#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩৩
পার্বত্য অঞ্চলে আঁখি আদৃত দুজনেই পিলু পায়ে হাঁটছে, আর মন খুলে গল্প করছে,দুজনেরই মুখে হাসি বিদ্যমান,আঁখি এটা ওটা বলছে যার পরিনামে আদৃত মৃদ্যু হাসি উপহারে দিচ্ছে,আঁখি বার বার আদৃতের হাত ধরে এদিকে ওদিকে নিয়ে ছুঁটছে উক্ত বিষয় আদৃতের মনে অজানা এক ভালোলাগার অনুভুতি জাগিয়ে দিলেও, সে দৃশ্য তিক্ত এক অনুভূতির সৃষ্টি করছে আয়ানের মনে,দূর থেকে ওদের উপর নজর রেখে যাচ্ছে আয়ান,আঁখি আদৃতকে এভাবে একসাথে মেনে নিতে ব্যার্থ হচ্ছে আয়ানের মন,মন পিঞ্জরে যেনো আগুন লেগেছে ওর,ইচ্ছে করছে আদৃতকে শেষ করে দিতে আর আঁখিকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে,তবে কোন অধিকারে তা করবে আয়ান।একদিন নিজেও তো আঁখিকে রেখে অন্যত্র চলে গেছিলো আয়ান,মাহি নামক রমনীর সাথে রাতের পর রাত দিনের পর দিন কাটিয়েছে অথচ ওর পথ চেয়ে বসে থাকতো আঁখি সারাদিন সারারাত,এমনকি আঁখি সত্যটা জানার পর ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে মাহির সাথে প্রেম করতো,তখন তা অনেক মজার জিনিস মনে হতো আয়ানের কাছে, তারপর তো আঁখিকে সোজা ছুঁড়েই ফেলে দিলো, তবে আজ কেনো আঁখিকে অন্য কারো সাথে দেখে খারাপ লাগছে?আজ অন্যের হাত ধরা অবস্থায় আঁখিকে দেখে বড়ই হৃদয় পুড়ছে আয়ানের কিন্তু নিজেও তো মাহিকে নিয়ে কতো রঙ্গরসে পরে থাকতো আঁখির সামনেই সেদিন আঁখি কি করে তা মেনে নিতে পারলো,হয়তো সেদিন এতোটা পীড়া আঁখিরও হয়েছিলো, হয়তো তার থেকেও বেশি।ও তো মাহিকে চেয়েছিলো জীবনে ওকে তো পেয়ে গেছে তবে কেনোই বা আঁখির জন্য ওর মন কাঁদছে এবার,আঁখি তো আর নিজে থেকে অন্যের জীবনে পদার্পন করে নি, ওকে তো ধোকা দিয়ে যায় নি,আয়ান তো ছুঁড়ে ফেলেছিলো ওকে কিন্তু ওর কি আবার উঠে নিজের জীবনে এগুনোর অধিকারটুকুও ছিলো না,এগিয়ে যাক না আঁখি,ওর জীবনে কেনো এখন হস্তক্ষেপ করতে চাইছে আয়ানের বেহায়া মন,মনের সাথে এক ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত আয়ান,পারছে না নিজের বেহায়া মন কে আটকাতে,পারছে না আঁখিকে অন্যের সাথে মেনে নিতে,আঁখি যে একদিন ওর ছিলো তাকে অন্য কারো হয়ে যেতে কি করে দেখতে পারবে সে।তিক্ত ভাবনাগুলো চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ার কারন হয়ে দাঁড়ালো আয়ানের।
আয়েশা নোমানকে নিয়ে যাচ্ছে এক পাহাড়ের চূড়ায়,পাহাড় টা অনেক উঁচু,নোমান উঠতে গিয়ে হয়রান।
আরে আয়েশা তুমি দেখছি এমনভাবে ছুঁটছো যেনো রোজ পাহাড়ে চড়ে বেড়াও,আমার তো হাঁটতে হাটতে বেহাল দশা।
আরে নোমান সাহেব এটাতো কম আমি আর আঁখি জীবনে কতো পাহাড় চড়েছি,স্কুল টাইমে আমরা স্কাউটে ছিলাম,অনেক জায়গায় যেতাম তখন, বেশিরভাগ পাহাড় অঞ্চলে, আমার আর আঁখির পাহাড় আর পার্বত্য অঞ্চল বরাবরই প্রিয়,স্কুল থেকে বেড়িয়েও দুজন কতো ভ্রমন করেছি পাহাড় পর্বতে,আমাদের ভ্রমন বলতেই নাম আসতো পার্বত্য অঞ্চলের,চলেন আমার হাত ধরে চলে আসেন কষ্টটা একটু কম হবে,জানেন পাহাড়ের চূড়া থেকে আকাশটাকে দেখতে অনেক ভালো লাগে,মনে হয় যেনো ওটা অনেকটা নিচে নেমে এসেছে,চলেন না অনেক ভালো লাগবে আপনার।।
আয়েশা হাত বাড়িয়ে দিলে নোমান ওর হাত ধরে নিলো,আয়েশা ওকে টেনে নিয়ে ছুঁটছে ভালোলাগার এক অজানা সন্ধ্যানে।
