#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১৮
মানহা জানতো না আরিয়ান এসেছে। রুম থেকে বের হতেই সামনে আরিয়ানকে দেখে কথা বন্ধ করে দিলো। আরিয়ান মানহার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সোনালীকে বললো…….
—-” ওনি কে?”
মানহা আরিয়ানের কথা শুনে খুব অবাক হলো। মানহা আরিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো শান্ত চোখ তার, যে চোখে এক সময় ছিল তার জন্য কত ভালোবাসা কিন্তু সেই চোখে আজ ভালোবাসা নাকি ঘৃনা বুঝা যাচ্ছে না।
—” ও আমার কাজিন মানহা।”
—” বাচ্চাটা ওনার তাই তো?”
—” হুম।”
—“ইতি মাওয়াকে আমার কাছে দে ও ঘুমাবে এখন।”
ইতির কাছ থেকে মাওয়াকে নিয়ে চলে গেলো মানহা। আরিয়ান মানহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে সোনালীকে বললো……
—” আমি এখন আসি। অনেক কাজ আছে ।”
—” বাবা রাতের খাবারটুকু খেয়ে যাও।”
—” অন্য একদিন আন্টি আজ প্রচুর কাজ আছে।”
আরিয়ান হৃদয় চলে যায়। দরজার আড়ালে থেকে মানহা আরিয়ানকে দেখে। আরিয়ান যাবার সময় আশে পাশে তাকিয়ে কিছু খুঁজছিল । মানহা জানে আরিয়ান তাকে খুঁজছিল কিন্তু সে তো দেখা দিবে না। আরিয়ান এখন তার বোনের হবু বর সে পারবে না সোনালীকে কষ্ট দিতে। তাছাড়া আরিয়ান তার ভালোবাসার সাথে খেলেছে। ওর মনে আরিয়ানের জন্য যতই ভালোবাসা থাকুক তা সে প্রকাশ করবে না…….
।।
।।
।।
।।
আরিয়ান অন্ধকারে বসে আছে। হাতে সিগারেট অনেকদিন পর আজ সে তার প্রথম ভালোবাসার মানুষকে দেখতে পেয়েছে কিন্তু ও চায়নি মানহার জীবন এমন হোক। মানহার কষ্টের কথা ভেবে তার চোখ লাল হয়ে উঠলো। নাহিদকে সে ছাড়বে না। ফোন বের করে কাওকে যেনো ফোন দিলো…..
—” একজনের নাম বলছি সাথে ঠিকানা। আগামীকাল তাকে আমার সামনে দেখতে চাই। যা যা বলছি মন দিয়ে শুনে……..”
আরিয়ান কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কাটলো তখন তার মনে আরেকটি প্রশ্ন উদয় হলো, তানিয়া তাকে বলেছে সে ইন্ডিয়াতে মানহাকে দেখেছে কিন্তু সোনালীর পরিবারের কাছে যা শুনলো মানহা কোনোদিন ইন্ডিয়া যায়নি তাহলে তানিয়া তাকে এমন কথা কেনো বললো? মনের ভিতর এমন প্রশ্ন আসায় ফোন দিলো তানিয়াকে……
—” বাহ আজ দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এত বড় লেখক আমায় কেনো ফোন দিলো এখন তো নিজেকে সেলিব্রিটি মনে হচ্ছে আমার।”
—” তুই নিজেও তো সেলিব্রিটি লেখিকা এখন মজা নিচ্ছিস আমার সাথে বাই দা ওয়ে কি করছিস?”
—” আরেহ বলিস না নতুন বই নিয়ে খুব ঝামেলায় আছি।”
—” কেনো কি হয়েছে?”
—” আমার নতুন বইয়ের নাম তো জানিস ‘ ছদ্মবেশী বন্ধু ‘ এইখানে একটা চরিত্রের নাম বদল করে নিজের নাম দিতে বড্ড ইচ্ছা করছে তাই আবারো নতুন করে সব সাজাচ্ছি।”
—” বাহ হিরোইন থেকে ভিলেন হওয়ার ইচ্ছা জাগলো কবে থেকে?”
—” অনেকদিন ধরেই।”
—” বুঝলাম আচ্ছা তুই ওইদিন ফোন দিয়ে বলছিলি না তুই মানহা কে দেখেছিস? ”
তানিয়ার মুখ এখন চুপসে গেলো। ফোনের ওপাশ থেকে আমতা আমতা করে বললো…..
—” হুম হিন্ডিয়াতে দেখেছি । হটাৎ এমন প্রশ্ন?”
—” আজ মানহাকে দেখেছি।”
আরিয়ান শান্ত গলায় বললো তানিয়া বিচলিত হয়ে বললো….
—” তোদের মাঝে এখনও সম্পর্ক আছে?”
—” নাহ।”
—” তাহলে?”
—” তোকে বলা হয় নি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমার হবু স্ত্রীর কাজিন মানহা। নাহিদ ওর সাথে বেইমানি করেছে।”
—” ত তোর বিয়ে মানে? কক কবে কি ঠিক ?”
