মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-২৫

0
6542

#মুগ্ধতার_ভিরে🥀
#পর্ব___২৫ (প্রথম খন্ড)
#লেখিকাঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা
_____________
রাত প্রায় অনেক। রাতের খাবার খেয়ে সবায় ছাদে পাটি বিছিয়ে এক সাথে বসে আছে।সারা শহর অন্ধকার না হলেও আশেপাশে আবছা অন্ধকার হয়ে আছে। আজ আকাশ পরিষ্কার চাঁদের বা তারার দেখা নেই। ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে প্রায় ঘন্টাখানিক হয়েছে।আশেপাশে প্রায় অনেক বিল্ডিং কারেন্ট আছে। শুধু তাদের বাসায়ই নেই।নাভিলাদের বাসায় জেনারেটর এর লাইন ও নেই।নিবে নিবে করে আর কখনো নেওয়া হয়ে উঠেনি। তাই গরম থেকে বাঁচার জন্য ছাদে আসা।নাফিজ ফোন করে জেনেছে তাদের বিল্ডিং আর আশেপাশে কয়েকটা বিল্ডিং এর শুধু মাত্ররো ফিউচ চলে গিয়েছে। কাজ চলছে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কারেন্ট হয়তো চলে ও আসবে।

জোছনা রাত না হলে ও ল্যাম্পপোস্ট এর আবছা আলোয়তে দেখা যাচ্ছে সবকিছু।
শিতল ঠান্ডা হাওয়া বইছে।গরম ভাবটা নেই। ছাদের টপ থেকে ভেশে আসছে বেলীফুলের সুবাস। ছাদে বসে থাকতে অত ও খারাপ লাগছে না। ভালই লাগছে সময়টা। সবায় চুপ চাপ। কেউ বসে বসে ফোন ঘেটে স্কোল করছে, আবার কেউ নিজেদের মাঝে টুকটাক কথা বলছে। আর এই মহনীয় রোমাঞ্চকর সময়টা অনুভব করছে।
নাভিলা তাদের থেকে কিছুটা দূরে রেলিংয়ে দুই হাত রেখে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে চুপচাপ। তার পাশে তার কাজিন ইফাদ, জাফরিন, তাকে নানা কথা বলে চলছে । বয়সে তারা সময় বয়সি না হলেও মনের দিক দিয়ে অনেকটাই মিল। তিনজন কোথাও একসাথে থাকলে দুনিয়া দাড়ির আর কোনো খবর রাখার প্রয়োজন বোধ করেনা তারা। কিন্তু আপাতত তাদের কথায় নাভিলার কোনো ভ্রুহ্মেপ নেই।তার দৃষ্টি সামনে চার তালা অন্ধকার বিল্ডিং এর দিকে।তিনদিনের ব্যবধানে তার জীবনের মোড় অনেকটাই পাল্টে গেছে।সুন্দর গুছানো পরিপাটি জীবন এখন বড্ডো অগুছালো হয়ে আছে।তার সাথে এত কিছু হয়ে গেছে। কিন্তু তার সব থেকে কাছে কাঙ্ক্ষিত একমাত্ররো বেস্টুকেই এইসব আর খুলে বলা হয়ে উঠেনি তার।আচ্ছা রিয়া যখন জানতে পারবে তার বিয়ে হয়ে গেছে। এটা ও জায়ান এর সাথে তখন তার রিয়েকশন কি হবে! সেই কি আদৌ বিশ্বাস করবে তাকে! এইসব যে তার সাথে হুট করে হয়েছে। এমন নানা কথা সে মস্তিষ্কে ভেবে চলছে।
জাফরিন ঘুমঘুম চোখে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,,,,,

__দূর ব্যাল ভাল্লাগে না কিছু, মরার কারেন্ট আহে না কে! আর কত এমনে দাঁড়াইয়া থাকমু। ব্যাঙের মশার কামুরে আমার হাত পা আলুর ভর্তা হইয়া গেলাম তো!

