#মুগ্ধতার___ভিরে🥀
#পর্ব____১৯/২০
#লেখিকাঃফাতেমা__জোহরা__নাভিলা
বিরক্তি নিয়ে ভেজা চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বাসায় প্রবেশ করল জায়ান। বাহিরে আপাতত তেমন বৃষ্টি নেই। কিন্তু মুষলধারে অঝোড় হাল্কা বৃষ্টি হওয়াতে ঘায়ে খয়ড়ি রঙের পাঞ্জাবিটা কিছু অংশ ভিজে ঘায়ে লেপ্টে আছে। কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজ রুমের উদ্দেশ্য উঠতেই পিছে থেকে ডেকে উঠল বড় বাবা।
____জায়ান!
“জায়ান থেমে গেল পিছে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠল,,”
____জ্বী বড় আব্বু কিছু বলবে!
___এই সময় আবার উপরে কোথায় যাচ্ছিস।
___রুমে যাচ্ছিলাম। কোনো কাজ ছিলো বড় আব্বু!থাকলে বলতে পারো সমস্যা নেই আমি করে দিচ্ছি।
__তোর কি মনে হয় জায়ান বেটা আমি শুধু কাজ থাকলেই তোকে ডাক দিয়ে উঠি এই ছাড়া আর ডাক দিতে পারি নাহ্।
জায়ান চুল চুল্কে ইতস্তত কন্ঠে বলল,
__এমন কিছুনা বড় আব্,,
__হয়েছে হয়েছে বেটা আর কিছু বলতে হবে না এখন আমাকে । রুমে পরে যায় আপাতত সবার সাথে বসে লাঞ্চটা সেরেয় নেয়। একটু পর আস্তে আস্তে একে একে করে সব মেহেমান চলে আসতে শুরু করবে তখন আর ঠিক করে কিছুই খাওয়ার সময় পাইবি না।
বিপরীতে জায়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে ছোট করে বলে উঠল,
__আচ্ছা চল।
সিঁড়ি থেকে নেমে ডরিং রুমে অগ্রসর হতেই মাঝ পথে মুন্না পথ আটকিয়ে জায়ানকে কিছুটা ভিজা অব্যস্থা দেখে মুন্না তড়িৎ গড়ি করে বলে উঠল,,
___এই কি ভাইজান আন্নে (আপনে) এত ভিজলেইন কেমনে! খালুজান দেখলে ও চিললাইবনে (চিল্লাবে)আন্নের না ভিজলে ম্যাথার ভিষন(বিষণ) হাতুড়ি পিঠা আরাম্ব (আরম্ভ) হয়। সাথে সেই বদমেজাজি রোগে আইসা আক্রামান ও তো ভর করে। অই কি জানি নাম কয় এটারে ইংলিসে সস সস না সসইনসে হয় হয় মনে পরছে সন নাহ্ সন না সনটইসের আছে হয় হয় এটাই।
অবশেষে উচ্চারণ করে বলতে পেরে মুন্না দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠলে,,
__গবেট ওটা সনটইসের না সাইনোসাইটিস হবে। তুই ইংলিশ কে পুরো দমে ইহাকালে বিংলিশ করেই ছেড়ে দম ছাড়বি ।আপাতত তুই এক কাজ কর আমার রুম গিয়ে আমার টাওয়ালটা বারান্দা থেকে নিয়ে আয়।
“জায়ানের বলতে দেরি মুন্নার আর যেতে দেরি নেই”
বড় আব্বু ডায়রিং থেকে ডাক দিতেই জায়ান আর সেখানে না দাঁড়িয়ে দ্রুত পথে ডায়রিং টেবিলে এসে আবরারের পাশে চেয়াল টেনে বসল পরলো।
.
কিরে এতক্ষন কোথায় ছিলিস তুই! আর এত ভিজলি কিভাবে! তোর কাছে না ছাতা ছিলো তাহলে!
ফিসফিস করে আবরার বলে উঠল,,
.
আর বলিস না আসার সময় রাস্তায় হঠাৎ স্যার এর সাথে দেখা হয়ে গেল।স্যারের কাছে কোনো ছাতা ছিলো না তাই আমারটা আসার সময় তাকে দিয়ে এসেছি। মসজিদ তো বাসা থেকে অত দূরে ও না শুধু পাঁচ মিনিট দূরের পথ তাই আমার আসতে তেমন সমস্যা ও হয় নি।
জায়ান বিপরীতে শান্ত কন্ঠে বলল,
.
