মিষ্টি রোদের হাতছানি পর্ব-৩৫+৩৬+৩৭

0
1031

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_35

পশ্চিম আকাশের দিকে সূর্য ধীরে ধীরে নেমে আসছে।সূর্যমামা তার তীব্রতা কমিয়ে পশ্চিম আকাশের বুকে প্রায় ঢলে পড়ছে।ফলে বাইরের বাতাসে উষ্ণ ভাব ছড়িয়ে পড়েছে।এই সময়টা বেশ মনোমুগ্ধকর।বিকেলের এই সময়টা জারার ভীষণ পছন্দের।কিন্তু আজ ব্যাপারটা ভিন্ন।জারা নীল জামদানি গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে।আর তার কাঁধ অব্দি সিল্কি কালার করা চুল গুলো বাতাসে এলোমেলো হচ্ছে বার বার।বেশ বিরক্ত হয়ে সেই চুল কানে গুজে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে।উদ্দেশ্য রিমির বাসা।

কোনো প্রোগ্রাম হলেই এই শাড়ি পড়ার ভুত আরজুর মাথায় ঢুকে।নিজে তো পড়বেই সাথে ওদেরও বাধ্য করবে।এমন মিষ্টি করে রিকোয়েষ্ট করে যে মানা করার সাধ্য থাকে না।এই মেয়ে একটা ব্ল্যাকমেইলর।এমন মিষ্টি করে ওই নেতার সামনে কথা বলতে পারলে এতো দিনে ওই নেতা ওদের দুলাভাই হয়ে যেত।কিন্তু এই আবাল সেটা পারবে না।যত নেকামি ওদের সাথে।

রাস্তায় একটা রিক্সাও না পেয়ে জারা বেশ বিরক্ত হলো।ড্রাইভার আংকেল ছুটিতে বাড়িতে গেছেন।নাহলে গাড়ি নিয়ে বের হওয়া যেতো।কেনো যে ড্রাইভিং শিখলো না।এইবার অবশ্যই ড্রাইভিং শিখতে হবে।

জারা হাত ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে খেয়াল করলো একটা বাইক তার ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।জারা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে চিনতে চেষ্টা করলো।কিন্তু হেলমেট থাকার কারণে ঠিক চিনতে পারলো না।জারা বিরক্ত হয়ে বললো

-“আরে!!বাইক এখানে থামিয়েছে কেনো?আমার মাথায় উঠিয়ে দেন না!!! স্টুপিড কোথাকার।”

জারার কঠিন কথা শুনে ছেলেটি মাথা থেকে হেলমেটটি খুলে নিলো। ছেলেটিকে দেখে জারা চমকে গেলো।আর তার মাথায় যেনো রাগ তর তর করে বাড়তে লাগলো।

-” তুমি আমার বাসার সামনে কি করো? আমার বাসা চিনলে কি করে?আমাকে ফলো করতে করতে বাসার সামনে পর্যন্ত চলে এসেছো?”

জাহিদ মুচকি হেসে বললো
-” আপনার বাসা চিনা জাস্ট ওয়ান টু এর ব্যাপার।আমি তো আপনার ফ্ল্যাট নম্বরও জানি।ফোর ডি রাইট?”

জারা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো।এই ছেলে এতো কিছু কি করে জানলো?জারাকে অবাক হতে দেখে জাহিদ আবার বললো
-“এতো জলদি অবাক হলেন?শশুর আব্বার নাম পর্যন্ত আমার জানা।”

জারা রেগে কটমট করে বললো
-“তোমার গার্জিয়ান এর নম্বর দাও।তাদের ছেলে বাইরে কি করে বেড়ায় তাদের জানানো উচিৎ।”

জাহিদ হো হো করে হেসে উঠলো।বললো
-” আরে টেকনিকে শশুরের নম্বর চাইছো?ব্যাপার না। দাড়াও তোমাকে এক্ষনি তোমার শশুরে সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছি।”

এবং জারাকে অবাক করে দিয়ে জাহিদ সত্যি একটা নম্বরে ডায়াল করে বলতে লাগলো
-” হ্যালো পাপা! ব্যাস্ত আছো?”

অপর পাশ থেকে কি বললো জারার জানা নেই। সেতো অবাক হয়ে জাহিদের কান্ড দেখছে।জাহিদ বললো
-” পাপা তোমার বৌমা তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে। নাও কথা বলো।”

বলেই জারার দিকে ফোন এগিয়ে দিলো।জারা রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল।এই ছেলে তো ভীষণ ডেঞ্জারাস।সোজা বাপকে কল করে দিয়েছে?জারা দ্রুত ফোন হতে নিয়ে কল কেটে দিলো।আর জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললো

-” এই ছেলে তুমি পাগল?”

জাহিদ বাইকের বসেই সুইট করে নিজের গালে হাত রেখে জারার দিকে তাকিয়ে বললো
-” হুম!! শুধু আপনার জন্য।”

জারা চোখ গরম করে জাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো
-” আমার এলাকায় দাড়িয়ে আমার সাথেই ফ্লার্ট করছো?এলাকার মাস্তান দিয়ে একদম ঠ্যাং ভেঙে হসপিটালে পাঠিয়ে দিবো।”

-” ডাকুন তাদের।আমিও দেখি ওরা কত বড়ো মাপের মাস্তান।”

জারা মনে মনে ভাবলো এই ছেলে নিজেই একটা মাস্তান।একে বুজিয়ে লাভ নেই।তাই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে জাহিদ বললো

-” চলুন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।”

জারা রেগে আঙ্গুল তুলে এগিয়ে এসে শাসিয়ে বললো
-“একদম ফাজলামু করবে না। যাও এখান থেকে।”

-” আমি সিরিয়াস।দেখুন আশেপাশে কোনো রিকশা নেই।আপনি চাইলে আমি আপনাকে পৌঁছে দিতে পারি।আমি যথেষ্ট ডিসেন্ট বয়।কোনো অসভ্যতাম করবো না।প্রমিজ।”

জারা বিরক্ত হয় সামনে এগিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।কিন্তু কোনো খালি রিকশাই পেলো না।জারা আড়চোখে জাহিদের দিকে তাকালো।জাহিদ বাইকে বসে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।জারা তাকাতেই মুচকি হেসে হাত নেড়ে হায় জানালো।জারার বিরক্তি যেনো আকাশ ছুলো। কিছুক্ষণ এই ভাবেই কেটে গেলো।জাহিদ বললো

-” রাগ করে কি লাভ হচ্ছে?তার চাইতে চলুন।আপনার দেরী হচ্ছে না?”

জারা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।জাহিদের প্রতি ভরসা নেই তেমনটা না।ছেলেটা যে ভালো ফ্যামিলির ছেলে সেটা বুজাই যায়।ব্যাবহার ও ভালো।কিন্তু যত বাঁদরামি তার সাথে।তবে জারা ছেলেটার বাইকে উঠলে কোনো ভাবে ছেলেটার পাগলামিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে কিনা সেটা নিয়ে ভাবছে।কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না। অপর দিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে।তাই জারা আর না ভেবে জাহিদের বাইকে উঠে বসলো।অনেকটা দূরত্ব নিয়ে বসায় জাহিদ বললো

-” আমাকে ধরে বসুন ম্যাডাম। নাহলে চিৎপটাং হয়ে পড়ে যাবেন।”

জারা বিরক্ত হয়ে বললো
-” দরকার নেই।”

জাহিদ বির বির করে বললো
-“জেদী বউ নিয়ে সংসার করা বেশ কঠিন হবে।”

-” কি বললে!!”

