মেঘপিওনের চুপকথা পর্ব-০৫

0
276

#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“৫ম পর্ব”

–” রাশি তার ফোন স্ক্রিনে থাকা ছবিটা দেখে চমকে উঠে সাথে তার চোখ দুটো চকচক করে উঠে। রনির এফবি আইডি এইভাবে তার সামনে এসে যাবে ভাবেনি। সম্রাট রনির সাথে বাজে ব্যবহার করেছে তাও কারণ ছাড়া। আর সেটা তার জন্যই৷ এমনটা মনে করে রাশি৷ যার জন্য আরো বেশি মন খারাপ হয় রাশির। রাশি রনির আইডির মধ্যে গিয়ে দেখে সেটা লক করা। রাশি দোটানায় পড়ে যায় কি করবে। রনিকে এসএমএস দিবে! নাকি দেবে না। রনিকে একটা সরি বলা দরকার সম্রাটের বিহেভের জন্য। তাছাড়া সম্রাট আর রনির সম্পর্ক টা এমন কেনো সেটাও জানতে হবে। রাশির মধ্যে অনেক আগ্রহ সাথে ভীষণ কৌতুহল। রাশি আর ভাবনা চিন্তা না করে রনিকে মেসেজ করে সালাম দিয়ে। কিছু সময় পার হয়ে যায় তাও কোনো রিপ্লাই আসে না। রাশি অপেক্ষা করছে রনির রিপ্লাই এর। ফোন হাতে নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে৷ বেশ কিছু সময় পার হওয়ার পরও যখন কোনো রিপ্লাই আসে না৷ রাশি হতাশ হয়। মন খারাপ করে ফোন টা বালিশের পাশে রেখে শুয়ে পড়ে। তখনই ফোনে নোটিফিকেশনের শব্দে ফোনটা টুং করে উঠে। ওই শব্দের সাথে রাশির মনটাও যেনো কম্পিত হয়ে উঠে। সাথে সাথে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রনির রিপ্লাই। রাশির মুখে হাসি যেনো ধরে না। মনে প্রশান্তির অনুভব।

–‘ হেই রাশি! কি খবর? আমি তো ভাবতে পারছি না তুমি আমাকে মেসেজ দিয়েছো৷ আমি তোমার কথা ভাবছিলাম আর তুমি আমাকে মেসেজ দিয়েছো। আমার যে কি পরিমাণ খুশি লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না৷ রনির থেকে এমন মেসেজ আসে। রাশিকে চিনতে একটু অসুবিধা হয়না রনির৷ কারণ রাশিরও ছবি দেওয়া আছে তার আইডিতে। রনির এমন মেসেজ দেখে রাশি মুচকি হাসে৷

— কেমন আছেন? রাশি বলে। রনি রিপ্লাই দেই। বেশ কিছুখন চলে কৌশল বিনিময়। এরপর রনি জিজ্ঞেস করে তার এফবি একাউন্ট কোথায় পেলো। রাশিও জবাব দেয় এফবি স্ক্রল করতে করতে সামনে এসেছিলো।

– সরি! হঠাৎ করে রাশি বলে উঠে রনিকে। রাশির সরি বলার কারণ বুঝতে পারে না রনি। তাই জিজ্ঞেস করে সরি কেনো?
– ভার্সিটিতে আমার জন্য আপনাকে বাজে কথা শুনতে হয়েছিলো সমু ভাইয়ার থেকে। উনি এমন কেনো করলো আপনার সাথে বুঝলাম না৷ তবে সত্যি অনেক খারাপ লেগেছিলো। আমার জন্য তো আপনাকে এতগুলো কথা শোনা লাগলো মন খারাপ করে বলে রাশি।
– আরে না। তুমি শুধু শুধু মন খারাপ করছো। তাছাড়া সমু আমার উপর আগে থেকে রেগে আছে বরং আমার জন্য ও তোমার সাথে বাজে বিহেভ করেছে। তার জন্য আমি সরি। রনি বলে।
– কেনো রেগে আছে আপনার উপর? কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে রাশি। রনি বলে, পরে একদিন বলবে সব৷

