মিশেছো আলো ছায়াতে পর্ব-১৪+১৫+১৬

0
232

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 14

🍁🍁🍁

আচমকা ঠাসস শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো বাড়ি টা। সায়নরা স্তব্ধ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। নীলয় খান, রহিমা বেগম, সীমা বেগম বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সার্ভেন্টরা রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে। সিমথি অগ্নি দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে। সিমথির সামনেই তরী গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এই ফাস্ট সিমথি তরীর গায়ে হাত তুললো। সবাই চরম বিস্ময়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

রহিমা : আমার নাতনী ডা রে মা/ই/রা লাইলো গো। কেডারে কই আছো গো।

সিমথি রহিমা বেগমের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনের কাঁচের টেবিলে স্বজোরে এক লাথি লাগায়। টেবিল টা দূরে সরে যায়। নীলয় খানরা দ্রুত সোফার সামনে থেকে সরে আসে।

সিমথি : আজ আমার আর তরীর মাঝে যেই আসবে খোদার কসম তার অবস্থা আমি নাজেহাল করে ছাড়বো। ( চেচিয়ে)

সিমথির চেঁচানো তে সবাই ঘাবড়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যে ড্রয়িংরুমে নীরবতা নেমে আসে। সিমথি তরীর দিকে তাকায়। এখনো গালে হাত দিয়ে ফুফাচ্ছে।

সিমথি : বংশের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য তোর মতো মেয়ে প্রতিটা ঘরে ঘরে জন্মাক আর তোর দাদির মতো দাদি প্রতিটা ঘরে ঘরে থাকুক।

তরী : সিমথি চেঁচিয়ে কথা বলবি না। কোন সাহসে আমার গায়ে হাত তুললি।

তরীর কথায় সিমথির মাথায় আগুন ধরে যায়। রাগ সামলাতে না পেরে পুনরায় তরীর গালে একটা থাপ্পড় মারে। পরপর দুটো দাবাং মার্কা থাপ্পড় খেয়ে তরী রেগে সিমথির দিকে তেড়ে আসতে নিলে সিমথি তরীর হাত মুচকে পেছনের নিয়ে চেঁচিয়ে উঠে।

সিমথি : ডাক্তারির পূর্বশত কি জানিস। আমাদের ঘোর শত্রু ও যদি চিকিৎসার জন্য আসে তাহলে অন্য দশটার রোগীর মতো তারও চিকিৎসা করা। সাধারণ মানুষ গুলো উপরওয়ালার পর আমাদের উপর ভরসা করে হসপিটালে এডমিট হয়। নতুন একটা জীবন পাওয়ার আশায়। আরো কিছুদিন এই পৃথিবীর আলো – বাতাস উপভোগ করার জন্য। সেখানে শত্রুতার কোনো স্থান নেই। আর তুই কি করলি আমার সাথে রাগ মেটাতে গিয়ে বাচ্চা মেয়েটাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলি। লজ্জা হওয়া উচিত তোর। ডাক্তার হবার যোগ্যতা তোর নেই। ভালো স্টুডেন্ট হয়ে, ভালো জিপিএ পেলেই, ভালো রেজাল্টেই ভালো ডাক্তার হওয়া যায়। ভালো ডাক্তার হওয়ার জন্য ভেতরে যেই মন আছে সেটা কে পবিত্র রাখতে হয়৷ কিন্তু তোর দাদি তোকে যেই শিক্ষা দিয়েছে তুই ও সেটাই পেয়েছিস। ছোট থেকে যেভাবে অ/মানুষ হবার প্রেকটিস করিয়েছে ততটাই অ/মানুষ হয়েছিস৷ এতোটা নিচে নেমেছিস যে একটা নিষ্পাপ শিশু কে মা/র/তে ও পিছ পা হোসনি। ছিহহ।

কথাগুলো বলে তরীকে ছুঁড়ে মারে। জোরে ধাক্কা দেওয়ায় সিড়ির হাতলের সাথে গিয়ে লাগে।

সিমথি : তোকে আজ লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি নেক্সট টাইম আমার রাগ অন্য কারোর উপর ঝাড়বি না। নিজের সীমারেখা নির্দিষ্ট করে নে। যতটুকু সীমা তার ভেতর থাক। এর বাইরে আসার চেষ্টা ভুলেও করবি না। আমাকে বাধ্য করিস না তোর হাল ধরতে। সেটা তোর জন্য একদম ভালো হবে না। এখনো সময় আছে নিজেকে শুধরে নে। অতীতের কিছু না জানা কারণ নিয়ে আমার সাথে লাগতে আসিস না। সত্যি টা জানলে আজ যা যা করছিস তার জন্য নিজেকে কোন দিন ক্ষমা করতে পারবি না।

রহিমা : দেখো সিমথি,,,

বাকিটা বলার আগেই সিমথি হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেয়।

সিমথি : আপনার সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধে। কতটা জঘন্য চরিত্রের মানুষ হতে পারেন আপনি তার আরোও একটা উদাহরণ আপনার শিক্ষায় শিক্ষিত নাতনী দিয়েছে। আপনার নাতনীর মতো আপনাকে ও ওয়ার্নিং দিচ্ছি আমাকে কন্ট্রোল করতে আসবেন না। আপনি আমার কেউ না। আমাকে কন্ট্রোল করতে আসলে আপনাকে লাইফ সাপোর্টে আইসিইউ তে পাঠাতে আমার এক মিনিট ও লাগবে না। নেক্সট টাইম আপনি আর আপনার এই নাতনী দুজনই আমার থেকে ডিস্টেন্স বজায় রাখবেন। আর আপনার নাতনীর মাথায় কথাটা ভালো করে ঢুকিয়ে দেন।

তরী : এনাফ সিমথি তুই দাদিমার সাথে একদম এভাবে কথা বলবি না। ( চেচিয়ে)

তরীর কথায় সিমথি শান্ত দৃষ্টিতে তরীর দিকে তাকায়। সিমথির তাকানো দেখে তরীর কলিজা কেঁপে ওঠে। তবুও তেজি দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকিয়ে থাকে। সিমথি এক পা করে তরীর দিকে এগিয়ে যায়।

সিমথি : কি করবি তুই আমায় । মারবি। নে মা/র। কি হলে আয়। ( শান্ত গলায়)

তরী পিছিয়ে যায়। আচমকা গালে আরেকটা থাপ্পড় পড়ে। সায়নরা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। রাগে শরীর থরথর করে কাপছে সিমথির। চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে তরীর দিকে তাকিয়ে আছে।

