#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_84
গভীর রাত।নিস্তব্দ চারপাশ।হাওয়ায় শীতলতা থাকলেও নাহিদ তর তর করে ঘামছে।খুব সাবধানে সে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে।নাহিদ স্পষ্ট পায়চারি শব্দ পাচ্ছে। এখানে একাধিক পদচারণা বিচরণ করছে বলে সে ধারণা করছে।সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই একটু সামনে দুটি ঘর।যার একটিতে আসিফ আছে।নাহিদ একটু এগিয়ে যেতেই দেখলো ফ্লোরের একপাশে তাজা রক্ত।নাহিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।কি হতে পারে আন্দাজ করতে পারলো।নাহিদ সচেতন দৃষ্টি মেলে আশেপাশে দেখলো।পাশের গাছের আড়ালে একজন ব্যাক্তির নিথর দেহ পড়ে আছে।লোকটির পরনের জামা বলে দিচ্ছে সে তার সিকিউরিটির লোক।নাহিদ খুব বেশি সিকিউরিটি নিয়ে আসেনি।মাত্র কয়েকজন লোক তার সাথে এসেছে।যাদের গাইড করছে আসিফ আর রতন।আসিফ কে নিয়ে নাহিদের চিন্তা হলো।তার রুমের দিকে আগাতেই মনে হলো তার পেছনে কেউ আছে।নাহিদ নিজেকে প্রস্তুত রাখলো যে কোনো পরিস্থিতির জন্য।লোকটি কিছু বুঝে উঠার আগেই পেছনে ফিরেই খপ করে পেছনের ব্যাক্তিটি গলা চেপে ধরলো।আর অন্য হাতে ব্যাক্তিটি হাত।নাহিদ বারান্দার মৃদু আলোয় ব্যাক্তিটিকে দেখলো।কিন্তু চিনতে পাড়লো না।লোকটির হাতের দিকে তাকাতেই দেখলো হাতে ধারালো অ*স্ত্র।নাহিদ হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে রক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
-” কে তুই? তোকে কে পাঠিয়েছে?”
নাহিদের বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয় পড়ে লোকটির নিঃশ্বাস বন্ধ হবার যোগাড়।লোকটির চোখ প্রায় উল্টে যাচ্ছে।নাহিদের সূক্ষ্ম মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে আশেপাশে একাধির ব্যাক্তির উপস্থিতি।নাহিদ কিছু বুঝতে পেরে সামনের লোকটির গলা ছেড়ে সাবধানে দ্রুত সরে দাড়ালো।ঠিক তখনই ব্যাক্তিটি আর্তনাদ করে উঠলো।কারণ পেছন থেকে অন্য একজন লোকটির বুক বরাবর ধারালো অ*স্ত্র বসিয়ে দিয়েছে।ফলে ফিনিক দিয়ে রক্ত ঝরছে।লোকটি কাতরাতে কাতরাতে নিস্তব্দ হয়ে পড়লো।নাহিদ চোখ বড়ো করে তাকালো।কারণ এই আক্রমণ তার জন্য ছিলো।কিন্তু হঠাৎ সে চলে আসায় এই লোকটি আহত হলো।নাহিদের রাগে সারা শরীর কাপছে।ক্ষিপ্ত নাহিদ চট জলদি আহত ব্যাক্তির হাত থেকে দ্রুত ধারালো অ*স্ত্র নিয়ে সামনের ব্যাক্তিত্ব গলায় চালিয়ে দিলো।মুহূর্তেই কয়েক ফোঁটা রক্ত ছিটকে নাহিদের সাদা পাঞ্জাবিতে পড়লো।নাহিদকে দেখতে এই মুহূর্তে ভীষণ ভয়ানক লাগছে।নাহিদ রক্তাক্ত হাতে কপালের ঘাম মুছে আশেপাশে চোখ বুলালো।
সাবধানে আসিফ এর রুমের সামনে আসলো।রুমের দরজা খোলা।নাহিদের চিন্তা বাড়লো।সে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই অন্ধকার রুমটি মানব শূন্য দেখলো।আসিফ কে কোথাও দেখা গেলো না।চিন্তার ভাঁজ ফেলে নাহিদ ফিরে যেতে গেলেই হঠাৎ পিঠে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলো।সারা শরীর থরথর করে কেপে উঠলো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো প্রিয়তমার ঘুমন্ত মুখখানা।