মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-১৪

0
5935

#মুগ্ধতার_ভিরে🥀
#পর্ব__১৪
#লেখিকাঃফাতেমা জোহরা নাভিলা

ঘড়িতে রাত দশটার বেশী হয়তো বাজছে।পুরো বাড়িতে পিনপিন শকের নিরবতা ছায়া। কাউর মুখে কোনো টু শব্দ কথা নেই।কথা বলার যেমন তারা ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।যেখানে পুরো বাড়ি হট্টগোল হইহোল্লো বেধে থাকার কথা ছিলো সেখানে পিনপিন নিরবতা কেমন গ্রাস করেছে।

ভার্সিটি থেকে বাসায় আসার পর আমি কিছুটা অবাক হয়ে যাই।বাড়িতে কেমন লোকজনে ভরপুর গমগম করছে। কাজিনদের এই সময় নিজের বাসায় দেখে খানিকটা অবাক ও হয়ে যাই। আম্মু সামনে গিয়ে দাড়াতেই সে আমাকে তাড়া দিয়ে বললেন । আজ রাতে দুই পরিবার মিলে পারিবারিক ভাবে আমার আর নয়ণের বিয়েটা সম্পূর্ণ হবে।এটা আসিফ আংকেল আর আব্বু কিছুক্ষন আগেই ঠিক করেছেন।পরে সামাজিক ভাবে বড় করে ধুমধামে অনুষ্ঠান করবে। কথাটা শুনার মাত্ররোই আমি পুরো দমে শুদ্ধ হয়ে যাই। বিপরীতে আম্মুকে কিছু জিগ্যেস করার শক্তি যেমন আর নিজের মধ্যে অবশিষ্ট বাকি নেই। এত জলদিতে কেন আমার সাথে এত কিছু হচ্ছে!অতি শোকে আমি কার্তর হয়ে আছি। এখান থেকে এক ইঞ্চি লড়ার শক্তি ও নেই। কাজিনরা আমাকে রুমে টেনে নিয়ে এসে নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকে।কিন্তু আমি নিজের মধ্যে আপাতত নেই। তাদের কথার প্রতি বিপরীতে উত্তর আর কিই বা বলবো।


একটু আগে ফুপি হন্তদন্ত হয়ে রুমে এসে ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠল,,,,

আমার হবু বর মানে নয়ণ নাকি পালিয়েছে । আমি বিষ্মত হয়ে ফুঁপি দিকে তাকিয়ে আছি। রিয়েকশন বাটন যেমন দ্রুত কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। একটা উপর একটা সারপ্রিজিং সর্কট এর উপর সর্কট খেলে যা হয় আরকি। ফুঁপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আবার ও বললেন। তা শুনার পর থেকেই বাড়িতে মুহূর্তে সবার মন খারাপ।এই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষন কেঁদে চলে গেলেন।

কিন্তু ফুঁপি কথা শুনে এই মুহূর্তে আমার মন তো ফুরফুরে দিনচেক হয়ে গেলো।এতক্ষন যে মন খারাপ মস্তিষ্কে এসে গ্রাস করছিলো তা নিমিষেই এক ঝাক আনন্দের দোল বয়ে যাচ্ছে।আমিই যেমন জানতাম এমন কিছুই আমার সাথে হবেই। আল্লাহ্‌ আমার সাথে এমন কিছু হতে দিতোই না।যাক বাবা সকালে আমার বলা কথাগুলো তাহলে শেষ পর্যন্ত এসে কাজে দিয়েছেই।কিন্তু এত দ্রুত যে দিবে তা জানতাম না।বাবাহ নাবু টু সি গ্রেট হ হুহ। নিজেকে নিজেই মনে মনে সাবাসি দিলাম।
.

.
আমার তো রিতিমত ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে এক দৌড়ে ভাইয়ার রুম থেকে একটা লুঙ্গি টেনেটুনে খুঁজে এনে মন প্রান খুলে একটু লুঙ্গি ড্যান্স দিতে। আহহা বিয়ে নামক ঝড় অবশেষে বয়ে চলে ও গেলো। কিহহহহ শান্তি কিহহহহ শান্তি। ইয়াহু,, এখন আমি নিচিন্তা নিজের বিয়ের রোস্ট খেতে পারবো। কি কপাল আমার বাবাগো ভাবা যায়😎।এই ঘটনার পর মনে হয় না তিন চার বছরের মধ্যে ও আমার বিয়ের কথা কেউ আর এই বাড়িতে আপাতত আর করবে।