মেঘা : সিমথি তরী কে এই প্রথম বার এতো মারছে।

রোদেলা : তন্ময় সিমথি কে সামলা প্লিজ। নয়তো আজ র/ক্তা/র/ক্তি হয়ে যাবে।

তন্ময় : আজ আমার সাহস হচ্ছে না সিমথির সামনে যাওয়ার।

সিমথি : তোর থেকে বয়সে বড় আমি। আমার সাথে চেঁচাবি না।

তরী : তুই আমাকে মারলি কেনো আগে এটা বল।

সিমথি : কোন মুখে কথা বলিস। লজ্জা নেই। এতোটা জঘন্য কাজ করে মুখে মুখে তর্ক করছিস। আজ বাচ্চার কিছু হলে তের কি হতো তুই কল্পনা ও করতে পারছিস না। তোর ভাগ্য ভালো তোকে মাত্র তিনটা থাপ্পড় দিয়েছি। একই বাড়িতে মানুষ হয়েও তিনজন মেয়ে তিন চরিত্রের হয় কিভাবে এটা ভেবেও অবাক হচ্ছি না আমি। কারণ তোর চরিত্র এমন হবে এটা আশা করা যায়। তোর জায়গায় যদি রোজ এই কাজ টা করতো তাহলে আজ ওকে আমি শেষ করে ফেলতাম। কারণ রোজের উপর আমার অধিকারবোধ আছে। তোর উপর সেই অধিকারবোধ নেই। সো নেক্সট টাইম থেকে সাবধান থাকবি।

কথাগুলো বলে সিমথি থামে। জোরে একটা শ্বাস ছাড়ে। উপস্থিত সবার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়। আচমকা থেমে তরীর দিকে তাকায়।

সিমথি : থাপ্পড় গুলো তোকে হসপিটালেই দিতে পারতাম৷ বাড়িতে দিয়েছি কারণ থাপ্পড় গুলো শুধু তের গালে পড়েনি কিছু মানুষের শিক্ষায় ও পড়েছে।

কথাগুলো বলে সিমথি একপলক রহিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে যায়।

রহিমা বেগম : তরী রুমে চল।

রহিমা বেগম তরীকে নিয়ে রুমে চলে যায়। সায়ন একটা জোরে শ্বাস ফেলে দরজার দিকে তাকায়।

সায়ন : আরে তুহিন তোরা। তোরা কখন এলি।

তন্ময় : আপনার বোন যখন তান্ডব করছিলো তখনই।

সায়ন : আজ প্রথম সিমথিকে এতোটা রাগতে দেখালাম। আর তরীর গায়ে হাতও আজই তুললো। প্রতিবারই হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিতো। কিন্তু আজ

ইফাজ : আচ্ছা বাদ দে। তোরা ভেতরে আয়। ডিনার করে যা।

মেঘা : না ভাইয়া আজ আর ইচ্ছে নেয়। আসি। অনেক রাত হয়েছে।

মিম : আরে কিছু খেয়ে যাও।

তন্ময় : না আসি এখন। চল তোদের নামিয়ে বাড়ি ফিরবো।

ঘুমের মধ্যে গালে কারো স্পর্শে কেঁপে ওঠে তরী। স্পর্শ টা ওর চেনা। ভীষণ চেনা। চোখজোড়া মেলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। মনে হচ্ছে কেউ আটা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছে। গালে ঠান্ডা কিছু স্পর্শে চুপটি হয়ে যায়। হঠাৎ চোখ খুলে। চারপাশে চোখ বুলায় কিন্তু না রুমে কেউ নেই। দরজার পর্দা নড়ছে। তার মানে রুমে কেউ এসেছিলো। কিন্তু কে? গালে হাত দিয়ে আটালো কিছু লাগায় বেড সাইড টেবিলের ল্যাম্প জ্বালায়।

তরী : অয়নমেন্ট কে লাগিয়ে দিলো। হয়তো সায়ন ভাইয়া বা ইফাজ ভাইয়া এসেছিলো৷ ( বিড়বিড়িয়ে)

গাল টা প্রচণ্ড ব্যথা করছে। তাই বেশী কিছু না ভেবে তরী ঘুমিয়ে যায় আবারো৷

_________________

সিমথি : আপনার কি কোনো কাজ নেই। রাস্তায় ঢিল ছুঁড়ছেন কেনো। মানুষ মা/রা/র প্ল্যান করছেন ইডিয়ট।

সিমথির কথায় আদি হাসে। আজ অবশ্য আদি সিমথির সাথে দেখা করতে আসেনি। বন্ধু রা মিলে ঘুরতে এসেছিলো। সায়নের কাজ থাকায় সায়ন একটু পরই চলে আসবে। তাই ওরা নদীর পাশে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছিলো। আদি নিচ থেকে একটা ইট নিয়ে খালি রাস্তায় ঢিল দেয়। কিন্তু তখনই এদিক দিয়ে সিমথির গাড়ি যাচ্ছিলো। যা ফলে ঢিল টা সিমথির গাড়িতে পড়ে কাচ ভেঙে যায়। তখনই সিমথি রেগে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে আর সামনে আদি, আয়াশ,রিক সহ আরো কয়েকজন কে দেখতে পায়। বাকিদের ভ্রুক্ষেপ না করেই সিমথি আদিকে উদ্দেশ্য করে উপরের কথাগুলো বলে।

আদি : আজ তো তুই নিজেই আসলি। আমার কি দোষ।

সিমথি : আপনার দোষ কবে থাকে। যত্তসব আজাইরা মার্কা পাবলিক।

আদি : একটা দিবো। ফা/জ/লা/মি করিস। এই রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছিলি।

সিমথি : আপনাকে বলতে বাধ্য না। ভালো একটা কাজে যাচ্ছিলাম। দিলেন তো বারোটা বাজিয়ে। আপনি মানেই ঝামেলার সমার্থক শব্দ।

আদি : থেংক্স ফর ইউর কমেন্ট বাট এই ঝামেলা কেই তোর সারাজীবন সহ্য করতে হবে। এটা ভেবেই আমার কষ্ট হচ্ছে।

আদির কথায় সিমথি বিরক্তি নিয়ে আয়াশদের দিকে তাকায়। সবাই মুখ চেপে হাসছে।

সিমথি : আপনি আর আপনার কষ্ট দুইটাই দূরে থাকুন।

আদি : আচ্ছা আপাতত দূরে থাকলাম। বাট বিয়ের পর কিন্তু দূরে থাকবো না ( শয়তানি হেসে)

সিমথি : শাট আপ।

আদি : আচ্ছা। কোথায় যাচ্ছিলি।

সিমথি : আমি এক কথা একশবার বলি না।

আদি : আচ্ছা। তোর সিম অফ কেনো

সিমথি : সিম অফ না। আপাতত মাটিড নিচে

আদি : এ্যা। মানে

সিমথি : একটা ফালতু, বখাটে ছেলে ফোন দিয়ে দিয়ে ডিস্টার্ব করছিলো তাই ভেঙে ফেলেছি ওই সিম।

