#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১০
_______________
আচমকাই দাদুর কণ্ঠ কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠলো অহনা। দ্রুত নীলয়ের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
‘ আমি দুঃখিত নীলয় সাহেব।’
উত্তরে নীলয় কিছু বলবে এরই মাঝে দাদুর কণ্ঠ আরো কাছ থেকে শুনতে পেল তারা। দাদুভাই বলছে,
‘ ওখানে কারা আম চুরি করছে কেডা?’
অহনা ঘাবড়ে গেল এভাবে যদি তাকে আর নীলয়কে দেখে ফেলে দাদুভাই তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। অহনার ভাবনার মাঝে ঝোপের ভেতর থেকে ডাকলো নীলা। বললো,
‘ নীলয় ভাইয়া এদিকে আসো দাদুভাই যদি তোমাদের দেখে ফেলে খুব বকবে। আপু তুইও আয়।’
অহনা শুনলো আর উপায় না পেয়ে দ্রুত নীলয়কে নিয়ে ছুটলো সে। নীলয়ও কিছু বলে নি হয়তো এরা ঠিক বলছে।’
শব্দবিহীন চুপচাপ গা ঘেঁষে বসে আছে অহনা নীলয়, জহির আর নীলা। এভাবে নিজেদের গাছেও চোরের মতো আম পাড়তে যেন এই প্রথম দেখছে নীলয়।’
অন্যদিকে দাদু এসে চারপাশে চোখ বুলালো নিচে গোটাখানেক আম পড়ে আছে এর মধ্যে কয়েকটা যে গাছ থেকে মাত্র পারা হয়েছে তাও তিনি বুঝতে পেরেছে। আর এই কাজটা যে কোন দুটো বান্দর করেছে তাও দাদু জানে। দাদুর গাছের আম চুরি করে খাওয়া এত সহজ নাকি। দাদু লাটি হাতে চারপাশ চোখ বুলালেন।’
যা দেখে ঝোপের আড়ালে বসে থাকা জহির আর নীলা দেখে শুঁকনো ঢোক গিললো। দাদুভাই বুঝে গেলেন বুঝি।’
দাদু কতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ঝোপের মধ্যে কিছু নড়তে দেখেই বললো,
‘ জহির নীলা দ্রুত ঝোপ থেকে বেরিয়ে আসো যদি আমি ওখানে যাই তাহলে তো বুঝতেই পারছো।’
জহির নীলা একে অপরের দিকে তাকালো এখন কি করবে দাদুভাই বুঝে গেল যে। ওদের ভাবনার মাঝে আবারও দাদুর হাক শোনা গেল তিনি বলছেন,
‘ কি হলো জহির নীলা তোমরা কি ঝোপ থেকে বের হবে নাকি আমি আসবো।’
জহির নীলা আর না ভেবে শুঁকনো ঢোক গিলে আস্তে আস্তে বের হলো তবে অহনা আর নীলয় বের হলো না। তারা বসে রইলো চুপচাপ। নীলা আর জহির মাথা নিচু করে এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘ দাদুভাই ডাকছিলে?’
দাদু গম্ভীর নজরে ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে হাতের লাঠিটা কয়েকবার মাটির সাথে বারি মেরে বললো,
‘ ঝোপের মধ্যে কি করছিলে তোমরা?’
‘ তেমন কিছু করি নি দাদু (জহির)
‘ ঝোপের ভেতর কি তোমরা দুজনই ছিলে নাকি আরো কেউ আছে।’
দাদুর কথা শুনে অহনা ঘাবড়ে গেল ইস তারাও ধরে পড়ে গেল বোধহয়। এই জন্যই তখন নীলা আর জহিরকে আম চুরি করতে বারণ করেছিল অহনা। কিন্তু অহনার কথা শোনে কে। অহনা রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকালো নীলয়ের দিকে। ধীর স্বরে বললো,
‘ এই সব আপনার জন্য হয়েছে?’
অহনার কথা শুনে নীলয় অবাক হয়ে বললো,
‘ আমার জন্য হয়েছে মানে আমি কি করলাম অদ্ভুত?’
‘ আপনি কি করলেন মানে তখন যদি আমার কথা শুনে ওদের বারন করতেন তাহলে এসব কিছুই হতো না।’
‘ যাহ বাবা আমি কি করে জানবো ওরা ধরা পড়ে যাবে।’
অহনা নীলয়ের দিকে তাকিয়ে কড়া কণ্ঠে বললো,
‘ আপনি একটা যাচ্ছে তাই।’
এদিকে জহির আর নীলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দাদুর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিচ্ছে না। যা দেখে দাদু বললো,
‘ কি হলো তোমরা কথা বলছো না কেন একারা ছিলে ঝোপের ভেতর?’