__ গবেট ওটা আলুর ভর্তা হবে না শহিদ হবে। পড়া ঠিক করে পড়তে না পারিস কথাতো এটলিস্ট ঠিকঠাক ভাবে বলা শিখ।
ইফাদ বলল,,

__চুপ থাক। তোরে কইনাই আমারে জ্ঞান বিতরণ করতে। যে নে না হেনে পড়া নিয়া আমায় ভাষন দেস কে! আমারে না খোঁচাই লে তোর পেটের ভাত হজম হয়না। শালা খবিশ,,
জাফরিন তেলেবেগুনে জ্বলে বলল,,

___আরে আরে আরে তোরে খোঁচাই লাম কই একজন সুনাগরিক হিসেবে আমি আমার শুধু কর্তব্যটাই পালন করলাম।যাহ্ তোর মত অশিক্ষিত মহিলা বুঝবো না।বুঝবি বা কেমনে মাথায় যে পরিমান গোবর দিয়ে ভরপুর ।

___কিহহহহ কইলি আমারে তুই! তোরে তো আমি অহন এএএ এই ছাদ থেকে এক ধাক্কা দিক্ষা দিয়া দিমু শালা ইবলিশ। যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা,,

__আহ্ জাফরিন কিহ্ শুরু করেছিস! থাম এভার।
নাভিলার ওদের দুইজনের মাঝে হাত দিয়ে থামিয়ে বলল,,,

__আমি আবার কি করলাম অয়ে এইত শুরু করল আগে তুই অরে কিছু বলিস না কেন!
জাফরিন বলল,,

___ দ্যাখ জাফু ভুলে যাস না আমি কিন্তু তোর থেকে গুনে গুনে চার বছরে বড় তাই সম্মান দিয়ে কথা বল।তুই তরকারি কি! আমি কি তোর সময় বয়সি! যে কথায় কথায় তুই তরকারি আর গালি গালাজ ইউস করবি।

__অরে আমার বড় রে,,,,

__এই ইফাদ,জাফরিন,নাবু এই দিকে আয় তোরা অইদিকে কি করিস এইখানে আয় আমারা গেইম খেলছি।
নাফিজ বলল,,,

__কি গেইম ভাইয়া!
ইফাদ বলল,,

__সেটা তোরা এখানে আসলেই বুঝবি।
নাফিজ বিপরীতে বলল,,,

“তিনজনেই না চাইতে ও পাটিতে এসে ফাঁকা জায়গায় দেখে পাশাপাশি বসে পরলো ”
নাভিলা বসেছে ঠিক জায়ানের বরাবর।
দূর থেকে রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট আলোটা সোজা যেয়ে পরছে জায়ানের মুখে।নাভিলা একবার তার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে।নাফিজের কাধে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে।

___ তা গেইমটা শুরু করি কারেন্ট আসতে যেহেতু আরো অনেক সময় আছে।
এনি বলল,,

__হ্যাঁ নিশ্চয় কিন্তু কি গেইম খেলবো এটাত আগে বল!
জাফরিন বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল,,

__ একে একে করে একটা গান গাইবি এটাই হল আপাতত কার গেইম বুঝলি
নাফিজ জাফরিন এর মাথা হাল্কা টোক্কা দিয়ে বলল,,,

__ইউ মিন টু সে গ্যানের কলি!

_ঐই হল একটা,

“একে একে সবায় পর পর একটা একটা করে গান গায়তে লাগলো নাভিলা ঘুমিয়ে পরেছে তাই তাকে আর ডাক দেওয়া হয়নি।জায়ানের রাউন্ড আসতেই সেই প্রথমে অমত্ত প্রশন করে। পরে সবার পিড়াপিড়িতে বাধ্য হয়ে গান গাওয়ার জন্য রাজি হলো ।অন্ধকারের মধ্যেই হাতের দুই আঙুলের মাধ্যমে টুংটাং শব্দ করে তাল তুলল।তার দৃষ্টি অন্ধকার এর মধ্যে ঘুমন্ত নাভিলার চোখের দিকে।জায়ানের মত সবায় হাতের মাধ্যমে শব্দে তুললো। ভারি শব্দে এভার নড়েচড়ে বসলো নাভিলা।ঘুম ঘুম চোখে তাকাতেই কানে ভেশে আসলো,,
জায়ান শিতল মোহনীয় ভরাট কন্ঠে গান ,

tere saath saath aisa koi noor aaya hai
chand teri roshni ka halka sa ik saya hai,,teri nazron ne dil ka kiya jo hashar
Asar ye hua,,,,,,,,,
Ab in-mein hi doobke ho jaau paar
yehi hai dua,,,,,,,,,,,,

