#মিশে_আছি_তোমাতে ❤
#Writer_Nusrat_Jahan_Bristy
#part_24
.
.
.
.
আবির রাত বারোটার দিকে বাড়িতে ফিরে….. তিশা আবিরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মেঝেতে বসে বিছানাতে মাথা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে…. আবিরের গাড়ির শব্দ শুনে তিশা জেগে যায়….. আবির ঘরে ডুকেতেই তিশাকে সজাগ দেখে আবাকে হয়ে যায় আবির ভেবেছিলো তিশা হয়তো ঘুমিয়ে যাবে তার জন্যই বাড়িতে দেরি করে ফিরেছে…. তিশা আবিরের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে…..
তিশা : কি হলো ভিতরে আসবেন না… নাকি ঘরের বাইরেই দাড়িয়ে থাকবেন….
আবির চুপচাপ ঘরের ভিতরে ডুকে…. তিশা আবিরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে দু ভ্রু নাচিয়ে বলে….
তিশা : কি সমস্যা আপনার???
আবির : আ…. মার আ.. বার কি সমস্যা হবে….
তিশা : কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি কোনো সমস্যাতে আছেন…. কি সমস্যা হয়েছে বলুন?? ( গম্ভীর হয়ে বলে)
আবির : তিশা প্লিজ আমাকে বিরক্ত করো না আমার ভালো লাগছে….
তিশার মেজাজটা বিগড়ে যায় আবিরের কথা শুনে….
তিশা : এই যে মিস্টার আবির রহমান যখন আপনি আমাকে বিরক্ত করতেন তখন তো আপনার খুব ভালো লাগতো তাই. না … এখন আপনার কেন ভালো লাগছে না আমার বিরক্ত……. আপনি আমাকে কি পেয়েছেন কোনো খেলনা যখন ইচ্ছে তুলে ঘরে সাজিয়ে রাখবেন আবার যখন ইচ্ছে হবে ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন…. (তিশা আবিরের কলার চেপে ধরে) আপনাকে আজকে বলতেই হবে কি এমন হলো যে আপনি আমাকে আর ভালোই বাসেন না….
আবির : তিশা প্লিজ আমাকে ছাড়ো আমার ভালো লাগছে না….
তিশা : ভালো লাগছে না মানে আগে তো আপনার কাছে আসলে ঠিকেই ভালো লাগত তাহলে এখন কেন ভালো লাগে আমাকে কেন??? কেন আপনি আামকে কষ্ট দিচ্ছেন কেন??? যখন আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করলাম তখনেই আপনি আমাকে এভাবে ইকনোর করা শুরু করলেন কেন????
আবির : তিশা প্লিজ আমাকে ছাড়ো….
তিশা : ঠিক আছে ছেড়ে দিছি….
তিশা আবিরের কলার ছেড়ে দেয়….. আবির অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নেয় কারন আবির আর এসব নিতে পারছে না
তিশা : আপনি হয় আজকে আমাকে বলবেন কেন আপনি আামকে ইকনোর করছেন আর না হয় আমি নিজেকে শেষ করবো এখন আপনি বেছে নেন আপনি কি করবেন ….
আবির তিশার দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখে তিশা গলাতে ছুড়ি ধরে আছে….. আবিরের তো প্রান যায় যায় অবস্থা তিশার এমন অবস্থা দেখে…..
আবির : তিশা এসব কি করছো তুমি ছুড়িটা ফেলে দাও না হলে গলাতে লেগে যাবে…..
তিশা : লেগে যাক তাতে আপনার কি আপনি তো আর আমাকে ভালো বাসুন না তাই আমি মরি বা বাচি তাতে আপনার কোনো যায় আসে না….
আবির : তিশা এমন পাগলানো করো না দেখো ছুড়িটা গলাতে লেগে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে…..
তিশা : হয়ে যাক সর্বনাশ তাতে আমার কোনো যায় আসে না….
আবির : তিশা এমন কারো না….
তিশা : তাহলে আপনি বলুন আমাকে কেন আপনি আমার সাথে এমন করছেন??? কেন আমাকে এভাবে আপনি ইকনোর করছেন কেন???
আবির : তিশা তোমার গলাতে লেগে গেছে দেখো রক্ত বের হচ্ছে….
তিশা : একদম কাছে আসবেন না আপনি আমার তাহলে কিন্তু আমি ছুড়ি চালিয়ে দিবো….