– আচ্ছা আমার বন্ধু হতে এখনো আপত্তি আছে এই কিউট মেয়েটার? হঠাৎ এমন মেসেজ দিয়ে বসে রনি৷ রাশি এইটা দেখে একটু নড়েচড়ে উঠে। আবার দোটানায় পড়ে যায়। কি বলবে ভাবতে থাকে। রাশির দিক থেকে কোনো উত্তর না যাওয়ায় রনির মন খারাপ হয় একটু।

– আচ্ছা বন্ধু হতে হবে না। যদি ইচ্ছে হয় এমনি কথা বলো মাঝে মাঝে৷ আমায় ফ্রেন্ড করতে তোমার আপত্তি আছে বুঝতে পারছি৷ মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করো এইটা চাইনা আমি। রনির এমন মেসেজ দেখে রাশিরও খারাপ লাগে৷ তাই আর কিছু ভাবে না।

– ওকে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড। জাস্ট ফ্রেন্ড ওকে? রাশির এই মেসেজ টা দেখার পর রনির ঠোঁটের কোণে আপনাআপনি হাসি চলে আসে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠে যেনো রনি।
– তবে সমু ভাইয়া যদি জানে তাহলে নিশ্চয় রাগারাগি করবে আবার। মন খারাপ করে বলে রাশি।
– আমাদের মাঝে সম্রাট আসলো কোথায় থেকে? রনি প্রশ্নে করে। রাশির কি জবাব দেবে বুঝে উঠে না। এরপর কথাটা এড়িয়ে যায়৷ মেসেজ চলতে থাকে অনবরত তাদের।। এইদিকে ঘুম নেই সম্রাটের চোখে। রাশি তার উপর অভিমান করে আছে কোনো ভাবে মানতে পারছে না৷ রাশির অভিমান ভাঙাবে কি করে ভাবতে থাকে।

-‘ — পরেরদিন সকালে।
–” রাশির মনটা বেশ ফুরফুরে মেজাজে। রনির সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগে তার। রাশি সিঁড়ি বেয়ে নামে আর মুচকি মুচকি হাসে রনির কথা ভেবে। সম্রাট ড্রয়িং রুমে বসা ছিলো৷ রাশি সম্রাটকে খেয়াল করেনি। কিন্তু সম্রাট ঠিকই সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাশির দিকে। হঠাৎ রাশির এমন খুশি হওয়ার কারণ বুঝে উঠে না সম্রাট। রাশির নজর যায় সম্রাটের দিকে। দেখে সম্রাট তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ রাশির মুখের হাসি মিলিয়ে যায়৷ মুখটা মলিন করে কিচেনের দিকে চলে যায় রিনা খানে কাছে।

-‘ সকালে নাস্তা করতে বসে সবাই। এর মধ্যে রাহাতের আগমন সাথে একটা মেয়েও আছে। রাহাতকে দেখে রাশি মুচকি হাসে কিন্তু মেয়েটার দিকে চোখ পড়তে ভ্রু কুচকে আসে। কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে৷ রিনা খান রাহাত আর মেয়েটা দেখা মাত্র হাসি মুখে বলে আরে রাহাত বাবা যে! তা আজ হঠাৎ সকাল সকাল। এতদিনে আন্টির কথা মনে পড়লো বুঝি? রিনা খানের কথায় রাহাত মৃদু হেসে মাথা নিচু করে।

– সামিরা কেমন আছো? কতদিন পর দেখা আবার৷ এই ছেলেটা তো আসেই না সাথে তোমাকেও দেখিনা অনেক দিন। সম্রাট বেশ সাবলীল ভাবে খেয়ে যাচ্ছে৷ আর রাশি কৌতুহলে ভরা চাহনিতে তাকিয়ে আছে খাওয়া বাদ দিয়ে।
– বসো! নাস্তা করবে তো। আমি কিন্তু না শুনবো না৷ রাহাত সামিরা কিছু বলার আগেই রিনা খান বলে। রাহাত আর সামিরা কিছু বলতে পারে না৷ তারাও বসে যায় নাস্তা করার জন্য।
– রাশি এটা সম্রাটের ফ্রেন্ড রাহাত আর এটা ওর হবু বউ সামিরা। রাশি এতখনে বুঝতে পারে এটা রাহাতের গার্লফ্রেন্ড। মুখশ্রী স্বাভাবিক হয়ে আসে ততখনে এরপর আবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
– হাই রাশি! সামিরা বলে। রাশিও হাসি মুখে হ্যালো বলে।
রাহাত সম্রাটের দিকে তাকালে সম্রাট ইশারা করে এতে রাহাতও চোখ দিয়ে ইশারা করে আশ্বস্ত করে।

