মেঘবৃত্ত পর্ব-৩৮+৩৯

0
452

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_৩৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

কিন্তু আফসোস, সেদিন রাতে মেঘবৃত্তের সুখের ঘুম আর হলো না। বরং, এক আস্ত রাত তারা কাটিয়ে দিলো শুধুই গল্প করে। বৃত্ত যতক্ষণ কথা বলছিল, ততক্ষণ মেঘা তার বুকে শুয়ে বৃত্তের দিকে চেয়ে ছিলো। বৃত্তের ভ্রু কুঁচকানো, হুটহাট হেসে ফেলা, তার মুখের বাঁ দিকের গজদন্ত, এসব কিছুই মেঘাকে ক্রমশ মোহিত করতে লাগলো। আজ নতুন করে সে আবারও এই বৃত্ত নামক প্রেমিকের প্রেমে পড়লো। ইশ, মানুষটা এত সুন্দর কেন? সে রাতে মেঘা চট করে বৃত্তের গালে এক ভয়ানক চুমু খেয়ে কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকেছিল। তখন খুব লজ্জা লাগছিল তার। কিন্তু, সে কি করবে? বেসামাল হয়ে পড়েছিল ও। এটা কি তার দোষ? উহু, একটুও না। বরং বৃত্তের দোষ! সে এত সুন্দর কেনো হলো? একটুখানি বিশ্রী দেখতে হলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত? তাকে দেখলেই কেনো সর্বদা এত প্রেম প্রেম পেতে হবে? এটা তো এক ধরনের অন্যায়!

রাত পেরিয়ে নতুন এক কুয়াশা ভেজা সকাল হলো। মেঘা রান্নাঘরে রুটি বানাচ্ছে। আর একটু পরেই বৃত্ত অফিসে যাবে। মেঘা রুটি ভালো বানাতে হবে পারে না। তার রুটির আকার সবসময় বিশ্রী হয় দেখতে। কিন্তু, বৃত্তের আবার রুটি খুব পছন্দের। তাই মেঘা কষ্ট করে হলেও রুটি করছে। বিস্কুট রাখার বড় কৌটার ছিপি দ্বারা খুব কষ্ট রুটির আকার গোল করলো। বেশ সুন্দর হয়েছে রুটিগুলো। বৃত্তের আলবাত পছন্দ হবে।

— মেঘ, মেঘ? আমার সাদা ফাইলটা কোথায়? মেঘ?
বৃত্তের হাকডাক শুনে মেঘা রুটি গরম করতে করতে চেঁচিয়ে উত্তর করলো,
— আলমারির তিন নম্বর তাকে আছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর বৃত্তের আবার ডাক এলো। এবার তার ওয়ালেট চাই। মেঘা তখন খাবার টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছিল। বৃত্তের এমন হাকডাক তার মগজ অব্দি নাড়িয়ে তুললো। চিৎকার করে বললো,
— বিছানার উপরই আছে। দেখ ভালো করে।

বৃত্ত থামলো। কিন্তু দু মিনিটে যেতে না যেতেই আবারও চেঁচিয়ে উঠলো,
— কই, পাচ্ছি না তো। এসে খুঁজে দিয়ে যা।

মেঘা এবার অধৈর্য্য হলো। সবকিছু হাতের সামনে রাখার পরও এত হাকডাকের কোনো মানে হয়? বৃত্তের মাও ছেলের এমন ডাকাডাকিতে বেশ বিরক্ত হলেন। এগিয়ে এসে মেঘার হাত থেকে গোশতের বাটি নিজের হাতে নিয়ে বললেন,
— যাও, দেখে আসো কি বলে!

