মেঘ বলেছে তুমি আমার পর্ব-০১

0
439

#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
#পর্ব-০১

মায়ের পছন্দের লাল রঙের শাড়ি পড়ে পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছে অহনা। মুখে খানিকটা লাজুক লাজুক ভাব। গায়ে জড়ানো হাল্কা পাতলা গহনা। বুকের ভিতর টিপ টিপ শব্দ হচ্ছে যেন। ছেলের নাম আহিয়ান। পেশায় একজন ইঞ্চিনিয়ার। ছেলের বাবা ব্যাংকে চাকরি করেন। আজ সকালেই হুট করে অহনার বাবা তার স্ত্রী মানে অহনার মাকে বলে বসলেন মেয়েকে দেখতে আসবে দুপুরে। বিষয়টা একেবারে হুট করে হলো। অহনার তখন সবেমাত্র ঘুম ভেঙেছিল। অহনার মনের অবস্থা বোঝা যাচ্ছে না ভিতর থেকে খানিকটা ঘাবড়ানো ভাব তার। লাইফে ফাস্ট টাইম তাকে কেউ বিয়ে করার উদ্দেশ্যে দেখতে এসেছে। অহনা মনে মনে চায় নি এখনই তার বিয়ে হোক কিন্তু ছেলের যদি অহনাকে পছন্দ হয়ে যায় আর বাবাও যদি রাজি হয়ে যান তাহলে আর অহনা কিছু বলতে পারবে না। অহনা তার বাবাকে ভীষণ ভয় পায় ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে তার যেন দূরত্ব বেশি। বাবা যা বলেন তাই করে কোথাও যাওয়ার হলেও বাবার পারমিশন নিয়ে যায়। ভিতর থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হতে চাইলো অহনার কিন্তু এই মুহূর্তে বের করলো না। হঠাৎই পাত্রের মায়ের ডাকে টনক নড়লো অহনার তিনি বললেন,

‘ দেখি তো মা তোমার মুখখানা একটু।’

অহনার মাও আস্তে করে বললো,

‘ মুখটা উঁচু কর অহনা।’

অহনা শুনলো ধীরে ধীরে সে তাকালো সবার দিকে। সর্বপ্রথম দৃষ্টি যায় তার আহিয়ানের দিকেই। নীল কোট,নীল প্যান্ট,সাদা শার্ট, মাথা ভর্তি চুল, গায়ের রঙ ফর্সা। দেখতে খারাপ নয়, আহিয়ানের দৃষ্টির দিকে তাকাতেই যখন দেখলো আহিয়ানও তার দিকে তাকিয়ে আছে সঙ্গে সঙ্গে অহনা তার দৃষ্টি সরিয়ে বাকিদের দিকে তাকালো। আহিয়ান যেন এতে আনমনা হাসলো। পাত্রের বাবা মা আর পাত্র এই তিনজনই এসেছে অহনাকে দেখতে। অহনার মুখ দেখেই আহিয়ানের মা বলে উঠলেন,

‘ মাশাআল্লাহ।’

‘মাশাআল্লাহ’ শব্দটা শুনতেই বুকের গতিবেগ আরো কতশত বেড়ে গেল অহনার তাহলে কি তাকে পছন্দ হয়ে গেল পাত্রপক্ষের। সবাই খানিকটা হাসলো। পাত্রের বাবা বললেন,

‘ আমার মনে হয় ওদের দুজনের মধ্যে আলাদা ভাবে একটু কথা বলতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত যতই হোক বিয়েটা তো ওরা দুজনই করবে। আমাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে এখন আপনাদের আমার ছেলেকে পছন্দ হলেই হয়।’

অহনার বাবা বললেন,

‘ আপনাদের ছেলেও মাশাআল্লাহ আমাদের পছন্দ হয়েছে কি বলো জোনাকি। অহনার মায়ের নাম। অহনার মাও হেঁসে সম্মতি জানালেন যার অর্থ তারও ছেলে পছন্দ হয়েছে।’

ওনাদের কথা শুনে আহিয়ানের বাবা বললেন,

‘ এবার তবে ওদের,

উত্তরে অহনার ছোট বোন নীলার দিকে তাকিয়ে বললো অহনার বাবা,

‘ হুম নীলা ওদের দুজনকে ছাঁদে দিয়ে এসো।’

নীলা শুনলো মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘ জি বাবা।’

____

গ্রামের নাম উজিরপুর। শস্য শ্যামল মাটির ভিড়েই তৈরি এই গ্রামটি। যার সৌন্দর্যের রূপ খুব অতুলনীয়। দূর সীমানার সবুজ সবুজ মাঠ, ঘাস দেখা যায় অহনাদের বাড়ির ওপর থেকে।’

