মিষ্টি রোদের হাতছানি পর্ব-৮৭ এবং শেষ পর্ব

0
1577

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_last

সেদিনের হামলাকারীদের মধ্যে একজন জীবিত ছিলো।সে ছিলো গুরুতর ভাবে আহত।লোকটি বেচেঁ আছে সেই কথা সবার কাছে গোপন করা হয়।নাহলে শত্রুপক্ষ লোকটিকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করবে।বাহিরের শত্রুদের ঘর থেকে কে হেল্প করছে সেটা জানা ভীষণ প্রয়োজন ছিল।যেহেতু দাদাজানের মৃত্যুর জন্য মানুষটি দায়ী ছিলো তার মানে মানুষটা নুর মেনশনে অবস্থান করছিল।নূর ম্যানসনে পরিবারের বাইরে বেশকিছু গৃহকর্মী, সিকিউরিটির লোক আর দারোয়ান আছে।সবাই বিশ্বস্ত।কাউকেই সন্দেহের তালিকায় ফেলা যাচ্ছে না।অপরাধীকে খুঁজে বের করা সময়সাপেক্ষ মনে হলো আসফির কাছে।

আসফি তখন ভীষণ চিন্তিত ছিলো।নাহিদ তার হাতে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটা সে জীবন দিয়ে হলেও পালন করবে।নাহিদের অপারেশনের পর ডক্টর আসফিকে গোপনে ডেকে জানায় নাহিদের শরীর থেকে গুলি বের করা হয়েছে।কিন্তু নাহিদের অবস্থা ভীষণ ক্রিটিক্যাল।খুবই ধীর গতিতে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল। পুরোপুরি আনকনসিয়াস ছিল সে। আসফির তখন দিশেহারা অবস্থা।হসপিটালে চারপাশে পুলিশ,আর্মি,মিডিয়া।সব কিছু সামাল দিতে আসফি ডক্টরকে জানায় নাহিদকে মৃত ঘোষণা করতে।ডক্টর প্রথমে রাজী ছিল না।কিন্তু আসফির রিকোয়েস্ট আর নাহিদের অবস্থা দেখে রাজি হয়।আরজুকে আলাদা ভাবে কিছু বলার সুযোগ আসফি পায়নি।আরজুর সেই আর্তনাদ চুপচাপ শুনা ছাড়া আসফির আর উপায় ছিলো না।আরজু নাহিদের মৃত্যুর খবর শুনে এতটাই উন্মাদ ছিলো যে নাহিদ যে বেচেঁ আছে সেটা বুঝে উঠতে পারেনি।এতে আসফির জন্য সুবিধা হয়েছে।তবে বড়ো সমস্যা হলো তখন, যখন নাঈম মাহমুদ হসপিটালে পৌঁছেই নাহিদের মৃত্যুর খবর শুনে স্ট্রোক করে ফেলেন। আসফি তখন আরো দিশেহারা।সে দ্রুত নাহিদের চাচু নকীব মাহমুদকে সবটা বুঝিয়ে বলে।তিনি যেনো আশার আলো খুঁজে পেলেন।তিনি তখনই নাহিদকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর সব বেবস্থা করতে লেগে পড়েন।

উন্মাদ আরজুকে আসফি বেশ সময় নিয়ে তাদের প্ল্যান সম্পর্কে জানায়।এটাও জানায় বাসার কেউ শত্রুদের হেল্প করছে।নেতা সাহেব বেচেঁ আছে শুনে আরজু খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।কিন্তু ডক্টরের কথায় মেয়েটা যেনো আশাহত হয়ে পড়ে।কারণ নাহিদের অবস্থা আশঙ্কা জনক।সেই মিথ্যা খবর যে কোনো সময় সত্যি হয়ে যেতে পারে।আরজু পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারলো না।

আসফি আর নকীব মাহমুদ দ্রুতই নাহিদের জায়গায় একটা বেয়ারিস লাশের বেবস্থা করে।আর লাশটিকে দ্রুতই দাফনের বেবস্থা করে।কাউকেই আর নাহিদকে দেখতে দেয়নি নকীব মাহমুদ।নকীব মাহমুদ নিজেও এই কঠিন পরিস্থিতিতে কি করবে,কি বলবে ঠাহর করতে পারছিলেন না।

