মেঘ বসন্তের মায়া পর্ব-০৩

0
673

#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ০৩

‘ আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি বস।’

কিছুটা মিন মিন কন্ঠে হাত কচলাতে কচলাতে কথাটা বলে উঠল তিথি আকাশকে।’

অন্যদিকে…

অফিসে নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল আকাশ। এমন সময় হুট করেই তিথি তার রুমে ঢুকে কথাটা বলে উঠল। তিথির কথা শুনে আকাশ তার ল্যাপটপটাকে সরিয়ে বললো,

‘ আর ইউ শিওর তিথি?’

কাল রাত থেকেই এই বিষয়টা নিয়ে ভেবেছে তিথি। কারন কাল হসপিটালেই আকাশ তাকে বলেছিল কেন সে তার সাথে এগ্রিমেন্টের বিয়ে করতে চায়। তিথি শুরুতে না করার কথা ভাবলেও পরক্ষণেই নিজের পরিস্থিতির কথা সাথে আকাশের দিকটাও ভেবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এক বছরেই তো ব্যাপার দেখতে দেখতে কেটে যাবে। তিথির ভাবনার মাঝে আবারো বলে উঠল আকাশ,

‘ তিথি।’

আকাশের ডাক শুনে তিথি তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বললো,

‘ জ্বী বস বলুন?’

‘ তুমি কি সবকিছু ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছো,মানে আর ইউ শিওর?’

‘ ইয়েস বস,আমি একশো পারসেন্ট শিওর।’

‘ ভেবে বলছো তো তিথি তুমি এক বছরের এগ্রিমেন্টে রাজি?’

উওরে মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল তিথি,

‘ জ্বী স্যার।’

তিথির কথা শুনে আকাশ কিছুক্ষন চুপ থেকে জোরে শ্বাস ফেলে বললো,

‘ ঠিক আছে।’

এতটুকু বলে আকাশ তার টেবিলের উপর থাকা ফোনটা তুলে কল করলো তারপর তিথিকে বললো সে,

‘ চলো আমার সাথে বাকি কথা গাড়িতে বসে হবে।’

উওরে তিথি কিছু না বলে মাথা নাড়ালো।’

____

ব্যস্তহীন রাস্তায় গাড়ি ড্রাইভ করছে আকাশ আর ওর পাশেই বসে আছে তিথি। তিথিকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বলে উঠল আকাশ,

‘ তোমায় তো কালকেই সব বলেছি তিথি কেন বা কি কারনে আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই।’

‘ হুম।’

‘ তুমি তো জানোই গ্র্যান্ডমার জন্য সবটা করা তাই সবার আগে তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড সেজে গ্র্যান্ডমার কাছে যেতে হবে।’

‘ ওকে বস।’

‘ হুম তবে হ্যাঁ গ্র্যান্ডমার সামনে আবার বস বলো না।’

‘ ওকে।’

‘ হুম আর শোনো গ্র্যান্ডমা প্রশ্ন করলে তুমি বেশি কিছু বলবে না যা বলার আমিই বলবো।’

‘ ঠিক আছে।’

উওরে আকাশ আর কিছু না বলে তার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো। হঠাৎই তিথি বলে উঠল,

‘ আমি কি একটা কথা বলতে পারি বস?’

‘ হুম বলো।’

‘ না মানে আমরা যে এক বছরের জন্য বিয়ে করবো এটা এক বছরের জন্য আপনার আর আমার মধ্যেই যদি থাকে। না মানে আমার মা আর বোন যেন এক বছরের বিয়ে এটা এখনই না জানে তাই আর কি?’

‘ ওকে আমার কোনো সমস্যা নেই।’

‘ থ্যাংক ইউ বস।’

‘ ইট’স ওকে!’