–‘ রাহাত গলাটা পরিষ্কার করে বলে, রাশি আমরা আজ ঘুরতে যাবো সবাই মিলে। সামিরাও অনেক দিন থেকে বাইরে যেতে চাচ্ছে৷ সময় হয়ে উঠছে না কারোই-ই। তাই ভাবলাম তুমি আছো যখন তোমাকে নিয়ে ঘুরে আসি সবাই মিলে একবার। তোমারও ঘোরা হয়ে যাবে সাথে আমাদেরও।

— রাহাতের কথা শেষ হতেই রিনা খান খুশিতে আটখানা হয়ে বলে, খুব ভালো আইডিয়া। মেয়েটা এসে পর্যন্ত ঘরে বসে আছে। এইভাবে সারাদিন বাড়ি বসে থাকলে ভালো লাগে কারো৷ সমুটাকে বলেছিলাম রাশিকে নিয়ে বাইরে যেতে কিন্তু.. বাকিটা আর না বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তিনি।

– চিন্তা করবেন না আন্টি আমরা আছি তো। আজ আমরা সবাই মিলে বাইরে যাবো আর দুপুরের খাবারটা বাইরেই খাবো।
– সম্রাট রাশির দিকে তাকায় আড় চোখে। কিন্তু রাশি বেশ স্বাভাবিক এখনো। বাইরে যাওয়ার জন্য কোনো উত্তেজনা যেনো তার মধ্যে নেই। অথচ কাল ভার্সিটি যাওয়ার জন্য কত এক্সাইটেড ছিলো৷ সম্রাট একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে হতাশার।

— কি রাশি যাবে না আমাদের সাথে? সামিরার কথায় রাশি মুখের খাবারটা তাড়াতাড়ি শেষ করে বলে, এমা যাবো না কেনো? তোমাদের সমস্যা না থাকলে আমারও নেই। তাছাড়া আমি ঢাকা শহরে এই প্রথম আসছি। অনেক কিছু দেখার ইচ্ছে আছে হাসি মুখে বলে রাশি। রাহাত আর সামিরা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে। সম্রাটও প্রাপ্তির হাসি দেয় একটা।

— এরপর রাশিকে রেডি হতে বলে সামিরা। রাশি এখনো জানে না যে সম্রাটও যাবে তাদের সাথে। রাশি ভেবেছিলো রাহাত সামিরা আর সে যাচ্ছে। পরে রেডি হয়ে এসে দেখে সম্রাট গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরে। রাহাত আর সামিরা যাবে রাহাতের গাড়িতে আর সম্রাট রাশি এক গাড়িতে।
– সম্রাট কে দেখে রাশি ভ্রু কুচকে বলে উনি ও কি যাচ্ছে আমাদের সাথে? রাশির কথায় রাহাত মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললে রাশি মুখ দিয়ে ওহ শব্দ করে থেমে যায়।
– রাশি রাহাতের গাড়ির দিকে এগুতে গেলে সম্রাট দৃঢ় কন্ঠে বলে আমার গাড়িতে উঠো। সম্রাটের কথায় রাশি বড় বড় চোখে তাকায়।
– রাহাত আর সামিরা তাদের গাড়ির দিকে যায়। তখনই রাশি জোরের সাথে বলে উঠে, আমিও যাবে তোমাদের সাথে। সবাই মিলে একসাথে না গেলে মজা লাগবে না।

