#মুগ্ধতার_ভিরে🥀
#পর্ব_____১৩
#লেখিকাঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা
মোটাগাটা কাচের দেওয়াল বেদ করে সরু রাস্তাটা বাহিরের দিকে সচ্ছল আয়নার মত স্পষ্টত সব দেখে যাচ্ছে।আজ বেশ অতিষ্ঠ ভারি গরম পরেছে । চার পাশটা কেমন ভাষ্মা গুমোট হয়ে আছে।সময়টা জ্যেষ্ঠ মাসের শেষের দিকে চলছে তাই হয়তো চঞ্চল পরিবেশের এমন মনোভাব উদাসীনতা।এসির ঠান্ডা বাতাসে নিচে বসে কেমন হাল্কা ভাষ্পা গরম অনুভব হচ্ছে নাভিলার। অথচ ল্যাম্পপোস্টে নিচে চিকনচাকন দশ থেকে বারো বছরের বাহিরে ছেলেটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।কাঠাফাটা রোদের মাঝে ও মুখে তার এক চিলতে প্রান উল্লাসের মন কড়া মিষ্টি হাসি। ছেলেটা শ্যামলবর্ণের কিন্তু দেখতে বেশ অমানবিক। কড়া রোদের তেজের মাঝে ও মুখে তার এক ছিটে ফুটাও কোনো বিরক্তির ছাপ নেই।এক হাতে তার বড় বড় মাপের দুইটি চায়ের ফ্লাক্স। আর অন্য এক হাতে ছোট মাঝারি সাইঝের লালচে পুরানো লাল রঙের বালতি নিয়ে হেটে হেটে রাস্তায় ফুটপাতে লোকজন এর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে চা বিক্রি করছে।গায়ে ফস্কা পড়ার মত তাপের মধ্যে ও কি সুন্দর রাস্তায় খালি পায়ে সচ্ছন্দে ছেলেটা হাঁটছে।এতে যেমন তার বিন্দু মাত্ররো কষ্ট হচ্ছে না বরং ভালোই লাগচ্ছে।অথচ আজকের এই রোদের মাঝে বাহিরে পা রাখাটাই খুব ভয়াংকর ব্যাপার।
.
.
ধোয়া উঠা গরম কফির মগে চারপাশে শাহাদত আঙুল দিয়ে বুলিয়ে চলছে নয়ণ। কয়েকবার কফির মগ থেকে চোখ উঠিয়ে আড়চোখে তার সামনে বসা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাবভাব তিক্ষো নজরে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছে। মেয়েটির দৃষ্টি আপাতত বাহিরের দিকে তার দিকে নয়। এর থেকে বেশী নয়ণ আর কিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি। নয়ণ নিচের দিকে তাকিয়ে ছোট নিশ্বাস ছাড়লো। আজ অহনার কারনে তাকে এই ভাবে অফিসের টাইমে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে নাভিলার সাথে দেখা করতে হলো। গরম কফির মগটি সরু কাচের টেবিল থেকে উঠিয়ে মুখে সামনে ধরে ছোট চুমুক দিয়ে বলে উঠল,,,
.
আপনি এই বিয়েতে রাজি!
.
নাভিলা তার দৃষ্টি আগের ন্যায় রেখেই ছোট করে অস্পষ্ট শুরে বলে উঠল,
.
হুম।
.
আমার মা বাবা নেই।তা আপনি নিশ্চয় জানেন। আমি ছোট থেকেই মামুর ছায়াতে বড় হয়েছি। তখন থেকে মামুই আমার কাছে সব। আবার বলতে পারেন মামু আমার কাছে আমার মা বাবা দুইটোই।
.
জানি আমাকে গত কাল রাত্ররে আব্বু সবই বলেছেন।
.
আপনি এই বিয়েতে খুশি তো?
.
এমন প্রশ্নে শুনে নাভিলা এভার কিছুটা নড়েচড়ে বসলো এতক্ষনে জেনো তার থেকে কেউ জানতে চাইলো সে কি আসলেই এই সবে খুশী তো! এতক্ষনে যে অস্থিরতা ভাবটা লাগছিলো মুহূর্তে কিছুটা কমে ও আসলো। নাভিলাত দৃষ্টি পাত বাহির থেকে ফিরিয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,,
.
