মেঘবিলাসী পর্ব-৩৪

0
660

#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_34

হঠাৎ সেদিন খুব সকালে তিন্নি জিসানের বাসা থেকে চলে আসায় তিন্নির বাবা মা ভীষণ চিন্তায় পড়ে যান।তারাতো মেয়েকে রেখে এসেছে জিসানের খেয়াল রাখার জন্য আর দুজনে একান্ত সময় কাটাতে পারবে বলে।কিন্তু এতো সকালে মেয়েকে একা দেখে তারা চিন্তায় পরে জন।তিন্নির চোখ গুলোও ফোলা ছিলো।দেখেই বোজা যাচ্ছে সারা রাত ঘুমায়নি।তিন্নিকে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই সে তার রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।তিনি জানে তার জেদি মেয়েকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর দিবে না।মন শান্ত হলে ঠিক নিজের বাবার কাছে চলে যাবে।

এই কয়দিন তিন্নি ঠিক মত ঘুমাতে পারেনি।তার অতীত থেকে সে অনেক আগেই বেরিয়েছে।তবুও ক্ষতটা বার বার তাজা হয়ে যায়।আচ্ছা মানুষ নাকি চাইলে সব পারে? তাহলে তিন্নিও তার সেই অতীতটা মুছে দিতো।

রাতে খাবার শেষে তিন্নি গেলো তার বাবার রুমে।আজ তার বাবাকে খুব প্রয়োজন।সে যেই দ্বিধার মধ্যে আছে,একমাত্র তার বাবাই তার সমাধান দিতে পারবে।রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলো তার বাবা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছেন।এটা তার পুরনো সভ্যাব।রাতে বাবার চা লাগবেই।

আনিসুর রহমান এতক্ষণ মেয়ের চিন্তাই করছিলেন।কিছুদিন যাবত মেয়েটাকে বিষণ্ণ লাগছে।জিসানের সাথে তার কিছু একটা জামেলা চলছে সেটা বুঝতে পারছে।কিছু ভেবে পিছনে ফিরতেই দেখতে পেলো তিন্নি বারান্দার দরজায় দাড়িয়ে আছে।মেয়েকে দেখে তিনি মিষ্টি হেসে পাশে বসতে ইশারা করলেন।

তিন্নিও বাধ্য মেয়ের মতো বাবার পাশে বসে পড়লো।আনিসুর রহমান হেসে বললেন

-“মা জানো, যখন প্রথম শুনলাম তুমি দুনিয়াতে আসবে তখন আমি আল্লাহর কাছে একটা মেয়ে চেয়েছি।তোমাকে যখন প্রথম কোলে দিলো আমি তোমাকে দেখে কেঁদে দিয়েছিলাম। তুমি বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলে।সেদিন আমি বুঝতে পেরেছি আমার জীবনের সব সুখ তোমার মধ্যে।ছোট বেলায় তুমি যখন কাদতে আমি অস্থির হয়ে যেতাম।মনে আছে তুমি একবার সাইকেল চালাতে যেয়ে পরে অনেক ব্যাথা পেয়েছিলে।আমি সেই দিনই ওই সাইকেল ভেঙে দিয়েছি।আমার রাজকন্যাকে কষ্ট দেয় এমন জিনিস আমি তোমার কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি।তবে আমার বিশ্বাস তোমার পাশে এখন যেই মানুষটা আছে সে কখনো তোমাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে কষ্ট দিবেনা।আমিকি ভুল বলছি মা?”

