মিথ্যা_অপবাদ পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0
3973

#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_২৭_এবং_শেষ_পর্ব

—” আমার মেয়েকে না পেলে তোকে আমি ছাড়বো না সোনালী।”

আরিয়ান যখন সব কিছু জানলো রাগে তার চোখ লাল হয়ে গেলো। যে ওয়েটারকে দিয়ে তানিয়া এমন করেছে তাকে মেরে রক্তাক্ত করে পুলিশের কাছে দিয়ে আসলো…..

—” সোনালী তুই যে এমন বোকার মত কাজ করবি কোনোদিন ভাবতে পারেনি। তুই কি না মাওয়াকে ওই খারাপ মেয়ের হাতে দিয়ে আসলি ছিঃ সোনালী।”

—” আমি বুঝতে পারি নি ইতি। তানিয়া আপু যে এতটা খারাপ। ওই তো আমাকে মানহা আপু , আয়ান ভাইয়া আর লেখক সাহেবের নামে মিথ্যা কথা বলে আমাকে রাগিয়ে দিয়েছে। আমি কিছু বুঝার আগেই ও মাওয়াকে নিয়ে চলে গেছে।”

মানহা পাগলের মতো আচরণ করছে। মেয়ের চিন্তায় বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। আয়ান তাকে সান্তনা দিচ্ছে…..

—” তানিয়া যদি আমার মেয়েকে মেরে ফেলে তাহলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো। সোনালী তুই কি-না ওই একদিনের পরিচয় হওয়া মেয়ের কথায় তোর বোনকে অবিশ্বাস করলি। তোর জন্য আমি কি-না করেছি বল তুই । আর তুই আমাকে এইভাবে অবিশ্বাস করলি।”

আরিয়ান সোনালীর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে মানহাকে বললো…..

—” তুমি চিন্তা করো না তোমার মেয়েকে আমি খুঁজে আনবো। ওরা সিলেট থেকে বের হতে পারবে না আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি। দোষ কিন্তু আমারই আমি সব কিছু জানা সত্বেও ওদের এখনও বাঁচিয়ে রেখেছি। আমার ওদের সাথে সাথেই খুন করা উচিৎ ছিল।”

সোনালী নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাচ্ছে সবার কাছে বিশেষ করে মানহার কাছে…..

—” আপু প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমি কিন্তু মাওয়াকে ওর হাতে দিতে চাই নি ও আমায় ভুল বুঝিয়ে মাওয়াকে নিয়ে গেছে। প্লিজ আপু ক্ষমা করো আমায়।”

—” ভুল তোর না আমার উচিত ছিল তোকে আগে থেকেই সব বলে দেওয়া। আমি সব বলিনি কজ তোর চোখে আমি আরিয়ানের জন্য ভালোবাসা দেখেছি আমি চাই না তুই আমার কথা কষ্ট পাস তাই তোকে আমি কিছু বলেনি।”

।।

।।

।।

—” নাহিদ তোকে যে আমি বিষ আনতে বলেছিলাম এনেছিস তুই?”

—” নাহ।”

—” নাহিদ আমি কিন্তু এখন ফাইযলামি মুডে নাই দে বলছি।”

—” আমার মেয়েটাকে খুন করিস না তুই। আমি খারাপ জানি আমি কিন্তু আমার মেয়েটা তো কোনো দোষ করে নাই ছেড়ে দে ওকে। আমি ওকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। তুই তো মানহা সোনালী ওদের কষ্ট দিতে চাচ্ছিস তা কিন্তু তারা পাবে। বাবা হই আমি ওর প্লিজ ছেড়ে দে ওকে।”

—” বাহ এতদিন কই ছিলো তোর মেয়ে? একবারের জন্যও তো খুঁজ নিস নি তাহলে এখন দরদ দেখাচ্ছিস কেনো?”

