#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_২৪
অন্যদিকে আরিয়ান শাওয়ার নিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলো। সোনালী আরিয়ানকে দেখে ভ্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছে…..
—” আমি জানি আমি সুন্দর এইভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে?”
আরিয়ান জাস্ট তোয়ালে পরে আছে। ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
—” সুন্দর না ছাই। আপনার লজ্জা করে না একটা মেয়ের সামনে এইভাবে অর্ধেক জামা কাপড় পড়ে আসতে।”
—” শুনো আমি পাশের বাড়ির কোনো মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি না আমি আমার বিয়ে করা বউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি ওকে।”
—” বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই আমি কোনোদিন নিলজ্য মানুষ দেখেনি শুধু মাত্র লেখক আরিয়ানকে ছাড়া।”
—” অপমান করছো নাকি সুনাম করছো?”
—” আপনার মতো মানুষের সুনাম তাও আবার আমি কিভাবে ভাবলেন আপনি?”
—” কেনো ভাবলে কি আমি ফাস টাকা পাবো?”
—” প্লিজ দয়া করে ওই লাল মুরগির কথা বলবেন না। ওইটার নাম শুনলে আমার গা জ্বলে।”
—” তাহলে তো আরো বেশি করে বলতে হবে।”
—” আমি যাই বরং।”
—” কেনো?”
—” আমার লজ্জা করছে।”
—” লজ্জা নারীর ভূষণ বাট এখন আপাতত আমি লজ্জার কিছু দেখছি বলে মনে হচ্ছে না!”
—” আপনার লজ্জা নাই সেটা খুব ভালোই বুঝতে পারছি। যদি থাকতো তাহলে আমার সামনে এইভাবে আসতে পারতেন না।”
—” আরিয়ান পারে না এমন কোনো কাজ আছে?”
—” আপনি সব পারেন?”
—” অফকোর্স।”
—” তাহলে প্লিজ দয়া করে একটা ডিম পারুন। আপনি যদি এক বছর ধরে ডিম পারেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আমরা বড়লোক হয়ে যাবো।”
—” কথা খুব ভালোই শিখেছো।”
—” কেনো বড় যেহেতু হয়েছি কথা ঠিকই বলবোউউউউউ…..!”
সোনালী আর কিছু বলতে পারলো না। আরিয়ান সোনালীর ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো। সোনালীর চিন্তার বাহিরে এমন একটা কাজ হবে সোনালী স্বপ্নেও ভাবতে পারে নাই। প্রায় কয়েক মিনিট পর…..
—” ওয়াক থু থু কি করছেন ছিঃ ওয়াক।”
—” ওই তুমি বমি করছো কেনো ? নাকি আমি বাবা হতে যাচ্ছি?”
আরিয়ান চোখ টিপ দিয়ে বললো।
—” অসভ্য ছেলে কোথাকার। লজ্জা শরম সব জলে ভাসিয়ে দিয়েছেন নাকি?”
—” তুমি কি লিপস্টিক ব্যবহার করো?”
—” আমি লিপস্টিক দেই না।”
—” মিষ্টি কেনো লাগলো?”
—” সকালে মিষ্টি খেয়ে এসেছি তাই হয়তো লেগেছে….!”
সোনালী নিজের মুখে নিজেই হাত দিলো। আরিয়ান সোনালীর মুখ দেখে হাসতে থাকে।সোনালী বুঝতে পারলো আরিয়ান তাকে লজ্জা দেওয়ার জন্যই এমন কথা বলেছে। কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো…..
—” এইভাবে তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। এরপর আরো যদি বেশি বকবক করো তাহলে কয়েক মিনিটের বদল অনেক মিনিট হবে বলে দিলাম।”
সোনালী আরিয়ানের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে দৌড় দিলো। আরিয়ান সোনালীর দৌড় দেখে আবারো হাসিতে মগ্ন হতে থাকলো…….
