হাসি ফুঁটালো তারপর উল্টো পায়ে চলে গেলো ঘরের দিকে,আঁখিও যেনো ওর অবস্থা অনেকটা আন্দাজ করে নিলো,আমির চৌধুরী আর ইশা খানও যেনো আদৃতের মনের ভাব অনেকটা আন্দাজ করতে পারলেন যে অনুভুতি উনাদের মনে ব্যাথার্থ ভাবের সৃষ্টি করলো যা উনাদের চেহারায় স্পষ্ট ধরা দিলো,আঁখি ওর পিছন যেতে নিলে সবাই ওকে নিয়ে আবার হৈ-হুল্লোড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো যার ফলস্বরূপ আর ওর আদৃতের পিছন যাওয়া হলো না।
সবাই অনেক আনন্দ উৎসব করে এবার যার যার রুমে চলে গেছে।
আঁখি এবার আদৃতকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে,বারান্দায় উকি দিলে এক প্রান্তে আদৃতকে বশারত দেখতে পেলো আঁখি,পিলুপায়ে ওর পাশে গিয়ে বসলো,আদৃত চাঁদের পানে তাকিয়ে ছিলো আর ওর চোখ বেয়ে পড়ছিলো কিছু জল আঁখিকে পাশে অনুমান করতেই চট করে সে জল মুছে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।তারপর মৃদ্যু স্বরে বললো।
মিস আঁখি আপনি?
হ্যাঁ আমি ড.আদৃত,আপনি তো আমাকে রেখে চলে আসলেন তাই ভাবলাম আমি আপনার পাশে চলে আসি।তা হুট করে সেখান থেকে চলে আসলেন যে, কৃপনতা ছেঁড়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসতে বলবো তাই ভেবে।
আদৃত এবার মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বললো।
আসলে তা না, এমনিতেই একটু ভালো লাগছিলো না।
আর সে ভালো না লাগার কারনটা জানতে পারি।অবশ্য যদি আপনি বলতে চান।
আদৃত এবার অল্প সময় থামলো অতপর দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলতে নিলো।
আজকে আরোহীরও জন্মদিন ছিলো,আসলে দাদু আর দিদু আজকের দিনেই ওকে পেয়েছিলেন তাই প্রতিবছর আজকের দিনে ওরও জন্মদিন পালন করা হতো,এজন্যই একটু খারাপ লাগা কাজ করছিলো।বেশি কিছু না।আচ্ছা বাদ দেন এসব চলেন অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন।
এবার স্থান ত্যাগ করলো আদৃত,আঁখির মনে আরও প্রশ্নের ঝড় উঠলো।
কি সব হয়ে যাচ্ছে?আরোহী দেখতে ঠিক আমার মতো, ২১ বছর আগে ওকে আজকের দিনেই পাওয়া গেছিলো কেমনটা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে সবকিছু, তাছাড়া আরোহী বেঁচে আছে কি না,ড.আদৃত কি লুকোচ্ছেন কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।
__________________
আজ আয়ান অনেক প্রফুল্ল মনে রেডি হচ্ছে,ওর এমন ভাবসাবের কারন তেমন একটা আন্দাজ করতে না পেরে মাহি আয়ানকে প্রশ্ন ছুঁড়লো।
এতো খুশি কেনো আজ তুমি?আর এতো রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো?
হাসপাতালে যাচ্ছি কেনো?
হুম তবে রোজ তো কতো নরমালি যাও আজকের পোশাক আশাকে মনে হচ্ছে হাসপাতালে আজকে স্পেশাল কোনো ইভেন্ট আছে।
হাসপাতালে না থাকলেও অন্যত্র আছে।বিড়বিড়িয়ে বললো আয়ান।
কি বললে?
আরে ও কিছু না, এতো সন্দেহ করো না তো।
আয়ান আলতো হেসে চলে গেলো,তখনি রুমে ওর শ্বাশুড়ি প্রবেশ করলেন।
কি রে তোর স্বামী দেখি আজ বড় প্রফুল্ল মুডে।
জানি না মা ওর এতো খুশির কারন কি।
আচ্ছা ছাড় এসব, আগে বল কাজ হয়েছে?
