মায়ের গল্প
রহিমা খালা দরজাটা খুলতে এত দেরী করছে কেন বুঝতে পারে না শম্পা। দরজা খুলতেই সরাসরি মায়ের রুমে চলে যায় সে। আজ পৌছতে একটু দেরী হয়ে গেছে। অন্যদিন শম্পা পৌছানোর পরেই মেজ ভাই-ভাবী অফিসের জন্য বের হত। অবশ্য ভাবী বেরুনোর আগে তাকে ফোন করেছিল। শম্পাই বলেছে তার জন্য অপেক্ষা না করতে।
শম্পার দিকে মা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
দেখে তার মনটা কেমন যেন করে উঠে। তাড়াতাড়ি
হাতের জিনিসপত্র গুলো ডাইনিং টেবিলে রেখে এসে মায়ের উপর অনেকটা শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে শম্পা।
ক্ষিধা লেগেছে মা?
কিছু খাবে?
মা কিছুই বললেন না। শুধু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছেন।
শম্পা হঠাৎ খেয়াল করে দেখে চোখের পানিতে মায়ের বালিশ ভিজে গেছে। একটা তোয়ালে ভিজিয়ে মায়ের মুখটা মুছে দেয় সে। বালিশটা উল্টে দেয়া দরকার কিন্তু একা সে পারবে না।
ভাবছে রহিমা খালাকে নিয়ে একবার চেষ্টা করে দেখবে নাকি? ভাবীকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে, মাকে লাস্ট কখন পাশ ফিরিয়েছে।
মা এখনো কেঁদেই যাচ্ছেন।
মায়ের মনটা অন্যদিকে ঘুরাবার জন্য সে বলে,
গরম গরম স্যুপ এনেছি মা, একটু দিই?
শম্পার মনে হল মা একটু মাথা নেড়ে সন্মতি দিয়েছেন।
আধশোয়া অবস্থা থেকে উঠে দাড়ায় সে।
এইটা মেজো ভাইয়ের ভাড়া বাসা। তাদের দশ বছর বয়সী মেয়েটা এখনো ঘুমাচ্ছে। দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক কিউট হয়েছে।গত তিন দিন থেকেই শম্পা এসেই সিনথিয়াকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে।আজকালকার ছেলেমেয়েরা সব এমনই। সবাই রাত জাগা পাখি। আজ কি মনে করে সিনথিয়াকে জাগায় না সে।
হট ক্যারিয়ার থেকে সুপের বাটিটা নিয়ে আসে।
চামচ কেটে কেটে মায়ের মুখে দিতে থাকে।
শম্পার হাতের এই চিকেন স্যুপ মায়ের অনেক পছন্দের। শম্পার মনে হল আজকের স্যুপটাও মায়ের পছন্দ হয়েছে। চামচ মুখের কাছে নিতেই আগ্রহ নিয়েই মা বারবার মুখ খুলছেন।
ভালোলাগা একটা সুখানুভূতিতে চোখ দুটো ভিজে গেল তার। মায়ের তৃপ্তি দেখে সকাল বেলার সব কষ্ট নিমিষেই উবে গেছে শম্পার। শরীরটাও এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে।
অথচ সকাল বেলায় একবার ভেবেছিল স্যুপটা আজকে আর বানাবে না। আজ সকাল বেলায় একটু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠেছিল শম্পা। তারপরও সবকিছু গুছাতে গিয়ে কখন যে নয়টা বেজে গেছে সে বুঝতেই পারেনি।টেবিলে হেলালের জন্য নাস্তাটা দিয়েই লান্চের ক্যারিয়ারটা রেডি করে। তারপর মায়ের ক্যারিয়ারটায় খাবার ঢুকাতে গিয়ে দেখে স্যুপের বাটিটা খালি যাচ্ছে। মনটা কেন জানি সায় দিচ্ছিল না। তাড়াতাড়ি স্যুপের জন্য গরম পানি বসায়। স্যুপটা রেডি করে মেজ মেয়েকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বোরকা গায়ে দিয়ে হেলালের পাশে গাড়ির পিছনের সিটে যখন বসে তখন রীতিমত হাঁপাচ্ছিল সে।
গত সপ্তাহে মায়ের একটা মাইল্ড স্ট্রোক হয়। হাসপাতাল থেকে মাকে মেজো ভাইয়ের বাসায় আনা হয়েছে তিন দিন আগে । সেই থেকে প্রতিদিন এভাবেই মেজ ভাইয়ের বাসায় আসছে শম্পা। অফিস যাওয়ার পথে হেলাল তাকে নামিয়ে দেয় আবার ফিরবার পথে নিয়ে যায় । বর আর ছেলেমেয়েগুলোর নাওয়া খাওয়াতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। এমনিতে খাবারের বেলায় একটু এদিক সেদিক হলেই মেজাজ চড়ে যায় হেলালের। কিন্তু এই কয়দিন সে হাসিমুখেই শম্পার পাশে থাকার চেষ্টা করছে। বলে আমারতো মা নেই! তুমি তোমার মায়ের জন্য যা খুশি করবে! মা যখন বেঁচে ছিল সামর্থের অভাবে কিছুই করতে পারি নাই!