আমার আব্বুর খুশিতেই আমি খুশী।
.
আর আপনার খুশীর কী হবে!
.
নাভিলার নয়ণের কথায় চোখ ফিরিয়ে কেমন জেনো মলিন হাসলো। ছেলেটি পাল্টা আবার ও তাকে প্রশ্ন করে বসল,,
.
আপনি কী কাউকে ভালবাসেন মিস! বাসলে বলতে পারেন।ভালবাসাতো আর বলে আসে না হুট করে হয়ে যায়।
.
কথাটা শুনে নিঃশব্দে হেসে দিলো নাভিলা।ছেলেটাকে তার কাছে খারাপ বলে মনে হচ্ছে না।উল্টো তার আচারনে বন্ধু সুলভ মত মনে হলো। তার এই হাসিতে কেমন জেনো রহস্যময় লুকিয়ে আছে নয়ণের কাছে মনে হল। নয়ণ এভার কিছুটা ভ্রু-খাদ করে তাকালো। মেয়েটার চেহারার ভাব গম্ভির খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু এতে ফলাফল হল শূন্য কিছুই বুঝা তার পক্ষে আর সম্ভব হলো না।হতাশ হওয়ার ভঙিতে নিশ্বাস ত্যাগ করে তাকিয়ে রইলো শুধু নাভিলার দিকে উত্তর এর আশায়। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে নাভিলা বলে উঠল,,
.
জানি না ভালবাসার মত সুপ্ত অনুভূতির সাথে এর আগে এখনো আমার পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি।
নাভিলা এভার নয়ণের দিকে তাকিয়ে সেই রহস্যময় হাসি ট্যাগ করে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,,
.
এই যে ম্রিস্টার, অনেক তো প্রশ্ন করলেন আমাকে তা আপনি কাউকে ভালবাসেন!বাসলে বলতে পারেন।আই ডোন্ট মাইন্ড ইট।
.
নয়ণ নাভিলার এমন প্রশ্ন শুনে আচমকা কিছুটা হকচকিয়ে গেলো। কফির মগে চুমুক দিতে গিয়ে ও থেমে গেলো। ইতদস্ত হয়ে আমতা আমতা করে লাগলো তার এই প্রশ্নে। কিছু বলতে নিতেই,,,নাভিলা তার ভাব গম্ভির দেখে আবার ও বলে উঠল,,
.
জানেন তো, ভালবাসা আর সম্পর্কে মায়া এই দুইটোই কিন্তু ভিন্ন্য দুইটো আলাদা জিনিস।এই দুইটোকে কখনো এক সাথে মিক্স করতে যাবেন না। যদি করতে যান তাহলে দেখবেন আপনি নিজেই এদের মাঝে হারিয়ে তলিয়ে গেছেন।সম্পর্ককে কখনো দায়িত্ব চোখে দেখবেন না।এতে সব কিছু বড্ডো ধোঁয়াশা আর জটিল মনে হতে শুরু করবে।যদি দেখতে যান তাহলে দেখবেন তাদের মায়া জ্বালে আপনি সব সময় গুলিয়ে যাবেন। একজন মানুষের জীবনে সম্পর্ক যেমন অতি মূল্যবান তেমন ভালবাসা ও অধিক দরকার হয়। ভালবাসা কিন্তু সম্পর্কের প্রানভ্রমরা হয় তা জানেন নিশ্চয় ! আর প্রান ছাড়া কিন্তু কিছুই বেশী দিন সেতেজ থাকেনা।উল্টো প্রানবিহীন অচল হয়ে মুড়িয়ে যায়।
কথাটা বলেই নাভিলা মুচকি হাসলে টেবিল থেকে কফির মগটা হাতে তুলে নিয়ে এভার নিচিন্তে কিছুটা চুমুক দিলো।
.