যাই হোক এখন আমি দুনিয়ার সব চেয়ে বেশী ইনফেক্ট বড্ডো দুঃখী নারী কারন আমার বর পালিয়েছে। আমাকে ধোকা দিয়ে এক্কেবারে বেকা থেকে টেনেটুনে সোজা করে দিয়েছে😁।তাই মুখটা একটু অসহায় বোধ কালো করে বসে আছি। হাসলে একদমই চলবে না।কিন্তু মনে মনে তো আমি বড্ডো খুশি। দুনিয়ার মধ্যে আমিই মনে হয় সেই প্রথম বীর নারী হবো যার বিয়ে ভাংগা নিয়ে মনে কোনো দুঃখো প্রকাশ নেই। উল্টা খুশী প্রকাশ আছে।ভাইয়া আমার রুমের দরজার সামনে এসে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নত করে আছে।আমার পাশে বেডে বসে কাজিন নামক বিনা সুইচের টেপ রেকর্ডিং গুলো আমায় শান্তনা দিচ্ছে। ওদের শান্তনায় আমার কি হবে হুহ আমি তো আপাতত মহা খুশি।

কিন্তু আমার এই খুশি আমার এই পুড়া কপালে আর বেশী সময় জন্য সহ্য হল না ।আমি যখন কাজিন দের সাথে বসেছিলাম তখন আব্বু আর আসিফ আংকেল হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করলেন।আর সবায়কে ইশারায় বাহিরে যেতে বললেন। আমার পাশে আসিফ আংকেল আর আব্বু এসে টুল টেনে বসলেন।আসিফ আংকেল লজ্জায় মাথা নত করে অসহায় ভাবে তিনি শান্ত সুরে নিচের দিকে তাকিয়ে আমাকে বললেন,,,,,

__ আমি কি বলে তোমাকে ঠিক শান্তনা দিবো আমি এই মুহূর্তে নিজেই জানি না।আমার তোমাকে কিছু বলার ভাষায় নেই।বিশ্বাস করো মা আমি বাকরুদ্ধ। তোমার হয়তো খুব রাগ উঠছে আমার উপর আমি নিজেই এসে বিয়ে ঠিক করেছি আর এখন,,,,নয়ণ এমন করার ছেলে না । কিন্তু আচমকা এমন একটা কাজ যে করে বসবে।এর জন্য আমি খুবই লজ্জিত। আমার ভুলের জন্য তোমার জীবনটা আজ এভাবে নষ্ট হতে চলেছে।কিন্তু আমি সেটা কিছুতেই হতে দিব না।ভুল যেহেতু আমি করেছি তার সংশোধন ও আমিই করবো।তাই আমরা দুই পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিব।এটাও আজ এই মুহূর্তে।
.

.
কথাটা শোনার পর আমার মাথায় যেমন দুই মুনের ভারি বাজ পরলো। আমি কিছুই বলতে পারছি না।আমি নিজেই এখন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।ড্যাবড্যাব করে আসিফ আংকেল আর আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছি।

___দেখো মা আমাদের দুই পরিবারের সম্মান আর তোমার ভালো কথা চিন্তা করেই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার ছেলে খুব ভালো।একটু রাগি কিন্তু বাস্তববাদী। ও কখনো তোমাকে কোনো ভাবে কষ্ট পেতে দিবে না।এই ভরসা টুকু তুমি আমার উপর রাখতে পারো। এখন আমি তোমার মতামত জানতে চাই।তুমি কি চাও! তুমি যদি রাজি না হও তাহলে এই বিয়েটা হবে না।আমরা তোমার উপর কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি বা জোরজবরদস্তি করবো না ।তা আমি কথা দিচ্ছি।

“এই বলে আব্বু আর আসিফ আংকেল রুম থেকে চলে গেলেন।তাদের যাওয়ার পর পরই আম্মু রুমে প্রবেশ করলেন”

আমার তো রিতিমত শরীল থরথর করে কাঁপছে।মাথা যেমন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।মস্তিষ্ক বার বার বলছে এখন তুই কি করবি নাবু? নিজের সার্থ্য কথা ভাববি! না নিজের আম্মুর আব্বুর সম্মানের কথা!

নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে ও ব্যাথ হলাম। আম্মুকে থরথর কেঁপে কেঁপে বললাম,,,

__ আম্মু তুমি আর আব্বু কি চাও! আমি এই বিয়েটা করি।

আম্মু হতাশ হয়ে নিশ্বাস ত্যাগ করে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,,

__জানিস তো আম্মু আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যাহ্ করে তা পূবে থেকে ভালো কিছু ভেবেই চিন্তেই করে রাখে। হয়তো নয়ণ তোর কপালে ছিলোই না।তোর কপালে এমন কিছুই লিখা ছিলো যার জন্য ঘুরেফিরে এমনটাই হয়েছে। দেখ নাবু আমাদের চাওয়াটা বড় না তুই কি চাস এটাই বড়। সংসার তুই করবি।আমরা নাহ্। এই সব কিছু পুরো তোর উপরে ডিপেন্ড করছে।কিন্তু তার পর ও বলবো তুই যদি চাস তোর আব্বুর কথা ভেবে রাজি হয়ে যাহ্।তোর আব্বু পুরো ভেঙে পরেছে রে। মানুষটা তোকে নিজের থেকে বেশী ভালবাসে আর সেই তোর সাথে আজ এমন কিছু হতে দেখে সে পুরো নিশ্চুপ হয়ে গেছে। ছেলেটা খারাপ না। আমার মন বলছে তুই তার সাথে সুখি থাকবি।

“উম্মে ঢুকরে কান্না করে কথাগুলো বললো”

আমি বিপরীতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম আর অস্পষ্ট সুরে বললাম আমি রাজি।

“মা বলুন আলহামদুলিল্লাহ, মা বলুন আলহামদুলিল্লাহ,,,,,,, মা,,,”

হঠাৎ আহনা ভাবির কথায় আমার হুশ আসে।

_নাভিলা,,,,

_হুম কিছু বলছো
অস্পষ্ট সুরে,

__ আলহামদুলিল্লাহ বল। কাজিসাবেব কতক্ষন ধরে তোমাকে তাড়া দিচ্ছে।

আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি ভাবির কথায় তার দিকে। তার মানে অর্ধেক বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে!এখন শুধু আমি বললেই শেষ বিয়ের কার্য।কারো নামের সাথে আমার নাম জোরে ও যাবে!

হঠাৎ আম্মু এসে আমার কাধে হাত দিতেই
আমি চোখ বুঝে এক নিশ্বাসে বলে দিলাম

__আলহামদুলিল্লাহ

__________________________
বাসর ঘর নামক অন্ধকার একটা রুমে এনে আমাকে বসানো হয়েছে।যেখানে বাসর ঘরের ‘ব’ এর ও কোনো ছিটেফোঁটা নেই।রুমটা ভারি অদ্ভুত। রুমে বেশী আসবাবপত্র নেই। হাতে গোনা দুই চারটে ছাড়া ।কিন্তু বেশ বড়সড়। আমার আর ভাইয়ার রুম মিলে এই রুমটা তো হবে। এত বড় রুম দিয়ে কি করে কে জানে!আমি এভার খাট থেকে নেমে সুইচ এর দিকে অগ্রসর হলাম। রুমে আপাতত লাইট জ্বলছে কিন্তু ডিম লাইট। তাই রুমটা ভূতড়ে লাগছে।লাইটের সুইচে হাত দিতেই কোথা থেকে জেনো ঘড়ির ঢং ঢং আওয়াজ হয়ে উঠল।আচমকা এমন কিছু হওয়াতে ভয় পেয়ে গেলাম।ভয়ে বড় বড় চোখে পিছে গুরে তাকিয়ে চট করে বুকে থু থু দিয়ে নিলাম। আর বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস টানছি।

অন্ধকারে বেলকনির আবছা মৃদু আলোতে ডেসিং টেবিলের উপরে দেখা যাচ্ছে ঘড়িতে এখন রাত প্রায় দুইটো বাজে।এমন সময় হঠাৎ দরজার ছিটকিনি খুলার আওয়াজে আমি থম মেরে সেখানে ভয়ে গুটিয়ে শাড়ির আচলটা দুই হাত মুঠোতে শক্ত করে ধরে চেপে দাঁড়িয়ে রইলাম।একটা ছায়া মানব দরজায় লাগিয়ে ধীরে ধীরে আমার সামনে আসতেই আমি কিছুটা পিছাতে লাগলাম।এক পর্যায় ডেসিং টেবিল এর সামনে ঢেকে ও গেলাম।উনি সামনে অগ্রসর হতেই বেলকনির মৃদু আলোয় উনার উপর পরতেই,,,,,এএএএএএএএএএএএএএএএএএ

চলবে,,,