উওরে আর তিথি কিছু বলে না। নীরবতার মাঝেই চলে যায় আকাশ আর তিথি। বেশ কিছুক্ষন পর আকাশ একটা বড় শপিং মলের সামনে তাদের গাড়িটা থামায়। তিথি যতদূর বুঝেছিল তাঁরা এখন হসপিটালে যাবে কিন্তু হসপিটালে না গিয়ে শপিং মলের সামনে গাড়ি থামাতে দেখে অবাক হয়ে বললো,

‘ আমরা এখানে কেন আসলাম বস,আমাদের তো হসপিটালে যাওয়ার কথা?’

‘ হুম যাবো তবে তোমাকে এভাবে নেওয়া যাবে না।’

আকাশের কথা শুনে তিথি নিজের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

‘ কোনভাবে?’

তিথির কথা শুনে আকাশ কিছুটা বিরক্তির স্বরে বললো,

‘ তুমি না বড্ড বেশি কথা বলো,চলো আমার সাথে গেলেই দেখতে পাবে।’আর এমনিতেও তুমি কি এই ডেলিভারি গার্ল এর পোশাক পড়ে আমার গ্র্যান্ডমার কাছে যাবে।’

এতটুকু বলে গাড়ি থেকে নামায় আকাশ তিথিকে। আকাশের কথা শুনে তিথিও আর কিছু বললো না কারন সত্যি তো সে কি এইভাবে যেতে পারে আকাশের গ্র্যান্ডমার কাছে। এসব ভাবতে ভাবতে আকাশ-তিথি দু’জনেই চললো শপিং মলের ভিতরে। শপিং মলের ভিতরে ঢুকেই আকাশ পর পর কয়েকটা দোকান ঘুরে তিথির জন্য কিছু ড্রেস, ব্যাগ,জুয়েলারি, সাথে একটু সামান্য উঁচুর হিল জুতো কিনে নিল। আকাশকে এত এত শপিং করতে দেখে তিথির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। তবে সে কিছু বললো না চুপচাপ আকাশের পিছন পিছন হাঁটতে লাগলো সে। অবশেষে আকাশ তিথির জন্য কিছু ড্রেস কিনে তার মধ্যে একটা ড্রেস তিথির হাতে দিয়ে বলে উঠল,

‘ এটা পড়ে আসো।’

উওরে তিথি কিছু বলতে চেয়েও বলতে না পেরে ড্রেস হাতে নিয়ে চলে যায়।’

___

সোফার উপর বসে আছে আকাশ এবার একটু নিঃশ্বাস নিতে পারছে আকাশ। কিছুদিন থেকেই এই বিষয়টা নিয়ে আকাশ খুব ডিপ্রেশনে ছিল,কি করবে না করবে কিছুই যেন মাথায় আসছিল তার। এসব ভাবনা নিয়েই সেদিন ড্রাইভ করছিল আকাশ আর সেই মুহূর্তেই তার গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে তিথির স্কুটির যদিও সেদিন আকাশ তিথিকে নিয়ে এসব কিছুই ভাবে নি। সেদিন তো তিথির ওপর চরম রেগে যায় আকাশ তখন ডাক্তারের ফোন না আসলে আকাশ যে কি করতো নিজেও জানে না,তবে একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে আকাশ কিছু করে নি। এরপরের দিনই আকাশ তিথিকে আবার দেখে তারই অফিসে খাবার ডেলিভারি করতে সেদিন রেগে গেলেও কেন যেন হুট করেই তার গ্র্যান্ডমার কথা মনে করে কিছু বলে নি আকাশ তারপর লোক দিয়ে তিথির খোঁজ খবর নেয় আকাশ আর তখনই জানে সে তিথির মায়ের অসুখ সম্পর্কে সাথে টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসা করতে পারছে না এটাও। আকাশ না চাইতেও তিথির এই দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে তিথিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সে জানে সে যেটা করেছে সেটা হয়তো ঠিক না কিন্তু গ্র্যান্ডমার ইচ্ছে পূরণ করতে আকাশ বেঠিক করতেও রাজি।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আকাশ। এমন সময় চেঞ্জিং রুম থেকে বের হয় তিথি পরনে তার আকাশের দেওয়া ওয়াইট লং ফ্রক সাথে মিষ্টি কালার গর্জিয়াস কটি চুলগুলো জুটি করা আগের মতোই,আকাশ তিথিকে এক পলক দেখে বলে উঠল,