খুব গোপনে নকীব মাহমুদ পরদিন নাহিদকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়ে দিলেন।সাথে পাঠালেন তার বিশ্বস্ত অফিসারদের।আরজু অনেক কান্না করে অনুরোধ করেছিলো নাহিদের সাথে সেখানে যাওয়ার জন্য।কিন্তু আসফি আর নকীব মাহমুদ রাজি হয়নি।কারণ স্বামী মারা যাওয়ার পর হুট করে আরজুর বাইরে যাওয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠতে পারে। শত্রুপক্ষ সন্দেহ করতে পারে।কোনো রিস্ক নেওয়া সম্ভব নয়।
আরজু নেতা সাহেবের নিরাপত্তার জন্য সব মানতে বাদ্য হলো।নাহিদের বেচেঁ থাকার খবরটি তখন আরজু,নকীব মাহমুদ আর আসফি জানতো।

নাঈম মাহমুদ যখন একটু সুস্থ হলেন তখন তাকেও এই খবরটি জানানো হয়। মৃত ঘোষিত ছেলের হঠাৎ বেচেঁ থাকার খবরে তিনি হতবম্ব হয়ে পড়েছিলেন।নাহিদকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন।কিন্তু পরিস্থিতির বুজে নিজেকে সংযত করে নেন।

আসফির মনে হচ্ছিলো এই কাজ সাদমান করতে পারে তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।কিন্তু সাদমানের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে হামলাকারী অন্য কেউ ছিলো।

________

বেশ কিছুদিন পর হামলাকারী লোকটি খানিকটা সুস্থ হতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।দুই দিনের রিমান্ডের পর লোকটি মুখ খুলে।নাহিদকে মারার জন্য তাদের হায়ার করেছিলো শরিফুল হক।

যেখানে নেতারা বিরোধী দলের মানুষের ধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানে নাহিদকে তার পার্টির লোকেরাই হত্যা করার চেষ্টা করে।এটা পার্টির জন্য খুবই লজ্জাজনক।এমন বিচক্ষণ,যোগ্য একজন নেতাকে তার দলের লোকেরাই সারভাইব করতে দেয়নি।ক্ষমতার লোভে শরিফুল হক নাহিদের প্রতি হিংসাপরায়ন হয়ে এমন কাজ করেন।নাহিদকে তার গদিতে দেখে তিনি বেপরোয়া হয়ে পড়েন। নাহিদের দাদাজানের মৃত্যুর পেছনেও তিনি ছিলেন সেটা প্রমাণ করা আসফির জন্য কঠিন ছিল।কারণ ভেতরে থেকে কে কাজটা করেছে সে তখনও জানেনা।শরিফুল হকের মতো চতুর লোক এই বিষয়ে নিজের মুখ খুলেনি। দুই খুনের দায় নিতে সে অনিচ্ছুক।আসফি নূর ম্যানশন আর নাহিদদের বাড়ি দুই জায়গায় করা নজরদারি রেখেছে।

শরিফুলের লোকেরা অনেকদিন যাবত নাহিদকে ফলো করছিলো।আর সেদিন সুবর্ন সুযোগ পেয়ে আসিফকে ব্ল্যাকমেল করে নাহিদকে শেষ করার প্ল্যান সাজায়।রাজনীতির নোংরা খেলার বলি হয় ন্যায়পরায়ন,দায়িত্ববান নাহিদের মত লোকেরা।আর বিশ্বাসঘাতকের তকমা লাগে আসিফের মতো বিশ্বস্ত সাথীদের।

শরিফুল হককে তখনি পার্টি থেকে বহিস্কার করা হয়।আর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।দেশের জনগন শরিফুল হকের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।নাহিদ চলে গেলেও যেনো রয়ে গেছে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।সবাই শ্রদ্ধার সাথে তাদের নেতাকে স্মরণ করতে থাকে।
__________________

নাহিদের সিঙ্গাপুর যাওয়ার পর আরজু ততদিনে কেমন চুপসে গেছে।নেতা সাহেব ছাড়া জীবন রংহীন,বিদীর্ণ,বিষাদময়।মানুষটার হাসি,নেশাতুর চাহুনি সবটাই আরজুকে রাতে ঘুমাতে দেয়না।গুরুতর অসুস্থ স্বামীর পাশে না থাকতে পারার যন্ত্রণায় কতর সে।নিজের ভেতরে বেরে উঠা প্রাণের কথা যেনো সে ভুলেই বসেছে।খাওয়া দাওয়া ভুলে নিদ্রাহীন জীবন পার করছে সে।সেই সুন্দর মুখটা আজ ভীষণ মলিন।সুন্দর মায়াবী চোখের নিচে কালি জমেছে।