-” কিছু না। প্লিজ ভরসা করে আমাকে ধরে বসুন।”

জারা আলতো করে জাহিদের কাধে হাত রাখলো।আর নিজেই খানিকটা কেপে উঠলো।জারা নিজের মনকে বুঝতে পারছে না।ছেলেটাকে তার বিরক্তিকর লাগে।কিন্তু ছেলেটার সান্নিধ্য বার বার পেতে ইচ্ছে করে।জাহিদ মৃদু হেসে বাইক স্টার্ট করল।আজকের দিনটা আসলেই ভীষণ সুন্দর।

_______________________
শুভ আর আরজু দাড়িয়ে আছে একটা ফুলের দোকানে।আরজু বললো
-” এখানে কেনো দাড়িয়েছিস?দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।সামনের গলিতে দাড়াতে হবে তো।”

শুভ বিভিন্ন ফুলের দিকে চোখ বুলাতে বুলাতে বললো
-“চুল কাটতে দাড়িয়েছি।”

আরজু বিরক্ত হয় বললো
-” এটা কি সেলুন যে চুল কাটতে এসেছিস।”

শুভ আরজুর মাথায় হালকা চাপর মেরে বললো
-” ফুলের দোকানে কেউ চুল কাটতে আসে? ডাফার একটা।”

আরজু গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইলো।শুভ আরজুর অভিমানী মুখখানা দেখে মুচকি হাসলো।তিনটা গোলাপ আরজুর চুলে লাগিয়ে দিয়ে বললো

-” এখন একদম পারফেক্ট লাগছে।এই গোলাপের মতো তোর গালটাও লাল।টোকা দিলেই পাপড়ির মত রক্ত আর অভিমান ঝরবে।”

আরজু পাশের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে অভিভূত হলো।কালো জামদানির সাথে এই লাল গোলাপ ভীষণ মানিয়েছে।নিজের এই রূপে সে নিজেই মুগ্ধ হলো।শুভ আরজুর নাক টেনে বললো

-” থাক আর লজ্জায় লাল হতে হবে না।”

শুভ রিমির জন্য একটা বুকে কিনে নিলো।আরজু ফোন বের করে বেশ কয়েকটা সেলফি ক্লিক করলো।শুভর কাধে হাত রেখে পাউট করেও বেশ কিছু ছবি ক্লিক করলো।শুভ বললো

-“বাকি ছবি রিমির বাসায় যেয়ে তুলিস।তোর বাঁদর বোন কই?”

-” অবনির কোচিং সেন্টার সামনের গলিতেই।আর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বের হবে হয়তো।”

-“এই রিমি ওই বাঁদরকে কেনো দাওয়াত করলো।একটা কি কম পড়ছিলো নাকি?”

-” একদম আমাকে আর আমার বোনকে কিছু বলবি না।নাহলে সত্য সত্যিদুই বোন তোর গলায় ঝুলে থাকবো।”

-” হে ভালই হবে।আমিও বন বিভাগের কল করে তোদের চিড়িয়াখানায় ট্রান্সফার করে দিবো।”

আরজু শুভর পিঠে ধুম করে কিল বসিয়ে দিলো।শুভ বেচারা মুখ বিকৃত করে ফেলেছে। মারটা ভালই লেগেছে। পিঠ ঘষে বিড়বিড় করে আরজুকে কয়েকটা গালি দিলো।
_______________
সন্ধার আগেই সকলেই রিমির বাসায় পৌছে গেলো।আর সবাই পৌঁছেই রীতি মতো হইহুল্লোড় শুরু করলো।রিমির বাবা হতবাক হয়ে তাদের কান্ড দেখছিল।তার মেয়েটা একগাদা জংলিদের বন্ধু বানিয়ে রেখেছে।দুজন ছেলে মেয়ে বাদে সব পাগলের মত ছুটোছুটি করছে।সোফার কুশন একটাও নির্ধারিত জায়গায় নেই। সেগুলো এরা ছুড়াছুড়ি শুরু করেছে। এই ধরনের পার্টি তিনি কিছুতেই পছন্দ করেন না।কিন্তু ছেলের কথায় বাসায় ছোট করে পার্টি করছেন। জাস্ট রিমির বন্ধুবান্ধব মিলে মজা করবে।রিমির মা এসে বললেন

-” দেখেছো কি কিউট কিউট ছেলে মেয়ে গুলো।আর কত চঞ্চল।মুহূর্তেই বাসায় কেমন আমেজ তৈরি করে ফেলেছে।”

-” তোমার কাছে এই জংলী গুলো কিউট লাগছে?এদের মধ্যে তো কোনো ডিসিপ্লিন নেই।”

-” আরে রাখো তোমার ডিসিপ্লিন।ছেলে মেয়েকে রোবট বানিয়ে রেখেছো।যত্তসব।”

বলেই তিনি চলে গেলেন।
এতক্ষণ রিমির বাবাকে কেউ খেয়াল করেনি।তাকে দেখতেই সকলেই ওই ভদ্র প্রজাতির মত চুপ করে বসে পড়লো।সাবিহা আর রামিম চুপ করে বসে এদের পাগলী দেখছিলো।রামিম বরাবর শান্ত ছেলে।আর সাবিহা মূলত রামিম পাশে থাকার জন্য বসে ছিল।রামিম সাবিহার দিকে দুইবারের বেশি তাকায়নি।আগে সাবিহার সাথে অনেক গল্পঃ আর মজা করা হতো।কিন্তু আজকাল রামিম নিজেই সাবিহার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে।

বাসায় রিমির তিনজন কাজিন ও এসেছে।তার মধ্যে রিবা নামক মেয়েটির সাথে ফুয়াদের বেশ ভাব হয়ে গেছে।কিন্তু রিবার দৃষ্টি ছিল শুভর দিকে।শুভকে দেখে বার বার লজ্জা পাচ্ছে।

সবাইকে ভদ্র মত বসতে দেখে সাবিহার ভীষণ হাসি পেলো।এমনকি ফিক করে হেসে দিলো।রামিম ও মুচকি হাসলো।আর বললো

-” এখন ভদ্রতা দেখাচ্ছি কেনো।যখন বলেছিলাম শান্ত থাকতে তখন মনে ছিলো না?”

ফুয়াদ বললো
-” তোর বাপ এমন করে তাকায় ছিলো যেনো তার কিডনি ছিনিয়ে নিতে আসছি আমরা?”

রিমি হেসে বললো
-” আমরা সবাই মিলে বাবার ডিসিপ্লিন লাইফের রফাদফা করে রেখেছি।তাই তো শকে আছে।”

রামিম বললো
-” ডিসিপ্লিনে থাকা ভালো।”

শুভ বললো
-” আজাইরা ডিসিপ্লিন।আমরা না থাকলে এই বেকুব রোবট হয়ে জীবন পার করে দিত।ওর ভাইরে দেখেছিস পুরাই আলাদা জগতের।”

রিমি রেগে শুভর দিকে তাকালো।শুভ ঠোঁটে আঙুল চেপে চুপ করে গেলো।
জারা কৌতুহলী হয়ে বললো
-” রিমি তোর ওই হ্যান্ডসাম ভাইটা কই?আমাদের দেখে পালিয়েছে নাকি?”