হুম পেপারস রেডি শুধু ওকে সাইন করাতে হবে।
গুড মাই চাইল্ড।
ভার্সিটি শেষে আঁখি বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো,আদৃত গাড়ি নিয়ে খাঁড়া আছে তখনি আয়ান এসে ওর হাত ধরে ওকে কোথাও নিয়ে যেতে শুরু করে।
আরে কি করছেন কোথায় নিয়ে যেতে চাইছেন আমায়।
প্লিজ আঁখি একবার চলো তোমার সাথে কিছু জরুরি কাজ আছে,আমি সত্যিই আজকে উল্টাপাল্টা কিছু করবো না,কথা দিচ্ছি চলো না প্লিজ। প্লিজ চলো আসলে একজন অনেক কষ্টে আছেন তোমার সাহায্য দরকার।তোমাকে যেতেই হবে।
কে সে?কি হয়েছে তার?
গিয়ে জানতে পারবে চলো না প্লিজ।
আঁখি প্রথমে যেতে না চাইলেও পরে কি একটা ভেবে আয়ানের সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলো।
আয়ান আঁখিকে একটা পার্কে নিয়ে এসেছে,যেখানে ওরা প্রায়ই আসতো দুজন,এই পার্কটাতে ওদের দুজনের অনেক স্মৃতি জুড়ে আছে।কিন্তু আজকে এই পার্কটার রুপই যেনো আলাদা হয়ে গেছে,পার্কটা যেনো আঁখির নামে সেজেছে আজ,পুরো পার্কে একটু পর পর ফুল দিয়ে শুভ জন্মদিন আঁখি লিখা,চারিদিকটাও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে আজ।কিন্তু এসব দেখে আঁখি খুশি হওয়ার বদলে অনেকটা রেগে যায় আর বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে আয়ানের পানে তাকায়।
এসব কি ড.আয়ান?
কেনো তোমার জন্মদিনের স্যারপ্রাইজ পছন্দ হয় নি?
আপনার মাথা ঠিক আছে তো ড.আয়ান?আপনি আমাকে মিথ্যে বলে এখানে নিয়ে এসেছেন?
সত্য বললে যে তুমি আসতে না।
আর আমাকে কেনো বাধ্যতামুলক আনতে হতো আপনার?এখন আবার এসবের কি মানে?আমার আর আপনার মাঝে কোনো সম্পর্ক রয়ে যায় নি ড.আয়ান বার বার কেনো আপনি তা ভুলে যান,আপনি এখন অন্য কারো স্বামী, আর বউ রেখে অন্য মেয়ের জন্য এমন কিছু প্লান করা একদম অবৈধ, কথাটা কি একবারও আপনার মাথায় আসে নি।
তুমি অন্য মেয়ে কোথায় আঁখি। মাহির আগে তো আমার জীবনে শুধু তোমারই অধিকার ছিলো।
হুম আর মাহি আসার পর তা চলে গেছে যা আর কখনো ফিরে আসবে না।
কথাটা বলার পর আঁখি এবার চলে যেতে নিলে আয়ান খপ করে ওর হাত ধরে নেয় আর খনিক করুনতা ভাব নিয়ে বলে।
প্লিজ যেও না,একটু সময় থাকা যায় না?
একদম না, ছাড়েন আমার হাত।
আঁখি টান দিয়ে হাত ছাঁড়িয়ে নিয়ে চলে যেতে নিলে আয়ান এবার ওকে উদ্দেশ্য করে বললো এমন একটা কথা যেটা শুনে আঁখি থমকে দাঁড়ালো।
বুঝলাম আমার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই তাই আমার পাশে থাকতে চাও না,তবে কোন সম্পর্কের টানে আদৃতের সাথে থাকো?সেটা কি অবৈধ মান্য করা হবে না?
