#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম
“৪র্থ পর্ব”
–” তুই এখানে কি করছিস? সম্রাটের কথায় রনি রাশি তার দিকে তাকায়। সান ঘাবড়ানো চোখে তাকিয়ে থাকে।
-” তোর এখানে কি? তুই রাশির সাথে কি করছিস?
– তোমাকে কি ডিস্টার্ব করতে ছিলো এই ছেলে রাশি? দৃঢ় কন্ঠে বলে সম্রাট রাশির দিকে তাকিয়ে । সম্রাটের কথায় রাশি সাবলীল ভাবে বলে, না না! উনি আমাকে বিরক্ত করছিলেন না৷ উনি.. বাকিটা বলার আগে সম্রাট রনির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে, তোর এখানে কাজ কি?
-” তুই কিন্তু এবার বেশি বেশি করছিস সম্রাট। রাগী কন্ঠে বলে শান। রনি এখনো চুপ করে আছে৷ তবে রাশি আন্দাজ করতে পারছে এদের মধ্যে কিছু একটা আছে৷ তবে এরা যে সেম ইয়ার এটাতে আর কোনো সন্দেহ নাই।
– চামচা চামচার মতো থাকবি৷ মনিবের মাঝে একদম নাক গলাতে আসবি না একটা আঙ্গুল উঠিয়ে বলে হাসিব।
– সম্রাট হাসিব’কে থামিয়ে দিয়ে রনিকে উদ্দেশ্য করে বলে,তোকে যেনো আর রাশির আশেপাশে কখনো না দেখি। শুধু রাশি না! আমার কোনো কিছুর আশেপাশে তোকে দেখতে চাই না। এটাই ফাস্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং তোর জন্য।
– আপনি এইভাবে কথা বলছেন কেনো উনার সাথে? উনি তো খারাপ কিছু করেনি বা বলেনি আমাকে। তাহলে আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেনো? কৌতুহলী হয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলে রাশি। রাশির কথায় সম্রাট রক্তবর্ণ চোখে তাকায় তার দিকে। এতে রাশি কিছুটা ভয় পেয়ে চুপসে যায়৷ রাহাত সম্রাটের হাতে হাত রেখে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করে। রনি এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে সম্রাটের কথা শুনছে।
— তুই চুপ করে আছিস কেনো রনি। ও যে তোকে এত অপমান করছে কারণ ছাড়া তাও কিছু বলবি না৷ শানের কথায় রনি শুধু মুচকি হাসি দেয় একটা। এতে শান অবাক হয়ে। ভীষণ ভাবে অবাক হয়৷ রনির মতিগতি কিছুই বুঝে উঠে না।
— বাড়ি চলো রুক্ষ কন্ঠে বলে উঠে সম্রাট। রাশি ভ্রু কুচকে তাকায়।
– আমি তো কিছুই দেখলাম না। আমার তো ভার্সিটি ঘোরায় হলো না। আপনি তো আমাকে একা রেখে চলে গেলেন। এখনই আবার বাড়ি। আমাকে আগে.. শাট আপ জোরের সাথে বলে উঠে সম্রাট। রাশি কেঁপে উঠে সম্রাটের এমন কথায়৷ চোখ জুড়ে ছলছল পানি চলে আসে। মুখটা মলিন হয়ে যায়। রনির রাগ হয় এবার৷ রাশির কান্নারত মুখ দেখে রনির ভীষণ খারাপ লাগছে।
— আর একটাও কথা বলবে না। এখনই বাড়ি যাবে তুমি। ষ্টুপিড গার্ল।
– তুই সত্যি অনেক বেশি বলছিস সমু। রাশির সাথে এমন ভাবে কথা বলার কোনো রাইট নেই তোর। তুই আমার রাগ অযথা ওর উপর দেখাতে পারিস না। শক্ত গলায় কথা গুলো রনি।
