মিথ্যা_অপবাদ পর্ব-২৬

0
3491

#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_২৬

আরিয়ানের এমন একটা ম্যাসেজ দেখে চমকে উঠে তানিয়া। তবুও আড়াল থাকার জন্য লিখে…..

—-” ইন্ডিয়া। হটাৎ এই প্রশ্ন কেনো?”

—” তোর লোকেশন বলছে তুই বাংলাদেশ আছিস। মিথ্যা বলছিস কেনো? তাছাড়া তোর সিম অফ।”

আরিয়ানের কথায় তানিয়া জিভ কাটে।

—” ইসসসসসস ভুলেই গিয়েছিলাম। কি করবো এখন কি উত্তর দিবো আমি?”

—” কি হলো কিছু বলছিস না কেনো?”

—” হুম বলছি। তোকে আর সোনালীকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য না বলে চলে এসেছি।”

—-” হটাৎ সারপ্রাইজ? কোনো কারণ আছে নাকি?”

—” আরু তোর হটাৎ কি হলো? আমি দেশে এসেছি বলে তুই খুশি হলি না? ওকে যা আমি চলে যাবো। বুঝতে পারিনি যে বিয়ের কথা চললে বেস্ট ফ্রেন্ড তখন বেস্ট ফ্রেন্ড থাকে না।”

—” শুরু হয়ে গেলো ইমোশনাল ব্লেকমেইল?”

—” হিহিহি। আসছি আগামীকাল সিলেট রেডি থাকিস তোরা।”

—” তুই কিভাবে জানলি আমরা সিলেট আছি?”

—” ও মাই গড। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। কি যে বলছি আমি।”

—” ওই কি হলো লেখছিস না কেনো কিছু?”

—” অবাক হচ্ছি যে তোরা সিলেট। আমি তো এমনি সিলেটের কথা বলেছি কিন্তু তোরা যে ওইখানে তা শুনে আমি সারপ্রাইজড হয়ে গেছি।”

—” আচ্ছা বাদ দে। আগামীকাল সকালে রওনা দিয়ে দিস তোর জন্য আলাদা রুম বুক করে রাখছি আমি।”

—” ওকে ডিয়ার উম্মাহ।”

আরিয়ান ফোন অফ করে শুয়ে রইলো। কিছুতেই সে কিছু মিলাতে পারছে না। তানিয়াকে সন্দেহ করা সত্বেও কিছু বলতে পারছে না।

রাত চলে গিয়ে সকাল হলো। সকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা। আরিয়ান তানিয়াকে নিয়ে সোনালী, ইতি, হৃদয় , মানহা ও আয়ানের সামনে নিয়ে যায়। মানহা ও আয়ান তানিয়াকে দেখে অবাক সাথে তানিয়াও…..

—” ওরা এইখানে কেনো আরু?”

মানহা ও আয়ানকে দেখে বললো তানিয়া। সোনালী অবাক হয়ে বললো…..

—” আপনি চিনেন মানহা আপুকে?”

তানিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিয়ান বললো…..

—” এত কথা কেনো বলো? শুনো ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে ইন্ডিয়া থেকে। তানিয়া ও হলো সোনালী আমার হবু স্ত্রী।”

—” শুধু কি হবু স্ত্রী আরিয়ান? সোনালী কিন্তু তোমার রিয়েল স্ত্রী এখন।”

মানহা তানিয়াকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে। তানিয়া মানহার কথা শুনে রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রেখেছে। আয়ানের কাছে অনেক ভালো লাগছে। মাওয়াকে কোলে নিয়ে বললো……

—” জোর করে কিন্তু ভালোবাসা পাওয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। এই যে আমি প্রথম প্রথম মাওয়াকে জোর কোলে নিয়ে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম কিন্তু মাওয়া আমায় ভয় পেয়ে চলে গিয়েছে কিন্তু দেখো এখন মাওয়াই আমার কোলে থাকতে ভীষণ পছন্দ করে। তাই জোর করে কিছু পাওয়া বা আদায় করা কোনো ভালো মানুষের কাজ না।”