নেতা সাহেবের শুভ্র পাঞ্জাবি বুকে নিয়ে দিন পার হচ্ছে তার।একটাবার মানুষটিকে দেখতে পারলে, ছুঁতে পারলে মন শান্ত হতো।সাবা খানম আরজুকে নিজের বাসায় নিয়ে যেতে চাইলেও সে যায়নি।এই বাসায় তার নেতা সাহেবকে সে অনুভব করে।এই বাড়ির প্রতিটি কোনায় তার নেতা সাহেবের বিচরণ।সাবা খানম আরজুর অবস্থা দেখে অনেকবার হসপিটালে নেওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু আরজু কারো সাথেই কোনো কথা বলেনি।বরাবরের মতো প্রকৃত বন্ধু হয়ে শুভ আরজুকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে লাগলো।বন্ধু মহলের সকলেই এসে আরজুকে সময় দিতো।যদিও তারা কেউ তখনও জানতো না নাহিদের বেচেঁ থাকার কথা।সেই চঞ্চল,দুরন্ত মেয়েটার এমন রূপ কেউ মেনে নিতে পারছিলো না।

একদিন শুভ জোর করে আরজুকে হসপিটালে নিয়ে যায় চেকআপের জন্য।নাহিদের যাবার পর থেকে সে বাড়ির বাইরে বের হয়নি। আলট্রাসনোগ্রাফিতে প্রথম সন্তানকে দেখে আরজু সেদিন চিৎকার করে কেঁদেছিল।এই সুন্দর মুহূর্তটিতে নেতা সাহেবকে ভীষণ মিস করেছিল।আরজু সেই চিৎকার সুচের মতো বিধে ছিল শুভর হৃদয়ে।আরজু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে তখন থেকে, যখন প্রথম সে নিজের ভেতরে তার নেতা সাহেবের অস্তিত্বের নড়াচড়া অনুভব করে।সেদিন মনে পড়তে থাকে নেতা সাহেবের শেষ কথা গুলো।আরজুকে সে হেরে যেতে দেখতে চায়নি।একজন যোগ্য নেতার যোগ্য স্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছে।আরজুকে নিজ সন্তানের দায়িত্ব দিয়েছে আর তাকে সুন্দর জীবন দেওয়ার কথা বলেছে।নেতা সাহেবের ইচ্ছে আরজু অপূর্ণ রাখবে কি করে?আরজু বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করতে থাকে।মানুষটা সুস্থ হয়ে ফিরে এসে তাকে এমন ভেঙে পড়তে দেখলে ভীষণ কষ্ট পাবে।কি জবাবদিহিতা করবে সে?

নাঈম মাহমুদ ততদিনে আরজুর নিরাপত্তার জন্য সেই বাড়ি ছেড়ে নাহিদের বাড়িতে চলে আসে।আরজুর খেয়াল রাখতে শুরু করে।আরজুকে তিনি মেয়ের মতো ভালোবাসে।জেরিন আর জাহিদ এসে বাবা আর ভাবীকে দেখে যায়।গল্প করে।কিন্তু আরজুর দিন কাটে একাকীত্বে, বিষাদে।কারণ নেতা সাহেবের অবস্থা তখনও সূচনীয়।কয়মাস ধরে নাহিদ শুধু নিঃশ্বাস নিচ্ছিল কিন্তু কোনো রেসপন্স করছিলো না।স্বামীর এই অনিশ্চিত জীবন মেয়েটাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছিল।

———————

একদিন হুট করেই আসফি আসে তাদের বাসায়।সাথে পুলিশ ছিলো।আরজু ঘাবড়ে যায়।নাঈম মাহমুদ জিজ্ঞেস করতেই আসফি বলে

-” আংকেল শুনেছেন তো ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ।’ আপনাদের আরেক শত্রু ঘরেই আছে সেটা তো জানেন।কিন্তু সে কে সেটা ফাইনালি বের করতে পেরেছি।তাকেই আদর করে নিয়ে যেতে এসেছি।”

আরজু,নাঈম মাহমুদ দুজনেই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আসফি পাশে ফিরে সুমির দিকে তাকিয়ে বললো

-” কি সুমি ভয় পাচ্ছো?”

সুমি ঘাবড়ে গেলো।আমতা আমতা করে বললো
-” আমি কেনো ভয় পাবো?”

আসফি মৃদু হেসে বললো
-“ভয় না পেলে পাওয়া উচিৎ।যেই থালিতে খাচ্ছ, সেখানে ছিদ্র করছ?”

সুমি ভয়ে ভয়ে বললো
-” মানে?কি বলছেন এসব?”

আসফি ক্ষিপ্ত হয়ে সুমির সামনে এসে একটা কসিয়ে থাপ্পর মেরে বললো

-” তুই কি ভেবেছিস বোরখা,নেকাব পড়ে জেলে শরিফুল হকের সাথে দেখা করবি আর আমরা কিছুই বুঝতে পারবো না?”