মেঘা বৃত্তের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। বৃত্ত তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছিল। মেঘা বালিশের কাছ থেকে ওয়ালেট নিয়ে বৃত্তের পাশে এসে দাঁড়ালো। বৃত্তের দিকে ওয়ালেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
— তোর ওয়ালেট। বিছানার উপরই ছিলো। কিন্তু আফসোস, কানা মানুষের চোখে পড়লো না।

বৃত্ত মুচকি হাসলো। মেঘার হাত থেকে ওয়ালেট নিয়ে পকেটে পুড়লো। তাকের থেকে সাদা ফাইল নিয়ে ব্যাগে ঢুকালো। অতঃপর এসে দাঁড়ালো মেঘার ঠিক সামনে। হেসে বললো,
— আগে কানা ছিলাম না। কিন্তু তুই আসার পর থেকেই নিজেকে কেমন যেনো অলস মুরগি মনে হয়। আমার সব কিছু এভাবে সুন্দর করে গুছিয়ে দিস না তো। বদ অভ্যাস হয়ে গেছে।

মেঘা হাসলো, কিছু বললো না। তবে তবে মনে মনে সুধালো, ‘ থাকুক না কিছু বদ অভ্যাস। তুই একটু নাহয় অগোছালো হ, আমি আছি তো তোকে গোছানোর জন্যে। ‘
________________________________
সেদিন রাতের ঘটনা! বৃত্ত মাত্রই অফিস থেকে ফিরলো। সারাদিনের কাজ শেষে তার শরীর ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত! দেহের সুরমা রঙের শার্টটা ঘামে ছুপছুপ হয়ে আছে। রাতের খাবার পর্ব শেষ করে বৃত্ত ঘরে এলো। টেবিলের উপর মাথা ব্যথার ঔষধ দেখে বৃত্ত খানিক অবাক হলো। পরক্ষনেই মুখে হাসি ফুটলো তার। আসলেই, বেশ মাথা ব্যথা করছিল তার। মেঘার এমন ছোটখাটো কেয়ার বেশ লাগে বৃত্তের। মাঝমধ্যে মনে হয়, বৃত্ত বোধহয় একটু বেশি ভাগ্যবান। মেঘার মত এমন লক্ষ্মী মেয়ে চাইলে ওর চেয়ে ভালো কাউকে পেতে পারতো। কেনো যে এই ইন্টেলিজেন্ট মেঘ তার মত এক ডাফারের প্রেমে পড়লো! অদ্ভুত! এই দুনিয়ার যা কিছু ঘটে, সব হয় অদ্ভুত নাহয় রোমাঞ্চকর!

মেঘা ঘরে এলো বেশ রাত করে। বৃত্ত তখন বারান্দার দোলনায় বসে কফি খাচ্ছিল। মেঘা গুটিগুটি পায়ে এসে বসলো বৃত্তের পাশ-টায়। বৃত্ত মেঘার দিকে চেয়ে দেখলো। মেঘার গা থেকে বেশ ঘ্রাণ নাকে লাগছে। কি সুগন্ধ গায়ে মেখেছে সে? বৃত্ত কি জিজ্ঞেস করবে? বৃত্ত করলো তার ঠিক উল্টোটা! বললো,
— সিদ্ধার্থ চাকরি পেয়েছে। আজ ফোন দিয়ে জানালো।

মেঘা আলতো হাসলো। বললো,
— বাহ, খুব ভালো খবর তো। ট্রিট কবে দিচ্ছে?
— বলেছে, কাল দিবে। আমি না করে দিয়েছি। নতুন নতুন চাকরি পেয়েছে। বেতন পাক, তখন নাহয় নিজের টাকায় ট্রিট দিবে।
— ভালো করেছিস! আর তিতিরের কি খবর? বিয়ে-টিয়ে করবে নাকি? ফোন দিয়েছিল আমাকে আজ। ব্যস্ত থাকায় রিসিভ করতে পারিনি। তোর সাথে কথা হয়েছে?
— ও তো চাকরি করবে। ক্যারিয়ার করার পর হয়তো বিয়ে-টিয়ে করবে। কথাবার্তা হয়নি ওর সাথে। রাতুল জানালো এসব।
— আর তুই?