ওহহ, তা কোন স্যারের সাথে তোর আবার দেখা হল!
.
ফারুক স্যারের সাথে। তা মনে আছে তোর স্যারের কথা?
ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাস করল,,
.
আর মনে করাইস না অই খাটাশকে। এই জীবনে বেটা শয়তানকে ও হার মানাইয়া রেকর্ড করে সারছে।
শয়তান ও তার সব ক্রিতিকালাপ দেখে তাকে মনে মনে বলসে থাম ফারুক্কা এবার একটু থাম আর কত আমাগো হার মাইবি।
.
জায়ান হেসে দিলো আবরারের কথায়, আর যাইহোক স্কুল জীবনে আবরারকে তো আর কম কান ধরিয়ে ক্লাসে বাহিরে দাড় করিয়ে রাখেনি ফারুক স্যার।
.
তুই হাসোস কেন শালা
.
কই হাসলাম গবেট
.
ওহহো আমিত ভুলেই গেসি তুমিতো আমার কষ্টে হাসবাই, তুমি না হাসলে কে হাসবে আমার উপর আর! তুমি যে ফারুক্কার চোখে এক নাম্বার ভালা ছাত্র ছিলা যে পড়া ছাড়া পুরো ক্লাস রুমে আগামাথা কিছুই বুঝতে চাইতো না। আর ফারুক্কা ও তোরে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।শুধু তোর জন্য আমাকে এই ফারুক স্যার থেকে স্কুলে কম কথা ও শুনতে হয়নি।তোরা দুই টাই এক ক্ষেতের ত্যাড়া মুলা ছিলিস।
.
হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ত্যাড়া মুলা?
.
তার জানার জন্য দুই দিন অপেক্ষা কর বালক
.
কেন
.
দুইদিন পর তোর নিজের বউই তোকে ভাল করে ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দিবেনে তুই যে কত বড় একটা ত্যাড়া মাল।
.
জায়ান আবরারের অদ্ভুত কথায় প্রথম ভ্রু কুঁচকালো।
পর মূহুর্তে মস্তিষ্কে বউ কথাটা নাড়া দিতেই সে কিছু বলতে নিতে ও থেমে গেলো। কয়েক সেকেন্ড দ্রুত পলক ফেলে মাথা
তুলে তাকালে এতক্ষন তার আশেপাশে কথা তেমন
খেয়ালই ছিলো না।
মাথা তুলে সামনে তাকাতেই সেই কিছুটা মূহুর্তে থমকে গেলো। বুকে ডিব ডিব হাতুড়ি জোড়ে ধুক করে উঠলে, মুখ অটমেটিকলি তার হ্যাঁ হয়ে গেলো। চোখগুলো বড় করে তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য সাথে সাথে আবার ও বুকে হাত দিয়ে চোখ বুঝে নিলো। দম যেমন তার আপাতত আটকে আছে।টেবিলের অইপাশে তার ঠিক মুখোমুখি সামনে দাঁড়ানো রমণী দিকে,, রমণী! না বউ, বউ! হ্যাঁ বউই তো হবে! এটাও তার একমাত্ররো বিয়ে করা বউ।আরকি বা হবে তার! কথাগুলো কয়েকবার মনে আয়ত্তে ভেবে পূনরায় তাকালো তার সামনে দাঁড়ানো, সেই মেয়েটির দিকে,,
পরনে তার বাঙালি স্টাইলে শাড়ি, মাথায় ঘোমটা দেওয়া। এই ঘোমটাই তার সৌন্দর্য জেনো তার চোখে আরো হাজার গুন বারিয়ে তুলেছে।হাত দিয়ে যখন লাজুকতায় হেসে ঠোটঁ নাড়িয়ে কথা বলতে বলতে মাথা ঘোমটা টেনে বার বার ঠিক করছে। তখন হাতের মোটা সর্নের চুড়িগুলো নৃত্য সেজে হাত উঠা নামার সময় কেমন চকচক করে উঠছে।লালছে কোঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো আধ খোঁপা করা যাহ্ ঘোমটা বেধ করে তার নজর এড়াচ্ছে না।সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার হল এত ঠান্ডা পরিবেশ ও মেয়েটার কপালে নাকে কিছুটা বিন্দু বিন্দু শিশির মুক্তা দানার মত কয়েক ফোটা ঘাম জমে আছে।ফোলা ফোলা টসটস গাল গুলো আপাতত লালবর্ণ রুপ ধারন করেছে। কানে এক জোড়া ছোট সর্নের দুল।চেহারে আপাতত সাজ বলতে শুধু গাঢ় লাল টুকটুক লিপিস্টিক দেওয়া। নাকে ছোট ডায়মন্ডের নাক ফুল।যাহ্ এর আগে তার চোখে পরে নি।কাল ও তো তার নাকে কোনো ফুল ছিলো না।তাহলে আজ! হঠাৎ জায়ান খেয়াল করলো ডায়রিং রুমে জানালার কাচ বেদ করে বাহিরে থেকে এক চিলতে মৃদু হাল্কা আলো এসে নোসপিন টার উপরে পরতেই কিছুক্ষন পর পর ফর্সা চেহারায় কেমন চিকচিক করে চিলিক দিয়ে উঠছে।এই দৃশ্যটা দেখতে তার কাছে কি অপরুপ না সুন্দর লাগছে। আচ্ছা বিয়ে হলে কি সব মেয়েদের একদিনের ব্যবধানে এতটা ভিন্ন্য দেখায়। তখন কি তাদের ঠিক এতটাই মুগ্ধতা দেখায়! না শুধু তার বউকেই আজ তার কাছে এত বেশী লাগছে।আচ্ছা মেয়েটার এত রুপ কেন! এই রুপের জেনো আদৌ দেখা তার শেষ নেই। প্রতিনিয়ত এক এক রুপের সাথে সে পরিচয় হচ্ছে। কখনো প্রতিবাদ রুপে, রাগিতো রুপে, কখনো হাসিমুখে, আবার কখনো লাজুকতায়। যে রুপে সে প্রতিনিয়ত ধীরে ধীরে ঘায়েল হচ্ছে।হঠাৎ জায়ান খেয়াল করল অ্যানএক্সপ্যাক্টেলি তাদের ড্রেসের রঙ কিছুটা নাহ্ অনেকটাই হুবহু মিলে গেসে।কয়েক সেকেন্ড কুঞ্চিত ভ্রু আরো খাদ করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল,
লাল! না লাল ও না, খয়ড়ি!না খয়ড়ি ও হবে না। সে যে পাঞ্জাবি পরেছে তার জানার মতে এটার ক্লার কে খয়ড়ি বলে।কিন্তু নাভিলার শাড়ির ক্লারটার নাম কি ঠিক তার জানা নেই। জায়ান কিছুক্ষন ভেবে অতি প্রিয় চেনা কিন্তু আপাতত এই মুহূর্তে বড্ডো অজানা নামবিহীন ক্লারের নাম আবিষ্কার করে উঠল কলিজা ক্লার।হ্যাঁ কলিজা ক্লার কারন এই ক্লারে পরিহিত রমণী কে দেখে মূহুর্তে তার কলিজা কেঁপে উঠেছে।এই ক্লার দ্বিতীয় বার কিছুতেই আর এই মেয়েকে পরতে দেওয়া যাবে না। দেওয়া যাবে না মানে দেওয়া যাবে না ব্যাস।আর শাড়ি পরে তো বাহিরে কোথাও যেতে দিবে না।শাড়ি পরতে মন চাইলে পরবে সমস্যা নেই তার কিন্তু বাসায়। শাড়িতে মেয়েটাকে তার অনেক ভাল্লাগে। প্রথম বার যখন ভার্সিটি তে দেখেছিলো তখনই সে থমকে গিয়েছিলো।না চাইতে ও বার বার অবাধ্য চোখ তার দিকে তাকাচ্ছিলো। শুধুই যে ভাল্লাগে বললে তা ভুল হবে। শাড়িতে এই মেয়েকে মারাত্মক সুন্দর লাগে। জায়ান চোখ বুঝে তিপ্তি নিয়ে হেসে উঠল, দিন দিন সে এই মেয়ের এক রাশ #মুগ্ধতার__ভিরে কেমন হারিয়ে যাচ্ছে। এই হারাতে তার জেন এখন আর কোনো দ্বিধায় নেই।
.
তা ভাবি আমাদের আজ কি খাওয়াবে!
অহনার কথায় জায়ানের হুশ আসলো সে নিজেকে স্বাভাবিক করে আগের ন্যায় গম্ভির হয়ে বসল,
.