—” আমি কোনো ভালোবাসা কি বুঝি নি। জানিস আমার মেয়েটাকে যখন খুলে নিয়েছি ও যখন তোকে ভয় পেয়ে আমার শার্ট ধরে রেখে আমার বুকে মাথা রেখেছে কেমন যেনো খুব শান্তি লাগছে । এত শান্তি আমি কোথাও পাইনি। বাবা যতই খারাপ হোক সন্তানের ক্ষতি সে করতে পারবে না।”

—” ওই তোর এইসব আজে বাজে কথা বলা বন্ধ কর। এক্ষুনি এই মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করবো।”

তানিয়া মাওয়ার গলা টিপতে যায়। নাহিদ তানিয়া বাঁধা দেয়।

—” ঠাস…..তোকে বলেছি তুই আমার মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাক। আমার মেয়ের কিছু হতে দিবো না আমি।”

তানিয়া আর নাহিদের মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি হলো।

।।

।।

।।

।।

আরিয়ানের ফোনে কল আসলো।

—” কোথায় ওরা? মাওয়া কেমন আছে?”

—” স্যার, নাহিদ নামের লোকটি মারা গেছেন।”

—” হোয়াট? কিভাবে মারা গেছে ও?”

—” স্যার, তানিয়া বলে মেয়েটি নাহিদ নামের লোকটিকে কালা পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিয়েছে। আমার জানা মতে, ওনি এখন আর বেঁচে নেই।”

—” তানিয়া কোথায়?”

—” ওনাকে আমরা আটকে রেখেছি।”

—” আর বাচ্চাটি?”

—” বাচ্চাটি আমাদের কাছেই আছে। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে বাচ্চাটিকে খুব মেরেছে এই খারাপ মহিলা।”

—” আমরা আসছি। তানিয়াকে আটকে রেখো।”

—” ওকে স্যার।”

ফোন রেখে আরিয়ান মানহার দিকে তাকিয়ে বলে…..

—” মাওয়া সুস্থ্য আছে। সবাই চলো।”

—” কোথায়ও ?”

আরিয়ান প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বের হয়ে যায়। ওর পিছনে সবাই চলে যায়……

কালাপাহাড় সিলেট তথা দেশের এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়া। উচ্চতা প্রায় ১১০০ ফিট। স্থানীয়রা এই পাহাড়কে বলে ‘লংলা পাহাড়’। এর এক পাশে কুলাউড়া, অন্য পাশে জুড়ি উপজেলা ও ভারত সীমান্ত দিয়ে ঘেরা এই পাহাড় বেশ দুর্গমও বটে।

চা বাগানের রাস্তা শেষে পাহাড়ি পথ ধরে বেগুনছড়া পুঞ্জির উদ্দেশে তারা যেতে লাগলো।

ঘণ্টাখানেক পর অবশেষে ওরা এসে পৌঁছলাম কালা পাহাড়ের চূড়ায়। তানিয়াকে কয়েকজন ধরে রেখেছে। মিস্টার রাজীবের কোলে মাওয়া ঘুমিয়ে আছে। মানহা দৌঁড়ে গিয়ে মাওয়াকে কোলে নিয়ে চুমু দিতে থাকে। সোনালী গিয়ে তানিয়াকে কষে একটা থাপ্পড় মারে।

—” ছিঃ তোমার মত নিচ মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। তোমাকে তো মন চাচ্ছে এক্ষুনি এই পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই। ”

—” তুমি এইদিকে আসো সোনালী। ওর ব্যাবস্থা আমি করবো।”

আরিয়ানের কথায় সোনালী চলে আসে। আরিয়ান তানিয়ার সামনে যায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আচমকাই চড় বসিয়ে দেয় তানিয়ার গালে……

—-” তোকে এতদিন আমি নিজের কাছের একজন ভেবে এসেছি আর তুই কি-না আমার পিছনেই ছুরি দিচ্ছিস। আমার সব কিছু কেরে নিতে চেয়েছিস তুই। সব কিছু জানা সত্বেও তোকে কিছু বলেনি আমি কিন্তু কি হলো তুই তো তোর ওই নাগিন রূপ কখনো ছাড়তে পারবি না সেই জন্যই সুযোগটি নিতে চাইলি না।”

ইতি আরিয়ানের কথা মাঝে বলে উঠলো…..

