মেঘবৃত্ত পর্ব-৩০+৩১

0
486

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_৩০
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সময়ের আবর্তনে কেটে গেছে সম্পূর্ণ একটা সপ্তাহ! মেঘার শরীরের ঘা অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। তবে, মনের ক্ষত, মনের শূন্যতা সেই আগের মতই। তাজা, হাহাকারপূর্ন! এখনো মাঝেমধ্যে মেঘা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, আলতো হাতে পেটে হাত বুলায়। কথা বলে নিজের ‘মরে যাওয়া সন্তানের’ সাথে। বৃত্তের সাথেও আগের ন্যায় কথা বলে না। ঘরের কাজ সামলে সারাক্ষন বারান্দায় দোলনায় বসে থাকে। উদাস নয়নে চেয়ে রয় আকাশের দিকে। বৃষ্টি পড়ে, মেঘা ভিজে! রোদ হাসে, মেঘা ঝরঝরে হয়। সবই মেঘার উদাসীন থেকে উপভোগ করে। দিন যায়, মেঘার এমন নিশ্চুপতা বৃত্তকে পুড়ায়। বৃত্ত মেঘার আগেরকার চাঞ্চল্যতাকে প্রচন্ড ‘মিস’ করে। কিন্তু, মুখ ফুটে মেঘার সাথে কথা বলার সাহসটা আর হয়ে উঠে না। কি অদ্ভুত না বিষয়টা? যারা প্রায় সারাদিন একে ওপরের সাথে কথা বলায় মশগুল থাকে, যাদের সারাদিনের পুঁজি বলতে সেই আড্ডা,হাসি,মজা,মাস্তি ছিলো, আজ তারাই একে অপরের সাথে কথা বলে না। সারাটাদিন কেটে যায়, একে অপরের নীরবতায়।

আজ ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। বৃত্ত রেজাল্ট আনতে ভার্সিটি এসেছে। বৃত্তকে দেখে সিদ্ধার্থ আর প্রনয় এগিয়ে এলো। বৃত্ত তাদের দেখে মৃদ হেসে তাদের হালচাল জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু বৃত্তের সেই কৃত্রিম হাসি তাদের দুজনকে খুব একটা প্রভাবিত করতে পারলো না। সিদ্ধার্থ তো বলেই ফেললো,
— ভাই, এমন সেন্টি মাখা হাসি হাইসো নাতো। তোমারে স্যুট করে না। কি হইসে ফটাফট উগলে দাও তো। শুনি আমরা!

বৃত্ত এড়িয়ে যেতে চাইলো সিদ্ধার্থের কথা। সে চায়না, মেঘবৃত্তের ভেতরকার সমস্যাটা বাইরের কেউ জানুক। কিন্তু, সিদ্ধার্থ আর প্রণয়ের জবরদস্তিতে শেষমেশ মুখ না খুলে পারলো না সে। বৃত্তের মুখে তাদের সমস্যা শুনে সিদ্ধার্থ আর প্রণয় দুজনই হতবাক, বিস্মিত। সিদ্ধার্থ তো বলেই ফেললো,
— আর ইউ সিরিয়াস? তুই মেঘার সাথে এক সপ্তাহ কথা না বলে থাকলি কি করে? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। যে তুই মেঘার সাথে এক ঘন্টা কথা না বলে রীতিমত মরে যেতি আর আজ সে তুই এমন করে বেঁচে আছিস কি করে?

বৃত্ত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কপালে হাত রেখে বললো,
— সবই আমার ফুটা কপাল, ভাই।
প্রণয় বললো,
— মেঘার এই বাচ্চা নিয়ে এত সিরিয়াস হওয়ার কারণ কি? বাচ্চা শেষ তো তোদের মধ্যে সব সমস্যা শেষ। কাউকে আর বাচ্চা নিয়ে কোনো কৈফিয়ত দিতে হবে না। তোদের আর বদনামও হবে না। মেঘা কি সেটা বুঝে না?

