#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১৭
আজ মানহার সাত মাসের অনুষ্ঠান। নাহিদ মানহা কে মানহার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অনুষ্ঠানের দিন মানহা সোনালীকে শাড়ি পরতে বলেছে। সোনালী একটা রুমে শাড়ি পরে সাজছিল তখন নাহিদ এসে দরজা বন্ধ করে সোনালীকে জড়িয়ে ধরতে নিলেই…….
—” কি করছেন কি আপনি ?”
সোনালী দূরে সরে গিয়ে বললো…..
—” জান পাখি আজ তো তোমায় দেখে চোখ এড়ানো দায়। দূরে যেও না জান।”
—” আমি এখন মানুষ ডাকবো। যদি নিজের ভালো চান তাহলে চলে যান।”
—” তুমি কি ভুলে গেছো আমি মানুষকে ভয় পাই না। ওকে যাও শুধু একদিন কেউ জানবে না। এতে আমিও খুশি তোমার বোনও খুশি।”
সোনালী এখন রাগ সামলাতে না পেরে সজোরে থাপ্পড় মারে নাহিদকে। থাপ্পড় খেয়ে নাহিদ নিচে পরে যায়। নাহিদের পুরো মুখ লাল হয়ে আছে রাগে। সোনালী দৌড় মারতে নিলে নাহিদ সোনালীর শাড়ি ধরে টান দেয় সোনালী ফ্লোরে পরে যায়।
—” সবাই সবার কাজে ব্যাস্ত এখন কে বাঁচাবে তোমায় শালীকা?”
নাহিদ সোনালীর কাছে আসতে নিলে সোনালী পা দিয়ে লাত্থি মারে নাহিদকে। নাহিদ এইবার প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়ে চিৎকার দেয়।
—” কি হয়েছে এইখানে সোনালী তুই ঠিক আছিস?”
দরজার ওপাশ থেকে মানহা চিৎকার করতে থাকে। সোনালী মানহার কণ্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি উঠতে যেতেই নাহিদ গ্লাস ছুড়ে মারে সোনালীর সামনে। ভয় পেয়ে সোনালী ভাঙ্গা কাচের কাছে হাত দিয়ে ফেলে।
—-” আহহহ।”
—” সোনালী কি হয়েছে বোন তোর? দরজাটা খুলে দে বোন তাড়াতাড়ি সোনালী।”
—” আপু । ”
সোনালী কাঁদতে কাঁদতে আবার খুব কষ্টে উপরে উঠে। নাহিদ তখন আবারো সোনালীর পথ আটকিয়ে সোনালীকে ধাক্কা মেরে ভাঙ্গা কাচের উপরে ফেলে দেয়।
—” আহাসাসা।”
ভিতরের চিৎকার শুনে মানহা তার আশে পাশের সবাইকে ডাকতে থাকে। এই অবস্থায় মানহার চিৎকারে সবাই ওর সামনে আসে আর জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে…..?
—-” সোনালী চিৎকার করছে ভিতরে আমি অনেকক্ষন ধরে ডাকছি কিন্তু ও দরজা খুলছে না প্লিজ তোমরা কেউ দরজাটা ভেঙ্গে ফেলো দেখো সোনালীর কি হয়েছে?”
সবাই কিছুক্ষণ সোনালীকে ডাকছে কিন্তু ভিতর থেকে চিৎকার আর কিছু ভাঙার আওয়াজ আসছে। মানহার বাবা,সোনালীর বাবা, আরো অনেক মানুষ মিলে দরজাটা ভেঙ্গে দেখে সোনালীর পুরো শরীর রক্তে লাল হয়ে আছে। নাহিদও অনেক ব্যাথা পেয়েছে। নাহিদ সোনালীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এমন দৃশ্য দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নাহিদ তার আশে পাশে এত মানুষ দেখে সোনালীকে ছেড়ে মানহার কাছে গিয়ে বললো……
—” তোমার সাথে আমি আর সংসার করবো না ডিভোর্স চাই আমি।”
মানহা তার সমস্ত শক্তি দিয়ে নাহিদকে চড় মারে…..