মানহা মুচকি হাসছে। তার কারণ আয়ান কি সুন্দরভাবে তানিয়াকে কথা শুনাচ্ছে। মাওয়া প্রথম থেকেই আয়ানের কোলে যেতো কিন্তু এখন কথাগুলো তানিয়াকে অপমান করার জন্য বলছে সে, তা মানহা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে।

—” গাইস আমি খুব ক্লান্ত। আমি বিশ্রাম করে পরে ভালো করে কথা বলবো বায়।”

তানিয়া আয়ানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে যায়। আয়ান মুখ ভেংচি কেটে মাওয়ার সাথে খেলতে থাকে……

তানিয়া রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে হাতে থাকা ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারে…..

—” সবগুলো এক জায়গায়। আয়ানের এত বড় সাহস আমাকে অপমান করা। আয়ানের বাচ্চা তোকে তো আমি এক্ষুনি খুন করবো। মানহার মেয়েকে পেয়ে বড্ড কথা ফুটেছে তোর মুখে তাই না? ওয়েট আমি এসে পড়েছি তোর কথা বলা কিভাবে বন্ধ করতে হয় আমার জানা আছে।”

তানিয়া নাহিদকে ফোন দিলো…..

—-” ওই কোথায় তুই? সেই কখন থেকে ওয়েট করছি তোর জন্য।”

—” চিন্তা করিস না আমি আরিয়ানের সাথে আছি। তুই রুম থেকে বের হবি না যখন আমি বলবো তখন বের হবি ওকে।”

—” ওকে বাট কি করবি এখন তুই?”

—” আমার মনে হয় ওরা কেউ সোনালীকে আরিয়ান আর মানহার ব্যাপারে কিছু বলেনি। আমি এইটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবো। তোর কাছে আরিয়ান আর মানহার একসাথে কোনো পিক আছে?”

—” এত বছরের পিক সিউর বলতে পারছি না।”

—” তুই খুঁজতে থাক যদি পেয়ে যাস আমাকে সেন্ড করিস।”

—” ওকে।”

তানিয়া ফোন কাটে। নাহিদ কিছুক্ষণ ফোনে খুঁজলো কিন্তু কোনো পিক না পেয়ে ওর আইডিতে ঢুকে। কেননা তখন তো তারা অনেক পিক আপলোড দিতো।খুঁজতে খুঁজতে একসময় কয়েকটা পিক পায় কিন্তু সেই পিক গুলোতে ওরা সবাই একসাথে। নাহিদ পিক ক্রপ করে ওদের দুইজনের পিক তানিয়াকে সেন্ড করে…….

—” আমার এত বুদ্ধি যে কই রাখি।মাথা তো নয় যেনো বুদ্ধির গোডাউন। এখন একটু মদ যদি খুঁজে পেতাম আহা।”

নিজের বুদ্ধির নিজেই বাহ বাহ দিতে লাগলো নাহিদ।

তানিয়া পিক গুলো পেয়ে মুখে শয়তানি হাসি হাসলো।

পরেরদিন…..

সবার সাথেই খুব ভালো ব্যবহার করলো তানিয়া। রুমে গিয়ে ফোন হতে নিয়ে একটা ফেক আইডি খুলে সোনালীর কমেন্ট বক্সে
বললো…..

—” আপু আপনার সাথে আমার খুবই জরুরি কিছু কথা আছে। প্লিজ আমার ম্যাসেজটা দেখে রিপ্লাই দিবেন।”

বিশ মিনিট পর সোনালী তার আইডিতে গিয়ে এমন ম্যাসেজ দেখে বললো….

–” জ্বি আপু বলেন?”

—” আমরা কি ইনবক্স এ কথা বলতে পারি?”

—” হুম কেনো নয়?”