সেকেন্ড এর জন্য থমকে গেলাম। থমকে গেলো আমার হৃদয় যন্ত্রের স্পন্দন। আবছা অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারলাম জায়ানের দৃষ্টি আগের ন্যায় আমার দিকেই।সাথে সাথে কেমন লজ্জা অনুভব ভর করলো মস্তিষ্কে।লজ্জায় মাথা নত করে ফেললাম।

Aankhon mein teri
ajab si ajab si adaayein hai
ho,,,,,,,(2)
Dil ko bana de jo patang
saansein ye teri vo hawaayein hai(2)

এতটুকু গাইতেই কারেন্ট এসে পরলো। ছাদে চারদিকে মুহূর্তে পূনরায় আলোকিত হয়ে গেলো।নাভিলা জাফরিন এর হাত খাঁমচে ধরে উঠে দাঁড়াল। জায়ান থেমে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে । আবির বিরক্তি কন্ঠে বললো,

__ দিলিতো মুডটা নষ্ট করে এই কারনে তোরে থাপ্পড়াইতে মন চায়। উঠলি কেন বেয়াদব ?

__জাফরিন এর ঘুম পাচ্ছে। আর আম্মু আব্বু ও অনেকটা সময় একা নিচে বসে আছে তাই আমি নিচে যাচ্ছি তাদের কাছে।

__গানটা এটলিস্ট শেষ করে যেতি
ইফাদ বলল,,,

__ তোমরা শুনো আমি আসছি,,
এই বলে জাফরিন সাথে নিচে নেমে গেলো।

~চলবে~

#মুগ্ধতার__ভিরে🥀
#পর্ব___২৫(দ্বিতীয় খন্ড)
#লেখিকাঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা

এক প্রকার বিরক্তি নিয়ে ভদ্র ছেলের মত খাবার টেবিলে বসে আছে জায়ান।তার ঠিক পাশে আবরার, আবির,নাফিজ আর বরাবর বাবাই(সাদাত) বসা। সবায় সকাল নাস্তা খেতে ব্যস্ত। কিন্তু জায়ান আপাতত খাচ্ছে কম রাগে ক্রোধে রুচি ন্যায় ফুলছে বেশি। তার এত রাগার মূলত কারন হল নাভিলা।হুট করে সকাল সকাল জাফরিন আর অহনা মিলে প্লান করে বসলো যে, তারা আজ যেহেতু বিকালে বাসায় চলেই যাবে , কোথাও তো আর তেমন ভাবে বাহিরে তাদের যাওয়া হবে না।তাই পাশে গ্রাম সাইডে দিকে প্রতি রবিবারে যে হাট বসে তারা সেখানে যাবে। এই অব্দি তাও সব ঠিক ছিলো। কিন্তু এর মাঝে নাভিলা এসে বলে উঠল, গ্রামে দিকে যেহেতু যাবে তাহলে সবায় বাঙালি স্টাইলে শাড়ি পরে যাবে। ব্যাস এই কথায়ই জায়ানের রাগ উঠার জন্য যথেষ্ট।