দাতে দাত চেপে যন্ত্রণা লাঘবের চেষ্টা করলো।শুকনো ঢোক গিলে নাহিদ হাতের ধারালো অ*স্ত্র শক্ত করে ধরে পেছনে ফিরেই লোকটির বুক বরাবর আঘাত করলো।মুহূর্তেই লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।নাহিদের কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।শরীরে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছে।সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে তার জন্য।পেছনে হাত দিয়ে পিঠে গেঁথে থাকা ছুরি একটানে সরিয়ে আনলো।মুহূর্তেই তীব্র যন্ত্রণায় নাহিদ আর্তনাদ করলো।চোখ বুজে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো।ছুরিটা বেশি গভীর অব্দি ঢুকতে পারেনি।তাই সে সহজেই সেটা বের করতে পেরেছে।কিন্তু তীব্র ব্যাথায় নাহিদের শরীর কাপছে।তাজা রক্তে তার সাদা পাঞ্জাবি রক্তিম হয়ে গেছে।শরীর কেমন অসাড় হয়ে আসছে।
নাহিদ দেয়ালে ধরে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।হাতের অ*স্ত্রটি শক্ত করে মুঠোয় পুড়ে নিলো।যা থেকে টুপ টুপ করে রক্ত ঝরছে।নাহিদ ভাবতেই পারছে না এতো সিক্রেট ভাবে এই জায়গায় আসার পরও কেউ কেমন করে তাদের ট্রেস করলো?এই জায়গার বিষয়ে কেউ তেমন কিছু জানে না।নাহিদের মনে সন্দেহ হতে লাগলো।এই কাজ কে করছে জানা জরুরী।
জীবনের এমন মুহূর্ত তার জীবনে আগে আসলেও নাহিদ কখনোই ভীত হয়নি।বরং সকল পরিস্থিতি সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করেছে।কিন্তু আজ নাহিদ ভীত।কারণ তার প্রিয়সী তার পাশে।নিজের ক্ষতি হয় হোক কিন্তু প্রিয়সীর দেহে ক্ষুদ্র আঁচড় ও লাগতে দিবে না।নাহিদ সিড়ির দিকে তাকালো।এই মুহুর্তে আরজুকে নিয়ে তার বের হতে হবে।কতজন এসেছে আক্রমন করতে নাহিদের জানা নেই।তবে সেই সংখ্যা নেহাত কম নয় ধারণা করতে পারছে।কিন্তু এটা যে সবে শুরু ভালো করেই বুঝতে পারছে।নিজের দুর্বল শরীরটি নিয়ে নাহিদ উপরের দিকে যেতে লাগলো।সিড়ির কাছে আসতেই সিড়ির ফাঁকে তার চোখ পড়ল।দেখলো সিড়ির নিচে চারটি নিথর দেহ পড়ে আছে।তারা নাহিদের লোক ছিলো।নাহিদের চোখ অশ্রুসিক্ত হলো।এই মানুষগুলো নাহিদকে রক্ষা করতে যেয়ে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিলো।নাহিদ বহু কষ্টে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলো।প্রচন্ড ব্যাথায় যেনো তার শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ হতে চলেছে।
তাদের রুমে ঢুকতেই দেখলো আরজু কাচুমাচু হয়ে বিছানায় বসে আছে।নাহিদকে দরজায় দেখে আরজু দ্রুত উঠে দাড়ালো।আরজুর চোখে মুখে আতঙ্ক, চিন্তার চাপ।আরজু এক মুহুর্ত দেরি না করে দৌড়ে এসে নাহিদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।নাহিদ এক কদম পিছিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো।প্রিয়তমার স্পর্শে যেনো শরীরের সকল যন্ত্রণা কমে যাচ্ছে।এই ভাবেই চিরদিন বুকে লুকিয়ে থাকুক মেয়েটা।আরজু নাহিদের বুকে মুখ গুজে বির বির করে বললো
-” আপনি কোথায় ছিলেন নেতা সাহেব।জানেন আমার কতো ভয় করছিল।হঠাৎ কারো চিৎকারে আমার ঘুম ভেংগে গেছে।কেমন সব অদ্ভুত শব্দ হচ্ছিল।পাশে তাকিয়ে দেখলাম আপনি নেই। কোথায় ছিলে…..!”