সিমথির কথায় আদি চোখ পাকিয়ে তাকায়। সিমথি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। আদির ফুসফুস করার কারণ সেই ছেলেটা আদিই ছিলো।

আদি :তোর নাম্বার টা দে তো। ( ফুসতে ফুঁসতে)

সিমথি : আমার নাম্বার দিয়ে আপনার কি কাজ।

আদি : আহা আগের সিম চেঞ্জ করেছিস তো নাম্বার দিবি না। না দিলে কথা বলবো কিভাবে।

সিমথি : আমার আপনার সাথে কথ বলার সামান্যতম ইন্টারেস্ট ও নেই।

আদি : তারজন্যই পাক্কা ১০ মিনিট ৭ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিস।

আদির কথায় সিমথি থামে। সত্যিই তো অনেকক্ষণ ধরে আদির সাথে বকবক করছে সিমথি। রাগি চোখে আদির দিকে তাকায়।

সিমথি : আপনার জন্য আজ আমার লেট হলো। ধ্যাত আমাকে ক্যাফে যাওয়া লাগবে। সরুন তো সামনে থেকে।

আদি : ক্যাফে কেনো যাবি।

সিমথি : বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে। সমস্যা আপনার আজব।

আদি : তা বয়ফ্রেন্ড টা কে? তন্ময়!

আদির কথায় সিমথি হঠাৎ হেসে উঠে।

সিমথি : বাব্বাহ আপনার এতো বুদ্ধি জানতামই না। বাই দ্যা ওয়ে এটা ঠিকই বলেছেন। সমস্যা নেই কিছুদিনের মধ্যে আমাদের বিয়ের খবর ও জানতে পারবেন। ভাইয়া অবশ্যই আপনাদের দাওয়াত দেবে। ভাই হিসাবে বোনের বিয়েতে তো আপনাদের দায়িত্ব সব দেখভাল করার। অগ্রিম দাওয়াত আমি দিয়ে গেলাম।

সিমথি গাড়ি নিয়ে চলে যায়। আদি হাতের মুঠো শক্ত করে সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। বুকের ভেতরে চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। সিমথির কথা যদি সত্যি হয়ে যায়। তাহলে আদির কি হবে?

চলবে,,,,,

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 15 ( surprise part)

🍁🍁🍁

হাতে বিয়ের কার্ড নিয়ে থম মেরে বসে আছে আদি। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে কার্ডে কনের নামের দিকে তাকিয়ে আছে। কনের নামের জায়গায় সিমথি নাম টা ঝলঝল করছে । পাশেই ইশানরা অসহায় দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকিয়ে আছে।

আদিবা : ব্রো কিছু বলো। এভাবে স্টেচু হয়ে থাকলে কিভাবে হবে।

আদিবার কথায় আদির ধ্যান ভাঙ্গে।

আদি : কা কার্ড টা ক কে দিয়েছে তোদের।

মেহের : সকালে সায়ন ভাইয়া এসে দিয়ে গেছে। তোমাকে তো পায়নি তাই আমাদেরই দিয়েছে। আর সবাই কে যেতে বলেছে।

মেহেরের কথায় আদি চোখ বুঁজে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

আদি : আচ্ছা। যা তোরা এখন।

ইশান : কিন্তু

আদি : লিভ।

আদির কথায় সবাই বেরিয়ে যায়। আদি আবারো কার্ডের দিকে তাকায়। বুকের বা পাশের ব্যথা টা ক্রশমই বাড়ছে আদির। পাশ থেকে ফুলের টব টা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

আদি : এটা তুই করতে পারিস না সিয়া। এটা তুই করতে পারিস না৷ তুই আমার মানে শুধু আমার। তোকে আমি অন্য কারোর হতে দেবো না।

তখনই আদির ফোন বেজে ওঠে। সায়নের ফোন দেখে আদি রিসিভ করে।

আদি : হুম বল।

সায়ন : কার্ড টা পেয়েছিস। তাড়াতাড়ি চলে আসবি কিন্তু। তোরা ছাড়া আমি সব একা মেনেজ করতে পারবো না। আমার বোন তো তোদের ও বোন। কথাটা মাথায় রাখিস।

” আমার বোন তো তোদের ও বোন ” কথাটা শুনে আদি রাগান্বিত দৃষ্টিতে ফোনের স্কিনে তাকায়। ইচ্ছে করছিলো ফোনের ভেতর গিয়ে কেলিয়ে আসতে। যাকে এতোবছর বউ বানানোর অপেক্ষায় আছে তাকে এক মুহূর্তে বউ বানিয়ে দিলো । দুই ভাই বোনই আদিকে জ্বালিয়ে মারছে।

আদি : রাখ তোর কথা। তুই বললেও আসবো না বললে ও আসবো। আমাকে আসতেই হবো।

আদির ধমকানিতে সায়ন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। তারউপর আবার না বলেই ফোন কেটে দেওয়ায় সায়ন বিস্মিত হয়।

সায়ন : যাহ তেরি কি বললাম। রেগে গেলো কেনো।

________________

পুরো বাড়ি সেজে ওঠেছে বাহারি সাজে। সায়ন নিজের বোনের বিয়েতে কোনো কমতিই রাখছে না। মেইন গেট থেকে শুরু করে বাড়ির প্রতিটা কোণা আলোয় আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। সবাই মিলে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। কাল বিয়ে আর আজ গায়ে হলুদের ফাংশন হবে না। এটা নিয়ে রোজসহ সবাই বেজায় বিরক্ত সিমথির উপর।

রোজ : লাইক সিরিয়াসলি সিমথিপু। বিয়ে তো একবারই হয়। আর তুমি হলুদ করতে দিচ্ছো না। এটা কেমন বিয়ে।

সিমথি : এটা এমন বিয়ে। ফালতু বকবক করে মাথা খাস না। আমার রুম থেকে বের হ সবগুলা।

মেঘা : সব কিছুর লিমিট আছে সিমথি। নিজেই বিয়ে তে রাজি হলি। আর নিজেই সব ঠিক করে দিচ্ছিস। আমাদের আনন্দের কোনো দাম নেই ।

সিমথি : মেঘা স্টপ ইট। ইউ নো বেটার আই ডোন্ট লাইক ইটস্। এতো কোলাহলে আমার মাথা ধরছে। বের হ সবগুলা।

রোদেলা : তোর পছন্দ কি বলবি একটু। যা বলছি তাই তোর ভালো লাগে না। আজব।

সবার খ্যাচর খ্যাচরে বিরক্ত হয়ে সিমথি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সিমথি যেতেই সবাই গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে আসে। সিমথি এসে সোজা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পড়ে। চোখ বুলিয়ে সারা বাড়ি দেখেই নেই। আয়াশ রা রান্নার লোকের সাথে কথা বলছে। আদি ওদের থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে অসহায়ত্বের চাপ স্পষ্ট। আদির মুখের অবস্থা দেখে সিমথি শয়তানি হাসে।

সিমথি : এই কষ্ট টা আপনার প্রাপ্য। যখন চেয়েছিলাম তখন তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এখন আমাকে অন্যকারো হতে দেখুন। এটা আপনার কৃতকর্মের শাস্তি।

সায়নের ডাকে সিমথির ঘোর ভাঙ্গে। ঘাড় ফিরিয়ে সায়নের দিকে তাকায়।

সিমথি : ওয়াট?