আঁখি এবার স্বাভাবিক ভাবে ওর পানে তাকিয়ে বলে।
আমার আর উনার সম্পর্কের নাম জানতে চান তবে শুনেন উনার সাথে আমার স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক।
শুনেছেন হি ইজ মাই হাজবেন্ড।
কথাটা শুনে আয়ানের যেনো পায়ের তলা থেকে জমি সরে গেলো,পৃথিবী যেনো থমকে দাঁড়ালো ওর,নিজের কানে যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না আয়ানের,কথাটা যে বুকে গিয়ে তীরের মতো লেগেছে,এদিকে উক্ত কথায় সেখানে উপস্থিত অন্য একজনও অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে,সে যে সয়ং আদৃত,আয়ান আঁখিকে এভাবে ধরে নিয়ে আসায় পিছু এসেছিলো আদৃত।
আয়ান এবার স্থিরতা ভেঙে বর্জ্য কন্ঠে ক্ষেপে উঠে আঁখির উপর।
এসব কি বলছো তুমি?তুমি কি করে বিয়ে করতে পারো?তুমি বিয়ে করতে পারো না?আমি জানি তুমি এসব মিথ্যে বলছো।
এটাই সত্য ড.আয়ান,যতো জলদি হয় জিনিসটা মেনে নিবেন আশা করি, চলি।
আঁখি চলে আসে সেখান থেকে, আসতে নিয়ে আদৃতকে সামনে পায়,তবে আদৃতের সম্মুক্ষীন হওয়ার সাহসটা যেনো পায় না তাই পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
আদৃত আঁখি গাড়িতে বসে আছে হঠাৎ আঁখি নিরবতা কাটায়।
দুঃখীত ড.আদৃত আমি তখন ওভাবে আপনার নাম ইউজ করেছি,তবে আয়ানকে পিছু ছাড়ানোর আর কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না আমি,জানি না কেনো পিছন পড়ে থাকে তাই ওকে পিছন ছাড়ানোর এই উপায়টাই ভালো মনে হলো আমার,আমি আসলেই দুঃখীত।
যে যে ভাষায় বুঝে তাকে সে ভাষাতেই বুঝানো বুদ্ধিমানের কাজ মিস আঁখি, আপনি মোটেও কোনো ভুল করেন নি,আমার দিদুর জন্য আপনি এতো বড় ট্যাগ নিতে পারলেন নিজের কোনো ক্ষতির দিক বিবেচনা না করে আর নিজের জন্য কিছু করতে গেলে এতোটা ভাবতে কেনো হবে আপনাকে?কৃপনতা ছাড়েন আর ঠোঁট বাকিয়ে হেসে ফেলেন।
আদৃতের কথায় আঁখি আলতো হাসলো আর বললো
আমার ডায়লগ কিনা শেষমেষ আমার উপরই এলো।
হুম।
__________________
এই মাত্র আদৃত বেড়িয়েছে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে, এটাই সুযোগ আঁখিকে ওই ডায়েরি আর রিপোর্টগুলো খুঁজতে হবে,তাই আঁখি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,সারা কক্ষ খুঁজে নিয়েছে কিন্তু কোথাও ওসবের কোনো চিহ্নও পেলো না,আঁখি এবার অনেকটা ক্লান্ত হয়ে বসলো তখনি হঠাৎ মনে হলো বালিশের কাভার খুলে আর বেডশিট উঠিয়েও দেখে নেওয়া উচিত,আঁখি উঠে গিয়ে তাই করলো,কিন্তু কিছুই পেলো না,আঁখি এবার মনগড়া সন্ধানে কাবার্ডের উপরিভাগ দেখার কৌতুহল মনে পোষন করে বেশ বড়সড় একটা টুল এনে তাই করলো,যা খুঁজছিলো তার সন্ধান না পেলেও আরেকটা জিনিসের সন্ধান আঁখি পেয়ে গেলো,সেখানে একখানা কাগজ রাখে পরম যত্নে একটা ফাইলে পুরে,ফাইলটা হাতে নিয়ে কাগজটা পড়ে আঁখি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো এইবার।
এটা তো ডিভোর্স পেপার,ডেইট অনুযায়ী আরোহী মারা যাবার ঠিক ১ মাস আগের,এর মানে আরোহী মারা যাবার আগে ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছিলো,কিন্তু ঘরে তো কারো মুখেই তার কোনো সুত্র শুনি নি,তবে কি সে ব্যাপারে কেউ জানে না,না কি ওরা জানায় নি?ইশ……আদৃত স্যার কি সব লুকিয়ে যাচ্ছেন,এই আরোহীর আসল সত্য কি আমাকে তা জানতেই হবে।
সার্জারী শেষে আদৃত বসে ছিলো নিজের কেবিনে তখনি মনে পড়লো কিছু কথা যা মনে হতেই আদৃতের মনে ধরা দিলো অল্প দুঃশ্চিতার রেশ।
এ কি করেছি আমি,সবকিছু সরিয়ে নিলেও কাবার্ডের উপর থেকে ডিভোর্স পেপার কি করে সরালাম না,যতোটুকু জানি মিস আঁখি কিছু একটা সন্দেহ তো মনে তৈরি করে নিয়েছেনই আর উনাকে যতোটুকু যানি এক জিনিসের পিছন পড়লে তার শেষ না দেখে শান্ত হবেন না।
আয়েশা নোমানের চিন্তায় বিভোর ছিলো তখনি দরজায় নক পড়লো ,উঁকি মেরে তাকিয়ে দেখলো সয়ং নোমান,হৃৎস্পন্দগুলো খনিকে ছুঁটতে শুরু করলো ওর,নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো।
আরে নোমান সাহেব আপনি?আসেন।
এসে ডিসটার্ব করলাম না তো?
