#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৩৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ইভানা ও ফারজানা বেগমকে ইভানাদের বাসায় পৌঁছে দিল ফাহিম। কিছুক্ষণ থেকে সে বেরিয়ে গেল। এদিকে ইভানা সবার সাথে মিলে আনন্দ করতে লাগল।
ঈদ উপলক্ষে ইভানার অনেক কাজিনদের ভিড় জমেছে বাড়িতে। ইশরাত খাতুন রান্নায় ব্যস্ত। ফারজানা বেগম ইভানার এক চাচির(নিজের নয়) গল্প করছেন।
এদিকে তোহা ইভানার হাতে মেহেদী করিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,
‘এত বড় হয়ে গেলি তাও মেহেদী পড়া শিখতে পারলি না! আমাকেই পড়িয়ে দিতে হচ্ছে।’
ইভানা বলল,
‘আমিও তো পারি, কিন্তু তোর মতো এত সুন্দর পারি না।’
তোহা পুনরায় মেহেদী দেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে গেল৷ সুন্দর করে নকশায় রাঙিয়ে দিল হাত। এরমধ্যে ইভানা হঠাৎ বলে উঠল,
‘আমাকে সাজানোর পর নিজের দিকে একটু নজর দিও। আজকে তো রাফিদের আসার কথা তাইনা?’
ইভানার এহেন কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেল তোহার গাল। সে লাজুক হাসি দিয়ে বলল,
‘বিয়ের পর তুই কিন্তু বড্ড পেকে গেছিস। বড় বোনের সামনে এ কি কথা! বেয়াদব। ঈদের দিন আমার হাতে মা’র খাবি কিন্তু।’
ইভানা এসব কথা গায়ে মাখলো না যেন। সে প্রসঙ্গটাকে আরো গাঢ় করার জন্য বলল,
‘থাক, এত লজ্জা পেতে হবে না। আমি জানি তুই মনে মনে কত আগ্রহ নিয়ে রাফিদের আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছিস।’
‘ভুল জানিস তুই। আর একটা বাজে কথা বললে কিন্তু আমি আর তোর হাতে মেহেদী দেবো না। বলে দিলাম।’
ইভানা আর কথা বাড়ালো না। এসবের মধ্যে হঠাৎ করেই তারিকুল ইসলাম এসে পড়লেন। তোহাকে তাড়া দিয়ে বললেন,
‘তুমি এখনো বসে আছ কেন? রাফিদদের আসার সময় হয়ে গেছে। যাও গিয়ে তৈরি হয়ে নাও।’
ইভানা সেই ঘটনার পর থেকে তারিকুল ইসলামের সাথে সেভাবে কথা বলে নি। বাবা-মেয়ের মধ্যে একটা অদৃশ্য দেয়াল যেন তৈরি হয়ে আছে। ফাহিম কাল রাতেই ইভানাকে বলেছিল, এই ঈদ উপলক্ষে যেন সবকিছু ঠিক করে নেয়। তাই ইভানা সেই কথাটা শুনল। উঠে দাঁড়িয়ে তারিকুল ইসলামকে সালাম জানিয়ে বলল,
‘কেমন আছ আব্বু?’
‘আলহামদুল্লিলাহ, তুমি কেমন আছ মা?’
‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ।’
অবশেষে তাদের মধ্যে ঠিক হলো সবকিছুই।
৭৩.
তোহার পড়নে লাল রঙের একটি লেহেঙ্গা। যেটাতে খুব সুন্দর লাগছে তাকে। তোহা আয়নার সামনে বসে আছে। ইভানা তোহার গালে হাত দিয়ে বলে,
‘আমার আপাইকে একদম পরীর মতো লাগছে। হায় কি সুন্দর তুই আপাই! আমিই তো ক্রাশ খেয়ে যাচ্ছি। রাফিদ তো পাগলই হয়ে যাবে। আমি শুধু ওর অপেক্ষায় আছি।’
‘কি সব যে বলিস না তুই। আমার লজ্জা পাচ্ছে খুব।’
‘তোর আবার কবে থেকে এত লজ্জা রে আপাই? আমি তো আগে কখনো তোর লাজুক রূপ দেখিনি।’
‘অন্যদিন আর আজকের মধ্যে কি কোন পার্থক্য নেই?’
