মিথ্যা_অপবাদ পর্ব-২০

0
1901

#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_২০

আরিয়ান শান্ত গলায় বললো মানহা চেঁচিয়ে উঠে বললো…..

—-” হোয়াট?”

—” হুম। কেনো আপনি তো ওকে ভালোবাসতেন এমনকি বিয়েও করেছেন তাহলে জানেন না ওর অভ্যাসের কথা?”

—” আমি ওর পার্সোনাল ব্যাপারে কিছু জানি না।”

—” হাহাহাহা। কি বলেন কি আপনি? রিলেশন করে বিয়ে করেছেন আর ওর অভ্যাসের কথা জানেন না? হাসালেন আপনি আমাকে।”

—” আপনার সাথে আমি এইসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক না। যদি কোনো দরকারি কথা থাকে বলতে পারেন।”

—-” হুম শুনুন মনোযোগ দিয়ে, আমি চাই না সোনালী আমার অতীতের খারাপ সময়গুলোর কথা জানুক। ও যেনো না জানতে পারে ওকে? আমরা ঘুরতে যাওয়ার ছলে নাহিদকে খুঁজব তাই আপনার অন্ধ চোখ গুলো দয়া করে খুলে রাখবেন। আমার সাথে বেশি কথা বলবেন না। সোনালীর সামনে এমন কিছু বলবেন না যেনো ওর মনে সন্দেহ হয়।”

—” হুম ।”

—” কথাগুলো মাথায় খুব সুন্দর ভাবে বুঝে নিন। আমি আসছি।”

—” হুম।”

আরিয়ান চলে যায়। মানহা টেবিলের নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকে। আরিয়ানের কথাগুলো তাকে বার বার কষ্ট দিচ্ছে। আরিয়ান যে তাকে কতটা ঘৃনা করে সে বুঝতে পেরেছে।

—” আরিয়ান তুমি আমায় এত ঘৃনা করো। একবারও তো জানতে চাওনি কেনো আমি তোমাকে রিজেক্ট করেছি কেনো তোমার সাথে ব্রেকআপ করেছি? আমি ভেবেছিলাম তোমার আমার প্রতি বিশ্বাস আছে তুমি আমার মুখের কথা বিশ্বাস করবে না তুমি বুঝবে আমায় কিন্তু কি হলো তুমিও আমাকে ভুল বুঝেছো। আমি তো তখন ওদের হাতের পুতুল ছিলাম যা বলেছে তাই করেছি আমি । ”

মানহা কাঁদতে থাকে। ওর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কিছুতেই ভুলতে পারে না ও।

।।

।।

।।

সোনালী ঘুম থেকে উঠে দেখে ইতি ও মাওয়া শুয়ে আছে। মানহা নেই। সোনালী আশে পাশে তাকিয়ে মানহা কে না দেখে মাওয়ার দিকে তাকালো দেখলো মাওয়ার ডায়পার ভিজে আছে। সোনালী ব্যাগ থেকে নতুন ডায়পার পরিয়ে দিলো মাওয়াকে। মাওয়া এখনও ঘুমে আচ্ছন্ন।

—” কি নিষ্পাপ মুখখানা তোর। কি কিউট লাগছে উম্মাহ। তোকে দেখলে একদম নিজের বুকের কাছে মিশে নিতে মন চায় । আমার বাবুটা।”

সোনালী ঘুমানো মাওয়াকে নিয়ে কিছুক্ষণ বকবক করে ইতিকে না ডেকে ফ্রেশ হয়ে আরিয়ানের সাথে কথা বলতে গেলো……

আরিয়ান তখন অন্য একটা কাজে রুমে ছিলো না। হৃদয় কম্বল দিয়ে সারা শরীল ঢেকে শুয়ে আছে। সোনালী রুমে গিয়ে দেখলো কেউ একজন শুয়ে আছে।

—” হৃদয় ভাইয়া তো এখনও শুয়ে থাকার কথা না। সারারাত ড্রাইভ করেছে তাই হয়তো ওনি শুয়ে আছে। যাই একটু মজা করি।”

মনে মনে শয়তানি বুদ্ধি আঁটলো সোনালী। জগ নিয়ে কম্বলের উপর থেকেই পানি ঢাললো সোনালী। হৃদয় ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়লো……

—” এই কে রেএএএএএএ?”