নয়ণ নাভিলার কথা এতক্ষনে সবটা চুপ হয় মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো। মুহূর্তে মধ্যে তার কাছে মনে হল এই মেয়ের মাঝে কিছুতো অজানা রহস্যময় লুকিয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে চট করে বলে উঠল,
আপনি বই পড়েন!
.
“নাভিলা এই মুহূর্তে এমন প্রশ্ন শুনে ফিক করে হেসে দিলো,হাসি থামিয়ে বলে উঠল,,,
কেন বলুন তো! বই পড়লেই কি এইসব বলা যায়!এই ছাড়া বলা যায় না।
ভ্রু নাচিয়ে জিগ্যেস করলো,
.
ঠিক তা নয়। আপনার কথাগুলো কিছুটা আমার ছোট ভাইয়ের মত মনে হলো। ও সারাদিন বেশীরভাগ সময় মোটাগাটা বইয়ের মধ্যে ডুবে দিয়ে থাকে আর আমার সাথে ঠিক এই ভাবেই আপনার মত কঠিন শব্দ ব্যবহার করে কথা বলে। তাই ভাবলাম আপনি ও হয়তো অর মত বই পড়েন। যারা বই পড়ে তাদের কথা আমার কাছে কিছুটা কঠিন বলে মনে হয়।
.
হুমমম্ম,,আমার কিন্তু মোটেও তেমন মনে হয় না।বরং মনে হয় বই যারা পড়ে তাদের মন অনেক ভালো হয়। এমনটা আমার নিতান্ত ধারনা সবার কথা ঠিক বলতে পারি না ।তাছাড়া আমার বই পড়ার অনেক ইচ্ছে আছে। কিন্তু কখনো সেই ভাবে পড়ার সুযোগ আদৌ হয়ে উঠেনি। কিন্তু সময় আর সুযোগে দুইটোই পেলে কোনো একদিন নিশ্চয় বইয়ের পাতার কাব্য গবিরতায় ডুব দিতে চাইবো। আচ্ছা আজ তাহলে আমি উঠি ম্রিস্টার নয়ণ ভার্সিটির যেতে হবে। অলমোস্ট প্রথম দুইটো ক্লাস মিসস হয়ে গিয়েছে। এখন না উঠলে আমার আর যাওয়া হয়ে উঠবে না।আর হ্যাঁ আমার কথা গুলো একবার হলে ও ভালো করে ভেবে দেখবেন। একজন বন্ধু হিসেবে কথা গুলো আপনাকে বললাম। আমার কেন জানি মনে হয় আপনি বড় কোনো মাপের ধোঁয়াশাতে আটকে আছেন। কাউকে ভালবাসলে সময় থাকতেই তা বলে ফেলুন এতে এত ইতদস্ত হওয়ার কিছু নেই।পুরো জীবন বসে বসে আফসোস করার থেকে ভালো কিছু দিনের এই সাময়িক এই আফসোস কি ভালো নয়।
চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে নাভিলা হাসিমুখে কথাগুলো বলে উঠল,,
.
নয়ণ নাভিলার কথা শুনে কিছুটা অবাক হলো,কিন্তু বিপরীতে তেমন কিছুই বললো না।শুধু চুপ করে মাথা নিচু করে থম মেরে বসে রইলো। নাভিলা কিছু দূর যেতেই নয়ন চেয়ার থেকে উঠে পিছু থেকে দৌড়ি এসে বলে উঠল,
চলুন আপনাকে আমি ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে আসি।
কিছুটা হাসিমুখে বিপরীতে নয়ণ বলে উঠল,
.
তার আর প্রয়োজন নেই। ভার্সিটি এখান থেকে মিনিট পাচঁ এর দূরত্ব আমি একাই যেতে পারবো।
.
উঁহু আমার জন্য যেহেতু আজ লেইট হয়ে গিয়েছে তাহলে আমিই আপনাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে আসবো।আর আপনি কিন্তু আমাকে বন্ধু বলেছেন। তাই না ও করতে পারবেন না।
.
আচ্ছা চলুন।
.