– যা মজা করার ওইখানে গিয়ে করো। এখন গাড়িতে উঠো যাও। বেশ শান্ত কন্ঠে শাসনের সুরে বলে সম্রাট। রাশি আর কিছু বলার সাহস পাইনা৷ মুখটা গোমড়া করে সম্রাটের গাড়িতে উঠে বসে। এরপর সবাই বেরিয়ে যায়।

–” সবাই মিলে একটা পার্কে যায় প্রথমে। সেখানে থেকে যাদুঘর ঘুরে দুপুর হয়ে যায়। একটা রেস্টুরেন্টে তারা দুপুরের খাবার সেরে আবার রওয়ানা দেয় অন্য জায়গা যাওয়ার জন্য। এর মধ্যে সম্রাট অনেকবার চেষ্টা করেছে রাশির সাথে কথা বলার। কিন্তু রাশি সে সুযোগ দেয়নি সম্রাটকে৷ সব সময় দূরে সরে থেকেছে৷ সামিরা আর রাহাতের সাথে চিপকে থেকেছে৷ সম্রাট বেশ হতাশ হয় রাশির কাজে।

–” এরপর সবাই ঢাকা মিরপুরে লেভারল্যান্ড বলে একটা পার্কে যায়। সম্রাট মনস্থির করে রাশির সাথে সব ভুলবোঝাবুঝি মান অভিমান এখানেই শেষ করে নেবে। সম্রাট রাহাত আর সামিরাকে ইশারা করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। সম্রাটের কথা মতো ওরা অন্য দিকে যায়৷ রাশি তখন ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলো। যার ফলে রাহাত সামিরা কোনদিকে যায় লক্ষ্য করে না। সম্রাট ধীর চাহনিতে রাশির দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা নিয়ে।
–” রাশি ছবি তোলা শেষ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে রাহাত সামিরা নেই৷ একটু দূরে সম্রাট দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে। সম্রাট কে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাশি মাথা নিচু করে এদিকে ওদিক তাকায়।
– যা বাবা ওরা আবার গেলো কোথায় আমাকে এই রাক্ষসটার কাছে রেখে৷ মনে মনে বলে রাশির। ততখনে সম্রাট রাশির কাছে চলে এসেছে। সম্রাটকে তার সামনে দেখে চমকানো চোখে তাকায়।

— সম্রাট রাশির দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে৷ এতে রাশির ভীষণ রকম অস্বস্তি হচ্ছে। সামনে আসা ছোট চুলগুলো বারবার কানের পিঠে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করছে।

– সম্রাট রাশিকে অবাক করে দিয়ে অনেক গুলো লাল গোলাপ রাশির সাথে ধরে বলে, সরি রাশি। প্লিজ আর রাগ থেকো না আমার উপরে। আমি ভুল করেছি৷ তার জন্য সত্যি আমি অনুতপ্ত ভীষণ। তোমার চুপ থাকা, কথা না বলা আমাকে এড়িয়ে চলা ভীষণ ভাবে পোড়াচ্ছে আমাকে। আমি সহ্য করতে পারছি না সেটা। আমি আর কখনো তোমাকে বকব না৷ কিছু বলব না। এবারের মতো মাফ করে দাও প্লিজ। অনুনয় করে বলে সম্রাট। রাশির তো কোঠর থেকে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। এ যেনো এক নতুন সম্রাট কে দেখছে। রাগী মুডি সম্রাট একদম নেই এখন।

-” সম্রাট আশাবাদী হয়ে তাকিয়ে আছে রাশির দিকে।
— রাশি ভাবছে কি করবে৷ তারও ভালো লাগছে না এইভাবে চুপচাপ থাকতে। এটা তো রাশির কর্ম নয়। বকবক না করলে, ছটফটিয়ে না চললে রাশির পরিচয় থাকে নাকি? রাশি গলাটা ঝেড়ে নিয়ে বলে সত্যি আর কখনো রাগ করবেন না তো আমার উপর? আমাকে বকাবকি করবেন না?
– রাশির কথায় সম্রাটের মুখশ্রী উজ্জ্বল হয়ে উঠে। দুদিকে মাথা হেলিয়ে বলে একদম বকব না আর। রাশি হাসি মুখে বলে তাহলে ভাব করুন৷ রাশির কথাটা সম্রাট বুঝতে পারে না। তাই ভ্রু কুচকে তাকায়। রাশি এক হাত উপরে তুলে বলে আরে হাইফাই করুন। তাহলে ভাব হয়ে যাবে৷ রাশির এমন বাচ্চামো কথায় সম্রাট ফিক করে হেসে দিয়ে সম্রাটও হাত বাড়িয়ে দেয়। দূর থেকে রাহাত সামিরা সব দেখে মুচকি হাসে।