এতক্ষণ তিন্নি চুপ করে বাবার কথা শুনছিল।আর তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছিলো।বাবার কাছে কখনো তাকে কোনো কিছু ব্যাখ্যা করতে হয়নি। তিনি মেয়ের মুখ দেখেই সব বুঝতে পারে।তিন্নির তো মনে হয় তার বাবার নিশ্চয়ই কোনো অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।তিন্নি বাবার কাধে মাথা রাখলো আর বলতে শুরু করলো

-“পাপা আমার সাথে এমন কেনো হচ্ছে।সব কিছু এলোমেলো লাগছে।জানো পাপা,প্রথম যখন তুমি আমাকে বিয়ের কথা বললে আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম।কারণ আমি আমার লাইফে কাউকে চাইনি।যেখানে আমি নিজে অন্ধকারে ডুবে আছি সেখানে অন্য কাউকে আমি টেনে নিয়ে আসতে চাইনি।জানো পাপা মানুষটাকে বিয়ের পর থেকে আমি ইগনোর করে এসেছি।না আমি তার মায়ায় পড়তে চেয়েছি। আর না তাকে আমার মায়ায় জড়াতে চেয়েছি।তুমি জানো পাপা তাকে একবার দেখার পর থেকে আমি আর তার দিকে তাকাতাম না।আমার ভীষণ ভয় হতো।
জানো পাপা, আমি ভালোবাসার অনুভূতি কেমন হয় জানতামনা।কিন্তু এই মানুষটা আমাকে এতটা কেয়ার করে,আমাকে এতটা সম্মান দেয় যে আমি ধীরে ধীরে মানুষটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি।জানো পাপা,এই মানুষটা আমার প্রতিটা অবহেলা মুখ বুজে সহ্য করে গেছে।কোনো দিন আমার উপর বিরক্ত হয়নি।এই মানুষটা চোখে আমি আমার জন্য অসীম ভালোবাসা দেখতে পাই।তার এই ভালোবাসা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে।মানুষটা পরিবারহীন বড় হয়েছে।এমন একটা মানুষকে আমি দিনের পর দিন ঠকিয়ে যাচ্ছি।”

কথাটা বলে তিন্নি হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।আজ অনেক দিন পর তিন্নির বাবা মেয়েকে কাদতে দেখলো।মেয়েটা যেনো কেমন পাথর হয়ে গেছিলো।কাদুক।কেঁদে মনের সব সব দুঃখ কমিয়ে ফেলুক।আনিসুর রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।তিন্নি আবার বলতে শুরু করলো

-“আমরা সবাই মিলে মানুষটাকে ঠকাচ্ছি।সে কখনোই আমার মত মেয়ে ডিজার্ভ করে না।মানুষটার চোখের দিকে তাকালে আমার ভীষণ গিলটি ফিল হয়।আমি যত বার এই সম্পর্কটাকে নিয়ে ভাবতে চেয়েছি ততবার আমার অতীত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।আমি কি করবো পাপা?আমি ভীষণ সার্থপর।সব কিছুর পরও এই মানুষটাকে আমি সারা জীবন আমার পাশে চাই।না আমি মানুষটাকে নিজের থেকে দূরে রাখতে পারছি,আর না পারছি নিজের সাথে জড়িয়ে নিতে।আমার জন্য মানুষটা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।”

আনিসুর রহমানের দুই চোখ ভিজে উঠলো।তিনি বললেন

-“তুমি কাউকে ঠকাও নি।আমার মেয়ে কাউকে ঠকাতে পারেনা।এই সব কিছুতে যদি কেউ অপরাধী হয়ে থাকে তবে সেটা আমি।আমি তোমাকে জোর করে এই সম্পর্কে বেধে দিয়েছি।তুমি গিলটি ফিল করোনা মা।তবে আমার বিশ্বাস তোমার অতীত জিসানের মধ্যে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।তবুও আমাদের আগেই এই বিষয়টা ওকে বলা উচিত ছিলো।তুমি এখন যেই কষ্টে আছো তার একটাই সমাধান,জিসানকে সব খুলে বলো।তোমার গিলটি ফেলিং থেকে বেরিয়ে আসবে।”

তিন্নি কাপা কাপা কন্ঠে বললো

-“পাপা তার পর যদি সে আমাকে ঘৃণা করে, আমাকে যদি তার জীবন থেকে বের করে দেয়।আমি এবার আর নিজেকে সামলাতে পারবোনা।”