-; এখন কি তোর থেকে শিখতে হবে আমাকে কার সাথে কিভাবে কথা বলব না বলব৷ তাছাড়া রাশির উপর আমার অধিকার আছে কি-না সেটা তোর না ভাবলেও চলবে৷ সময় কথা বলবে সাথে তোর উত্তরও পেয়ে যাবি সেদিন কথাটা বলে রাশির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় সম্রাট। রাশি অবাক হয়ে সম্রাটের মুখের দিকে তাকিয়ে সম্রাটের সাথে যায়। রনি করুণ চাহনিতে রাশির চলে যাওয়া দেখে সাথে সম্রাটের কথাটা ভাবতে থাকে৷ সম্রাট আসলে কি বলে গেলো বোঝার চেষ্টা করে।
রাশি ও সম্রাটের কথার মানে বুঝতে পারে না৷ তাই ভীষণ রকম কৌতুহল তার মাঝে।
— সন্ধ্যার পরে। রাশি মন খারাপ দাঁড়িয়ে আছে ছাদে৷ সম্রাটের ওইরকম বিহেভে রাশি অনেক কষ্ট পেয়েছে৷ এরপর বাড়ি এসেও অনেক কথা শুনিয়েছে রাশিকে। তাকে গায়ে পড়া মেয়ে বলেছে। এটা রাশি কোনো ভাবে মানতে পারে না৷ রাশি বেশি কথা বলে। সবার সাথে মিলেমিশে থাকে। তার মানে এই নয় সে গায়ে পড়া মেয়ে। সম্রাটের কথায় রাশি ইচ্ছে করলে অনেক কিছু বলতে পারতো৷ কিন্তু ওই কথাটা শোনার রাশির একটুও ইচ্ছে করেনি সম্রাটের সাথে কথা বলার৷ সম্রাট রাশিকে বাড়ি দিয়ে বেরিয়ে গেছে আবার সাথে সাথে। রিনা খান অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলো কি হয়েছে৷ সম্রাট কেনো রাশির সাথে এমন আচরণ করছে? কিন্তু কেউ ই কিছু বলে না তাকে৷ রাশি মন খারাপ করে ঘরে চলে এসেছে আর সম্রাট বেরিয়ে গেছে।
–‘ সন্ধ্যাতারার দিকে স্থীর দৃষ্টি রাশির। কোনো ভাবে সকালের বিষয় টা মাথা থেকে নামাতে পারছে না৷ সম্রাটের উপর তার অভিমান ক্রমশ বেড়ে চলেছে। রিনা খান বেশ কয়েকবার রাশিকে ডেকে গিয়েছে সন্ধ্যায় নাস্তা করার জন্য। রাশি ততবারই ফিরিয়ে দিয়েছে তাকে। রিনা খান বুঝতে পারে না হঠাৎ কি হলো তাদের মধ্যে। কিছু জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে যাচ্ছে৷ এতে রিনা খান ভীষণ আপসেট হয়ে আছে।
– সম্রাট আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে। সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকায় সন্ধ্যার পরেই ফিরে আসে। তাছাড়া সম্রাটেরও ভালো লাগে না রাশির সাথে ওই রকম বিহেভ করার পর। সত্যি একটু বেশি হয়ে গেছে সব কিছু এইটা সম্রাট পরে রিয়েলাইজ করতে পারে৷ আসলে ওইসময় সম্রাটের ভীষণ রাগ উঠে গিয়েছিলো রনিকে রাশির সাথে দেখে৷ তাই আর নিজেকে সামলাতে পারেনি।
— সম্রাট বাড়িতে ঢুকতে দেখে রিনা খান মুখটা মলিন করে সোফায় বসে আছে। রিনা খানকে এমন ভাবে দেখে সম্রাটের খটকা লাগে একটু। সাথে ভ্রু কুচকেও আসে। সম্রাট আস্তে আস্তে তার মায়ের দিকে এগিয়ে যায়৷ সম্রাট কে দেখে রিনা খানের মুখশ্রীটা আরো গুরুগম্ভীর হয়ে উঠে।
— সম্রাট আশেপাশে তাকিয়ে রাশিকে খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু কোথাও নেই রাশি। রিনা খান একা বসে এই সময়ে এইটাএকটু না, অনেকটা ভাবাচ্ছে সম্রাটকে। কারণ রাশি আসার পর থেকে রিনা খান সব সময় গল্প করছে, আড্ডা দিচ্ছে রাশির সাথে অবসর সময়ে। আজ রাশি নেই। তার মা একা বসে৷ সম্রাটের মনে একটা সন্দেহ বাসা বুনে৷ তাহলে কি রাশি তার উপর রাগ করেছে৷ তার কথা গুলো সত্যি রাশির খারাপ লেগেছে?