সুমি ভয়ে ঘামতে লাগলো।আরজু যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।সুমি এমন কিছু করতেই পারেন না। এতো শান্ত,মিষ্টি মেয়েটা সারাক্ষণ তাকে ভাইজান ভাইজান বলে ডাকত।সে কি করে তার ক্ষতি করতে চাইবে?আসফি আবার বললো

-” তুই আসলে নাহিদের মৃত্যু চাসনি,চেয়েছিস আরজুর মৃত্যু তাইতো?”

আরজু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।আসফি আরেকটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো সুমির গালে। আবার বললো

-“নাহিদ তোকে ছোট বোনের মতো ভালোবেসেছিলো কিন্তু তুই তার ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিস?”

আসফির মতো বলিষ্ঠ ছেলের হাতে থাপ্পর খেয়ে সুমির মাথা ঝিমিয়ে উঠলো। গালে হাত দিয়ে কেঁদে চললো।বুঝতে পারলো সে ধরা পড়ে গেছে।সেদিন শরিফুল হককে জেলে শাসাতে যেয়ে নিজেই ফেঁসে গেল।সুমি ধরা পড়ে ক্ষেপে উঠলো।জোরে চিৎকার করে বললো

-” আমি তো নাহিদের ছোট বোন হতে চাইনি।আমিতো তাকে সেই ছোট বেলা থেকেই ভালবাসতাম।সারাদিন তাকে এক নজর দেখার অপেক্ষায় থাকতাম।কিন্তু সে এই আরজুকে ভালোবেসেছে।আমার এতো যত্ন,ভালোবাসা সে খেয়াল করেনি।তার চোখে শুধু এই আরজু ঘুরতো।আমার বুকে যন্ত্রণা হতো তখন।দাদাজান ও এই আরজুকে নাহিদের বউ করতে চেয়েছে।আমার সহ্য হচ্ছিলো না এসব।সব শেষ করে দিতে মন চাইছিলো।আমি গরীব ঘরের সন্তান বলে নাহিদের বউ কেনো হতে পারবো না?আমার ভালবাসার কি কোনো মূল্য নেই? যখন নাহিদের জন্য ওই আরজুর বাবা মা মারা গেলো আর সে আরজুর কাছ থেকে দূরে সরে আসলো, আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম।আমার জন্য সুযোগ ছিল নাহিদের মনে আমার জন্য ভালোবাসা জন্মানোর।আমি দিন রাত নাহিদের সেবায় লেগে পড়লাম।কিন্তু ওই বুড়ো আরজুকে নাহিদের বউ করার জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিল।আল্লাহ সহায় ছিলো, তাই এই বিয়ের প্রস্তাব তারা ফিরিয়ে দেয়।আমি নাহিদের কাছাকাছি থাকতে থাকি।তার সেবা,যত্ন করি।কিন্তু সে বিরহে হারিয়েও এই আরজুকে ভুলতে পারেনি।দাদাজান বুঝতে পেরে গেছিলো আমি নাহিদকে ভালোবাসি।তাই সে আমাকে শাসিয়ে ছিলো তার কাছ থেকে দূরে থাকতে।আমি কেনো দূরে থাকবো?তাকে ভালবাসতাম,দূরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।কিন্তু ওই বুড়ো আমাকে নাহিদের কাছে তেমন যেতে দিতো না।মন চাইছিলো এই বুড়োকে সেখানেই শেষ করে দেই।আমার জীবনে হাজারো না পাওয়া ছিলো।কিন্তু নাহিদকে পেলে সব অপূর্ণতা নিমিষেই শেষ হয়ে যেত।

একদিন এই শরীফুল হক আমার কলেজের সামনে আসে।আমাকে অনেক টাকার অফার করে বলে তার জন্য কাজ করতে।আমি যেনো সুযোগ পেয়ে গেলাম।আমার টাকা না নাহিদকে চাই।ওই সময় দাদাজান আমার পথের কাটা সাথে ওই শরিফুল হকের ও। তাই দাদাকে একদম শেষ করে ফেলার প্ল্যান বলে।আমি ও রাজি ছিলাম।ওই লোক আমাকে তখন নাহিদের কাছে তেমন ঘেঁষতে দিতো না।তিনি আমাকে একটা মেডিসিন দিয়েছিলো।আমি ওই বুড়োকে সেটা খুব সাবধানে খাইয়েছিলাম।ফলে ঘুমের মধ্যেই তিনি স্ট্রোক করে মারা যান।সবাই সেটা স্বাভাবিক মৃত্যুই ভেবে নেয়।সেদিন আমি ভীষণ খুশি ছিলাম।”