-” পালাবে কেনো? উল্টো তোরা আমার ভাইকে দেখে ভয়ে পালাস।”

জারা হেসে বললো
-” আমি এমনি পালাই না।তোর ভাইকে দেখে তো একবার চোখ টিপ মেরে ছিলাম।যেই রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিল।মনে হয়েছে আমাকে তুলে আছার মারবে।তোর ভাবী হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছা মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিয়েছে।একটুর জন্য ছেকা খেয়ে তোর ভাবী হতে পারলাম না। তার পর আর তোর ভাইয়ের সামনেই যাইনা।”

আরজু দুষ্ট হেসে বললো
-” শুভ ওই রিবা কিন্তু তোর উপর ক্রাশ খাইছে।দেখ কেমন করে তাকাচ্ছে তোর দিকে।যা জলদি ওর ফোন নম্বর এনে ডেট করা শুরু করে দে।দেখতে কিন্তু কিউট আছে।”

শুভ বেশ বিরক্ত হয়ে বললো
-” আমার ইচ্ছে নাই কাউকে ডেট করার।”

আরজু বললো
-“যা তোকে দিয়ে কিছু হবে না।দার আমি এনে দিচ্ছি।”

রিমি আরজুকে থামিয়ে বললো
-” এতো খুশি হওয়ার কিছু নাই।ক্রাশ খাওয়া ওই মেয়ের অভ্যাস।কয়েক মাস আগে ভাইয়াকেও প্রপোজ করেছিলো।ভাইয়াও ওর গাল বরাবর একটা বসিয়ে দিয়েছিলো।”

অবনির বেশ ভালো লাগছে এদের কান্ড দেখতে।আরজু আপুর বন্ধু বান্ধব এক একটা নমুনা।আজ না আসলে এই বিনোদন পুরোই মিস হয়ে যেতো।রিমি আপুকে অবনির বেশ ভালো লাগে।চশমা পড়া কিউটিপাই।আর উনার ভাইয়ের বর্ণনা শুনে মানুষটিকে দেখার ইচ্ছে জাগছে।তবে রিমিকে দেখলেই তার একজনের কথা বেশ মনে পড়ে।চেহারায় কেমন যেনো একটা মিল খুঁজে পায়।

হঠাৎ সুরভীর কল আসায় অবনি বাসার নিচে চলে আসে কথা বলতে।কারণ তার বোনের গ্যাং জোরে মিউজিক বাজিয়ে রেখেছে।অবনি কথা বলতে বলতে হঠাৎ একজনকে দেখে থমকে যায়।

নিশান মাত্রই কেক নিয়ে বাসায় পৌঁছালো।অনেকটা দেরি করে ফেলেছে।বাইক থেকে নেমে দ্রুত বাসার গেটে ঢুকেই অবনীকে দেখে বেশ বড় সরো ঝটকা খেলো।
নিশান অবাক হয়ে বললো

-” তুমি এখানে কি করছ?”

অবনির বেশ হাসি পাচ্ছে নিশানের মুখের ভঙ্গি দেখে।এই মানুষটিকে ভরকে দিতে তার বেশ লাগে।তাই মজা করে বললো
-“এখানে আমার শশুর বাড়ী।”

নিশান যেনো আকাশ থেকে পড়লো।এই পিচ্ছি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে?সিরিয়াসলি!!!কোথাও না কোথাও নিশানের মনের কোণে সূক্ষ যন্ত্রণা হচ্ছে।তাই অবাক হয়ে বললো

-“শশুর বাড়ী মানে?এই তোমার বয়স কতো?”

অবনির ভীষণ হাসি পাচ্ছে।কিন্তু হাসা যাবে না।তাই বললো
-“আপনি জানেন না মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে হয় না।আমার বয়সে অনেক মেয়েরা এক বাচ্চার মা হয়ে যায়।”

নিশান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।হঠাৎ কিছু একটা ভেবে বললো
-” কোনটা তোমার শশুর বাড়ী?”

অবনি দুষ্ট হেসে লাজুক ভাব এনে গলার স্কার্ফ আঙ্গুলে পেচাতে পেচাতে বললো

-” এইতো দুই তলায়।ওই বাড়ির একমাত্র ছেলের বউ আমি।আমার জামাইটা যা হট আপনি চিন্তা করতে পারবেন না ”

নিশানের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।দুই তলায় তো ওরা থাকে।তাহলে সেটা এই মেয়ের শশুর বাড়ি হলো কোথা থেকে?এই বাসার একমাত্র ছেলে সে।তাহলে এই বাচ্চাকে সে কবে বিয়ে করলো?হয় আল্লাহ !!!! এই মেয়ে কোনো ঝামেলা পাকাবে কিনা কে জানে?নিশান হা করে বেকুবের মত তাকিয়ে রইলো।অবনি নিশানকে ভরকে দিয়ে দৌড়ে উপরে চলে গেলো।

নিশান বাসায় পৌঁছালে দেখলো রিমির সব ফ্রেন্ডরা এসে পড়েছে।তাদের ভিড়ে অবনীকে দেখে তাকিয়ে রইলো।অবনি রিমিকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো

-” আপু এই লোক কি তোমার জন্মদিনে ইনভাইটেড?”

-” আরে কি বলো? এটাই তো আমার বড়ো ভাইয়া।”

অবনি যেনো আকাশ থেকে পড়লো।হা করে নিশানের দিকে তাকালো।এই লোককে ভরকে দিতে যেয়ে নিজেই বেকুব বণে গেলো।নিশানের অবনির মুখভঙ্গি দেখে হঠাৎ ভীষণ হাসি পেলো।কিন্তু নিজের ব্যাক্তিত্বের বিপরীতে যেয়ে সে তা করলো না।গম্ভীর ভাবে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে নিজের রুমে চলে আসলো।দরজা বন্ধ করে নিচের ঠোঁট চেপে হেসে দিলো।মেয়েটার চেহারা দেখার মত ছিলো।
অন্যদিকে অবনি মন খারাপ করে বসে রইল।শেষে কিনা বড়ো বোনের বন্ধুবীর বড়ভাইয়ের প্রেমে পড়ল।এই ট্রাজিটি কি মানা যায়? রিমি আপু তাকে ভাবী ভাবী বলে ডাকলে কেমন অদ্ভুত শুনাবে?আচ্ছা এই লোকের বয়স কত?দেখে তো আরজু আপুর বয়সী মনে হয়েছিল।মামণি জানলে হার্ট এ্যাটাক করবে।তার বড়ো মেয়ে এমন এক নেতার প্রেমে পড়েছে যার নাম আর প্রফেশন একদম পছন্দ করেনা।আর ছোট মেয়ে দ্বিগুণ বড়ো বয়সী লোকের প্রেমে ঢলে পড়েছে।তার দেওয়া স্বাধীনতার প্রপার মিস ইউজ করছে তারা দুই বোন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।চঞ্চল অবনি গালে হাত দিয়ে বসে রইলো।এই মুহূর্তে তার সব কেমন বিরক্তিকর লাগছে।

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_36

আরজুর মাঝে মাঝে মনে হয় নাহিদকে নিউক্লিয়ার বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে।রাজ্যের সকল ব্যস্ততা যেনো এই লোকের ঘাড়ে এসে পরে থাকে।দুনিয়ার সবার জন্য সময় থাকে শুধু তার জন্যই থাকে না।

গতকাল থেকেই আরজু নাহিদকে কল করে যাচ্ছে। শর্ত ছিল উনি নিজে থেকেই কল দিবে।কিন্তু তিনদিন চারদিন চলে যায় এই বদ লোক তাকে একটা কল করে না।সেদিন ভাব নিয়ে বলছিলো

-” আরজু তুমি কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করছো।তোমাকে মানা করেছিলাম আমাকে কল করতে।আমি ফ্রী হয়ে কল করবো।”

আরজুর ভীষণ রাগ হয়েছিল।এই মানুষটি ভীষণ অদ্ভুত।কখনো মনে হয় মানুষটি তাকে পছন্দ করে।আবার কখনো মনে হয় এই সম্পর্কটি তার কাছে কোনো মূল্যই রাখে না। রেগে আরজু বলেছিল

-” আপনি কখনো ফ্রী হবেন না।আমার জন্য তো কখনোই না।আপনি ভীষণ খারাপ মানুষ।”

নাহিদ কৌতুক সুরে বলেছিল
-” কি আর করার? এই খারাপ মানুষটির কাছে ফেঁসে গেছো। এখন এই খারাপ মানুষটির ভালো খারাপ সবটাই মেনে নিতে হবে।”

আরজু রেগে কল কেটে দিয়েছিলো।এই লোকটা তার মাথা খারাপ করে রেখেছে।বিকেলের দিকে শুভ আরজুর বাসার সামনে এসে কল করে।

-” কীরে ভেবলি!! তোর কোনো খবর নাই কেনো?”