আরে একদম না,ওই আসলে সায়েদা কালকে বলছিলো আপনার নাকি বই পড়তে অনেক পছন্দ, আমারও বই পড়তে অনেক ভালো লাগে,আজকে আসার সময় একটা বইমেলায় ঢুকেছিলাম সেখান থেকে কিছু বই এনেছি ভাবলাম আপনাকেও দুটো দিয়ে যাই।আশা করি বইগুলো আপনার অনেক ভালো লাগবে।
কেনো না বই আমার অনেক পছন্দ, ধন্যবাদ আপনাকে।
হুম,ঠিক আছে চলি,বইগুলো পড়ে জানাবেন কেমন লেগেছে।
অবশ্যই।
শুভ রাত্রি।
শুভ রাত্রি।
নোমান চলে গেলো আর আয়েশা বইগুলোকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ওগুলাকে অনুভবে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো,ওগুলাতে যেনো নোমানের ঘ্রাণ মিশে আছে,যা আয়েশার মনে প্রেমানুভুতির সৃষ্টি করছে, ঠোঁটের কোনে নরম আর লজ্জাময়ী এক ফালি হাসি ফুঁটে উঠার কারন হয়ে উঠেছে।
চলবে………….
#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৫(বোনাস পার্ট)
(রহস্য উন্মোচনের সুচনা পর্ব)
আয়ানের মাথা ঠিক নেই,কথাটা শুনার পর থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছে না,তখন পার্কের সব সাজসজ্জা নষ্ট করে দিয়েছিলো এমনকি আঁখির জন্য কেক এনেছিলো ওটাও নষ্ট করে দেয়, এবার ঘরে এসে বসে আছে বিছানায় ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে একধ্যানে,কোনো মতেই রাগ দমন করতে সক্ষম হচ্ছে না,তখনি মাহি এসে ওর কাঁধে হাত রাখে, আয়ান এবার ওর দিকে তাকিয়ে পাগলের মতো অঙ্গভঙ্গিতে বলতে লাগে।
মাহি তুমি জানো আঁখি বিয়ে করে ফেলেছে,ও ড.আদৃতের স্ত্রী।
হোয়াট!আঁখি বিয়ে করেছে।আঁখিও এতোটা ফাস্ট হবে আমি কখনো ভাবি নি,হা হা হা।
তোমার কাছে মজা লাগছে এসব?আঁখি বিয়ে কি করে করতে পারে?
এতে এতো অস্বাভাবিক হওয়ার কি আছে আয়ান,ও বিয়ে করলে তোমার কি?
ও বিয়ে করলে আমার কি মানে?ও কাউকে বিয়ে কিভাবে করতে পারে ও তো আমাকে ভালোবাসে।
আর ইউ সিরিয়াস আয়ান,ও তোমাকে ভালোবাসলে কি হয়? তুমি তো ওকে ভালোবাসো না,বাচ্চামোর একটা সীমা থাকে আয়ান,এভাবে অনর্থক বিষয়ে এতো অস্বাভাবিক হওয়ার কি আছে?
অনর্থক তোমার কাছে এসব অনর্থক মনে হচ্ছে?না ও বিয়ে করতে পারে না,ও অন্য কারো হতে পারে না,আমি তা কখনো মেনে নিবো না,ও এমনটা কিভাবে করতে পারে?