—” লেখক দুলাভাই এই মেয়েটা কিন্তু প্যাকাটি, কটকটি,রাণী মনি মল্লিকা, নাগিনের শীর্ষা, ইয়ামিনি সবাইকে হার মানাবে। খল নায়িকা হিসেবে পুরস্কার কিন্তু ওই পাবে আমি সিউর।”

আরিয়ান রাগী চোখে ইতির দিকে তাকিয়ে থাকে। হৃদয় ইতির মুখ চেপে ধরে বলে……

—” অফ যাও তানাহলে পরের থাপ্পড় কিন্তু তোমার গালে এসে পড়বে।”

—-” তুমি আমাকে মারবে?”

—” উহু। তোমার লেখক দুলাভাই মারবে।”

ভয় পেয়ে ইতি মুখে আঙ্গুল দিয়ে রাখে।

—” তোর গায়ে কোনোদিন আমি হাত তুলতে পারতাম না। প্রথম তোকে এইভাবেই পুলিশের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই এই ছোট বাচ্চার সাথে যা করতে চেয়েছিস তোকে তো কোনো ভাবেই ক্ষমা করা যায় না।”

আরিয়ান আরো কয়কটা থাপ্পড় মারে তানিয়াকে। থাপ্পড় খেয়ে তানিয়া পরে যায় আরিয়ান আবারো তাকে উঠিয়ে মারতে থাকে।

মানহা আরিয়ানের হাত ধরে ফেললো…..

—-” ওকে ছেড়ে দাও । পুলিশ যা করার ওকে আর ওর বন্ধুকে করবে।”

—” নাহিদ মারা গেছে মানহা।”

মানহা যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। যত যাই হোক দুই বছর সংসার করেছে ও। ওর মেয়ের বাবা ছিলো ও। স্বামী যতই খারাপ হোক না কোনো স্ত্রী তার স্বামীর মৃত্যু চায় না……

—- নাহিদ তো ওর সব খারাপ কাজের সঙ্গী ছিলো তাহলে ওকে কেনো খুন করলো ও?”

আরিয়ান তানিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো

—” বল কেনো নাহিদকে মেরেছিস?”

—” আমি নিজ ইচ্ছাতে মারতে চাইনি। কিন্তু ও আমার সাথে বেইমানি করে। নাহিদ ওর মেয়েকে বাঁচাতে চেয়েছিলো তার জন্য ওকে আমি মেরে ফেলি। মাওয়াকে আমার কোল থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলো নাহিদ তাই ওকে সরাতে গিয়ে ধাক্কা মারি আমি কিন্তু আমি খেয়াল করিনি ও একদম পাহাড়ের কিনারায় ছিলো। ও তাল সামলাতে না পেরে পরে যায়।”

মানহা মাওয়াকে কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকে। আয়ান মানহার কাছে আসে…..

—-” এতদিন পর ও ওর সন্তানের মর্ম বুঝেছিল কিন্তু ওর পাপ এতই বেশি ছিল তাই প্রকৃতি ওর বিচার করেছে। হুম কষ্ট হচ্ছে আমার নাহিদের জন্য। কিন্তু এই বলেই মনকে সান্তনা দেওয়া উচিত নাহিদ ওর পাপের সাজা পেয়েছে।”

পুলিশ আসে তানিয়াকে নিয়ে চলে যায়। তানিয়ার শাস্তি যে মৃত্যুদণ্ড হবে সবাই জানে।

।।

।।

।।

।।

আরিয়ান, আয়ান,হৃদয়,সোনালী,ইতি ও মানহা একত্রে বসে আছে। সবাই চুপচাপ। সোনালী ভয়ে আছে। তবুও কাপা কাপা গলায় বললো……

