মিথ্যা_অপবাদ পর্ব-১৬

0
1840

#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১৬

ইতি সোনালী কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিল তখন ওদের সামনে নাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। ইতি নাহিদকে দেখে দাঁড়িয়ে পরে।

—-” কি রে দাঁড়িয়ে পরলি কেনো?”

—” নাহিদ দাঁড়িয়ে আছে।”

ইতি সোনালীকে নাহিদের ব্যাপারে সব কিছু বলে দিয়েছে। এটাও বলে যে তাদের বিয়ে ক্যান্সেল হয়ে গেছে। হৃদয়ের কথাও বলে……

সোনালী ইতির দৃষ্টি অনুযায়ী তাকিয়ে নাহিদকে দেখে অনেক বড় শক খায়……..

—” এই বাজে লোকটা তোর হবু বর ছিলো?”

—” হুম। কেনো চিনিস?”

—” খুব ভালোভাবেই চিনি।”

—” কিভাবে?”

—” পরে বলবো এখন বাসায় যাই চল।”

—” হুম।”

ইতি সোনালী অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে নিলে নাহিদ ইতির পথ আটকায়। নাহিদ এখনও সোনালীকে দেখেনি ভালো করে……

—” তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে রিজেক্ট করার?”

—-” রিজেক্ট করার মানুষকে তো রিজেক্ট করতেই হবে তাই না?”

নাহিদ সোনালীর কথা শুনে সোনালীর দিকে তাকিয়ে বললো…..

—” তুমি এইখানে?”

—” কেনো আশা করেন নি বুঝি?”

—” তারমানে তুমিই ইতির কাছে আমার বদনাম করেছো এই জন্য ইতি বিয়ে ক্যান্সেল করে দিয়েছে।”

—” হাহাহা। আপনার মত মানুষের বদনাম করতে হয় না। আপনার সাথে কিছুদিন কথা বা থাকলেই বুঝা যায়।”

—” তাই নাকি? কিন্তু তোমার বোন বুঝলো না কিছু।”

—” ও বুঝেও আপনার সাথে সংসার করেছে দুই বছর। আপনি তো বিয়ের আগে থেকেই অনেক অনেক সম্পর্কে জড়িত ছিলেন এমনকি বিয়ের পরেও। আপনার মত খারাপ লোক আমি আর দুটি দেখি নাই। আপনাকে দেখলেই তো আমার আপনাকে খুন করতে মন চায়।”

—” বিশ্বাস করো ওইদিন তোমাকে ছেড়ে দিয়ে জীবনে খুব বড় ভুল করেছি আমি। জানো তোমাকে ওইদিন….”

—-” স্টপপপপপ । আপনার লজ্জা করে না। বিয়ের আগে কত খারাপ কাজ করেছেন বিয়ের পর বউ রেখে অন্য মেয়েদের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছেন এমনকি আমাকেও ছার দিতে চান নি। ওইদিন মানহা আপু না থাকলে হয়তো আমি আপনার ভোগের বস্তু হতাম। আপনাকে দেখলে আমার বমি আছে। মন চায় পায়ের জুতো খুলে আপনার গালে মারি।”

নাহিদ রাস্তায় সোনালীর হাত চেপে ধরে…..

—” যদি লজ্জা থাকতো তাহলে তোমার সামনে বা ইতি রানীর সামনে আসতাম না। তুমি তো জানোই শালীকা আমার লজ্জা খুব কম।”

সোনালীর দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো নাহিদ। ইতি ওদের কথা অনেক কিছু বুঝতে পেরেছে। ইতি নাহিদকে থাপ্পড় মারতে নিলে অন্য হাতে ইতির হাত ধরে ফেলে নাহিদ……

—” তোমাকে তো পরে দেখে নিচ্ছি ইতি রাণী। আগে তো প্রথম শিকার কে ভালো করে দেখে নেই।”

—” যদি দেখা শেষ হয় তাহলে তোর পিছনে তাকিয়ে দেখ কুত্তা।”

নাহিদ পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। নাহিদ আরিয়ানকে খুব ভালো করেই চিনে তাই সোনালীর হাত ছেড়ে দিয়ে ওইখান থেকে চলে যায়। আরিয়ানের চোখে যেনো আগুন জ্বলছে। নাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে ও………

—” বাহ লেখক দুলাভাই আসতেই ওই শয়তান চলে গেলো । একদম হিরোর মতো এন্ট্রি নিয়েছে লেখক দুলাভাই।”

ইতির কথা শুনে আরিয়ান সোজা গাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করে।

—” ইতি ওই লোকটা কে?”