এবার মুখ খুললো নীলা জহির। দু’জনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ জি দাদুভাই।’
দাদুভাই কিছু বললেন না। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,
‘ গাছের আম পেরেছো কয়টা?’
নীলা জহির চুপ। দাদু আবার বললো,
‘ কি হলো কথা বলো?’
এবার নীলা গুছিয়ে বলতে লাগলো,
‘ আসলে দাদুভাই বৃষ্টি শেষ হওয়ার ওর আমি আর জহির আম কুড়াতে এসেছিলাম এসে দেখি আম পড়েছে খুব অল্প তাই দুজন মিলে কিছু আম পেরেছিলাম যাতে সবাই মিলে সন্ধ্যার পর একসাথে বানিয়ে খেতে পারি। কতগুলো পেরেছি গুনিনি তো। সরি দাদুভাই।’
নীলার সরি শুনে জহিরও মাথা নিচু করে বললো,
‘ সরি দাদুভাই।’
নীলা জহির দুজনকেই মাথা নিচু করে থাকতে দেখে দাদুভাই দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। বললেন,
‘ ঠিক আছে আজকের মতো ক্ষমা করলাম কিন্তু পরেরবার যেন এমন না হয়।’
নীলা জহির দুজনেই খুশি হয়ে গেল। দৌড়ে গিয়ে দাদুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ তুমি খুব ভালো দাদুভাই।’
দাদুভাই হাসলেন। বললেন,
‘ হুম ঠিক আছে ঠিক আছে। এখন দ্রুত বাড়ি গিয়ে ঝুড়ি নিয়ে এসে আম নিয়ে বাড়ি আয়।’
‘ ঠিক আছে দাদুভাই।’
ঝোপের ভেতর বসে এদের কার্যকপাল দেখে নীলয় মুচকি হাসলো এই দাদুটাকে আসলে দেখলে যতটা রাগী মনে হয় আসলে তিনি ওতটা রাগী নন। আচমকা নীলয়ের কি জন্য যেন হাঁচি চলে আসলো। কিন্তু এই মুহূর্তে হাঁচি দিলে তো সর্বনাশ অহনা দেখলো বিষয়টা সে নীলয়কে বললো,
‘ নীলয় সাহেব প্লিজ এমনটা করবেন না।’
কিন্তু হাঁচি কি কারো বারণ শুনে। নীলয় যেই না হাঁচি দিতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে নীলয়ের নাক মুখ সব একসাথে চেপে ধরলো অহনা। আকস্মিক এমন কান্ডে নীলয়ের চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার হাঁচি একা একাই বন্ধ হয়ে গেল। জোরে এক নিশ্বাস বের হলো শুধু। নীলয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে অহনা সস্থির নিশ্বাস ফেললো আস্তে আস্তে বাহিরে উঁকি মারলো দাদুভাই চলে গেছে জহির আর নীলাও গেছে তার পিছু পিছু। অহনা বুকে বাম হাত দিয়ে নিজেকে শান্ত করলো হঠাৎই খেয়ালে আসলো সে এখনও নীলয়ের মুখ চেপে ধরে আছে। অহনা দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নিলো। বললো,
‘ সরি।’
নীলয় জবাব দিলো না। আস্তে আস্তে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর শীতল কণ্ঠে বললো,
‘ বারে বারে সরি বলো না রমণী আমি কিন্তু বার বার ক্ষমা করবো না।’
নীলয় আর দাঁড়ালো না কথাটা বলেই সে চলে গেল। অহনা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো নীলয়ের যাওয়ার পানে। ছেলেটা কি বলে গেলো কথাটা যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল। অহনা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো নীলয় সাহেব বলে ডাক দিবে এরই মাঝে ঘটলো আর একটা ঘটনা হাঁটতে গিয়ে কাঁদার মধ্যে পিছলা খেয়ে ধপাস করে নিচে পড়ে গেল অহনা। কিভাবে পড়লো নিজেও জানে না তবে ব্যাথা না পেলেও তার জামায় কাঁদা লেগে নষ্ট হয়ে গেছে।’