– যাক বাবা আমাদের প্ল্যান সফল হয়েছে অবশেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে রাহাত। আচ্ছা সমু ভাইয়া কি রাশিকে ভালবাসে? সামিরা কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে। সামিরার কথায় রাহাত মুচকি হেসে বলে আমার বন্ধু ফাঁসগিয়া সামু। রাহাতের কথায় সামিরাও হেসে উঠে।

–‘ রাশি একটা কথা বলব রাখবে? সম্রাটের কথায় রাশি ছোট ছোট চোখে কৌতুহল নিয়ে বলে জ্বি বলুন।

– তুমি কখনো রনির সাথে কথা বলবে না। জানি না তোমাদের আর দেখা হবে কি-না। তবে যদি হয়ও আর ও যদি তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে আবার। প্লিজ তুমি ওকে ইগ্নোর করবা। ও ভালো ছেলে নয়। আমি চাইনা তুমি ওর আশেপাশে থাকো। কথা দাও আমাকে আমার কথাটা রাখবে।
– সম্রাটের কথায় রাশি চমকে উঠে। ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকিয়ে বলে, কিন্তু।
– এখানে কোনো কিন্তু নয় রাশি। তুমি রনির সাথে কোনো রকম কথা বা যোগাযোগ করবে না ব্যাস।

– রাশি পড়েছে বিশাল ঝামেলায়। কি করবে এখন সে৷ গতরাতেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সে রনির দিকে। আর আজই সেটা ভুলে যাবে। তাছাড়া রনি তো অনেক ভালো। রাশির বেশ ভালোই লেগেছে৷ কিন্তু সম্রাটকে কি বলবে সেটা বুঝে উঠছে না রাশি।

– সম্রাট এখনো অপেক্ষা করছে রাশির উত্তর পাওয়ার জন্য। এর মধ্যে রাহাত সামিরা হাজির হয়।
– কি রে হয়েছে তোদের কথা। চল এবার বের হয় এখানে থেকে। একটু পর সন্ধ্যা হয়ে যাবে৷ আমাকে তো আবার সামিরাকে পৌছে দিতে হবে ওর বাসায়।।রাহাতের কথায় রাশি যেনো সুযোগ পাই। তাই সে অনেকটা আগ্রহ দেখিয়ে বলে হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়া চলুন ফিরে যায় আমরা। অনেক তো হলো ঘোরাঘুরি। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে৷ এবার বাড়ি ফেরা দরকার।
– সম্রাট আর কিছু বলে না রাশিকে। সামনে এগিয়ে যায়।
– রাশি আর সামিরা কথা বলতে বলতে আসে। রাহাত মাঝে সম্রাট আগে।
– অনেক ধন্যবাদ সামিরা। আজকের দিনটা আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য হাসি মুখে বলে রাশির। সামিরাও মুচকি হেসে বলে আমার কোনো অবদান নেই এতে। এইসব কিছু সমু ভাইয়ার প্ল্যান। তোমার যাতে অস্বস্তি না হয় একা, তার জন্য ভাইয়া রাহাতকে বলে আমাকেও সাথে নিয়ে আসার জন্য। সামিরার কথায় রাশি অবাক হয়ে যায়। সম্রাট তার জন্য এতকিছু ভেবেছে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না রাশি। সম্রাটের প্রতি ভালো লাগাটা আরেক ধাপ এগিয়ে যায় রাশির৷ মুগ্ধতায় ছেয়ে যায় মুহূর্তটা।
–” আবার দেখা হবে হয়তো আমাদের। তুমি অনেক ভালো কিন্তু দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে রাশি। রাশির কথায় সামিরা মুখের হাসিটা চওড়া করে বলে তুমিও অনেক ভালো আর মিষ্টি একটা মেয়ে। খুব সহযে মানুষকে আপন করে নিতে পারো। তবে আমাদের হয়তো খুব শীগ্রই আবার দেখা হবে। তুমি তো এডমিশন পরিক্ষা দিয়েছো৷ আমিও দিয়েছি। অপেক্ষায় আছি ফলাফলের। যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে দুজনেই বুয়েটে চান্স পেতে পারি। সামিরার কথায় রাশি উল্লাসীত কন্ঠে বলে রিয়েলি? তুমি আর আমি সেম ইয়ার তার মানে। যাক একজন বন্ধু তো পেলাম অবশেষে। সামিরা মুচকি হেসে উঠে এরপর দুজনে সামনে এগিয়ে যায় গল্প করতে করতে।