বলেই সে অস্বাভাবিক ভাবে হাসে।আরজুর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।সুমিকে তার বদ্ধ উন্মাদ মনে হচ্ছে।নাঈম মাহমুদ ক্ষেপে সুমিকে মারতে গেলে পুলিশ তাকে আটকালো।সুমি হেসে বললো

-“নাহিদ যখন সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এই বাড়িতে চলে আসলো তখন আমি দাদীকে কৌশলে আমাকে এই বাসায় পাঠাতে বলি।সেও রাজি হয়।আমি ভীষণ খুশি ছিলাম নাহিদকে একা পেয়ে। ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে তাকে আমার ভালবাসার কথা বলবো।সে আমার হবে।কিন্তু সে আমাকে বোন ভেবে বসে থাকলো।আমি আশা হারাইনি তখনও।তাকে ইমপ্রেস করতে লেগে থাকতাম।কিন্তু একদিন শুনলাম এই আরজুকে নাকি সে বিয়ে করে ফেলেছে।সেদিন আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো।আমার সকল আশায় এই আরজু পানি ঢেলে দিয়েছে।আরজুকে প্রথম দেখে আমার অনেক হিংসা হয়েছিল।এই মেয়ের রূপ দিয়ে নাহিদকে বশ করে ফেলেছে।আমি প্রতিনিয়ত চাইতাম এই আরজুকে মেরে ফেলতে।কিন্তু নাহিদ সারা বাড়ি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছিল। আমি চেয়েও পারছিলাম না আরজুকে কিছু করতে।নাহিদের নজর সর্বক্ষণ এই মেয়ের উপর থাকতো।আমি বাধ্য হয়ে ওর সাথে ভালো ব্যাবহার করতাম। যাতে কেউ আমাকে সন্দেহ করতে না পারে। এদের ভালোবাসা,মাখামাখি দেখে আমার কলিজা পুড়ে যেতো।মন চাইত সব ধ্বংস করে দেই।”

আরজু পেটে হাত রেখে ফুপিয়ে উঠলো।এই মেয়েটাকে সে নিজের বোনের মতো ভালোবেসেছিলো আর সে কিনা অন্তরে এতটা বিষ জমিয়ে রেখেছিল?সুমি উন্মাদের মতো বলতে লাগলো

-” এই আরজুকে মারার জন্য আমি শরিফুলের সাহায্য চেয়েছিলাম।তাই তাদের হানিমুনে যাবার কথা তাকে জানাই।কিন্তু এরা হানিমুনে কোথায় গেছে সেই জায়গাটা সঠিক জানতাম না। নাহিদ কাউকেই বলেনি। শুধুমাত্র আসিফ জানতো।তাই ওর পরিবারকে কিডন্যাপ করে সেই জায়গার নাম বের করেছে ওরা। কিন্তু ওই শরিফুল আমাকে ঠকিয়েছে। ওরা বলেছিল আরজুকে মেরে নাহিদকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করবে।আর আমি সেই সময় পাশে থেকে সান্তনা দেব,নিজের ভালোবাসা দিয়ে তাকে স্বাভাবিক করবো।তাকে নিজের করে নিবো। কিন্তু সেই জানোয়ার নাহিদকে মেরে ফেললো।আমার সব পরিশ্রম বিফলে গেলো।ওই শরিফুলকে আমি নিজ হাতে মারতে পারলে শান্তি পাবো।আর এই আরজুকে তো নাহিদের মৃত্যুর পরই মেরে ফেলতাম।কিন্তু এই আসফি পুরো বাড়ি নজর বন্দী করে রেখেছিল।আমি সুযোগ খুঁজছিলাম আরজুর বাইরের যাওয়ার।কিন্তু এই মেয়ে জামাইয়ের বিরহে ঘরেই পড়ে রইলো।একদিন যদিও হসপিটালে যাবার জন্য বের হলো কিন্তু সাথে নিলো এতো গুলো গার্ড।আমি কিছুই করতে পারছিলাম না।কিন্তু আমি থেমে থাকবো না।আমি কাউকেই বাঁচতে দিবো না।না এই আরজুকে আর না ওই শরিফুল হককে।সবাইকে মেরেই দম নিবো।”

বলেই সে ফ্লোরে বসে কাদতে লাগলো।আরজু এতক্ষন কাদলেও এবার উঠে এসে সুমির গালে থাপ্পর মেরে বললো