–‘কি হয়েছে মা? তুমি এমন ভাবে বসে আছো কেনো? রাশি কোথায়?
– রিনা খান কোনো জবাব দেয়না সম্রাটের কথায়৷ বরং মুখটা আরো মলিন করে রাগী ভাব নিয়ে আসে৷
– কি হয়েছে বলবে তো? এমন ভাবে থাকলে আমি বুঝব কি করে মা? হতাশ কন্ঠে বলে উঠে এবার সম্রাট।
— তুই রাশির সাথে কি করেছিস সমু? মেয়েটা সারাদিন মন খারাপ করে আছে। তুই বাড়ি এসেও ওকে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে গেছিস । কেনো করেছিস এমনটা ওর সাথে? তুই জানিস ও খুবই কোমল মনের একটা মেয়ে। যদি কোনো ভুল করেও থাকে সেটা ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলতে পারতি নাহলে আমাকে বলতিস৷ আমি ওকে বুঝাইতাম। তুই ওর সাথে এটা ঠিক করিস নি সমু৷ মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমারই ভুল হয়েছে ওকে এখানে জোর করে রাখা৷ তোর এত সমস্যা হবে আগে জানলে কখনোই ওকে জোর করতাম না এখানে থাকার জন্য।
– মায়ের কথায় সম্রাটের অনেক খারাপ লাগে। ব্যথিত চোখে তাকায় মায়ের দিকে।
– দুপুরে ঠিক মতো খায়নি মেয়েটা। সন্ধ্যা থেকে ছাদে গিয়ে বসে আছে৷ এত হাসিখুশি একটা মেয়ে তোর জন্য এমন হয়ে গেছে৷ আমি কালই ওর বাড়িতে ফোন করে জানাবো ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি চাইনা আমার এখানে থেকে রাশি কষ্ট পাক। তুই ভালো থাকবি তো রাশি না থাকলে? সেটাই হোক। অনেক বড় মুখ করে বলেছিলাম ওর মাকে, যে তোর মেয়েকে আমি আগলে আগলে রাখবো সব সময়। কিন্তু আমি পারলাম না আমার কথা রাখতে। কয়েকদিনের মাথায় এসে মেয়েটা দুঃখ পেলো এখানে থেকে। কথাটা বলতেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে রিনা খানের৷
— নিজেকে বড় অপরাধী লাগছে সম্রাটের। সত্যি তো রাশি তার জন্য কষ্ট পেয়েছে। রাশিকে বকার অধিকার তো তার নেই। কিন্তু রনির সাথে দেখার পর নিজেকে সামলাতে পারলো না কেনো সমু? কেনো এত রেগে গেলো এই প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই আপাতত।
–” রাশি কোথায়? নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে সম্রাট। সম্রাটের কথায় রিনা খান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ছাদে আছে হয়তো।
– সম্রাট আর দেরি না করে ছাদের দিকে অগ্রসর হয়।
– রাশি ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে মুখ করে। ঠান্ডা বাতাস বয়ছে চারিদিকে। সে বাতাসে রাশির খোলা চুলগুলো হেলেদুলে উড়ছে।
— সম্রাট ছাদের দরজার কাছে এসে থেমে যায়। রাশিকে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটা তপ্তশ্বাস ছাড়ে৷ এরপর এগিয়ে যায় রাশির দিকে।
– সম্রাট গিয়ে রাশির পাশে দাঁড়ায়। কারো আভাস পেয়ে রাশি আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশে রাখতেই সম্রাটকে দেখতে পাই৷ সম্রাট দেখে একটুও অবাক হয়নি রাশি আর না কোনো রিয়াকশন দেখা দেয়। সম্রাটের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। এরপর সেখান থেকে চলে আসার জন্য উদ্যোগ নিবে এমন সময় রাশির হাত টেনে ধরে সম্রাট। হঠাৎ হাত ধরায় চমকানো চোখে তাকায় রাশি কৌতুহলে ভরা চাহনি নিয়ে। সম্রাট করুণ চাহনিতে তাকিয়ে আছে রাশির দিকে। মুখে তার ভীষণ ভাবে মায়া কাজ করছে৷ রাশি বুঝতে পারছে সম্রাটের চোখ মুখ কিছু একটা বলতে চাইছে। ভীষণ ভাবে অনুতপ্ত হয়ে আছে তারা। এরপরও রাশি যেনো বুঝতে চাইনা এতকিছু।
– রাশি এবার হাতের দিকে তাকায় তার৷ যেটা সম্রাট শক্ত করে ধরে আছে৷ রাশির তাকানো দেখে সম্রাট সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় অপরাধীর ন্যায় মুখ করে।
– সরি! আমি আসলে.. সম্রাটের কথা শেষ হওয়ার আগেই রাশি বলে, কিছু বলবেন?