আবির : নাহ তুমি এটা করতে পারো না….
তিশা : ঠিক আছে করবো না তাহলে বলুন আামাকে…. আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন???
আবির : তিশা তুমি সহ্য করতে পারবেনা শুনলে….
তিশা : আমি সহ্য করতে পারবো কিন্তু আপনার ইকনোর আমি সহ্য করতে আর পারছি না…. প্লিজ আমাকে বলুন দয়া করে প্লিজ….
আবির : ঠিক আছে আমি বলছি কিন্তু তুমি বলার সাথে সাথে ছুড়িটা ফেলে দিবে….
তিশা : হুম ফেলে দিবো…
আবির যা বলে তা শুনে তিশার হাত থেকে ছুড়িটা পড়ে যায়…. তিশার হাত পা সব অবশ হয়ে আসছে নিজেকে আর শক্ত করে রাখতে পারছে না… তিশা ধপ করে বিছানাতে বসে পড়ে… আবির তিশার কাছে তাড়াতাড়ি গিয়ে রুমাল বের করে তিশার গলা চেপে ধরে ছুড়ির আঘাতে তিশার গলা থেকে রক্ত বের হচ্ছে….
আবির : তিশা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো….
তিশা : আপনি আপনি কি বললেন এই মাএ….. আপনার ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে মানে
আবির : তুমি যা শুনেছো তাই সত্যি….
তিশা : নাহ আমি বিশ্বাস করি না আপনি মিথ্যা কথা বলছেন যাতে আমি আপনার জীবন থেকে চলে গেলে মায়রাকে বিয়ে করতে পারেন…. ( আবিরের কলার ধরে জোরে বলে)
আবির : তিশা আস্তে কথা বলো তোমার গলাতে চাপ পড়লে রক্ত পড়া বন্ধ হবে না…..
তিশা : চাপ পড়ুক আপনি আগে বলুন আপনি যা বলেছেন সেটা মিথ্যে কথা….
আবির : না তিশা এটাই সত্যি আমি আর বাচবো না বাচলেও আর এক মাস তাই তোমাকে বলছি তিশা তুমি আমার জীবন থেকে চলে যাও গিয়ে নতুন জীবন শুরু করো….
তিশা : কি বললেন আপনি???
আবির : হে তিশা তুমি চলে যাও তাতে তোমারেই ভালো…
তিশা : আপনি আমার সাথে মজা নিচ্ছেন তাই না আপনি ভাবলেন কি করে আমি এখান থেকে চলে যাবো কিছুতেই না… আর রইল এই মরার ব্রেন ক্যান্সার আমি বিশ্বাস করি না….
আবির : তোামকে বিশ্বাস করতে হবে তিশা কারন এটাই সত্যি…
তিশা : ঠিক আছে তাহলে রির্পোট গুলো দেখান আমাকে….
আবির : রির্পোট তো এখন আমার কাছে নেই অফিসে আছে….
তিশা : আচ্ছা কোন ডক্টরের কাছে গিয়েছেন আপনি….
আবির : মায়রা নিয়ে গেছে ওর চেনা ডক্টরের কাছে…..
তিশা : ঠিক আছে তাহলে আমিও আপনাকে কালকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো আমি আপনাকে আমার মতো করে চিকিৎসা করাবো….আপনি কিছুতেই আমাকে রেখে চলে যেতে পারেন না কারন আমাদের কাহিনী এখনও পূর্ন হয় নি…..
আবির : তিশা আমিও চাই না তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে আমি তোমার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চাই আমি মরতে চাই না তিশা মরতে চাই না……
আবির তিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়…..
তিশা : সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে আমি সবকিছু ঠিক করে দিবো সবকিছু ( আমি জানি এটা ওই মায়রা ডাইনিটার কাজ ওর জন্যই এসব হচ্ছে ওকে তো আমি কিছুতেই ছাড়বো না…..)
সারারাত আবির তিশাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো…… সকালে তিশা আর আবির ফেমেলি ডক্টরের কাছে যায়….
আবির : তিশা আমার খুব ভয় করছে….
তিশা : আরে ভয় পাবেব না আমি জানি আপনার কিছু হয় নি……
আবির : এতটা জোর দিয়ে তুমি কি করে বলছো…..