‘ পারফেক্ট এখন চলো।’

বলেই তিথিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিথির হাত ধরে চললো আকাশ। আকাশের কাজে প্রথমে একটু অবাক হলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয় তিথি।’

___

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আকাশের গ্র্যান্ডমা রাশেদা বেগম। পাশেই একজন নার্স দাঁড়ানো কিছুটা হতাশ উনি, এমন সময় তার রুমে প্রবেশ করলো আকাশ আর ওর পাশেই তিথি প্রচন্ড ঘাবড়ে আছে সে না জানি তাকে দেখে আকাশের গ্র্যান্ডমা কি বলে?’আকাশ তিথির হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায় গ্র্যান্ডমার কাছে তারপর খুশি মনে বলে,

‘গ্র্যান্ডমা।’

হঠাৎই আকাশের ভয়েস কানে আসতেই রাশেদা বেগম তাকায় আকাশের দিকে তারপর একটু অভিমানে স্বরে বলে,

‘ আকাশ তুমি এসেছো আজ এত দেরি করে কেন এলে?’

‘ আসলে গ্র্যান্ডমা অফিসে একটু কাজ ছিল।’

‘ আমার চেয়েও অফিসে কাজটা বেশি হয়ে গেল।’

‘ কি যে বলো তুমি গ্র্যান্ডমা তোমার চেয়ে কোনোকিছুই আমার কাছে বেশি নয়।’

এরই মধ্যে নার্স বলে উঠলঃ

‘ দেখুন না স্যার আপনার গ্র্যান্ডমা কিছুতেই খাবার খেতে চাইছে না।’

নার্সের কথা শুনে আকাশ তার গ্র্যান্ডমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ

‘ এসব কি তুমি খাবার কেন খাচ্ছো না গ্র্যান্ডমা?’

‘ তুমি আজ এত দেরি করে কেন আসলে?’

‘ এর জন্য তুমি খাবার খাবে না। আচ্ছা ঠিক আছে আজ আমি তোমায় খাইয়ে দিবো গ্র্যান্ডমা?’

এতটুকু বলে আকাশ তার গ্র্যান্ডমাকে শোয়া থেকে উঠে বসালো। তারপর আকাশ নিজেই তার গ্র্যান্ডমার খাবার হাতে নিয়ে খাওয়াতে শুরু করে দেয়। আকাশের কাজে খুশি হয়ে যায় রাশেদা বেগম আর আকাশ সে তো তার গ্র্যান্ডমাকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সে ভুলেই গেছে তিথি নামক কাউকে সে নিয়ে এসেছে এখানে।’

অন্যদিকে তিথি নাতি আর দাদির ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ সে। সে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে আকাশ তার গ্র্যান্ডমাকে খুব ভালোবাসে হয়তো নিজের চেয়েও বেশি অবশ্য তিথি এই বিষয়টা কালকেই বুঝতে পেরেছিল। আনমনেই মুচকি হাসলো সে সত্যি বলতে কি ‘ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে।’

___

আকাশের গ্র্যান্ডমা আকাশের হাত থেকে খাবার খেতে খেতে হঠাৎই চোখ যায় তার তিথির দিকে। তিথির দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন উনি,

‘ ও কে আকাশ?’

এতক্ষণ পর গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তাকালো আকাশ তিথির দিকে সে তো প্রায় ভুলেই গিয়েছিল তিথির কথা। গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথি মুচকি হেঁসে এগিয়ে এসে বলে রাশেদা বেগমকে,

‘আসসালামু আলাইকুম গ্র্যান্ডমা।’

“তিথির কথা শুনে গ্র্যান্ডমা মুচকি হেঁসে বললোঃ

‘ ওলাইকুম আসসালাম তুমি কে?’

‘ আমি তিথি।’

তিথি কিছু বলবে তার আগেই আকাশ বলে উঠল,,
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে কিন্তু]

#TanjiL_Mim♥️