।।
।।
।।
—” আজ তানিয়া আসবে। এইদিকে আমি আসামির মত এক জায়গায় বসে থাকি। একটু ঘুরতে পর্যন্ত যেতে পারি না। কতদিন হলো গার্লফ্রেন্ড ছাড়া আমি। একটা মানুষ কি এইভাবে বাঁচতে পারে? নাহ আজ বাহিরে না গেলে নয়। আরিয়ান সিলেট আসবে না আমি পাক্কা সিউর।”
নাহিদ এতক্ষণ হাতে গড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজেই কথা বলছিল। ও সিলেট আসা পর্যন্ত এখনও রুমের বাহিরে যাইনি। ওয়েটারকে বলে সব যাবতীয় কাজ রুমে বসেই করেছে সে। কিন্তু এখন আর রুম বন্ধী হয়ে থাকতে পারছে না সে। রুম থেকে বের হয়ে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করছিলো সে……
—” কত ভালো লাগছে। রুমের ভিতর এইভাবে কি একা থাকা যায়।”
নাহিদ কথা বলতে বলতে এদিক ওদিক দেখছে তখনি সোনালীকে দেখে চমকে গেলো……
—” ও মাই গড সোনালী এইখানে কেনো? তাহলে কি আরিয়ানও এইখানে? একটু পর তানিয়ার ফ্লাইট এক্ষুনি খবর দিতে হবে।”
নাহিদ তাড়াহুড়া করে আবারো নিজের রুমে চলে গেল যেনো সোনালী তাকে দেখতে না পায়। তানিয়াকে ফোন দিলো….
—” আমি আসছি বলছিনা। এত ফোন দিচ্ছিস কেনো?”
—” আরিয়ান মনে হয় সিলেটে এসেছে।”
—” হোয়াট?”
—” সোনালীকে মাত্র দেখলাম। সোনালীকে একা আসতে দিবে না আরিয়ান তাহলে আরিয়ানও এসেছে।”
—” ও মাই গড। এমন বোকার মত কাজ কিভাবে করিস তুই? আগেই বলেছি ও আরিয়ান। তোকে খুঁজে বের করা আরিয়ানের কাছে কোনো ব্যাপার না। তুই অন্য কোনো জায়গা ফেলি না এই সিলেট ছাড়া?”
—” অভ্যাসের কারণে চলে এসেছি। এখন কি আমি জায়গা চেঞ্জ করবো?”
—” পাগল তুই? আরিয়ান যেহেতু ওইখানে গিয়েছে তারমানে সব ব্যবস্থা করেই গিয়েছে। শুন আমি কিন্তু ইন্ডিয়া থেকে এয়ারপোর্ট গিয়ে সোজা সিলেট যাবো। তুই কিন্তু এক বারের জন্যও রুম থেকে বের হবি না ওকে।”
—-” ওকে।”
তানিয়া ফোন কেটে দিয়ে দেওয়ালে হাত বারী দেয়।
—” সব সময় কোনো না কোনো সমস্যা হয়েই যাচ্ছে। দোষ আমারই আমি যে কেনো আরিয়ানকে একা রেখে ইন্ডিয়া এসে পড়ে রয়েছি। নিজের প্রতিই এখন খুব রাগ হচ্ছে আমার। সোনালী মেয়েটাকে তো খুন করবো আমি।”
তানিয়া রাগে ফুঁসতে থাকে। নাহিদ ভয়ে রুম থেকে বের হয় না।
।।
।।
।।
।।
হৃদয় আয়ানকে দেখে অবাক। আয়ানকে জড়িয়ে ধরে হৃদয় বললো….
—” ভাইয়া তুমি এইখানে ? আর কতদিন পর দেখা। ওইদিনের পর থেকে তো তোমার সাথে যোগাযোগ নাই বললেই চলে।”
—” আরিয়ান যোগাযোগ রাখে নাই তার জন্য আমাদের যোগাযোগ নেই।”
—” ব্রো তো তোমার কথা আমাকে অনেক বলেছে তাহলে কেনো সে যোগাযোগ রাখবে না?”
—” সেইটা তোর ব্রো ই বলতে পারবে।”
ইতির সাথে আয়ানের পরিচয় করিয়ে দিলো মানহা। মানহা ও আরিয়ান হৃদয়কে আগেই বলে রেখেছিলো যে, মানহা কে যে তারা আগে চিনতো সেই কথা যেনো ইতি বা সোনালী কেউ জানতে না পারে তাই হৃদয় কিছু বলেনি। আরিয়ান কোনো একটা দরকারি কাজে বের হয়ে গেছে। আয়ানের সাথে সোনালীরও পরিচয় হলো
……
—” আসসালামু আলাইকুম ভাবী। কেমন আছেন?”
—” আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। আপনি?”
—” এইতো ভালো আছি।”
আয়ান সোনালীকে ভাবী আবার আপনি করে ডাকাতে সোনালীর লজ্জা লাগলো। এত্ত বড় ছেলে কিনা তাকে আপনি আপনি করছে। কিন্তু সোনালী বেশ অবাক হলো মানহার সাথে আয়ানের পরিচয় থাকাতে। কেননা আয়ানের সাথে কথা বলে বুঝলো আয়ান আরিয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তারা একই স্কুল,কলেজ, ভার্সিটি একসাথে পড়েছে তাহলে কিভাবে আয়ানের সাথে মানহার পরিচয়…..
