মিথ্যা_অপবাদ পর্ব-২৫

0
2414

#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_২৫

—” আমার সাথে এমন প্রতারণা না করলেও পারতি তুই।”

—” কি করেছি আমি?”

—” তুই নাহিদের সাথে হাত মিলিয়ে মানহাকে নাহিদের হাতে তুলে দিয়েছিস তাই না?”

—” তোকে এইসব বাজে কথা কে বলেছে?”

—” তানু বলেছে। তুই আর নাহিদ আমার সাথে এমন বিশ্বাসঘতকতা কেনো করলি?”

আরিয়ান আয়ানের শার্টের কলার চেপে ধরে। আয়ান আরিয়ানের হাত সরিয়ে আরিয়ানকে বলে…..

—” তুই যে বাচ্চাদের মত কাজ কর্ম করবি আমি কোনোদিন ভাবতেও পারি নাই। আচ্ছা কেউ যদি তোকে বলে, তোর কান ঈগল পাখি নিয়ে গেছে তুই কি তখন নিজের কান আছে নাকি নাই কোনো চিন্তা না করে ঈগল পাখির পিছনে দৌড়াবি?”

—” মানে?”

—” তোর উচিত ছিল সত্যতা যাচাই করা। কিন্তু তুই তানিয়ার কথা শুনে আমায় অবিশ্বাস করলি? এই ছিলো তোর বন্ধুত্ব?”

—” তানু আমায় মিথ্যা কেনো বলবে?”

—” তুই নিজেই খুঁজে বের কর। যেদিন তোর ভুল বুঝতে পারবি সেদিন তুই একজনের আসল মুখোশও জানতে পারবি।”

আয়ান চলে যায়। আরিয়ান তখন ভাবতে থেকে…..

—” তাহলে কি আমার সন্দেহই ঠিক। তানু সব কিছু করছে? প্রমাণ ছাড়া তো কিছু বিশ্বাস করা ঠিক না। কি করতে হবে এখন? পেয়েছি কি করতে হবে আমার।।”

আরিয়ান ফোন নিয়ে কিছুক্ষণ লেখালেখি করলো। আইডিতে পোষ্ট দিলো। পোষ্ট দেওয়ার সাথে সাথে মিনিটে তার হাজারো রিয়েক্ট। সবাই অবাক হচ্ছে রাইটারের নাম দেখে। রাইটার নাম হলো ‘ আরিয়ান সোনালীর যৌথ গল্প’

—” এখন দেখবো তানুর রিয়্যাক্ট কেমন হয় ? ওকে আমার অনেকদিন আগে থেকেই সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে তা কখনো প্রকাশ করি নাই। কিন্তু আজ দেখি কি করে ও। ”

আরিয়ান আধা ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করলো কিন্তু তানিয়ার কোনো খবর নেই। তানিয়ার ফোনে কল দিলো নাম্বার অফ।

সোনালী তো গল্প পড়ে অবাক। ও তো কিছুই লেখেনি তাহলে আরিয়ান কেনো তার নাম দিলো? যাই হোক খুশিতে ওর ড্যান্স করতে ইচ্ছা করছে। কিছুদিন আগে যে মেয়েগুলো ওকে বকা দিচ্ছিল আজ তারাই আপু আপু আপু বলে ম্যাসেজ দিচ্ছে। নিজেকে সেলিব্রিটি মনে হচ্ছে তার……

আয়ান রাগে গজগজ করছে। নিরব জায়গায় বসে ‘ইন এ রিলেশশিপ’ লেখিকা ‘ মোর্শেদা হোসেন রুবি’ আপুর দ্বিতীয় উপন্যাসটি পড়ছে। মানহা মাওয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটছিলো। আয়ানকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে ওর কাছে যায়…..

—” তুমি না সন্ন্যাসী থাকবে তাহলে এই বই পড়ছো কেনো?”

—” কেনো বই পড়লে কি সন্ন্যাসী থাকা যাবে না? আমি তো আগে থেকেই বই প্রেমী তুমি জানো না?”