আরজু ভীষণ অভিমান নিয়ে বলে
-“আমার খবর নিয়ে তোর কোনো কাজ আছে?”

-” অনেক কাজ আছে।জলদি নিচে নাম।পিৎজা ইনে অফার চলছে।তোদের ট্রিট দিবো।”

-” কুত্তা!! অলয়েজ অফারে খাওয়াস।কোনো দিন আংকেলের দেওয়া পকেট মানি পুরোটা আমাদের পিছনে খরচ করেছিস?”

-“মধ্যে রাতে যে আইসক্রিম খাস সেটা কি তোর শশুর দেয়?”
-” দিলে মন্দ হতো না।”

-” জলদি বের হয়ে আস।নাহলে আমি গেলাম।”

-” যেয়ে দেখ।তোর ঠ্যাং ভেঙে বাইকের পেছনে ঝুলিয়ে দিব।”

আরজু দ্রুত রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখলো সাবা খানম হাতে কফি নিয়ে আসছে।আরজুকে দেখেই বললো
-” কোথায় যাচ্ছিস? আমি কফি নিয়ে আসলাম?”

আরজু খালামণিকে জড়িয়ে ধরে গালে টুপ করে চুমু খেয়ে বললো

-“এখন কফি খাওয়ার একদম সময় নেই খালামনি। শুভ নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ছাগলটার পকেট খসিয়ে তাবেই বাসায় ফিরব।”

-“ঠিক আছে জলদি ফিরে আসিস। এমনিতেই তোর সাথে ইদানিং টাইম স্পেন্ড করতে পারিনা।কেসের কাজে এতো ব্যাস্ত থাকি যে কি বলবো?”

আরজু ঘড়িতে সময় দেখে বললো
-” আর ১৫ মিনিটের মধ্যেই তোমার প্রেমিক পুরুষ চলে আসছে। আমিও বাইরে যাচ্ছি অবনিটাও তো কোচিংয়ে আছে।সো দুজন মিলে চুটিয়ে প্রেম করো।”

সাবা খানম আরজুর কান মলে বললেন
-” বেশি পেকে গেছিস।তোকে জলদি বিদায় করতে হবে।”

-“আমি তো কবে থেকেই রেডি হয়েই বসে আছি। এখন তোমাদের জামাই বুজলেই হলো।”

সাবা খানম অবাক হয়ে আরজুর দিকে তাকালেন।আরজু মেকি হেসে বললো
-” আরে ভবিষ্যৎ জামাইর কথা বলেছি।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।আসছি।”

আরজু দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো। খালামণির মতো তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সামনে মুখ ফসকে কিছু বেরিয়ে গেলেই সমস্যা। ব্যাপারটা ধরতে তখন খালামণির একটু সময় লাগবে না। ইসস!! সেও যদি খালামনির মতই এতটা বুদ্ধিমতি হত তবে কতই ভালো হতো। নেতা সাহেবকে চুটকিতেই হাত করে ফেলা যেতো। শুভ তো তাকে সব সময় ভেবলি,বোকা এসবই বলে। তার চাইতে তো অবনী অনেক বেশি বুদ্ধিমান।

আরজু নিচে নামতেই শুভ আরজুকে হেলমেট পরিয়ে দিলো।শুভর এই কেয়ার গুলো আরজুর ভীষণ ভালো লাগে।আরজু বাইক বসে পেছন থেকে শুভকে ঝাপটে ধরলো।শুভ বললো
-” দম বন্ধ করে মেরে ফেলবি নাকি?ছার!”

আরজু আরো জোড়ে শুভকে চেপে ধরে বললো
-” তোকে তো মারবোই।সাথে আজ তোর পুরো পকেট ফাকা করেই ছাড়বো।”

-” হ্যাঁ এক তুই রাক্ষস আছিস।আর আরেক জারা রাক্ষস বসে আছে।আমার পকেটের রফাদফা তো হবেই।”

আরজু খিল খিল করে হেসে উঠলো।
শুভ লুকিং গ্লাসে আরজুকে দেখে মুচকি হাসলো।এই ভাবে চেপে ধরলে আজ তার এক্সিডেন্ট নিশ্চিত।তার উপর মারাত্মক হাসি।আজ শুভকে খুন করেই দম নিবে। আরজুর প্রতিটি স্পর্শ শুভর বুকে ঝড় তুলে।মেয়েটা কেনো বুজে না?
শুভ আপন মনে বাইক চালাচ্ছে।আর আরজু আশেপাশের ব্যাস্ত শহর দেখতে ব্যাস্ত।হঠাৎ একটা পোস্টারে তার চোখ পড়লো।আরজু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেই পোস্টারটি স্কেন করে মস্তিষ্ককে জমা করে রাখলো।

বন্ধু মহলের সকলেই বসেছে পিৎজা ইনে।আরজু বললো
-” ওই রামিম ব্যাটা আসেনাই কেনো?”

শুভ বললো
-” কল করেছিলাম।ছাগলটা আমাকে নয় ছয় বুঝাচ্ছে।ফুয়াদ গেছে ধরে বেধে নিয়ে আসতে।”

জারা মেনু কার্ড দেখতে দেখতে বললো
-“দোস্ত একটা সুসংবাদ আছে।”

সাবিহা মুচকি হেসে বললো
-” আমরা খালামণি হচ্ছি?”

সাবিহার কথায় আরজু শুভ হেসে উঠলো।জারা ঝাঁঝানো গলায় বললো
-” আমার কি জামাই আছে ,যে আমাকে প্রেগনেন্ট করবে?ফালতু যতসব।মুডটাই খারাপ করে দিলো।”

আরজু জারার গাল টেনে বললো
-“আরে কিউটি রাগ করিস না।বলে ফেল তোর সুসংবাদ।”

আরজুর কথায় জারা বেশ আগ্রহ পেলো।আর বললো
-” সামনের সপ্তাহে একটা প্রোগ্রামে আমি রেম্প ওয়াক করতে যাচ্ছি।এই ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করার সুযোগ অনেক দিন ধরে খুঁজছিলাম।ফাইনালি সুযোগ পেয়ে গেলাম।”

আরজু ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে বললো
-” কনগ্রাচুলেশন দোস্ত।”

-” থ্যাংকস।”

শুভ বললো
-” তুই কি মডেলিং এ ক্যারিয়ার গড়তে চাইছিস?”

-” জানিনা।কিছুই প্ল্যান করিনি।”

হঠাৎ কেউ জারার মাথায় চাপর মেরে বললো
-” এর মাথায় গোবর ছাড়া আর কিছুই নেই।একে জব কে দিবে?মডেলিং এর জন্য ঠিক আছে।সেজেগুজে হাটাহাটি করা ছাড়া আর কিছুই এর ধরা হবে না।”

জারা রেগে ফুয়াদের দিকে তাকালো।রামিম হেসে ফুয়াদের উদ্দেশ্য বললো

-” তুই যতোটা সহজ ভাবছিস ততটা সহজ না মডেলিং।বেশ ধৈর্যের কাজ।”

জারা রামিমের দিকে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে বললো
-” তুই আমার জানের দোস্ত।একমাত্র তুই আমার কষ্টটা বুজলি।”

ফুয়াদ সব শুনেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখলো না।পিৎজা চলে আসতেই আরজু জারার কানে কিছু একটা বললো।তারপর দুজনেই মুচকি হাসলো।

খাওয়ার মাঝেই সাবিহার প্রচন্ড ঝাল লাগতে শুরু করলো।বোকার মত বেশি চিলি ফ্লেক্স দিয়ে ফেলেছে।ঝালে ফর্সা মুখ লাল হয়ে আসলো।রামিম বিষয়টি খেয়াল করে দ্রুত পানি এগিয়ে দিলো।আর ধমক দিয়ে বললো

-” ফাজিল।ঝাল খেতে পারিস না তবে এতো মরিচ নিলি কেনো?”