কৃতজ্ঞতায় জামাইটার জন্য মনটা ভরে যায় শম্পার।
মেজ ভাই আর ভাবিও মায়ের জন্য অনেক করছেন। মায়ের স্ট্রোক হওয়ার পর দু’জনই অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন প্রথম তিন দিন। শম্পা দিনের বেলায় আসবে এইটা পাকা হওরার পরই ভাবী অফিস জয়েন করেছেন।
মাত্র করোনা জয় করে ক্লিনিক থেকে বাসায় এসেছিলেন মা। যদিও খুউব দূর্বল ছিলেন কিন্তু আস্তে আস্তে ভালো হয়ে উঠছিলেন। তিনি স্ট্রোক করেছেন গত শুক্রবার রাতে। সেইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শম্পা ছিল মায়ের সাথে।
জেবুন্নেছা বেগম সেইদিন তার স্বামীর কথা আর তার বড় ছেলের কথা খুউব বলছিলেন আর কাঁদছিলেন।
এমন কিছু কথা সেদিন তিনি বলেছিলেন যা শম্পাও জীবনে প্রথমবার শুনেছে। মা বলছিলেন, বাবার সাথে তার জীবনের শুরুর দিকের সেই সব কষ্টের আর সংগ্রামের কথা। শম্পা জানত বাবা মাকে খুব ভালোবাসতেন। তবে তার বাবা মা এতটা আর্থিক কষ্টের মধ্যে ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছিলেন সেটা তার জানা ছিল না। হয়ত সবার ছোট বলেই সে অতটা আঁচ করতে পারেনি। শম্পার বয়স যখন পনের তখন তার বাবা মারা যান।
বাবা রেলওয়ের হিসাব বিভাগে কাজ করতেন। একদিন অফিস থেকে ফোন আসে বাবা নাকি অফিসের টেবিলে মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। রাতে বাবার লাশ আসে গ্রামের বাড়িতে। এমনি হঠাৎ করেই শম্পাদের পরিবারে অনিশ্চয়তা নেমে আসে। বড় ভাই তখন মেডিকেলে ফাইনাল ইয়ারে পড়ে।
বড় ভাইয়াকে পূর্ণ ডাক্তার হিসাবে দেখে যেতে পারেননি তার বাবা। মা বলছিলেন তোদের এই ভাইকে শহরে বাসায় রেখে পড়ানো থেকে শুরু করে যখন সে যা চেয়েছে তাই দিয়েছে তোর বাবা। অনেক সময় সাধ্যের বাইরে গিয়েছে। তখন তোর বাবার কিছু ধার দেনাও হয়েছিল। পরে ধানের জমি বিক্রী করে সেই দেনা শোধ করতে হয়েছিল। এই বলেই মার সেকি কান্না সেইদিন।
মায়ের কান্নার কারণ আমি জানি। বড় ভাইয়া যে মাকে একবারের জন্যও দেখতে আসেনি এই বিষয়টাতেই মায়ের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মেজ ভাই ঐদিন বলেছিল কাঁদুক ওনাকে কাঁদতে দে, তবেই উনার বুকটা একটু হালকা হবে। মা কাঁদে আর বলে আজ তোর বাবা বেঁচে থাকলে তোর ভাইয়ের এই আচরণ সহ্য করতে পারত না। তাকে বড় একজন ডাক্তার বানানোর বড়ই শখ ছিল তার।