সোনালী আরিয়ানের কন্ঠ না পেয়ে সামনে তাকিয়ে হৃদয়কে দেখে হাত থেকে জগ ফ্লোরে ফেলে দিলো। সোনালীর হাত পা কাপছে ভয়ে নয় বরং লজ্জায়। হৃদয় সোনালীকে এই অবস্থায় দেখে ভেজা কম্বল আবারো মাথায় দিয়ে শুয়ে পড়লো। সোনালী দৌড় দিতে গিয়ে দরজার কাছে আসতেই আরিয়ানের সাথে ধাক্কা খেলো…..

—” ওই তুমি কি অন্ধ চোখে দেখতে পাও না?”

—” ঠিকই বলেছেন আমি অন্ধ।”

সোনালী তাড়াহুড়া করে যেতে চাচ্ছে কিন্তু আরিয়ান সোনালীর হাত ধরে রেখেছে।

—” কৈ মাছের মত এইভাবে লাফাচ্ছে কেনো কি হয়েছে?”

—” আমি আমার রুমে যাবো।”

—” কি বলেছি আমি? আগে উত্তর দেও কি হয়েছে?”

—” হৃদয় হৃদয় ভাইয়া হৃদয় ভাইয়া।”

সোনালী লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। আরিয়ান তখন ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো…..

—” কি করেছে হৃদয়?”

—” ভাইয়া আমার দিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা কর ভাবীকে।”

আরিয়ান হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তোয়ালে দিয়ে হৃদয় মাথা পরিষ্কার করছে। মুখ, চুল, গলা ভিজে একাকার। সোনালী হৃদয়কে ওইভাবে দেখে আরো লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে…….

—” তোর এই অবস্থা কিভাবে হলো? নাকি ইতি ভেবে সোনালীর সাথে তুই…….?”

—” ছিঃ ছিঃ কি বলছেন কি আপনি ছিঃ।”

হৃদয় জোরে জোরে হাসতে লাগলো। আরিয়ানও মুখ চেপে হাসছে……

—” ব্রো , ভাবী আমাকে তুই ভেবে গোসল করিয়ে দিয়েছে। জগ ভর্তি পানি সব আমার মাথায় ঢালছে ভাবী। দেখ ভাবী তোর কি খেয়াল রাখে। এই হালকা শীতে আরো শীত লাগার জন্য কত ভালো প্ল্যান। কিন্তু ভাবির এই প্ল্যানে আমি হলাম হাতিয়ার। ”

—” দেখ তোর ভাবীকে রোমান্স শিখাচ্ছি আমি। নতুন নতুন একটু আকটু ভুল হতেই পারে নো প্রবলেম। এখন তুই যা আমি আরো একটু রোমান্স শিখাই তোর ভাবীকে।”

—” ওক্কে ব্রো। ”

হৃদয় রুম থেকে বের হয়ে যায়। আরিয়ান সোনালীকে টেনে নিয়ে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে সোনালীর কানে ফিসফিস করে বলে……

—-” তোমার তো দেখছি রোমান্স করার খুব শক। আমাকে বলতে পারতে আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করতাম। শুধু শুধু আমার ভাইটাকে ঠান্ডায় গোসল করালে।”

—” আমি তো আপনার সাথে একটু মজা করতে চেয়েছিলাম। হৃদয় ভাইয়া ছিলো তাতো আমি জানতাম না।”

—” ভাবী! সরি আমি কিছু দেখিনি।”

হৃদয় সোনালীকে ডাকতে ডাকতে ভিতরে ঢুকে পড়ে। আরিয়ান সোনালী কাছাকাছি থাকায় বেচারা লজ্জা পেয়ে পিছন ফিরে তাকালো…..

—” কাবাব মে হাড্ডি হতে খুব ভালো লাগে তাই না?”