___শালা বাবু বসে আছ যে!খাচ্ছো না কেনো!
আবির মাংসের ঝলে পোরটা চুবিয়ে জায়ানের উদ্দেশ্য বলল,,,

___এই মা জায়ান সরি সরি কিছু মনে করনা আমি একদমই তোমাকে জিগ্যেস করতে ভুলেই গেছি। তোমার কিছু লাগবে কিনা, অসুবিধা হচ্ছে কিনা সরি সরি।পোরটা দেই তোমাকে!এটা তো ঠান্ডা হয়ে গেছে দেখছি দাড়াও দাড়াও গরম নিয়ে আসি। আম্মু জায়ানের জন্য গরম গরম পোরটা নিয়ে আসো তো।
নাফিজ হন্তদস্ত হয়ে এক দমে কথাগুলো বলল,,

জায়ান এতে কিছুটা ইতস্তত বোধ করতে শুরু করলো , তাকে নিয়ে কাল থেকেই খাবারদাবার নিয়ে এই বাসায় এক প্রকার অত্যাচার আর বাড়াবাড়ি চলছে। এইসবে তাকে জেনো প্রায় অতিষ্ঠ করে তুলছে। একে তো নতুন পরিবেশ দ্বিতীয় তো তাকে নিয়ে সবার এত ব্যস্ততা। সব কিছুই মিলিয়ে জেনো তার অস্থিরতা হাজারগুন বারিয়ে তুলছে আরো,,, হাল্কা মুচকি হেসে বলল,,

__আসলে ভাইয়া আমার হয়ে গেছে আর খেতে পারবো না কিছু তাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হবেন না। আর জিজু তুমিত জানো সকালে আমার হেভি খাবার খাওয়া অভ্যাস নেই ।

__সেই কি বাবা তুমিত তেমন কিছুই খেলে ও না। এর মধ্যে বলছো তোমার খাওয়া ও শেষ , খাবার কি খেতে তাহলে ভাল হয়নি!
বাবাই বললেন,,,,

__এই মা জায়ান আমি তোমার জন্য তাহলে অন্য কিছু করে আনি বাবা?
মিসেস উম্মে রান্নাঘর থেকে তড়িগড়ি করে এসে বললেন,,,

___আরে মামনি, বাবাই আমাকে নিয়ে এভাবে অযথা ব্যস্ত হবে না তোমরা।খাবার খেতে অসম্ভব ভালো হয়েছে। আসলে আমি সকালে বেশি কিছু খেতে পারি না। শুধু কফি খাই। তাই আমাকে নিয়ে তোমরা সবায় এতো পেনিক নিও না । বিশ্বাস না করলে আবরার আর জিজুকে জিগ্যেস করো। এই তোরা চুপ কেন! কিছু বলছিস না যে!

“জায়ানের কথা আবরার আর আবির মাথা দুলালো যার অর্থ হ্যাঁ ”

মিসেস উম্মে কিছুটা ক্লান্তি নিশ্বাস ত্যাগ করে বলে উঠলেন,,
__তাহলে তোমার জন্য কফিই করে নিয়ে আসি আমিই! এখন কিন্তু তার জন্য আমাকে আর না করতে পারবে না।

“জায়ান হেসে সম্মিত জানালো মামানির বিপরীতে জায়ানের উত্তর পেতে মিসেস উম্মে হাসিমুখে চট করে রান্নাঘরে চলে গেলেন কফি করতে।জায়ান এইটুকু বলতেই জেনো এতেই আপাতত অনেক বড় হাফ ছেড়ে বাচঁলো”

_____________________________
মাথার উপর তপ্ত সূর্য তেজ। তিব্বো গরমে গায়ের ঘাম তরতর করে ঝরে যাচ্ছে। না চাইতে ও এত গরমের মাঝে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,জায়ান, আবির আবরার,ইফাদ,নাফিজ।সবার মুখে বেশ উৎসাহ কিন্তু জায়ান মুখ ভার করে এক মনে ফোন স্কোল করছে।এর মধ্যে নাভিলা,অহনা,এনি,জাফরিন নিচে নেমে আসলো।চারজন আজ বাঙালি স্টাইলে তাঁতের শাড়ি পরেছে।দেখতে চারজনকেই বেশ লাগছে। নাভিলা নাফিজ এর সামনে এসে হাসিমুখে বলে উঠল,,,