—” একটা প্রশ্ন করবো যদি কিছু না মনে করো আপু?”
—” কি মনে করবো বল তুই।”
—” আয়ান ভাইয়ার সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে আমার জানতে ইচ্ছে করছে খুব।”
সোনালীর প্রশ্ন শুনে ইতিও বলতে লাগলো একই প্রশ্ন। মানহা আয়ানের দিকে তাকিয়ে সোনালীকে বললো….
—” আমরা একই ভার্সিটিতে পড়েছি সেই জন্যই পরিচয়।”
—” তাহলে তো তোমার সাথে লেখক সাহেবেরও পরিচয় থাকার কথা তাই না?”
আয়ান কথা ঘুরানোর জন্য বললো….
—” আমি আর মানহা দুইজন আলাদা ডিপার্টমেন্টে ছিলাম। মানহার সাথে আমার বই পড়া নিয়ে পরিচয়। দুইজন লাইব্রেরিতে এসে বই পড়তে পড়তে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যাই। আমার কথা তো জানেন আমি খুব কম কথা বলি তাই আরিয়ান বা আমার অন্য ফ্রেন্ডের মানহার কথা বা মানহার কথা আমার অন্য ফ্রেন্ডের সাথে বলতাম না তাই ওরা কেউ কারো সাথে পরিচিত হতে পারলো না।”
আয়ানের কথা শুনে মানহা চিন্তা মুক্ত হলো। সোনালী আর কিছু জিজ্ঞাসা না করলেও মনের মাঝে কিছু একটা সন্দেহ করে। কেননা ওরা জানে নাহিদের সাথে মানহার রিলেশন করে বিয়ে হয়েছে । কিন্তু এইখানে কেউ নাহিদের কথাটা বলছে না। মনে সন্দেহ নিয়েও মুখে হাসির রেখা টেনে সবাই একসাথে গল্প করতে লাগলো…..
মাওয়াকে বেশ ভালো লাগলো আয়ানের। মাওয়াকে মাঝে রেখে বেশ মজা করতে লাগলো। হৃদয় তখন বললো…..
—” আমাদের সেই গোমড়া মুখো ভাইয়া আজ এত হাসি খুশি কিভাবে হলো হুম?”
—” তোদের সাথে অনেকদিন পর দেখা হলো তো তাই অনেক খুশি হয়েছি।”
আরিয়ান রুমের দরজায় কড়া দিচ্ছে। হৃদয় গিয়ে দরজা খুললো। আরিয়ান রুমের ভিতর প্রবেশ করে কিছু না দেখেই বললো….
—” তুই কবে থেকে কন্যা রাশি হলি বলবি আমায়? সারাদিন গার্লফ্রেন্ড আর ভাবী পাইলে গল্প করতে বসে পড়িস। ”
—” কেমন আছিস আরু?”
আরিয়ান এতদিন পর আয়ানকে দেখলো প্রথম খুশি হলেও পরবর্তীতে রাগে ঘৃনা তার চোখ ভরপুর। সোনালীর সামনে কিছু বলতে চায় না বলে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো….
—” ভালো রে তুই?”
—” ভালো। এতদিন যোগাযোগ রাখলি না কেনো জানিস তোকে কত ম্যাসেজ, ফোন দিয়েছি পরে ওই নাম্বার অফ। ফেসবুক থেকে তোর অনেক খবর জেনেছি তোর আইডিতে কত ম্যাসেজ কিন্তু সীন পর্যন্ত করতি না সেই জন্যই তো রাগে আর তোর সামনে আসি নাই আমি।”
—” সব ওই ব্যাস্ততার জন্য এমন হয়েছে। ভুলে যা সব।”
–” ওকে।”
—” আমি ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে তোর জন্য ওয়েট করছি কিছু কথা ছিল পার্সোনাল।”
আয়ানকে বলে আরিয়ান চলে যায়। সোনালী তখন মুখ বাঁকা করে বলতে থাকে….
—” তোর সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে পার্সোনাল। বলি কোন মহারাজ ওনি? একটু বন্ধুর সাথে ভালো করে কথা বলতে পারে না নিরামিষ মানুষ কোথাকার। এমনিতেই তো বন্ধুকে ইগনোর করেছে এখন আবার সরি টুকু বললো না। মাঝে মাঝে মন চায় ওনার গল্পের মতো ওনাকে খুন করে দেই।”
সোনালীর এমন বাচ্চামো কথায় সবাই হাসতে থাকে। আয়ান আরিয়ানের রুমে যায়। আরিয়ান দরজা অফ আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে…..
—” আমার সাথে এমন প্রতারণা না করলেও পারতি তুই।”
—” কি করেছি আমি?”
চলবে….
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।