বৃত্ত হাতে থাকা পেপসি এক চুমুকে পুরোটা শেষ করে ফেললো। অতঃপর, সেই বোতল ঢিল দিয়ে ফেলে দিলো রাস্তায়। প্রণয়ের দিকে চেয়ে বললো,
— বাচ্চাটা নিয়ে মেঘা প্রথম থেকেই খুব বেশি সিরিয়াস ছিলো। কারণটা জানিনা আমি। আর মেঘা আর আমি দুজনই চাইনি বাচ্চাটা মরে যাক। বরং, আমরা এই বাচ্চাসহই সব সমস্যা সলভ করতে চাইছিলাম। কিন্তু, মাঝখানে সেই অ্যাক্সিডেন্ট…

বৃত্ত আর বললো না। বাকিটা যা বোঝার বুঝে গেলো সবাই। প্রণয় ঠোঁট উল্টে বললো,
— বহুত সিরিয়াস কেইস, মামা।
— আমি বুঝতে পারছি না, মেঘার সাথে কিভাবে কথা বলা শুরু করবো। আমি কথা বলতে চাইলে ও চুপ করে থাকে। রেসপন্স করে না। আরে বাল, আমি তো এটাই বুঝছি না বাচ্চাটা মরার পেছনে আমার দোষটা কোথায়? সে কেনো শুধু শুধু আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। ভালো লাগছে না কিছুই, বাল।

বৃত্তের কথার পিঠে সিদ্ধার্থ হঠাৎ করে বলে উঠলো,
— মামা, এক কাজ করতে পারিস তুই। মেঘা যখন একা থাকবে তখন তুই তার পাশে বসবি। কথা বলার সর্বোচ্চ ট্রাই করবি। কথা না বললে কারণ জিজ্ঞেস করবি। মানে, যেকোন ভাবেই মেঘাকে কথা বলিয়েই ছাড়বি। নো ছাড়-টার।
— হ্যাঁ,এসব করি। আর পরে মেঘের হাতের থাপ্পড় খাই। দরকার নাই ভাই এসবের।
— আরে ধুর। একটা দুটো থাপ্পড় খাইলে কিছু হবে না। মেঘার হাতের থাপ্পড়কে মধু ভাববি। মধু ভেবে হজম করে আবার কথা বলা শুরু করবি। এমন করলে মেঘা কথা বলবেই, হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিউর।

বৃত্তের মনে হলো, প্ল্যানটা মনে ধরেছে। হয়তো সে জন্যেই সে আর তর্ক করলো না। বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। আজ মেঘবৃত্তের সম্পর্কের একটা হিল্লে করতেই হবে। যে করেই হোক!
____________________________
রাত তখন কটা বাজে? বৃত্ত জানে না। এই মুহূর্তে ঘড়ির দিকে তাকাতেও তার বিশাল আলসেমি। বরাবরের মত চোখ গেলো বারান্দার দিকে। ঠিক, মেঘা এখনো দোলনায় বসে আছে। আজ সারাদিন ধরে বৃত্ত নিজেকে প্রস্তুত করেছে, মেঘার সাথে কথা বলবে বলে। এখন সঠিক সময় এসেছে। বৃত্ত মনেমনে দোয়া দুরুদ পড়ে নিলো। এই প্রথম বৃত্ত প্রচন্ড নার্ভাসনেস অনুভব করতে পারছে। মেঘার সামনে দাঁড়াতেই যেনো তার জান শুকিয়ে যাচ্ছে। নাহ, এভাবে হাল ছাড়লে চলবে না। যা করার জলদি করতে হবে।

বৃত্ত এগিয়ে গেলো বারান্দার দিকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। মেঘা এখনো আকাশের দিকে চেয়ে। বৃত্ত গলা খাঁকারি দিলো। মেঘা শুনলো, তবে পাত্তা দিলো না। বৃত্ত এবার ধীর পায়ে মেঘার পাশে এসে বসলো। দোলনাটা একটু নড়ে উঠলো তাতে। মেঘা এবারও নিশ্চুপ! মেঘার এমন চুপ থাকা বৃত্তের সকল সাহসকে ভেঙে তছনছ করে দিল। হুট করেই তার সমস্ত কথা হারিয়ে গেলো। বৃত্ত চুপ করে গেলো। মেঘা বৃত্তের উপস্থিতি লক্ষ করলো, লক্ষ করলো বৃত্তের নার্ভাসনেস। তবুও এসবের পরোয়া করলো না ও। আগের ন্যায় ঠায় বসে রইলো।
বৃত্ত একসময় বিন্যস্ত হলো। বুকের মধ্যে সাহস সঞ্চার করে মৃদু কন্ঠে ডাক দিলো,
— মেঘ?