প্রচন্ড ঝালে সাবিহার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো।ঠোঁটের পাশে জ্বলছে।রামিম একটা টিস্যু নিয়ে সাবিহার ঠোঁট মুছে দিতে লাগলো।শুভ দ্রুত এই সুন্দর মুহূর্ত টুকু ক্লিক করে রাখলো। বন্ধু মহলের সকলের মুখেই প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো।ট্রেতে লাস্ট পিস পিৎজা পড়ে থাকতে দেখে আরজু,জারা আর ফুয়াদ ঝাঁপিয়ে পড়লো।জারা যুদ্ধে জয়ী হয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললো।

***************
পরদিন আরজু আর জারা একটা জনসমাগম পূর্ণ জায়গায় পৌঁছালো।জারা কপাল চুলকে বললো

-” ভিড় দেখেছিস?”

আরজু মন খারাপ করে বললো
-” তোকে বলেছিলাম আরো আগে বের হতে।তুই লেট করলি।”

-” আরে ব্যাপার না।সবাইকে ঠেলে ঠুলে সামনে চলে যাবো।”

আরজু আর জারা ভিড় ঠেলে সামনে আগাতে লাগলো।ভিড়ের মাঝে আরজু হঠাৎ অনুভব করলো কেউ তার কোমরে বাজে ভাবে স্পর্শ করেছে।আরজুর সারা শরীর ঘিন ঘিন করে উঠলো।মুহূর্তেই শুভর কথা মনে পড়লো।শুভ তার পাশে থাকতে কোনো দিন এই ধরনের বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি।শুভ তার পাশে ছায়ার মত লেগে থাকত।আরজু জারার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।জারা পেছনে ফিরে আরজুর দিকে তাকালো।আরজুর মলিন মুখ দেখে যেনো জারা সব বুঝতে পারলো।আরজুকে সামনে দিয়ে নিজে পেছনে দাড়ালো।কয়েক মুহূর্ত পর করো হাতের স্পর্শ পেয়ে জারা সাথে সাথে কোমরের হাতটি চেপে ধরলো।পেছনে ফিরে দেখলো একটা বিশ একুশ বছরের ছেলে।জারা প্রচন্ড রেগে ছেলেটার নাক বরাবর ঘুষি মারলো।ছেলেটা সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।আরজু হা করে জারার দিকে তাকিয়ে রইলো।আশেপাশের অনেকেই জারার দিকে তাকিয়ে আছে।জারা ছেলেটির সামনে ঝুঁকে বললো

-” মেয়েদের শরীর সস্তা পেয়েছিস?আমার মত মেয়ের পাল্লায় কোনোদিন পড়িস নি।নাহলে এই দুঃসাহস জীবনেও দেখাতে পারতি না।”

বলেই ছেলেটির পায়ে নিজের হাই হিল দিয়ে চেপে ধরলো।ছেলেটি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো।পাশে দাঁড়ানো একটা মেয়ে বললো

-” একদম ঠিক করেছেন আপু।এই অসভ্যটা একটু আগে আমার সাথেও অসভ্যতাম করেছে।”

জারা যেনো উৎসাহ পেলো।ছেলেটির গালে চর মেরে বললো
-“আজকের কথা মনে থাকলে জীবনে কোনদিন কোন মেয়ের সাথে বাজে ব্যবহার করতে আসবি না।”

আরজু দেখলো আসে পাশের সকলে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।আরজু জারাকে এক প্রকার টেনে সেখান থেকে নিয়ে গেলো।জারা তখনও রাগে ফুঁসছে।
আরজু বললো

-“ঝাঁসি কি রানী এবার থাম।অনেক হয়েছে।”

-“ছার।ওই বাস্টার কে আজ মেরেই ফেলবো।”

-” চুপ।মাথা ঠাণ্ডা কর।”

আরজু অনেক বুঝিয়ে জারাকে ঠান্ডা করলো।এতক্ষনে জনসমাগম আরো বেড়ে গেলো।আরজু আর জারা অনেক কষ্ট স্টেজের অনেকটা কাছাকাছি এসে পড়লো।আরজু দুর থেকেই স্টেজে বেশকিছু মানুষের মাঝে কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখতে পেলো।জারা মুচকি হেসে বললো

-” উফফ!!! তোর নেতা সাহেব যা হ্যান্ডসাম। উনার উপর তোর নজর না পড়লে আমি নিজেই পটিয়ে ফেলতাম।”

আরজু রাগী চোখে জারার দিকে তাকালো আর বললো
-” খবরদার আমার জামাইর দিকে নজর দিবি না।”

-” আরে বাবা!! এতো দূর? আজ পর্যন্ত সামনাসামনি কিছুই বলার সাহস করতে পারলি না।আর জামাই বানিয়ে বসে আছিস।”

আরজু মুচকি হেসে বললো
-” আমার সাহস সম্পর্কে তোর ধারনা নেই।আমি আরো ভয়ঙ্কর কিছু ও করতে পারি।”

-” হয়েছে আর ভাব নিতে হবে না।তোর জামাইর দিকে আমি মোটেও নজর দেইনি।বরং অন্য মেয়েরা বিশেষ নজর দিয়ে বসে আছে।”

কথাটা বলেই জারা কয়েকটা মেয়ের দিকে তাকাতে বললো।আরজু সেদিকে তাকাতেই রাগে কটমট করতে লাগলো।মূলত আরজু আর জারা আজ এসেছে একটি নতুন মেডিকেল কলেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।সেখানে নাহিদ বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত রয়েছে।সেদিন শুভর সাথে বেরিয়ে রাস্তায় একটা পোস্টারে নাহিদের ছবি দেখে আরজু তীক্ষ্ণ নজরে সেটি পর্যবেক্ষণ করেছিলো।সেই সুবাদেই আজ জারাকে নিয়ে এই কলেজ মাঠে উপস্থিত হয়েছে।দুর থেকেই আরজু নাহিদকে পর্যবেক্ষণ করলো।নাহিদ মনোযোগ দিয়ে একটা কাগজ পর্যবেক্ষণ করছে।বরাবরের মতো সাদা পাঞ্জাবীর উপর কালো মুজিব কোট।দেখতে একদম চকবারের মতো লাগছে।কিন্তু মেডিকেল কলেজের মেয়ে গুলো তার নেতা সাহেবের উপর যেই লোলুপ দৃষ্টি ফেলছে সেটা আরজু একদম সহ্য করতে পারছে না।আরজুকে রাগতে দেখে জারা হেসে বললো

-“ইসস!!!চারপাশে কেমন পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে।”

-” তুই পোড়া গন্ধ পাচ্ছিস? আমার তো শরীরে আগুন ধরে যাচ্ছে।”

আরজুর কথায় জারা শব্দ করে হেসে উঠলো।একটু পর নাহিদ উঠে আসলো বক্তিতা দিতে।আরজু নাহিদের বক্তিতা মুগ্ধ হয়ে শুনছে।ইসস!! কি মিষ্টি কণ্ঠস্বর।আরজু দুর থেকেই ঠোঁট উচু করে চুমু ছুড়ে মারলো।জারা আরজুর কাহিনী দেখে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে।এই মেয়ে নির্ঘাত পাগল।

নাহিদ মাইকের সামনে দাড়িয়ে বক্তিতা দিচ্ছে।কথা বলার মাঝেই হঠাৎ তার চোখ আটকে গেলো ভিড়ের মাঝে।আরজুকে সেখানে দেখে বেশ অবাক হলো।তার পাগলীটা এই জায়গায় কি করছে?নিশ্চই কোথাও পোস্টার দেখে চলে এসেছে।কিন্তু এই পাগলীটা ভিড়ের মধ্যে কেনো এলো?যদি কোনো বাজে পরিস্থিতিতে পড়ে?এই মেয়েটাকে কি করে বুঝাবে?আসলেই কি আরজু তাকে এতটা ভালোবাসে?নাকি সবটাই ক্ষণিকের মোহ?