আঁখি হেসে হেসে কথা বলছিলো আদৃতের সাথে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে পরে গেলো আদৃতের উপর,যাতে আদৃতের মধ্যে অল্পতেই অস্থিরতা ধরা দিলো,আদৃতের মনে আঁখিকে হারিয়ে যাবার ভয় আবারও কাজ করতে শুরু করলো, গালে হাত রেখে ডাকতে শুরু করেছে ওকে অনেকটা অস্থির হয়ে,আঁখির কোনো সারা না পেয়ে ওকে কোলে তুলে নিবে তখনি আঁখি হেসে উঠে।আদৃত হতবাক হয় আঁখির এমন কান্ডে,আঁখি খিল খিল করে হাসছে।
আরে ড.আদৃত আপনি কি মনে করেছিলেন আমি আবার অজ্ঞান হয়ে গেছি?না কি মনে করেছিলেন মরেই গেছি?হা হা হা।
আপনার কাছে সবকিছুই মজা মনে হয় মিস আঁখি?এমনকি অন্যের অনুভুতিগুলোও মজা তাই না?জীবন মরন সবকিছুই খেলা না আপনার কাছে?পাগলকে নিয়ে মানুষ এমনই মজা করে আর আমিও তো পাগল তাই মজা নেওয়াটা আপনার মানায়,বেরি ওয়েল।
কথাগুলো ধমকের স্বরে বলে আদৃত স্থান ত্যাগ করলো।আঁখিতো একটু মজা করেছিলো কিন্তু আদৃতের এতোটা খারাপ লাগবে ভাবে নি আঁখি,আঁখি আদৃতের সাথে এখন প্রায়ই এটা ওটা নিয়ে এমনি মজা করে তবে আদৃত ওকে এতে তেমন কিছু বলে না,কিন্তু আঁখি আন্দাজ করতে পারছে আঁখির এই অসুখটাকে নিয়ে আদৃতের প্রতিক্রিয়া অন্যরকম,আঁখির অসুখ নিয়ে আদৃতকের ভাবনাটা মোটেও সহানুভূতি থেকে না,সেটা যেনো অন্য কোনো অনুভুতি থেকে তবে সেটা কি তা বুঝতে ব্যার্থ আঁখি।
____________________
সত্যিই পাহাড়ের চূড়ায় উঠে অনেক ভালো লাগছে নোমানের,যেনো আকাশটা নিচে নেমে এসেছে,হাত বাড়িয়েই যেনো মেঘ ছুঁতে পারবে, ভালোই লাগছে দৃশ্যটা অনুভবে নিতে পেরে আর তার থেকেও বেশি ভালো লাগছে পাশে দাঁড়িয়ে অপরুপ এই সৌন্দর্যের ধিদ্বার করতে থাকা সে মায়াবী রমণীকে, পড়ন্ত বিকেলের মৃদ্যু রোদের ছোঁয়ায় রমণীর চেহারার মায়াবী ভাবটা যেনো ফুঁটে উঠেছে আলাদা এক রুপে,যার ফলস্বরূপ রমনীর উপর থেকে চোখ সরাতে বড্ড অক্ষম হচ্ছে নোমান,ইচ্ছে করছে যেনো তাকে দেখেই যেতে। মুহুর্তটা এখানে থমকে গেলে কি বড্ড খারাপ কিছু হতো এমনই এক আচমকা নাম না জানা অনুভুতি ধরা দিলো নোমানের মনে।
রাত হয়ে গেছে, আঁখি আদৃতকে খুঁজছে পাচ্ছে না তবে,তখনকার পর আর ওকে দেখে নি আঁখি,ফোন করছে উঠাচ্ছে না,সবাইকে জিজ্ঞেস করেছে কেউই ওর খোঁজ জানে না,হটাৎ সায়েদা বললো আদৃতকে ও পাশেই ছোট্ট একটা পাহাড়ে চড়তে দেখেছে,সায়েদার কথামতো আঁখি সেদিকে হাঁটতে শুরু করে,এদিকে আয়ানের কেনো যেনো এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আঁখি আদৃত স্বামী স্ত্রী, হয়তো মনের শান্তির খোঁজেই এখন সবসময় ওদের উপরই নজর রাখছে যদি কোনো দিক থেকে এটা জেনে যেতে পারে যে আদৃত আঁখি স্বামী স্ত্রী না তবে যেনো ও খুব বড় সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যাবে,এই আশাতেই নজর রাখছে ওদের উপর,আঁখি হেঁটে চলেছে পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে আয়ানও ধিমি পায়ে ওর পিছু আসছে,আঁখি ওকে দেখেছে ওর পিছন আসতে তবে ওকে কিছু বলে নি যথারীতি অদেখা করে চলেছে,এদিকে ছোট্ট সে পাহাড়ের নিচ দিয়ে নদী বসে চলেছে,বেশ পাশেই নদীর পাড়, আয়ানের দৃষ্টি শুধু আঁখির উপরই বিদ্যমান,তাই নিজের দিকে খেয়াল একটু কমে গেলো ওর যার পরিনামস্বরুপ পাহাড়ের অনেকটা কাছে থাকায় পা পিছলে ভুলবশত আয়ান নদীতে পড়ে যায়, দৃষ্টির অগোচরে যায় না আঁখির মুহুর্তটা,আঁখি আয়ান বলে চিৎকার করে উঠে,সাথে সাথে নিজেও পানিতে ঝাঁপ দেয়,আঁখির চিৎকার আর কিছু জলে পড়ার শব্দ শুনে আশপাশে থেকে ২-৩ জন লোক এগিয়ে আসে আদৃতও পাশেই ছিলো তাই আঁখির চিৎকার ওর কানেও পৌঁছালো যাতে ছুঁটে আসলো আদৃতও,আঁখিকে জলে দেখে নিজেও ঝাঁপ দিলো,এদিকে লোকগুলোও পর্যটক তবে ওরা কেউই সাঁতার জানে না আর তাই কয়েকজন রিসোর্টের দিকে গেলো সাহায্য আনতে।
