মান অভিমান পর্ব-০৫

0
358

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#৫_পর্ব
,
সোফায় দুজন দুপাশে বসে একে অপরের দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে আছে। আর নিজের মনে কথা বানিয়ে যাচ্ছে , কি হলো ব্যাপারটা এই মিস্টার ইগো ওয়ালা এখানে এসে বসলো কেনো? ওহ বুঝতে পেরেছি ওনি মনে হয় আশরাফ চৌধুরীর জন্য বসে আছে ওনি আসলেই ওনাকে আমার নামে উল্টো পাল্টা বলে আমার হবু চাকরিটা খাবে, আমিও আট খাট বেঁধেই বসে আছি আমিও দেখি ওনি কীভাবে আমার হবু চাকরিটা খাই ,, আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলল ইয়ানা।

এই মিস বকবক এখানে এভাবে বসে আছে কেনো, নিশ্চয়ই দাদুর জন্য অপেক্ষা করছে মনে হয় মায়ের কাছে শুনেছে যে দাদু ওনার বন্ধুর বসায় গেছে আর একটু পরেই চলে আসবে আর তখনি দাদুর কাছে আমার নামে বিচার দেবে,, আমিও দেখি এই মিস বকবক কীভাবে আমার সামনে আমার দাদুর কাছে আমার নামেই নালিশ করে। দুজনের অদ্ভুত ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠল, কলিং বেল বাজার সাথে সাথেই দুজনেই তড়িৎ গতিতে দরজার দিকে তাকালো, ইয়ানা ভাবছে আশরাফ চৌধুরী এসেছে আর আর্দ্র এখনি ওনাকে বলবে যেনো চাকরিটা আমায় না দেয় ওদিকে আর্দ্র ভাবছে ওর দাদু আলতাফ চৌধুরী এসেছে আর ইয়ানা এখুনি ওনার কাছে আর্দ্রর নামে বিচার দেবে,, দুজনে দরজার দিকে তাকিয়ে আবার দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হালকা ঢোক গিললো,, আর্দ্রর মা গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো তখনি দরজা দিয়ে আর্দ্রর বাবা আর দাদু প্রবেশ করলো,, ইয়ানা আর আর্দ্র দুজনেই প্রস্তুুত হয়ে আছে নিজেদের বাঁচানোর জন্য।

ওহ তুমিই বুঝি ইয়ানা তা কখন এসেছো তুমি??

এই তো একটু আগেই এসেছি, আপনার শরীল ভালো তো স্যার? আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে আবার আশরাফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল।

হ্যাঁ আমি ঠিক আছি, তুমি বরং এখানে একটু বসো আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসছি তারপর তোমার সাথে কথা বলবো।

ওকে স্যার,, কি হলো ব্যাপার টা মিস্টার ইগো ওয়ালা কিছু বলল না কেনো?? হমম মনে হচ্ছে কোনো ঝামেলা আছে।

কি ব্যাপার আর্দ্র এখানে বসে কি করছিস, আর মেহরাব কে বলেছিস আমি ওকে ডেকেছি??

জি দাদু আমি ওকে বলেছি ও মনে হয় রাতে আসবে।

ওহ তারমানে এই মিস্টার ইগো ওয়ালা এই বাড়ির ছেলে, হমম আমি আরো উল্টো পাল্টা কি সব ভাবছিলাম ইস কানের গোড়া দিয়ে বেঁচে গেছি।

তুমি কে তোমাকে তো ঠিক চিনলাম নাহ??

জি আমি আসলে আশরাফ চৌধুরীর কাছে এসেছিলাম একটা চাকরির ব্যাপারে কথা বলতে।

ওহ তারমানে এই মিস বকবক দাদুর কাছে আসিনি বরং বাবার সাথে দেখা করতে এসেছে হমম।

এটা তো ভালো কথা শোনো আমার মতে প্রতিটা মেয়েকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত,, শুধু যে চাকরির করার জন্য পড়াশুনা করতে হবে তা নয় নিজের সন্তান কে পড়ানোর জন্যও শিক্ষত হওয়া উচিত কেননা একটা সন্তান এর জন্য একজন শিক্ষত মা খুবি জরুরি , আর মেয়েরা সব সময় কেনো পুরুষের উপর নির্ভর করে থাকবে, নারী পুরুষের তো সমান অধিকার তবে সব ক্ষেত্রে নয়, তবে মেয়েদের পড়াশুনা করা উচিত যাতে কোনো স্বামী তার স্ত্রী কে ছেড়ে দিলে সে বৃদ্ধ বাবা মায়ের উপর বোঝা না হয়, বরং শেষ বয়সে যেনো সে তার বাবা মায়ের শেষ সম্বল হতে পারে।

আর্দ্র দাদুর এমন কথা শুনে ইয়ানা আবেগে আপ্লুত হয়ে ওর দাদুর দিকে এগিয়ে গেলো তারপর বলল,, আপনার কথায় আমি সত্যি অনেক অনুপ্রেরণা পেলাম, মাঝে মাঝে আমার মনবল ভেঙে যেতো ভাবতাম আমি কি পারবো আমার মা কে সুখে রাখতে তবে এখন মনে হচ্ছে আমি পারবো ইনশাআল্লাহ পারবোই আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন।

অবশ্যই কেনো নয় আমার দোয়া সব সময় তোমার সাথে থাকবে, কথাটা বলে ইয়ানার মাথায় হাত রেখে আর্দ্রর দাদু চলে গেলো। কি হলো ওমন গরুর মতো বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো আমি কি কোনো এলিয়েন নাকি??