—“আমি জানি লেখক সাহেব আর আপু দুজনকে দুজন খুব ভালোবাসে তাই আমি চাই ওনার আর আপুর এই ভালোবাসা একটা পবিত্র সম্পর্ক জড়িত হোক।”

সোনালী এমন কথায় মানহা ও আরিয়ান দুজনেই তাকিয়ে আছে সোনালীর দিকে। আয়ান চুপ করে মানহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ান জানতে চাচ্ছে মানহার মতামত।

—” সোনালী তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? আরিয়ান এখন তোর স্বামী। এমন বাজে কথা বলা বন্ধ কর।”

—” নাহ আপু আমি বাজে কথা বলছিনা। তুই কিন্তু লেখক সাহেবের প্রথম ভালোবাসা ছিলি। কোনো একটা #মিথ্যা_অপবাদে তোদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় আমি চাই তোরা আবারো নিজেদের জীবন নতুন করে শুরু কর। চিন্তা করিস না আমি ওনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো যেনো তোদের পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হয়।”

ডিভোর্সের কথা শুনে আরিয়ানের বুক কেঁপে উঠলো। মনে হচ্ছে কেউ তার বুকে হাজার হাজার তীর বিঁধে দিচ্ছে।

—” থাপ্পড় মেরে সব দাঁত ফেলে দিবো যদি আরেকবার ডিভোর্সের কথা বলো তুমি।”

না চাওয়া সত্বেও বলে ফেললো আরিয়ান। কথা বলা শেষে মানহার দিকে তাকালো। মানহার মুখে হাঁসি।।মানহা তখন সোনালীর কাছে গিয়ে সোনালীর হাত দুটি নিজের হাতে চেপে ধরে বললো…….

—” তুই জানিস প্রথম ভালোবাসা যদি শেষ ভালোবাসা না হয় তাহলে ভালোবাসা কি বুঝা যায় না। প্রথম ভালোবাসা অনেকেই বাসে কিন্তু শেষ ভালোবাসা কয়জন বাসে? প্রথম ভালোবাসা আর শেষ ভালোবাসার পার্থক্য কি জানিস?”

সোনালী উত্তর দিলো….

—” উহু।”

মানহা আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ানের চোখে এখনো প্রশ্ন প্রকাশ পাচ্ছে। মাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো…..

—-” প্রথম ভালোবাসা ও শেষ ভালোবাসার সব চেয়ে বড় পার্থক্য হলো, দিন শেষে সব সময় শেষ ভালোবাসা বিজোয়ী হয়। আমার আরিয়ানের ভালোবাসাটা ছিলো ভালোলাগা হতে পারে ভালোবাসাও। কিন্তু সেই ভালোবাসার জোর শক্তি খুব কম ছিল তাই আমরা আলাদা হয়ে গেছি। কিন্তু তোর আর আরিয়ানের ভালোবাসার জোর কিন্তু অনেক তাই বিপদ আসার পরও তোরা আলাদা হতে পারলি না। তোদের ভালোবাসার জোড় আছে বলেই তোরা একসাথে এখনও আছিস। যেদিন আমি আরিয়ানকে ছেড়ে এসেছিলাম ওইদিন আরিয়ানের চোখে অশ্রু ছাড়াও আমি রাগ,ঘৃনা দেখেছিলাম কিন্তু যখন তুই ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছিস ওর চোখে আমি অশ্রু আর ভয় দেখতে পাচ্ছি। ভয়টা হলো তোকে হারানোর ভয় পাগলী। আরিয়ান খুব ভালো । হুম এখন একটু নিরব ও কড়া স্বভাবের মানুষ হয়ে গেছে তুই তোর ভালোবাসা দিয়ে সেটা মেনে নিতে পারবি তোর কষ্ট হবে না বরং খুব ভালো লাগবে তখন। ভালোবাসার মানুষকে এইভাবে হারিয়ে ফেলিস না বোন আমার।”