সায়ন : তন্ময়ের বাড়িতে ও গায়ে হলুদ হচ্ছে।

সিমথি : তো! ভাবীপু তোমার বরকে সামলাও। আমি একবার না করেছি মানে সেটা না-ই থাকবে।

সায়ন : ধ্যাত বা* এতো জেদ কিসের তোর। তন্ময়ের জন্য আমার খারাপ লাগছে। তন্ময় কি দুনিয়া জুরে আর কোনো মেয়ে পাইনি। তোকে কি বুঝে বিয়ে করছে। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছে।

সিমথি : দুনিয়ায় মেয়ে ছিলো কিন্তু তাদের মধ্যে সিমথির ক্যারেক্টার ছিলো না। বুঝলি।

সিমথির কথার সাথে না পেরে সায়ন রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। সকাল থেকে নীলয় খান, সীমা বেগম, ইফাজরা অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু সিমথি শুনতে নারাজ। অগত্যা সবাই সিমথির কথায় মেনে নেয়।

আয়াশ : সিমথি কি সত্যি বিয়েটা করছে।

আয়াশের কথায় মেঘা আকাশ থেকে পড়ে

মেঘা : তোমার কি মনে হয়। ওরা কোনো এক্টিং করছে মুভির আজব।

মেঘার কথায় আয়াশ থতমত খেয়ে যায়। সত্যি ই সিমথি মজা করার মানুষ নয়।

আয়াশ : সিমথি কি সত্যি তন্ময় কে ভালোবাসে?

আয়াশের কথায় মেঘা এবার রাগী চোখে আয়াশের দিকে তাকায়। মেঘার তাকানো দেখে আয়াশ থতমত খেয়ে যায়। দ্রুত পা চালিয়ে মেঘার কাছ থেকে চলে যায়। মেঘা বিরবির করতে করতে সিমথির রুমে চলে যায়।

সিমথি : ওয়াট ননসেন্স। আপনি এতো রাতে আমার রুমে কি করছেন।

সিমথির কথায় আদি সিমথির দিকে এগুতে থাকে। আদিতে এগুতে দেখে সিমথি সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আদি একদম সিমথির কাছে এসে দাঁড়ায়। দুজনের মাঝে ইঞ্চি খানেক দূরত্ব আছে।

সিমথি : আরো এগুবেন নাকি।

সিমথির খোঁচা মারা কথায় আদি শেষ দূরত্ব টুকু ও গুছিয়ে নেয়। সিমথির কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সিমথি খানিক টা হেসে উঠে। সিমথির হাসি দেখে আদি ও হেসে দেয়।

সিমথি : আপনার সাহস আছে মানতে হবে। নয়তো মাফিয়া কুইন কে এভাবে টাচ করার সাহস কার আছে।

সিমথির কথায় আদি হাসে।

আদি : সাহস না থাকলে মাফিয়া কুইন নিয়ে সংসার করবো কিভাবে। সাহস রাখতে হয় বুঝলে।

সিমথি : সাহস ভালো কিন্তু অতিরিক্ত কিছুই না।

সিমথির কথায় আদি কিছু টা নড়েচড়ে দাঁড়ায়। হাতের বাঁধন আরেকটু টাইট করে সিমথির চোখের দিকে তাকায়।

আদি : সত্যি কাল বিয়েটা করছিস।

সিমথি : তো না করলাম কখন।

আদি : পারবি আমাকে ছাড়া থাকতে।

সিমথি : আজ থেকে ছয় বছর আগে বললে উত্তর টা আসতো না। বাট এখন পারবো।

আদি : মিথ্যে বলছিস। আমি তোর চোখের ভাষা বুঝি।

সিমথি : চোখের ভাষা এখন বুঝে লাভ নেই।

আদি : সিয়া প্লিজ। মাফ করে দে। লাস্ট একটা সুযোগ দে। নিরাশ করবো না রে। পারবো না তোকে ছাড়তে। ভেতর ভেতর অনেকটা জড়িয়ে গিয়েছি নিজের অজান্তেই। একটা শেষ সুযোগ আমার প্রাপ্ত।

সিমথি : সেদিন রাতে আমাকে ছেড়ে চলে আসার জন্য আমি আপনাকে সেদিনই মাফ করে দিয়েছি কিন্তু আপনি আসার পর যা হয়েছিলো তার জন্য কখনো মাফ পাবেন না। আর সুযোগ সেটা আর নেই। বিশ্বাস করুন এখন আর আগের মতো পাগলামি করতে ইচ্ছে করে না। ছেড়ে দিয়েছি অনেক বছর আগে। আপনি নিজেও জানেন না কতবড় অন্যায় করেছেন। আমাকে দূরে সরাতে গিয়ে এতোটা দূরত্ব বাড়িয়েছেন যেটার সমাপ্তি মৃ’ত্যু’তে।

আদি : যাকে ভালোবাসি তার অতীত কে নিয়েই ভালোবাসি। তোর কি মনে হয় আমি সেদিন শুধু শুধু তোকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম। এতোটা অ’মানুষ আমি নয় জান পাখি। আর সেদিন রাতে কি হয়েছিলো তা সব আমার জানা। দূরত্ব বাড়িয়েছি গুরুত্ব কমায়নি। আর যদি সেই দূরত্ব মৃ’ত্যুতে হয় তবে মৃ’ত্যুই শ্রেয়। এভাবে তিলে তিলে তোর অবহেলা সহ্য করার চেয়ে মৃ’ত্যু শ্রেয়।