তিন্নির বাবা বললো
-“আগেই কিছু ভেবো না।”

-“পাপা আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে।”

-“আমার মেয়েতো ভীতু না।আমার মেয়ে অনেক সাহসী।”

তারা আরো কিছুক্ষন কথা বলে ঘুমুতে চলে গেলো।আর দরজার আড়ালে থেকে কেউ একজন চোখের পানি ঝরাতে লাগলো।
অনেক্ষন ধরে আনিসুর রহমান আর অবনী রহমান শুয়ে আছে। কারো চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ অবনী রহমান বলে উঠলেন

-“তুমি কি মেয়েটার সংসার ভেঙে ফেলতে চাইছো?”

-“মোটেও না।”

-“তাহলে মেয়েকে উল্টা পাল্টা এডভাইস কেনো দিলে।”

-“কারো কথা লুকিয়ে শুনতে নেই।”

এবার অবনী রহমান রাগে কেঁদে দিলেন।উঠে বসে চিৎকার করে বললেন

-“মেয়েকে কি তুমি শুধু একাই ভালোবাসো?আমি বাসি না?এতো কষ্টে আমার মেয়েটা স্বাভাবিক হয়েছে।বিয়ের পর আমি দেখেছি মেয়েটা অনেক হাসি খুশি থাকতে।কিন্তু তুমি মেয়েটার জীবনে আবার দুঃখ আনতে চাইছো?”

-“তোমার কি মনে হয় সত্যি কখনো লুকানো থাকে?আর মেয়েটা ভেতরে ভেতরে মরে যাচ্ছে তা কি তুমি দেখো না?তোমার জন্য জিসানকে কিছু বলতে পারিনি।”

-“তুমি প্লিজ আমার মেয়েটার সংসার ভেঙে যেতে দিও না।প্লিজ ওকে এইসব বলতে মানা করো।”

-“আমি চাই তিন্নি জিসানকে সব জানাক।তবে আমার বিশ্বাস আছে জিসানের উপর।সে কখনো আমার মেয়ের হাত ছাড়বে না।”

অবনী রহমান কাদতে কাদতে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বললেন
-“এমনটাই যেনো হয়।”
________________________
আজ সন্ধায় জিসান বাসায় চলে আসলো।কাজের ব্যস্ততায় কয়কদিন ঠিক মত ঘুম হয়নি।আসলে সবাইকে বুজিয়েছে যে কাজের চাপে সব হচ্ছে।তবে তার মন জানে কেনো সে এতটা এলোমেলো হয়েগেছে।সেই দিনের পর আর সে তিন্নির বাসায় বা কলেজ যায়নি।ভবিষ্যৎ ডক্টর মানুষকে অযথা বিরক্ত করার কোনো মানে হয়না।সে থাকুক নিজের মতো।এতো সব ভাবতে ভাবতে সে বাসার দরজা খুললো।তার জীবনটা এতটাই একাকিত্বের ঘেরা যে দিন শেষে বাসার দরজা খোলার মতো কেউ নেই।
বাসায় ঢুকেই জিসানের কেমন যেনো লাগছে।যেমনটা তিন্নি থাকলে লাগতো।মেয়েটা এই বাসা থেকে চলে যাবার পর থেকে যেনো বাসাটা আরো খালি খালি লাগে।তবে আজ সে আবার সেই গ্রান পাচ্ছে।তিন্নির গ্রান।যেই গ্রান তাকে পাগল করে তুলে।মেয়েটা চলে যেয়েও তার প্রতিটা সৃতিতে মিশে আছে।তবে এতো দিন পর আবার এই গ্রান পাওয়ার মানেটা সে বুজলনা।তবে সে যা ভাবছে ত সম্ভব না।

