মান অভিমান পর্ব-১৭

0
301

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#১৭_পর্ব
,
হঠাৎ কোথা থেকে কী যে হয়ে গেলো ভালো দিনগুলি খুব শীঘ্রই চলে যায় মাহি রুমের দরজা বন্ধ করে এক নাগাড়ে মেহরাব কে কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু মেহরাব এর ফোন ধরার কোনো খবর নেই। প্লিজ মেহরাব একবার ফোনটা ধরুন আপনাকে এই সময় আমায় খুব দরকার কি করবো আমি কিছুই ভাবতে পারছি না খুব একা লাগছে আর ঠিক এই সময়ই আপনি আমার পাশে নেই। টেবিলের উপর সমানে ফোনটা বেজেই চলেছে ফোনের স্কিনে স্পষ্ট মাহির ছবিসহ নামটা ভেসে আছে, টেবিল থেকে একটু দূরেই বেডে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে মেহরাব একবার ফোনের দিকে বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে আবার কাজে মন দিলো, ভেবেছিলো আর মনে হয় কল আসবে নাহ কিন্তু নাহ মেহরাব এর ভাবনাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমানিত করে পুনরায় ফোনটা বেজে উঠল বিরক্ত হয়ে কোল থেকে ল্যাপটপ টা বেডে রেখে টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে আরাম করে আবার বেডে বসল ততক্ষণে কলটা কেটে গিয়ে আবার বাজতে শুরু করেছে এবার ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরল মেহরাব।

হ্যালো মেহরাব কোথায় ছিলেন আপনি সেই কখন থেকে আপনাকে কল করছি আপনি ফোন তুলছেন না কেনো জানেন এদিকে কতকিছু হয়ে গিয়েছে, সবকিছু উলট পালট হয়ে গেছে মেহরাব কিচ্ছু ঠিক নেই এখানে,, কান্না জড়িত কন্ঠে বলল মাহি।

কি হয়েছে? আর এতোবার কল দেওয়ার কি আছে যখন দেখলি আমি ফোন তুলছি নাহ তখন বার বার কেনো ফোন দিচ্ছিস আমার কাজের ডিসটার্ব হচ্ছে। আর এভাবে মরা কান্না করছিস কেনো কি হয়েছে টা কি?

আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো আমার সাথে মেহরাব আপনি জানেন নাহ আপনি এভাবে কথা বললে আমার অনেক কষ্ট হয়, আচ্ছা বাদ দেন জানেন তো দাদু না আর কয়েকদিন পরেই আমার আর আর্দ্র ভাই এর বিয়ের দিন ঠিক করেছে আপনি জলদি এখানে চলে আসুন আর সবাইকে সত্যিটা বলুন নইলে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে প্লিজ মেহরাব চলে আসুন।

তো তাহলে বিয়ে করে নে।

কিহ?

আরে শুনতে পাসনি নাকি আমি বললাম এতোই যখন সম্যসা তাহলে বিয়েটা করে নে এতে এতো কান্না করার কি আছে আজব, আর তোদের তো বিয়ে আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো তাহলে এখন এতো কান্না করছিস কেনো আজব।

এসব কি বলছেন আপনি মেহরাব আমি আর্দ্র ভাইকে কেনো বিয়ে করবো আর আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে তাই নাহ??

সেটা কেবল আমি আর তুই জানি বাড়ির কেউ তো আর জানে নাহ, তাই বলছি বেশি কথা না বলে চুপচাপ বিয়েটা করেনে আর বার বার আমায় এভাবে কল দিয়ে বিরক্ত করিস নাহ আমি এখানে কাজ করতে এসেছি ওকে ফোন রাখ।

মাহি যেনো পুরাই অবাক হয়ে গেছে এ কোন মেহরাব,, ফোনটা কেটে গেছে কিন্তু মাহি কানে এখনো ফোন ধরেই আছে হঠাৎ করেই কান থেকে ফোনটা মেঝেতে পরে গেলো আর সাথে সাথে ভেঙে দু টুকরো হয়ে গেলো ফোন ভাঙার শব্দে মাহির হুশ ফিরলো ভাঙা ফোনের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠল কেননা এখন কান্না করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই আত্মহত্যা করা যদি মহা পাপ না হতো তাহলে এতোক্ষণে নিজের প্রাণ দিতে দিতাম কেননা এভাবে জিন্দালাশ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।
,,,,,,,
রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে আর্দ্র ইয়ানা, কেউ কোনো কথা বলছে নাহ সমস্ত নিরবতা ভেঙে ইয়ানা বলল, কি ব্যাপার হঠাৎ এতো জুরুরি তলব কেনো সাহেব কিছু হয়েছে??

অনেক কিছুই হয়েছে, দাদু আমার আর মাহির বিয়ে ঠিক করেছে তাও আবার এই সপ্তাহে। গম্ভীর কন্ঠে বলল আর্দ্র।

মজা করছেন আমার সাথে? দেখুন আমি কিন্তু মোটেও মজা করার মুডে নেই আমার কাজ আছে আমি গেলাম,,

আমি মোটেও মজা করছি নাহ ইয়ানা আমি সত্যি বলছি দাদু যখন বলেছে তখন আমার পক্ষে দাদুর কথা অমান্য করা সম্ভব নয়।

তাহলে আমার কি হবে??