—” হ্যাঁ জানি বাট তুমি এমন ধরনের বই পড় না।”

—” তুমি কি বইয়ের নাম দেখে এমন বলছো?”

—” হ্যাঁ।”

—” আরেহ বোকা বইয়ের নাম দেখে অনেকে অনেক কিছুই ভাববে কিন্তু বইটা খুব ভালো। তুমি জানো না এই আপু সব সময় ইসলামিক গল্প লিখে ওনার গল্পে কখনই এমন কিছু থাকে না যা মানুষদের খারাপ কিছু শিখাবে।”

—“তাহলে তুমি এই আপুর গল্প পড় তাহলে?”

—” হ্যাঁ। তুমি তো জানোই আমি সব সময় ইসলামিক বিষয়ে অনেক কিছু জানার জন্য fb তে আসি। তখন একজন ছেলের প্রোফাইলে তোমার নামের একটি বই দেখে আমি অবাক। তখন ওই বইয়ের নাম সার্চ দিয়ে আপুর আইডি খুঁজি । আইডি খুঁজে বেশ কিছু গল্প পড়ি। এখন তো আপুর সব গল্পই আমার পছন্দ।”

—” বাহ তাহলে তো আমার মাধ্যমেই তোমার আপুকে চিনা।”

—” তা অবশ্য ঠিক।”

–” দেও তো আমি একটু পড়ি।”

আয়ান মাওয়াকে কোলে নিতে গিয়ে মানহা ভেবেছিলো আয়ান হাত বাড়িয়েছে তাই ও মাওয়াকে ছেড়ে দেয়। আয়ান মাওয়াকে ধরার আগেই পরে যেতে নিলে দুজনেই তাড়াহুড়া করে মাওয়াকে ধরে আর মাথায় বারী খায়…..

—” সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি যে তুমি মাওয়াকে ছেড়ে দিবে। সরি আমি।”

—” সরি তো আমি বলবো। তোমার কোনো দোষ নেই।”

আয়ান মাওয়াকে কোলে নিলো। মানহার হাতে বইটি দিয়ে মানহাকে বললো….

—” ব্যাথা পাওনি তো?”

—” উহু।”

—” ওকে। তুমি পড় আমি মাওয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটছি।”

—” ওকে।”

আয়ান মাওয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটতে থাকে। মানহা বইটা হাতে নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকে। মানহার অবাধ্য চুলগুলো বার বার সামনে এসে মানহার পড়ার বিরক্ত করছে। হাত দিয়ে নিজের চুল সরিয়ে আবারো পড়তে থাকে। আয়ান মানহার দিকে তাকিয়ে এতক্ষণ সব কিছু দেখছিলো। আশে পাশে তাকিয়ে কোনো কিছু না পেয়ে পকেটে রাখা কলমটি বের করে। মাওয়া সবে দাঁড়াতে পারে তাই ওকে দাঁড় করিয়ে মানহার পিছনে দাঁড়িয়ে সব চুল একত্রে বাঁধতে থাকে…..

—” এই কি করছো তুমি?”

—” তোমার প্রবলেম সলভ করছি চুপ থাকো।”

অনেক্ষণ ধরে চুল বাঁধার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার অসফল হচ্ছে। মানহা মুখ চেপে হাসছে কিন্তু কিছু বলছে না।

—” ধ্যাত কি ঝামেলা চুল বাঁধা। তোমরা মেয়েরা যে কিভাবে এত্ত বড় চুল সামলাও আল্লাহ জানে।”

আয়ানের কথায় মানহা এইবার জোরে হাসতে থাকে।

—” দেও আমি চুল বাঁধছি তুমি পারবে না।”

—” আমিই বাঁধবো চুল ওকে।”

বহু কষ্ট পেচিয়ে পেঁচিয়ে মানহার চুল কোপা করে কলম দিয়ে গুজে দিলো।

—” বাহ কি ভালো পদ্ধতি। প্রেম না করেও এত ভালো পদ্ধতি আর চুল বাঁধা শিখলে কিভাবে?”