‘হুম। তাও ঠিক। যাইহোক যত লজ্জা বিয়ের আগেই পেয়ে নে। বিয়ের পর এত লজ্জা টজ্জা পাওয়ার দরকার নেই। রাফিদ তো আমেরিকায় থাকে অনেক ফ্রি মাইন্ডেট হবে, তাই তোর এত লজ্জা পেলে চলবে না। এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে।’
তোহা কিছু বলল না। এসবের মধ্যে ঘটে গেল আরেক ঘটনা! তোহার কানের একটা দুল হারিয়ে গেল। দুলটা অনেক দামি। ইভানা খুঁজতে লাগল কিন্তু পারল না। এমন সময় রুমে প্রবেশ করলেন ইশরাত খাতুন। তিনি এসে তোহাকে দেখে বললেন,
‘মাশাল্লাহ, কি সুন্দর লাগছে তোকে। নিচে চল এখন। ওনারা চলে এসেছেন।’
তোহা বলল,
‘আমার ইয়ার রিং(দুল) টা খুঁজে পাচ্ছি না আম্মু।’
‘আছে এখানে কোথাও তুই এখন নিচে চল।’
ইভানা তোহার সহিত চলল নিচে। দুবোন মিলে নিচে নামতেই দেখল রাফিদ সপরিবারে হাজির হয়েছে। তোহা রাফিদকে শেষ দেখেছিল বছর পাঁচেক আগে। শেষ বার যখন তারা আমেরিকায় গেছিল তার কিছুদিন আগে ঘুরতে গিয়েছিল রাফিদদের বাসায়। রাফিদের সাথে তোহার কখনো সেরকম বন্ধুত্ব ছিল না। কিন্তু ইভানার সাথে বেশ ভাব ছিল রাফিদের৷
তোহার কেন জানি আজ একটু অন্যরকম লাগছে। এমন অনুভূতির সম্মুখীন আগে কখনো তাকে হতে হয়নি৷ তারিকুল ইসলাম তোহা ও ইভানাকে দেখে বলল,
‘তো।রা দাঁড়িয়ে আছ কেন? আসো বস এখানে। ইভানা তোমার আপুকে নিয়ে আসো।’
ইভানা তোহাকে এনে সামনে বসায়৷ তোহা লাজুক মুখ করে বসে থাকে। রাফিদের দিকে একবার আড়চোখে তাকালে দেখতে পায় রাফিদ ফোন চাপায় ব্যস্ত। যা দেখে তোহার কেন জানি অভিমান হলো খুব।
এরমধ্যে রাফিদ একবার কথা বললো বটে। তবে সেটা ইভানার সাথে। ইভানাকে উদ্দ্যেশ্য করে সে বলল,
‘শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে। ইস! দেশে ছিলাম না জন্য মিস করলাম।’
ইভানা স্মিত হেসে জবাব দেয়,
‘কোন ব্যাপার না। তুমি আমার বিয়ে মিস করেছ তো কি ভাইয়া। আমি কিন্তু তোমাদের বিয়ে মিস করব না।’
বলেই তোহার দিকে তাকিয়ে চোখ মা’রে ইভানা। তোহা রাগী নজরে তাকায়। ইভানা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে।
৭৪.
রাফিদ ও তোহাকে একসাথে কথা বলার জন্য ছাদে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দুজনের কেউই কোন কথা বলতে পারছে না। কেউই বুঝতে পারবে না কিভাবে কথা বলা শুরু করবে।
রাফিদ নীরবতা ভঙ করে বলল,
‘কি খবর তোমার? শুনলাম মেডিকেলে পড়ছ।’
‘হুম।’
‘পড়াশোনা কেমন চলছে? তোমাকেও কিন্তু আঙ্কেলের মতো ভালো ডাক্তার হতে হবে।’
‘ইনশাল্লাহ।’
‘তোমার কি এই বিয়েতে তো অমত আছে? থাকলে বলতে পারো।’
‘না, আমার কোন অমত নেই।’
‘কিন্তু আমার তো থাকতে পারে তাইনা?’
তোহা কেমন ব্যথিত দৃষ্টিতে রাফিদের দিকে তাকায়। রাফিদ হেসে বলে,
‘কিন্তু আমার কোন অমত নেই। বাই দা ওয়ে তোমার এক কানে ইয়ার রিং,আরেক কান ফা*কা কেন?’
‘একটা ইয়ারিং হারিয়ে গেছে।’
তোহাদের ছাদে একটা কাঠগোলাপের গাছ ছিল। রাফিদ সেখান থেকে একটা কাঠগোলাপ ছি’ড়ে নিয়ে তোহার কানে গুঁজে দিয়ে বলে,
‘এতক্ষণ ফাকা ফাকা লাগছিল। এখন একদম পার্ফেক্ট লাগছে।’
তোহার খুব ভালো লাগে ব্যাপারটা। নিজেকে বড্ড সুখী মনে হচ্ছে। কিন্তু এটা কি আদৌ সুখ? নাকি কোন মরিচীকা!
★★★
ইভানা নিচে বসে সবার সাথে গল্প করছিল। এমন সময় তার ফোন হঠাৎ করে বেজে ওঠে। ইভানা ফোন হাতে নিয়ে দেখে ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজ চেক করতেই দেখে ফাহিম লিখেছে,
‘বাইরে এসো। তোমার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।’
ইভানার ভ্রু কুচকে গেল। ফাহিম এত দ্রুত ফিরে এলো! ব্যাপারটায় অবশ্য বেশ খুশিই হলো ইভানা। দ্রুত বাইরে চলে গেল৷ কিন্তু বাইরে এসে ফাহিমকে না দেখে মন খারাপের রেষ বয়ে গেল। সে অভিমানী স্বরে বললো,
‘তাহলে কি উনি আমায় ঠকালেন?’
এমন সময় কেউ পেছন থেকে ইভানার চোখ চেপে ধরে। ইভানা খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বলে,
‘ফাহিম!’
ফাহিম প্রতিত্তোরে বলে,
‘চলো আজ ঈদে দুজনে মিলে একে অপরের হাত ধরে ঘুরে বেড়াই।’
ইভানা খুশি হয়ে যায়। অতঃপর দুজনে ঘুরতে বের হয়। একসাথে ফুচকা, আইসক্রিম খায়। পার্কে যায়। ফাহিম ইভানাকে বলে,
‘চলো এখন লং ড্রাইভে যাই। ভাইয়া কক্সবাজারে যাওয়ার আগে তার গাড়িটা আমায় দিয়ে গেছে।’
ইভানা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। আজকের ঈদটা তার কাছে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ফাহিমের কপালে ঘাম জমছিল। ইভানা সেই ঘাম সযত্নে মুছিয়ে দিয়ে বলে,
‘আমার জীবনে আল্লাহর দেওয়া সেরা উপহার কি জানেন?’
‘কি?’
‘আপনি।’
ফাহিম হেসে দেয় ইভানার কথা শুনে। অতঃপর দুজনে লং ড্রাইভে চলে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