#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_১৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
সূ্র্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত। ডিমের কুসুমের মতো সূর্যের রঙ। পশ্চিমাকাশে ধীরে ধীরে হেলে পড়ছে অসম্ভব সুন্দর সূর্যটি। সূ্র্যের দাবদাহ রোদ্দুর কারও পছন্দ না হলেও; সূর্য ওঠার এবং অস্ত যাওয়ার মুহূর্ত, দৃশ্য যেকোনো মানুষের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। এই অপরূপ মুহূর্তটিতেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে হিমেল এবং দোলা। হিমেলের মুখ নত। দু’হাত বগলদাবা করে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে রয়েছে দোলা। সে বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। হিমেল যে তাকে পছন্দ করে এটা সে জানত। তাই বলে ডিরেক্ট বাড়িতে এসে পড়বে? সে তাও মেনে নিয়েছিল। কিন্তু হিমেল সন্তুষ্ট ছিল না। সে প্রথমে শান্তি বেগমের মন জয় করেছে। বাদ যায়নি দেলোয়ার রহমানও। গতকালও দু’জন একসাথে বাজারে গিয়ে বাজার করে এনেছে। শান্তি বেগম আহ্লাদে আটখানা হয়ে বারংবার করে বলেছেন দুপুরে যেন এখানেই খায়। এই প্রস্তাব হিমেলের জন্য ছিল ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি’ স্বরূপ। সে খুশিতে গদগদ হয়ে গোসল-টোসল করে একদম সাজুগুজু করে চলে এসেছে। দেখে মনে হবে সে এসেছে শ্বশুরবাড়ি। জামাই-আদর খেতে।
দোলা বার দুয়েক ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে শুধাল,
“আচ্ছা তোমার সমস্যা কী বলো তো?”
হিমেল মুখটা কাচুমুচু করেই বলল,
“কই? আমার তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সমস্যা কোথাও আপনার হয়েছে। আমি কি কোনোভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?”
“ঠিকই ধরেছ। সমস্যা আমারই হয়েছে। বিরাট সমস্যা। আর সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু কী জানো? তুমি।”
“আমি?”
“হ্যাঁ। বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছ কেন?”
“ওহ! এই কারণে আপনি এতটা ক্ষেপে আছেন? সামান্য একটা কারণে।”
”এটা মোটেও কোনো সামান্য কারণ নয়।”
হিমেল দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলল আজ। দোলার দু’বাহু ধরে মুখের ওপর হালকা ঝুঁকে বলল,
“সব সামান্য জিনিসকেই এত বড়ো করে কেন দেখ? কী করি না করি, সব জানো, দেখো। এত যে ভালোবাসি সেটা বোঝো না? যেই অতীতটা সামান্য সেই অতীতকে বিরাট কিছু ভেবে এখনো বসে আছো। আমার বৃহৎ ভালোবাসাটাই শুধু তোমার নজরে পড়ে না। শোনো মেয়ে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি ভালোবাসো আর না বাসো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তুমি পুলিশ অফিসার বলে যে, আমি ভয়ে পিছু হটে যাবে এটা ভেবো না কখনো। আমি তোমায় ভালোবাসি আর তোমাকেই বিয়ে করব ম্যাডাম।”
অপ্রত্যাশিত কথাগুলো শুনে হকচকিয়ে তাকিয়ে আছে দোলা। হিমেলের এহেন দুঃসাহস দেখে সে অবাক, স্তব্ধ। অন্যদিকে হিমেল তার কথা শেষ করেই দোলাদের বাড়ির ছাদ থেকে নিচে নেমে এসেছে।
_________
“পৃথু, তুমি এখানে কী করছ?”
পৃথুলা দোলনায় আধশোয়া হয়ে দোল খাচ্ছিল। আরশানের বারান্দার দোলনাটা সে শিমুলকে দিয়ে ছাদে আনিয়েছে। আরশানের প্রশ্ন শুনে সে সোজা হয়ে বসে বলল,
“কিছু করছি না।”
“এই ভর-সন্ধ্যায় কেউ ছাদে থাকে?”