আর এসবের ভিড়েই ছাঁদে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অহনা। শাড়ির আঁচল আঙুলের সাথে প্যাঁচাচ্ছে সে। আহিয়ান দেখলো তা খানিকটা হাসলো। বললো,

‘ আপনি হয়তো খুব লাজুক তাই না মিস অহনা।’

অহনা আঁচল ছেড়ে দিল। আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,

‘ মেয়েদের তো একটু লাজুক হতেই হয় তাই না।’

‘ তা অবশ্য ঠিক লজ্জাবতী মেয়েদের দেখতে এমনি সুন্দর লাগে। আচ্ছা এটা বলুন আপনার আমায় পছন্দ হয়েছে তো।’

অহনা জবাব দেয় না। যা দেখে আহিয়ান নিজে বলে,

‘ আমার কিন্তু আপনাকে পছন্দ হয়েছে। বিয়ে করলে আমরা বোধহয় সুখী হব।’

অহনা এবারও কিছু বলে না। সে বুঝতেই পারছে না এই মুহূর্তে এই আহিয়ান নামক ছেলেটিকে ঠিক কি বলা যেতে পারে। তার কি আহিয়ানকে ভালো লেগেছে এটা জানে না অহনা। বাবার যখন পছন্দ হয়েছে তখন তো তার আর কিছু বলারই থাকে না।’

‘ আপনি যদি এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে কি বিষয়টা ঠিক দেখাচ্ছে।’

আহিয়ানের কথা নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো অহনা,

‘ আমি আসলে বুঝতেই পারছি না আপনাকে কি বলা যায়। আপনার কি কি জানার আছে বলুন আমি উত্তর দিচ্ছি?’

‘ আরে না কি আর প্রশ্ন করবো। আমি কোনো ভার্সিটির টিচার থোড়াই। তবে এতটুকু জানতে পারি আপনার জীবনে কেউ কি আছে বা ছিল?’

অহনা মাথা নাড়ায় যার অর্থ না নেই। অহনা মাথা নাড়িয়ে আবার বলে,

‘ না কখনো কেউ ছিলও না।’

আহিয়ান খুশি হলো। বললো,

‘ এবার নিশ্চয়ই আমায় প্রশ্ন করবেন আমার জীবন কেউ ছিল কি না।’

আহিয়ানের কথা শুনে শুধু আহিয়ানের দিকে তাকায় অহনা কিছু বলবে তার আগেই বলে আহিয়ান,

‘ তবে আপনি শুনতে না চাইলেও আমি বলবো। আমার জীবন একটা মেয়ে ছিল তাকে প্রথম দেখেছিলাম ইন্টারে পড়ার সময় বেশ ভালো লেগেছিল সেদিন কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান ছিল মেয়েটা শাড়ি পড়ে এসেছিল কি যে সুন্দর লেগেছিল তাকে। কিন্তু দুঃখের কথা হলো যাকে মেয়ে ভেবেছিলাম আসলে তিনি আমাদের কলেজের একজন টিচার ছিল তাও দু’দুটো বাচ্চার মা ভাবা যায়।’

আহিয়ানের কথা শুনে অহনা না চাইতেও হেঁসে ফেলে যা দেখে আহিয়ান বলে,

‘ ঠিক আপনার মতোই সেদিন হেঁসেছিল আমার বন্ধুবান্ধবরা। শুধু শুধু টানা দু’দিন ওই মেয়ে না থুড়ি মহিলার পিছনে ঘুরে ছিলাম আমি। এরপর আর কোনো মেয়ের দিকে তাকাই নি। লজ্জা যে কি রকম পেয়েছিলাম তা বোঝানো যাবে না।’

অহনা নিশ্চুপ মনে হাসলো। টুকিটাকি কথা হতে থাকলো অহনা আর আহিয়ানের মাঝে। আনিয়ানের প্রায় কথাতেই অহনা হাসে।’

অতঃপর টানা আধঘন্টার মতো কথা বলে আহিয়ান বললো,

‘ এবার বোধহয় আমাদের নিচে যাওয়া উচিত।’

অহনাও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। আহিয়ান আগে যেতে যেতে লাস্ট একটা কথা বলে,

‘ তোমাদের গ্রামটা না খুব সুন্দর একদম তোমার মতো।’

বলেই আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত নিচে পড়ে আহিয়ান। আর অহনা আহিয়ানের কথা শুনে খানিকটা লজ্জা ফিল করে। হাল্কা হাসলো আবার। তার কি ছেলেটাকে মনে ধরেছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এক পলকের দেখা সাক্ষাৎতে কি মন সম্পর্কে বোঝা যায়। অহনা মেঘের পানে তাকালো। আকাশটা পুরো ধবধবে সাদা। অহনা মনে মনে বললো,

‘ একটা মানুষের সঙ্গে সারাজীবন থাকার জন্য এই পলক দেখা আর কথা বলা কি যথেষ্ট?’