তোমার ফেভারিট খাবার এখন গ্যেস কর?তা কি হতে পারে?
.
সিরিয়াসলি! তুমি মজা করছো না তো আবার!
.
একদমই না আমি কোনো মজা করছিনা ভাবিজী
.
বিরিয়ানি!
.
নাহ্। কিছুটা কাছে যেতে পেরেছ আর একটু গ্যেস কর
.
তাহলে নিশ্চয় তেহেরি হবে
এনি বলল,
.
নাহ্
.
তাহলে কিই বা হতে পারে
অহনা বলল,
.
তা একটু ভাবো ।
.
ওয়েট ওয়েট আমি বলতেসি কি রান্না করেছে। আমার সিক্সসেন্স বলছে ভাবি নিশ্চয় আমাদের জন্য কাচ্চি রান্না করেছে তাই না ভাবি আমি ঠিক বলেছি তো!
আবরার বলল
.
আমি অতি দুঃখীত ভাইয়া আপনারটা ও হয়নি।
.
তোর সিক্সসেন্স সব সময় এত কাচ্চিই বলে কেন।টেবিলের উপর যেহেতু এতগুলো লেবুর পিসেস, আমের আচার আর আলু ভাজা রাখা আছে সেহেতু কাচ্চি, বিরিয়ানি, তেহেরির রিলেটেড কিছুই রান্না হয়নি। বরং খিচুরি টাইপ কিছু রান্না হয়েছে।সেহেতু তাতে আচার, লেবুর যায়।
জায়ান বলল,
.
ক্যারেক্ট। একদমই ঠিক ধরেছেন।আজ ওয়েদার ভারি ডিমান্ড ছিলো তাই ঝাল ঝাল সবজির খিচুরি রান্না করা হয়েছে।
নাভিলা বিপরীতে হেসে বলে উঠল,
.
জায়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সে তো এমনেই বলেছিলো। তা যে সত্যি হবে তার জানা ছিলো না।জানা থাকবেই বা কি করে কেউ যে ফাস্ট রান্নাতে খিচুরি রান্না করবে এটাও সবজির খিচুরি রান্না করতে পারে এই ভাবনায় টায় তার এতদিন ধারনার বাহিরে ছিলো।
.
আরে বাহহহ তাহলে দেরি না করে চটপট আমাদের দিয়ে ফেলতো মামনি।
জায়ানের বাবা বলল,
.
নিশ্চয় আংকেল।
এই বলে নাভিলা একে একে সবায়কে দিতে লাগলো।
.
ভাল করেছ আবহাওয়া কথা ভেবে চিন্তে ঝাল ঝাল খিচুরি রান্না করেছে। আজ অন্য কিছু রান্না করলে বেসমাল মনে হতো।খিচুরি খেতে যতটা ভাল লাগছে অন্য কিছু রান্না করলে তেমন আর ভাল লাগতো নাহ্। আর খুচুরি শুধু অহনার নার আমার,মার, আসিফ, এনির ও খুব পছন্দের
বড় আব্বু খেতে খেতে বললেন,
.
নাভিলা এই কথা শুনে ক্লান্তির নিশ্বাস ত্যাগ করলো, যাক বাবা তার অ্যামাজন এর অভিযান তাহলে ব্যথ হয়নি। উল্টো সার্থকতা পেয়েছে।এই যাত্ররায় সে সেরকম ভাবে বেঁচে গেসে।
“মেহমানরা এসে গিয়েছে।সারা বাড়িতে হইহই রব।সবাই নতুন বউ দেখায় ব্যস্ত।কেউ কেউ নাভিলার সাথে সেলফি তুলতে মত্ত হয়ে আছে,এত অচেনা মানুষের মধ্যে নাভিলা রোবটের মতো বসে আছে সবার মাঝখানে।হাসি না পেলেও সবার সামনে মুখটাকে বেশ হাসি হাসি ভাব করে রেখেছে।জায়ানের ও এক অব্যস্থা। ভিড়ভাট্টা কোলাহল কোনে কালেই তার ভাল লাগেনা। দম জেনো এইসবে তার বন্ধ হয়ে আসে।আপাতত সে না চাইতে ও আব্বু আর বড় আব্বুর জন্য বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবার মাঝে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে মুখে সুজনের কৃত্রিম হাসি দিয়ে আছে।
এত বিরক্তির মাঝে তার নজর ঠিক সামনে বসা মেয়ের দিকে যাকে ঘিরে বসে আছে এক গুচ্ছো সমাবেশ।এত বিরক্তির মাঝে ও তার মুখে ফুটে উঠল মূহুর্তে এক চিলতে হাসি। মেয়েটাকে শাড়িতে আজ ঠিক পুতুল পুতুল লাগছে ।মিস চ্যাবারচ্যাপ এখন পপকর্নের ন্যায় মত মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।না পারছে লড়তে না পারছে কিছু বলতে আর না সইতে। হাহাহাহা এখন উচিৎ শিক্ষা হয়েছে মেয়ের।জায়ান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর কান্ড দেখে মিটিমিটি করে হাসছে।কিন্তু তার হাসিতে ব্যাঘাত ঘটালো আবরার।
.