তানিয়া ইনবক্সে গিয়ে মানহা ও আরিয়ানের সম্পর্কের কথা একে একে সব বলে দেয়।

—” মিথ্যা কথা বলবেন না। আপু আর লেখক সাহেবের যদি রিলেশন থাকতো তাহলে আপু অন্য জায়গায় কেনো বিয়ে করলো। আমরা জানি যার সাথে আপুর বিয়ে হয়েছে তার সাথেই আপুর রিলেশন ছিলো। তাছাড়া যদি ওদের রিলেশন থাকতো আপু বা লেখক সাহেব নিশ্চয় আমায় বলতো।”

—” আপনি প্রমাণ চান?”

—” হ্যাঁ আছে কোনো প্রমাণ আপনার কাছে?”

—” প্রমাণ ছাড়া আমি কোনো কথা বলি না। দেখুন পিক গুলো।”

সোনালী পিক গুলো দেখে চমকে উঠে।

—” ওদের রিলেশন ছিলো তাহলে আপু বা ওনি ওরা আমাকে লুকাবে কেনো? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনি ফেক আমি বুঝতে পারছি।”

—” ওকে আপনার হবু বরের একজন ফ্রেন্ড গতকাল ইন্ডিয়া থেকে এসেছে তাই না?। ওর সাথে একদম একা গিয়ে কথা বলুন। ও তো আপনাকে মিথ্যা বলবে না তাই না। আর খবরদার ওর সাথে দেখা করার কথা আপনার বোনকে বলবেন না তাহলে দেখবেন ও কথা বলতে দিবে না।”

—-” ওকে আমি একটু পরেই ওনার সাথে কথা বলবো তখন আপনার এইসব মিথ্যা কথার জন্য আপনাকেও শাস্তি দিবো বায়।”

সোনালী ফোন কেটে একা একা বসে আছে। হৃদয় ইতি ঘুরতে গিয়েছে। মানহা আয়ানের সাথে নাকি কি দরকারি কথা বলতে গিয়েছে। আরিয়ান সে তো তার মতোই। কোথায় কখন যায় কখন আসে এক মাত্র সে ছাড়া কেউ জানে না। ইতি হৃদয় তাকে বলেছিলাম যাওয়ার জন্য কিন্তু ও যায়নি।

—” ঘুরতে আসলাম না ছাই। জীবনেও এই লোকের সাথে কোথাও যাবো না। ঘুরাঘুরির নাম করে অত্যাচার করা হচ্ছে। আমি একটু গিয়ে মানহা আপুর কাছে যাই।”

আয়ান ও মানহা কথা বলছে তানিয়াকে নিয়ে……

—” ওই ডাইনি এখন আমার বোনের সংসার নষ্ট করতে এসেছে। কি করবো এখন আমরা?”

—” চিন্তা করো না। সোনালীকে তানিয়ার আশে পাশে বেশি দেওয়া যাবে না। তুমি একলা ছিলে তাই তানিয়া ওর প্ল্যান সাকসেস করতে পেরেছে কিন্তু এখন সোনালীর সাথে তুমি আছো আমি আছি কেউ ওর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”

—” কার ক্ষতি করতে পারবে না ভাইয়া?”

—” সোনালী তুই এইখানে?”

—” একা একা ভালো লাগছিলো না তাই চলে আসলাম। দেখলাম রুমের দরজা খুলা তাই ভিতরে চলে আসলাম। কিন্তু ভাইয়া কি বলছিলো কার ক্ষতি? কিসের ক্ষতি? কে করবে?”

—” তেমন কিছু না। এইসব বাদ দে জানিস না তোর এই ভাইয়া আগে থেকেই মাথা মোটা কি বলতে কি বলে সে নিজেও জানে না অন্যদেরও জানতে দেয় না।”

—” জ্বি ভাবী মানহা ঠিক বলেছ। আপনি চিন্তা করবেন না।”

—” হুম। আচ্ছা আমি একটু তানিয়া আপুর সাথে দেখা করে আসি। কি করছে কে জানে রুমে একা একা।”

সোনালী যেতে নিলেই মানহা সোনালীর হাত চেপে ধরে…..

—” ওই মেয়ের আশে পাশে একদম যাবি না।?”

—” কেনো?”