—” তোমার মত বাজে লোকের সাথে আমি নিজেই তো সংসার করবো না। বিয়ের পর তোমার যে কতগুলো রিলেশন ছিল কি ভেবেছিলে আমি জানি না? সব জানি আমি কিন্তু পরিবারের মান সম্মানের কথা ভেবে সংসার করে এসেছি। কিন্তু আজ তুমি আমার ছোট বোনটার সাথে যা করতে চেয়েছিলে এখন কি করে এত বড় মুখ করে বলছো ‘ তোমার সাথে আমি সংসার করবো না ‘ সামান্যতম লজ্জাবোধ নাই তোমার। ”
—” মুখের বলি দেখি খুব ভালোভাবেই ফুটেছে তোমার। সব দোষ তোমার বোনের। ওকে তো আমি অনেক সুযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু ও বুঝলো না তাই তো বাধ্য হয়ে আজ…”
নাহিদ কিছু বলতে পারলো না। সোনালীর আব্বু আর মানহার আব্বু ধরে মারছে। পরিবারের মেয়ের কথা ভেবে তারা আর থানা পুলিশ করেনি। নাহিদকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়। মানহা তখন অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এইভাবেই চলে যায় অনেকদিন। মানহা তার বাবার বাড়িতে থাকা শুরু করে দেয়। কিছুদিন পর বাচ্চা হয়। পরে ডিভোর্স।
বর্তমান……
সোনালী সেইদিন ঘটে যাওয়া দিনগুলোর কথা ভেবে কান্না পাচ্ছে। সেদিন যদি ওর সাথে খারাপ কিছু হয়ে যেতো তাহলে আজ সে এই সমাজে মুখ দেখাতে পারতো না।
আট দিন চলে যায়। নাহিদ এখন আর বিরক্ত করে না ওদের। ইতি সোনালীর মন খারাপ দেখে কয়েকটা দিন সোনালীর সাথে থাকবে বলে ঠিক করেছে। শুক্রবারে সকাল সকাল সোনালীর বাসায় চলে আসে……
—” তুই এখন কোনো দরকার?”
—” ব্যাগটা ধর আমি কিছুদিন এইখানে থাকবো।”
সোনালী ব্যাগের দিকে তাকালো ইয়া বড় লাগেজ । সোনালী বললো…..
—” আজ কোনো বড় ভাই নাই তার জন্য বেঁচে গেলাম আমি।”
—” কেনো?”
—” তোর এত বড় লাগেজ দেখে বলছি। কিছুদিন থাকবি বলে পাঁচ বছরের জিনিস নিয়ে এসেছিস আর সারা জীবন থাকলে হয়তো তোর পাঁচটা রুম লাগতো শুধু ব্যাগ রাখার জন্য।”
—” বাতাসা বিলাতে ভুলবি না এখন চল।”
ইতি আর সোনালী যেতে নিলে আবারো কলিং বেলের শব্দ। সোনালী গিয়ে দরজা খুলে দেখে মানহা দাঁড়িয়ে আছে মাওয়া কে কোলে নিয়ে……
—” আপুউউউউউ তুমি এখন আমি তো ভাবতেই পারছি না। আমার কিউটিও এসেছে আসো তাড়াতাড়ি।”
সোনালী মাওয়া কোলে নিয়ে মানহা কে ভিতরে আসতে বললো। ইতি মানহাকে দেখে বললো…..
—” সোনালী ওনি কে?”
—” ইতি ও হচ্ছে মানহাপু তোকে যার কথা সব সময় বলতাম।”
ইতি তো মানহার কথা শুনে দৌড়ে এসে মানহা কে জড়িয়ে ধরে বললো…..