—” কিন্তু আপু তুমিও তো ওনাকে খুব ভালোবাসো।”

—” দুর পাগলী। আমার ভালোবাসাটা এখন এক তরপা। তাছাড়া আমি আরিয়ানকে না দেখে,ওর সাথে যোগাযোগ না রেখে এতটা বছর থাকতে পেরেছি। একবারও ওর কোনো যোগাযোগ নেই নি এমনকি ওর কথা আবার বেশি মনেও পড়তো না। কিন্তু তোরা দুইজন দুইজনকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারবি না আমি জানি। তাছাড়া এই এত বছরে আমার আরিয়ানের কথা যতবার মনে হয় নি তার হাজার বার অন্য একজনের কথা মনে পড়েছে আর আমি জানি সে আমাকে খুব ভালোবাসে তার জন্য সে এখনও বিয়ে করেনি। আমাকেই খুঁজে বেরুচ্ছে সে এখনো।”

মানহার কথায় সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো…..

—কে সে?”

—“আয়ান।”

আয়ান এখন ‘থ’ মেরে আছে। হৃদয় তখন বললো…..

—-” কিন্তু আমার জানামতে ভাইয়া তো কোনোদিন বিয়ে করবে না বলে ভেবে রেখেছে তাহলে কিভাবে?”

মানহা আয়ানের দিকে তাকালো……

—” আমি গতকাল ওর ব্যাগ থেকে একটা ডাইরি পাই যাতে আমার সাথে দেখা হওয়া থেকে সব ছিলো। প্রথম প্রথম বন্ধু ভেবেই এসেছে ও। কিন্তু যখন আমার আর আরিয়ানের সম্পর্কের কথা শুনলো তখন থেকে ও বুঝতে পেরেছে ও আমায় ভালোবাসে কিন্তু একবারও মুখ ফোটে বলেনি। আমাকে এতদিন ধরে খুঁজে এসেছে ও। আমি ছাড়া ওর জীবনে অন্য কোনো মেয়েকে ও বসাতে পারবে না সেই জন্য এখনও সে বিয়ে করেনি। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলে, জীবনে বিয়ে করবে না। ও ভেবেছে আমি আর কোনোদিন ওর হবো না। এখন আরিয়ান যদি আমায় ভালোবাসতো তাহলে কোনো দিনেই সোনালীকে বিয়ে করতে পারতো না।”

মানহা কথা বলা শেষ করে নিরবে কাঁদতে থাকে। আয়ান মানহার নিরব মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পরিবেশটা খুব শান্ত ও নিরব। হৃদয় তখন ইতিকে ফিসফিসিয়ে বললো…..

—” যখন কথা বলা দরকার তখন বলো না আর যখন কথা বলার দরকার নাই ঠিক তখনি মুখ দিয়ে যেনো খই ফোটে।”

—” কি বলবো এখন আমি?”

—” শুনো তুমি এমন একটা কথা বলো যেনো সব ঠিক হয়ে যায়।”

—” চুল কি সেই কথা?”

হৃদয় রাগী দৃষ্টিতে তাকালো ইতি তখন হুট করেই বললো….

—” ইসসসসসস আরিয়ান আর আয়ান ভাইয়া যে কি বোকা। এখন যে প্রপোজ করতে হবে সেই কথা বুঝতে পারছে না।”

ইতির এমন কথা শুনেই ওরা চারজন অস্বস্তি বোধ করলো। হৃদয় নিজের কপালে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে বললো…..

—” এমন গাঁধী মেয়ে আমার কপালেই জুটতে হলো কেনো? আল্লাহ!”