“কেন? থাকলে কী হয়?”
“কী হয় জানিনা। তবে না থাকাই ভালো। নিচে চলো।”
“পরে। আপনি আমার পাশে এসে বসেন।”
আরশান বসল পৃথুলার পাশে। অনেকক্ষণ আকাশপানে তাকিয়ে থেকে পৃথুলা বলল,
“আকাশটা সুন্দর লাগছে না?”
“হুম।” আরশানের ছোটো উত্তর।
“ঠিক আপনার মতোই সুন্দর লাগছে।”
“আমার মতো?”
“হ্যাঁ। এইযে আপনিও আকাশী রঙের শার্ট পরেছেন।”
আরশান মুচকি হাসল। পৃথুলা কাঁধে মাথা রেখে গুটিসুটি হয়ে বসে। দুজনে চুপ করে থাকে অনেকটা সময়। কারও মুখেই কোনো রা নেই। মৌনতা কাটিয়ে আরশান ডাকল,
“পৃথু?”
“হু?”
“একটা কথা বলব। বলো রাগ করবে না।”
“রাগ করব কেন?”
“হুটহাট রেগে যাওয়া তোমার স্বভাব তাই।”
পৃথুলা রাগ করার বদলে এখন হেসে ফেলল। আরশান বলল,
“এখন তো তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ। তাই আমরা ফিরে যাব।”
পৃথুলা ত্রস্ত নয়নে তাকিয়ে বলল,
“কোথায়? বাড়িতে?”
“হ্যাঁ। আমি না বলা পর্যন্ত তুমি বাড়ি থেকে কখনো বের হবে না। টাকা-পয়সা, খাবার, পোশাক সব আমি পাঠাব।”
পৃথুলা আরশানকে জড়িয়ে ধরল।
“আমি আপনাকে ছেড়ে দূরে কোথাও আর যাব না।”
“আমার অনেক কাজ আছে পৃথু। শুধুমাত্র তোমার জন্যই সব উপেক্ষা করে এতদিন এখানে ছিলাম। এখন যে আর না ফিরলেই নয়।”
“তাই বলে আমাকে দূরে সরিয়ে দেবেন?”
“দূরে সরাব কেন?”
“তাছাড়া আর কী? ঘরবন্দি হয়ে থাকা মানে তো দূরেই। ওখানে তো আর আপনি আমার সাথে থাকবেন না।”
“সাথে না থাকি। দেখা তো হবে।”
“প্রতিদিন?”
“তুমি চাইলে প্রতিদিনই হবে।”
“কথা দিচ্ছেন?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু তবুও আমি আপনাকে ভীষণ মিস করব। আর অপেক্ষা করব।”
“কীসের অপেক্ষা?”
“আপনাকে দেখার।”
আরশান মুচকি হেসে পৃথুলাকে আগলে রাখল বুকে।
“আচ্ছা আপনি কী কাজ করেন?” জানতে চাইল পৃথুলা।
আরশান কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ থেকে বলল,
“বিজনেস করি। আমাদের কোম্পানী আছে। সেদিন অফিসে নিয়ে গেলাম না?”
“তাহলে আপনার কাছে পি-স্ত-ল কেন?”
আরশান ভড়কে গিয়ে বলল,
“কোথায়?”
“আপনার রুমে। বালিশের কাছে ছিল।”
আরশানের চোরা দৃষ্টি দেখে পৃথুলা জিজ্ঞেস করে,
“আপনি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছেন?”
আরশান পৃথুলার চোখে চোখ রাখল কিছুক্ষণ। এরপর পৃথুলার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,
“কিছু লুকাই না লুকাই, সবকিছুর ঊর্ধ্বে শুধু একটা কথাই জেনে রাখো। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
আরশানের মুখে ভালোবাসার কথা শোনার পর পৃথুলা এই প্রসঙ্গে আর কিছু বলল না। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“চলেন ভেতরে যাই।”
আরশান হাত টেনে ধরে বলল,
“”পৃথু এদিকে তাকাও তো।”
“কেন?”