আরজু আর কথা শেষ করতে পাড়লো না।নাহিদকে জড়িয়ে ধরায় তার হাতে কেমন তরল কিছু অনুভব করলো।আরজু ধীরে ধীরে নাহিদের বুক থেকে মুখ তুললো।নাহিদের পিঠে বিচরণ করা ভেজা হাত সামনে আনতেই বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।।তার হাত তাজা রক্তে ভেজা।আরজু হাত দুটি অস্বাভাবিক ভাবে কাপতে লাগলো।রক্ত জিনিসটাই আরজুর জন্য আতঙ্ক।রক্ত দেখলেই বাবা মায়ের সেই বিভৎস রক্তাক্ত মুখটা ভেসে উঠে।আরজু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে নাহিদের দিকে তাকাতেই আরো চমকে গেলো।শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের শৈত ধারা গড়িয়ে পড়লো। নাহিদের শুভ্র পাঞ্জাবিতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।আরজুর গলা শুকিয়ে আসলো।শুকনো ঢোক গিলে নাহিদের দিকে তাকাতেই আরেক দফা চমকে গেলো।তার নেতা সাহেব অসম্ভব ঘামছে।চোখ দুটি অসম্ভব লাল।শক্ত সবল মানুষটা ভীষণ দুর্বল ঠিক মতো দাড়াতে পারছে না।বলিষ্ঠ মানুষটি যে মোটেও ঠিক নেই সেটা তাকে দেখেই বুঝতে পারছে। আরজু যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়ল।নিজেকে ধাতস্থ করে আরজু দ্রুত নাহিদের পেছনে এসে দাড়ালো।পিঠে গভীর ক্ষত দেখে আরজুর শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।আরজুর যেনো মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে পড়ল।ক্ষত থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত ঝরছে।নাহিদ আরজুর দিকে ফিরে দেখলো প্রিয়তমার বিধ্বস্থ মুখখানা।আরজুর কোমল অধরে রুক্ষ হাতের স্পর্শ করতেই আরজুর ঘোর কাটলো।সে কাপা কাপা হাতে নাহিদের বুকে হাত রেখে বললো
-” আপ…আপনি ঠিক আছেন নেতা সাহেব? কি হয়েছে আপনার? এতো রক্ত কি….কিসের?”
আরজুর জড়িয়ে যাওয়া কণ্ঠ নাহিদের বুকে এসে বিদছে।এই মেয়েটাকে সে সারাজীবন এই রক্তের খেলা থেকে বহু দূরে রাখতে চেয়েছিল।কিন্তু আজ পরিস্থিতি বদলে গেলো।আরজুকে অশান্ত হতে দেখে নাহিদ আরজুকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।আরজুর মাথায় হাত রেখে বললো
-” এভরিথিং ইজ ফাইন মাই লাভ।ডোন্ট ওয়ারি।”
আরজু যেনো মানতে নারাজ।সে নাহিদের কাছ থেকে সরে কাদতে কাদতে বললো
-“অনেক রক্ত ঝরছে নেতা সাহেব।আপনাকে হসপিটালে নিতে হবে।”
-” লাগবে না আরজু।আমাদের এক্ষনি বের হতে হবে।আমরা এখানে মোটেও সেফ না।”
আরজু যেনো মুহূর্তেই সবটা বুঝতে পাড়লো।একজন নেতার জীবনের এই কঠিন চ্যাপ্টার সম্পর্কে নাহিদ তাকে বহু আগে অবগত করেছে।এমন পরিস্থিতি লাইফে যে কোনো সময় আসতে পারে।আরজুকে তখন ম্যাচিউরিটি সাথে সবটা হ্যান্ডেল করতে হবে।আরজু দ্রুত ক্লোজেটের সামনে এসে একটা ওড়না নিয়ে আসলো।নাহিদের পিঠে শক্ত করে বেধে দিলো। এতে যদি রক্ত পড়া বন্ধ হয়।নাহিদ আর দেরী করলো না। ড্রয়ার থেকে নিজের হ্যান্ডগান বের করে নিলো।দ্রুত পেছনের জানালা দিয়ে বাইরে লাফ দিয়ে নামলো।আরজু ভীষণ ভয় পাচ্ছে এতো উপর থেকে লাফ দিতে।নাহিদ আরজুকে আশ্বস্ত করলো। আরজু চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে লাফ দিয়ে দিলো।ধরেই নিলো তার হাত পা কিছু একটা ভেঙ্গেছে।কিন্তু চোখ খুলতেই দেখলো সে তার নেতা সাহেবের কোলে।আরজু ভয়ে নাহিদের গলা জড়িয়ে ধরলো আর ফুপিয়ে উঠলো।নাহিদ আরজুর কপালে আলতো স্পর্শ করে বললো
-” নিজের শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে তোমাদের রক্ষা করবো আরজু।তাই কোনো চিন্তা নেই।”