হৃদয় এসে জিজ্ঞাসা করলো ইতিকে……

—” ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল । আব্বু বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ায় আমাদের বিরক্ত করতে এসেছে।”

—” তাহলে ওই লোক ভাবির হাত ধরলো কেনো?”

—” আমি কিছু জানি না বাট ওদের কথা শুনে মনে হলো ওরা একজন আরেকজনকে আগে থেকেই চিনে।”

—” ওহহ। চিন্তা করো না ওর ব্যবস্থা আমি করবো তোমরা বাসায় যাও।”

—” হুম। তোমরা এইদিকে কি করছিলে?”

—” আজ ভাইয়ার এইখানে একটা পোগ্রাম ছিলো বই নিয়ে তার জন্য এসেছিলাম।”

—” ওহহ ওকে। আমরা যাচ্ছি।”

—” হুম।”

সোনালী ইতি চলে যায়। সোনালী বাসায় গিয়ে গোসল করে খাটের উপর বসে থাকে। ওইসব কথা মনে হলে এখনও ওর হাত পা কেপে উঠে। খুব ভয়ানক ছিলো সেই দিনটা……….

অতীতে……..

তিন বছর আগে…..

নাহিদ ও মানহার বিয়ে। পারিবারিক ভাবে হলেও সবাই জানে নাহিদ মানহার রিলেশন আছে। তখন সোনালী ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট ছিলো। বোনের বিয়ে এসেছে কতই না আনন্দ করেছিলো। সেইদিন থেকেই নাহিদের চোখে পড়েছিল ও…….

—” দুলাভাই পুরো টাকা না দিলে আপুর কাছে যেতে দিবো না।”

—” তোমার কাছে যেতে পারলেই হবে তোমার আপুর কাছে যেতে হবে না।”

ওইদিন সবাই স্বাভাবিক ভাবেই নিলো এইকথা…….

বিয়ের পরের দিন সোনালী সহ বউয়ের বাড়ির আত্মীয় স্বজন সবাই বরের বাড়ি যেতে হয়। সোনালী মানহার কাছে গিয়ে বসলো…..

—” আপু তুমি কি এই বিয়েতে খুশি না?

—” খুশি হবো না কেনো? বিয়ে তো আমার ইচ্ছাতেই হচ্ছে। ”

—” মুখ ,চোখ শুকিয়ে আছে তো তাই বলছি।”

—” আরেহ বিয়ের সময় তো মুখ এমনই থাকে যখন তোর বিয়ে হবে তখন বুঝবি।”

—” বলছে তোমাকে। আমার বিয়ের সময় আমি নাগিন ড্যান্স করবো তোমার মত কান্না করে মেকআপ নষ্ট করবো না হিহিহিহি।”

সোনালী মানহা কথা বলছিল তখন নাহিদ এসে বললো……

—” বাহ শালীকা কত ফাস্ট তুমি। ভালোই হলো আমার বউয়ের সাথে শালী ফ্রি পেলাম।”

—” হিহিহিহি। এই শালীকা ফ্রী তে পাওয়া সম্ভব না দুলাভাই। আপনি রোমান্স করুন আমি আসি।”

সোনালী দৌড়ে চলে গেলো। নাহিদ মানহার কাছে গিয়ে বসলো আর বললো……

—” তোমার বোন কিন্তু দেখতে সেই। আগে জানলে ওকেই বিয়ে করতাম।”

—” বাজে কথা বলা বন্ধ করো।”

—” তোমার তো এখন আমার কথা ভালো লাগবে না।”

নাহিদও রাগ দেখিয়ে চলে যায়…….

একমাস পরে…..

মানহা ঘুরতে এসেছো ওর বাবার বাড়ি। নাহিদ সোনালীর আম্মুকে বলে সোনালীকে আসতে বলে। সোনালীর খারাপ লাগে নাহিদের কথা কিন্তু মায়ের কথায় মানহাদের বাড়িতে আসলো…….

—” হ্যায় শালীকা কি খবর?”

—” আলহামদুলিল্লাহ দুলাভাই। আপনার?”

—-” তুমি কথা বলো না তাহলে ভালো থাকি কিভাবে বলো?”

—” মানহাপু কোথায় দুলাভাই?”