-” তোর মতো মেয়েরা নারী নামের কলঙ্ক।আমার নেতা সাহেব তোকে কতটা স্নেহ করতো।ছোট বোনের মতো ভালোবাসত।আর তুই কিনা? ছিঃ! তোর জন্য সে তার প্রিয় দাদাজান কে হারিয়েছে।আর আজ নিজের জীবন হারাতে বসেছে।”

আরজুর কথায় সুমি চমকে তাকালো।আরজু সুমির চোয়াল শক্ত করে ধরে দৃঢ় গলায় বললো

-” আমার নেতা সাহেব বেচেঁ আছে।তোর মতো কালনাগিনী কে বিশ্বাস করার শাস্তি পাচ্ছে সে।তবে ইনশাআল্লাহ সে আমার কাছে ফিরে আসবে।উপরওয়ালা নিশ্চই আমাদের সাথে আর অন্যায় করবেন না।অন্তত তোকে যোগ্য শাস্তি দেয়ার জন্য হলেও সে ফিরবে আমার বিশ্বাস।”

সুমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।এতো কিছু করেও সে নাহিদকে পেলো না।পুলিশ দ্রুতই সুমিকে নিয়ে চলে গেলো।
সুমিকে গ্রেফতার করার পর ধীরে ধীরে সকলেই জানতে পারে নাহিদের কথা।আরজু তখন সিঙ্গাপুর যেতে চাইলেও পারেনা।কারণ ততদিনে ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসে।কিন্তু নাঈম মাহমুদ ছুটে গেছিলেন ছেলের কাছে।এতদিন নাহিদের নিরাপত্তার জন্যই তাদের সাবধানে থাকতে হয়েছে।নাহিদ তখন অনেকটা রিকভার করেছে।কিছু বললে আঙ্গুল নাড়িয়ে রেসপন্স করছে।আরজুর ডেলিভারির আগেই নাঈম মাহমুদ আবার দেশে ফিরে আসে।নাতির মুখ দেখার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে।

আরজু তার সন্তানের নাম রাখে নিবরাস নাবহান। নাবহান হওয়ার মাস খানেক পরেই আরজু সন্তানকে নিয়ে নাহিদের কাছে ছুটে যায়।এতদিন পর নেতা সাহেবকে সামনাসামনি দেখে আরজু চিৎকার করে কাদে।নাহিদ তখনও নিথর হয়ে পড়ে ছিলো।আরজ কথা হয়ত শুনতে পারছিলো।তাইতো তার চোখের কার্নিশ ঘেসে এক ফোঁটা অশ্রু ঝড়ে পড়েছিল।আরজু পরম যত্নে সেই অশ্রু মুছে দিয়েছিলো।আরজু বুঝতে পাড়লো নাহিদ তার কথা শুনতে পারছে।সে সারাক্ষণ নাহিদের সাথে থাকতে শুরু করে।

তার প্রায় চার মাস পর একদিন নাহিদ চোখ মেলে তাকায়।আরজু নাহিদের সামনে ছেলেকে নিয়ে আসে।নিজ সন্তানকে দেখে নাহিদ সেদিন হাউ মাউ করে কেঁদেছিল।গুরুগম্ভীর,ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন নিবরাস নাহিদও সন্তানকে বুকে নিয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদেছিল।ছেলেকে জড়িয়ে হাজার খানেক চুমু খেয়েছিল।আরজুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো

-” আমার সন্তানকে না দেখে গেলে হয়ত আমি মরেও শান্তি পেতাম না।তাই সৃষ্টিকর্তা আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন।আমার সন্তানের জন্য।আমার সন্তানের মায়ের জন্য।”

আরজু খুশিতে সেদিন ভীষণ কেঁদেছিল।সে ছোট বেলায় বাবা মাকে হারিয়েছে।আজ যদি তার সন্তানও বাবা হারা হতো তবে সেটা ভীষণ মর্মান্তিক হতো।

নাহিদের পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো তিন মাস লেগেছিলো।নাহিদ যেদিন দেশে ফিরে আসে সেদিন এয়ারপোর্টে পরিবারের লোকজন ছাড়াও ছিল সাধারণ মানুষের ঢল। সকলেই নাহিদকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল।নাহিদকে পেয়ে সকলেই ভীষন উচ্ছ্বাসিত ছিলো।

নাহিদ দেশে ফিরে জেলে সুমির সাথে দেখা করে।নাহিদকে দেখে সুমি চিৎকার করে কেঁদে ছিলো।নাহিদ সুমির সামনে শান্ত হয়ে বলেছিলো