– এইভাবে কেটে যায় দুইমাস। রাশি আর সামিরা দুজনেই বুয়েটে চান্স পেয়েছে। তাদের ক্লাসও শুরু হয়েছে সপ্তাহ খানিক আগে। কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হওয়াতে সবাই অনেক খুশি। রাশির খুশি তো ধরে না। সেদিনের পর থেকে রাশির সাথে আর কোনো বাজে বিহেভ করেনি সম্রাট। তাদের সম্পর্কটা বেশ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। রিনা খান তো এতে অত্যন্ত খুশি যে রাশি এখানে মানিয়ে নিয়ে অনেক ভালো আছে তাই। রাশির আর রনির বন্ধুত্ব টা আরো মজবুত হতে থাকে দিন দিন। যদিও সম্রাট এখনো কিছু জানে না এই ব্যাপারে? তবে রাশির উপর সব সময়ই নজর রাখে সম্রাট। সামিরা আর রাশি দুজন দুজনের খুবই ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে৷ এক কথায় বেস্ট ফ্রেন্ড যাকে বলে।

— রাশির প্রতি রনির কেয়ার, আগ্রহ, মায়া দিন দিন বাড়তে আছে। রনি যে প্রথম দেখায় রাশিকে ভালোবেসে ফেলেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে রাশির দিক থেকে শুধুই বন্ধুত্ব ওদের। এর বেশি রাশি কখনো ভাবিনি। রাশি এতদিনে জেনে গেছে রনি আর সম্রাটের সম্পর্কটা কেমন। তাই রাশি সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে যদি সম্রাট কখনো যানে তার রনির সাথে কন্ট্রাক্ট আছে তাহলে না জানি কি করে তার সাথে। রাশির আগেই রনিকে সাবধান করে দিয়েছে। সে যেনো ভুলেও সম্রাটের সামনে কথা বলতে না আসে। সম্রাট যেনো কখনোই কিছু না বুঝে। রনিও সেটা মেনে নিয়েছে। কারণ সে চাইনা রাশির কোনো ধরনের সমস্যা হোক তার জন্য।

— রাশি রেডি হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটি আসে। আজ সম্রাট আগেই চলে গেছে। তার একটা জরুরি কাজ থাকাই সকাল সকাল বেরিয়ে যায়। রাশিকে আজ একাই যেতে বলেছে কলেজে।
– সামিরা আর রাশি কলেজে গিয়ে একত্রিত হয়।
– রাশির কলেজের গেট পার হতেই সামনে রনিকে দেখতে পাই। রাশিকে দেখা মাত্র রনির মুখে হাসি ফুটে উঠে। রাশিও একটা হাসি উপহার দেই রনির হাসির বিপরীতে। দূর থেকে এইসব কিছুই সম্রাট দেখতে ছিলো। রাশি জানতো না এখানে সম্রাটও আছে।
– রনি ইশারায় হাই দিলে রাশিও তার সাড়া দেয়।
– সম্রাট এইসব দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আসে। হাতের মুঠো আপনাআপনি শক্ত হয়ে আসে।

– চলবে…