আরজু আবারও ফুপিয়ে উঠলো।আরজুকে কোলে নিতে নাহিদের খুব কষ্ট হচ্ছিল।কিন্তু আরজুকে বুঝতে দিলো না।কারণ এতো উপর থেকে লাফ দিলে আরজু তেমন ক্ষতি না হলেও তার বাচ্চার ঠিকই ক্ষতি হতো।আর নিজের সন্তানকে রক্ষা করতে এমন হাজার যন্ত্রণা তার কাছে কিছুই না।আরজু নাহিদের অবস্থা বুঝতে পেরে দ্রুত কোল থেকে নেমে পড়লো।একটু সামনে আগাতেই একটা গাছের পেছনে এসে আসিফের মুখোমুখি পড়ে গেলো। আসিফ বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকালো।যেনো নাহিদকে এখানে মোটেও আশা করেনি। নাহিদ আসিফকে দেখে এক মুহুর্ত দেরি করলো না।প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে তার গলা চেপে ধরলো।বলিষ্ঠ হাতের থাবায় পড়ে মুহূর্তেই আসিফের দম বন্ধ হয়ে আসলো।সে নিজেকে নাহিদের হাত থেকে ছাড়তে চেষ্টা করতে লাগলো।আরজু হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে নাহিদের দিকে।নাহিদকে এই প্রথম এমন হিংস্র অবস্থায় দেখলো।সর্বদা শান্ত,গম্ভীর মানুষটার এই রূপ আরজুর বুকে কাপন সৃষ্টি করলো।রক্তিম চোখ জোড়া দিয়ে যে কাউকে ভৎস করে ফেলতে পারবে।আরজু যেনো খানিকটা ভয় পেয়ে গেল।নাহিদ প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বললো
-” বেঈমান কোথাকার।তোকে নিজের ভাই মনে করতাম।আর তুই ওদের সাথে হাত মিলিয়েছিস?এই জায়গার কথা অন্য কেউ জানে না।ওদের পক্ষে জানা অসম্ভব।গতকাল থেকেই তোর প্রতি আমার সন্দেহ হচ্ছিল।কিন্তু আমি নিজেকে বার বার বুঝিয়েছি তুই এমন করতেই পারিস না।তোকে তো কখনোই নিজের অ্যাসিস্টেন্ট এর মতো ট্রিট করিনি?বন্ধুসুলভ থেকেছি।নিজের আপন জন ভেবেছিলাম। তাহলে এমন বেইমানি কেনো করলি?কতো টাকার বিনিময়ে ওদের কাছে বিক্রি হয়েছিস বল?”
আসিফ দুচোখে অশ্রু বিসর্জন দিলো।লজ্জায় যেনো কুকিয়ে যাচ্ছে।বিশ্বাস অর্জন করতে বহুদিন লাগলেও সেটা ভাঙতে এক মুহূর্ত ও কম।এতো দিনের অর্জিত বিশ্বাস সে আজ ভেঙে ফেলেছে।সে ফুপিয়ে উঠে বললো
-” আমাকে মাফ করবেন স্যার।আমি এমন বেইমানি করতে চাইনি।আমি তো সর্বদা আপনাকে নিজের আইডল মনে করেছি।আপনার মতো হতে চেয়েছি।আপনার সান্নিধ্যে থাকা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। কিন্তু আজ আমি অসহায় ছিলাম।ওরা গতকাল আমার মা বাবা আর স্ত্রীকে কিডন্যাপ করেছে।আমি অনেক বার আপনাকে বলতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি।পুলিশকেও ইনফর্ম করার সাহস পায়নি।তাহলে তারা ওদের মেরে ফেলত স্যার।তারা ওদের বদলে এই জায়গার অ্যাড্রেস চেয়েছে।আমি ভীষণ অসহায় হয়ে পড়েছিলাম নিজের পরিবারের কাছে।আমাকে মাফ করে দিন স্যার।”
নাহিদ আর আরজু হতবম্ব হয়ে পড়ল।এতো কিছু তাদের আড়ালে ঘটছিল।নাহিদ আসিফের গলা ছেড়ে দিলো।আসিফ যেনো মন ভরে নিঃশ্বাস নিলো।নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে গম্ভীর স্বরে বললো
-” তোমার কাছে আমি এমন কিছু আশা করিনি আসিফ।”
নাহিদের ভারী গলা শুনে আসিফ নাহিদের পায়ের কাছে পড়ে গেলো।এই মানুষটাকে সে কখনোই ঠকাতে চায়নি।এই মানুষটির জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিতে সে সময় নিবে না।কিন্তু বিষয়টা তার পরিবার,আপনজনদের।আসিফ নাহিদের পায়ে জড়িয়ে বললো
-” আমাকে মাফ করে দিন স্যার।আমি নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে যেয়ে আপনার পরিবারকে এমন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছি।আমি এমনটা মোটেও করতে চায়নি।”
নাহিদ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো।জায়গাটা মোটেও সেফ না।আসিফ ভেজা গলায় আবার বললো
-” স্যার আপনারা এখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে যান।ওরা বিশাল বড়ো গ্রুপ এসেছে।আমাদের সব সিকিউরিটি মেরে ফেলেছে।রতন এখনো আছে।ও আপনাদের রুমের আশেপাশেই ছিলো।তাই কেউ আপনাদের রুম অব্দি ঢুকতে পারেনি।”