—” সরি ব্রো, আসলে আমি ভাবির কাছে জানতে আসছিলাম ইতি কোথায়? তোরা তো রোমান্স করবি আমি কেনো বাদ যাবো।”

—” ইতি রুমে ঘুমাচ্ছে।”

—” মানহা আপু আছে রুমে? পরে দেখা যাবে আমিও ভুল ক্রমে ইতি ভেবে মানহা আপুকে জড়িয়ে ধরবো।”

—” নাহ মানহাপু নেই। মাওয়া আর ইতি শুয়ে আছে।”

—” ধন্যবাদ ভাবী। আর বেস্ট অফ লাক।”

হৃদয় চোখ টিপ দিয়ে চলে যায়। আরিয়ান হৃদয় যাওয়ার সাথে সাথে দরজা লক করে আবারো সোনালীর কাছে যায়……

—” এইভাবে দরজা বন্ধ করলেন কেনো?”

—” বউয়ের সাথে রোমান্স করবো তাই।”

—” এখনও তো সময় হয় নি।”

—-” বাহ লজ্জায় দেখছি রংধনু হয়ে যাচ্ছো।”

—-” একটা কথা বলবো?”

—” হুম।”

—” আমিও গল্প লেখতে চাই। কিভাবে লিখবো একটু শিখিয়ে দিবেন।”

আরিয়ান কিছুক্ষণ ভাবলো । ভেবে চিন্তে বললো……

—-” আসো আমি আর তুমি একটা যৌথ গল্প লেখি। তাহলে প্রথম গল্পতেই তুমি সেলিব্রিটি হয়ে যাবে। তোমার ইচ্ছাও পূরণ হবে সাথে আমার সন্দেহও।”

—” আপনার সন্দেহ মানে?”

—” তুমি বুঝবে না। সিলেট ঘুরতে এসেছি ভালো কথা কিন্তু সাবধানে চলবে। একা একা কোথায় যাবে না। মনে রেখো আশে পাশে তোমার হাজারো শত্রু আছে ওকে?”

—“হুম। এখন যাই আমি।”

—-” আমি কি তোমাকে যেতে বলেছি?”

—” উহু।”

—” তো যেতে চাচ্ছো কেনো?”

—” আপনার কাছে থাকলে আমার যেনো কেমন কেমন লাগে।”

—” কেমন কেমন?”

—-” নাম বলতে পারলে তো আগেই বলতাম নাম তাই না?”

—-” তা অবশ্যই ঠিক।”

আরিয়ান সোনালীর কোমর জড়িয়ে ধরে সোনালীকে তার কাছে নিয়ে আসে। তাদের মাঝে এক ইঞ্চিও জায়গা নেই। আরিয়ানের নিঃশ্বাস সোনালীর মুখে এসে পড়ছে। আরিয়ান সোনালীর কানের কাছে মুখ নিয়ে সোনালীর কানে কামোর দিয়ে বললো……

—-” ভালোবাসা মানে পরস্পরকে বুঝতে পারা। আমি যে মানুষটিকে ভালোবাসব তাকে যদি না বুঝতে পারি তাহলে এই প্রেমের কোনো অর্থ আছে বলে মনে হয় না। তুমি ভাবছো এইসব কথা তোমায় কেনো বলছি তোমাকে তো আমি ভালোবাসি না তাই না তাহলে শুনো তুমি তো গল্প লেখতে চাও আমার সাথে ভাবছি রোমান্টিক গল্প লিখবো যার জন্য রোমাঞ্চ অনুভব থাকাটা আমাদের দরকার। ”

—” কানে কামোর দিয়ে এই কথা বলতে হয়?”

—” এইটা কামোর না লাভ বাইট । রোমান্টিক গল্প লেখার জন্য দরকার আছে।”

—” ছিঃ তাহলে আমি লেখবো না।”

—” তাহলে বললে কেনো গল্প লেখার কথা।”

—” ইচ্ছা ছিল তাই।”

—” ইচ্ছাটা ধরে রেখো ভালো হবে। ”

—-” আপনি কোনোদিন প্রেমে পড়েন নি লেখক সাহেব?”