বৃত্তের এই একটা ডাক মেঘার সমস্ত ইন্দ্রিয়কে নাড়িয়ে দিলো। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো ও। হুট করেই তার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, বৃত্তের বুকের ঝাঁপিয়ে পড়ে হু হা করে কাঁদতে। কিন্তু না। মেঘা শক্ত হয়েই রইলো। কথা বললো না একবিন্দুও।

#চলবে।

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_৩১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আজ আকাশে বিশাল এক চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আশেপাশে লুঁটোপুঁটি খাচ্ছে অজস্র সাদা রঙা তারা। অদূরে হয়তো একটা শুকতারাও জ্বলজ্বল করছে। চারপাশ কি ঠান্ডা! রাতের পরিবেশটা যেনো শিশিরের চাঁদরে মোড়ানো। শিশিরের অস্পষ্টতার কারণে কিছুই দৃষ্টিগত হচ্ছে না। মেঘা এখনো সেই শিশিরভেজা আকাশের দিকে চেয়ে। বৃত্ত দেখলো, মেঘার গায়ে কোনো ঠান্ডার কাপড় নেই। আজ বেশ শীত পড়েছে। শীতের প্রকোপে মেঘা মাঝেমধ্যে কাঁপছে থরথর করে। বৃত্ত কথা তুললো,
— ঠান্ডা লেগে যাবে। শীতের কাপড় পড়িস নি কেন?

মেঘা দুহাত আড়াআড়িভাবে কাধের দুপাশ ঢেকে শীতল কণ্ঠে বললো,
— তার দরকার নেই। ঠান্ডা লাগছে না আমার।
— ঠান্ডা লাগছে না, তাইনা? তাহলে এমন করে কাঁপছিস কেনো?
— কই কাঁপছি। বাদ দে। তুই যা, ঘুমা গিয়ে। রাত অনেক হয়েছে।

মেঘার কথা সমাপ্ত করার পাঁয়তারা দেখে বৃত্ত মনেমনে একটুখানি হতাশ হলো। মেঘা তার সাথে কথা এগুতে চাইছে না, এ বেশ বুঝতে পারছে সে। বৃত্ত দোলনা ছেড়ে উঠে ঘরে চলে গেলো। আলমারি থেকে মেঘার চাদর খুঁজতে গিয়ে বৃত্ত লক্ষ্য করলো, আলমারিতে মেঘার কোনো চাদরই নেই। বৃত্তের অদ্ভুত লাগল বিষয়টা। আলমারি ভর্তি এত কাপড়ের মধ্যে মেঘার শীতের কাপড় নেই বললেই চলে। বৃত্তের ভ্রু কুঁচকে গেলো। সে আর উপায় নেই পেয়ে নিজের একখানা ভারী জ্যাকেট নিয়ে নিলো। আলমারির দরজা বন্ধ করে পুনরায় বারান্দায় আসলো। মেঘা এখনো ঠায় বসে। বৃত্ত মেঘার দিকে নিজের জ্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
— ধর, পড়ে নে।