আয়ান হাসলো উত্তর না দিয়ে মাওয়াকে কোলে নিয়ে একটা বড় ফুল তুলে আনলো। মানহার কোপায় ফুলটা গুজে দিয়ে বললো……

—” এইবার পড়তে থাকো। তোমার চুলগুলো আর বিরক্ত করবে না।”

–” ওকে।”

মানহা বেশ মনোযোগ দিয়ে বইটা পড়তে লাগলো। আয়ান সুযোগ পেলেই তাকিয়ে থাকে মানহার দিকে তখন মাওয়া আয়ানের চুল ধরে টান দেয়……..

—” বেশ দুষ্টু দেখছি আমার মামুনি ।”

মাওয়া খিলখিল করে হাসতে থাকে আর আবারো আয়ানের চুল ধরে টান দেয়। খুব ভালো লাগছে আয়ানের সেও যেনো ছোট বাচ্চা হয়ে গেছে।

।।

।।

।।

—” বাবুউউউউউউউউউউউউ দেখখখখখখখ লেখকককককক ভাইয়াআআআআআআ তোকেএএএএএ কিভাবেএএএএএ ক্রেডিটটটটটটট দিয়েছেএএএএএএ।”

ইতির কথায় হৃদয় আর সোনালীর কানে হাত। হৃদয় বেশ বিরক্তি সুরে বললো…..

—” আমাদের চোখ আছে। আমরা অনেক আগেই দেখেছি এইভাবে ষাঁড়ের মত কে চেঁচাতে বলেছে তোমাকে?”

হৃদয়ের কথায় ইতি সেই লেবেলের রেগে গিয়ে হাতে থাকা ফোনটা ছুড়ে মারে……

—-” আমি ষাঁড়ের মত চিল্লাচ্ছি তাই না? ওকে যাও ব্রেকআপ। তোমার মত হনুমানের সাথে আর কোনো রিলেশন নেই আমার। পঁচা ডিম ছুড়ে মারা উচিত তোমার ওই লিপস্টিক ওয়ালা ঠোঁটে।”

—” আমি মেয়ে না যে লিপস্টিক দিবো। আমার ঠোঁট এমনিতেই লাল সো এমন আজব কথা বলবে না।”

—” একশোবার বলবো,হাজারবার বলবো তোমার কি তাতে? তুমি জানো আমরা লিপস্টিক দিলেও তোমার ঠোঁটের মত লাল হয় না আমাদের ঠোঁট। হাফ লেডিস কোথাকার। ”

—” নাহ কালকেই আমি ঠোঁট সার্জারি করবো । পরে আমার ঠোঁট দেখে হাজারো মেয়ে আমার পিছনে ঘুরবে।”

—” হুহহ হুহহ যাও যাও কে ধরে রেখেছে তোমার।”

অবশেষে মহাবিশ্বের তৃতীয় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। সোনালী আপ্রাণ চেষ্টা করা সত্বেও ওদের ঝগড়া থামাতে পারছে না। হৃদয় ইতি ঝগড়ার জন্য ইতি যে ফোন ছুড়ে মেরেছিল সেইটা তাদের মাথায় নেই। ইতির যখন মনে হলো তখন চুপ করে মুখে হাত দিয়ে রাখলো। হৃদয় ইতির এই চুপ করা দেখে ইতির দিকে তাকিয়ে বললো….

—” দম শেষ হয়ে গেছে বুঝি? আগেই বলেছি হৃদয়ের সাথে লাগতে এসো না ঠিকই তো হেরে গেলে।”

—” তোমার ফোন কই?”

—” তুমিই তো একটু আগে গল্প পড়ার জন্য নিলেএএএএএ…… মানে তুমি যে আমার দিকে একটা ফোন ছুড়ে মারছিলে ওইটা আমার ফোন ছিলো?”

ইতি মাথা দিয়ে হ্যাঁ বললো। হৃদয় রুমের ভিতর ফোন খুঁজতে লাগলো। সোনালী তখন বললো…..

—” পায়ের নিচে তাকাও। এমন ভাবে ঝগড়া করছিলে দেখো ফোনের কি অবস্থা করেছো?”