নাহিদ একপলক সেদিকে তাকিয়ে আবার বক্তিতায় মনোনিবেশ করল।নাহিদ বক্তিতা শেষে কিছু সময়ের মধ্যেই সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লো।আরজু মন খারাপ করে ভির থেকে বেরিয়ে আসলো।নেতা সাহেবকে যতই দেখে মন ভরেনা।নেতা সাহেব সামনে থাকলে সময় এতো দ্রুত কেনো কেটে যায়?

ঠিক তখনই আরজুর ফোনে একটা এসএমএস আসলো।আরজু মেসেজ দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হলো কিন্তু পরবর্তীতে মুচকি হাসলো।আর জারাকে কিছু একটা বলে দ্রুত বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসলো।কিছুটা সামনে আসতেই আরজু নাহিদের গাড়ি সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সামনে এগিয়ে গেলো।গাড়ির গ্লাসে টোকা দিতেই পেছনের দরজা খুলে গেলো।আরজু উকি দিয়ে দেখলো নাহিদ বসে আছে।গম্ভীর মুখে আরজুকে গাড়িতে উঠার ইশারা করলো।নাহিদের গম্ভীর মুখ দেখে আরজু খানিকটা ভরখে গেলো।নেতা সাহেব কি কোনো কারণে তার উপর রেগে আছে?

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_37

আরজু নাহিদের ইশারা অনুযায়ী গাড়িতে বসতেই গাড়ির ড্রাইভার আরজুকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“আসসালামু আলাইকুম ভাবি।”

আরজু বড়ো বড়ো চোখ করে লোকটির দিকে তাকালো।লোকটি আরজুর দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে।আরজু আড়চোখে নাহিদের দিকে তাকালো।এই লোক তো ভীষণ বদ।আমাকে মানা করে নিজেই সবাইকে বিয়ের কথা ঢোল পিটিয়ে জানিয়ে বেড়াচ্ছে।আরজু আমতা আমতা করে সালামের জবাব নিলো।লোকটি উৎফুল্লতার সাথে বললো

-“ভাই ভাবি তো দেখতে মাশাল্লাহ। আপনাদের দুজনকে একসাথে ভীষণ মানিয়েছে।”

আরজু ভ্যাবাচেকা খেয়ে ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি ফুটালো।আরজু আড়চোখে আবার নাহিদের দিকে তাকালো।নাহিদ জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে।আরজু নাহিদের মুড ঠিক বুঝতে পারছে না।নাহিদ গম্ভীর স্বরে বাইরে তাকিয়ে বললো

-“মুস্তাক ভাই গাড়ি স্টার্ট করুন।”

আরজু নাহিদের গম্ভীর স্বরে খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো।নাহিদ এবার আরজুর দিকে ফিরে তাকালো।আরজু তাতে আরো বেশি ঘাবড়ে গেলো।নাহিদ গম্ভীর স্বরে বললো

-“আমাকে না জানিয়ে ভিড়ের মাঝে তোমার এই ভাবে আসা একদম ঠিক হয়নি আরজু।যদি কোনো আপত্তিকর ঘটনা ঘটতো?”

মুস্তাক বলে উঠলো
-” জি ভাবী, ভাই একদম ঠিক বলছে।আজকে তো একটা ঝামেলা হয়েছিল ভাই।”

মুস্তাকের কথায় আরজু খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো।আরজুর ভয়কে সত্যি প্রমাণ করে মুস্তাক বলে উঠলো

-” একটা লাফাঙ্গা ছেলে ভিড়ের মধ্যে দুইটা মেয়েকে উত্যক্ত করেছিলো।কিন্তু ভাই একটা মেয়ের মধ্যে দম আছে বলতে হবে।সে নাকি ওই ছেলেকে ইচ্ছে মতো কেলিয়েছে।মেয়েটাকে দেখার ইচ্ছে ছিলো।আমাদের পার্টিতে নিয়োগ দিয়ে দিতাম।এমন মেয়েই তো আমাদের প্রয়োজন।”

মুস্তাকের কথা শুনে আরজু শুকনো ঢোক গিলে নাহিদের দিকে তাকালো।নাহিদ রাগী চোখে আরজুর দিকে তাকিয়ে আছে।নাহিদ বুজে গেলো সেই মেয়ে দুটি আরজু আর জারা ছিলো।এমন কাজ তার বউ আর তার বন্ধুমহলের ধারাই সম্ভব।আরজু পরিস্থিতি সামাল দিতে মেকি হাসলো।যেনো সে এই বিষয়ে কিছুই জানে না।হেসে বললো

-“মেয়েগুলো মনে হয় সাংঘাতিক সাহসী।”

নাহিদ বাইরে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আর ভাবলো তার বউটা আসলেই বোকা।অথচ নিজেকে ভীষণ চালাক ভাবে।
কিছুক্ষণ পর আরজু দেখলো গাড়িটি একটি বাড়ির গেটে প্রবেশ করলো। গেট থেকে বাড়ির সদর দরজা অব্দি যাওয়ার পূর্বে বেশ বড় জায়গা জুড়ে নানান ফুল ও ফলের বাগান।পাশেই একটা বাস্কেট বল কোর্ট আছে।বাগানের একপাশে ছোট একটা টেবিল আর পাশেই বার্বিকিউ চুলা।আরজু অবাক হয়ে সব কিছুই দেখছে।বাইরের পরিবেশে যেনো সৌখিনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।গাড়িটি বাড়ির সদর দরজায় থামতেই নাহিদ গাড়ি থেকে নেমে আরজুর জন্য দরজা খুলে দিলো।আরজু অবাক হয়ে নাহিদের দিকে তাকিয়ে রইলো।নাহিদ কপাল কুঁচকে বললো

-” এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন? নামো।”

আরজু গাড়ি থেকে নেমে বাড়িটির দিকে তাকালো।তিনতলা বিশিষ্ট বাড়িটির সদর দরজায় বেশ আকর্ষণীয় নকশা করা।এই সুবিশাল বাড়িটি দেখে আরজু নাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো

-“বাড়িটা ভীষণ সুন্দর।এটা কার বাড়ি?”

নাহিদ আরজুর হাতে নিজের হাত মিশিয়ে বললো
-” তোমার বাড়ি।”

আরজু চোখ বড়ো বড়ো করে নাহিদের দিকে তাকিয়ে রইলো।নাহিদ সেদিকে লক্ষ্য না করে আরজুকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।আরজু বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে আরো বেশি চমকে গেলো।কারণ বাড়িটি বাইরে থেকে যতোটা সুন্দর ভেতরে আরো বেশি আকর্ষণীয়।চারিদিকে চোখ বুলাতে বেশ কিছুক্ষন সময় লাগবে।সুবিশাল বাড়ি জুড়ে নানান রকমের সাজসজ্জা।ড্রয়িং রুমটাই বেশ বড়ো।বাড়িটি প্রতিটি কোনায় সৌন্দর্য আর বিলাসিতায় ভরপুর।এই অতি সৌন্দর্যে আরজুর দম বন্ধ হয়ে আসছে।ভীষণ অস্থির লাগছে।আরজু জানতো নাহিদ বিত্তশালী পরিবারের ছেলে।কিন্তু নাহিদ এতটা বিত্তশালী হবে সেটা কল্পনা করতে পারেনি।নিজেকে ভীষণ ছোট ফিল হচ্ছে।