___এই ভাইয়া দেখতো আমাকে কেমন লাগছে !

“নাভিলার কন্ঠ স্বর কানে আসতেই জায়ান সচেতন চোখে ফোন থেকে মাথা তুলে একবার সেই দিকে তাকালো সাথে সাথেই তার মুখ আগের ন্যায় আরো ভার করে ফেললো আর রুঢ় স্বরে বলে উঠল,, ”

__ খুব বিছড়ি লাগছে।

__মানে! কি বলতে চাইছেন!আমাকে ভাল লাগছে না।

__নাহ্ শাড়িতে তোমাকে আজ কেমন পানসে লাগছে সাথে অনেক মোটা ও লাগছে অনেক।
মুখটে কুঁচকে বলল,

__কিন্তু আম্মুতো আমাকে বলল ভালই লাগছে,,
নাভিলা মুখটা মলিন করে বলল,,,

__মিথ্যে বলেছে আমিতো বলছি তোমাকে যাও ফটাফট চেঞ্জ করে এসো।

__মোটেও না তুমি এই বাদরের কথা একদমই শুনবা না তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।এই নাফিজ, আবির তোমরা কিছু বলছো না যে
অহনা বলল,,

__হ্যাঁ ভাইয়ার কথায় কান দিবে না বেইব’ আর কাউর কথা শুনা ও লাগবে না তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তাই ও এমন বলছে।
এনি বলল,,

__তাইতো আমার কথা কান দিতেই বা যাবে কেনো ও।

__আহ্ জায়ান
আবরার বলল,,

“নাভিলা কিছুক্ষন থম মেরে চুপ থেকে বলে উঠল”

___তোমরা দাড়াও আমি পাঁচ মিনিট এর মধ্যে আসছি।

__কোথায় যাচ্ছিস আবার দেরি হয়ে যাচ্ছে তো আমাদের।(নাফিজ)

___গরমে কেমন অস্থির অস্থির লাগছে আমার ভাইয়া তুমিতো জানো আমি গরম আবার বেশি একটা সহ্য করতে পারিনা তাই শাড়িটা চেঞ্জড করেই আসছি এতে কিছুটা সস্তি পাবো আর রিলাক্স মুডে ঘুরতে ও পারবো । বেশি সময় লাগবে না আমার আমি যাব আর আসবো,,
এই বলে দ্রুতপায়ে উপরে চলে গেলো অকে যেতে দেখে জায়ান এতক্ষনে ভিতরে লুকানো চাপা নিশ্বাস ত্যাগ করলো মুখে ফুটে উঠল তার হাসি।

______________________________

প্রায় পঁয়ত্রিশ মিনিট জার্নি করে তারা হাটে পৌঁছালো। হাটে মানুষজনের ভীড় ঠেলে সামনে এগোনো মহা মুশকিল।
এতো মানুষজনের গিজগিজে পরিস্থিতি।বিচ্ছিরি একটা অবস্থা! একে আজ কোনো ভাবেই শুধু হাট বলা আর যাবে না।এই তো অনেক বড় মেলা। এত ঠেলাঠেলি তে ভিতরে প্রবেশ করাই আপাতত মহা বিপদ। একবার ঢুকলে মনে হয়না সহজে আজ আর বের হওয়া যাবে।
চোখমুখ বিকৃতি করে সামনে চেয়ে আছে জায়ান।মানুষের কি এত ঘুরাঘুরি যে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই মেলা এসে এতো ভীড় জমাতে হবে! বিকালে কি আর তাদের আসা যায় না! সবাইকে এই সকালেই আসতে হল!
তার পাশে দাড়িয়ে আছে নাভিলা, এনি বাকিরা সবাই প্রায় ভীর ঠেলে ভিতরে চলে গেছে তারা তিনজনই যেতে পারেনি।

এনি বলল,,
__চল ভাবি এখন একটু ভীর কম মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি চল দাঁড়িয়ে না থেকে এই সুযোগে ভিতরে চলে যাই আমরা। পরে আর চেষ্টা করলেও মনে হয়না আর যেতে পারবো।