বড় ভাইয়া আলাদা হয়েছেন প্রায় ছয় বছর হতে চলল। হঠাৎ মায়ের এক ছোট্ট কথায় রাগ করে ভাবী বাপের বাড়ি চলে যান। একদিন দেরী করে বর ভাই-ভাবী বাসায় ফিরলে মা বলেছিলেন বউমা দেরী যখন হবে একটা ফোন দিলেই পারতে। আমি না খেয়ে তোমাদের জন্য বসে আছি। সেদিন ভাবীও কম শুনাননি মাকে। বলেছেন কেন মা আমি কি আপনাকে না খেয়ে বসে থাকতে বলেছি। ফোনতো আপনিও দিতে পারতেন। আপনার মেজ বউ বাইরে থাকলেতো আপনি ঠিকই ফোন দেন।
পরের দিন সকালে ভাবী তার বাবার বাসায় যাবার নাম করে ছেলেকে নিয়ে চলে যান। সেই যে গেলেন ভাবী আর এই বাসায় ফিরে আসেননি। তিনদিন পর শম্পারা জানতে পারে ভাইয়া ফ্ল্যাট কিনেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই ঐ ফ্ল্যাটে উঠবেন তাই তিনি জিনিষ পত্রগুলো আস্তে আস্তে নতুন বাসায় নিতে শুরু করেছন।
আসলে ভাবী একটা ছলছুতা খুজছিলেন নতুন ফ্ল্যাটে যাবার জন্য। নইলে এইরকম ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কেন এমন রিয়েক্ট করবেন। শুরুর দিকে ভাবির সাথে শম্পাদের খুউব ভাল সম্পর্ক ছিল। বড় ভাইয়াই তো শম্পার বিয়ের সব খরছ পাতি করেছিলেন। মেজ আর ছোট ভাই তখনও পড়ালেখা শেষ করেনি।
শম্পাও তার ভাবীকে তখন অনেক বুঝিয়েছিল।
এইরকম দুই কথা সব ফ্যামেলীতেই হয়। ভাবীকে বলেছিল একটু এডজাস্ট করে নিতে। মাকেও সে বলেছিল যেন মুখ না খোলে আর যথাসম্ভব কম কথা বলতে। সংসারটাকে টিকিয়ে রাখবার সব চেষ্টাই সে করেছিল। কিন্তু তার সব চেষ্টা একসময় বিফলে যায়।
ভাইয়াটাও কেমন জানি হয়ে গেছে। মা বলতে যে ভাই ছিল অজ্ঞান সেই ভাই মাকে ছাড়াই নতুন ফ্ল্যাটে পার্টি করল। শম্পা আর তার বর ছাড়া বাসার অন্য কেও সেই জমকালো পার্টিতে যায়নি । অন্যসব কাজিন, চাচা-ফুপুরা অবশ্য ছিল সেই পার্টিতে। ভাবি নিজে গিয়ে সবাইকে দাওয়াত করেছিলেন। মাও খুউব যেতে চেয়েছিলেন। শুধু একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন, বউমা এসে যেন তাকে দাওয়াত করে। শুনে ভাবি বলেছিলেন, মা তার ছেলের বাড়ি আসবেন ওখানে বউয়ের বলতে হবে কেন।
শম্পা জানে ভাইয়াও যদি এসে সেদিন মাকে জোর করে নিয়ে যেতেন তাহলেও মা যেতেন। শম্পারও যেতে ইচ্ছা করছিলনা। মা তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলল তুই অন্তত যা নইলে সবাই খুউব বলাবলি করবে আর তুই গেলে সবাইকে আমার না যাওয়ার একটা অজুহাত বলতে পারবি।
সেই পার্টিতে সবাইকে মায়ের অসুস্থতার ফিরিস্তি দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছিল শম্পা। সবাই হয়ত আন্দাজ করতে পেরেছিল মায়ের না যাওয়ার আসল কারণ। তাই বারবার এই নিয়ে প্রশ্ন করছিল আর মজা নিচ্ছিল। শম্পার এক ফুপু সেদিন ভাবিকেই প্রশ্ন করে বসে মায়ের ব্যাপারে। অথচ একটু আগেই শম্পা ফুপুকে মায়ের অসুখের ব্যাপারটা বর্ণনা করেছিল। শুনে ভাবী অবশ্য উল্টাপাল্টা কিছু বলেননি সেদিন। শম্পা অবাক হয়ে ফুপুর কান্ড কারখানা দেখতে থাকে।
