মেঘ বলেছে তুমি আমার পর্ব-০৯

0
212

#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৯
_______________

বৃষ্টির পানিতে থই থই করছে চারপাশ। খাল বিল নদী সব ভিজে একাকার। নীলয় শুয়ে আছে, মোবাইল হাতে বিছানায় শুয়ে আছে সে। এমন সময় তার দরজার সামনে এসে নক করলো অহনা বললো,

‘ নীলয় সাহেব আপনায় মা দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য নিচে ডাকছে।’

নীলয় শুনলো মোবাইলের ওপর দৃষ্টি রেখেই বললো,

‘ ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি।’

‘ আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসবেন কিন্তু সবাই আপনার অপেক্ষায় বসে আছে।’

‘ ঠিক আছে আসছি আমি।’

অহনা আর কিছু বললো না ছুটে গেল নিচে। বৃষ্টিতে ভিজে মাত্রই গোসল সেরে নিচে গিয়েছিল সে এরই মাঝে মায়ের কথা মতো নীলয়কে ডাকতে আসে।’

নীলয় আর শুয়ে থাকলো না। মোবাইল রেখে উঠে বসলো হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে ছুটে গেল নিচে প্রচন্ড খিদে পেয়েছে তার। বাহিরে এখনও অল্প স্বল্প বৃষ্টি হচ্ছে।’

____
বিকেল জুড়ে উঠেছে হাল্কা রোদ্দুর। মাটির উঠানটাও প্রায় শুকিয়ে এসেছে। নীলয় দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির সামনে বাহিরে যাবে কি না বুঝতে পারছে না। বড্ড বোরিং লাগছে তার এভাবে একা একা ঘরে কতক্ষণ বসে থাকা যায়। নীলয় কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ির ভিতর ঢুকে এগিয়ে গেল পিছন দিকে ওদিকটায় তার তেমন যাওয়া হয় নি। অহনাদের বাড়ির পিছনে বেশ অনেক দূরে সরু রাস্তা বইছে তার আগে বিশাল পুকুর। নীলয় বেশি না ভেবেই সেদিকে পা বাড়ালো , হঠাৎই নজরে আসলো তার জহির আর নীলার দিকে ওরা কোথায় যেন যাচ্ছে নীলয় ওদের ডাকলো। বললো,

‘ কোথায় যাচ্ছো তোমরা?’

জহির এগিয়ে এসে ফিস ফিস করে বললো,

‘ নীলয় ভাইয়া আস্তে বল দাদু শুনতে পেলে আমাদের আর আস্তো রাখবে না।’

নীলয় বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ আস্তো রাখবে না কেন?’

এবার নীলা বললো,
‘ দাদার গাছের আম চুরি করবো নীলয় ভাইয়া।’

নীলার কথা শুনে নীলয় চোখ বড় বড় করে বললো,
‘ কি?’

নীলা নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,

‘ হুস আস্তে বলো ভাইয়া দাদার যে কান শুনে ফেললেও ফেলতে পারে।’

এমন সময় মাথায় ওড়না মুড়িয়ে হাজির হলো অহনা। পড়নে তার মেরুন রঙের থ্রি-পিস। অহনা এগিয়ে এসেই বললো,
‘ তোরা এখানে কি করছিস?’

নীলা জহির দু’জনেই বেশ ঘাবড়ে গেল। বললো,

‘ কই কিছু করছি না তো।’

‘ কাঁদার মধ্যে এদিকে ঘুরঘুর করছিস কেন পিছলে পড়ে গেলে কি হবে জানিস।’

এবার নীলয় বললো,

‘ কি আর হবে একটু ব্যাথা পাবে আর জামাকাপড় নোংরা হবে এই তো।’

নীলয়ের কথা শুনে অহনা কিছু বলতে পারে না। কিন্তু নীলা আর জহির মুখ চেপে হাসে। অহনা চোখ রাঙিয়ে জহির আর নীলার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ আম চুরি করতে যাচ্ছিস তাই না?’