চেঁচিয়ে গর্জে পাগলের মতো কান্ড করতে করতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো আয়ান,আয়ানের এমন রুপ মাহি এই প্রথম দেখলো, মনের মধ্যে এখন খনিক ভয়ও ধরা দিলো ওর।
না না আমি অনেক দেড়ি করে ফেলছি,এই আয়ান যদি বুঝতে পেরে যায় যে ওর মনে এখনও ওই আঁখিরই বসবাস তবে অনেক বড় ক্যাল্যাঙ্কারি হয়ে যাবে,আমি একে রুপের জালে ফাঁসাতে পারলেও ওর মনে জায়গা করে নিতে পারি নি যা সম্পর্কে ওর নিজেরও জানা নেই,ও তো আমার রুপের মোহে পাগল হয়েছে,কিন্তু আমি তা খুব ভালো করে জানি কারন প্রায় রোজ রাতে ঘুমের ঘরে আঁখির নাম নিতে শুনেছি ওকে আমি, এর মানে এটা নিশ্চিত যে আয়ান এখনও ওই আঁখিকেই ভালোবাসে তবে হ্যাঁ জিনিসটা ওই বজ্জাত আন্দাজ করার আগেই আমাকে নিজের প্লান সাকসেসফুল করতে হবে আর ওই আঁখিরও একটা ব্যবস্থা করতে হবে নয়তো আমার প্লানে নিজের পা ঢুকাতে দু’বার ভাববে না ওই শাঁকচুন্নি।
____________________
আঁখি রাতে আদৃত আসার আগের ফাইলটা নিজের জায়গায় ঠিকমতো রেখে দেয়,প্রায় মধ্যরাতে আঁখি খেয়াল করে আদৃত ফাইলটা নিয়ে কোথাও চলে যায়,সারারাত আঁখি ভাবতে থাকে আদৃত জিনিসগুলো কোথায় লুকোতে পারে তবে তার কোনো সঠিক জবাব ও খুঁজে পেতে ব্যার্থ হয়।
পরদিন ভার্সিটিতে আঁখি শুধু আদৃতকে ফলো করছিলো কখন আদৃত কোনো সার্জারীর জন্য যাবে আর কখন ও একাকিত্বে আদৃতের কেবিনে ঢকার সুযোগ পাবে,হোক না হোক আদৃত এখানেই সবকিছু লুকিয়েছে যতোটুকু আঁখির অনুমান,কারন আদৃত একটা সুরক্ষিত জায়গায় ওগুলা রাখতে চাইবে আর সে হিসেবে ওর কেবিনই উপযুক্ত কারন ওখানে আদৃতের অনুমতি ছাঁড়া কেউই ঢুকবে না।
তাই আঁখির প্লান অনুযায়ী আদৃত একটা সার্জারীর জন্য বেড়িয়ে গেলেই আঁখি সুযোগ বুঝে আদৃতের কেবিনে ঢুকে পড়ে তারপর খুঁজতে লাগে জিনিসগুলো,অবশেষে আঁখির অপেক্ষার আর পরিশ্রমের অবসান ঘটলো,আদৃতের টেবিলের নিচের ড্রায়ারে আঁখি খুঁজে পেলো ওর সব প্রশ্নের জবাব,আঁখি ওগুলো হাতে নিলো সবার প্রথম রিপোর্টগুলো পড়তে নিলো,যা পড়ার পর আঁখি যেনো পুরো ধাতব মূর্তিতে পরিণত হলো অবাকত্বের প্রতিক্রিয়ায়,হাতগুলো একপ্রকার কাঁপতে শুরু হলো আঁখির,এই রিপোর্টগুলো যে আরোহীর,একটা রিপোর্ট প্রেগন্যান্সি নিশ্চিতকরনের আর অন্যটি গর্ভপাতের,আঁখি ঝটফট ডায়েরিটা খুলে পড়তে নিলো,ডায়রিটার প্রথম দিকে আদৃত আর আরোহীর সুন্দর দিনগুলো খুব সুন্দর করে ফুটিয়েছে আদৃত নিজের মন মাধুর্য মিশ্রিত লিখনী দিয়ে,সেখানে আরোহীকে নিয়ে অনেক কবিতাও লিখেছে আদৃত যেখানে লুকিয়ে আছে ওর মনের অসীম ভালোবাসা যা শুধুই আরোহীর জন্য,কিন্তু শেষের দিকের লেখাগুলো ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না আঁখি।
লিখাগুলো অনেকটা প্রায় এরকম……..