মেঘা হটাৎ করেই এক অমূলক কথা বললো। বৃত্ত ধ্যান ভাঙলো। মেঘার কথার অর্থ বুঝতে তার বেশ সময় লেগে গেলো। মেঘা তখন নিজের কোলের উপর রাখা আঁচলের দিকে চেয়ে। হয়তো লজ্জা পাচ্ছে। বৃত্ত ভাবলো, তাকে আরো একটু লজ্জা দেওয়া যাক। মেয়েদের লজ্জা পেলে সুন্দর লাগে। মেঘাকে সুন্দর দেখতে বৃত্তের বড় লোভ হলো। বৃত্ত মেঘার কোমরে হাত গলিয়ে দিলো। কোমরের উন্মুক্ত অংশে চিমটি কেটে কানের কাছে ফিসফিসালো,
— আপাতত মেঘের বৃত্ত হচ্ছি। ভাবছি, তাকে একটুখানি ভালোবাসবো। বেশি না, এই যে এই একটুখানি।

বৃত্ত আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো পরিমাণটা। মেঘা হেসে ফেললো বৃত্তের এহেন কথায়। বৃতের কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো তার বলিষ্ট হাতখানা। উত্তর করলো,
— উহু, একটুখানিতে আমার পোষাবে না। আমার তো এক আকাশ সমান ভালোবাসা চাই। যাকে যখন মন চাইবে, হাতের মুঠোয় নিয়ে আজলায় পুড়বো, তাকে স্পর্শ করবো, তার কাঁধে মাথা রাখবো, তার নরম নরম চুলে হাত বুলাবো আর খুব খুব বেশি ভালোবাসবো তাকে।
— আর আদর? সেটা? সেটা করবি না?

ইশ, মেঘা লজ্জা পেয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে ফেললো মুহূর্তেই। বৃত্তের কাঁধে মাথা রেখে মিহি সুরে বললো,
— ইশ, জানিনা! সর তো সামনে থেকে।

বৃত্ত হাসলো, সরে গেলো না। বরং, মেঘার চুলে ঠোঁট রেখে ভাবলো, আজকাল মেঘার এই ভালোবাসা পাগলামো তাকে অবাক হতে বাধ্য করছে। মেঘার তাকে নিয়ে এ ধরনের পাগলামি করবে, সে স্বপ্নেও এ ভাবতে পারেনি। আজ প্রথম মনে হচ্ছে, বন্ধুত্বের দিক থেকে মেঘা যেমন অদ্বিতীয়া, ঠিক তেমনই প্রেমিকা রূপেও সে অনন্য। আর স্ত্রী রূপ? সেই রূপটা কবে দেখবে বৃত্ত? বৃত্তের তো আর তর সইছে না। খুব লোভী সে। শুধু মেঘার বেলাতেই তার যত লোভ!

#চলবে

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_৩৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সেদিনের পর আরো কটা দিন কেটে গেছে। ধীরে ধীরে মেঘবৃত্তের বন্ধুত্ত্বের সম্পর্ক ভালোবাসায় পরিণত হচ্ছে। পৃথিবীতে তৈরি হচ্ছে আরও এক মিষ্টি প্রেম কাহিনী।
আজ মেঘবৃত্তের ভার্সিটিতে বিদায় অনুষ্ঠান আছে। এ বছর যারা ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটি চেয়ে বেরিয়ে গেছে, তাদের বিদায় জানাতেই আজকের এই আয়োজন। সে উপলক্ষে মেঘবৃত্তও তৈরি হচ্ছে সেখানে যাওয়ার জন্যে।
তখন, বৃত্ত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির কলার ঠিক করছিল। পাঞ্জাবির রংটা খানিক ‘ হিমু, হিমু ‘ টাইপের। হলুদ রঙা ঝকঝকে এক পাঞ্জাবি। বৃত্তের ফর্সা শরীরে হলুদ রংটা বেশ মানিয়েছে। বৃত্ত রেডি হতে হতে মেঘাকে একবার ডাক দিলো,
— মেঘ, দেরি হচ্ছে আমাদের। এতক্ষণ বাথরুমে কি করিস? বের হ জলদি।