নাহিদ আসিফের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো।এই ছেলেটা তার সাথে সেই প্রথম থেকেই আছে।বেশ বিশ্বস্ত।কিন্তু আজ নিজের পরিবারের জন্য এমনটা করতে বাধ্য হয়েছে।নাহিদ বললো
-” তুমি ও চলো আসিফ।ওরা তোমাকে পেলেও শেষ করে দিবে।মোটেও ছাড়বে না।”
-” না স্যার।আমি এখানেই আছি।কারণ এখানে একজন না থাকলে তারা দ্রুতই আপনার কাছে চলে আসবে।আমি যা পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।আপনাকে রক্ষা করাই আমার দায়িত্ব ছিল।কিন্তু পারিনি।এই পাপ মোচনের জন্য আমি সব করতে পারি।এই দায়িত্ব পালনে নিজেকে বিলিয়ে দিতেই দ্বিধা নেই।”
-” পাগলামি করো না আসিফ। চলো আমার সাথে।”
-” আপনি যান স্যার।ম্যাম এই অবস্থায় বেশি দুর এগোতে পারবে না।অন্য দিকে আপনিও আহত।আপনি ম্যাম কে নিয়ে দ্রুত হাইওয়ে রোডে উঠে পড়ুন।আমাকে এখান থেকেই তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। আর দেরি করবেন না।ম্যাম কে নিয়ে চলে যান।দ্রুত যান।”
নাহিদ আসিফকে জড়িয়ে ধরলো।তার ভরসা যোগ্য মানুষের মধ্যে আসিফ অন্যতম।আসিফ নিজেও নাহিদকে আলিঙ্গন করলো।আসিফ বললো
-” আমার বাবা মাকে বলবেন তার ছেলে এই প্রতারণা করতে চায়নি।আর আমার স্ত্রীকে বলবেন তাকে ভীষণ ভালোবাসি।”
আরজু মুখ চেপে কেঁদে উঠলো।নাহিদ বললো
-” তুমি প্রতারক নও আসিফ।পরিস্থিতির শিকার।সেফ থেকো।জলদি দেখা হবে আমাদের।ইনশাআল্লাহ!!”
তারপর তারা পাহাড়ের গা ঘেসে নামতে লাগলো।আরজু কখনোই এমন বিপদের মুখে পড়েনি।তাই সে কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না।বার বার বুক ফেটে কান্না আসছে।অন্ধকারে উচু নিচু রাস্তা দিয়ে তাদের চলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।আরজু বার বার হোচট খাচ্ছে।নাহিদ নিজেও বেশ দুর্বল।শরীরের যন্ত্রণা যেনো বাড়তেই লাগলো।কিন্তু আরজুকে শক্ত করে ধরে রাখলো।
হঠাৎ করেই গুলির আওয়াজ ভেসে আসলো।ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছে।বেশ কিছুক্ষন এই গুলিবর্ষণ চললো।কয়েক মুহূর্ত পর সব আবার নিস্তব্দ।নাহিদ একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে চোখ বুঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আন্দাজ করতে পারলো কি ঘটেছে।আরজু তার বুকের কাছে।আরজু কাপা কাপা গলায় বললো
-” সব এমন থেমে গেলো কেনো নেতা সাহেব? আসিফ ভাইয়া কি….?”
আরজু আর বলতে পারলো না।নাহিদ আরজুকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো
-” ভয় করছে আরজু?”
আরজু ভেজা চোখে তাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে হে জানালো।নাহিদ মৃদু হেসে বললো
-“ভয় নেই আরজু।তোমার নেতা সাহেব তোমার পাশে আছে।এই অন্ধকার দ্রুতই কেটে যাবে।নতুন ভোর শুরু হবে।তুমি শুধু নিজেকে সামলে নিও।”
_____________
ফোনের তীব্র শব্দে ঘুম ছুটে গেলো নাঈম মাহমুদের।ঘুম জড়ানো কন্ঠে ফোন রিসিভ করে অপর পাশের ব্যাক্তির কথা শুনে এক লাফে উঠে বসলেন।হাত থেকে হঠাৎ করেই ফোন পড়ে গেলো।বুকে হাত রেখে বুঝতে পারলো তার হৃদপিন্ড অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে।হঠাৎ প্রচন্ড তেষ্টা পেলো তার।হাত বাড়িয়ে পাশের টেবিল থেকে গ্লাস তুলতেই কম্পনরত হাত থেকে গ্লাসটি বিকট শব্দ করে ফ্লোরে পড়ে ভেঙে গেলো।হঠাৎ তীব্র শব্দে ঘুম ভেংগে গেল পাশে থাকা সানজিদা মাহমুদের।তিনি চমকে গিয়ে দ্রুত উঠে লাইট অন করলেন।পাশেই স্বামীকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন।শীতল এই ঘরটায় বসে তিনি অস্বাভাবিক ঘামছেন।সানজিদা মাহমুদ দ্রুত তার পাশে এসে বললেন
-” কি হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেনো?”