-“ভালোবাসার সঠিক অর্থ তুই কখনোই বুঝতে পারিসনি সুমি।যাকে ভালোবাসা যায় তার ক্ষতি কখনোই করা যায়না।তার মুখের এক চিলতে হাসির জন্য নির্ধিদায় জীবন দিয়ে দেয়া যায়।তোর মতো স্বার্থপর মেয়ে কখনোই কাউকে ভালোবাসতে পারে না।তোর বাবার মৃত্যুর পর যখন তোর মাথায় ছাদ ছিলো না তখন আমার দাদাজান তোকে ঠাই দিয়েছিলো।আর সেই মানুষটাকেই তুই মেরেছিস।তোকে যোগ্য শাস্তি দিয়ে তবেই আমার মন শান্ত হবে।”
____________________

সময়ের পরিবর্তনে সব কিছুই স্বাভাবিক হতে থাকে।জনসাধারণের কাছে নাহিদ আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠে।নাহিদ পার্টিতে জয়েন করেই সকল করাপ্টেড নেতাদের বহিষ্কারের বেবস্থা করে।সে নিজের একটা দল গঠন করে।সেখানে সকল ইয়াং নেতারা ছিলো।নাহিদের বিশ্বাস যুবসমাজকে সুযোগ দিলে তারা দ্রুতই দেশের উন্নয়ন ঘটাতে পারবে।
______________

তারা একটা আইস ব্যাগ সাবা খানমের মাথায় ধরে রেখেছে।সাবা খানমের মাথা প্রচন্ড গরম।সাবা খানম রক্ত চক্ষু নিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন।অবনি অপরাধীর মতো একপাশে দাড়িয়ে আছে।আর বার বার আড়চোখে সোফায় বসে মিটি মিটি হাসা নাহিদের দিকে তাকাচ্ছে।মনে মনে নাহিদকে বকা দিচ্ছে।তার এমন বিপদে কিনা আপুর এই নেতা হাসছে? কেমন দুলাভাই সে?আর আরজু আপু।সে কেমন করে এত নিশ্চিন্তে বসে বসে নুডুলস খাচ্ছে।তার জন্য কারো মায়া নেই।জুবায়ের আহমেদ স্ত্রীর উদ্দেশে বললো

-” তুমি এতো হাইপার হচ্ছো কেনো সাবা?”

সাবা খানম ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন

-” হাইপার হবো না তো কি করবো?মেয়েদের সবসময় পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি।তাদের সব কিছুতে সাপোর্ট করেছি।কিন্তু এদের দেখো, স্বাধীনতার কি অসৎ ব্যবহার টাই না করলো।ঠিক ই আছে,আরজু কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলো আর এই বাঁদর তো আরজুর চাইতেও তিনগুণ।একটা মেয়েকে ও দেখে শুনে বিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ রাখলো না।”

আরজু খাওয়া বাত দিয়ে বিরক্ত হয়ে বললো
-” এই এক খোটা আর কতো দিবে খালামণি?”

সাবা খানম রেগে বললেন
-“সারা জীবন দিবো।দুই বোন এক জাতের।”

অবনি কাচুমাচু করে বললো
-” আমি তো আপুর মতো বিয়ে করে ফেলিনি?”

সাবা খানম রেগে বললেন
-” অনেক দয়া করেছ তুমি।আমার নাকের নীচে এতো সিনিয়র একটা ছেলের সাথে এতদিন রিলেশন করে বেরিয়েছ আর আমি বুঝতেই পারলাম না?আরজুর ব্যাপারে তো তবুও আমার আইডিয়া ছিলো, কিন্তু এই মেয়ে তো পুরো পাক্কা খেলোয়ার।”

অবনি মলিন মুখে নাহিদের দিকে তাকালো।নাহিদ দাত বের করে হাসছে।অবনি কাদো কাদো মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকল।নাহিদ এবার মুখ খুললো

-“খালামনি আপনার দুই মেয়েই সাংঘাতিক। এরা কি কি করতে পারে আপনি আমি ধারণাও করতে পারব না।”

আরজু আর অবনি রেগে তাকালো।নাহিদ মৃদু হেসে বললো

-“তবে নিশান ছেলেটা খারাপ না। বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে। বেশ ভালো একটা কোম্পানিতে জব করছে। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও বেশ ভালো। সবচেয়ে বড় বিষয় ছেলেটা আমাদের জানাশোনা রিমির বড় ভাই। তাছাড়া অবনী আর নিশানের মধ্যে একটা বোঝাপড়া আছে।ওরা যেহেতু বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে আমার মনে হয় আপনি একবার ভেবে দেখলে ভালো হয়। তাছাড়া ওরা তো এখনই বিয়ের কথা বলছে না, জাস্ট আকদ পরিয়ে রাখতে চাইছে।অবনির গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরেই তো বউ নিবে বলে জানালো।”