একটু পর মেঘা বের হলো। তার পরনে নীল রঙের শাড়ি। শাড়ির পাড়ে সোনালী রঙের কাজ করা। একদম হুমায়ূন আহমেদের ‘ রূপার ‘ মত লাগছে তাকে। মেঘা তাড়াহুড়ো করে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। বকবক করতে লাগলো,
— ইশ, খুব দেরি হয়ে গেছে না? উফ। একটু দাঁড়া। এইতো, আমার শেষ।

বৃত্ত হাসলো। মেঘার শাড়ির কুচি ইতিমধ্যে এলোমেলো হয়ে গেছে। বৃত্ত চুপচাপ মেঘার পায়ের কাছে হাঁটু গেরে বসলো। মেঘা চকিতে সরে গেলো। বৃত্ত এতে বড় বিরক্ত হলো। মাথা উচুঁ করে বললো,
— সরলি কেনো? কুচি নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে আয়, ঠিক করে দেই।
বৃত্তের কঠিন কথা শুনে মেঘার ঠোঁট উল্টে গেল। বাক্য খরচ না করে সে বৃত্তের সামনে এসে দাঁড়ালো। বৃত্ত শাড়ীর কুচিতে হাত দিলো। একে একে সবগুলো কুচি ঠিক করে দিয়ে হাতে আগলে রাখলো। মেঘার দিকে চেয়ে বললো,
— সেফটিপিন?

মেঘা ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটা সেফটিপিন নিয়ে বৃত্তের হাতে দিল। মেঘা তখনো মুগ্ধ হয়ে বৃত্তের দিকে চেয়ে আছে। চোখে জল জমতেই আঙ্গুলের ডগা দিয়ে জলটুকু মুছে নিয়ে আবারও বৃত্তের দিকে চোখ রাখলো। বৃত্ত সেফটিপিন লাগাতে লাগাতে বললো,
— শাড়ির নিচে একদম ভিজিয়ে ফেলেছিস। বাথরুমে শাড়ি পড়ার কি দরকার ছিলো, হ্যাঁ?

মেঘা মিনমিনিয়ে বললো,
— রুমে তো তুই ছিলি!
বৃত্ত থমকে গেলো। নতমুখে ঠোঁট চিপে হেসে উঠলো সে। শাড়ীর কুচিটা ঠিকঠাক করে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো সে। মেঘার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো,
— বরের সামনে শাড়ি পড়লে, বরের ভালোবাসা আরো বেশি করে পাওয়া যায়! তোর বেশি ভালোবাসা চাইনা?

ইশ, মেঘা তো লজ্জা পেয়ে গেলো। চোখ খিঁচে ফেললো সে। লজ্জাটা প্রকাশ করবে না, মনোভাব নিয়েও প্রকাশ করে ফেললো ও। ভালোবাসার মানুষের সামনে নিজের লজ্জা প্রকাশ করার অনুভূতিটা খুব দারুন। মেঘার গাল ক্রমশ লাল হয়ে উঠলো। ঠোঁট টিপে বলল,
— ইশ, কি সব কথা!

কথাটা বলে মেঘা বৃত্তের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো। বৃত্ত সরে গেলো না। বরং মুচকি হেসে মেঘার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে মোহাচ্ছন্ন কণ্ঠে বললো,
— ‘ আমার রূপা ‘
_________________
সম্পূর্ণ ভার্সিটি সেজেছে নতুন উৎসবে। এদিক ওদিক মরিচ বাতি, ব্যানার, ফুলের গেইট আরো কত কি! বৃত্তের ব্যাচ সেই ফুলের গেইট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে, আর জুনিয়ররা তাদেরকে ফুল ছিটিয়ে বন্দনা করলো তাদের।