—” আপু তোমার কথা কত শুনেছি সোনালীর কাছে । জানো কত দেখার ইচ্ছা ছিল আজ পূর্ণ হলো। সোনালী বলেছে তুমি নাকি ঘুরাঘুরি পছন্দ করো না । আমি তো ভাবতাম তুমি বোরিং একজন মানুষ কিন্তু কি কিউট গো তুমি।”
—-” হাহাহা। তুমি ইতি তাই না?”
–” হুম চিনলে কিভাবে?”
—” সোনালীর কাছে তোমার সব কথাই শুনেছি। আমি তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি এই সেই মিষ্টি মেয়ে ইতি।”
—” তুমি আমাকে পর পর দেখছো কেনো?”
—” পর পর কই দেখলাম?”
—” এই যে তুমি তুমি বলছো তাই বললাম।”
—” ওকে আজ থেকে তুই খুশি তো?”
—-” অনেককককককক। ওই সোনালী দে তো এখন এই পিচ্ছুটাকে আমার কোলে।”
সোনালী ইতি মানহা সোনালীর রুমে চলে যায়। মাওয়া ইতির কোলে। মানহাকে দেখে সোনালীর আব্বু আম্মু খুব খুশি হলো। বিয়ের পর একবার এসেছিলো মানহা তারপর আসা হয় নি। সবাই ফ্রেশ হয়ে আড্ডা দিচ্ছে। ইতি জানতো মানহার ডিভোর্সের কথা কিন্তু নাহিদ যে তার স্বামী সেইটা জানতো না। সোনালী তখন বললো…..
—” আপু ওই বাজে লোকটা ইতিকে বিয়ে করতে চাইছিল?”
—” কে?”
—” নাহিদ।”
সোনালী সব কথা খুলে বললো। ইতিকেও সব ঘটনা বললো…..
—” ছিঃ আর কত খারাপ হবে নাহিদ। ও কতকত মেয়ের জীবন নষ্ট করছে ওকে তো শাস্তি দিতেই হবে।”
মানহার কথায় সোনালী ও ইতি সায় দিলো। তিনজন খুব ভালো আড্ডা দিচ্ছে নানান বিষয়ে কথা বলছে……
।।
।।
।।
।।
অন্যদিকে……
—” ব্রো আজ ইতি ভাবির বাসায়।”
ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বললো তখন আরিয়ান…..
—” তো কি হয়েছে?”
—” তুই তো এখন ওই বাড়ির হবু জামাই চল এই সুযোগে যাওয়া যাক।”
—” বাজে কথা বলা বন্ধ কর আর কাজ কর।”
—” তুই যে কিভাবে আমার ভাই হলি বুঝলাম না। দাদী কি বলেছে শুনিস নাই। যত বেশি বউয়ের আশে পাশে থাকবি ততবেশি জীবনে উন্নত করতে পারবি।”
—” এমন বাজে কথা দাদী কোনোদিন বলবে না। বলতে পারলে তুই বলবি সো দাদীর নামে মিথ্যা কথা বলবি না।”
—” হুহহ। ওহহ ব্রো একটা ইম্পর্টেন্ট কথা বলতে ভুলে গেছি।”
—” তোরও ইম্পর্টেন্ট কথা আছে জানতাম না তো।”
—” ব্রো মজা করবি না। তোর এই ভাই সুপার হিরো ভুলে যাবি না।”
—” ইম্পর্টেন্ট কথাটা কি ?”
—” ওই যে ইতির রিজেক্ট করা হবু বর নাহিদ যে ভাবির হাত ধরেছিল তাকে শায়েস্তা করার জন্য একটা প্ল্যান করেছিলাম ।”
আরিয়ান কাজ রেখে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বললো…..
—” হোয়াট? কি বলছিস জানিস ও কে?”