আঁখি আয়ানকে জলের বাইরে আনার চেষ্টা করছিলো তখন আর আয়ান হাত ঝাঁপটাচ্ছিলো কারন ও সাতার জানে না আর আদৃতের দুঃশ্চিন্তা আঁখিকে নিয়ে।
মিস আঁখি আপনি নদীর পাড়ে যান আমি উনাকে নিয়ে আসছি।
আপনি কি বলছেন ড.আদৃত?ও সাতার জানে না,আয়ান একটু হাত নাড়াও পানিতে আমার সাথে চলার চেষ্টা করো।
মিস আঁখি আমি সাতার জানি,আর আমি ড.আয়ানকে কিছুই হতে দিবো না আপনি যান প্লিজ, আপনার জন্য এতো ঠান্ডা জ্বলে থাকা একদম ঠিক না,প্লিজ গো,ড.আয়ান,আমি আপনার হাতটা নিজের কাধে নিয়েছি,আপনাকে পানিতে ভেসে থাকার জন্য আমি যথেষ্ট হেল্প করছি আপনিও চেষ্টা করুন,আর আমার সাথে এগুন,মিস আঁখি আপনি যান।
আমি যাবো না,আয়ান জ্ঞান হারাচ্ছে, হয়তো কিছু পানি ওর ভিতরে গেছে। আমাদের দুজনকেই ওকে পাড়ে নিতে হবে।
তারপর দুজন মিলে ওকে পাড়ে নিয়ে আসে।
আয়ান জ্ঞান না হারালেও পুরো জ্ঞানে নেই,আঁখি ওর ভিতর থেকে পানি বের করার সমস্ত চেষ্টা করছে,এমনকি আদৃতও, ততক্ষণে রিসোর্ট থেকে সাহায্যের জন্য সেখানের দায়িত্বে থাকা অনেকে চলে আসে,একটা মেডিক্যাল টিমকেও ওরা এতোক্ষণে আনিয়ে নিয়েছে,যেহেতু আদৃত একজন দক্ষ ডাক্তার তাই আয়ানকে কমসময়েই স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়, আঁখি অনেকটা অস্থির হয়ে আছে আয়ানের জন্য,আয়ান স্বাভাবিক হয়ে আঁখিকে সামনে দেখতেই ওকে জড়িয়ে ধরে, তারপর অতি আবেগে বলতে লাগে।
তুমি আমার প্রাণ বাঁচালে আঁখি,তুমি আজ আবারও প্রমাণ করে দিলে আমি যাই করি না কেনো তুমি সর্বদাই আছো আমার জন্য।
কিন্তু আজ আর আঁখির মনে আয়ানকে নিয়ে আলাদা কোনো অনুভুতি কাজ করছে না,বরং আয়ানের হঠাৎ ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরায় ওর মাথায় সবার আগে আদৃতের চিন্তাই খেলা করলো,কেনো যেনো মনে হলো উক্ত দৃশ্য আদৃতের আঁখিযোগল মেনে নিতে পারবে না,আর ঠিক যেনো তাই আন্দাজ করতে পারলো আঁখি আদৃতের দিকে আলতো দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
আয়ানের আঁখিকে এভাবে জড়িয়ে ধরা মেনে নিতে পারছে না আদৃত,বুকে দহন অনুভব করতে পারছে,হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
আঁখি এক মুহুর্তের জন্য এবার আদৃতের চিন্তা একসাইড করে আয়ানকে ছাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো।
ঠিক আছো তুমি?কোথাও লাগে নি তো?দেখি।
আঁখি ভালো করে আয়ানকে দেখতে লাগলো।
আঁখির আয়ানকে তুমি করে বলা ওকে নিয়ে চিন্তা করা বড্ড বিরক্তিকর লাগলো আদৃতের আর পারছে না আদৃত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে,আয়ানকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের হাতেও অনেকটা জখম হয়েছে তবে আদৃতের খোঁজটাও কি একবার নেওয়ার কথা মাথায় এলো না আঁখির,অনুভুতিটা বড্ড কষ্ট এঁকে দিলো আদৃতের হৃদয়ে,চোখ ছলছল করতে নিলো তবে কিছুই বলছে না ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সে,এদিকে আয়ান আবার বলছে।
আমার জন্য চিন্তা একটুও কমে নি তোমার তাই না?