‘ চুরি করতে নয় আপু দেখতে যাচ্ছি এই বৃষ্টিতে আম একটাও নিচে পড়েছে কি না।’ (নীলা)

‘ ঠিক আছে চল আমিও যাবো।’

নীলা ঘাবড়ে গেল, তার আপুটা থাকলে গাছের একটা আমও পাড়া যাবে না। আর বৃষ্টি যা পড়েছে তাতে মনে হয় না তলায় তেমন আম পড়েছে। নীলা কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,

‘ তোমাকে কি যেতেই হবে আপু না গেলে হয় না।’

‘ না হয় না।’

অতঃপর আর কথা বাড়ালো না। জহির নীলা,অহনার আর নীলয় এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে। নীলয় একবার ভাবলো যাবে না পরে আবার ভাবলো যাক এমনিতেই বোরিং লাগছে তার। সরু রাস্তা দু’দিকে শুরুতেই সুপারি গাছ বাজবে আর পাশে পুকুর, পুকুর ভর্তি মাছও আছে। বিশাল ফলের বাগান রয়েছে অহনাদের, আম, কলা, লিচু, কাঁঠাল,কামরাঙ্গা সহ আরো নানা পদের ফলের গাছ আছে সেখানে। মোটামুটি সবগুলোতেই বেশ ভালো ফলন হয়। দাদুর কড়া নিষেধ গাছের আম পাকা না পর্যন্ত কেউ ছিঁড়তে পারবে না। বিষয়টা সবাই মানলেও জহির আর নীলা মানতে নারাজ কারণ তাদের দুজনেরই কাঁচা আম বানানী মোস্ট ফেভারিট। কতবার যে দাদুর থেকে লুকিয়ে আম চুরি করে খেয়েছে তার হিসাব নেই। পিছলা মাটির ভিড়ে জুতো পড়ে হাঁটা খুবই বিপদজনক আবার খালি পায়ে হাঁটাটাও সেইভ নয়। জহির আর নীলা দুজনেই খালি পায়ে হাঁটছে। অহনাও তাদের পুকুরের সামনে এসে নিজের জুতো খুলে রাখলো সাইডে যা দেখে নীলয় বললো,

‘ তোমরা কি এখন খালি পায়ে যাবে?’

অহনা নিজের দুটো সাইডে রেখে বললো,

‘ হুম। আপনিও পারলে জুতো খুলে নিন কারণ সামনের রাস্তা আরো পিছলা। জুতো পড়ে গেলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

নীলয় শুনলো কি ভেবে যেন নিজের জুতো খুলে রাখলো অহনার জুতার পাশ দিয়ে। তারপরই হাঁটা ধরলো দুজন। নীলা আর জহির অনেক আগেই ছুটে গেছে। আস্তে আস্তে গাছ ধরে এগোচ্ছে অহনা। এই রাস্তাটা অসম্ভব পিছলা একবার পড়ে গেলে কোমড় আর আস্তো থাকবে না।’

আমের গাছগুলোর কাছে এসে তেমন বেশি হতাশ হলো না অহনা। কারণ প্রায় ১০ বারোটার মতো কাঁচা আম পড়ে আছে তলায়। কিন্তু এতে জহির আর নীলার চোখ ভরলো না তাদের মতে তাদের এতবড় ফ্যামিলিতে দশ বারোটা আম বানালে কিছু হবে না। তাই গাছে ওঠার ফন্দি আটলো নীলা। নীলার হাবভাব বুঝলো অহনা। বললো,

‘ নীলা চুপচাপ যা আম পেয়েছিস তা নিয়ে বাসায় যাবি যদি গাছে ওঠার ফন্দি আঁটিস তাহলে তো বুঝতেই পারছিস।’

‘ তুই কেন বুঝতে পারছিস না আপু আমরা যা আম পেয়েছি তাতে আমাদের সবার হবে না। আমরা কতগুলো মানুষ দেখেছো তুমি, আমি,নীলয় ভাইয়া, জহির, আহির ভাইয়া, চাচি আম্মা দুটো, চাচা আব্বু দুজন, আমাদের বাবা মা দাদু দাদি নীলয় ভাইয়ার আম্মু আব্বু। আর সন্ধ্যা হলে কত মানুষ আসে এত মানুষের হবে এই কয়টা আমে। আমের সাইজ দেখেছো কি ছোট ছোট।’