____
সন্ধ্যার পরের সময়। মাগরীরের নামাজ সেরে বিছানায় বসে আছে নীলয়। মস্তিষ্ক তাকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু নীলয় সেসব মানতে নারাজ। নীলয় চরম বিরক্ত নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো এগিয়ে গেল সামনে তার এসব কিছু ভালো লাগছে না। নীলয়ের কেন যেন এখানে আর থাকতেই ইচ্ছে করছে না বার বার মনে হচ্ছে দিন যত যাবে সে অর্থহীন কিছু অনুভূতিতে চরমভাবে আটকে পড়বে। ক্ষতি তো শেষে গিয়ে তারই হবে। নীলয় জানালার পথ দিয়ে আকাশ পথে তাকালো মেঘেরা খেলছে। নীলয় নিস্তব্ধ হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ মেঘবতী তুমি কি বুঝচ্ছো না এই অনুভূতি আমি নিতে চাইছি না। মেয়েটার চোখের দিকে তাকালেই আমার কেমন যেন লাগে? হুট করে কাছে এলে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে যাই। এমনটা ঠিক হচ্ছে না এসব হওয়াটা পুরোপুরি অন্যায়।’
নীলয় চোখ বন্ধ করে ফেললো এসব সে কি ভাবছে আর কি বলছে। নীলয়কে কাবু করা এত সহজ নাকি। হয়তো বিকেলের ওই ঘটনার জন্য সে একটু আঁতকে গিয়েছিল। নীলয় জোরে জোরে বার কয়েক নিশ্বাস ফেললো। মনে মনে আওড়ালো,
‘ মেঘবতী তুমি যদিও বলো আমি শুনবো না, মানবো না এসব অর্থহীন জিনিসপত্র। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি এখানেই থাকবো না দুটে যাবো ভিনদেশে।’
নীলয় বেশ অনেকক্ষণ চুপ করে চোখ বন্ধ করে রাখলো। এরই মাঝে তার দরজায় নক পড়লো নীলা এসেছে। তাকে নিচে ডাকছে। নীলয় নিজেকে পুরো দমে সামলে বললো,
‘ তুমি যাও আমি আসছি।’
‘ ঠিক আছে নীলয় ভাইয়া।’
নীলা চলে গেল। নিচে এতক্ষণ বিকালের কুড়ানোর আর গাছ থেকে পেরে আনা আম কাটা হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো বানিয়ে পরিবেশন করা হবে সবার মাঝে। সবাই একসাথে বসে খাবে।’
___
নিজের রুমে জানালার ধারে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অহনা পরনে সাদা রঙের সেলোয়ার-কামিজ। গায়ে ওড়না জড়ানো চুলগুলো বিনুনি করা। অহনার মনটা কেন যেন বড্ড খারাপ লাগছে আজ। তার মধ্যে কিছু চলছে, নীলয়ের সাথে ঘটা কিছু ঘটনা তার বড্ড মনে পড়ছে সেই প্রথম দিন থেকেই তার ঠুল থেকে পরে যাওয়া নীলয় তাকে ধরে ফেলা, নীলয়কে নিয়ে নৌকায় করে ঘুরতে যাওয়া, একসাথে অনেকটা সময় বেঞ্চে বসে গল্প করা, হঠাৎ বাতাসের স্পর্শে নীলয়ের চোখে কিছু পড়ে যাওয়া তার কাছাকাছি যাওয়া আর আজ যা ঘটলো। অহনা না চাইতেও বার বার নীলয়ের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। তার কেমন যেন নীলয় সামনে থাকলেই বুকের ভিতর দক দক করে এক অর্থহীন অনুভূতি হয়। এমনটা কেন হয়? কেন হচ্ছে! এসব তো ঠিক নয়। অহনার ফোন বাজলো আহিয়ান তাকে কল করছে আজ সারাদিন তার সাথে আহিয়ানের কথা হয় নি। এতে অহনার খারাপ লাগার খানিকটা কথা থাকলেও মটেও খারাপ লাগে নি। কিন্তু এখন মনটা বড্ডই দোনামনা করছে এই মুহূর্তে মোটেও আহিয়ানের সাথে তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। অহনা তার ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দিল পর পর দুবার কল আসার পরও সে ফোন তুললো না। অহনার আর ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না সে মোবাইলটা বালিশের নিচে রেখে মাথায় ওড়না মুড়িয়ে বাহিরে বের হলো।’
এরই মাঝে নিজের রুম থেকে বের হলো নীলয়। দুজনের চোখাচোখি হলো,কিছু অনুভব হলো দুজনেরই তবে নীলয় তার গুরুত্ব দিলো না হাল্কা হেসে নিচে নেমে গেল কিন্তু অহনা সে তাকিয়ে রইলো নীলয়ের যাওয়ার পানে। বুকের বাম পাশে হাত দিলো আনমনে। অপরাধীর স্বরে মনে মনে আওড়ালো,
‘ এমনটা ঠিক হচ্ছে না তাও আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না নীলয় সাহেব?’ আপনি এখানে এসে ঠিক করেন নি,একদমই ঠিক করেন নি।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]
#TanjiL_Mim♥️