সিমথি : এসবের পেছনের উদ্দেশ্য আমার জানার কোনো দরকার নেই। প্লিজ চলে যান।

আদি : কেনো ভয় পাচ্ছিস।

সিমথি : নাহ। সহ্য হচ্ছে না আপনার ছোঁয়া।

আদি : তুই বিয়েটা করবি না।

সিমথি : একশবার করবো।

আদি : নাহ করবি না।

সিমথি : করবো করবো করবো।

আদি : আমিও দেখবো তুই কেমন বিয়ে করিস।

সিমথি : হুহ। পারলে আটকে দেখান।

________________

খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ওর্নার সায়ন খানের একমাত্র বোনের বিয়ে। সেই বিয়ে কি আর যেমন তেমন ভাবে হলে চলে। বাড়ি ভরপুর মানুষ গিজগিজ করছে । একটুপরই বিয়ে। কাজি চলে এসেছে।

সায়ন : মেঘা সিমথি কে পেয়েছিস।

মেঘা : নাহ। কোথায় গেলো। এখনই তো কাজি ডাকবে।

সায়ন : আচ্ছা। তন্ময় কোথায়। ওর বাড়ির লোক তো সবাই এখানেই। তাহলে তন্ময় কোথায়।

রোদেলা : জানি না।

মিম : তোমরা কিছুই জানো না।

তুহিন : নাহ জানি না।

রোজ : কি আশ্চর্য। যা জিজ্ঞেস করছি তাই নাকি জানো না। তো জানো টা কি।

তুহিন : জানি না৷

তুহিনের কথায় রোজ রাগী চোখে তাকায়। তুহিন একটা চোখ টিপ দিয়ে গুন গুন করতে করতে চলে যায়।

এদিকে চিন্তায় চিন্তায় সায়নের অবস্থা খারাপ। বর কনে কারোর কোনো পাত্তা নেই।

মিম : আজব কান্ড গেলো কই দুইটা।

এর মধ্যে কাজি বর কনে কে জায়গায় বসতে বলে। তখনই তন্নয় দৌড়ে আসে। তন্ময়কে দেখে সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। আদি পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে আছে। আপাতত আদি টেনশন মুক্ত। সিমথি ই যদি না থাকে তাহলে বিয়ে হবে কিভাবে। আদিকে এমন ভাবলেশহীন বসে থাকতে দেখে আয়াশ রা সবাই নখ কামড়াচ্ছে।

ইশান : কেস টা কি হলো বলো তো।

মেহের : বুঝতে পারছি না।

মেহেররা আজ সকালেই এসেছে। আয়াশরা দুদিন আগে আসলেও মেহের, শাওন, ইশান, তিন্নি, তুহা আর আদিবা সকালে এসেছে।

আদি : আয়াশ ভাই একটা কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আয় তো।

আদির কথায় উপস্থিত সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।

আয়াশ : শা’লা মা* তোর গার্লফ্রেন্ড রে অন্য ছেলে নিয়া যাইতাছে আর তুই কোল্ড ড্রিংকস খাইতে চাইছিস। তোরে ড্রেনে চুবামু।

শাওন : আয়াশ সামলে। আমি আছি। বড় হয় একটু সম্মান দে।

কাজি : এবার মেয়ে নিয়ে আসেন।

মেয়ের কথা শুনে সবার মুখ শুকিয়ে যায়। আদির মুখের হাসি এবার চওড়া হয়। আচমকা হৈচৈ শুনে সবাই সিঁড়ির দিকে তাকায়। মুহুর্তের মধ্যে আদির চোখ-মুখ শুকিয়ে যায়। মেঘারা হাসতে হাসতে সিমথি কে নিয়ে আসছে। আদি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আদির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সিমথি আদির হাতে একটা চিমটি কাটে। চিমটি খেয়ে আদির ধ্যান ভাঙে। ততক্ষণে সিমথি গিয়ে তন্ময়ের অপজিটে বসে পড়ে। সবাই ভ্রু কুঁচকে সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে।

সিমথি : এভাবে তাকিয়ে না থেকে বিয়ের কাজ শুরু করুন। আর কতক্ষণ ওয়েট করাবেন। বেচারা বরের মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে।

সিমথির কথায় সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খায়। কি আজ বিয়ের কনে বিয়ে পড়ানোর জন্য তাড়া দিচ্ছে। ইতিহাসে আজ প্রথম হলো। সায়ন কপাল চাপড়ে সিমথির পাশে গিয়ে বসে। আদি রাগে হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে। কপাল বেয়ে চিকন ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।

সায়ন : আঙ্কেল বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।

রিক : নে বসে বসে কোল্ড ড্রিংকস খা। বাড়িতে গিয়ে বাংলা মা’ল গিলিস গার্লফ্রেন্ড হারানোর শোকে।

রিক আদির হাতে একটা কোল্ড ড্রিংকস ধরিয়ে চলে যায়। রিকের পেছন পেছন সবাই চলে যায়। আদি ধপাস করে বসে পড়ে। ফোন বের করে একের পর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছে কাউকে । কিন্তু নো রেসপন্স।

সিমথি : আশ্চর্য এতো সময় লাগে। আরে আমার বরের মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে তো।

সিমথির কথায় সবাই আকাশ থেকে পড়ে। মিম মুচকি হেসে সিমথির পাশে বসে। মুখ থেকে ঘোমটা সরাতে হাত দিলে সিমথি বাঁধা দেয়।

সিমথি : আরে আরে আমি আমার সাজ আমার বর ব্যতিত কাউকে দেখাবো না। বরকে আগে দেখাবো পরে তোমরা দেখবে। মাই ডিয়ার বরের বড় বোন।

সিমথির কথায় একদফা হাসির রব পড়ে।

সায়ন : আচ্ছা আচ্ছা থাম সবাই। সিমথি মা আমার এখন অন্তত বিয়েটা কর।

সিমথি : আমি তো কখন থেকে বিয়ের জন্যই বসে আছি। তোরাই তো কথা বাড়াচ্ছিস।

সায়ন থতমত খেয়ে মাথা নাড়ায়।

কাজি তন্ময়কে কবুল বলতে বললে তন্ময় ঠাস ঠাস করে কবুল বলে দেয়। সিমথিকে কবুল বলতে বললে সিমথি থম মেরে বসে থাকে।

সায়ন : এতোক্ষণ বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছিলি। এখন কবুল বলছিস না কেনো।

সিমথি : না ভাবছি।

মিম : কি?

সিমথি : আমার এতোগুলো ভাই থাকতে কেবল তুই আর ইফাজ ভাইয়া বসলি।

ইফাজ : আর কে বসবে?

