মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-২১

0
6678

#মুগ্ধতার__ভিরে🥀

#পর্ব________২১

#লেখিকাঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা

__________________________
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা,,,,
ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরেছে জায়ান।গায়ের পাঞ্জাবি অনেকটাই ঘামে লেপ্টে আছে শরীরের সাথে।চুলগুলো এলোমেলো।বিকালে একটা জরুরি মিটিংয়ে অফিসের উদ্দেশ্য ছুটেছিলো সে।দুপুরের পর আর কিছু খাওয়া সুযোগ হয়ে উঠেনি তার। আপাতত ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। কলিংবেল দুইবার চাপ দিতেই ঘুমোঘুমো চোখে হেলেদুলে এসে দরজায় খুলে দিলো মুন্না। বাসার হই হট্টগোল পরিবেশ এখন নিঃশব্দ পরিণত। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে আশেপাশে তাকিয়ে সে বললো,

_ সবায় কই রে! এত চুপচুপ যে পরিবেশ সবায় কি ঘুমিয়ে গেছে রে!

_হ ভাইজান হক্কলেই আজ তাড়াতাড়ি ঘুমায় গেসে। এন্নে আইতে এত দেরি করলেন যে!

_কাজের চাপ বেশী ছিলো রে বসে থাকলে তো আর আমার চলবে না। মাথাটা প্রচণ্ড ধরেছ রে শরীলটা ও খুব ক্লান্ত লাগছে। মুন্নুরে আমায় এক কাফ কফি করে দিতে পারবি ভাই ।

“মুন্না দাঁত কেলিয়ে বিপরীতে মাথা দুলালো যার অর্থ সে পারবে”

জায়ান ছোট নিশ্বাস ত্যাগ করে পাঞ্জাবি হাতা দুইটো বাজ করতে করতে সোফায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে দিলো। আর হাত দিয়ে মাথা টিপতে লাগলো। মাথাটা প্রচণ্ড জ্বালা করছে। আপাতত তাকে কফি খেয়ে এই জ্বালা থেকে রেহাই পেতে হবে।তার পর ফ্রেশ হয়ে নাহয় পেটের জ্বালা মিটানো যাবে।মিনিট দশ পর মুন্না রান্নাঘর থেকে এসে তাকে ডাক দিলো।মুন্নার ডাকে সে নড়েচড়ে উঠে দাঁড়াল মুন্নার হাত থেকে কফির মগ নিতে নিতে বলল,,

_ রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পর মুন্না অনেক রাত হয়েছে।রাত জেগে জেগে বেশী টিভি দেখিস না শরীল খারাপ করবে ।

__আর এক ফর্ব বাকি আসেয় এই নাটকটার তার পর এটা শেষ কইরাই অহনই ঘুমাইয়া যামু।আন্নে খাইবেন না ভাইজান! আন্নের জন্য আমি খাবার গরম করে দেই! অহনা আফামনি কইসে আন্নে আইলে খাবার দিতে।

__আমার খেতে আরো দেরি আছে তুই টিভি অফ করে ঘুমিয়ে পর মুন্নু সকালে উঠে তারপর নাহয় দেখিস তোর এসব সিরিয়াল।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল জায়ান,,,

♠️

রুমের দরজায় ঠেলে প্রবেশ করে জায়ান।রুমে আপাতত চারদিক্ অন্ধকার ময়।কিন্তু বারান্দা থাই বেধ করে পার্দার ফাঁকে ফাঁকে রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট এর হাল্কা মৃদু আলোয় রুমে এসে কিছুটা আলোকিত হয়ে আছে।জুতোজোড়া কোনরকম খুলে সিংগেল সোফায় হাত পা ছড়িয়ে গা এলিয়ে দিলো।পাঞ্জাবির বোতাম খুলে চোখ বন্ধ করে কিছুসময় ক্লান্তির শরীলটা নিয়ে সেভাবেই পরে রইলো।
চোখগুলো তে ঘুমাচ্ছন্ন ভাব আসতেই কিছু সময় জন্য অসচেতন ভাবে ঘুমিয়ে ও গেলো। হঠাৎ ঘড়ির ঢং ঢং আওয়াজ হতেই সচকিত দৃষ্টিতে চোখ মেললো সে। ঘুমের রেশ ভাবটা এখনো কেটে উঠেনি।অনেক সময় সোফায় গুটিয়ে বসে থাকার জন্য হাত পা অবশ হয়ে আছে কমোড় ও ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই বিছানায় চোখ পড়তেই হাত পায়ের আড়ষ্ট-অবশ ভাবটা কেঁটে গেলো মূহুর্তেই।

