যদি তুমি জানতে পর্ব-২৪+২৫

0
360

#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_24
বাসায় এসে ক্লান্ত মুখে সোফায় বসে রইল সাহেলা বেগম। অনুষ্ঠান শেষ না হতেই চলে আসতে হলো। রুপার হঠাৎ হলোটা কি তাও বুঝতে পারছে না। প্রায় স্বাভাবিকই তো হয়েছিলো রুপা আবার কেন এমন করছে? এত বড় সাইকিয়াট্রিস্ট হওয়া সত্ত্বেও মাঝে মাঝে রুপার ব্যাপারে মাথা কাজ করে না সাহেলা বেগমের। আর রুপার প্রতি অসম্ভব মায়া পড়ে গেছে,ওর সাথে কোন প্রকার খারাপ ব্যবহারও করতে পারে না সাহেলা বেগম। হয়ত নিঃসন্তান হওয়ায় জন্য মায়াটা আরো তীব্র রুপার প্রতি।
কারো কাছে কিছু না বলেই রুপা কে নিয়ে চলে এসেছে। আজিজ চৌধুরী যদি খোঁজ করে? সাহেলা বেগমের মনে হলো ফোনে একবার জানিয়ে দেওয়া উচিত।রুপার এমন অসময়ের পাগলামির জন্য নিশ্চয়ই রেগে যাবে আজিজ চৌধুরী।
রুপা ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মত রুমে বসে আছে। রুপার বুক ফেটে কান্না আসছে। তুরান অন্য মেয়ের সাথে কেন কথা বললো? আবার ছবিও তুললো! রুপা থাকতে তুরানের কেন দরকার অন্য মেয়ের সাথে কথা বলার? তুরান ভার্সিটি, টিউশনে আরও কত জায়গায় যায়। তখনো কি এভাবে মেয়েদের সাথে কথা বলে? এই বিষয় নিয়ে কখনো ভাবা হয় নি রুপার। এমন সন্দেহ রুপার মনে কখনোই ঢুকে নি। রুপা ড্রেসিং টেবিলের কাছে রাখা ফুলদানিটা ছুঁড়ে মারলো। সাহেলা বেগমের কানে গিয়ে এই বিকট শব্দ টা পৌঁছলো। হতাশ ভঙ্গিতে বসে রইল সাহেলা বেগম। প্রায় এক বছর ধরে রুপাকে ভালো করার চেষ্টা করছে, রুপা হান্ড্রেড পার্সেন্ট না হলেও ফিফটি পার্সেন্ট সুস্থ হয়েছিলো। নিজেকে একটু হলেও সফল মনে হয়েছিল সাহেলা বেগমের। কত ভরসা করে রুপার মা-বাবা চিকিৎসার জন্য সাহেলা বেগমের কাছে রাখলো। রুপা যদি আবার এবনরমাল আচরণ করে ,কি জবাব দিবে রুপার মা-বাবার কাছে? রুপা যে স্টেডে আছে এই স্টেডের রোগিরা খুব বেশী সেনসেটিভ মাইন্ডের হয়। কারো কাছ থেকে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরন পেলেই পাগলের মত আচরন করে। বিয়ে বাড়িতে কত মানুষ ,কে রুপার সাথে কি বিহেভ করছে কে জানে।
উদ্ভ্রান্তের মত রুম থেকে বের হয়ে আসে রুপা।‌‌‌ ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলে,
-‘ আমি আবার ওখানে নিয়ে যাও।’
সাহেলা বেগম ব্যস্ত হয়ে বললো,
-‘ কি হয়েছে তোর? কেউ কি তোর সাথে খারাপ বিহেভ করছে? আমার কাছে বল অন্তত।’
সাহেলা বেগম রুপার সাথে একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রুপার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বললো,
-‘ কি হয়েছে আম্মু টা? আমায় বলো।’
-‘ একটা মেয়ে আমার সাথে খারাপ বিহেভ করছে। ওই মেয়ের সাথে আমার কথা আছে চলো।’
-‘ আরে এই টুকু বিষয়ের জন্য কেউ এমন করে? আমি তো ভয় পেয়েছিলাম। তখনই তো আমার কাছে বললেই হতো। আমরা দুই মা-মেয়ে মিলে মেয়েটার হাত -পা ভেঙে দিতাম।’
-‘ কিছু করতে হবে না তোমার তুমি আমার সাথে চলো।’
-‘ এখন আর কোথায়ও যেতে হবে না। এখন একটু ঘুম দে। আর ওখানে গিয়েই বা এখন কি করবি? অত মানুষের ভিতর কারো সাথে সিন ক্রিয়েট করলে মানুষ খারাপ বলবে।’
-‘ আমি কোন খারাপ বিহেভ করব না। তুমি যাবে কিনা?’