রুমে ঢুকে লাইট অন করে সে নিজের শার্ট খুলতে লাগলো।শার্ট খুলে সে পিছনের দিকে ছুঁড়ে মারলো।তার এখন প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে।তিন্নির সেই সুবাস এখন আরো তীব্র ভাবে পাচ্ছে।এই মেয়েটা পাশে না থেকেও তার অনুভূতি নিয়ে খেলে।মাথার চুলে হাত বুলিয়ে পিছনে ঘুরেই সে ভীষণ শকড হলো।সে কি কোনো স্বপ্ন দেখছে।তিন্নিকে সে এই মুহূর্তে মোটেও আসা করেনি।তিন্নি খাটে বসে আছে।তবে তিন্নির এই সময় এই জায়গাতে আসতে যতনা আশ্চর্য হয়েছে,তার চাইতে বেশি আশ্চর্য হয়েছে তিন্নিকে এই ভাবে দেখে।
তিন্নি জিসানের দেওয়া সেই আকাশী রঙের শাড়িটা পরে এসেছে।এই মেয়েটাকে জিসান একবার শাড়ি পরা দেখার জন্য কত আশা করেছে।তবে কখনো সে আসা পূরণ হয়নি।মূলত সে কখনো তিন্নিকে এই ইচ্ছার কথা বলে নি।সে জানতো তিন্নিকে শাড়ি পরা অবস্থায় ভীষণ ভালো লাগবে।তবে তার বউটাকে এমন শাস রুদ্য করা সুন্দর লাগবে তা ভাবতে পারেনি।

জিসান বার বার শুকনো ঢোক গিলছে।এই মেয়ে কি আমাকে দমবন্ধ করে মেরে ফেলতে চায়ছে নাকি?আচ্ছা বিয়ের পর তিন্নি কি ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছিলো?জিসানের ঠিক মনে পড়ছে না।তবে আজ তিন্নির ঠোঁটে হালকা পিংক লিপস্টিক, চোখে কাজল পড়েছে।আচ্ছা সে যদি এখন টুপ করে তিন্নির ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসে তবে কি বিষয়টা খারাপ হবে?মোটেই না।কে বলেছে এই মেয়েকে এতো আকর্ষণীয় সাজে তার সামনে আসতে।
এইযে তার পাতলা শাড়ী ভেদ করে বেলি বাটন যে জিসানের মনকে আরো অস্থির করে তুলছে, তবুও তো সে নিজেকে সংযত করে রেখেছে। তারও তো মন চাইছে একটা বার সেখানে ছুয়ে দিতে।কই সে তো তবুও ছুয়ে দেয়নি।এই যে সে মনের বিরুদ্ধে কতো শত যুদ্ধ করে যাচ্ছে সেটাকী এই মেয়েটা কখনো বুজবে?

যেখানে তার ছুয়ে দেওয়ার অধিকার নেই সেখানে তিন্নিরও এতো সেজে আসার অধিকার নেই।যতই হোক দিন শেষে সেও পুরুষ।সামনে বউ লোভনীয় কিটক্যাট চকলেট সেজে বসে আছে।আর সে কিনা স্পর্শ করেও দেখতে পারবেনা।এই মেয়েকি আবার তার ইমোশন নিয়ে খেলতে চাইছে? এবার আর সে সেই সুযোক দিবে না।

তিন্নি সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে এসেছে জিসানের বাসায়।তার কাছে এই বাসার একটা চাবি ছিলো।এই বাসাটা তার ভীষণ আপন লাগে।অনেক ভালো সময় কেটেছে তার এই বসাতে।পুরো বাসাটা অনেকটা এলোমেলো। মানুষটাকি বাসায় থাকেনা?তাহলে সব কেমন ফেকাসে লাগছে কেনো?অনেক্ষন যাবত সে বসে আছে জিসানের অপেক্ষায়।বসে বসে সে কথা গুছিয়ে নিচ্ছে।সে আজ জিসানকে সব বলতে চায়।তার পর যা হবার তাই হবে।এই মানুষটাকে আর অন্ধকারে রাখতে চায় না।