—” হটাৎ করেই সব হয়ে গেছে ভেবেছিলাম তোকে বিয়ের দুইদিন আগে বলবো সারপ্রাইজ দিবো তোকে কিন্তু হলো না।”
—” হুম। আর আমি মনে হয় হিন্দিয়াতে অন্য কাওকে দেখে মানহা ভেবেছিলাম সরি আমি।”
—” আরেহ সরি বলার কি আছে? ভুল তো হতেই পারে বাই দা ওয়ে মানহার খুব সুন্দর মেয়ে হয়েছে। কিন্তু নাহিদের চরিত্র দিন দিন খারাপ হচ্ছে ওকে তো শাস্তি দিতেই হবে। আচ্ছা বায় পরে কথা হবে।”
—” হুম।”
আরিয়ান ফোন কেটে দিয়ে আরেকটি সিগারেট ধরালো।
তানিয়া নাহিদ কে ফোন দিলো….
—” হ্যায় ডার্লিং কি খবর?”
—” বাজে কথা বলা বন্ধ করে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে কিছুদিনের জন্য কোথায় লুকিয়ে থাক।”
—” কেনো কি হয়েছে?”
—” আরিয়ান তোর সম্পর্কে সব জেনে গেছে।”
—” হোয়াট কিভাবে?”
তানিয়া আরিয়ান তাকে যা বলেছে সব বললো…..
—” তারমানে সোনালীর সাথে আরিয়ানের বিয়ে ?”
—” সোনালী কে?”
—” মানহার কাজিন। এই জন্যইতো ওইদিন আমি সোনালীর হাত ধরায় আরিয়ান ক্ষেপে গিয়েছিলো।”
—” পরিস্তিতি খুব খারাপ দেখছি। আমাকেই বাংলাদেশ আসতে হবে। যেভাবে মানহাকে বিদায় করেছি সোনালীকে সেইভাবেই বিদায় জানাতে হবে। আর তুই কিছুদিনের জন্য কোথাও চলে যা তানাহলে অকালে প্রাণ হারাতে হবে।”
—” ওকে। তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়। আর শুন আমার কিন্তু সোনালীকে চাই চাই।”
—” নিজেকে আগে বাঁচা পরে সোনালীকে পাওয়ার চেষ্টা করিস। বায় আমি টিকিট কাটার ব্যাবস্থা করি।”
—” ওকে।”
।।
।।
।।
—” আমার এত দিনের স্বপ্ন কেউ এইভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসবে কোনো দিন ভাবতে পারেনি। এই মানহাদের পরিবারের মেয়েগুলো বড্ড খারাপ তারা দুনিয়াতে আর কোনো ছেলে পায় না আমার ভালোবাসার মানুষের কাছেই আসে। বলি তোরা তোদের মত কাওকে খুঁজে নে আমাকে রাগাতে আছিস কেনো? আমি যদি বেশি রেগে যাই না তোদের বংশে আর কোনো মেয়ের জন্ম নিতে পারবে না। আর ওই সোনালীকে তো আমি দেখে নিবো। মানহা তোর বড্ড শক তোর বোনকে আমার আরিয়ানের সাথে বিয়ে দেওয়া তাই না? তুই তো পারলি না এখন বোনকে ছেড়ে দিয়েছিস তোর এই প্ল্যানের কারণে তোর মেয়েকে বিদায় করবো এই দুনিয়া থেকে। তোরা বার বার আমার নিষ্পাপ আরিয়ানের দিকে নজর দিচ্ছিস তোদের চোখ তো আমি কালো কাপড়ে মুড়িয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় দিবো আসছি আমি। আরিয়ান তোকেও শাস্তি পেতে হবে। আমার কথা না ভেবে তুই অন্য মেয়ের কথা ভাবছিস তোকে তো আমি ছেড়ে দিবো না জাস্ট বিয়েটা হোক পরে তোকে বুঝাবো তানিয়া কি করতে পারে ।”
তানিয়া তার রুমে হাঁটছে দুই হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রেখেছে। সে পারছে উড়ে গিয়ে সোনালী ও মানহা কে মারতে……
।।
।।
।।
।।
পরেরদিন সকালে……
নাহিদকে কোথায় পাওয়া যাচ্ছে না। আরিয়ানের মাথা রেগে আগুন। হৃদয় আইস ব্যাগ আরিয়ানের মাথায় ধরে রেখেছে।
—” নাহিদ কোথায় গিয়েছে কবে গিয়েছে কেউ জানে না? গতকাল রাতেই তো সব ঠিক ছিলো সকাল হতে না হতেই নাহিদ পালায় কিভাবে?”