.
ভার্সিটি সামনে গাড়ি থামতেই নাভিলা চট করে নেমে পরলো। নয়ন গাড়ী থেকে নেমে পিছু থেকে ডাক দিতে নাভিলা কিছুটা থেমে গেলো । হাসিমুখে পিছে তাকিয়ে নয়ণের সাথে কিছুটা কুশল বিনিময় করতে লাগল। এতে দূর থেকে কাউর তিক্ষো নজর এসে পরলো। রাগে ক্ষোপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো।
.
.
আজ রিয়া আসেনি লাস্টের চারটা ক্লাস আমাকে একাই করতে হলো।রিয়া ছাড়া ক্লাসে আমি কাউর সাথে তেমন কোনো কথা বলিনা।খুব প্রয়োজনে দুই একটা কথা ছাড়া বলা হয়না। ক্লাস শেষে পুকুরপাড় সাইডটায় আসতেই জায়ানের দেখা মিললো।জায়ান সোজা হয়ে পকেটে দু হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।দৃষ্টি কোথায় বুঝতে পারলাম না। অইখান থেকে চলে আসতে নিতেই হঠাৎ করে মনে পরলো তার জ্যেকেট এর কথা।আরেহ তার সেই কাইল্লা মার্কা জ্যেকেট তো আমার ব্যাগেই ঝুলে আছে।এই জ্যেকেট এর জন্য উনি আমাকে কতো কথা না বলেছে।কিন্তু আমাকে কেউই দেখো সেই আমি এত কিছুর পর ও ভুল ভুলাইর মত সাথে নিয়ে গুরছি দেওয়ারই নাম নেই। তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোমরে এক হাত আর এক হাত বুকে রেখে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করে নিলাম।বলাতো যায় না কি থেকে কি হয়ে যেতে পারে।আমার উপস্থিতি সে টের পেলো কিনা বুঝতে পারলাম না।আমি জ্যেকেট টা ব্যাগ থেকে বের করে তার সামনে ধরে বললাম,
-এই যে আপনার কাইল্লা আই মিন কালো জ্যেকেট ধরুন । ভয় নেই আমি ভিম দিয়ে ধুয়ে দেই নি। আমি কিন্তু আপনার কথা মতোই সার্ফেক্সসেল দিয়ে ভালো মত সুন্দর করে ধুয়ে দিয়েছি।হ্যাঁ দিতে একটু বেশীই লেইট হয়ে গিয়েছে তা আমি জানি।এত দিনে এক্সামের টেনশনে ব্যাপারটা মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো একদমই তাই দিতে পারিনি।এতে আপনার ও কিন্ত কিছু দোষ আছে। আমি নাহয় একদমই ভুলে গিয়েছি আপনি তো পরে এসে আমকে একটু মনে করিয়ে দিতে পারতেন ।দোষ যেহেতু এখানে দুইজনের সমান আছে। তাই আশা করি এখন আর কোনো অভিযোগ তুলবেন না।
জায়ান জ্যেকেট দিকে এক পলক তাকিয়ে জ্যেকেট হাতে নিয়ে নিলো।দৃষ্টি আগের ন্যায় সরু রেখেই বলে উঠলো,
-তুমি এখন যেতে পারো।
আমি কোমরে দুই হাত রেখে বললাম,
-আরে জ্যেকেট খুলে দেখবেন না?সব ঠিক আছে কিনা!পরে তো এসে নিশ্চয় বলবেন ঠিক নেই।
-দেখার প্রয়োজন নেই।তুমি এখান থেকে যাও।
আমি আরো কিছু বলতে যাবো তখনই জায়ান আমার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম।জায়ানের চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে আছে।তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড রেগে আছে।এর আগে তাকে রাগতে দেখেছি,রাগ মিশ্রিত চেহারা দেখেছি। কিন্তু আজকের মতো এতোটা ভয়াবহ দেখিনি। পরিবেশ সাবাভিক থাকতেই কোনো কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে দ্রুত চলে আসলাম।
চলবে