আঁখি এবার স্বাভাবিক ভাবে বললো।
আসলে তা না,হয়তো আপনার জায়গায় এখন অন্য কেউ হলেও আমি তাই করতাম,ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হতে চলেছি তাই এসব কিছু আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
প্লিজ আপনারা উনাকে নিয়ে যান,উনার বর্তমানে চেকআপ দরকার।
মেডিক্যাল টিমকে কথাটা বললে উনারা ওকে নিয়ে গেলেন।
আদৃত আঁখির হাত ধরে নিয়ে এলো রুমে তারপর ভালো করে ওর হাত পা দেখে বললো।
কোথাও লাগে নি তো।
না
ঠিক আছে।তারপর আলমারি থেকে ওর কাপড় এনে হাতে দিয়ে বললো।
জলদি চেঞ্জ করে নিন আর মাথাটা ভালো করে মুছে নিবেন,নিজের প্রতি যত্নবান হোন,অন্যের যত্নতো আবার পছন্দ হয় না।
গম্ভীর কন্ঠে কথাটা বলে রুম ত্যাগ করলো আদৃত আঁখির দিকে তাকালোও না,আঁখি বুঝতে পারলো আদৃত ওর উপর অভিমান করে আছে তবে অভিমানে থাকা সত্ত্বেও লোকটা ওকে নিয়ে কতোটা ভাবে ভেবেই ঠোঁটের কোনে প্রশান্তির এক ঝলক হাসি ফুঁটে উঠে আঁখির,আয়ান বরাবরের মতো আজও একবার জিজ্ঞেস করলো না আঁখির কিছু হয় নি তো,ওর কোথাও লাগে নিতো,বরং আজও সবার প্রথম নিজের টাই দেখলো,এদিকে আদৃত আয়ানকে সহ্য করতে না পারলেও আজ আয়ানকে বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিলো,সেখানে থাকা অবস্থায়ও আঁখির কথা ভাবছিলো,আদৃত লোকটা যেনো সবসময়ই আঁখির ভাবনা থেকেও অতিরিক্ত ভালো ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয়,যে ব্যক্তিত্ব আজকাল সবার মধ্যে খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে।
__________________
আঁখি চেঞ্জ করে এসে দেখে আদৃত রুমের সাথে সংযুক্ত ছোট্ট বারান্দায় বসে আছে কাপড় এখনও চেঞ্জ করে নি।
এই যে আপনি এখনও বসে আছেন চেঞ্জ করেন নি?উঠুন, উঠে গিয়ে চেঞ্জ করুন।
আদৃত জবাবে কিছুই বললো না, বসেই আছে।
এই যে শুনতে পাচ্ছেন না উঠুন?উঠুন বলছি।
আঁখি এবার আদৃতকে হাত ধরে উঠাতে গেলে দেখতে পেলো আদৃতের হাত অনেকাংশে কেটে আছে,আঁখি আন্দাজ করতে পারলো হয়তো আয়ানকে বাঁচাতে গিয়ে এমনটা হয়েছে।
ও মা একি অনেকটা কেটে গেছে দেখছি?দাঁড়ান আমি ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসি।
ফাস্ট এইড বক্স এনে আঁখি আদৃতের হাত দেখতে নিলে আদৃত টান দিয়ে হাত সরিয়ে নিলো।
আ আমি একদম ঠিক আছি মিস আঁখি, আপনাকে আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবে না।
কচু ঠিক আছেন আপনি,আপনি মিথ্যে বলতে পারেন না তবে বলেন কেনো?আপনি মিথ্যে বললে আপনার চোখের পলক বার বার পরে আর ঠোঁটগুলোও কেমন কাঁপে,যেমন এখন এই কথাটা বলতে গিয়ে হলো, তাই আমি ভালো করেই বুঝতে পেরেছি আপনি ঠিক নেই।
আঁখি আদৃতের হাত টেনে নিয়ে এবার ওষুধ লাগাতে ব্যস্ত হলো,আদৃত অপলকে তাকাচ্ছে আঁখির দিকে,আঁখি আদৃতের খেয়াল করছে জিনিসটা যতোটা প্রশান্তি ওর মনে এনে দিচ্ছে ততোটাই উতলা করছে ওকে তখন আঁখির আয়ানের জন্য দেখানো অস্থিরতা, মনের ভিতর চলা একটা প্রশ্ন বড়ই অশান্ত করে তুলছে ওকে তাই মুখ ফুঁটিয়ে প্রশ্নটা করেই বসলো এবার আদৃত।
ভালোবাসেন না আয়ানকে এখনও?আর আমার জন্য যেটা করছেন সেটা শুধুই সহানুভূতি তাই না?
আঁখি নয়ন তুলে তাকালো আদৃতের দিকে, চোখের অল্প জল ছলছল করছে ওর তা স্পষ্ট অনুমানে গেলো আঁখির।
আপনি যেটা মনে করছেন তেমন কিছু না।
তবে তখন ওর জন্য এতো অস্থির হয়ে কেনো পড়েছিলেন?
দেখেন ড.আদৃত, হ্যাঁ এটা ঠিক আমি ওকে একসময় ভালোবাসতাম,তবে ওর করা অন্যায় অবিচারগুলো আমার মনে ওকে নিয়ে একটা ঘৃণাও সৃষ্টি করেছে,যে ঘৃণার রেশ ভালোবাসাকে অনেকাংশে কাটিয়ে দিয়েছে,প্রথম ভালোবাসার জায়গা হয়তো কখনো মুছা যায় না তবে এজন্য যে সে ভালোবাসার আশায় থেকেই জীবন কাটাতে হবে তা তো নয়,আয়ানের জন্য এখনও একটা টান আমার মনে থাকলেও তা আবার ওর সাথে আমার সম্পর্ক জুড়ে দেওয়ার মতো শক্তিশালী নয়,আজকে আমি ওকে বাঁচিয়েছি শুধু মনুষ্যত্বের খাতিরে, আর ওর জন্য চিন্তা হয়তো সে টান থেকেই এসেছে কিন্তু এর মানে এটা নয় আমি ওকে এখনও ভালোবাসি।আর আমার আপনার খেয়াল করার একটাই কারন,আপনি তার যোগ্য,যে আমাকে বুঝে,আমাকে সাপোর্ট করে,আমাকে নিয়ে ভাবে তার যথেষ্ট অধিকার আছে আমার কাছ থেকে প্রতিদানটা পাওয়ার।
তবে কি আপনি শুধু প্রতিদানের জন্যই আমার খেয়াল রাখছেন?