তার মতো মধ্যেবিত্ত পরিবারের মেয়ের সাথে নাহিদকে একদমই মানাবে না।সেদিন আবেগ আপ্লুত হয়ে নিজের ইচ্ছাকে নাহিদের উপর চাপিয়ে দেয়নি তো?নেতা সাহেব হয়তো আরো ভালো কাউকে ডিজার্ভ করতো।আরজুর নিজের মধ্যেই নানান দ্বিধা দ্বন্দ চলছে।আরজুর কাছে স্ট্যাটাস ডিফ্রেন্স এই ধরনের বিষয় গুলো কখনোই মেটার করে না। সে ব্রড মাইন্ডেড ফ্যামিলিতে বড়ো হয়েছে।সে সবসময় স্বাধীনচেতা মনোভাব পোষণ করেছে।বাবা মা,খালামণি খালুজান সকলেই উচ্চশিক্ষিত। উচ্চবিত্ত- মধ্যবিত্তর মাঝে পার্থক্য করা আরজু কখনো শিখেনি।তাইতো নাহিদের প্রেমে পড়ার আগে এই সব বিষয় তার মাথায় কখনোই আসেনি।কিন্তু আজ এই চাকচিক্য দেখে আরজুর অসস্তি হচ্ছে।

আরজুর ভাবনার মাঝেই একটা মেয়ে হন্তদন্ত হয়ে আরজুর সামনে ছুটে আসলো।আরজুর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে ফেললো।আর বললো

-“মাশাআল্লাহ!! ভাবি আপনে এত সুন্দর? আল্লাহ!!!এতো সুন্দর মাইয়া তো আমি আমার জীবনে একটাও দেখি নাই।”

মেয়েটির কথায় আরজু খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো।ভীষণ লজ্জাও পেলো।আর জোর পূর্বক হেসে বললো

-“থ্যাংকস। তুমিও দেখতে ভীষণ কিউট।”

মেয়েটি আরজুর মুখে নিজের প্রশংসা শুনে বেশ লজ্জা পেলো।আরজু নাহিদের দিকে তাকাতেই নাহিদ বললো

-” ওর নাম সুমি।আমার ছোট বোনরে মতো।”

আরজু সোফায় বসতেই সুমি দ্রুত আরজু কে ঠান্ডা সরবত এগিয়ে দিলো।আর বললো

-” ভাবী জলদি ঠান্ডা সরবত খেয়ে নেন।আপনার চাঁদ মুখখানা কেমন লাল হয়ে গেছে।”

আরজু হেসে গ্লাসটি নিলো।আর এক চুমুকেই সেটা সাবাড় করে নিলো।গলাটা ভীষণ শুকিয়ে গেছে।
সুমি ঘুরে ঘুরে আরজুকে পুরো বাড়ি দেখাতে ব্যাস্ত।সুমি মেয়েটিকে আরজুর বেশ ভালো লাগলো।চটপটে মেয়েটা সহজেই তার সাথে মিশে গেছে।আরজু একটা বিষয় খেয়াল করলো এই বাড়িতে নাহিদ সুমি আর কিছু গৃহকর্মী ছাড়া আর কেউ নেই।কিন্তু আরজু জানে নাহিদের বাবা আছে।পরিবার আছে।তাই আরজু প্রশ্ন করলো

-“সুমি বাড়ির অন্য সদস্যরা কেউ বাসায় নেই? কাউকে দেখছি না যে।”

আরজুর প্রশ্ন শুনে সুমির মুখটা মলিন হয়ে গেলো।আর বললো
-“এই বাড়িতে ভাইজান একাই থাকেন।বাকি সবাই আগের বাড়িতে থাকে।”

আরজু অবাক হলো।নেতা সাহেব এই বিশাল বাড়িতে একা থাকে কেনো?দম বন্ধ হয়ে আসে না?তাই সুমিকে জিজ্ঞেস করলো

-“উনি একা কেনো থাকে?”

সুমি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।তাই প্রসঙ্গ এড়াতে বললো
-” ভাবী ভাইজান মনে হয় আমাকে ডাকে।আপনি ঘুরে দেখেন আমি আসি।”

সুমি যে তাকে এড়িয়ে চলে গেলো বিষয়টি আরজু বুঝতে পারলো।নানান প্রশ্ন আরজুর মাথায় ঘুরতে থাকলো।যেই মানুষটি তার জীবনসঙ্গী তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে তেমন কিছুই জানে না আরজু। শুভ জানলে নিশ্চই তাকে পাগল ভাববে। ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো

-” চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসো বউ।”

আরজু চমকে পেছনে তাকালো।নাহিদকে দেখে অবাক হয়ে বললো
-” মাত্র কি বললে আপনি?”

নাহিদ কপাল কুঁচকে বললো
-” চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসতে বললাম।”

-” না। লাস্টে কি বললেন?”

নাহিদ বিরক্ত হয়ে বললো
-” কি লাস্ট লাস্ট শুরু করেছ আরজু?”

আরজু চিন্তায় পড়ে গেলো।সে কি ভুল শুনলো?কিন্তু তার মনে বউ শব্দটা সে শুনেছে।আরজুকে আর চিন্তা করতে সুযোগ না দিয়ে নাহিদ আরজুর হাত ধরে একটা রুমের ভেতর নিয়ে আসলো।রুমে প্রবেশ করে আরজু হা হয়ে গেলো।বিশাল বড়ো একটা রুম।সারা রুম জুড়ে শুভ্র সাদা রঙের মেলা। বেডসিট থেকে শুরু করে পর্দা,ফার্নিচার সবটাই সাদা রঙের।নেতা সাহেবের নিশ্চই সাদা রং পছন্দ।নাহিদ বড়ো পর্দা সরিয়ে দিলো।মুহূর্তেই সূর্যের কিরণ সারা ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো।আরজু সেদিকে অবাক চোখে তাকালো।বড়ো থাই গ্লাসের বাইরে বিশাল বড়ো বারান্দা।যার এক পাশে বাহারি রঙের ফুল খেলা করছে।অন্য পাশে বিশাল সুইমিংপুল।এমন সুন্দর আকর্ষণীয় কোনো কামরা হতে পারে আরজুর জানা ছিলো না।আরজুকে অবাক হতে দেখে নাহিদ আরজুর পাশে দাড়িয়ে বললো

-“এটা আমাদের রুম।পছন্দ হয়েছে?”

আরজু বড়ো বড়ো চোখ করে নাহিদের দিকে তাকালো।আরজুকে অবাক হতে দেখে নাহিদ ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?আরজু শুকনো ঢোক গিলে কাপা কাপা গলায় বললো

-” বা….বাসায় যাবো।”

নাহিদ চোখ কুচকে বললো
-” কী?”

-” আ…আমি বাসায় যাবো।”

আরজুর এমন জবাবে নাহিদ চিন্তিত হয়ে বললো
-” এনি প্রবলেম আরজু?”

আরজু মাথা ঝাকিয়ে না বললো।
____________________
আরজুর কাছথেকে বিদায় নিয়ে জারা রিক্সায় চড়ে বসলো।আরজুর মধ্যে আজকাল কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছে।তাদের বন্ধু মহলে আরজু নিজের সব কথা শুভর সাথে শেয়ার করলেও মেয়র সাহেবের বিষয়ে আরজু শুভর সাথে তেমন কিছু বলেনা।কারণ শুভ রেগে যায়।কিন্তু জারার সাথে সব কথাই আরজু বলে।কারণ তারা দুজনেই একরকম।কিছুটা পাগলাটে।তবে জারার মনে হচ্ছে আরজু হয়তো তার কাছে কিছু লুকাচ্ছে।কিন্তু কি?

এইসব ভাবনার মাঝেই হঠাৎ মনে হলো কেউ তার পাশে বসেছে।জারা পাশে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেলো।এই বেয়াদব তার পাশে কি করছে।এই ভাবে চলন্ত রিক্সায় উঠে পরেছে।জাহিদ তার দিকে তাকিয়ে মতির মত দাত বের করে হাসছে।জারা রেগে বললো

-” রিক্সার কি অভাব পড়েছে?আমার রিক্সায় লাফিয়ে পড়ার মানে কি?”