নাঈম মাহমুদ ভেজা চোখে একবার সানজিদা মাহমুদের দিকে তাকিয়ে দ্রুত উঠে দাড়ালেন।ফোন পকেটে গুজে কিছু না বলেই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন।সানজিদা মাহমুদ এতে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফেললেন।এই লোকটা কখনোই তাকে গুরুত্ব দেয়নি।নিতান্তই লোক দেখানো সম্পর্ক তাদের।কখনোই এই মানুষটা তাকে ভালোবাসতে পারে নি।
নাঈম মাহমুদ দ্রুত কল করলো ছোট ভাই নকীব মাহমুদ কে। নকীব মাহমুদ কল ধরতেই নাঈম মাহমুদ বললেন
-” আমার ছেলে আর ছেলের বউকে সেফ দেখতে চাই নকীব।ওদের আমি সুস্থ দেখতে চাই।তোর সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ কর।আমার ছেলেটাকে আমার বুকে ফিরিয়ে আন।”
-” ভাইজান আপনি শান্ত হন।আমি অলরেডি রাস্তায়। আর্মির ফোর্স অলরেডি কাছাকাছি আছে। ইনশাআল্লাহ ওদের কিছু হবে না।”
নাঈম মাহমুদ চোখের অশ্রু মুছে বললেন
-” এই ভয়টাই আমি পেতাম।নাহিদ কখনোই অন্যায়ের সাথে আপোস করবে না।যার ফলে ওর শত্রুর সংখ্যাও বেশি হবে।অন্যরা তাকে নিজেদের রাস্তা থেকে সরাতে চাইবে।কিন্তু আমার একরোখা,তেজী ছেলেটা পিছু হটার না।আমার কথার গুরুত্ব কখনোই দেয়নি।”
-” ভাইজান নাহিদ তার জায়গায় ঠিক আছে।আপনি কি চান আপনার ছেলে কাপুরুষ হোক?কিছু দালাল,অসাধু লোকের জন্য সবাই ভয় পেয়ে থেমে গেলে দেশের কি হবে? কাউকে না কাউকে তো আগাতেই হবে।আমাদের নাহিদ কারো ভয়ে ঘরের কোণে বসে থাকার ছেলে না।”
নাঈম মাহমুদের মন কু ডাকছে।নাহিদের প্রতি তার মায়াটা বরাবর বেশি।মা হারা ছেলেটাকে তিনি যথাযথ সময় দিতে পারেনি।এতো বছর তাদের মধ্যে কোনো সুস্থ সম্পর্ক ছিলো না।মাত্রই তো সবটা ঠিক হচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ এসব হচ্ছে।ছেলের কোনো ক্ষতি সে মানতে পারবে না।অন্য দিকে সেই মিষ্টি মেয়েটা।যে তার পুরো অগোছালো সংসার গুছিয়ে দিয়েছে।তার বংশের প্রদীপ যে আসতে চলেছে তার জীবনও বিপর্যস্ত।নাঈম মাহমুদ আর কিছুই ভাবতে পারছেন না।নাঈম মাহমুদ কাউকে না বলেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
___________________
অনেকটা পথ চলার পর আরজু ভীষণ ক্লান্ত আর দুর্বল হয়ে পড়লো।নাহিদ নিজেও শরীরে জোর পাচ্ছে না।পিঠের ক্ষত থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে।শুধু মাত্র মানসিক শক্তির বলে চলছে সে।আরজু আর হাঁটতে পারছে না।পায়ের কয়েক জায়গায় ছিলে গেছে।ভীষণ জ্বলছে।সে ক্লান্ত হয়ে একটা বড়ো গাছের গোড়ায় বসে পড়লো।নাহিদ তার ক্লান্ত দেহ খানা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দিলো।চোখে মুখে সব অন্ধকার দেখছে।ব্যাথার মাত্রা বেড়েই চলছে।গরম আর ঘামে তারা ভিজে একাকার।আরজুর ভীষণ তেষ্টা পেলো।কিন্তু মুখ ফুটে নাহিদকে কিছু বললো না।কারণ জানে এখানে পানি পাওয়া অসম্ভব।রাতের আধারে চাঁদের আলোয় নাহিদ আবছা দেখতে পেলো বিধ্বস্ত,ভয়ে আড়ষ্ঠ,ক্লান্ত আরজুকে।নাহিদের হঠাৎ মনে হলো এই পুষ্পের ন্যায় কোমল মেয়েটির তার ধ্বংসাত্বক জীবনে না আসাই শ্রেয় ছিলো।কেনো জড়ালো আরজুকে নিজের জীবনে?চাইলেই কি আরজুকে নিজের কাছথেকে দূরে রাখতে পড়তো না? কিন্তু তার অবচেতন মন বেইমানি করেছে।আরজুর সানিদ্য চেয়েছে।এই মিষ্টি মেয়েটা এমন অস্বাভাবিক জীবন ডিজার্ভ করে না।আরজু জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে।নাহিদ আরজুর মাথায় হাত রেখে বললো
-” কষ্ট হচ্ছে?”
