মেঘ বসন্তের মায়া পর্ব-০৮

0
553

#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ০৮

ফুল দিয়ে সাজানো স্টেজে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি। দুজনকেই পাশাপাশি অপূর্ব লাগছে আজকে তিথি একটা গর্জিয়াস শাড়ি পড়েছে,দু’হাত ভর্তি ভাড়ি চুড়ি,মাথায় টিকলি,কোমড়ে বিছে, মুখে ভাড়ি মেকাপ দিয়ে অসাধারণ লাগছে তাঁকে। আর অন্যদিকে আকাশও সেজেছে আজকে কালো সেরোয়ানি পড়েছে সে সাথে কালো জুতো, হাতে কালো ওয়াচ, কালো রঙেই সজ্জিত সে। পাশাপাশি আকাশ তিথিকে দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনেই প্রেস মিডিয়ার লোকেরা ঘিরে ফটোশুট করছে৷ তিথির এতসব কিছু একদমই কল্পনার বাহিরে ছিল। সত্যি বলতে আকাশও জানতো না তাঁর গ্র্যান্ডমা এতকিছু করবে কতশত মানুষ জেনে গেল আকাশের বউ তিথি। আপাতত সেসব বিষয় নিয়ে ভাবলো না তিথি। মুচকি হেঁসে সবকিছুই সাদরে গ্রহণ করছে সে।’

এরই মধ্যে হঠাৎ একজন মিডিয়ার মেয়ে বলে উঠল আকাশকে,

‘ কিছু প্রশ্ন করতে পারি স্যার?’

মিডিয়ার মেয়েটির কথা শুনে আকাশও মুচকি হেঁসে বলে উঠল,

‘ ইয়া শিওর।’

‘ না স্যার আপনাদের তো লাভ ম্যারেজ তাই না?’

মিডিয়ার মেয়েটির কথা শুনে তিথি তাকালো আকাশের দিকে, আকাশ বেশি কিছু না ভেবেই খুশি মনে বলে উঠল,

‘ হুম।’

‘ আপনাদের প্রথম দেখা কিভাবে হলো স্যার?’

এবারের প্রশ্ন শুনে তিথির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম না জানি এখন আকাশ কি বলে এমনিতেও তাদের প্রথম আলাপ তো ঝগড়া দিয়ে হয়েছিল তাহলে কি এখন ওসব বলবে নাকি।এসব ভেবে আবারো তাকালো তিথি আকাশের দিকে। আর আকাশ সে এবারও বেশি কিছু না ভেবে বলে উঠল,

‘ সত্যি বলতে আমাদের প্রথম দেখা ঝগড়া দিয়ে হয়েছিল।’সেদিন এই বলে অনেক বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে লাগলো আকাশ মিডিয়ার লোকেদের। আর তিথি জাস্ট চোখ বড় বড় করে শুনতে লাগলো।’

এমন সময় হাতে ফুলের তোঁড়া নিয়ে আকাশ তিথির সামনে আসলো হৃদ। হৃদকে দেখেই খুশি হয়ে যায় আকাশ খুশি মনে জড়িয়ে ধরে সে হৃদকে আর হৃদও ধরে আকাশকে। এরপর হৃদ চলে যায় তিথির সামনে হাতের তোড়াটা খুশি মনে এগিয়ে দিয়ে বলে সে,

‘ কেমন আছো তিথি?’

‘ জ্বী ভাইয়া ভালো আপনি?’

‘ হুম আমিও ভালো।’

এতটুকু বলে আশেপাশে তাকাতেই সোফায় এক কোনায় গ্র্যান্ডমাকে বসে থাকতে দেখে বলে উঠল সে,

‘ গ্র্যান্ডমার সব ঔষধগুলো ঠিক মতো খাওয়াচ্ছিস তো আকাশ?’

হৃদের কথা শুনে আকাশ হৃদের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো,

‘ হুম।’

উওরে হৃদ আর কিছু না বলে এগিয়ে যায় গ্র্যান্ডমার দিকে হৃদের সাথে সাথে তিথি আকাশও যায়।’

সোফায় এক কোনায় বসে আছে গ্র্যান্ডমা আজ সে খুব খুশি অবশেষে সে তার নাতির বিয়েটা দিতে পেরেছে। সাথে অনেকটা নিশ্চিত সে ভেবেই জোরে নিঃশ্বাস ফেললো সে।’

‘ কেমন আছো গ্র্যান্ডমা?’

হঠাৎই হৃদের কন্ঠ কানে আসতেই গ্র্যান্ডমা তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলেন সামনেই হৃদকে দেখে খুশি মনে বললেন উনি,

‘ তুমি এসেছো হৃদ কিন্তু এত দেরি করে কেন এলে?’