__আমারতো মনে হচ্ছে ভীড় যেন ক্রমশ শুধু বাড়ছে কমছে না। এতো ভীড়ের মধ্য কিভাবেই বা যাবো আমরা! আর একটু নাহয় দেখি!
নাভিলা করুন কন্ঠে বলল,,

জায়ান বিরক্তি নিয়ে বাম হাতে কব্জি তে পরা সিলভার রং এর ঘড়িটায় একবার দেখে নিলো ।ঘড়িতে বাজে সকাল ৯:৩০।মাথার উপর সূর্যের অনেক তেজ। খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকায় মাথায় তাপ ও লাগছে বেশ। কপালে,গলায় বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করছে।মুখ ফুলিয়ে আটকে রাখা শ্বাস ছাড়লো সে। এই জন্যই তার ভীর বাট্টা কোনো কালেই ভাল লাগেনা।দম বন্ধ হয়ে যেমন আসে তার এইসবে মধ্যে। এরপর সামনে তাকিয়ে এক হাতে এনির হাতের কব্জি আর এক হাতে নাভিলার হাত শক্ত করে টেনে ধরে এগোতে এগোতে বিরক্তি কন্ঠে বললো,

___দাঁড়িয়ে না থেকে চল,,, ভীর তো আর তোমাদের জন্য আজ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে না।

“হাটে ঢুকে বাকিদের আর কোনো ভাবেই খুঁজে পাওয়া গেলো না। হাট তো কম বড় নয় বিশাল এক জায়গায় জুড়ে পুরোটা আয়োজন করা। আর মানুষের কোলাহল ও অনেক।জায়ান তাদের দুইজনকেই তার হাতের বাঁধনে শক্ত করে ধরে আছে। একটুর জন্য ও ছাড়ছে না।যার কারনে তারা দুইজনই ভালো করে ঘুরে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। আর কিছু শান্তিতে কিনতে ও পারছেনা কারন জায়ান কোথাও দাঁড়াতে দিচ্ছে না তাদের।নাভিলার জায়ানের উপর আপাতত খুব রাগ উঠছে, তার পর ও কিছু বলছেনা।মুখ বুঝে পুরোটা সহ্য করে নিচ্ছে যদি কিছু বললে রেগে যায়।বলা তো আর যায় না।
কিন্ত ভীড়ের মাঝেও নাভিলা একটা জিনিস ভালো করে খেয়াল করলো।সুঠাম দেহের জন্য কারোর শরীর তার বা এনির শরীর আর স্পর্শ করছেনা।করবেই বা কি করে দুইটো বলিষ্ঠ শক্তপোক্ত হাত যত্নে ভরা স্পর্শে তাদের আগলে ধরেছে অতি খুব সাবধানে।

এই হাট এর মধ্যে ভীর কম একটা দোকান খুঁজে পেয়ে জায়ান যেমন হাফ ছেড়ে অনেক বড় বাচা বাঁচল। মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠল বিশ্ব জয়ের হাসি।সে নাভিলা আর এনিকে সেইখানে সেইফলি নিয়ে গিয়ে দাঁড়াতে বলল। আর সেই গেলো আপাতত বাকি দের খুঁজে আনতে।যাওয়ার আগে দুইজনকে পই পই করে সাবধান করে দিয়ে এসেছে।তারা জেনো এইখান থেকে কোথাও না যায়। জায়ান যেতেই এনি আর নাভিলার মুখে হাসি ফুটে উঠল।দুইজন সেই দোকান থেকে কিছু সময় ব্যবধানে বের হয়ে আশেপাশে স্টোল থেকে নিজেদের জন্য ঘুরে ঘুরে কানের দুল,রেশমি চুড়ি,আর শাড়ি দেখতে লাগলো। এর মধ্যে পিছু থেকে মিষ্টি এক কণ্ঠ স্বর ভেশে আসলো।

___নাভিলা!

নাভিলার গুরে তাকাতেই সেই মানুষটির দিকে বিস্ফোরিত নয়ণে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,,

চলবে,,,,