– রাশির দৃঢ় কন্ঠের কথায় কোমল চোখে তাকায় সম্রাট।
– আইম সরি রাশি। আমার এমন করা ঠিক হয়নি তোমার সাথে। সত্যি বলতে ওই সময়টা এত রাগ হয়ে গিয়েছিলো যে, আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি৷ তোমার সাথে মিসবিহেভ করে ফেলেছি। মাথা নিচু করে অপরাধী কন্ঠে বলে সম্রাট।
– ইটস ওকে, নরম স্বরে কথাটা বলে রাশি আবার চলে যেতে নেয়৷ তখন সম্রাট আবার পেছন থেকে বলে, আমাকে কি মাফ করা যায়না একবার? সম্রাটের এমন কথায় রাশি সম্রাটের দিকে ফিরে মুচকি হেসে বলে, আমার মতো গায়ে পড়া একটা মেয়ের কাছে ক্ষমা না চাইলেও চলবে আপনার। তাছাড়া আপনি তো ঠিকই বলেছেন৷ আমি সত্যি ভীষণ রকম গায়ে পড়া মেয়ে। অনেক বকবক করি। কিন্তু একটা কথা কি জানেন? আমি হাসতে ভালোবাসি, মিশতে ভালোবাসি৷ সবাইকে নিয়ে আনন্দে থাকতে পছন্দ করি। আর এর জন্য যদি আমি গায়ে পড়া মেয়ে হয়ে যায় তো ওকে। এতে আমার কোনো আফসোস নেই। কথাটা বলে রাশি ছুটে নিচে নেমে যায়। সম্রাট আহত চোখে তাকিয়ে থাকে। তার বলা কথাটা যে খুব বাজে ভাবে রাশিকে এফেক্ট করেছে এটা এখন সম্রাট অনেক ভালো করে বুঝতে পারছে।
— রাতে ডিনার শেষ করে ঘরে আসে রাশি৷ আজ খাওয়ার সময় একটাও কথা বলেনি সে। সম্রাট বারবার তাকিয়েছে রাশির দিকে। কিন্তু রাশি মাথা নিচু খেয়ে চলে গেছে৷ সম্রাট এতে আপসেট হয়। রাশির এমন চুপচাপ থাকা কোনো ভাবে মানতে পারছে না যেনো৷ রিনা খানও সম্রাটের সাথে তেমন ভাবে কথা বলে না৷ সবাই তার উপর খুব অভিমান করে আছে।
–‘ রাশি বিসানার উপর বসে ফোন হাতে নিয়ে এফবি স্ক্রল করতে থাকে৷ বেশ কিছুখন বাদে একটা আইডি তার সামনে আসে। আইডিতে থাকা মানুষ’টার ছবি দেখে রাশি নড়েচড়ে উঠে একটু। সাথে মনটা ভালো লাগায় ছেয়ে যায় খানিকের জন্য,
–‘ চলবে…