—” ব্রো শান্ত হো দেখবি ওকে খুঁজে পাওয়া যাবে তুই আগে শান্ত হো।”
—” ওকে খুন না করা পর্যন্ত তো আমি শান্ত হবো না।”
—” ব্রো মাথা ঠাণ্ডা রাখ জানিস না রেগে গেলি তো হেরে গেলি। ওই ছেলে তো আর বাংলাদেশ থেকে বিতারিত হবে না তুই একদিন না একদিন ঠিকই পাবি।”
আরিয়ান কিছুক্ষণ ভাবলো। হটাৎ কোথাও একটা ফোন দিয়ে কিসব বললো। কথা বলা শেষ হলে হৃদয়কে বললো……
—-” সোনালী ইতিকে বল রেডি থাকতে ওদের নিয়ে ঘুরতে যাবো।”
—” আমি কি ঠিক শুনছি?””
—” আর শুন যদি ওদের মধ্য কেউ যেতে চায় তাহলে বলবি চলে আসতে আমি আসছি।”
—” হুম।”
আরিয়ান চলে যায়। হৃদয় তো কিছুক্ষন লুঙ্গি ড্যান্স করে ইতিকে ফোন দিলো।
—” ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রাখো।”
—” কেনো?”
—” হানিমুনে যেতে হবে না?”
—” ছিঃ ছিঃ ছিঃ তুমি কি খারাপ গো।”
—” শুনো ব্রো আমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবে। সো তোমরা যারা যারা যাবে রেডি হয়ে পরো।”
—” এই তোমাদের দুই ভাইয়ের মাথার নাট বল্টু কি ঢিলা হয়ে গেছে? যখন বলবে তখনই রেডি হয়ে তোমাদের সাথে যাবো বলি তোমাদের মত কি আমরা ফ্রী থাকি সব সময় আমাদের পরিবারকে বলতে হবে না? ওরা পারমিশন দিলে তো যাবো।”
—” বাসায় বলো তুমি ভাবির সাথে ঘুরতে যাচ্ছো কিছুদিনের জন্য। ভাবির হবু বর মানে তোমার লেখক দুলাভাই ট্রিট দিচ্ছে আরো কিছু বানিয়ে রেডি হয়ে পরো। আমি আর ভাইয়া রাতে এসে নিয়ে যাবো। লং ড্রাইভে যাবো।”
—” ধ্যাত। দেখছি।”
আরিয়ান ফোন দিয়ে সোনালীর আব্বু আম্মুকে বলে ওনারা রাজি হয়ে যায়। ইতি ,সোনালী ,সোনালীর আব্বু আম্মু অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে মানহা কে রাজি করায়। মানহা যেতে চায়নি কত কত অজুহাত দিয়েছে কিন্তু লাভ হয় নি। অতঃপর রাতে আরিয়ান হৃদয় এসে ওদের তিনজনকে নিয়ে যায় সাথে মাওয়াও ছিলো…..
আরিয়ান ড্রাইভ করছে পাশের সিটে হৃদয়। ইতি হৃদয় বকবক করেই যাচ্ছে । সোনালী ওদের বকবক শুনে বললো…..
—” তোদের জুটি ধারণ মিল হয়েছে। দুই বকবক একসাথেই আছিস। আল্লাহ জানে তোদের আন্ডা বাচ্চারা কেমন হয়? তোদের মতই বকবক করবে নাকি তোদের থেকেও বেশি সেই চিন্তা করে মাথার চুল সব পেকে যাচ্ছে।”
মানহা সোনালীর কথা শুনে হেঁসে বললো…..
—” আপনি যে কেমন তা আমরা জানি। আপনি নিজেই তো বকবক করেন এখন অন্যদের নিয়ে চিন্তা করছেন।”
—” তোমার কাছ থেকেই তো শিখেছি। তুমি তো আগে কত কথা বলতে আর কথায় কথায় ছন্দ মিলাতে খুব হাস্যকর ছিলো আর এখন বোরিং এর ডিব্বা।”
আরিয়ান গাড়ির গ্লাসের দিকে তাকিয়ে মানহার দিকে তাকালো। দুইজনের চোখ এক হয়ে গেলো। মানহা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো। আরিয়ান আবারো সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো……
সোনালী ইতি অনেক জোরাজোরি করাতে মানহা গাইতে বাধ্য হলো। মাওয়া কে কোলে শুইয়ে রেখে মানহা গান গাওয়া শুরু করলো……
প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও… তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিশুতে যাই
তোমাকে, ও… তোমাকে।
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে..
রোজ দুইফোঁটা যেন আরও ভালো লাগে
গানে, অভিসারে, চাই শুধু বারে-বারে
তোমাকে, ও… তোমাকে।
যেদিন কানে-কানে সব বলবো তোমাকে
বুকের মাঝে জাপ্টে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে।
পথ চেয়ে রই, দেরি করোনা যতই
আর ভোলা যাবেনা জীবনে কখনোই,
তোমাকে, ও… তোমাকে।
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি
তুমি আসলে জোনাকি রাশি-রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকে আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি…।
প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও… তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিশুতে যাই
তোমাকে, ও… তোমাকে।
চলবে……
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।