জানিনা, শুধু একটাই উপায় আছে আমায় ভুলে যাও তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই, আমি কিছুতেই দাদুর কথা অমান্য করতে পারবো নাহ, তোমাকে এটা বলার জন্যই ডেকেছিলাম নাও এখন আসতে পারো তুমি।

এই মিস্টার আর্দ্র চৌধুরী আপনি আমায় কি মনে করেছেন আমার ভালোবাসা আপনার কাছে খেলনা মনে হয়?? যখন ইচ্ছে হলো বললেন ভালোবাসি আর এখন বলছেন ভুলে যেতে, একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন আমাকে অন্য মেয়ের মতো ওতোটাও দুর্বল ভাববেন না যে আমি আপনার কথা ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবো, আর হ্যাঁ করুন আপনি বিয়ে তবে আমি আপনাকে কখনোই ক্ষমা করবো নাহ। আর হ্যাঁ আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আপনার বিয়ে দেখবো সেই সাহস আমার আছে মিষ্টার আর্দ্র চৌধুরী, কথাগুলো বলে ডান হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে টেবিল থেকে ব্যাগটা নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো ইয়ানা আর আর্দ্র ইয়ানার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বিল পে ও চলে গেলো।
,,,,,,,
দেখতে দেখতে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি চলেই আসলো আর্দ্রর দাদু বলেছে যে বেশি বড় করে অনুষ্ঠান করবে নাহ শুধু বাড়ির লোকজন নিয়েই বিয়েটা সেরে রাখবে পরে মেহরাব যখন বাড়ি আসবে তখন ওকে নিয়ে আবার বড় করে একটা অনুষ্ঠান করা যাবে, আর্দ্রদের বাড়ি ভর্তি লোকজন মাহিরা সবাই চলে এসেছে মাহি এখন অনুর রুমে আছে আর সবথেকে বড় কথা হলো আর্দ্রর বিয়েতে ইয়ানাও এসেছে কেননা ইয়ানা আর্দ্র কে বলেছিলো যে ও নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আর্দ্রর বিয়ে দেখবে তবে উপরে উপরে ঠিক থাকলেও ইয়ানার যে ভিতরটা ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে তবে সেটা কাউকেই বুঝতে দিচ্ছে না আর আর্দ্র কে তো একদমি নাহ, ইয়ানার মাও এসেছে ইয়ানার সাথে ইয়ানা উপরে গিয়ে মাহিকে বধুর সাজে সাজাচ্ছে আর মাহি সেতো পুরাই পাথর হয়ে গেছে কোনো কথাই বলছে নাহ একদম চুপচাপ হয়ে গেছে, সেদিন মেহরাব ফোন কাটার পরে মাহি আবারও মেহরাব কে ফোন দিয়েছিলো তবে মেহরাব বিরক্ত হয়ে শেষে ফোন বন্ধ করে রেখেছিলো, এরপর মাহি আর মেহরাব কে ফোন দেয়নি।

এসব কি হচ্ছে বলতো ইশান আমিতো কিছুই বুঝতেছি নাহ সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, আর আর্দ্র ভাইয়া মাহি আপুকে বিয়ে কেনো করছে যেখানে ও ইয়ানা আপু কে ভালোবাসে।

আমিও তো কিছুই বুঝতে পারছি না, আর ভাইয়াও তো এই সময় দেশে নেই যে কিছু করবে কি যে হচ্ছে আল্লাহ ভালো জানে, আমি অবাক হচ্ছি আর্দ্র ভাই কিছু বলছে না কেনো, আমি যদি আর্দ্র এর থেকে বড় হতাম না তাহলে এখনি সপাং করে আর্দ্র ভাই কে দুইটা চড় মারতাম।

হুমম সাথে মেহরাব ভাই কেও,, অনু ইশান এর কথা বলার মাঝেই আর্দ্র ওদের ডাকলো, ওদের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আর্দ্রর ডাকে ওরা গেলো আর্দ্র কে বর সাজাতে।
,,,,
অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেলো, রেজিস্ট্রি পেপারে আর্দ্র সই করার পরে ইয়ানা কে আর ওখানে দেখা যায়নি কোথায় গিয়েছে কে জানে আর্দ্র চারপাশে তাকিয়েও কোথাও ইয়ানাকে পাইনি,, অনুসহ আরো বাকি সব মেয়েরা মিলে মাহিকে আর্দ্রর রুমে বসিয়ে দিয়ে চলে আসল,, ফুল বিহীন ফুলসজ্জার খাটে হাজারো লজ্জা নিয়ে বসে আছে মাহি প্রায় অনেকটা সময় পর আর্দ্র হুরমুর করে রুমে ঢুকেই রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।

কি হলে আর্দ্র ভাই এতোক্ষণ লাগে আসতে সেই কখন থেকে আমি অপেক্ষা করছি।

আরে আর বলিস নাহ বাইরে সবগুলো আমায় চেপে ধরেছিলো টাকা নেওয়ার জন্য পরে আমার পকেট খালি করে তবে ছেড়েছে।

যাক অবশেষে আমাদের প্লান সফল হলো কি বলেন আর কোনো টেনশন নেই এখন শুধু শান্তি আর শান্তি তাই নাহ।

একদম ঠিক বলেছিস, ওফ এখন অনেক ভালো লাগছে আর আজকে তো আমাদের ফুলসজ্জা তাহলে শুরু করা যাক কি বলিস।

ছি আপনার লজ্জা সরম কই রাখছেন কি সব বলছেন আমার বুঝি লজ্জা লাগে নাহ।

ওলে আমার লজ্জাবতী রে,,,।

চলবে,,,,??