আরজু ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো।মানুষটা এমন কেনো? যেখানে নিজে এতো গভির ভাবে আহত হয়ে আছে সেখানে মানুষটা তার কষ্টের কথা চিন্তা করছে।এমন গভীর ভাবে কি কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে?এমন শুদ্ধ ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা কি আদো তার আছে?আরজু নাহিদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নাহিদের কপালের ঘাম ওড়না দিয়ে মুছে দিতে দিতে বললো
-” আপনি পাশে থাকলে আমাকে কোনো কষ্ট ছুতে পারবে না নেতা সাহেব।”
নাহিদ আরজুকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।আরজুর এলোমেলো চুলে গভীর চুমু খেল।আরজুর অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের গতি টের পাচ্ছে সে।হঠাৎ দূরে দৃষ্টি পড়লো।দূরে কিছু আলো তাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।বুঝতে পারলো বিপদ তাদের দিকে ধেয়ে আসছে।আরজুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো
-” জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে আরজু যখন নিজের আবেগকে সাইডে রেখে বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়।বিষাক্ত সত্যি কে হজম করে নিতে হয়।আমি জানি আমার আরজু অনেক স্ট্রং।এই মুহূর্তে হয়তো তোমাকে অনেক রক্তের খেলা দেখতে হতে পারে।কিন্তু আমি চাই তুমি পরিস্থিতি বুঝে রিয়্যাক্ট করো।এই মুহূর্তে নিজেকে নেতা সাহেবের আরজু না ভেবে তোমাকে এমপি নিবরাস নাহিদের স্ত্রী ভাবতে হবে।আর নাহিদের স্ত্রী কখনোই ভীতু হতে পারে না।পলিটিক্সের সুন্দর,চাকচিক্য রূপের বিপরীত পাস আজ তোমার সামনে ভেসে উঠেছে।”
নাহিদের কথা শুনে আরজু ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো।এমন পরিস্থিতিতে আট দশজন সাধারণ মানুষ যেমন রিয়্যাক্ট করবে আরজু তাই করছে।এমন সংঘর্ষ, গোলাগুলি আরজুর জন্য প্রথম।কিন্তু নাহিদ শান্ত থেকে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে।আরজুকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করছে।
নাহিদ আরজুর হাত শক্ত করে ধরলো।তারপর যতো দ্রুত সম্ভব সামনে আগানোর চেষ্টা করলো।কিছুদূর যেতেই পেছন থেকে গুলি বর্ষন শুরু হলো।আরজু ভয়ে চিৎকার দিয়ে দুই হাতে কান চেপে বসে পড়লো।এমন তীব্র শব্দে হৃদপিন্ড লাফাচ্ছে অস্বাভাবিক ভাবে।আরজু খিচে দুচোখ বুজে রাখলো।নাহিদ সাবধানে আরজুকে একটা বড়ো গাছের আড়ালের দার করলো।মেয়েটার জীবনের সবচাইতে বিভৎস দিনটি নিঃসন্দেহে আজকের।হয়তো আরজু এই দিনটির কথা কখনোই ভুলতে পারবে না।আরজু ভয়ে নাহিদকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।কেঁদে বললো
-” ওরা কি আমাদের মেরে ফেলবে? আমাদের সন্তান কি পৃথিবীর মুখ দেখবে না?”
কথাটা নাহিদের জন্য সবচাইতে বিষাক্ত বাক্য।সে আরজুকে শক্ত করে আলিঙ্গন করে বললো
-“মোটেও এমন হবে না।কিছুক্ষনের মধ্যেই আর্মি ফোর্স চলে আসবে।ঐযে দেখো সামনে হাইওয়ে রাস্তা। সেখান অব্দি গেলেই নেটওর্য়াক পাওয়া যাবে।তারা এই রাস্তা ধরেই আসছে।”
-” কিন্তু আমরা যাবো কি করে?”