তখন শম্পার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও এই নিয়ে অনেক কথা বলত। বড় ভাইয়াটার জন্যই শম্পাদের সবার কাছে মাথানিচু করে থাকতে হয়েছে। অথচ ভাইয়াটা একটু যদি সাহসী স্টেপ নিত তাহলে তিন ভাইয়ের কি সুন্দর একটা সংসার হত।
ভাইয়াকে শম্পা কখনোই মাফ করবে না। তার জন্যই মায়ের আজ এই অবস্থা। মা কোন ভাবেই ভাইয়ার এই কান্ডকারখানা মেনে নিতে পারছেন না। গত ছয়টা বছর এই কষ্টটাই পাথরের মত মার বুকে চেপে আছে। মাকে অনেক বুঝিয়েছে শম্পা। বলেছে এইসব ভূলে যেতে । মা উল্টা তাকে প্রশ্ন করে, কেন তার ছেলেটাই এমন হল? এইজন্য কি ছেলেকে ডাক্তার বানিয়েছিলাম? শম্পার অন্য এক কাজিনের উদাহরণ দিয়ে বলেন সেও তো বড় ছেলে। পুরা ফ্যামিলীকে কেমন এক সুতায় বেঁধে রেখেছে।
ভাইয়া কে ছাড়া তাদের দিন চলে যাচ্ছিল।
মাও বড় ছেলেকে ছাড়া বাঁচতে শিখেছেন।
তবে মা একদম ভেঙে পড়েছেন ভাইয়ার ইদানিং কালের কার্যকলাপে। গত মাসে মা যখন করোনার জন্য হাসপাতালের বেডে মৃত্যুশয্যায়, তখন একই শহরে দুইমাইলের মধ্যে থাকা তার ডাক্তার ছেলে তাকে একটিবারের জন্যও দেখতে আসেনি। এই কষ্ট তাকে খুড়ে খুড়ে খাচ্ছে। করোনা রোগী দেখতে হাসপাতালে তেমন কেউ আসত না। এপ্রন পড়া ডাক্তাররা আসলেই মা কেমন উৎসুক হয়ে দেখত আর ভাবত তার ছেলে এসেছে!
শেষ পর্যন্ত এই কষ্টটাই সহ্য করতে না পেরে শম্পার মা আজ স্ট্রোক করে বিছানায়। মা এখন পরিস্কার করে কথা বলতে পারছেন না। ডাক্তার ফিজিও থেরাপি শুরু করেছেন। বলেছেন আস্তে আস্তে কথা বলতে পারবেন। এর মধ্যেই বেশ কয়েকবার অস্পষ্ট ভাবে ছেলের নাম নিয়েছেন জেবুন্নেছা বেগম।
এইসব ভাবতে ভাবতে শম্পা ভূলে যায় সিনথিয়াকে জাগানোর কথা। মেজ ভাবীকেও একটা ফোন করতে হবে। এমন সময় ছোট ভাইয়ার ফোন আসে তার মোবাইলে। বউ বাচ্চা নিয়ে সে থাকে সৌদীআরবে। করোনার জন্য তারাও ওখানটায় আটকে আছে। নইলে বছরের এই সময়ে ওরা দেশে বেড়াতে আসে।
ছোট ভাইয়া ফোন করে মার সাথে কথা বলতে চায়। মা গো গা শব্দ করে। শম্পা বুঝতে পারে অপর প্রান্তে ছোট ভাইয়া চোখের পানিতে ভেসে যাচ্ছেন। ছোট ভাইয়া যখনই ফোন করেই বলেন যত টাকা লাগে আমি দিব মায়ের যেন চিকিৎসার কোন গাফেলতি না হয়। সত্যি বলতে কি জেবুন্নেসা বেগমের টাকার চেয়ে সেবার প্রয়োজন এখন অনেক বেশী।
শম্পা মেজ ভাবীকে ফোন দেয়।
ভাবী, সকালে কি মাকে পাশ ফিরিয়ে দিছিলে?
