#মিশে_আছি_তোমাতে ❤
#Writer_Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_23
.
.
.
তিশা সারা ঘর এলোমেলো করে মেঝেতে বসে আছে আর ফুফিয়ে কান্না করছে….. আবির দরজার আড়াল থেকে দাড়িয়ে তিশাকে তিশার এমন অবস্থা দেখে আবিরের বুকটা ফেটে যাচ্ছ….. আবির তিশার কাছ থেকে যে কথাটা শুনতে চাইত সেই ভালোবাসর কথাটা শুনার পরেই আবির তিশাকে জড়িয়ে ধরতে পারলো না….. আবির তিশার এমন অবস্থা সহ্য না করতে পেরে এখন থেকে চলে যায়….
অন্য দিকে মায়রা দরজা বন্ধ করে খুশিতে নাচতে থাকে….. মায়রার ইচ্ছে যে পূরন হলো আবির তিশাকে নিজে ওর জীবন থেকে চলে যেতে বলেছে….
মায়রা ফোন বের করে একজনকে ফোন করে…..
মায়রা : হ্যালো!!! তোমার কাজ এখন শেষ তাই তুমি যত তাড়াতাড়ি পরো এই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাও কারন আমি চাই না তোমার জন্য আমার প্লেন নষ্ট হয়ে যাক আর তুমি তোমার টাকা সময় মতো পেয়ে যাবে….
মায়রা ফোনটা কেটে দিয়ে একটা হাসি দেয়….
মায়রা : তিশা বেবি এখন তুমি কি করবা সব চেয়ে শেষ হয়ে গেলো আবির যে তোমাকে আর ভালোবাসে না……এখন আবির শুধু আমাকে ভালোবাসবে….
মায়রা এই কথাটা বলেই জোরে জোরে হাসতে থাকে…..
অন্য দিকে আবির ছাদের উপরে বসে একের পর এক সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে…..
আবির : আইএম সরি জান আইএম সরি আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও আমি জানি আজকে আমার জন্য তুমি খুব কষ্ট পেয়েছো কিন্তু আমার যে কিছু করার নেই আমি চাই না আমার জন্য তোমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক তার জন্য যে তোমাকে আমার থেকে দুরে টেলে দিতে হবে জানি এটা করতে আমার খুব কষ্ট হবে কিন্তু তারপরএ আমি এই কাজটা করবো তোমার ভালোর জন্য তোমার জীবনটা আমি সুন্দর করে সাজিয়ে রেখে যাবো সুন্দর করে….
আবির ছাদ থেকে নেমে ঘরে গিয়ে দেখে তিশা কান্না করতে করতে মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ে….. আবির বিছানার চাদে চেইন্জ করে দিয়ে তিশাকে বিছানাতে শুয়েই দেয় আবির তিশার দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকে আবির কিছুক্ষন তিশার দিকে তাকিয়ে তিশার কাছ থেকে চলে আসতে চাইলে তিশার চুলের সাথে আবিরের ঘড়িটা আটকে যায় আবির অনেক চেষ্টা করে কিন্তু তিশার চুল থেকে নিজের ঘড়িটা খুলতে পারে না তাই না তাই বাধ্য হয়ে আবির হাত থেকে ঘড়িটা খুলে তিশার কাছেই রেখে দেয়….. আবির চলে যাবার আগে তিশার কপালে ভালোবাসর পরশ একে দিয়ে বলে….
আবির : সরি জান পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো…..
আবির এই কথা বলে চলে যায় ঘর থেকে নিচে গিয়ে কিছু কাজের লোককে পাঠায় ঘরটা পরিস্কার করার জন্য আবির সাথে এটাও বলে দেয় যেন তিশার ঘুম যেন ভাঙ্গে তাই আস্তে আস্তে কাজ করার জন্য……ড্রায়িং রুমের সোফাতেই আবির শুয়ে পড়ে….. মায়রা উপর থেকে সব কিছু থেকে একটা হাসি দেয়……
ভোরে নিরব লন্ডন থেকে ফিরেছে দেশে অফিসের কাজ শেষ করে কিন্তু এয়ারর্পোটে আবিরকে দেখতে না পেয়ে নিরভ একটু কষ্ট পায় কথা ছিলো নিরবকে নিতে আবির আসবে….
নিরব : ভাইয়া কোথায়???
সোহেল : আসলে স্যারকে ফোন করছি কিন্তু ফোন ধরছে না….