চল,
.
জায়ান ঘাড় কাত করে বিরক্তি নিয়ে আবরারকে উদ্দেশ্য কাঠকাঠ স্বরে বলে উঠল,
আমাকে শান্তিতে থাকতে দেখতে কি তোর একটু ভাল্লাগে নাহ্!
.
নাহ্ একদমই ভাল্লাগে নাহ্ ।এখন চল তো
গবেট! কোথায় যাব আগে তাত বল!
.
কোথায় আবার ছাদে।
.
মাথা খারাপ তোর!এই সময়ে ছাদে কোন দুক্ষে যাব!তোর যাইতে মন চাইলে তুই যাহ্। আমি যামু নাহ্ এমনেই বৃষ্টির হওয়ার ফলে পুরো ছাদ এখন পানি দিয়ে ভিজে পিছলা হয়ে আছে। ছাদে গিয়ে এই পিছিলে চিটপাটাং হয়ে কমোড় ভাংগা কোনো ইচ্ছে নেই আমার।
.
তো আমিই কি তোকে দিয়ে ছাদে অলিম্পিক রেইস খেলাবো! যে ভিজা বলে খেলতে পারবি না। এত কথা না বলে চলতো।
.
আবরারররর বলি না গেলে হয় না ভাই
.
একদমই হয় নাহ্ কাজ আছে বলেই যাচ্ছি কোনো অকাজে তো আর যাচ্ছি না।
.
কি কাজ
জায়ান সন্দিহান নজরে জিগ্যেস করল,
.
তা গেলেই বুঝবি,
এই বলে জায়ানকে নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্য অগ্রসর হল,
জায়ান যেতেই ভিরের মাঝ এনি নাভিলাকে টেনে নিয়ে আসলো। এতেই জেনো নাভিলা আবার ও প্রান ফিরে পেলো। এতক্ষনে এত লোকের ঘিরে তার দম যেমন বন্ধ হয়ে আসছিলো। এখন অইখান থেকে বের হতে পেরে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এনি হাঁটতে হাঁটতে বলল,
.
চল আমার সাথে
.
কিন্তু কোথায়?
.
তা গেলেই বুঝতে পারবা মেয়ে
চোখ টিপ দিয়ে বলে উঠল,
.
এনি ছাদে এসে জায়ানের পাশে চেপে নাভিলাকে দাড় করিয়ে দিলো। আবরারের উদ্দেশ্য বলল,
.
নেও জলদি করে পটাপট স্টার্ট করো বেশী সময় হাতে নেই।একটু পরেই ডাক পরে যেতে পারে।
এনি বলল,
.
এই তোদের মতলব কি বলতো। ও কে এখানে নিয়ে এসেছিস কেন! আর আবরার কেই বা কি শুরু করতে বলছিস?
জায়ান ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,
.
আবরার পকেট থেকে তার ফোন বের করতে করতে বলল,
বেশী কিছুনা তোদের কিছু কাপাল পিক ফোটসেকশন হবে এই আরকি।
.
কিহহহহ! হোয়াট নোনসেন্স তোদের মাথা ঠিক আছে? আমি আর ও তুলবো এটা ও কাপাল ফটো লাইক,,,
.