তিন্নি ভাবতে ভাবতে দেখলো রুমের লাইট জ্বলে উঠেছে।আর জিসান উল্টো দিকে ফিরে শার্ট খুলছে।তিন্নি আর কিছুই বলতে পারলো না।সে অবাক হয়ে জিসানকে দেখছে।এই কয়দিনে লোকটা কিছুটা শুকিয়ে গেছে।তার পরও এই মানুষটার সব কিছুই এতো আকর্ষণীয় কেনো?এইযে মাত্র চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।এটা যেনো তিন্নির বুকে বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ করলো।হঠাৎ তার মুখের উপর জিসানের শার্ট এসে পড়লো।সে দ্রুত তা সরিয়ে নিলো।জিসানের অবাক চোখে তার দিকে তাকানো দেখে তিন্নির ভীষণ অস্থির লাগছে।তিন্নি যে এতোখন কথা সাজিয়ে রেখে ছিলো সব যেনো এক মুহূর্তেই ভেস্তে গেলো।সে কি বলবে বুজে উঠতে পারছিলো না।সে বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে রইলো।সে কিছু বলবে তার আগেই জিসান বলে উঠলো

-“তুমি হঠাৎ এখানে?

তিন্নি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা। জিসান আবার কিছুটা ধমকের সুরে বললো

-“কি ব্যাপার,কথা বলছো না কেনো?”

তিন্নি কাপা কাপা কন্ঠে বললো

-“আ..আসলে আপনার সাথে কিছু ক…কথা ছিলো।”

জিসান এর আবার ভীষণ রাগ লাগছে।এই মেয়ে কি কিছু বাকি রেখেছে বলার?তাহলে এতো সেজে আবার তাকে দুর্বল করে এই সম্পর্ক সে চায়না বলতে এসেছে?
জিসান রেগে বললো

-“তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই।তুমি বাসায় যাও।”

তিন্নি জিসানের কথায় পাহাড় সমান অভিমান দেখতে পেলো।অভিমান হবেনা কেনো?সে তো মানুষটাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।
তিন্নি বললো

-“দেখুন আমি অনেক ভেবে কথা গুলু আপনাকে বলতে এসেছি।প্লিজ আমাকে বলতে দিন।”

জিসান রাগ আবার চূড়ান্তে পর্যে চলে গেছে।এই মেয়েকে ভেবে তার সাথে কথা বলতে হবে?আর সে শুধু কথা বলতে এসেছে?নিশ্চয়ই এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাইতে এসেছে।সে তিন্নির দুই বাহু চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে শুরু করলো

-” এই কি মনে করো নিজেকে?এতো কিসের অহংকার তোমার?আমাকে তোমার মানুষ মনে হয় না?যখন তখন আমার ইমোশন নিয়ে খেলতে চাইছো?আমার আগে পিছে কেউ নেই বলে কি ভেবেছো আমার জীবনটা নিয়ে যেই ভাবে খুশি সেই ভাবে খেলবে?তুমি কি চাও সারা জীবন আমি তোমার পিছে এমন মরিয়া হয়ে ঘুরি?

আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি বলে তোমার সব অযৌক্তিক কাজ মেনে নিবো তা কখনো না।ওই কয়টা দিন তোমার পিছনে পাগলের মত ছুটেছি।অথচ তুমি আমাকে একটা বার দেখা দাওনি।আমাকে তোমার পিছনে কুকুরের মত ঘুরাতে চাও?এতো অহংকার তোমার? তুমি কি ভেবেছো আমি শুধু তোমার রূপের পাগল হয়ে তোমার পিছে ঘুরে বেড়াবো?
বিয়ের প্রথম থেকেই তুমি আমাদের এই সম্পর্কটাকে কোনো মূল্য দাওনি।সব সময় আমাকে ইগনোর করেছো।কখনো এই সম্পর্কটাকে একটা সুযোক দাওনি।আর আমি সব বুঝেও পাগলের মত তোমার সব ইগনোর সহ্য করেছি।”