‘ আসলে গ্র্যান্ডমা হসপিটালে একটু বিজি ছিলাম।’

বলেই গ্র্যান্ডমার পাশ দিয়ে বসে পড়ে হৃদ। তারপর বলে,

‘ তারপর বলো গ্র্যান্ডমা তুমি কেমন আছো শরীরে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?’

‘ ধুর! রাখো তো শরীর আমি একদম ঠিক আছি হৃদ।

অবশেষে প্রায় চার পাঁচ ঘন্টা পর বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে সব আত্মীয় স্বজনকে বিদায় দিল আকাশ তিথিরা। আজকে তিথির মা বোনরাও এসেছিল। কতক্ষণ আগেই চলে গেলেন ওনারা। এরই মধ্যে হৃদও বলে উঠল,

‘ এবার আমাকেও যেতে হবে আকাশ।’

‘ ওকে,আজ গ্র্যান্ডমা অনেক খুশি ছিল তাই না হৃদ?’

‘ হুম,তবে একটা কথা মাথায় রাখিস আকাশ গ্র্যান্ডমাকে বাহির থেকে তেমনি লাগুক না কেন ভিতর থেকে কিন্তু ধীরে ধীরে ডেমেজ হয়ে যাচ্ছে তাই খেয়াল রাখিস ভালো মতো।’

‘ হুম।’

‘ ওকে ভালো থাক তুই আর তিথি দুজনে।

এতটুকু বলে হৃদ গ্র্যান্ডমার সামনে বসে হাত ধরে বললো,

‘ আজ তাহলে আসি গ্র্যান্ডমা আবার পরে আসবো আর এছাড়া তোমার কোনো সমস্যা হলেই বা শরীর খারাপ লাগলেই আমায় ফোন করো আমি চলে আসবো গ্র্যান্ডমা।’

হৃদের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা হৃদের দু’গাল চেপে ধরে বললো,

‘ হুম ঠিক আছে।’

‘ আজ তবে আসি গ্র্যান্ডমা?’

‘ ওকে ভালো থেকো।’

‘ ঠিক আছে গ্র্যান্ডমা।’

বলেই আকাশকে বাই জানিয়ে চলে যায় হৃদ। হঠাৎ আকাশ কিছু একটা ভেবে চলে যায় হৃদের পিছন পিছন।’

_____

রাত_৮ঃ০০টা…

নিজের ব্যাগ থেকে জামাকাপড়সহ টুকিটাকি কিছু জিনিসপত্র আলমারিতে গুছিয়ে রাখলো তিথি। যতই হোক একবছরের জন্য সে থাকবে এখানে তাই সেই সুবাদে সবকিছু গোছাগোছ করে রাখলো তিথি। অবশেষে সব গুছিয়ে নিজের ব্যাগটাকে ধরে আলমারির উপরে রাখতে নিলো তিথি কিন্তু সেটা তার থেকে অনেক উঁচু হওয়ায় ব্যর্থ হলো সে। ব্যর্থ হয়ে এদিক ওদিক তাকালো তিথি। হঠাৎই তার চোখ গেল একটা চেয়ারের দিকে। তিথি বেশি কিছু না ভেবেই জোরে একটা নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল সে চেয়ারটার কাছে তারপর চেয়ারটা টেনে এনে রাখলো আলমারির মাঝ বরাবর। তারপর আস্তে আস্তে আগে চেয়ারের উপরে দাঁড়ালো কিন্তু তারপরও তার থেকে কিছুটা উঁচুতে হলো আলমারির উপরটা। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে তিথি এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে এই কাজগুলো আজ না করলেই ভালো হতো সবই শেষ শুধু এই ব্যাগটা রাখা ছাড়া। তিথি আর বেশি না ভেবে চটজলদি ব্যাগটা ধরে আলমারির উপরে রাখতে নিলো।

অন্যদিকে,,

সেই মুহূর্তে রুমে ঢুকলো আকাশ তিথিকে উপরে কিছু রাখতে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললো সে,

‘ তুমি ওখানে কি করছো তিথি?’

আচমকা আকাশের কন্ঠ শুনে পিছন ঘুরে তাকাতে নেয় তিথি সাথে চেয়ার উল্টে পড়ে যেতে নেয় সে। তিথিকে পড়ে যেতে আকাশ দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেললো তিথিকে। কিছুক্ষনের জন্য সবকিছু যেন থমকে গেল। আকাশ তিথি তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে তিথির তো ঘাবড়ে গিয়ে আকাশের শার্টের হাতা ঘামছে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে তৎক্ষনাৎ।

‘ ২ মিনিট পর ‘

হঠাৎই আকাশ তিথির দিকে তাকিয়ে থেকেই ললো,

‘ ভয় পাওয়া শেষ হয়ে গেলে এখন চোখ খুলতে পারো?’