—” আমি বলছি তাই যাবি না। ও ভালো না।”

—” তোমার সাথে তো ওর পরিচয় নেই তাহলে জানলে কিভাবে ও ভালো না?”

মানহা আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ান তখন বললো….

—” আমি বলেছি। কজ তানিয়া কিন্তু আমার ফ্রেন্ড ছিল। ওর সব কথাই জানি আমি । আমিই মানহাকে তানিয়ার কথা বলেছি।”

—” হুম।”

সোনালীর কাছে সন্দেহ যেনো আরো গাঢ় হলো।

—” সোনালী তুই মাওয়াকে নিয়ে হাঁটতে থাক ভালো লাগবে।”

—” ওকে।”

সোনালী মাওয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটতে থাকে। সোনালী যাওয়ার পর মানহা খুব জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে…..

—” একটুর জন্য ধরা খাই নি। সরি আয়ান আমার জন্য তোমাকে মিথ্যা বলতে হচ্ছে।”

—” ভালোর জন্য মিথ্যা কথা বলা একটা কেনো হাজার বার বলবো। আর প্লিজ কথায় কথায় সরি বলবে না আমার সামনে ওকে।”

—” ওকে।”

।।

।।

।।

সোনালী হাঁটছে কিন্তু মনে তার প্রশ্ন। তানিয়ার রুমের সামনে দিয়ে যেতে নিলেই তানিয়ার রুম দেখে দাঁড়িয়ে যায় ও…..

—” কিছু তো ব্যাপার আছেই। আমাকে জানতে হবে সব। সরি আপু তোমার কথা রাখতে না পারার জন্য।”

সোনালী তানিয়ার রুমের দরজায় দাড়িয়ে বেল বাজায়। তানিয়া তাড়াতাড়ি দরজা খুলে অবাক হওয়ার ভান করলো….

—” ওমা তুমি এইখানে? কিছু বলবে?”

—” আপু আপনার সাথে কিছু কথা আছে।”

—” হ্যাঁ ভিতরে আসো।”

সোনালী মাওয়াকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে। তানিয়া দরজা বন্ধ করে মাওয়াকে দেখিয়ে বলে….

— মানহার মেয়ে কিন্তু মানহার মতই হয়েছে । নাহিদের কিছুই পায়নি ও।”

—” আপনি চিনেন ওদের?”

—” কেনো চিনবো না। এক সময় তো আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। আয়ানের মাধ্যমেই আমাদের পরিচয় হয়। সেই থেকে তো আমরা ফ্রেন্ড ছিলাম তবে মাঝে একটা ঝড় আসে তার জন্য এখন কেউ কারো সাথে যোগাযোগ রাখা হয় না।”

সোনালী যেনো এখন ১০০০ ভল্টের শক খায়।

—” কি হয়েছে ছিলো আপনাদের মাঝে?”

—” কেনো তুমি জানো না?”

—” উহু।”

—” মানে আরিয়ান বা মানহা কিছু বলে নাই তোমাকে?”

তানিয়া অবাক হওয়ার ভাব করলো। সোনালী মাথা নাড়িয়ে না করলো……

—” তোমাকে বলা কি ঠিক হবে তাহলে?”

—” প্লিজ আপু বলুন প্লিজ প্লিজ।”

—” আরিয়ান আর মানহার তো রিলেশন ছিলো। ভার্সিটিতে তো সবাই জানতো তাদের প্রেমের কথা। কিন্তু মাঝ পথে মানহা নাহিদের সাথে রিলেশন করে ওদের রিলেশন ভেঙ্গে যায়। কিছুদিন আগে শুনলাম আরিয়ান নাকি বিয়ে করছে তোমাকে। খুশি হয়েছিলাম আমি কিন্তু পরে যখন সব জানতে পারলাম তাই তো দেরি না করে চলে আসলাম তোমাকে সব বলতে।”

—” কি জেনেছেন আপনি?”