তিন্নির হাতে ভীষণ ব্যাথা পাচ্ছে।তবুও সে জিসানকে কিছুই বললো না।মানুষটা অনেক কষ্ট পেয়েছে।সে ভীষণ ভাবে মানুষটাকে আঘাত করেছে।
জিসানের দু চোখ ভিজে উঠলো।সে আবার বলতে শুরু করলো

-“কি দোষ ছিল আমার বলোতো?তোমাকে ভালোবাসাটাই কি দোষ?আমিতো কোনো দিন তোমাকে এই সম্পর্কে কোনো প্রকার জোর করিনি।আর না কখনো খারাপ ভাবে ছুয়ে দেখেছি।আমার কোনো ইচ্ছা কি তোমার উপর চাপিয়ে দিয়েছি?আমিতো তোমাকে আমার একাকিত্বের বন্ধু বানাতে চেয়েছি।একটা ছোট সংসার সাজাতে চেয়েছি।যেই সংসারটা থাকবে ভালোবাসায় পূর্ণ।
যেহেতু এমন কিছুই চাওনা তুমি তবে এ ভাবে আমার সামনে আসার মনে কি?আমিতো তোমার পিছু ছেড়েই দিয়েছি।তবে কেনো এ ভাবে আমার সামনে এসেছো?আমার দৈর্যের পরীক্ষা নিতে?তবে একটা কথা শুনে নাও।বউরে শরীর লোভে পড়ে নিজের কামনা পূরণ করার মতো পুরুষ আমি নই।তাই তুমি আমার পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ করো।”

তিন্নির দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ধরা গড়িয়ে পড়ছে।সে কাপা গলায় বললো

-“আমি আপনার কোনো পরীক্ষা নিচ্ছি না।আপনি ভুল বুঝছেন।”

জিসান রেগে তিন্নির দুই বাহুতে আরো জোরে চাপ দিয়ে বললো

-“কোনটা ভুল তিন্নি?আমার ভালোবাসাকে বুঝেও দিনের পর দিন তা এড়িয়ে চলাকে?আচ্ছা বাত দাও সব।তুমি যেমন চাও নিজের জীবন তেমন ভেবেই কাটাও।আমি কখনো বাধা দিবো না।”

-“প্লিজ একটাবার আমাকে কথা বলার সুযোগ দিন।”

তিন্নির চোখের জলে কাজল লেপ্টে যাচ্ছে।জিসানের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।তবুও আজ সে আর নিজের দুর্বলতাকে তিন্নির সামনে প্রকাশ করতে চায় না।জিসান চিৎকার করে বলে উঠলো

-“আর কিছুই শুনতে চাইনা আমি। এখনি চলে যাও।”

কথাটা বলে জিসান তিন্নিকে ছেড়ে দিলো।জিসানের চিৎকারে তিন্নি ভয় পেয়ে গেলো।এই মানুষটাকে সে কখনো এমন রূপে দেখেনি।
তিন্নি কাপা কাপা হাতে বিছানা থেকে নিজের ব্যাগটা কাধে তুলে নিলো।ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে খাটের টেবিলে রাখলো।আর বললো

-“আমি জানি অনেক কষ্ট দিয়েছি আপনাকে।তবে আমি এমন কিছুই করতে চাইনি।আজ অনেক কথাই আপনাকে বলতে চেয়েছি।তবে মুখে হয়তো বলা সম্ভব হতো না।একটু সময় করে এই কাগজটা দেখে নিবেন।আর সব কিছুর জন্য সরি।পারলে আমাকে মাফ করে দেবেন।”

তিন্নি আর কিছুই বলতে পারলো না।তার বুক ফেটে কান্না আসছে।সে বেরিয়ে আসলো জিসানের বাসা থেকে।