আদৃতের প্রশ্ন বড্ড মুশকিলে ফেলে দিলো এবার আঁখিকে,নিবার্ক হয়ে গেলো অল্পতে ,জানা যে নেই ওর এই প্রশ্নের জবাব।
আদৃত খানিকক্ষণ অপেক্ষা করলো আঁখির জবাবের, কিন্তু জবাব না পেয়ে নিরাশা ভরা অনুভুতি নিয়ে উঠে চলে গেলো ইমপোর্টেন্ট কাজ আছে বলে,আঁখি ঠায় বসে রইলো।
অনেকক্ষণ চলে গেছে আদৃতের কোনো খবর নেই,ঘটনাটার খবর শুনে পরিবারের সবাই এসে আঁখিকে দেখে গেছেন,এদিকে আদৃতকে কেউই পেলেন না,ফোনও ধরছে না,আঁখি বললো ইমপোর্টেন্ট কাজে গেছে যা শুনে পরিবারের সবাই চিন্তামুক্ত হলেও চিন্তামুক্ত হতে পারলো না আঁখি।অনেকক্ষণ আঁখির পাশে থেকে এই মাত্র রুম ত্যাগ করলেন সবাই,এদিকে আঁখি দরজার পানে তাকিয়ে আছে আদৃতের অপেক্ষায়, আদৃতকে ফোন করছে কিন্তু ওর কোনো খবর নেই,আঁখির মনে এখন দুঃশ্চিতা কাজ করছে ওকে নিয়ে।ভিজে থাকা অবস্থায় চলে গেছে চেঞ্জও করে নি,জল তখন প্রচুর ঠান্ডা ছিলো,প্রতিদানের খাতিরে আদৃতকে নিয়ে আঁখিকে যতোটুকু ভাবা দরকার তার থেকেও বেশি ভাবনা আঁখির মনে আদৃতকে নিয়ে তা আঁখি জানে,আর তাই হয়তো তখন আদৃতকে সে জবাবটা দিতে পারে নি,কারন আদৃতের চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলার ক্ষমতা আঁখির নেই আর সত্যটা যে আঁখির এখনও অজানা,আর হয়তে আঁখি তা জানতেও চায় না।
চলবে………
#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩৪
আদৃত মাঝরাতে ফিরলো,আঁখি এগিয়ে গেলো ওর দিকে।
আপনি কোথায় ছিলেন এতোসময়?আপনি জানেন আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি,ভিজে কাপড়ে বাইরে গেলেন কেনো,দেখেন শরীরেই শুকিয়ে গেছে।
আমি ঠিক আছি আপনি শুধু শুধু টেনশন করবেন না,আপনার টেনশন নেওয়া ঠিক না আপনার তা মাথায় ঢোকানো উচিৎ।
কথাটা বলে আদৃত কাপড় নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে গেলো,অতপর চেঞ্জ করে এসে সোফাতে শুয়ে পড়লো।
এই যে আপনি শুয়ে পড়ছেন কেনো?খাবেন না,না খেয়ে চলে গেলেন তখন কোথাও।চলেন খাবেন।
আমার ক্ষিদে নেই আমি খাবো না মিস আঁখি।
আপনাকে খেতে হবে চলেন।
মা গো, আপনার গা তো দেখি জ্বরে পুঁড়ছে,আপনাকে আমি তখন বলেছিলাম চেঞ্জ করতে,কথা শুনলেন না তো আমার,বলেন না কি আমি জেদি নিজে কি শুনি,আসতো কাকতাড়ুয়া কি আর এমনি বলে,বসেন আমি আসছি।
তারপর আঁখি খাবার নিয়ে এলো আদৃতের জন্য,আদৃত খেতে না চাইলে জোর করে খেতে বাদ্য করলো,আঁখির জেদের সামনে তো সবসময়ই আদৃত নিরুপায় তাই খেয়ে নিলো যতোটা পারলো,আঁখি তারপর ওকে ওষুধ খাওয়ালো,হাতের ব্যান্ডেজ খুঁলে আবারও ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে শুতে বললো।
আমার ঘুম আসছে না,ঘুমাবো না এখন।
আমি আছি না আমি ঘুম এনে দিবো,জানেন বাবা বলতেন আমার হাতে জাদু আছে,ভাইয়া আর আয়ানও বলতো,কারন আমি যারই মাথায় বিলি কেটে দিতাম সে না ঘুমিয়ে পারতোই না,আপনি চোখ বন্ধ করুন আমি আপনার মাথায় বিলি কেটে দিই ঘুম চলে আসবে।