সোনালী গলা ধরে গিয়েছে। বোনের কাছ থেকে এমন কিছুই সে আশা করেনি।

—” আরিয়ান তোমাকে না মানহাকে বিয়ে করতে সিলেট এসেছে। দেখো ওর ফ্রেন্ড আয়ানকেও নিয়ে এসেছে।মানহা আর আয়ান প্ল্যান করছে তোমাকে যদি বাঁচিয়ে রাখে তাহলে তুমি আবারো আরিয়ান আর মানহার জীবনে প্রবলেম করতে পারো। তুমি তো এখন আরিয়ানের বিয়ে করা বউ এইটা নিয়ে ওরা প্ল্যান করছে তোমাকে কিভাবে সরাবে। তোমাকে বাঁচানোর জন্যই আমি এসেছি তাই ওরা আমায় তোমার আশে পাশে থাকতে বারণ করেছে। দেখো বোন হয়ে কিভাবে বোনকে হত্যা করবে সেই প্ল্যান করছে ওরা।”

সোনালী কেঁদে ওঠে। তানিয়া মুখের কোনায় হাসি রেখে আবারো বলতে থাকে…..

—” আরিয়ান কিন্তু তোমাকে মারার প্ল্যান জানে না। আরিয়ান মানহাকে এইখানে এনেছে বিয়ে করার জন্য আর তোমাকে সরি বলবে কিন্তু মানহা তোমাকে বাঁচতে দিবে না কেননা তোমার জন্যই নাকি ওর সুখের সংসারে আগুন লেগেছে। তোমার জন্যই নাকি মাওয়া বাবা ছাড়া বড় হচ্ছে সেই জন্যই ও তোমার আশে পাশে থাকে যেনো তোমার ক্ষতি ও করতে পারে।”

—” আপু আমার সাথে এমন করবে আমি তো বিশ্বাসেই করতে পারছি না। এই জন্যইতো আপু আমাদের বাসায় আগে আসতো না কিন্তু আমার বিয়ের কথা শুনে চলে এসেছে এমনকি থাকার জন্যও। কোথায় ঘুরার কথা বললে আপুকে নেওয়া সম্ভব হতো না কিন্তু এইখানে আসার কথা বলাতে আপু রাজি হয়ে গেছে। আমাকে মারার জন্য এত প্ল্যান না করলেও পারতো আপু। ও যদি বলতো লেখক সাহেবকে ও ভালোবাসে আমি ওদের জীবন থেকে চলে আসতাম। তাই বলে ও এমন করবে।ওকে আমি নিজের বড় বোনের থেকে কম কিছু ভাবিনি।”

—” কান্না করো না। তোমার এই বিশ্বাসের সুযোগ তো ওরা নিয়েছে। তুমি মাওয়াকে আমার কাছে দিয়ে যাও ওদের সাথে মোকাবেলা করো। তোমার হাতে এখনও সময় আছে।”

–” নাহ মাওয়া আমার কাছেই থাকুক। ও তো ভুল কিছু করে নাই। শিশু ও।”

—” আরেহ তুমি ভুল ভাবছো ওরা কিন্তু মাওয়াকেও হত্যা করতে চায় কারণ ওরা ওদের লাইফে কোনো আবর্জনা চায় না। তুমি মাওয়াকে আমার কাছে দিয়ে যাও। আমি জানি তুমি মাওয়াকে খুব ভালোবাসো।”

—” ছিঃ আপু মাওয়াকেও মারতে চায়। মা হয়ে কিভাবে? এখন ওকে আপু বলতেও লজ্জা করছে আমার। ওকে আপু আপনি ওর খেয়াল রাখবেন আমি ওদের জবাব দিয়ে এসে মাওয়াকে নিয়ে চলে যাবো আর কোনোদিন ওদের সামনে যাবো না।”

—” হুম।”

সোনালী একা চলে যায় মাওয়াকে রেখে। তানিয়া আগে থেকেই নাহিদকে বলে গাড়ি এনে রেখেছে। সোনালী রুম থেকে বেরিয়ে পড়তেই ও মাওয়াকে নিয়ে বের হয়ে যায়।