সিমথি : কেনো আয়াশ ভাইয়া রা বসবে না।

সিমথির কথায় সায়ন রা হেসে দেয়।

সায়ন : আয়াশ, রিক, আদি ভাই তোরা তাড়াতাড়ি আয়।

সায়নের কথায় ওরা ভ্যাবাচ্যাকা খায়।

মিম : কি রে তাড়াতাড়ি আয়।

রিক : হুম হুম আসি। রিক আয়াশ কে টেনে নিয়ে যায়।

আয়াশরা গিয়ে ওর পাশে বসে।

সিমথি : আদি ভাইয়া আপনি আসলেন না যে।

সিমথির কথায় আয়াশরা খুক খুক করে কেশে উঠে। কি এক অবস্থা নিজের গার্লফ্রেন্ডের বিয়েতে নাকি ভাই হিসাবে বসবে। শাওন আর ইশানরা তো পারছে না গড়াগড়ি করে হাসতে।

আদি : না আমি যাবো না। ( ধরা গলায়)

সিমথি : ওকে নো প্রবলেম। এবার কবুল বলছি।

কাজি : হুম মা বলো। জীবনের প্রত্তম বার এমন বিয়া পড়াইতাছি।

সিমথি কিছু না বলে কবুল বলে দেয়। আশেপাশে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। আয়াশরা আদির দিকে তাকায়। আদির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। শাওন আর ইশান গিয়ে আদির পাশে দাঁড়ায়। আদি টলমল চোখে সিমথি আর তন্ময়ের দিকে তাকায়। তন্ময়ের ঠোঁটের কোণায় প্রাপ্তির হাসি দেখেই আদির বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। শেষ পর্যন্ত সিমথিকে হারিয়েই ফেললো। আদি মনে মনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।

( নবদম্পতির জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না অবশ্যই। )

চলবে,,,,,,

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 16

🍁🍁🍁

সিমথি : বিয়ে কমপ্লিট গাইস।

আচমকা সিমথির কন্ঠস্বর শুনে সবাই নতুন বউয়ের দিকে তাকায়।

সিমথি : সামনে না আমি পেছনে।

সিমথির কথায় সবাই পেছনে তাকায়। পেছনে সিমথি কে দেখে উপস্থিত সবাই বড়সড় একটা টাস্কি খায়। পেছনে যদি সিমথি হয় তাহলে তন্ময়ের পাশের মেয়েটা কে। মেহের রা একে অপরের দিকে বোকার মতো তাকায়। আদি বসা থেকে ঠুস করে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিজের চোখ কে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না।

সিমথি : কাম অন গাইস আম সিমথি। কোনো এলিয়েন টেলিয়েন নয়।

সায়ন : তুই এখানে থাকলে ওখানে কে।

সিমথি : ওখানে তো তন্ময়ের বউ সিমথি।

সিমথির কথায় সবার টালগোল পাকিয়ে যায়। সবার ফেস রিয়েকশন দেখে সিমথি গাউন দুই সাইডে উচু করে ভেতরে এসে ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে।

সিমথি : এভাবে কি দেখছিস তোরা ( ঠোঁট উল্টে)

ইফাজ : এসবের মানে কি বোন।

নীলয় খান : তোমার তো তন্ময়ের পাশে থাকার কথা। তাহলে তুমি এখানে মানে বাইরে থেকে ভেতরে আসলে কিভাবে।

সিমথি : এক মিনিট প্লিজ তন্ময় তোমাদের কিছু বলেনি।

তন্ময়ের বাবা : কি বলবে।

সিমথি : এ কি তন্ময় তুই আঙ্কেল কে এখনো বলিস নি

সিমথির কথায় তন্ময় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কি বলবে মনে করার চেষ্টা চালায়।

তন্ময়ের বাবা : কি হলো তন্ময় চুপ করে আছো কেনো ( ধমকে)

তন্ময়ের বাবার ধমকে তন্ময় ভীতু দৃষ্টিতে নিজের বাবার দিকে তাকায় অতঃপর রাগী দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়।

সিমথি : বাহ রে বাহ। আঙ্কেলের দিকে ভীতু দৃষ্টিতে তাকালি আর আমার দিকে রাগী চোখে। কিয়া সিন হে। রবীন্দ্রনাথ থাকলে তার নোবেল টা তোকে ফিক্কা মারতো।

তন্ময় : মেরি বইন আমারে ফাঁসাস কেনো।

সিমথি : যাহ তেরি ভালোবাসবি তুই বিয়েও করবি তুই আর ফাঁসবো কি পাশের বাসার আন্টি।

তন্ময়ের বাবা : এসবের মানে কি তন্ময়। ( পুনরায় ধমকে)

তন্ময় : সিমথি ( কাঁদো কাঁদো গলায়)

সিমথি তন্ময়ের কথায় পাত্তা না দিয়ে অতিথি দের দিকে তাকায়। সবাই একে একে চলে যায়। বাকি থেকে যায় তন্ময়ের বাড়ির লোক, আদিরা, আর সিমথির বাড়ির লোক।

রহিমা বেগম : এই মেয়ের নাটকের শেষ নেই।

সিমথি : রুবি আপু।

রুবিনা : হুমম

সিমথি : তোমাদের সো কোল্ড দাদিমা কে দয়া করে নিজের রুমে নিয়ে একটু আটকে দিয়ে আসো প্লিজ। উনার এখানে প্রবলেম হচ্ছে। চাইলে উনার আদরের নাতনী তরীকে ও দিয়ে আসো।

সিমথির কথায় সায়ন রা একটা ছোটো খাটো ঢোক গিলে। সায়ন চোখের ইশারায় রুবিনা কে সায় দেয়। রুবিনা ও রহিমা বেগম কে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তরীর কাছে আসতে চাইলে তরী হালকা চেঁচিয়ে বলে,,,

তরী : হাউ ডেয়ার টু টাচ ,,

সিমথি : তরী ( শান্ত গলায়)

সিমথির শান্ত গলা শুনে তরী থেমে যায়। অতঃপর মুখে জোর পুর্বক হাসি টেনে বলে,,,

তরী : আমি যাবো না রুবি আপু। নানিকে দিয়ে আসো।

তরীর ভালো ব্যবহার শুনে সিমথি হালকা কাশে।

সায়ন : এবার তো বলবি কিছু।

সিমথি : ইয়াহহ সিউর। বল কি বলবো।

সিমথির কথায় সায়ন রাগী দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। তা দেখে সিমথি হালকা কাশে।

সিমথি : তন্ময় ভাই আমার রেগে যাচ্ছে। এবার সত্যি টা বলেই দে।

তন্ময় : সিমথি

সিমথি : আজাইরা চ্যা চ্যা করিস না তো। ঘুম পাচ্ছে আমার। তাড়াতাড়ি বল।

মেঘা : সিমথি তুই নিজেই বল। তন্ময় বেচারা আর একটু হলে কেঁদে দেবে।

মেঘার কথায় রোদেলা আর তুহিন হেসে উঠে।

সিমথি : ওকে। সিমথি ওহ সরি সিনহা ঘোমটা উঠাও।

সিমথির কথা শুনে তন্ময়ের পাশের মেয়েটা ঘোমটা উঠায়। উজ্জ্বল গড়নের একটা মুখশ্রী ঘোমটার আড়াল হতে বেরিয়ে আসে বউয়ের সাজে। ভয়ে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে অলরেডি।