তার বিছানার ডান দিকের কোণ ঘেঁষে গুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে তার বউ।এমন ভাবে শুয়েছে এই বুঝি বুঝি পরে যাবে।উঠে তার দিকে যায় জায়ান।ঠোঁটের কোঁণে মৃদু প্রশান্তির হাসি।
টেনে বিছানার মাঝখানে শুইয়ে দেয় সে।গায়ে গলা অবধি কাঁথা টেনে ঠিক করে দেয়। অপলকহীন ভাবে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে কপালে হালকা ভাবে তার ওষ্ঠদ্বয় স্পর্শ ছুঁয়ে দেয়।বুকে এক হাত গুঁজে বিড়বিড় করে বলে উঠে,,,,

____এই অদম্য কে আর কতভাবে মুগ্ধ করবে ?এ মুগ্ধতার দেখা কি কোন শেষ নেই?আমি যে পাগল হয়ে যাব প্রিয়সি তোমার #মুগ্ধতার__ভিরে দেখতে দেখতে।
ঠোটঁ কামড়িয়ে হেসে মাথা হাত দিয়ে চুল্কে ওয়াশরুমে চলে গেলো জায়ান ফ্রেশ হতে,,,

♠️
মিনিট বিশ পর ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে বের হল জায়ান। চুল মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে নাভিলার এক হাত ধরে টেনে ওকে তুলে ফেললো
নাভিলা চোখ ডলতে ডলতে বললো”

_আম্মু প্লিজ আর একটু ঘুমাবো।
এই বলে নুইয়ে পরতেই আবার ও হাতে টান পরায় ঘুমের রেশ কিছুটা কেটে গেলো। চোখ কচলিয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে জায়ানের দিকে তাকালো কিছু সময় চুপ থেকে বলে উঠল,,,

__কি সমস্যা আপনার! এই ভাবে টানাটানি কেন করছেন!

__কেন আবার বউ হও না তুমি আমার!
জায়ান গম্ভির হয়ে বলে উঠল,

__মাঝ রাতে মশকারা করছেন!
শান্ত কন্ঠে জিগ্যেস করল,,

__মশকারা কেন করতে যাবো আজীব।

__ তাহলে নিশ্চয় আমাকে এটা জানানোর জন্য এটলিস্ট ঘুম থেকে তুলেন নাই?

___জায়ান মাথা দুলালো যার অর্থ হ্যাঁ সে এটার বলার জন্যই তাকে তুলেছে।
নাভিলার তেলেবেগুনে জ্বলে বলে উঠল,,

__ এই কথাটা বলার জন্য ঘুম থেকে তুলার মানে কি ভাই।এইইই আপনার মাথা তাড় কি ঠিক আসে ! একটা ঘুমন্ত মানুষকে তুলে বলছেন বউ হও না তুমি আমার। এটা আবার কেমন কথা রে ভাই। হ্যাঁ হই আমি আপনার বউ। তো?
উঠে দাঁড়িয়ে কমোড়ে দুই হাত রেখে বলল,,,

___তো আবার কি?কয়টা বাজে একবারের জন্য ঘড়ি দেখসো!

___ ভারি অদ্ভুত লোক তো আপনি! এসব বলার জন্য আমার শান্তির ঘুম হারাম করে এভাবেই তুলছেন! এই আপনি কি আমার সাথে ঠ্যাট্টা মি করছেন? এসব আচারন কিন্তু আপনার আমার সাথে একদমই যায় না।যায় না মানে কিছুতেই যায় না।আপনি ঠিক আছেন তো!ভুলে উল্টাপাল্টা কিছু খায়ে আসেনি তো আবার!
দ্বিগুণ রেগে বলল,,,