—” আমি এনেছি তোমাকে তোমার আপু না সো আমার সাথেই কথা বলো।”

সোনালী না চাওয়া সত্বেও নাহিদের সাথে কথা বলতে লাগলো আর ওর বাজে কথা শুনতে লাগলো……

এইভাবে অনেক দিন চলে যায়। সোনালী নাহিদকে ইগনোর করতে শুরু করেছে। ওর কাছে নাহিদের কথা ,দৃষ্টি ভালো লাগে না। ভয়ে কাওকে বলতে পারছে না।

একদিন সোনালীর আম্মু আব্বু মানহাদের বাসায় যায়। নাহিদ এসেছে শুনে সোনালী গ্রুপ স্টাডির কথা বলে আর যায়নি…….

ক্রিং ক্রিং ক্রিং……

সোনালী সোফায় শুয়ে ফোনে গান শুনছিল। কলিং বেলের শব্দে ওরনা গায়ে দিয়ে জাদুর কাঠি দিয়ে চুল বেঁধে দরজা খুলে নাহিদকে দেখতে পেলো……

—” আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই। আপনি এইখানে আব্বু আম্মু তো বাসায় নেই।”

—” হুম জানি আমি। ”

—” তাহলে এইখানে কেনো এসেছেন?”

—” বাহিরে দাঁড় করিয়েই কি কথা বলবে নাকি বাসার ভিতরে যেতে বলবে?”

সোনালী চেয়েছিলো সোজা না করে দিতে যে, বাসায় কেউ নেই এখন আসা যাবে না কিন্তু পারলো না। এইসব বললে পরে মানুষ কি বলবে বিশেষ করে ওর মানহা আপু……

—” জ্বি দুলাভাই আসেন।”

নাহিদ ভিতরে ঢুকে সোনালীর দিকে তাকিয়ে রইলো সোনালী নাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো…..

—” কি খাবেন দুলাভাই? আমি কিন্তু রান্না পারি না বেশি।”

—” তোমাকে খাবো।”

—” মানে ?”

—” মজা করছি। কিছু খাবো না চলো গল্প করি। বাই দা ওয়ে তুমি কি ঘুমিয়ে ছিলে?”

—” নাহ গান শুনছিলাম শুয়ে শুয়ে।”

—” ওহহ এই জন্যই মুখ এমন দেখাচ্ছে।”

নাহিদ সোনালীর গালে হাত দিলো। সোনালী ঝটকা মেরে নাহিদের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো……

—” দুলাভাই বাসায় কেউ নেই তার উপর আমার শরীরটা খারাপ লাগছে যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো?”

—” হুম বলো?”

—” আপনি এখন চলে যান। ”

সোনালী নাহিদের ছোঁয়ায় অসস্তি বোধ করলো। নাহিদ বুঝতে পারলো তাই হাসলো…..

—” আমি জানি তুমি আমার সম্পর্কে অনেকটা বুঝে গিয়েছ। তাই আমায় ইগনোর করছো। সমস্যা নেই আমার এত লজ্জা নেই সরাসরিই বলছি, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে । আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”

—” আপনি কিন্তু এখন বাড়াবাড়ি করছেন। আমি মানহা আপুকে বলে দিবো।”

—” বলে দিলে দেও সমস্যা নেই। তোমার মানহা আপুকে এখন আমি ভয় পাই না।”

সোনালীর ফোনে কল আসলো দেখলো ওর মা দিয়েছে…..

—” হুম আম্মু বলো?”

—” নাহিদ নাকি তোকে আনতে গিয়েছে?”

—” আম্মু আমি তো বলেছি আমি যাবো না তাহলে কেনো আবার ওনি এসেছেন।”

—” ভালোভাবে কথা বল নাহিদ শুনলে কি ভাববে। ও গিয়েছে তোর মানহা আপুর বাচ্চা হবে সেই সু-খবর দেওয়ার জন্য।”

—” কিইইই আমি আন্টি হতে যাচ্ছি।”

—” হুম। তাড়াতাড়ি চলে আয়।”

—” ওকে আম্মু।”

সোনালী ফোন কেটে দিয়ে দেখলো নাহিদ হাসছে…..

—” এখন কি বলবে তোমার বোনকে আমার কথা?”

সোনালী নাহিদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কোনো উপায় না পেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো পিছু পিছু নাহিদও। সোনালী আলাদা গাড়ি নিয়ে চলে গেলো নাহিদ সেই গাড়ির সাথে যেতে লাগলো…..

সাত মাস পর……

আজ মানহার সাত মাসের অনুষ্ঠান। নাহিদ মানহা কে মানহার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অনুষ্ঠানের দিন মানহা সোনালীকে শাড়ি পরতে বলেছে। সোনালী একটা রুমে শাড়ি পরে সাজছিল তখন নাহিদ এসে দরজা বন্ধ করে সোনালীকে জড়িয়ে ধরতে নিলেই…….

চলবে…..