নীলার কথা বুঝলো অহনা। তবে দোনোমোনো করে বললো,

‘ কিন্তু দাদুভাই দেখলে যে বকবে।’

‘ আরে আপু দাদু দেখবে তারপর তো বকবে আমরা বলে দিবো সব আম নিচে পড়া ছিল। এখন চুপচাপ থাকো আমি গাছে উঠছি বেশি না আর পাঁচটা পারবো।’

উত্তরে অহনা কিছু বলার আগেই হুড়মুড় করে গাছে উঠে গেল নীলা। এমন ভেজালো গাছেও যে কেউ হুড়মুড় করে ওঠা যায় এটা নীলা না থাকলে হয়তো জানাই হতো না। অহনা তার ধ্যান থেকে বেরিয়ে আস্তে আস্তে বললো,

‘ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি নেমে পড়িস কিন্তু।’

নীলাও ‘আচ্ছা’ বলে উঠতে লাগলো গাছের আরো উপরে। নীলয় আর জহির এতক্ষণ নীরব দর্শকের মতো শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুই বোনের কথোপকথন শুনছিল। হঠাৎই নীলয়ের ফোনটা বেজে উঠলো নেটওয়ার্ক খুব অল্প। নীলয় তার ফোনটা নিয়ে ছুটে গেল বাগানের একদম কিনারায়। সেখানেও একটা আম গাছ ছিল। নীলা উপর থেকে জহিরকে ইশারা করলো নীলয় ভাইয়ার পাশে যে আম গাছটা আছে সেটায় ওঠার জন্য বেশি আম হলে কিছু আম রেখে দিবে কাল স্কুলে যাওয়ার সময় ব্যাগে ভরে নিয়ে গিয়ে সব বন্ধুরা একত্রে মিলে খাবে। জহির নীলার ইশারা বুঝলো দ্রুত গিয়ে চেপে উঠলো গাছে। জহিরের কাজে অহনা এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘ তুই আবার এটায় উঠছিল কেন? কতগুলো আম লাগবে তোদের।’

‘ আরে আপু চাপ নিচ্ছো কেন বেশি আম হলে কাল আমরা ব্যাগে ভরে স্কুলে নিয়ে যাবো। (জহির)

‘ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে তাড়াতাড়ি নাম গাছ থেকে।’

কিন্তু কে শোনে কার কথা। একটায় নীলা আর অন্যটায় জহির উঠে আম পাড়ছে। পাঁচ দশটা আম গাছ অহনাদের প্রত্যেকটাতেই গাছ ভরে আম হয়েছে। এত এত আম পাকলে কি মজা লাগে। অদ্ভুত দাদুর চিন্তা ভাবনা। পর পর দুই গাছ বেয়ে প্রায় দশটা আম পেরে নীলা নামলো একটা গাছ থেকে শেষে গিয়ে জহির আর একটা আম পাড়বে এরই মাঝে দাদুর হাক শোনা গেল। সে বললো,

‘ ওদিকে কে রে আম পারছে কারা?’

সঙ্গে সঙ্গে অহনা জহির নীলা তিনজনেই বেশ ঘাবড়ে গেল। অহনা চেঁচিয়ে বললো,

‘ জহিরের বাচ্চা নাম জলদি।’

জহির শুনলো হুড়মুড় করে নামতে গিয়ে ধাক্কা লাগলো তার সাথে অহনার। অহনার সামনেই নীলয় দাড়িয়ে ছিল সে গিয়ে পড়লো সোজা নীলয়ের সামনে নীলয় তখন কেবল তার বন্ধুর সাথে কথা বলা শেষ করে ঘুরছিল এদিকে। অহনাকে পড়তে দেখে নীলয় দ্রুত ধরলো তাকে। কাছাকাছি হলো দুজন, দু’জনেরই চোখ আটকালো দুজনের দিকে। অহনার বুকের ভিতর দক দক করছে। এই নীলয় ছেলেটার এতটা কাছাকাছি বার বার কেন হচ্ছে অহনা। অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে অহনার মাঝে এটা কি ঠিক হচ্ছে।’

অন্যদিকে নীলয় অহনার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ালো,

‘ এভাবে হুটহাট কাছে আসাটা কতটা দণ্ডনীয় অপরাধ তা কি তুমি জানো রমণী?’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️