“একটা ছবি তুলব। হাসো একটু।”
পৃথুলা হাসল। আরশান ক্যামেরা রেখে বলল,
“ইশ! এই সুন্দর, মিষ্টি বোকা হাসিতেই তো ঘায়েল হয়েছি। ফেঁসে গেছি তোমার প্রেমে। আটকে গেছি ভালোবাসায়। জড়িয়ে গেছি তোমাতে।”
চলবে…
#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_১৯
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_________________
পৃথুলা বাড়িতে পৌঁছে দেখে ওর রুমমেট সীমন্তি এসেছে। এতদিন পরও পৃথুলার সঙ্গে দেখা হয়ে সীমন্তির মাঝে কোনো ভাবান্তর পরিলক্ষিত হলো না। সে নির্বিকার। ভ্রুঁ কিঞ্চিৎ কুঁচকানো। একবারও জানার প্রয়োজন মনে করল না পৃথুলা কোথায় ছিল। ওর স্বভাব সম্পর্কে পৃথুলা অবগত বলেই হয়তো সেও নির্বিকার রইল। ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে সোজা ওয়াশরুমে গেল পৃথুলা। ফ্রেশ হয়ে দেখে সীমন্তি উপুর হয়ে শুয়ে ফোন চাপছে।
“কবে এসেছ?” তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করল পৃথুলা।
“গতকাল।”
পৃথুলা কথা বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেল না। বারান্দায় বসে চুপচাপ আরশানের কথা ভাবছে সে। আপাতত এই মানুষটাকেই সে ভীষণভাবে মিস করছে। তার সঙ্গ পেতে ইচ্ছে করছে। অথচ কিছুক্ষণ আগেই তাকে রেখে গেছে আরশান। মনে হচ্ছে এর মাঝেই অনন্ত সময় কেটে গেছে।
.
.
হঠাৎ আসা ঝড়ের মতোই হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে হিমেলের মধ্যে। এখন আর সে সকাল হলেই দোলার বাড়ির সামনে এসে অপেক্ষা করে না। বাড়িতেও আসে না। এসব পরিবর্তনে দোলার খুশি হওয়ার কথা থাকলেও সে খুশি হতে পারছে না। না চাইতেও বারংবার মনে পড়ে যাচ্ছে হিমেলের কথা। এরকম হওয়ার কি কোনো কারণ আছে? হতে পারে সে হিমেলের আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল। খুব শীঘ্রই দোলা এই অভ্যেস থেকে বেরিয়ে আসবে।
রুম থেকে বেরিয়ে সে ড্রয়িংরুমে বসে। টিভি ছেড়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“মা, এক কাপ চা দিও তো।”
একের পর এক চ্যানেল পরিবর্তন করেও দোলা মন মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছিল না। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ শুনে তড়াক করে সোজা হয়ে বসে সে। হঠাৎ মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে যাচ্ছে। হিমেল এসেছে কী? আজ তো শুক্রবার। অফ ডে। আসতেও পারে। হতে পারে এই কয়েকদিন সে ব্যস্ত ছিল। সে দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখল হিমেল আসেনি। পাশের ফ্ল্যাটের এক আন্টি এসেছে। হতাশ হওয়া ফ্যাকাশে মুখেই মৃদু হাসি টেনে পৃথুলা জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছেন আন্টি?”
“ভালো আছি মা। তুমি ভালো আছো?”
দোলা মাথা নাড়াল।
“তোমার মা কোথায়?”
“ভেতরেই আছে। আসুন।”
দোলা মাকে ডেকে দিয়ে নিজের রুমের ভেতর চলে গেল। সে নিজের মনকে কোনোভাবেই আটকে রাখতে পারছে না। হিমেলের কিছু হয়নি তো? মন কেমন যেন কু ডাকছে। সে জলদি তৈরি হয়ে হিমেলের বাসায় চলে গেল। দারোয়ান দোলাকে দেখেই চিনে ফেলেছে। লম্বা সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছেন পুলিশ আম্মা?”