এইতো এতো সময় পর নিজের ফর্মে ফিরে এসেছেন এতোসময় তো দাদুর সামনে অবলা এক বিদ্রোহী নারী হয়ে ছিলেন আর দাদু চলে যেতেই ঝাঁচি কি রানি হয়ে গেছেন সত্যি মেয়েরা যখন তখন রুপ বদল করে গিরগিটির থেকেও ফাস্ট।

এই শুনুন একদম ঝগড়া করার চেষ্টা করবেন নাহ আমি এখন মোটেও ঝগড়া করার মুডে নেই,।

ওহ তারমানে মানলেন যে আপনি একটা ঝগড়ুটে মহিলা।

কিহ আমি মহিলা?? তাহলে আপনি একটা বেটা লোক,, ব্যাস শুরু হয়ে গেলো আবার ঝগড়া কেউ কারু থেকে কম নাহ।
,,,,,,,,,
মাহি নিজের মুখ গোমরা করে সিটে বসে আসে কেননা মেহরাব তখন ওকে অনেক বকাবকি করেছে মাঝ রাস্তায় ওমন করা দেখে তাই এখন মাহির মনটা খুব খারাপ, মেহরাব ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে মাহির দিকে তাকালো দেখলো মাহি মুখ গোমরা করে বসে আছে মেহরাব কিছু বলতে গিয়েও বললো না কেননা ও আজকে যা করেছে সেটা সত্যি লিমিট ক্রস করে গেছে, তাই এখন থেকেই ওকে শাসন করতে হবে নয়ত পরে হাজার বকলেও কথা শুনবে নাহ।

মাহি মেহরাব দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো আর্দ্র কারো সাথে সেই রকমের ঝগড়া করছে ওরা ঝগড়াতে এতোটাই মশগুল যে মাহি মেহরাব কে খেয়ালই করেনি, মাহি মেহরাব একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার আর্দ্র ইয়ানার দিকে তাকালো,, এখানে কি হচ্ছে এসব আর আর্দ্র এই মেয়েটা কে??

মেহরাব এর কথায় আর্দ্র ইয়ানার হুশ ফিরলো ওরা এবার বুঝতে পারলো যে ওরা এতোক্ষণ ধরে হুদাই বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিলো ভাগ্যিস কেউ দ্যাখেনি দেখলে কেলেংকারী হয়ে যেতো, সবাই বলত যে বাড়ির অফিসে চাকরি নিতে এসেছে সেই বাড়ির ছেলের সাথেই পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে,, ওদের ভাবনার মাঝেই মাহি দৌড়ে ইয়ানার সামনে গিয়ে বলল,, আরে আপু কেমন আছেন আমায় চিনতে পারছেন??

ঠিক মনে করতে পারছি না তুমি কে বলোতো?

আরে আপনি তো আমাদের ভার্সিটি থেকে বিদায় নিয়ে আসলেন আর আমিই তো আপনাকে ফুল দিয়েছিলাম হয়ত আপনার মনে নেই, তা এখানে কেনো কোনো দরকার??

হ্যাঁ একটা দরকার ছিলো মিস্টার আশরাফ চৌধুরীর সাথে, একটা কাজের ব্যাপারে কথা বলবো এই আর কি।

ওহ আচ্ছা আপনি আমার মামার কাছে এসেছেন বুঝি চিন্তা করবেন নাহ আমার মামা অনেক ভালো মানুষ, ওনি নিশ্চয়ই আপনাকে সাহায্য করবে।

ইয়ানার ভীষণ লজ্জা লাগছে সব চেনা মানুষ এই বাসায়ই থাকতে হলো একেতো এই মিস্টার ইগো ওয়ালা তার উপর আবার এই জুনিয়র আপু কিভাবে এদের সবার সামনে চাকরির কথাটা বলব কে জানে,, সত্যি মাথায় উপর থেকে বাবা নামক ছায়াটা সরে গেলে জীবনে সামনে চলা ভীষণ কঠিন,,

তোমরা সবাই এখানে কি করছো , মাহি তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আর আর্দ্র মেহরাব তোমরা দুজনে ফ্রেশ হয়ে দাদুর রুমে যাও ওনি তোমাদের ডেকেছে কি যেনো বলবে, আর তুমি এখানে বসো দেখি তোমার কাগজ গুলো। সবাই সবার মতো যে যার কাজে চলে গেলো আর্দ্র যাওয়ার আগে একবার ইয়ানার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চলে গেলো, ইয়ানা আর্দ্রর বাবার কথা শুনে ভয়ে ভয়ে নিজের কাগজ গুলি ওনাকে দেখালো, আর্দ্রর বাবা খুবি বিচক্ষণতার সাথে কাগজ গুলো দেখে বলল,,

সরি আমি তোমাকে এই চাকরিটা দিতে পারবো নাহ।

চলবে,,,,,,??