সিমথি : এই হলো সিনহা রহমান সিমথি। আমাদের টু ইয়ার্স জুনিয়র। আমাদের দুইজনের নামের অনেক মিল আছে তাই না। তো এই সিনহা হচ্ছে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। তন্ময়ের সাথে তিন বছরের রিলেশন ছিলো। আমাদের নাম এক হওয়ায় অনেকেই ভাবতো তন্ময় আর আমি রিলেশনে আছি। যথারীতি বিয়ের কথা উঠেছিলো সিমথি& তন্ময়ের। কিন্তু তোরা ভেবেছিলি সেই সিমথি আমি।

ইফাজ : কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। সব মাথার উপর দিয়ে গেছে। তুই কিছু বুঝেছিস সায়ন।

সায়ন : কচু বুঝছি।

সিমথি : তুই তো তাও কচু বুঝলি কিন্তু ইফাজ ভাইয়া তো এটা বুঝে নি।

সায়ন&ইফাজ : বোন ( চেচিয়ে)

সিমথি : সরি সরি।

তন্ময়ের বাবা : তার মানে তুমি সেই সিমথি নাহ।

তন্ময়ের বাবার কথা শুনে সিমথি তন্ময়ের দিকে তাকায়। অতঃপর বসা থেকে দাঁড়িয়ে তন্ময়ের বাবার দিকে এগিয়ে যায়।

সিমথি : আঙ্কেল প্রথমেই আমি দুঃখিত৷ তন্ময় আর তুহিন দুজনকেই আমি সবসময় বন্ধু কম ভাইয়ের নজরে বেশি দেখেছি। তন্ময় আর আমি রিলেশন এসব নিয়ে কখনো ভাবিনি। সিনহা অনেক ভালো একটা মেয়ে। ওর মা-বাবা নেই আঙ্কেল। ছোট থেকে চাচা-চাচীর কাছে বড় হয়েছে। মেয়েটা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে আঙ্কেল। লাস্ট তিন বছর আগে তন্ময় দেশে ফিরে এসেছিলো মনে আছে তো আপনাদের। সেদিনই সিনহার সাথে ওর পরিচয় হয়। আঙ্কেল আমি জানি আপনি বা আন্টি কখনো টাকা-পয়সা দেখে কারো যোগ্যতা বিচার করেন না। আমি মানুষ চিনতে সচারাচর ভুল করিনা। আমি আপনাদের বলতে চেয়েছিলাম আমি তন্ময়ের গার্লফ্রেন্ড সিমথি না। কিন্তু তন্ময় বার বার না করেছে। আপনাকে তন্ময় ভীষণ ভয় পায় তারজন্য আপনাকে নিজেও বলেনি আমাদের কাউকে দিয়ে বলাতে ও চাইনি। সিনহার আজ বিয়ে ছিলো আঙ্কেল। পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়স্ক একজন লোকের সঙ্গে শুধুমাত্র এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে মেয়েটাকে বেঁচে দিচ্ছিলো। আপনাকে বললে কিছু দিন লাগতো আপনার মানতে কিন্তু আমাদের হাতে সেই সময় টুকু ও ছিলো না। হুট করেই সিনহার চাচা সিনহার বিয়ে ঠিক করে। তারজন্য আমাকে এই পদক্ষেপ টা নিতে হয়েছে। তন্ময় বা সিনহার কোনো দোষ নেই ওরা সম্পূর্ণ আমার প্ল্যানমাফিক কাজ করেছে।

এতোটুকু বলে সিমথি থামে আড়চোখে একবার তন্ময়ের বাবার দিকে তাকায়। আবার ঘাড় ঘুরিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয়।

সিমথি : আঙ্কেল প্লিজ ওদের বিয়েটা মেনে নিন। প্লিজ। সিনহা আমার থেকে ও বেটার তন্ময়ের জন্য। জুটি তো উপরওয়ালায় সেট করে দেয়। মাঝখান দিয়ে আমাদের গোলমাল লাগানোর কি দরকার। তন্ময়ের মতো ছেলেকে সিনহাই কন্ট্রোল করতে পারবে। ও আঙ্কেল শুনছেন কিছু বলেন।

তন্ময়ের বাবা : আমাকপ একটু সময় দাও।

সিমথি : ইয়াহ সিউর পাঁচ মিনুট দিলাম আপনার ডিসিশন জানান। তবে হুমম উত্তর টা যেনো পজিটিভ হয় প্লিজজজজ৷

সিমথি সোজা এসে তন্ময়ের পাশে দাঁড়ায়।

তন্ময় : মেরি জান কি হবে রে।

সিমথি : পাশে বউ রেখে বোন রে জান জান করিস শা/লা ল’ম্প/ট।

সিমথির কথায় তন্ময় কেশে সিনহার দিকে তাকায়। সিনহা তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে উঠে।

তন্ময় আর সিমথিকে ফিসফিস করতে দেখ মেঘা,তুহিন,রোদেলা ও এদের পাশে দাঁড়ায়। সায়ন ভ্রু কুঁচকে সিমথির দিকে তাকায়।

মেঘা : কি এতো ফিসফিস করছিস।

সিমথি : নাথিং।

রোদেলা : বল না রে।

তন্ময় : আহ থামবি তোরা।

সিমথি : আঙ্কেল পাচ মিনিট হয়ে গেছে কিন্তু। এবার কিছু বলেন।

তন্ময়ের বাবা : কি আর বলবো যা করার তো তোমরা করেই ফেলেছো। এখন না মানলে ও তো বিয়েটা বিয়েই হয়। আর তন্ময় যাকে নিয়ে খুশি আমি ও তাকেই বউমা হিসেবে মেনে নেবো। মিমের সময় ও আপত্তি করিনি তন্ময়ের সময় ও করবো না।

তন্ময়ের বাবার কথা শুনে সবার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠে। তন্ময় খুশিতে সিমথিকে জড়িয়ে ধরতে গেলে সিমথি কয়েক পা পিছিয়ে তুহিন কে সামনে দাড় করিয়ে দেয়। ফলে তন্ময় তুহিনকেই টাইট হাগ করে। সিমথি গিয়ে আদির বুকের সাথে বারি খায়। তা দেখে মেহেররা ঠোঁট চেপে হাসে। সিমথি দ্রুত সরে গিয়ে সায়নের পাশে দাঁড়ায়।