নিরব : কি ফোন ধরছে না মানে…. আমি প্লেনে ছিলাম তার জন্য ভাইয়াকে ফোন করতে পারি নি কিন্তু ভাইয়া ফো ধরছে না….
সোহেল : আচ্ছা আগে বাড়ি চলুন….
নিরব : হুম….
তিশা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ও বিছানাতে শুয়ে আছে…..
তিশা : আমি তো নিচে ছিলাম বিছানাতে আনলো কে…..
তিশা চুলে হাত দিতেই দেখে আবিরের ঘড়ি তিশার বুঝতে বাকি রইলো কে ওকে বিছানাতে এনেছে…..তিশা তাকিয়ে দেখে ঘরটা গুছানো
তিশা : কেন আমার সাথে এমন করছেন কেন??? আপনি যদি আমাকে ভালো নাই বাসেন তাহলে আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করেন কেন আপনি কি দোষ করেছি যে আপনি আমাকে বারবার শাস্তি দিচ্ছেন……. কিন্তু আমিও এর শেষ দেখে ছাড়বো যে মানুষটা গতবকাল পর্যন্ত আমাকে ভালোবাসার কথা বলে আমার কানের পোকা নাড়িয়ে ফেলতে সেই মানুষটা আর কয়েকটা ঘন্টার মধ্যে কি এমন ঘটলো যে আমাকে ভালোই বাসে না…. ওই মায়রা নিশ্চয়ই কিছু করেছে ওকে তো আমি দেখে নিবো….কিন্তু ওনি কোথায় ঘরে তো নিয়ে তাহলে কোথায় গেলো…..
তিশা নিচে গিয়ে দেখে আবির সোফাতে শুয়ে আছে…..
তিশা : ওনি এখানে ঘুমিয়ে ছিলেন সারারাত আমাকে কি এতটাই ঘৃনা করেন ওনি যে আমার সাথে এক ঘরে থাকতে পারেন না ( মনে মনে বলে তিশা কথা গুলো)
তিশা এক পা এক পা করে আবিরের দিকে এগিয়ে যায় আবিরের কাছে গিয়ে আবিরকে সাথে সাথে কলিং বেল বেজে ওঠে….. কলিং বেলের শব্দ আবির ঘুম থেকে উঠে পড়ে আবির চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তিশা….. আবির তিশার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে…..
আবির : ( এক দিনে কান্না করে মেয়েটা চেহারার কি হাল করেছে না জানি বাকি দিনগুলো তে ও কি করবে….. খোদা তুমি কেন আমাকে এত বড় একটা পরীক্ষার মধ্যে ফেললে কেন???)
আবার কলিং বেল বেজে ওঠে কলিং বেলে শব্দে আবির ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে আবির সোফা থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে দেখে নিরব…….
নিরব : ভাইয়া তোমার কি হয়েছে??? আমাকে এয়ারর্পোট থেকে আনতে গেলে না…..
আবির : ( আমাকে আমার ছোট ভাইটাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে এটা আমি কি করে সহ্য করবো কি করে আমি না হয় সহ্য করে নিবো কিন্তু নিরব নিরব কি করে সহ্য করবে কি করে)
নিরব : ভাইয়া কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলে……
আবির : সরি ভাই আমার আর এমন ভুল হবে না এবার থেকে তকে আমি সবসময় এয়ারর্পোট থেকে নিয়ে আসবো……
নিরব : প্রমিজ করছো তো……
আবির : হুমমম…. এবার তুই ফ্রেস হয়ে নে
নিরব : হুমমমমম
নিরব চলে যায় তিশা আবিরের পাশে এসে দাড়াতেই আবির তিশাকে না দেখার ভান করে চলে যায় তাতে তিশার খুব হয় কিন্তু তার থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে আবির…. আবির কোনো দিন ভাবতেও পারে নি যে তিশাকে এভাবে কষ্ট দিতে হবে……
তিশা : ওনি আমার সাথে কেন এরকম করছে কেন???
এমন সময় মায়রা আসে তিশার কাছে…..
মায়রা : কি হলো আবির ইকনোর করছে তোমাকে এটা তো হওয়ারেই ছিলো….