কিন্তু।
কোনো কিন্তু না চুপ করে শুয়ে থাকুন তো।
দেখুন মিস আঁখি রাত অনেক হয়েছে আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন আমি নিজে থেকে ঘুমিয়ে পরবো আপনি ঘুমিয়ে পরুন।
আমি কথা দিচ্ছি আপনি ঘুমানোর সাথে সাথেই নিজে গিয়েও ঘুমিয়ে পরবো,প্লিজ একটু ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
আদৃত তাও না মানলে আঁখি অনেক জেদ করে ওকে মানায়,অবশেষে আদৃত চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টায়,আঁখি ওর মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে, জ্বরে অনেক মাথা ব্যাথা হলেও প্রশান্তি লাগছে এতে,আঁখির ওর প্রতি এতো যত্নবান হওয়া মোটেও সহানুভূতি মনে হয় না আদৃতের তবে তখন আঁখির জবাব না পাওয়ায় নিরাশাটাও যে পিছু ছাড়ছে না ওর।
চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে আয়ান, আজ আঁখি ওকে বাঁচিয়েছে,ওর জন্য কতোটা অস্থির ছিলো আঁখি তা আয়ান স্পষ্ট আন্দাজ করতে পেরেছে,যা ওর মনে এনে দিচ্ছে প্রশান্তির ছোঁয়া,তারমানে মানে হয়তো আঁখি এখনও ওকে ভালোবাসে,কথাটা ভাবতেই ঠোঁটের কোনে মৃদ্যু হাসি ফুঁটলো,মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নিলো এবার।
সায়েদা ঘুমিয়ে ছিলো হঠাৎ কিছু শব্দ শুনতে পেলো ও,আজ দিদু ওর মা আর মিরা রাহমানের সাথে থাকতে চাইলেন,যাতে আয়েশা চলে এলো ওর কাছে।শব্দগুলো শুনে সায়েদা অনেকটা অবাক হলো কেমন যেনো আজবগুবি কিছু শব্দ, এবার বারান্দা দিয়ে কেউ একজন ওকে ডাকছে আন্দাজ করতে পারলো,সায়েদা খনিক ভয় পেয়ে আয়েশাকে ডাকলো,আয়েশা এমন ঘুমে যে নড়ছে অব্দি না,এদিকে বাইরে থেকে ওর নামের ডাকটা এখনও বন্ধ হয় নি,কেউ মৃদ্যু কন্ঠে ওকে বলছে।
সায়েদা বেড়িয়ে এসো,সায়েদা এসো না।
কে আপনি কাকে চাই? আমি বেড়িয়ে কেনো আসবো?আসবো না।
সায়েদা এসো না,সায়েদা এসো।
সায়েদা ভয়ে লাইট জ্বালাতে গেলে বিদ্যুৎ চলে গেলো,ও নিজের ফোনটাও খোঁজে পেলো না,সায়েদা এবার প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো,আয়েশাকে চিৎকার করে ডাকছে তবে সে যেনো তা শুনতেই পারছে না, এবার নিজেকে বাঁচাতে মা বাবা বলে চিৎকার করতে শুরু করলো,প্রায় ২ মিনিট কাঁদার পরে ওর হাল বেহাল দেখে তাজবীর লাইটটা জ্বালিয়ে হাসতে লাগলো,ওর পিছন নোমানও,আয়েশাও উঠে বসে হাসছে।সায়েদা বুঝতে পারলো না কোনো কিছু,এবার নোমান বললো।
আরে আমার পাগলি বোনটা,ভয় পেয়েছে খুব,আরে ভয় পাস না,আমরা তাজবীরের সাথে মিলে তোর সাথে একটু মজা করছিলাম,আসলে তুই তো ভুতে অনেক বিশ্বাস করিস কথাটা শুনার পর তাজবীর ভাবলো তোর ভুতের ভয় নিয়ে তোর সাথে একটু মজা করে নিবে যাতে তোর ভুতের ভয়টাও চলে যাবে,তাই আমরাও ওর সাথে একটু যোগ দিলাম,আরে এসবে তো আঁখিও ছিলো তবে ও আসতে পারে নি ভাইয়ার একটু শরীর খারাপ করেছে তাই।
হোয়াট তোমরা আমার অনুভুতি নিয়ে মজা করলে?আর উনি কখন এলেন এখানে?