অহনা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। তারপর আস্তে আস্তে চললো নিচে।’

____

আমেরিকার দেশটায় তখন রাতের অন্ধকারে ভরপুর। ডাইনিং টেবিলে ঘুটঘুটে নীরবতা। চোখে মুখে অশেষ রাগ নিয়ে বসে আফজাল হোসেন। সামনের তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম। স্বামীর রাগটা যে আজ প্রচুর তা সে হারে হারে টের পাচ্ছে। ছেলেটা তাড়াতাড়ি ফিরলে হয়। ঘড়িতে তখন প্রায় সাড়ে এগারোটার কাছাকাছি। কথা ছিল আজ ফ্যামিলির তিনজন একসাথে ডিনার করবে কিন্তু তাদের ছেলের এখনো খবর নেই। ছেলে আসলে তার পিঠের চামড়া যে বের করবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কলিংবেল বাজলো। কলিংবেলের শব্দ কানে বাজতেই রোকেয়া বেগম তাকালো স্বামীর মুখের দিকে। আফজাল হোসেন স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন আজ দরজা সে নিজেই খুলবেন।’

লাগাতার কলিংবেল বাজলো। আফজাল হোসেন বিরক্তির চরম সীমানা নিয়ে ধপাস করে দরজা খুললেন। দরজা খুলতেই হাতে কতগুলো গোলাপ নিয়ে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে তাদের গুনধর ছেলে নীলয়। আফজাল হোসেন ছেলের কান্ড দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

‘ এত তাড়াতাড়ি কেন এসেছো বাসায়?’

এবার নীলয় মুখ থেকে গোলাপের তোড়া সরালো। রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বললো,

‘ হেই ড্যাড হাউ আর ইউ?’

নীলয়ের বাবা জবাব দিলেন না। উল্টো বললেন,

‘ আমার বাড়ি থেকে বের হও।’

নীলয় তার বাবার কথা শুনেই হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকে বললো,

‘ ইউ নো ড্যাড তোমার এসব কথা আজ পর্যন্ত আমি কানে নিয়েছি সে আজ নিবো সো চিল। এই নেও ফুল এগুলো তোমার জন্য।’

বলেই ফুলের তোড়া ছুঁড়ে মারলো নীলয় তার বাবার দিকে। নীলয়ের বাবাও তা বাধ্য হয়ে ধরে বসলেন। নীলয় একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ মম জাস্ট ফাইভ মিনিট আমি ফ্রেশ হয়ে এখনই আসছি।’

বলেই হন হনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল নীলয়। নীলয়ের মা ছেলের কান্ডে হাসলেন। স্বামীর অবস্থাও বুঝলেন। নীলয়ের বাবা এমনই ছেলে বাড়ি ফেরার আগে এত এত রাগ দেখায় অথচ বাড়ি ঢুকলেই আর কিছু বলতে পারে না। নীলয় ফ্রেশ হয়ে ট্রাউজার আর টিশার্ট পড়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে নিচে নেমে এলো। নীলয়ের বাবা আবার হন হন করে গেলেন ছেলের সামনে বললেন,

‘ তোমায় কাল বলেছিলাম না নীলয় আজ বাড়ি তাড়াতাড়ি ফিরতে।’

‘ সত্যি বলেছিলে নাকি আমার মনে পড়ছে না কেন।’

নীলয়ের বাবা আরও রাগ করলেন। খানিকটা উঁচু স্বরে বললেন,

‘ তুমি কি আমার সাথে মজা করছো নীলয়?’

‘ দেখো ড্যাড আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে সো বেশি চিল্লাচিল্লি না করে খেতে চলো। রাগারাগি না হয় খাওয়ার পরে হবে।’

নীলয়ের বাবা রাগে ফুস করে উঠলেন। কিছু বলতে নিবে এরই মাঝে তাদের ফোন বেজে উঠল। নীলয়ের মা এগিয়ে গিয়ে ফোন তুললেন। দু’মিনিটের মতো ফোন করা ব্যাক্তিটির সাথে কথা বলে স্বামী দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ নীলয়ের সাথে পরে চিল্লাও, তোমার বাংলাদেশী বন্ধু শরীফ উদ্দিন ফোন করেছেন কথা বলো।’

মায়ের কথা শুনে নীলয়ও বললো,

‘ তুমি কথা বলো ড্যাড ততক্ষণে আমি পেট ভরে খাবার খেয়ে আসি।’

#চলবে…..

#TanjiL_Mim♥️