দোলা সালামের উত্তর নিয়ে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ্। হিমেলকে একটু ডেকে দিতে পারবেন?”
“হিমেল বাবায় তো আর এই বাসায় থাকে না। নতুন বাসায় গেছেগা।”
“কেন?”
“হের নাকি অফিস অন্য জায়গায় নিছেগা তাই।”
“কবে গিয়েছে?”
“দুই দিন হইব।”
“আপনি কি ওর নতুন বাড়ির ঠিকানা জানেন?”
দারোয়ান মাথা নাড়াল। একটা ছোটো কাগজে হিমেলের বর্তমান ঠিকানা লিখে দিলেন তিনি। দোলা ধন্যবাদ জানিয়ে কাগজটি নিয়ে হিমেলের বর্তমান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
.
পৃথুলা দুপুরের রান্নাবান্না করে গোসল করে নিয়েছে। অনেকগুলো কাপড়ও সে ধুয়ে দিয়েছে আজ। সেগুলো শুকাতে দেওয়ার জন্য ছাদে উঠে দেখে সিঁড়িতে একটা ছেলে হাঁটু মুড়ে বসে আছে। যাওয়ার পথ বন্ধ বলে পৃথুলা বার দু’য়েক ডাকল,
“এইযে? শুনছেন?”
কোনো সাড়াশব্দ পেল না পৃথুলা। এর মাঝেই সীমন্তি এসে বলল,
“এখানে কী করছো? ভেতরে আসো।”
“কাপড়গুলো দিয়ে আসি?”
“আর্জেন্ট দরকার।”
“আসছি।”
বলে পৃথুলা নিচে নামে। সে যাওয়ার ঠিক পরই দোলা এসে সেখানে উপস্থিত হয়। ফোর্থ ফ্লোরে হিমেল থাকে। এখানে এসেই সে হিমেলকে দেখতে পায়। সিঁড়িতে এভাবে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
“এই ছেলে? এখানে কী করছ?”
হিমেলের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এবার দোলা হিমেলকে ধাক্কা দিতেই হকচকিয়ে গেল। বিস্মিতকণ্ঠে বলল,
“এত জ্বর নিয়ে তুমি বাইরে বসে আছো কেন?”
একবার মাথা তুলে ঘোলাটে দৃষ্টিতে তাকিয়েই আবার হাঁটুতে মাথা রাখল হিমেল। দোলা কী করবে বুঝতে পারছে না। সে তো হিমেলের রুমটাও চেনে না।
“হিমেল, তাকাও আমার দিকে।”
হিমেলের মাথা তুলে জিজ্ঞেস করল দোলা। কোনো প্রত্যুত্তর এলো না হিমেলের কাছ থেকে। দোলাও আর উপায় না পেয়ে হিমেলকে ধরে ধরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। আপাতত ডাক্তার দেখানোটাই বেশি জরুরী এখন।
.
“তোমার মতো এমন গবেটমার্কা একটা মেয়েকে কেউ ভালোবাসে কীভাবে আমি বুঝতে পারছি না।”
সীমন্তির কথা শুনে পৃথুলা বিস্মিত হয়। অস্ফুটস্বরে বলে,
“মানে?”
সীমন্তি একটা ভাঁজ করা কাগজ মুখের সামনে ধরে বলল,
“তোমার জন্য একটা চিঠি এসেছে।”
“কে দিয়েছে?”