আরে আমরা যেদিন এসেছি সেদিনই এসেছিলো,আঁখিই জেদ করলো ওকে এখানে আসতে,তবে তোর সামনে পরে নি নয়তো এমন মজা হতো কি করে।
সাদে কি আর বোকা,বাচ্চা টিউবলাইট বলি,এভাবে সামান্য ভুতের ভয়ে কারো এমন হাল হয় না কি,কোনো বাচ্চা ছাঁড়া,হা হা হা।
অনেক মজা লাগে না মি.তাজবীর আমাকে নিচু করে,অসম্মান করে,ছাড়বোনা আমি আপনাকে,কখনো ছাড়বোনা,আর ভাইয়া আয়েশা আঁখি আমি তোমাদের কারো সাথেই আর কথা বলবো না।
সায়েদা ছুঁটে চলে যায় ওর মায়ের রুমের দিকে।
ইশ আমরা বোধ হয় একটু বেশি করে গেছি।
তুমি চিন্তা করো না আয়েশা আমার বোন,চিনি আমি ওকে খুব ভালো করে এক বক্স চকলেট এনে দিলেই সব রাগ ভুলে যাবে।
___________________
আয়ান রিসোর্টে হাঁটছিলো তখনি ওর মা বোনকে দেখতে পায়,অল্প করে হলেও ওদের সাথে কথা বলতে মন চায় ওর,কিন্তু পরক্ষণেই মনে চলে আসে কিছু তিক্ত চিন্তা।
ওরা নিজের ইচ্ছেতেই গেছে আয়ান,যাদের তোর সম্মানের চিন্তা নেই তাদের চিন্তা তোর করে কি লাভ?আয়ান মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো রুমের দিকে,আয়েশা আর মা দেখতে পেলেন ওকে,মা এগিয়ে আসতে নিয়েছিলেন, ছেলেকে দেখে যে উনি আর নিজের আবেগ আটকে রাখতে পারলেন না,ইচ্ছে হলো বড্ড ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের অশান্ত মন পিঞ্জরটা অল্প শান্ত করে নিতে তবে সে অধিকারটুকুও আয়ান কেঁড়ে নিবে উনার জানা ছিলো না উনার,কান্না আসলো উনার বুক ফেঁটে,চোখের জল মুছতে ব্যস্ত হয়ে চলে গেলেন উনি,আয়েশাও চোখের গড়িয়ে পরা জল আলতো হাতে মুছে মায়ের সাথেই এগিয়ে গেলো,ওর ভাই ওদের পর করে দিলেও মন থেকে যে আয়েশা কখনো আয়ানকে পর করতে পারে নি আর পারবেও না।
আঁখি একটা নদীপাড়ে একা বসে আছে।বড্ড ভালো লাগছে ওর একা এই উতলা নদীর সৌন্দর্যে বিমোহীত হতে,নদীপাড়ের মিষ্টি বাতাস গায়ে ভালোলাগার শিহরন তৈরি করছে বার বার,অনুভবে ভরে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে বড্ড নদীপাড়ের এই সীমাহীন সৌন্দর্য। কিন্তু হঠাৎই ওর কাজে বিঘ্ন ঘটালো কেউ একজন।পাশের পাথরেই এসে বসলো কেউ,বিরক্তির পরিমানটা একটু বেশি বেড়ে গেলে আঁখির যখন চোখ ঘুড়িয়ে সেই ব্যক্তি হিসেবে আয়ানকে ধিদ্বার করতে পারলো।আয়ান মুখে বিশ্ব জ্বয়ের হাসি ঝুলিয়ে বললো।
শুভ সকাল।
আঁখি কিছু না বলে উঠে যেতে নিলে আয়ান ওর হাত ধরে নিলো,আঁখি টান দিয়ে হাত ছাড়ালো মুখে অনেকটা বিরক্তি টাঙিয়ে।
একটু বসো না আমার পাশে,দেখো আমি জানি তুমি এখনও আমায় ভালোবাসো,ওই আদৃতের সাথে এজন্য ঘুরে বেড়াও যাতে আমি জেলাস হই,আমাকে জ্বালানোর জন্যই ওকে নিজের স্বামী বলে দাবি করছো তাই না?আসল সত্য তো এটা যে ওর সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই।
আঁখি এবার স্বাভাবিক ভাবে বললো।
মেনে নিলাম উনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই,আমি উনাকে ভালোবাসি না,আমি আপনাকে জ্বালানোর জন্য এসব করছি,তবে কি আমি সত্যিই সফল হচ্ছি?আপনি কি সত্যিই জেলাস হচ্ছেন।আমার কি মনে হয় জানেন আপনার বুদ্ধির বিলুপ্তি ঘটছে,একবার ভেবে দেখেছেন এসবের কি কোনো মানে আছে?ড.আয়ান আপনি নিজের ইচ্ছেতে আমায় ছেঁড়েন দিলেন আপনার মন ভরে গেছে বলে,তবে কেনো এখন আবার আমার পিছু আসছেন,বলেন কি চাই আপনার?আমি আপনাকে ভালোবাসি না বাসি তা দিয়ে আপনি কি করবেন?আবার আমাকে জীবনে নিয়ে নিবেন?তবে তখন মাহির কি হবে ওকেও ছুঁড়ে ফেলবেন ?না কি দুজনকে একসাথে রাখবেন?দুজনকে আলাদা দুই রুমে রাখবেন না কি এক রুমেই,হয়তো এক বেডেই দুজনকে নিয়ে থাকতে চাইবেন।
আঁখিিিিিি।