মেঘা তাকালো জ্যাকেটটার দিকে। চোখ সরিয়ে বৃত্তের দিকেও একবার তাকালো। বৃত্ত তখনো ভ্রুকুটি করে মেঘার দিকে চেয়ে আছে। বৃত্তের মুখশ্রীর দিকে চেয়ে মেঘার খুবই আচানক মনে হলো, ভ্রু কুঁচকানো অবস্থায় বৃত্তের চেহারা খুব সুন্দর লাগে। সাধারণত বৃত্তের ভ্রু ঘন আর সোজা। তবে, যখন সে ভ্রু কুটি করে তখন তার ভ্রু জোড়া বাঁকা হয়ে যায়, দুটো ভ্রু যেনো একসাথে মিলে যেতে চায়। বৃত্তকে দারুন লাগে তখন। মেঘা নিজেকে সামলালো। চোখ সরালো সে। জ্যাকেটটা ফিরিয়ে দিতে চেয়েও কি মনে করে ফিরিয়ে দিলো না। চুপচাপ হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিলো। কালো জ্যাকেটটা নিজের গায়ে দিয়ে বলে উঠলো,
— ঘুমিয়ে যাচ্ছিস না কেনো? রাত বেড়ে গেছে।
— তা, তোর চোখে ঘুম নাই? সব ঘুম শুধু আমার চোখেই?
— ঘুম থাকবে না কেনো? সময় এলে এমনিই ঘুমাবো আমি। তুই তোরটা ভাব।

মেঘার কথার পিঠে বৃত্ত আর কথা খুঁজে পেলো না। মেঘার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ওপাশ থেকে সেই চাওনির কোনোরূপ পাত্তা না পেয়ে চুপচাপ ঘরে চলে এলো। এই মেঘা যে কবে সহজ হবে, কে জানে? বৃত্ত মেঘার স্বাভাবিক রূপ দেখার জন্যে ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠলো। রাত বাড়লো, ঘুম এলো না তার দু চোখে। এত অস্থির লাগছে কেন তার? কেনো তার সারা মন জুড়ে এই অদ্ভুত ব্যাকুলতা? কেনো হৃদয়ে এই ‘মেঘ’ নামক আহাজারি? এই যে এত এত ‘কেনো’.. কিন্তু এই ‘কেনো’র উত্তর কোথায়?
_________________________
রাত হুরহুর করে বেড়ে যাচ্ছে। সময় বারোটার কাটা পেরিয়ে একটায় পা রেখেছে। মেঘা বারান্দা থেকে ঘরে এলো। চোখ গেলো, বিছানায় ঘুমন্ত প্রেমিক পুরুষটার দিকে। ইশ, মানুষটা কি সুন্দর করে ঘুমায়। মেঘা আরো এক দফা মুগ্ধ হলো। চুপচাপ বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে। বৃত্তের দিকে ফিরে শু’লো। এই মুহূর্তে মেঘার দারুন রকম অনুভুতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, নিজের গায়ের সাথে যেনো মিশে আছে ‘তার বৃত্ত’। সে অনুভব করতে পারছে বৃত্তকে, জড়িয়ে ধরে আছে শান্তিতে। মেঘা জ্যাকেটটার কলার টেনে ধরে বেশ খানিক সময় ঘ্রাণ শুকলো তার। ইশ, কি সুন্দর ঘ্রাণ! যেনো অজস্র প্রেমে মাখামাখি! মেঘা আবেশে চোখ বুজে নিলো। পুনরায় চোখ মেলে তাকালো বৃত্তের দিকে। বৃত্তের মাথার চুল কপালে লেপ্টে আছে। মেঘার খুব ইচ্ছে হলো, সেই চুলগুলো ঠিক করে দিতে। হাত বাড়ালো সে। কিন্তু, কি মনে করে হাতখানা ফিরিয়ে নিলো আবার। মেঘার হুট করেই আবার মন খারাপ হতে লাগলো। কান্নার দলা পাকাতে লাগলো বুকের ভেতর। চট করে উঠে বসলো ও। পাগলের মত জ্যাকেটটা গায়ের সাথে একদম মিশিয়ে নিতে চাইলো। জ্যাকেটটা এই মুর্হুতে নিজের বুকের ভেতরে ঢুকিয়ে নিতে পারলে যেনো তার স্বস্থি! মেঘা হার মানলো। জ্যাকেটটা তার নিজের সাথে মিশে গেলো না। মেঘা জ্যাকেটটায় নাক ডুবিয়ে কেঁদে উঠলো ডুকরে। চোখের জল ক্রমাগত বিসর্জন দিয়ে আহাজারি করতে লাগলো,
— দেখ না বৃত্ত। আগে আমি তোকে ছুঁতে পারতাম। অনুভব করতে পারতাম। তোর একটা অংশ নিজের মধ্যে ধারণ করতে পেরে নিজেকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করতাম। কিন্তু আজ দেখ। আমার সব শেষ। আমার মধ্যে থাকা ‘তুই’ নামক অস্তিত্বটাই আজ শেষ হয়ে গেছে। বৃত্ত, আমাকে আবার তোর একটা অংশ এনে দে না। আমি আবারও তোর হতে চাই। আগের মত তোকে অনুভব করতে চাই। এই তোকে আবার আমাকে দিয়ে দে না। দে না রে, বৃত্ত। আমি আর পারছি না নিতে এসব। আমার তোকে চাই। খুব করে চাই, প্রচন্ড চাই, প্রচুর করে চাই।