“জানিনা। অপরিচিত একজন এসে দিয়ে গেল। বলল তোমায় দিতে। তোমার অনুমতি ছাড়াই চিঠিটা আমি পড়েছি। এজন্য আমি দুঃখিত নই। তবে দুঃখ প্রকাশ করছি সেই ছেলের রুচি দেখে।”
“তুমি আমাকে অপমান করছ।”
“কারণ তুমি এসবেরই যোগ্য। বোকা তুমি। বোকাদের ভালোবাসতে নেই জানো না? সহজ-সরল মানুষদের জন্য এই পৃথিবী যেমন সুন্দর নয় তেমনই ভালোবাসাও।”
নিজের কথা শেষ করেই সীমন্তি চিঠিটা নিচে ফেলে দিয়ে চলে গেল। পৃথুলা ভেজা হাত জামায় মুছে কাগজটা তুলে খুলল। আরশানের চিঠি। সে লিখেছে,
“পৃথু, তোমার অপেক্ষায় দগ্ধ হচ্ছি জানো? ফোন অফ রেখে কেমন শাস্তি দিচ্ছ আমায় জানিনা। আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। প্লিজ, তোমার কণ্ঠ শুনিয়ে আমায় বাঁচিয়ে তোলো।”
টলমলে দৃষ্টিতে লেখাগুলো পড়েই আনমনে পৃথুলা হেসে ফেলে। সীমন্তির কথা শুনে কষ্ট পেলেও এখন তার আরশানের লেখা পড়ে ভালো লাগছে। বাইরে থেকে মানুষটাকে দেখে মনেই হয় না যে, এত সুন্দর চিঠি সে লিখতে পারে।
ফোন চার্জ থেকে খুলতে গিয়ে দেখে সে তো সুইচবোর্ডের লাইনই দেয়নি। আর ফোনও চার্জ হয়নি। এখন আর অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। সে সুইচের লাইন দিয়ে জামা-কাপড়গুলো নিয়ে আবার ছাদে এলো। আসার পথে আর সেই ছেলেটিকে সিঁড়িতে দেখেনি সে। ছাদে জামা-কাপড়গুলো দিয়ে সে রেলিং ধরে নিচে তাকাতেই অবাক হয়। আরশান এবং শিমুল গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেই মাস্ক পরে থাকলেও পৃথুলার চিনতে একটুও কষ্ট হয় না। আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে সে। ছাদের আনাচে-কানাচে খুঁজে একটা ছোট্ট ইটের টুকরা খুঁজে পায়। টুকরাটি নিচে ফেলতেই আরশান এবং শিমুল একত্রে দুজনে উপরে তাকায়।
পৃথুলা হাতের ইশারায় ওদেরকে অপেক্ষা করতে বলে তড়িঘড়ি করে রুমের ভেতর চলে এলো। চটজলদি তৈরি হয়ে নিচে নেমে আসে। আরশানকে দেখে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধাতস্থ করে নিজেকে। গাড়ির পেছনের সিটে বসে আরশান এবং পৃথুলা। ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে শিমুল। গাড়িটা চোখের আড়াল হওয়া অব্দি বারান্দা থেকে তাকিয়ে রইল সীমন্তি।
নিজেকে আর সংবরণ করে রাখতে না পেরে আরশানকে জড়িয়ে ধরল পৃথুলা। হঠাৎ-ই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে সে। অবাক হয় আরশান এবং শিমুল।
“কী হয়েছে পৃথু? কাঁদছ কেন?” ব্যস্ত হয়ে জানতে চাইল আরশান।
পৃথুলা উত্তরবিহীন কেঁদে চলল অনেকক্ষণ। বেশ কিছুক্ষণ পর আরশানকে ছেড়ে দু’হাতে চোখের পানি মুছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
“আমি বোধ হয় আপনার যোগ্য না। কেন ভালোবাসেন আমাকে?”
“এসব তোমায় কে বলেছে?”
“যে-ই বলুক। মিথ্যে বলেছে কি? আমি তো বোকা। আমাকে ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসা আমার জন্য নয় তাই না?”
আরশান হ্যাঁচকা টানে পৃথুলাকে কাছে টেনে আনল। কোমরে হাত রেখে পৃথুলার ঠোঁটে আলতো চুমু খেল সে। পৃথুলার দু’গাল ছুঁয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“পুরুষ কখনো চালাকচতুর নারী পছন্দ করে না। পুরুষের পছন্দ বোকা নারী। ঠিক তোমার মতো।”
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]