নাহিদ নিজেও চিন্তায় পড়ে গেল।গাছের আড়ালে থেকে দেখতে পেল বেশ কয়েকজন তাদের দিকে ধেয়ে আসছে।শুকনো ঢোক গিলে হাতের গান শক্ত করে ধরলো।হেরে যাওয়ার ছেলে নাহিদ না।শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবে।তাই সে পেছনে ফিরে শত্রুদের দিকে পাল্টা গুলি করতে লাগলো।তীব্র শব্দে আরজুর কান ভো ভো করছে।সে নাহিদের পিঠ খামচে ধরে রাখলো। দশ বারো জন একাধারে নাহিদের দিকে গুলি ছুঁড়ছে।নাহিদ কোনো মতে নিজেকে বাঁচিয়ে তাদের দিকে পাল্টা গুলি ছুড়তে লাগল।হঠাৎ করেই একটা গুলি এসে লাগলো নাহিদের পায়ে।তাৎক্ষণিক নাহিদ আর্তনাদ করে মাটিতে বসে পড়লো।মুহূর্তেই যেনো মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করলো সে।আশেপাশে কি হচ্ছে আরজুর কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।আতঙ্কে মেয়েটা আড়ষ্ঠ হয়ে গেছে।হঠাৎ নাহিদকে কুকিয়ে উঠতে দেখে আরজু চমকে তাকালো।নাহিদের পায়ের দিকে তাকাতেই আঁতকে দুহাতে মুখ চেপে ধরলো।আরজু যেনো জমে গেলো বরফের ন্যায়। প্রিয় মানুষটিকে চোখের সামনে এমন অবস্থায় দেখলে কেউ কি করে ঠিক থাকতে পারে?নাহিদ দাতে দাঁত চেপে যন্ত্রণা সহ্য করার চেষ্টা করছে।চোখ জোড়া ঘোলাটে হয়ে আসছে।আরজু নাহিদের পায়ে ধরে চিৎকার করে কাদতে শুরু করলো।এই গভীর অন্ধকারে আরজুর আত্মচিৎকারের আওয়াজ যাতে শত্রুপক্ষর কান অব্দি পৌঁছাতে না পারে তাই নাহিদ আরজুর মুখ চেপে ধরলো।আরজু দেখলো নাহিদের হাত অসম্ভব কাপছে।আরজু বুঝতে পাড়ছে তার নেতা সাহেবের ভীষন কষ্ট হচ্ছে।নাহিদ ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বললো
-” হুস!!! শব্দ করো না আরজু।”
আরজু নিচু স্বরে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বললো
-” মানুষ এতটা জঘন্য কি করে হতে পারে।অর্থ,ক্ষমতার লাভে অন্য কারো ক্ষতি কি করে করতে পারে এরা? এদের মধ্যে কি কোনো মনুষ্যত্ব নেই?”
নাহিদ ঝাপসা চোখে আরজুর দিকে তাকালো।পৃথিবী সবচাইতে রূপবতী নারীটিকে এমন অসহায় অবস্থায় দেখে মনে হলো রূপবতী মেয়েদের ভাগ্য ভালো হয়না।নাহলে এই মেয়েটার আজ এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না।নাহিদের ভীষণ খারাপ লাগলো।নিজের শারীরিক যন্ত্রণা ভুলে আরজুকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লো।আরজু কি করবে বুঝতে না পেরে গলার ওড়না নাহিদের পায়ে চেপে ধরলো।নাহিদ ব্যাথায় চোখ মুখ খিচে রেখেছে।এই মানুষটা এতো যন্ত্রণা সহ্য করছে কি করে?আরজু কাদতে কাদতে বললো
-” আপনার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন নেতা সাহেব।”
নাহিদ গাছে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে বললো
-” আমার তোমাকে প্রয়োজন আরজু।তোমাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা প্রয়োজন।কিন্তু নিজেকে ভীষণ দুর্বল লাগছে।”
নাহিদ আড়চোখে দেখতে পেলো পেছনের লোক গুলো তাদের কাছাকাছি চলে এসেছে।আরজু আতঙ্কিত হয়ে পড়লো।নাহিদ চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আরজুর পেটে আলতো ছুঁয়ে দিলো।তার মনে হলো ভেতর থেকে ছোট্ট ভ্রূণ টি চিৎকার করে বলছে ” পাপা আমি কি এই পৃথিবীতে আসতে পারবো না? এই হায়নার দল কি আমাকে এই পৃথিবীর বুকে আসতে দিবে না?”
নাহিদ নিচের ঠোঁট চেপে নিজের কান্না রোধ করলো।পুরুষদের নাকি কাদতে নেই।কিন্তু নাহিদের চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে।শরীরের কষ্টের চাইতে মনের কষ্ট দ্বিগুণ বাড়ছে।আজ যদি সে নিজ স্ত্রী সন্তানকে রক্ষা না করতে পারে তবে সে কিসের নেতা।কিসের এতো ক্ষমতা?