তিশা : মানে……
মায়রা : আসল কি বলতো তিশা আবির তোমাকে দেখে মোহে পড়ে গিয়েছিলো আবিরের মতো এত বড় লোক ছেলে তোমাকে কি করে ভালোবাসতে পারে বলো এটা জাস্ট মোহ ছিলো তোমার প্রতি কোনো ভালোবাসা না বুঝলে….. আর এখন তোমার প্রতি যে মোহটা ছিলো সেটা কেটে গেছে তাই এখন তোমাকে ওর জীবন থেকে ছুড়ু ফেলে দিবে ঠিক যেমন অকেজো জিনিস ছুড়ে ফেলে দেয় তারমতো……
তিশা : আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না বুঝলে আর তুমি কি করে জানলে যে ওনি আমাকে ইকনোর করছে তার মানে এর পিছনে নিশ্চয়ই তোমার কোনো হাত আছে……
মায়রা : হাত আছে কি নেই সেটা তোমাকে বলার কোনো রুচি নেই আমার বুঝলে…..
মায়রা কথাটা বলে এখান থেকে বের হয়ে যায়…… তিশাও দৌড়ে ঘরে গিয়র দেখে আবির রেডি হচ্ছে….
তিশা : আপনি এতো সকালে কোথায় যাচ্ছেন???
আবির কোনো কথা বলছে না….
তিশা : কি হলো আমার কথা আপনি শুনতে পাচ্ছেন না…… এত সকালে আপনি কোথায় যাচ্ছেন????
আবির : যেখানেই যাই না কেন তোমাকে বলার কোনো ইচ্ছে নেই আমার আর তোমার যদি কমন সেন্স থাকতো তাহলে বুঝতে পারতে যে আমি কোথায় যাচ্ছি…..
তিশা : আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন????
আবির : প্লিজ তিশা আামকে বিরক্ত করো না……
আবির ঘর থেকে বের হতে যাবে সাথে সাথে তিশা বলে ওঠে…..
তিশা : আপনি নাস্তা করবেন না…..
আবির : নাহ……
আবির এই কথাটা বলেই ঘর থেকে চলে যায়….. আবির যে আর সহ্য করতে পাচ্ছে না এই কষ্ট তিশার এত কাছে থেকেও তিশার কাছে যেতে পারছে না আবির তার জন্য আমি না পেরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়…..
আবির অফিসে বসে আছে দু হাত দিয়ে মাথায় ধরে এমম সময় মায়রা আবিরের কেবিনে আসে……
মায়রা : আবির তুমি ঠিক আছো…..
আবির : হে আমি ঠিক আছে…..
মায়রা : আবির আমাকে কিছু দিনের জন্য লন্ডনে যেতে হবে তাই এখন তোমাকেই সবকিছু সামলাতে হবে…..
আবির : ঠিক আছে……
মায়রা : আর তিশার ব্যাপারে কি ভেবেছো আবির????
আবির : এখনো কিছু ভাবি নি……
মায়রা : ঠিক আছে আবির আমি এখন আসি তবে সবসময় মনে রেখো তিশাকে কিন্তু তোমার ইকনোত করে চলতে হবে যাতে ও তোমাক ঘৃনা করে তোমার জীবন থেকে চলে যেতে পারে আর তাতেই তিশার ভালো হবে……
আবির : কি করে আমি ওকে ইকনোর করবো মায়রা কি করে??? ওর ওই চেহারাটা দেখলেই আমি হারিয়ে যাই ওর মাঝে তাহলে কি করে আমি ওকে ইকনোর করবো আমি আর পারছি না মায়রা……
মায়রা : আবির তোমাকে শক্ত থাকতে হবে অন্তত তিশার ভালোর জন্য…..
আবির : হুমমমমম
মায়রা : আবির আমি এখন আসি আমার দেরি হয়ে গেছে…..
তিশা আবিরকে ফোন করে সারা দিনে অনেক বার কিন্তু আবির তিশার ফোন এক বারও ধরে নি……
তিশা : এত বড়ো সাহস সারাদিনে একবারও ফোন ধরলো না পমার….. ওই ডায়রিয়া চলে যাওয়ার পরেও কি জাদু করে রেখে গেল যে আমাকে এখন দুচোখেও দেখতে পারে না আগে তো কত ভালোবাসতো তখন আমি ওনাকে ইকনোর করতাম আর এখন আমি ওনাকে ভালোবাসি আর ওনি আমাকে করছে প্রতিশোধ নিচ্ছে নাকি সে আমার সাথে মানলাম আমি ভুল করেছি তাই ভুল বুঝেছি তা বলে এভাবে আমাকে ইকনোর করবে ….. আজকে তো আমাকে জবাব দিতেই হবে না হলে খবর আছে ওই আবির রহমানে….. কি পেয়েছে টাকি আমাকে খেলার পুতুল যে ইচ্ছে হলে রাখলো আর ইচ্ছে না হলেই ছুড়ে ফেলে দিলো……
#চলবে