প্রিয়সী অনেক ভালোবাসি তোমায়, কিন্তু কখনো জানা ছিলো না তোমার মন পিঞ্জরের কোনো কোনে আমার জায়গা নেই,তোমার মন পিঞ্জর জুরে যে অন্য কারো বসবাস,যখনি তা বুঝে উঠতে সক্ষম হলাম আর পারলাম না তোমার ওই মিথ্যে ভালোবাসাতে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে,শুনেছি সত্য ভালোবাসার টানে নাকি মানুষ সব করতে সক্ষম হয়ে পড়ে,কিন্তু কখনো জানা ছিলো না যে লোক ভালোবাসার মানুষটার সুখের জন্য তাকেও ত্যাগ করতে দ্বিধা করে না,আমিও যে পারি নি তোমার সুখের উপর নিজের সুখকে প্রাধান্য দিতে তাই মুক্ত করে দিলাম তোমাকে আর রয়ে গেলো কিছু সুপ্ত কথা আমার মন পিঞ্জরে,থাক না দোষ কি তাতে,সব ভালোবাসা পূর্নতা পাবে এমনতো কোনো কথা নেই।
কথাগুলো পড়ে আঁখির মাথায় আরও জটলা পেকে গেলো কিছুই বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না,আঁখি এবার এলবাম খুললো যেখানে আরোহীর সাথে শুধু অন্য একটা ছেলের ছবি,যে এলবামের কোনো কোনে আদৃতের কোনো ঝলক পেলো না আঁখি,আঁখি নিজের খেয়ালে মগ্ন তখনি ওর কানে ভেসে এলো পিছন থেকে আদৃতের কন্ঠস্বর,অনেকটা স্বাভাবিকভাবে মৃদ্যু কন্ঠে বললো আদৃত।
অবশেষে জেনেই গেলেন যা আজ অব্দি কেউ জানতে পারে নি।আমার ভয়টা যে থেকেই গেলো।
আঁখি এবার আঁখিযোগল তুলে তাকালো আদৃতের পানে,তারপর কাঁপা কন্ঠে বলতে লাগলো।
কি এসব ড.আদৃত?আরোহী মারা যায় নি ও অন্য কোথাও আছে,ওকে আপনি অন্য কারো হাতে তুলে দিয়েছেন কিন্তু কেনো?আর ওই লাশটা?
আমি জানি মিস আঁখি আপনি পুরোটা জানতে পারেন নি তবে এতোটুকু যখন জেনেই গেছেন বাকিটাও আপনাকে আমি জানাবো।
কথাটা গম্ভীর কন্ঠে বলে আদৃত আঁখিকে হাত ধরে টেনে কোথাও নিয়ে যেতে শুরু করে।
_____________________
আয়ান কিছুতেই নিজেকে শান্তি করতে পারছে না,বার বার ওর ভাবনাতে ধরা দিচ্ছে উল্টাপাল্টা সব কথা,আঁখি অন্য কারো স্ত্রী,এর স্পষ্ট মানে ও অন্য কারো সাথে থাকে,অন্য কাউকে স্বামীর অধিকার দেয়,অন্য কারো সাথে রাত কাটায় কথাগুলো ভেবে ভেবে গা জ্বলে উঠছে আয়ানের।
না আমি জানি আঁখি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে না,ও তো আমাকে ভালোবাসতো, আমার জন্য পাগল ছিলো,আমার জন্য পৃথিবীর সব সুখ ছেড়ে দিলো,ওর জন্য সব থেকে প্রিয় আমি ছিলাম আমার জন্য সব করতো তবে আজ আমার জায়গা ও অন্য কাউকে কি করে দিতে পারে,কি করে পারলো ও তা করতে,কেনো করলো এমনটা।
কথাগুলো বলতে বলতে আয়ানের চোখ দিয়ে নেমে এলো অল্প জলের স্রোত।
চলবে…….