জাহিদ হেসে বললো
-“এই রিক্সার মতো ব্যাপার অন্য রিকশায় নেই। এটার মতো কমফোর্টও অন্য কোথাও নেই।”

জারার রাগ আরো বৃদ্ধি পেলো।
-” মামা থামান।এই ফাজিল নামো।”

-” মামা চলেন তো। হবু বউ রাগ দেখাচ্ছে। বুঝেনই তো।”

রিকশা চালক তার কথায় হেসে উঠলেন।জারা রাগী চোখে তাকিয়ে বললো
-“মামা রিকশা থামান।এই বেয়াদবের সাথে আমি কোথাও যাবো না।আমি নামবো।”

জাহিদ জারার কাধে আলতো হাত রেখে বললো
-“এই বেয়াদবের সাথেই যদি সারা জীবন থাকা লাগে তখন কি করবেন?”

জাহিদের স্পর্শে জারা শিউরে উঠলো।অদ্ভুত অনুভূতি হলো।কিন্তু এই অনুভূতিকে সে প্রশ্রয় দিতে চায়না।এইসব প্রেম ভালোবাসার মতো জটিল বিষয়কে জীবনে এনে ঝামেলা বাড়াতে চায়না।কিন্তু এই ছেলেটা দারুন বেহায়া।কোনো কথাই শুনতে চায়না।একদম আঠার মত লেগে থাকে।
জাহিদ বললো

-” এই মেডিকেল কলেজ কেনো এসেছেন? নাকি অন্যদের মত আপনিও মেয়রের উপর ক্রাশ খেছেন? আই নো হি ইস ড্যাম হ্যান্ডসাম।কিন্তু আমিও কম নই।”

জারা মুখ ভেংচে বললো
-” হ্যান্ডসাম মাই ফুট।তুমি একটা বাঁদর।”

জাহিদ জারার খানিকটা কাছে এসে জারার কানে হালকা ফু দিলো।জারা আবেশে চোখ বুজে নিলো।মনে মনে বললো
-” আমার এই মুহূর্তে এই বেয়াদব কে এক ঘুষিতে নাক ফাটিয়ে দেওয়া উচিৎ।কিন্তু কেনো যেনো পারছিনা।আমি কেনো এই ছাগলের সামনে আসলে দুর্বল হয়ে পড়ি।”

জাহিদ বললো
-” এই বাঁদর আপনার গলায় মুক্তার মালা হয়ে লেপটে থাকবে।”

জারা আড়চোখে জাহিদের দিকে তাকালো।দেখলো জাহিদ জারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।সেই হাসিতে জারার হার্টবিট বেড়ে গেলো।
___________
অবনি কলেজ শেষ করে সুরুভিকে বিদায় দিয়ে বাসার উদ্দেশে বেরিয়েছে।হাতে ম্যাঙ্গো বার নিয়ে হাঁটছে আর খাচ্ছে।হঠাৎ তার চোখ পড়ল নিশানের দিকে।নিশান ফরমাল ড্রেসে দাড়িয়ে একজনের সাথে কথা বলছে।অবনির এক মুহূর্তের জন্য মন খারাপ হয়ে গেলো।কিশোরী মনে নানান প্রশ্ন ভর করতে লাগলো।আরজু আপু যদি জানে তার বান্ধুবির বড়ো ভাইয়ের উপর আমি পিছলে পড়েছি তবে সাংঘাতিক শক খাবে।মুহূর্তেই অবনি নিজেকে বুজাতে লাগলো।প্রেমে পড়া খারাপ কিছু না।পাপা আর আম্মু প্রেম করে বিয়ে করেছে।আরজু আপুও গভীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।তবে তার বেলায় এতো চিন্তা কেনো করতে হবে?মোটেও না।এই ব্যাটাকে তো অবনি সারা জীবন নাকানি চুবানি খাওয়াবে।

নিশান অফিসের কাজে বাইরে এসেছে। এখন তার এক কলিগের সাথে বাইরে দাড়িয়ে কথা বলছে।ঠিক তখনই কেউ পেছন থেকে বলে উঠলো

-” এইযে মিস্টার! অফিস ছেড়ে বাইরে কি করছেন।আপনি তো দারুন ফাঁকি বাজ।”

নিশান চমকে পেছনে তাকালো।কলেজ ড্রেস পরা অবনীকে দেখে চমকে গেলো।এই মেয়েকে তো কলেজ ড্রেসে আরো পিচ্ছি লাগে।নিশানের কলিগ অবাক হয়ে বললো
-” নিশান কে উনি?”

নিশান কিছু বলার আগেই অবনি লজ্জা মাখা মুখে হেলতে দুলতে বললো
-” আমাকে চেনেন না।এই আপনি আমার কথা উনাদের বলেননি?”

আরজুর প্রশ্নে নিশান থতমত খেয়ে গেল।এই মেয়ে ভীষণ ডেঞ্জারাস।কখন কি বলে আল্লাহ জানে।অবনি আবার বললো
-” ধ্যাত আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি নিজেই পরিচয় দিচ্ছি।আমি উনার ওয়াইফ।”

অবনির কথায় নিশান আর তার কলিগ দুজনেই চমকে গেলো।নিশানের তো কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে লাগলো।এই বিচ্ছু মেয়ে বলে কি?

নিশানের কলিগ অবাক হয়ে বললো
-” নিশান তুমি বিয়ে করেছ বলনি তো?”

নিশান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।সে বললো
-“এমন কিছুই না। ও মিথ্যা…”

আর কিছুই অবনি বলতে দিলো না।নিজেই বললো
-” আসলে ভাইয়া আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছি।উনি আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।কল করে কান্না কাটি করে বলে আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।কি আর করার।আমার ফ্যামিলি এতো দ্রুত আমাকে বিয়ে দিবে না।কিন্তু উনি তো আমার জন্য পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।একদিন আমাকে ধরে কান্না কাটি করে বললো

-“চলো আমরা বিয়ে করে নেই।”

আমিও উনার কথা ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।বাসার কেউ জানেনা।আমার স্টাডি শেষ হলে সবাইকে জানাবো।”

অবনির এই সুন্দর স্টোরি শুনে নিশানের কলিগ বিশ্বাস করে নিলো।অন্য দিকে নিশানের হার্ট এ্যাটাক হবার জোগাড়।কেমন সুন্দর করে মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে ফেললো।নিশান বড়ো বড়ো চোখ করে অবনি দিকে তাকালো। অবনি মুহূর্তেই নিশানকে চোখ মেরে দিলো।নিশান থতমত খেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।অবনি আবার বললো

-” আচ্ছা ভাইয়া আমি আসি।আম্মু দেখলে উনার ঠ্যাং ভেঙে দেবে। শুনছেন বাসায় যেয়ে কল করবেন।বায়।”

অবনি চলে যেতেই নিশান বুকে হাত রাখলো।মেয়েটা হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়েছে।নিশানের কলিগ বললো
-” বাহ!! কি মিষ্টি ভাবী।আপনি যে এমন পাগল প্রেমিক হবেন ভাবতেই পারিনি।আপনাকে দেখে বুঝাই যায়না।”

নিশান মেকি হাসলো।লোকটি আবার বললো
-” কিন্তু ভাবী বয়সে একটু বেশি ছোট হয়ে গেলো না?”

নিশান অসস্তিতে পড়ে গেলো।বিচ্ছু মেয়েটা মানসম্মান কিছু রাখলো না।লোকটি আবার বললো
-” তবে প্রেমে বয়স দাজন্ট মেটার।আপনাদের গভীর প্রেম দেখে আমারও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।এমন একটা পিচ্ছি বউ থাকলে জীবনে আর কি লাগে?”

নিশান আর কথা বাড়ালো না।এই মিথ্যা গল্পঃ যে তার অফিসে ছড়িয়ে পড়বে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।কারণ তার কলিগের পেটে কোনো কোথায় হজম হয়না।