ফোনের কাঁচ ভেঙ্গে গুড়া হয়ে গেছে। ওরা ঝগড়া করার সময় ফোনের উপরে লাত্থি মারছিল। ইতি তো তার হিল জুতো দিয়ে বার বার ফোনের উপরে দাঁড়িয়েছিল। হৃদয় ইতির দিকে তাকাতেই ইতি ভেনিস হয়ে গেলো। ইতি এমন দৌড় দিলো হৃদয় বুঝতেও পারলো না। বুঝতে পেরে সেও দৌড় দিলো। এইদিকে সোনালী হাসতে হাসতে বিছানার উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে…….

।।

।।

।।

—” আয়ান আমি প্রথম ইউশাকে মেয়ে ভাবছিলাম। আসলেই আমি খুব বোকা কোনটা মেয়ের নাম কোনটা ছেলের নাম তা বুঝতে পারি না।”

—” হাহাহা। শুধু তুমি না অনেকেই ভেবেছে তাবশী আর ইউশা দুই বান্ধবী বা বোন।”

—” হ্যাঁ। কিন্তু আমার একজনকে খুব ভালো লেগেছে?”

–” কাকে?”

—” বারীরা ফুফিকে খুব ভালো লেগেছে।”

—” আমারও।”

—” আচ্ছা চলো কিছু খাওয়া যাক। আরিয়ান তো কোথায় এখনও ঘুরতে নিয়ে গেলো না আমাদের।”

—” জানো তানু আমার নামেও খারাপ কথা বলেছে আরিয়ানকে।”

—” কি বলছো কি তুমি?”

আয়ান সব বললো যা আরিয়ান তাকে বলেছে। মানহা এখন রাগে লাল হয়ে আছে…..

—” ছিঃ তানিয়া এত খারাপ নিজের প্ল্যান সাকসেস করার জন্য বন্ধুদেরও ছাড়লো না। মানলাম আমি তার কিছুদিনের ফ্রেন্ড ছিলাম কিন্তু তুমি তো সেই কত বছরের ফ্রেন্ড তবুও তোমার সাথে এমন করলো। ওকে একটা শাস্তি দেওয়া দরকার।”

—” আমি আরিয়ানকে বলে এসেছি । আমার মনে হয় এখন যা করার আরিয়ান নিজেই করবে। আমিও চাই আরিয়ান নিজেই সব জানুক। আমাদের কাছে শুনলে হয়তো তানিয়ার মিথ্যা কথায় আবারো ভুল বুঝবে তার থেকে ভালো নিজেই সব খুঁজে বের করুক ।”

—” হুম আমিও তাই চাই।”

।।

।।

।।

তানিয়া বাংলাদেশ এসে নতুন সিম কিনে নাহিদকে ফোন দিলো সে বাংলাদেশে পৌঁছে গিয়েছে। রাত বারোটা এখন তার পক্ষে সিলেট যাওয়া সম্ভব নয়। রাতের জন্য একটা রুম বুক করলো সে। বিশ্রাম করে আরিয়ানের আইডিতে যেতেই সে অবাক।

—” এই সোনালী মেয়েটা আমার রাতের ঘুম নষ্ট করে দিয়েছে আমিও তার পুরো লাইফ নষ্ট করে দিবো যেমন মানহারটা করেছি। মানহা আরিয়ান, আরিয়ান মানহা ওয়াও বাংলাদেশ আসতে না আসতেই কি ভালো প্ল্যান চলে আসলো। হাহাহা এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করবো আমি হাহাহা।”

তানিয়া খুব সুন্দর একটা কমেন্ট করলো। আরিয়ান তানিয়ার কমেন্ট দেখে বুঝতে পারছে না তানিয়া কি ভেবে কমেন্ট করেছে।

—” কোথায় তুই?”

আরিয়ানের এমন একটা ম্যাসেজ দেখে চমকে উঠে তানিয়া। তবুও আড়াল থাকার জন্য লিখে…..

—-” ইন্ডিয়া। হটাৎ এই প্রশ্ন কেনো?”

চলবে….

বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।