বেশী কথা বলিস না এটা দাদির অর্ডার। তাই চুপ চাপ দাঁড়ায় যেভাবে বলছি সেভাবে কর। নাহলে দাদির রাগের সম্পর্কে তো জানিস।
জায়ান আর কিছু বললো না দাদির কথা শুনে থেমে গেলো। কিন্তু নাভিলার মনে মনে খুব রাগ হলো, এভাবে বলার মানে কি! সেই কি মরে যাচ্ছে তার সাথে ছবি তুলার জন্য।বেটা নিজেকে নিজে কি মনে করে।এত ভাব আসে কোথা থেকে। দেখলেই তার ঘা জ্বলে যায়।সে তো আর আস্তে চাইনি তাকে তো জোড় করে এনিই নিয়ে এসেছে। আবরার পটাপট ছবি তোলা আরম্ভ করলো।এই পোজ, সেই পোজ দিতে দিতে দুইজনই বেশ অস্বস্তি বোধ করছে। কতক্ষন হাতে হাত ধরা, চোখ চোখ রাখা।কিন্তু কি আর করা, বাধ্য হয়ে ক্লোজআপ মার্কা হাসিমুখে কয়েকটা কাপাল পোজ দিতে হল।
ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে নাভিলা জায়ানের ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করলো,
-“কি ব্যাপার, আপনি তখন আমার দিকে অইভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেনো ? কি এত দেখছিলেন!”
জায়ান নাভিলার কথায় ভর্কেয় গেলো এই ভাবে হাতে নাতে যে ধরা খাবে সে বুঝতেই পারেনি। সে তো তার অগোচরে লুকিয়ে চুরি করে তাকিয়ে ছিলো তার পর ও ধরা খেতে হলো।সে আমতাআমতা করে বলল,
-“হোয়াট ডু ইউ মিন মিসেস জোহরা?আমি কখনই বা তোমার দিকে তাকালাম?অবশেষে দিনে জেগে জেগে শেষ মেষ স্বপ্ন ও দেখা শুরু করেছো?
-” হাহাহা লোল! বাংলা বুঝেন না আপনি!আমি কি মিন করছি আপনি বুঝতে পারছেন না?না বুঝে ও না বুঝার ভ্যান ধরছেন?কোনটা বলুন তো ম্রিস্টার নিহান্ত?
.
নিজেকে নিজে কি মনে করো! খুব সুন্দরী!
.
অবশ্যই আমি সুন্দরি আপনার কোনো সন্দেহ আছে!
.
লাইক সিরিয়াসলি! হাসালে আমাকে এই বলে তোমার মধ্যে না আছে কোনো রুপ না আছে কোনো গুন। যে আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার দিকে তাকাবো। আর তার থেকে বড় কথা হল,,,
.
মানে!কি বলতে চান!
আমি কটমট করে বললাম,
.
মানে সিম্পল আমার আপাতত তোমার উপর কোনো ইনর্টারেস্ট নেই।মানুষ তখনই কাউর দিকে তাকায় যখন তার উপর তার ফুল ইনর্টারেস্ট থাকে বুঝসো। যাহ্ ইহাকালে তোমার উপর আমার বিন্দুমাত্র নেই।
.
নেই বলেই তো রাতে রাতে ঠুস করে বিয়ে করে নিলেন।
.
সেটাই তো! তাও আবার আমার বাধ্য হয়ে করতে হলো।আমার কাছে সেকেন্ড অফশেন থাকলে কোনো দিনই আমি করতাম নাহ্।
জায়ান এ্যাটেটিউট নিয়ে বলল,
.
এইইই আপনি আমাকে ইন্ডাইরেকলি অপমান করছেন!
.
মোটেও নাহ্
জায়ান শান্ত কন্ঠে বলল
.
আপ আপনি আপনি একটা একটা আস্ত ভারি অসহ্য লোক। জাস্ট সহ্য করা আমার পক্ষে ইম্পসিবল।
বলেই জায়ানের পায়ে রাগে পাড়া দিয়ে উঠল,
জায়ান ব্যাথায় আহহ করে উঠল নাভিলার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
__তুমি এত ঝগড়াটে কেন!এর শাস্তি তুমি পড়ে পাবা মিসেস জোহরা। আমার সাথে প্যাংগা নেওয়া তোমার এত শখ না! তা তোমাকে আমি হাড়ে হাড়ে টেড় বুঝাবো বলে দিলাম।
– পরে কেন সাহস থাকলে এক্ষুনি পারলে বুঝান আমি হলাম মিসেস নিহান্ত রহমান জায়ান বুঝছেন যে কোন কিছু বাকি রাখে না আর না অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য করে ।সে পাল্টা জবাব দিতে জানে তা ভুলে গেলেন।
.
ইউউউউউ
তেড়ে এসে
.
দাদিকে ডাক দিবো,,,,
চলবে