সিমথি : কিছু বললে বলে ফেল নয়তো রাতে ভাবীপুর ঘুম হবে না।

সিমথির কথায় সায়নের ধ্যান ভাঙ্গে।

সায়ন : আচ্ছা সবই বুঝলাম কিন্তু।

ইফাজ : তখন যে ঘোমটার আড়ালে থেকে সিমথি মানে সিনহা কথা বললো তখন ভয়েজ তোর আসলো কিভাবে।

ইফাজের কথায় সিমথি সমেত তুহিন, তন্ময়, রোদেলা, মেঘা পাঁচ জনই হেসে উঠে।

সিমথি : ডিজিটাল যুগ বাকি টা বুঝে নে।

মেঘা : আরে ও তো স্পিকারে কথা বলছিলো। চেঁচামেচি তে স্পিকারের কথা আর রিয়েল গলার পার্থক্য তোমরা ধরতে পারোনি।

মিম : মানে তোদের পেটে পেটে এতো।

সিমথি : তোমারই তো ননদ। পিচ্চি বয়সে আমার ভাইকে যখন প্রেমে ফেলতে পারছো তখন তোমার ননদ হয়ে এতোটুকু তো আমাকে করতে হতোই। নইলে মান থাকতো নাকি।

সিমথির কথায় আরেক দফা হাসির রব পড়ে যায়।

সায়ন : অনেক হয়েছে। এবার সবাই খেতে চলো।

তন্ময়ের বাবা : তাই ভালো।

সবাই চলে যেতে নিলে তন্ময়ের ডাকে আবার থেমে যায়।

তন্ময় : সিমথি শোন।

সিমথি : হুমম বল।

আচমকায় তন্ময়, তুহিন, মেঘা, রোদেলা চারজন সিমথিকে জড়িয়ে ধরে। সবাই একসাথে বলে উঠে,,,,

_ তোর মতো বেস্টফ্রেন্ড কারোর না হোক। আমরাই আনকমন থাকতে চাই।

চারজনের কথায় সিমথি হালকা হাসে।

সিমথি : যেমনটা তোদের ইচ্ছে। এবার আমাকে ফ্রেশ হবার চান্স দে।

চারজন সিমথি কে ছেড়ে দেয়। সায়নরা হেসে বাইরে চলে যায়। সিমথি সায়নদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তন্ময় দের ও ইশারা করে।

তুহিন : তুই যাবি না।

সিমথি : যাহ আসছি।

তন্ময়রা সায় দিয়ে চলে যায়।

সিমথি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আদিদের দিকে তাকায়। সিমথি আচমকায় হেসে উঠে। মেহেররা ভ্রু কুঁচকে একবার সিমথি আর একবার আদির দিকে তাকায়। সিমথি কয়েক পা এগিয়ে আদির থেকে দুপা দূরত্ব রেখে দাঁড়ায়।

সিমথি : আপনার সাহস দেখে আমি সত্যি অবাক। আমার বাড়িতেই আমার রুম থেকে আমাকে কিডন্যাপ করলেন। ইন্টারেস্টিং।

আদি : তোকে বললাম না আমার সাহস বরাবরই বেশি।

সিমথি : ইট’স টোটার্লি ইউর মিসটেক মিস্টার আদিত্য চৌধুরী আদি। আমি চেয়েছি তাই আপনি আমাকে কিডন্যাপ করতে পেরেছেন।

আদি : হুহহ আমার ভালো দিক কখনোই তোর চোখে পড়ে না।

সিমথি : ভালো দিক থাকলে অবশ্যই পড়তো।

আদি : তোর সাথে আপাতত কথা বাড়ানোর ইচ্ছে নাই৷ প্রচন্ড খিদে পেয়েছে আই নিড খাবার।

আদির কথায় সিমথি কিছুটা সরে দাঁড়ায়।

সিমথি : গো টু হেল। আর আপনার লোকগুলো আপাতত মা/ল খেয়ে টাল হয়ে আছে সামলে নিয়েন।

আদি : ওয়াটস মা/ল খেয়ে টাল হয়ে আছে সামনে তোমার ননদ, জা, দেবর, ভাসুর আছে বউ বিহেভ ইউর স্লেফ।

সিমথি : জাস্ট শাট আপ।

আচমকায় আদি সিমথিকে জড়িয়ে ধরে। সিমথি আশ্চর্য দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে শুরু করে।

আদি : ধন্যবাদ তোর মনে আদি ব্যতিত অন্য কোনো পুরুষকে জায়গা না দেওয়ার জন্য। জায়গা টা কেবল আমার জন্য বরাদ্দ রাখিস। তোর রাগে-অভিমান সব আমি ভাঙ্গিয়ে দেব একটু সুযোগ দে আমায়।

সিমথি হেসে আদির পিঠে হাত রাখে। পিঠের পাঞ্জাবি শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। মেহেররা চকিত নজরে একে অপরের দিকে তাকায়। এই বুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ওদের ধারনা কে ভুল প্রমাণিত করে সিমথি আদির পিঠের পাঞ্জাবি টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে। আদিকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দেয়। অতঃপর আদির কলার ধরে নিজের কাছে আনে। তাচ্ছিল্য সুরে বলে,,,

সিমথি : আমার দুর্ভাগ্য আমি আপনাকে ভুলে অন্য কোনো ছেলেকে ভালোবাসতে পারিনি। তাই বলে নিজের আত্ম সম্মান ভুলে পুনরায় আপনার কাছে ফিরবো এটা ভাবা বোকামি ছাড়া কিছু না। আমি সিমথি যতটা যত্নে ভালোবাসতে পারি ততটা যত্নে ছেড়ে দিতেও জানি। ছয় বছর আগে আপনাকে ছেড়েছি মানে আপনার প্রতি আমার কোনো পিছুটান নেই। আমি আপনার হবো না তেমনি অন্য কারোর হবো না। ঠিক তেমন আপনাকে আমি আমার হতে ও দেবো না অন্য কারো হতে ও দেবো না।

আদি : তো কি চাস।

সিমথি : আপনার আর আমার সম্পর্কের সমীকরণ শেষে বিচ্ছেদ লেখা আর সেটা আমি নিজে লিখবো। যতটা যত্নে ভালোবেসে স্বর্গ দেখাতে ছেড়েছিলাম কিন্তু আপনি তা চাননি। এবার তত যত্নে ছেড়ে দিয়ে নরক দেখাবো। গেট রেডি মিস্টার আদিত্য চৌধুরী আদি।

কথাগুলো বলে আদিকে ধাক্কা দিয়ে সিমথি দৌড়ে চলে যায়। মেহেররা আহত দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায় কিন্তু আদির ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসি।

চলবে,,,,,