—” আমি জানি আরিয়ান আমার সব কথা জেনে গিয়েছে। ও কোনোদিন আমায় বিয়ে করবে না। সোনালী ও মানহার জন্য আমার পুরো লাইফ শেষ। মাওয়াকে নিয়ে যাওয়ার কারণ হলো, আয়ানের বড় বড় কথার জবাব, মানহার কলিজা ছিড়ে নেওয়া, দুইজনের মধ্যে ঝগড়া, সোনালী যতদিন বেঁচে থাকবে মনে কষ্ট নিয়েই বেঁচে থাকবে, আরিয়ান সোনালীকে কোনোদিন বিয়ে করবে না যে মেয়ে বোনকে অবিশ্বাস করে তার সন্তান অন্য জনের হাতে তুলে দেয় সে মেয়েকে আরিয়ান কোনোদিন বিশ্বাস করবে না। হাহাহা ।”

—” এই আমার মেয়ে কিন্তু দেখতে খুব কিউট একটু খুলে দে আমার।”

—” এত মেয়ে মেয়ে না করে ড্রাইভ কর। আরিয়ান চলে আসতে পারে। আর তোর জন্যই আরিয়ান সব জেনে গেছে। তোকে কে বলেছে মদ খেয়ে ওই মেয়েকে সব বলে দেওয়া।”

—” আমি কি জানি আরিয়ান ওই মেয়েকে ভাড়া করে এনেছে আমি তো জাস্ট একটু….!”

—-” চুপ একদম চুপ।”

আরিয়ান একজন সুন্দরী মেয়ে এনে ক্লাবে পাঠিয়ে দেয়। আরিয়ানের লোকেরা নাহিদকে দেখেছে। তাই সেইদিন টাকা দিয়ে ওই হোটেলের ওয়েটারকে দিয়ে রাতে নাহিদকে ক্লাবে পাঠায়। আরিয়ান জানে নাহিদের সামনে মদ আর সুন্দরী মেয়ের কথা বললে ও গলে যায়। প্রচুর মদ খাওয়ানোর পর সব স্বীকার করে নাহিদ। আরিয়ান তখন ওইখানে না থাকায় ফোনে সব রেকর্ড করে মেয়েটি। নাহিদকে তখন একটা রুমে বন্ধ করে দেওয়া হয় আরিয়ান না আসা পর্যন্ত। নাহিদের যখন জ্ঞান ফিরে সব মনে হয় তখন তানিয়াকে ফোন দিয়ে সব বলে। তানিয়া তখন ওর রুম থেকে চুপি চুপি বের হয়ে ওই ওয়েটারকে আরো টাকা দিয়ে নাহিদকে রুম থেকে বের করে নিরাপদ জায়গায় রাখে। সব কিছু ঘটে তানিয়া যেদিন সিলেট আসে সেই দিন রাতে অর্থাৎ গতকাল। আরিয়ান সব জানা সত্বেও তানিয়ার সামনে কিছু বলেনি। তানিয়া যেনো পালাতে না পারে সেই জন্যই আরিয়ান তানিয়ার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে। তানিয়া জানে আরিয়ান কি করবে তাদের দুইজনের সাথে। কথায় আছে না ঝড় শুরু হওয়ার আগে পরিবেশ একদম শান্ত থাকে ঠিক তেমনি আরিয়ান যখন তার প্রতিশোধ নিবে তার আগে সব কিছু শান্ত রাখে…….

—” আরিয়ান তুই তানিয়াকে কাচা খেলোয়াড় কিভাবে ভাবলি? তোর থেকে কিন্তু আমিও কম যাই না হাহাহা।”

।।

।।

।।

—” ঠাসসসসস। তোর আমার উপর রাগ তার জন্য তুই আমার মেয়েকে ওই ডাইনির হাতে কেনো দিয়ে আসলি। আয়ান প্লিজ তাড়াতাড়ি চলো।”

আয়ান মানহা দৌড়ে তানিয়ার রুমের কাছে গিয়ে দেখে বাইরে থেকে রুম অফ…..

—” আমার মেয়েকে না পেলে তোকে আমি ছাড়বো না সোনালী।”

চলবে……

বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।