আচমকা আকাশের কন্ঠ কানে আসতেই আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো তিথি সামনেই আকাশের মুখটা দেখে সাথে কিছুক্ষন আগে কি ঘটলো এসব ভেবে শুকনো ঢোক গিললো সে। তারপর মিনমিন কন্ঠে বললো,

‘ আই এক্সট্রিমলি সরি আসলে?’

তিথিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আকাশ তিথির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,

‘ হুস! নো এক্সকিউজ আই নো এই মাত্র কি হলো আর কিভাবে হলো।’

আকাশের কাজে তিথি আরো চমকে উঠলো সাথে বুকের ভিতর এক অস্থিরতা ফিল হলো তাঁর। আকাশ চটজলদি তিথিকে সোজা করে চেয়ার থেকে নামালো তারপর বললো,

‘ এবার বলো ওখানে কি করছিলে?’

আকাশের কথা শুনে তিথি হাত কচলাতে কচলাতে বলে উঠল,

‘ আসলে ওই ব্যাগটা আলমারির উপরে রাখতে চেয়েছিলাম।’

তিথির কথা শুনে আকাশ আলমারির ওপর সাথে ব্যাগ দুটোর দিকেই তাকালো তারপর বললো,

‘ তুমি যখন দেখেছো তোমার সাইট ওপর পর্যন্ত যাচ্ছে না তাহলে ট্রাই কেন করছিলে?’

‘ না মানে?’

‘ হয়েছে তোমার না মানে।’

এতটুকু বলে আকাশ নিজেই ব্যাগটা রাখলো উপরে। তারপর বললো,

‘ যেটা করতে পারবে না তাতে বেশি জোর দিবে না,এইমাত্রই তো কোমড় ভেঙে বিছানায় শুয়ে থাকা লাগতো।’

উওরে আর কিছু বলে না তিথি মাথা নিচু করে রয় সে। তিথিকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে আকাশ বলে উঠল,

‘ হয়েছে আর মাথা নিচু করে থাকতে হবে না। একচুলি তোমায় কিছু বলার জন্যই রুমে আসলাম।’

আকাশের কথা শুনে তিথি অতিআগ্রহে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কি কথা স্যার?’

‘ হুম বলছি, কথাটা হলো তোমায় নিয়ে নয় তেমার মাকে নিয়ে।’

‘ জ্বী বলুন স্যার।’

‘ তোমার মায়ের অপারেশনের সব ব্যবস্থা আমি করে ফেলেছি আর কালকেই ওনার অপারেশন হবে তিথি। আমার ফ্রেন্ড হৃদই তোমার মায়ের অপারেশন করবে তাই কাল ফিজিকালি আর মেন্টালি দুইদিক থেকেই তৈরি থেকো তিথি।’ কাল রাত ৯ঃ০০টায় অপারেশন।’

এতটুকু বলে চলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আকাশ। আকাশ যেতেই মায়ের কথা মনে করে মনটা খারাপ হয়ে যায় তিথির। মন খারাপ করেই বসে সে বিছানার ওপর।’

____

ভোর_৫ঃ৩০টা…

হঠাৎ কারো কান্নার শব্দ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় আকাশের। কিছুটা অবাক হয়ে আশেপাশে তাকালো আকাশ সামনেই সোফায় ওপর তিথিকে না দেখে কিছুটা বিস্মিত হয় সে। চটজলদি শোয়া থেকে উঠে বসলো আকাশ সামনেই তিথিকে জায়নামাজে বসে মোনাজাত নিতে সাথে কান্না করতে দেখে আকাশের আর কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না এতক্ষণ কার কান্নার শব্দ আসছিল। আকাশের ইচ্ছে করছে তিথির কাছে গিয়ে একটু সান্ত্বনা দিতে এমনিতেও এই কষ্টের অনুভূতি তো সেও ফিল করেছে অবশ্য ফিল করেছে বললে ভুল হবে এখনও ফিল করছে। নানা কিছু ভেবে একবার ভাবলো যাবে সে তিথির কাছে কিন্তু আবার ভাবলো না থাক।’ শেষমেশ মনের সাথে যুদ্ধ করে বিছানায় নীরবে শুয়ে পড়লো আকাশ।’

সকাল_৯ঃ০০টা…

হসপিটালের যাওয়ার জন্য সাথী তৈরি করছে তার মাকে। সেই নিয়ে যাবে তার মাকে হসপিটালে আর তিথিও সোজা হসপিটালে যাবে। প্রচন্ড ভয় সাথে কষ্ট হচ্ছে সাথীর না জানি কি হবে সামনে?’
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..