ইতি রাগ দেখিয়ে চলে যায়। পিছন পিছন হৃদয়ও চলে যায়। আয়ান যে মানহাকে ভালোবাসে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো আরিয়ান কিন্তু মানহা কি আয়ানকে ভালোবাসে তা এখনও বুঝতে পারে নাই তাই ওদের আলাদা একটু কথা বলার জন্য সময় দিতে চায় আরিয়ান। তাই সোনালীকে বললো…..

—” সোনালী তোমার সাথে ইম্পর্টেন্ট কথা আছে আমার চলো।”

আরিয়ানের পিছন পিছন সোনালী চলে যায়।

মানহা আয়ান দাঁড়িয়ে আছে। মাওয়া ঘুমিয়ে আছে বিছানায়। দুইজন চুপ করে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে আয়ান বললো……

—-” সরি ।”

—” হটাৎ সরি কেনো?”

—” তোমার পারমিশন ছাড়া তোমাকে পছন্দ ও ভালোবাসার জন্য।”

আয়ানের এমন বোকা বোকা কথা শুনে হাসলো মানহা।

—” আমিও তো এমন বোকা বোকা কথার মানুষটিকে পারমিশন ছাড়াই ভালোবেসে ফেলেছি। এখন কি আমাকেও সরি বলতে হবে?”

—” তুমিও আমায় ভালোবেসে ফেলেছো? কিন্তু কিভাবে?”

–” কিভাবে বলতে পারবো না শুধু জানি যেভাবেই হোক ভালোবেসে ফেলেছি।”

আয়ান আনন্দে , খুশিতে মানহাকে জড়িয়ে ধরে। যখন হুস ফিরল তখন ছেড়ে দিয়ে আবারো বললো….

—” সরি।”

—” এই লোকটাকে নিয়ে কি যে করি, কথায় কথায় সরি বলাটা যেনো ওনার বাক্য হয়ে গেছে।”

আয়ান মাথা চুলকিয়ে হাসলো। তখনি মাওয়ার কান্নার শব্দ। দুইজনেই ব্যাকুল হয়ে মাওয়াকে কোলে নিতে গিয়ে মাথায় বারী খেলো ও একজনের হাতে আরেকজনের হাত পড়লো। মানহা মাওয়াকে রেখে উঠে পড়লো । আয়ান মাওয়াকে কোলে নিয়ে বললো….

—-” আজ থেকে আমার মেয়ের আশে পাশে কোনো শত্রু এলাও করবো না আমি। নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমার মেয়েকে বাঁচাবো আমি। মানুষের কু নজর থেকে রক্ষা করবো আমি আমার মেয়েকে। কোনো বিপদ ছুঁতে দিবো না আমি। সমাজের কোনো বিপদেই স্পর্শ করতে দিবো না আমার মেয়েকে।”

আয়ানের প্রতি মানহার আবারো শ্রদ্ধা বোধ বেড়ে গেলো।

—” আমার মেয়ে খুব ভালো ভাগ্য যে তোমার মত একজন বাবা পাবে ও।”

মানহা আয়ান মাওয়াকে আগলে রেখে দুইজন দুজনের দিকে তাকিয়ে সুখের হাঁসি হাসলো…….

।।

।।

।।

—” আমি গাঁধী তাই না?”

—“একদম না ।কে বলেছে তুমি গাঁধী?”

—” কথা ঘুরাবে না?”

—” আরেহ বোকা মেয়ে বুঝো না কেনো ওইসব বলে তোমাকে রাগিয়ে দিয়ে আমরা চলে এসেছি। আমি দেখেছি ব্রো আর ভাবীও আলাদা চলে গিয়েছে। এখন ওদের দুই কাপলকে আলাদা সময় দেওয়া উচিত তার জন্যই এইভাবে চলে আসা বুঝছো।”

ইতির মাথায় টুকা দিয়ে বললো হৃদয়। ইতি মাথায় হাত বুলিয়ে বললো….

—” হ্যাঁ বুঝছি তাই বলে এত জোড়ে টুকা দিতে হবে?”