—” হুম। সব খবরই জানি আমি। এক নম্বরের বদ ছেলে। হাজারটা মেয়ের সাথে রিলেশন। বিয়ে করেছিল এক বছর হলো ডিভোর্স এখনো মেয়েদের সাথে রিলেশন আছে। তাছাড়া ইতির কাছে শুনেছি ভাবির সাথেও নাকি বাজে বিহেভ করেছে। ”
—” হোয়াট ডিভোর্স হয়ে গেছে মানে?”
—” আরেহ ওই রকম বাজে লোকের সংসার কোন মেয়ে করবে তাই হয়তো চলে গেছে।”
—” তোকে এইসব কথা কে বলেছে?”
—” ইতি বলছে। আরো বলেছে ওই ছেলের সাথে নাকি ভাবির পরিবারের একটা সম্পর্ক ছিল যা এখন নেই।”
—” ধ্যাত। কিসব আবল তাবল বলছিস । চল এখন।”
—” কোথায়?”
—” সোনালীর বাসায়।”
—-” তোর মন হলো আকাশের রং কখন যে কি রূপ ধারণ করে বুঝা মুশকিল। ”
আরিয়ান হৃদয়ের দিকে চোখ রাঙাতেই হৃদয় বললো…..
—” আমি কি না করেছি নাকি? চল।”
।।।
।।।
।।।
—” জানো আপু ওইদিন নাহিদের সামনে আরিয়ান আসতেই নাহিদ ভয় পেয়ে চলে যায়।”
—” এই নাহিদ কতবার মার খেয়েছে ওর হাতে সেই ভয় মরার আগ পর্যন্ত থাকবে নাহিদের।”
মানহা মনে মনে বলছে। তখন ইতি বললো…..
—” লেখক দুলাভাই কে দেখে ভয় পাবে না তো কি করবে যেসব আত্মা কাপানো গল্প লিখে সবাই ভয় পাবে।”
—” তোরা চুপ কর তো এখন। মাওয়া কে ঘুমুতে দে দেখ তোদের কথা কি মনোযোগ দিয়ে শুনছে বুড়ি মেয়েটা।”
—” আম আম আম্মু মাম আম্ম আম্মু।”
এখনো কথা বলতে পারে না। শুধু আম্মু বলা শিখেছে । কিন্তু যেভাবে কথা শুনছে মনে হচ্ছে সব বুঝে ও। মানহা মাওয়া কে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে তখন আবারো কলিং বেলের শব্দ……
—-” আজ এত কলিং বেল বাজছে কেনো? এখন আবার কে এসেছে?”
—” মনে হচ্ছে আন্টি দরজা খুলে ফেলেছে। চল গিয়ে দেখি কে এসেছে। ”
—” যেই আসুক আমরা আড্ডা দেই।”
—” আরেহ চল।”
ইতি সোনালীকে টেনে নিয়ে গেলো কেননা ইতি জানতো হৃদয় আর আরিয়ান আসবে। হৃদয় তাকে সব বলেছে……
সোনালীর আব্বু আম্মু কিছু কথা বললো। আরিয়ান তাদের সাথে কথা বলে বুঝলো না ওদের পরিবারের এক মেয়ের সাথে নাহিদের বিয়ে হয়েছে । ওর চরিত্রের কথা জানার পর ওদের ডিভোর্স হয়ে যায়। সোনালীর সাথে যা করেছে সব বললো। ইতি তখন মাওয়া কে কোলে নিয়ে ওদের সামনে যায় তখন সোনালীর আম্মু বললো…..
—” এই যে বাবুটাকে দেখছো ওর মায়ের সাথে এমন ঘটেছে।”
আরিয়ান বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো। বাচ্চাটার চোখ গুলো খুব চিনা চিনা লাগছে তার……
—” এই তোদের জন্য এই মেয়েকে ঘুম পাড়াতে পারবো না আমি……”
মানহা জানতো না আরিয়ান এসেছে। রুম থেকে বের হতেই সামনে আরিয়ানকে দেখে কথা বন্ধ করে দিলো। আরিয়ান মানহার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সোনালীকে বললো…….
চলবে……
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।