আরিয়ান হাসলো। মনে হচ্ছে সোনালী তাকে কোনো জোকস শুনাচ্ছে।

—” আমি হাসার কিছু বলেছি বলে মনে হয় না আমার।”

—” হুম একবার প্রেম করেছে দ্বিতীয় বার প্রেমে পড়েছি। জানি না ভাগ্য কি লেখা আছে আমার। প্রেম করা নাকি প্রেমে পড়া? ”

—-” আপনার কথার আগা মাথা না বুঝা আমার নিষ্পাপ মুন্ডু।”

—-” এত ছোট মাথায় আবার পাকা কথা ঢুকবে না। বড় হও বুঝতে পারবে।”

—” হহ্হ্হ। আমি যাই।”

—” আমি শাওয়ার নিতে যাচ্ছি ততক্ষণ এইখানে বসে থাকো। রুমের বাহিরে পা রাখলে ওই পা কেটে হাতে ধরিয়ে দিবো মাইন্ড ইট।”

সোনালী ভয়ে ঢোক গিললো আর মাথায় সম্মতি জানালো ও বসে থাকবে………

।।

।।

।।

।।

—” আমি পরে যাবো কি করছো তুমি আমাকে নিচে নামাও।”

—” আমি এক্সারসাইজ করছি বেশি কথা বলবে না।”

—” এক্সারসাইজ করার জন্য আমাকে পেয়েছো তুমি ? নামাও বলছি মানহা আপু বা সোনালী এক্ষুনি চলে আসবে।”

—” আসবে না ওরা। ওই তুমি কি জানো?”

—” কি জানবো আমি?”

—-” চিকন মেয়েরা বিয়ের পর মোটা হবে সেই আশা নিয়ে বিয়ে করে।”

—” তোমাকে এইসব বাজে কথা কে বলেছে ?”

—” নাহ ফেসবুকে তো প্রায় দেখি তাই জানতে ইচ্ছা হলো।”

—” তুমি আমাকে কোল থেকে নামাও আমি বাথরুম থেকে ঝাড়ু এনে তোমাকে শিখাচ্ছি ।”

—-” এই জন্যই তো নামাবো না।”

ইতি জোর করে নামতে চাচ্ছে। হৃদয় কোলে নিয়েই ঘুরছে তখনি মাওয়া ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে শুরু করে দিলো……

হৃদয় ইতিকে নামিয়ে মাওয়ার কাছে গিয়ে বসলো। মাওয়া কে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকলো……

—” এত সুন্দর মেয়েকে রেখে কিভাবে থাকতে পারে কোনো বাবা? একটুও কষ্ট হয় না তার? কি নিষ্পাপ মুখ দেখেই তো আদর করতে মন চায়। আর নাহিদ ভাইয়া কি না এখনো তার বাচ্চাকে দেখলো না। কি পাষাণ মন তার।”

—” ওই খারাপ লোকের কথা বাদ দেও। আমিও তো ওই লোকটার ভালো কথায় নিজেকে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা শেষ করে দিয়েছিলাম। তুমি না থাকলে তো আমিও মানহা আপুর মত ওই লোকটাকে বিয়ে করে নিজের পুরো জীবন শেষ করে দিতাম।”

হৃদয় ইতি মাওয়াকে আদর করছে। ইতি মাওয়ার জন্য খাবার বানিয়ে মাওয়া কে খাওয়াতে লাগলো……..

।।

।।

।।

মানহা রিসোর্টের সুইমিং পুলের ধারে বসে আছে। হৃদয় রুমে ঢুকার কারণে সে আর যায়নি রুমে। ও বুঝতে পেরেছে রুমে ইতি আছে ওদের বিরক্ত করা ঠিক না। মাওয়াকে ওরা দেখে রাখতে পারবে। হৃদয় যখন ওদের রুম থেকে বের হয়েছিল তখন আরিয়ান এসে দরজা লক করার সময় মানহা আরিয়ানকে দেখতে পায়। মানহা তখনি বুঝতে পেরেছে সোনালী রুমের ভিতর। ওদের বিরক্ত করা ঠিক না তাই একা একা সুইমিং পুলের ধারে বসে আছে সে……..

—-” এক্সকিউজ মী!”

মানহা পিছনে তাকিয়ে একজনকে দেখে চমকে গিয়ে বললো…….

—-” তুমি ?”

চলবে……

বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।