___ আপাতত ঠাট্টা করার মত আমার কোনো মুড নেই। বউ হও তুমি আমার এখন ফটাফট কর্তব্যপালন কর।

_____ তো!মাঝ রাতে এসে এত বউ বউ করছেন কেনো! আর কিসের কর্তব্য?
নাভিলা উল্টা হয়ে খাটের দিকে যেতে যেতে বলল,,

_____ রাত দুইটোর বেশী বাজছে।ডিনার করিনি আমি সে খেয়াল নিশ্চয় আছে তোমার?যাও খাবার নিয়ে আসো আমার জন্য। একজন বউ এর কর্তব্য স্বামীর সেবা করা আর তুমি তাকে না খাইয়ে রেখে পরে পরে ঘুমাচ্ছো? হাদিসে কি বলা আছে তুমি জানো?একজন,,,,
নাভিলার হাত ধরে টেনে আবার ও বলে উঠল,,,

___আপনি আমাকে মাঝ রাতে এসে হাদিস শুনাচ্ছেন! আমি এখন হাদিস বলা শুরু করলে তখন আপনি কই যাবেন?

___ আমি মোটেও হাদিস শুনাচ্ছি না।আপাতত নিজে গিয়ে আমাকে খাবার দাও খুধা পেট চোঁ চোঁ করছে।

নাভিলা আর কিছু না বলে চুলগুলো গুছিয়ে আধ খোঁপা করে গায়ের উড়না ঠিক করে জড়িয়ে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো।জায়ান ও তার পিছু পিছু গেলো।

প্লেটে ভাত নিতে নিতে বলল,,

__মুগডালের মুড়িঘন্টা খান? না অন্য কিছু দিবো!

জায়ান তখন সবে মাত্ররো টেবিলে এসে চেয়ার টেনে বসেছে,নাভিলার কথা শুনে চুপ থেকে সামান্য হেসে বললো

__ দুপুরের খিচুরি আচ্ছে?

___হ্যাঁ আছে

__তাহলে অটাই দাও আর কিছু সাথে লাগবেনা, আর শুনো সাথে দুই পিস লেবু দিও।

নাভিলা ফ্যালফ্যাল করে জায়ানের দিকে একবার তাকালো তার পর প্লেট থেকে ভাত বোলে রেখে দিলো।ফ্রিজ থেকে খিচুরি বের করে চুলায় গরম করতে বসালো। মুখে ফুটে উঠলো তার কুঞ্চিত হাসি। খাবার গরম করে প্লেট নিয়ে জায়ানকে দিয়ে বলল,,

_নিন খান আমি উপরে গেলাম আমার ঘুম পেয়েছে।

__হাদিসে কিন্তু এটাও বলা আছে স্বামী যখন খাবে তখন তার পাশে স্ত্রী বসে থাকবে যে পর্যন্ত তার খাওয়া শেষ না হবে।

নাভিলা যেতে নিয়ে ও থেমে গেলো জায়ানের কথায় পিছু গুরে কপাল খাদ করে সন্দিহান স্বরে বলে উঠল,,,

_আজ হঠাৎ এত হাদিস শুনাচ্ছেন যে!

__আর কিছু পারি ইয়া না পারি ছোট ছোট হাদিস গুলোতে মেনে চলতে পারি।এতে কিন্তু দুইজনেরই সোয়াব হবে।তাই সোয়াব পাও আর আমাকে ও পেতে দাও।

“নাভিলা আর কিছু না বলে জায়ানের পাশে এসে চেয়ার টেনে বসল আর জায়ানকে তীক্ষ্ণ চাহনিতে পরক্ষ করতে লাগল,,,,,”

♠️
মুখের উপর তরল কিছু এসে পরতেই হন্তদন্ত হয়ে
উঠল জায়ান বুকে জোড়ে ধুকপুক করছে। বুকে এক হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই তার মেজাজ্,,,,,,,

চলবে,,,,