চিৎকার করবেন না,কথাগুলো শুনে অনেক খারাপ লাগছে না,এটাই সত্য,ভালো করেই মনে আছে আমার আপনার সাথে কাটানো সেই শেষ দিনগুলোর কথা,আমার সাথেই এক রুমে থাকাকালীন ল্যাপ্টপে ভিডিও কলে বসে আপনার মাহির সেসব অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখতে থাকা,তখন আপনি ইচ্ছে করেই আমাকে জ্বালিয়ে ওসব করতেন কারন হয়তো আপনার মজা লাগতো এতে, যে রাতে ওর কাছে যেতেন না তখন রুমে বসে আমাকে শুনিয়েই অশ্লীল কথাবার্তায় মগ্ন থাকতেন ওর সাথে,আর তাই আজ নিজের মতো আমাকেও মনে করছেন হয়তো ,কিন্তু আপনাকে এলার্ট করে দেই ড.আয়ান আমি না আপনার মতো আর না মাহির মতো তাই আমার কাছ থেকে এমন কিছু আশাও করবেন না।আর হ্যাঁ নিজের মনকে শান্তভাবে বসে জিজ্ঞেস করবেন যে তার চাওয়াটা আসলে কি,আগে নিজের লক্ষ্য স্থির করুন যে আপনার কি চাই তারপর না হয় সে অনুযায়ী চিন্তা করে সামনে এগুবেন।
চলে গেলো আঁখি কথাগুলো বলে,তবে চোখে যেনো আঙুল দিয়ে আয়ানকে সত্যটা দেখিয়ে গেলো।
_________________
মাহি জানতে পারলো আয়ানের রাঙামাটি যাওয়ার আসল কারন,যাতে জ্বলে পুড়ে উঠলো নিমিষেই।
আমি জানতাম আয়ান এমন কিছুই ঘটাবে,ওকে দিয়ে আর কি বিশ্বাস, তবে আয়ানকে নিয়ে আর কোনো মাথা ব্যাথা নেই আমার,ও ফিরে আসুক তারপর না হয় ওকে স্যারপ্রাইজটা দিবো,আর যেখানে কথা ওই আঁখির ওকে ছাড়বো না,ও আমার থেকে জয়ী এবার আর হতে পারবে না,ও আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে,সবকিছু কেঁড়ে নিলাম অথচ বুক ফুলিয়ে হাঁটে এবার তো মনে হয় বড় কিছু করতে হবে ওর সাথে,আসুক বেড়ানো থেকে,কদিন ফুর্তি করে মন কে চাঙ্গা করুক তারপর না হয় বেদনা দিতে ভালো লাগবে।
তাজবীর বসে ছিলো ওর রুমে তখনি সায়েদা এলো।
আরে তুমি,ভালো হয়েছে তুমি এসে গেছো,আমি তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম।
কেনো?
ওই আসলে তোমার সাথে একটু বেশিই লাগালাগি করে ফেলেছি তাই সরি বলতে চাইছিলাম।
ও ঠিক আছে আমি মনে কিছু নেই নি ইট’স ওকে।
কথাগুলো অনেকটা হেসে হেসে বলছে সায়েদা যা হজম হলো না তাজবীরের। সায়েদা এতোকিছুর পরও ওর সাথে এতো ভালো ব্যবহার করছে কেমন সন্দেহ জনক মনে হলো বিষয়টা ওর কাছে।সায়েদা এবার মুখে হাসি টাঙানো অবস্থায় আবারও বললো।
আরে এতো কি ভাবছেন?আপনি তো মজা করেছেন এসব নিয়ে আবার মন খারাপ করে থাকতে হয় না কি?বাদ দেন এসব,আমি তো এসেছিলাম আপনাকে কিছু বলতে।
কি বলবেন বলুন?
ওই আসলে আমি আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইছিলাম,আঁখি আমার ফ্রেন্ড সে হিসেবে আপনাকেও ফ্রেন্ড তো বানাতেই পারি।
হুম কিন্তু।
কিন্তু কি?ওকে আপনি ফ্রেন্ডশিপ না করতে চাইলে আমার তো আর কিছু করার থাকবে না,আমার মতো বোকা টিউবলাইটের সাথে ফ্রেন্ডশিপ কেনোই বা করবেন আপনি।
আরে না না ওসব তো আমি মজা করে বলি,তুমি তো অনেক ভালো মেয়ে,আমি ফ্রেন্ডশিপ করতে রাজি।
সায়েদার মলিন মুখটা মেনে নিতে না পেরে রাজি হয়ে গেলো তাজবীর,সায়েদা এতে রহস্যময়ী একটা হাসি দিয়ে হাত আগে বাড়িয়ে দিলো।
ফ্রেন্ডস।
ফ্রেন্ডস।
তাজবীরও হাত মিলিয়ে নিলো।
আদৃত ল্যাপটপ নিয়ে কিছু কাজ করছে আঁখি তখনি এসে তা কেঁড়ে নিলো।
আরে মিস আঁখি কি করছেন?আমার কাজ আছে।দেন ওটা।
ছুটিতে এসে আবার কাজ কি?তাও অসুস্থ অবস্থায়, চুপচাপ রেস্ট করেন।
আপনি আমার কথা শুনেন? যে আমি শুনবো?
আপনি যেমন জোর করে আমাকে কথা শুনিয়ে নেন আমিও তেমনি শুনাবো,এবার শুয়ে পড়ুন ওষুধ খেয়েছেন এখন বিশ্রামের প্রয়োজন আপনার।
এখন আর রেস্ট করতে ভালো লাগছে না মিস আঁখি।
দেখেছেন আমাকে যে পুরোদিন রেস্ট রেস্ট বলে মাথা খান তখন আমার ঠিক এমনই লাগে,আচ্ছা চলেন রেস্ট করতে হবে না আমার সাথে বাইরে চলেন প্রকৃতির ধিদ্বার করলে রোগ ব্যাধি সব ছুঁটে পালাবে,মন ভালো তো শরীর ভালো,চলেন।
আঁখি আদৃতকে টেনে নিয়ে গেলো বাইরে……….
আয়ান এদিকে গভীর চিন্তায় ব্যস্ত,মনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে,আঁখির কথা অনুযায়ী এবার………..
চলবে………