—” ব্যাথা পেয়েছো বেশি দেও আমি এক্ষুনি সারিয়ে দিচ্ছি।”

ইতির কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো হৃদয়। ইতি লজ্জা পেয়ে হৃদয়ের বুকে মুখ লুকালো। হৃদয় ইতিকে জড়িয়ে ধরে বললো…..

—” আমি যে এই দুষ্টু ও বোকা মেয়েটাকে খুব ভালোবাসি। জানি সেও খুব ভালোবাসে কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে চায় না।”

মন খারাপের ভান করে বললো হৃদয়…..

—” এই তো প্রকাশ করছি আমিও খুব ভালোবাসি এই ফাজিল ছেলেটাকে খুব খুব খুব।”

হৃদয় এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইতিকে। ইতির কাছে মনে হচ্ছে এই বুকে সে অনেক অনেক বছর এইভাবেই মুখ গুজে বাঁচতে পারবে। খুব শান্তি এই বুকে।

।।

।।

।।

—” তোমার সাহস তো কম না আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলো?”

—” আপনার মত ভয়ানক মানুষের বউ যদি এমন না হয় তাহলে কি করে আপনাকে সামলাবে বলেন শুনি?”

—” বাহ এখন আমার সাথেই পাঙা নিতে চাচ্ছো। সাহস অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে তাই না?”

—” একদমেই না। আপনার সাথে সংসার করার জন্য আরো অনেক সাহস দরকার আমার।”

—” কেনো?”

—” যে ভয়ংকর গল্প লিখেন। গল্প পড়লে তো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় আমার।”

—” তাহলে কি ধরনের গল্প লেখা উচিত আমার?”

—” রোমান্টিক,ইসলামিক ,অ্যাডভেঞ্চার এই রকম। আর মাঝে মাঝে থ্রিলার লিখতে পারেন।”

—” রোমান্টিক গল্প লিখতে হলে আগে তো নিজেকে রোমান্টিক স্বামী হতে হবে তাই না?”

—-” একদমেই….. এই না না।”

সোনালীর কোমরে হাত রেখে সোনালীকে নিজের কাছে মিশিয়ে সোনালীর ঠোঁট জোড়া দখল করলো আরিয়ান।

—-” ঠিক আছে এখন?”

—” জানি না।”

লজ্জা পেলো সোনালী। আরিয়ান সোনালীকে কোলে তুলে নিয়ে বললো…..

—-” ওরে আমার লজ্জাবতীরে। জানো কি? প্রেম মানে হৃদয়ের টান,
প্রেম মানে একটু অভিমান ,
২টি পাখির ১টি নীর,
১টি নদীর ২টি তির ,
২টি মনের ১টি আশা তার নাম ভালবাসা।

—” যতো ভালবাসা পেয়েছি, তোমার কাছ থেকে।দুষ্টু এই মন চায়, আরো বেশি পেতে।কি জানি, তোমার মধ্যে কি আছে।কেনো যে এ মন চায়, তোমাকে আরো বেশি করে কাছে পেতে । আই লাভ ইউ লেখক সাহেব ।”

—-” লাভ ইউ টু লেখক সাহেবের ওনলি ওয়ান বউ।”

অটুট থাকুক তাদের ভালোবাসা। এমন মিথ্যা অপবাদের জন্য হারিয়ে না যায় সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ গুলো। ভালোবাসা হলো হৃদয়ের বন্ধন সেই বন্ধন যেনো মিথ্যা অপবাদের কারণে ছিন্ন না হয়।

সমাপ্ত…….

বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।

(আমি প্রথম থেকেই ভেবে এসেছিলাম সোনালীকে খুন করাবো আরিয়ানের হাত দিয়ে 😶 কিন্তু পরে বুঝলাম এমন কিছু হলে আপনারা আমাকেই খুন করবেন তাই হ্যাপি এন্ডিং দিলাম।)