তিশা : আমার বিশ্বাস আছে আমার ভালোবাসর উপরে তাই আপনার কিছুই হবে না……
আবিরকে সব টেস্ট করে…… এক ঘন্টা পর সব টেস্টের রির্পোট আসে….
আবির : ডক্টর আঙ্গেল আমার রির্পোটে কি আসছে???
ডাক্তার : আবির তুমি তো একেবারে সুস্থ তোমার কোনো ব্রেন কান্সার হয় নি…. আর এই রির্পোট গুলো মিথ্যা তুমি সর্ম্পূ সুস্থ…..
আবির : হোয়াট???? এই রির্পোট গুলো সব ভুয়া….
ডাক্তার : হে আবির এগুলো সব মিথ্যে…..
তিশা : ডক্টর আঙ্গেল সত্যি বলছেন আপনি…..
ডাক্তার : কি যে বলো মা আমি ২৫বছর ধরে ডাক্তারগিরি করছে আর আমি ভুল করবো সেটা কি করে হয় মা…….
আবির : তারমানে ওই ডাক্টর নকল ছিলো….. ( মনে মনে)
ডাক্তার : কিন্তু আবির তোমাকে এসব রির্পোড় কেন ডক্তার দিলো……
আবির : আঙ্গেল আমি আপনাকে পরে সব খুলে বলবো এখন আমাকে যেতে হবে তিশা চলো…..
তিশা : কোথায় যাবো???
আবির : কথা না বলে তাড়াতাড়ি চলো……
আবির গাড়ি তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করে যায় যে জায়গাতে মায়রা ওক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো…… কিন্তু আবির ওখানে পৌছে গিয়ে দেখে কোনো ডাক্তার নে বরং এখানে একটা মুদির দোকান……. আবিরের বুঝতে আর বাকি রইলো না কে এসব করেছে…..
তিশা : কি হলো আমরা এখানে কেন এসেছি????
আবির : গাড়িতে উঠো…..
তিশা : হুম…….
আবির : তোমাকে আমি বাড়িতে পৌছে দিয়ে আমার একটু অফিসে যেতে হবে…..
তিশা : কিন্তু…..
আবির : তিশা তুমি বুঝতে পারছো আমাকে কত বড় একটা শক খেতে হয়েছে এই দু দিনে…. এর তো আমি শেষ দেখে ছাড়বো কে বা কেন আমার সাথে এমন করেছে….. তাই তুমি এখন বাড়িতে যাও আর আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো আমার জানের কাছে……
আবির তিশার কপালে একটা কিস করে….. আবির তিশাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে অফিসে যায়……
আবির : মায়রা কেন এটা করলো আমার সাথে এতে ওরকি স্বার্থ লুকিয়ে আছে কি স্বার্থ আর ওই ভুয়া ডাক্তারের কোনো উদিসই পেলাম না…..
আবির মায়ারকে ফোন করে…..
আবির : হ্যালো মায়রা……
মায়রা : হে আবির বলো সবকিছু ঠিক আছে তো…..
আবির : হুম ঠিক আছে কিন্তু আবার ঠিকও নেই…..
মায়রা : মানে…..
আবির : মানে তুমি কবে ফিরছো….. আসলে আমি এখানে সব কিছু সামলাতে পারছি না বুঝতেই তো পারছো আমার কি অবস্থা……
মায়রা : আমি কালকেই ফিরছি আবির তোমাকে আর টেনশন করতে হবে না…. আর আবির তুমি কি তিশাকে কিছু বলেছে
আবির : কি বলবো???
মায়রা : না মানে তোমার ওই ব্রেন কান্সারের কথা…..
আবির : না বলি এখনোও
মায়রা : তুমি বলো না এই কথাটা আবির তিশাকে তুমি বরং তিশাকে ইকনোর তাহলেই ও তোমার জীবন থেকে সরে যাবে এমনিতে…..
আবির : হুম…. ঠিক আছে আমি এখন রাখছি
মায়রা : হুম বাই…..
আবির : তারমানে মায়রা ইচ্ছে করে এসব করেছে ওর কথা শুনে যতটুকু বুঝতে পেরেছি তিশাকে আমার জীবন থেকে সারানো ওর মেইন টার্গেট কিন্তু মায়রা তুমি যে ধরা পড়ে গেছো তোমার এই প্লেন সফল হবে……
#চলবে