ভাবী বলে, নারে শম্পা আপা,একদমই সময় পাই নাই।
শম্পা বলে ঠিক আছে। আচ্ছা শোন ভাবী, কাল তো তোমরা বাসায় থাকবে। আমি কাল আসব না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটু বাসায় থাকব। পারবে না ম্যানেজ করতে?
ঠিক আছে শম্পাপু । আমি এমনিতেই তোমাকে বলতাম কাল একটা ব্রেক নিতে। তাছাড়া কাল তো তোমার জন্মদিন আপু। কি খেতে চাও বল! তোমার ভাইকে দিয়ে পাঠিয়ে দেব!
আজ শম্পার জন্মদিন। সকালে ঘুম থেকে উঠবার পড়ে শম্পা অনেকটা আবাক হয়। আজ তার জন্য কোথাও কোন সারপ্রাইজ নাই । তাদের বাসায় সবার জন্মদিনে সারপ্রাইজ দেয়াটা একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। হয়ত মায়ের অসুস্থতার জন্য সবার মন খারাপ।
ছেলেমেয়েগুলো ও আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেছে। শম্পার কাছে কেমন একটা রহস্যময় লাগে ব্যাপারটা। তবে কিচেনে ঢোকবার কিছুক্ষনের মধ্যেই সে এসব ভুলে যায়। ভেবে রেখেছে আজ ভালো কিছু রান্না করবে। বড় মেয়ের পছন্দের পোলাও কোরমা রান্না করবে বলে ঠিক করে।
একটু পর ছোট ছেলেটা এসে হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে। শম্পা মেইন ডোরে এসে দেখে উঠানে একটা এম্বুলেন্স।
হেলাল আর মেজ ভাইয়া স্ট্রেচারে করে মাকে এম্বুলেন্স থেকে নামাচ্ছে। শম্পা হা করে তাকিয়ে থাকে। হেলাল বলল মা আজ থেকে এখানেই থাকবেন। আর এই দুই নার্স বোন পালা করে তোমাকে সাহায্য করবে।
শম্পা কি করবে বুঝতে পারে না! খুশিতে এক দৌড়ে রুম গোছাতে চলে যায়। বড় মেয়ে এসে বলে মা, নানু গেস্ট রুমে থাকবে। বাবা কাল দিনেই ওখানে নতুন এসি লাগিয়েছে। বাবা কাল থেকে প্ল্যান করে সব করেছে। তোমাকে আমরা জানতে দিই নাই! মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে রাখে শম্পা!
আজ চারিদিকে এত মায়ার চাদর! শম্পা চোখের পানি ধরে রাখতেই পারছে না।
শম্পা আবার মার কাছে ছুটে যায়। তার দুই চোখে এখনো পানি। খেয়াল করে দেখল মায়েরও চোখ দিয়েও পানি ঝরছে। স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে সে। বিয়ের দিন যেই মানুষটার গায়ের চাপা রং নিয়ে কেঁদেছিল যে দুইজন তারা হল মা আর সে।
কি আশ্চর্য মিল। একই মানুষের জন্যই একইভাবে কাঁদছে দুইজন মানুষ।
কাল রংয়ের এই মানুষটা তার জন্মদিনে এভাবেই তাকে সারপ্রাইজ দিল।