মেঘবৃত্তরা একজায়গায় জড়ো হয়ে বসেছে। মেঘা বৃত্তের ঠিক সামনের চেয়ারটাতে বসেছে। কথা বলতে বলতে দুজনের চোখাচোখি হচ্ছে। মেঘা লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিচ্ছে বৃত্ত মুচকি হেসে ঘাড় ঘষছে। তার নিজেরও একটু আকটু লজ্জা লাগছে।
মেঘবৃত্তের এই চোখাচোখি বন্ধু মহলের আর কারো নজরে না পড়লেই রাতুলের নজরে পড়েছে। ঠোঁটকাটা রাতুল তো বলেই ফেললো,
— কিরে মামা, মেঘার দিকে এত লুতুপুতু চোখে চাইয়া রইছো ক্যান? আমাগো কি চোখে পড়ে না? আমাগো দিকেও একবার তাকাও। আমরাও আজ বহুত পার্ট শার্ট মাইরা আইছি।

বৃত্ত কি বলবে খুঁজে পেলো না। চোরের চুরি ধরা পড়ায় সে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। কথা এড়ানোর জন্যে বললো,
— তুমি তো অনেক সুন্দ্রি এক পোলা, মামা। তোমারে তো সবসময় রূপসী লাগে দেখতে। এ আর নতুন কি?

বৃত্তের এহেন প্রশংসায় রাতুল খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো। বুক ফুলিয়ে গর্বের নিশ্বাস নিবে তার আগেই তার মনে পড়লো বৃত্তের কথার অর্থ। সে বজ্রধ্বনির ন্যায় চেঁতে উঠলো। বললো,
— ওই, আমি রূপসী মানে? আমি কি মাইয়া, যে রূপসী হইমু? মজা লস আমার লগে?

রাতুলের কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠলো। বৃত্ত হাসতে হাসতে তো চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। রাতুলের কথা শুনে সিদ্ধার্থ যা বোঝার বুঝে গেলো। মনে মনে একটুখানি খুশি হলো সে। বন্ধু নিজের অনুভূতি বুঝতে পারলো তবে। সিদ্ধার্থ কথা কাটালো। বললো,
— গাইস, একটা গেইম খেলা যাক। কি বলিস?

সিদ্ধার্থের গেইমের কথা শুনে টেবিল ঘিরে বসে থাকা সবাই চমকে উঠলো। নেহা বলে ফেললো,
— না, না, না। তোর গেইম মানে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাওয়া। ওই গেইম আমি খেলবো না। নেভার!

রাতুল দুঃখী দুঃখী কণ্ঠে বললো,
— হ। ওই গেইমে আমার কোন জনমে কোন ক্রাশের পিকে ‘হট’ কমেন্ট করসিলাম এগুলাও চিপা-চুপা থেকে বাইর কইরা ফালায়। নাহ ভাই, আমি খেলুম না।

সবাই একে একে মানা করতে লাগলো। কিন্তু সিদ্ধার্থ নাছোড়বান্দার মত শেষমেশ সবাইকে রাজি করিয়ে ফেললো। প্রথম প্রশ্ন করা হলো বৃত্তকে। প্রশ্নটা ছিলো,
— লাইফে কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো? মা নাকি বউ?

প্রশ্নটা একদম হকচকিয়ে দেওয়ার মত হলেই বৃত্ত মোটেও চমকালো না। বরং ধীরে সুস্থে বললো,
— মা হলো জান্নাত। আর বউ হলো অর্ধাঙ্গিনী। নিজের একটা অংগবিহীন জান্নাতে কি করে যাবো?

সবাই বৃত্তের কথা শুনে একদফা বলে উঠলো,
— ওহো, জিও জিও। মেঘা ইউ, দ্য লাকি ওয়ান।

মেঘা তখনো থমকানো। বৃত্তের দিকে চেয়ে আছে। চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছাপ। বৃত্ত তার সন্মান সবার সামনে এতটা উচুঁ করেছে? মেঘার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। আজকাল বৃত্তের এমন ভালোবাসা দেখে মেঘার মন চায়, সারাক্ষণ বৃত্তকে ঝাপটে ধরে বসে থাকতে। একটা মানুষ এতটা ‘প্রিয়’ কি করে হতে পারে?

#চলবে।