সাবা রহমান গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। নাহিদ আবার বললো

-“খালামণি আপনি কি বয়সের ব্যবধান নিয়ে ভাবছেন?এটা কিন্তু কোনো বিষয় না। ওরা দুজন যদি দুজনকে মানিয়ে নিতে পারে তাহলে আমাদের কোন সমস্যা থাকতে পারে না।”

সাবা খানম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।অবনি নাহিদের দিকে তাকিয়ে ইশারায় ধন্যবাদ জানালো।সত্যি তার নাহিদ জিজু একটা ম্যাজিশিয়ান। এক চুটকিতে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারে।ওই নিশান ব্যাটাকে এবার সে জ্বালিয়ে মারবে।ওই রোবট মানবকে প্রেমিক পুরুষ বানিয়েই ছাড়বে।
_________________

আসফি বেশ অস্থির হয়ে পায়চারি করছে আর ওটির দিকে তাকাচ্ছে।নাহিদ বন্ধুর অবস্থা বুঝতে পেরে কাধে হাত রেখে শান্ত হতে বললো। নুসাইবা দেশে আসার পর ধুমধাম করেই তাদের বিয়ে হয়।এতো দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে তাদের। নুসাইবা নিজেও ভালোবাসার মানুষটিকে তীব্র ভাবে পাশে চাইছিলো।কিন্তু নিজের ক্যারিয়ার ফেলে ছুটে আসা সম্ভব ছিলো না।তাই স্ট্যাডি শেষ করেই ছুটে আসে প্রিয় মানুষটির কাছে।আর আজ তাদের জন্য ভীষণ স্পেশাল একটি দিন।

কিছুক্ষণ পরই একজন নার্স এসে আসফির কোলে একটা ফুটফুটে মেয়ে শিশু তুলে দিলো। আসফি কাপা কাপা হাতে মেয়েকে কোলে তুলে নিলো।মেয়ের মুখ দেখেই ছেলেটা খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠে।নাহিদ প্রগাঢ় দৃষ্টিতে এই চমৎকার দৃশ্যটি উপভোগ করলো।মুহূর্তেই তার দুচোখে অশ্রু জমা হলো।জীবনের এই সুন্দর মুহূর্তটি সে মিস করে গেছে।নাহিদের ভীষণ আফসোস হয় এই সুন্দর মুহূর্তে আরজুর পাশে থাকতে না পারায়।

***************

নাহিয়ান ভীষণ বাবা ভক্ত।বাবা বাসায় ফিরলেই সে বাবার কোলে উঠে বসে থাকে।আরজু রুমে এসে বাবা ছেলের ভালোবাসা দেখে বিরক্ত হয়।সারাদিন এই ছেলের পেছনে সে খেটে মরে আর বাবা আসলেই কিনা মাকে চিনেই না।নাহিদ আরজুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছেলের গালে চুমু খেয়ে বলে

-“তোমার মাম্মি ভীষণ হিংসুটে।এইযে তুমি কোলে উঠে বসে আছো তোমার মাম্মি হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে।”

আরজু রেগে তাকালো নাহিদের দিকে।নাহিদ মৃদু হেসে ছেলেকে বিছানায় বসিয়ে দিলো।কিন্তু বাচ্চাটি কি আর বসে থাকে?সে বল নিয়ে খেলতে খেলতে চলে গেলো রুম থেকে।নাহিদ আরজুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আরজুকে নিজের কাছে টেনে এনে বললো

-” আমি তোমাকে অসংখ্যভাবে ভালবেসেছি, অসংখ্যবার ভালবেসেছি, এক জীবনের পর অন্য জীবনেও ভালবেসেছি, বছরের পর বছর, সর্বদা, সবসময়।”

আরজু লাজুক হাসলো।নাহিদ প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখের সেই তৃপ্তির হাসি দেখে সন্তুষ্ট হলো।অনেক আকাঙ্খার এই ভালোবাসা।অনেক ত্যাগের।নাহিদ প্রিয়তমার অধরে গভীর ভালোবাসা একে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আর আরজু ভিজলো ভালোবাসার এক পশলা বৃষ্টিতে।তার জীবনে ভালোবাসা মিষ্টি রোদ হয়ে এসেছে।সেই মিষ্টি রোদের হাতছানি তে জীবন হয়েছে প্রানবন্ত।প্রথম দেখায় এলোমেলো হওয়ার আরজুর হৃদয়কে হাজারো রঙে রাঙিয়েছে তার নেতা সাহেব।

চলবে।