রাত বাড়লো, সেই সাথে মেঘার কান্নাও বাড়লো। একসময় মেঘা ক্লান্ত হয়ে বালিশে মাথা গুজলো। রাতের চাঁদ মুখ ডুবালো উদয়মান সূর্যের আড়ালে।
__________________________
আজ বৃত্তের একটা চাকরির ইন্টারভিউ আছে। ইতিমধ্যে বেশ দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু, ঘুমকাতুরে বৃত্ত এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ তার ফোনে অ্যালার্ম বেজে উঠলো। মাথার বালিশের কাছে তীব্র আওয়াজ শুনে বৃত্ত ধড়ফড়িয়ে ঘুম ছেড়ে উঠে বসলো। তুমুল বিরক্তিতে তার ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেছে। কিন্তু এই বিরক্তিকর আওয়াজ থামার নাম নিচ্ছে না। বৃত্ত হাত বাড়িয়ে মোবাইলের অ্যালার্ম বন্ধ করলো। ঘুমের রেশ কাটতেই মনে পড়লো, সে তো আজকের জন্যে কোনো অ্যালার্ম দেয়নি। তাহলে, এই অ্যালার্ম সেট করলো কে? মেঘ? বৃত্ত মুচকি হাসলো। সে জানে, এসব মেঘার করবার। তার ছোট থেকে ছোট বিষয়ের খেয়াল মেঘার চেয়ে ভালো কেউ রাখতে পারে না। তবে, বৃত্ত একটুখানি হতাশও হলো বটে। মোবাইলে অ্যালার্ম না দিয়ে মেঘা নিজে এসে ডেকে দিতে পারতো। কিন্তু এলো না। ধুর, বৃত্তের মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেলো।

বাথরুম থেকে বেড়িয়ে বৃত্ত আলমারির দিয়ে এগিয়ে গেলো। হুট করে মনে হল, আজ তো শার্ট ইস্ত্রি করার কথা ছিল তার। কিন্তু কাল এত চাপের মধ্যে ইস্ত্রি করার সময় পায়নি। এখন সে কি পড়ে যাবে ইন্টারভিউতে? এখন আবার শার্ট ইস্ত্রি করতে হবে। ধুর, এই ইস্ত্রি করার চক্করে কিছু সময় হুদাই চলে যাবে। বৃত্ত তুমুল রাগ নিয়ে আলমারি খুললো। আলামারি খুলে সে একদফা হোঁচট খেল। তার সব শার্টসহ পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করে সুন্দর করে তাকে ক্রমে ক্রমে সাজানো। বৃত্ত প্রায় বোকা বনে গেলো। এসব আবার কে করলো? মা? নাহ, মায়ের তো হাতে ব্যথা। তিনি কি করে করবেন? তাহলে, কে? মেঘ? উত্তর ‘হ্যাঁ’ মিলতেই বৃত্ত হতবম্ব হয়ে গেলো। তার প্রত্যেকটা কাজের পেছনে মেঘার হাত, বিষয়টা তাকে চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে। মেঘা কেনো এসব করছে? শুধু বন্ধু বলে, নাকি অন্য?

#চলবে।