সাহেলা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললো,
-‘ আমি তোকে চিনি। এখন কোথায়ও যেতে হবে না।’
সাহেলা বেগমের কোন কথা মানতে রাজি না রুপা। সোফার উপর থাকা চায়ের গ্লাস টা ফ্লোরে‌ ছুঁড়ে মারে। সাহেলা বেগম কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। বলে আর কি হবে? ওর মাথা ঠিক থাকলে ও তো এমন করত না। কত লক্ষ্মী,ভদ্র ছিলো রুপা। সাহেলা বেগম একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
-‘ চল।’
গাড়িতে বসে ফুঁসছে রুপা। সাহেলা বেগম শঙ্কায় পড়ে গেল। কিসের জন্য রুপা আবার অনুষ্ঠানে যাবে? গাড়ি থামাতেই নেমে যায় রুপা, গেটের ভিতরে ঢুকে আশেপাশে কাউকে খুঁজতে থাকে। সাহেলা বেগম রুপা কে অনুসরণ করেছে। কি করে বসে রুপা কে জানে।
তীব্র বেগে একটা মেয়ের দিকে ছুটে যায় রুপা। সাহেলা বেগম বুঝতে পারলো রুপা সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা কে খুঁজে পেয়েছে।সাহেলা বেগম কে উপেক্ষা করে রুপা চড় বসিয়ে দেয় তুরানের সাথে বসে থাকা সেই মেয়েটার গালে। চার দিকের সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মুর্তির মত। হতভম্ব ভাব কাটিয়ে বললো,
-‘হোয়াট ইজ দিজ?’
মেয়েটা বোধ হয় কি বলবে কথা খুঁজে পাচ্ছিল না। এভাবে অপরিচিত কেউ যদি এসে কারো গালে চড় মারে, সবারই তখন বিস্ময় লেগে যায়।
একটু দুরে দাঁড়িয়ে ছিলো তুরান। রুপা চোখ লাল করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে । তুরান দ্রুত গতিতে সেখানে আসলো। তুরানও যথারীতি হাঁ করে তাকিয়ে রইল। মেয়ে টা আর কিছুই বলছে না।
-‘ আরে রুপা হয়েছে কি? তুমি ওর গালে থাপ্পড় দিলে কেন?’
-‘ তুরান তুমি ওকে চিনো? কি একটা অবস্থা দেখো। কোত্থেকে এসে চড় মারলো।’
রুপার দিকে তাকিয়ে আবার বললো,
-‘ এই মেয়ে প্রবলেম কি তোমার? মাথায় সমস্যা নাকি? কি হয়েছে কি তোমার?’
রুপাকে এভাবে কথা বলার তুরানের গায়ে লাগলো।
-‘ রুপা তুমি ওকে থাপ্পড় দিলে কেন?’
রুপা ঘৃন্য ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-‘ সেটা তোর কাছে বলতে হবে? ক্যারেক্টারলেস কোথাকার।’
রুপা এ কথাটা কাকে বললো ঠিক বুঝতে পারলো না সাহেলা বেগম। রুপা কেন ক্যারেক্টারলেস বললো তুরান কে? তুরানও কিছুই বুঝতে পারলো না। সাহেলা বেগম পাশে থাকায় কিছুই বলতে পারলো না।
সাহেলা বেগম বিনয়ী গলায় বলল,
-‘ প্লীজ মা তুমি ওর আচরণে কিছু মনে করো না।’
এই টুকু বলে সাহেলা বেগম থেমে আবার ইশারায় বললো,
-‘ ওর মাথায় সমস্যা আছে।’
মাথায় সমস্যা থাকলে সে মানুষ কে আর কি বলা যায়।
মেয়েটা শুধু বললো,
-‘ ইট’স ওকে আন্টি।’
পাশ থেকে এক ভদ্র মহিলা বললো,
-‘ মাথায় সমস্যা পাগলা গারদে রাখলেই তো পারেন। নয়ত তো মানুষ কে এভাবে জ্বালাতন করবে।’
কথাটা সাহেলা বেগমের মনে যতটা লাগলো তার চেয়ে বেশি লাগলো তুরানের মনে। দোষ যেহেতু রুপার তাই এর প্রত্যুত্তরে কি আর বলা যায়? ভদ্র মহিলার দিকে তেড়ে গেলো রুপা। সাহেলা বেগম রুপার হাত ধরে ফেললো। রুপা মহিলা টার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে বললো,
-‘ আমি পাগলা গারদে যাবো কেন? তুই যা পাগলা গারদে। হাতা কাটা ব্লাউজ পড়ে অসভ্য,বেহায়া মহিলা।’
রুপা কথা শুনে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। মহিলা টা চরম অপমান বোধ করলো। মহিলাটা কিছু বলতে গেলো কড়া গলায় কিন্তু সাহেলা বেগম হাত ধরে টেনে রুপাকে নিয়ে গেলো। আর এক মুহূর্ত‌ না দাঁড়িয়ে রুপাকে জোর করে গাড়িতে বসালো।
আজিজ চৌধুরী এই কান্ড দেখি নি তো? দেখলে বলবে রুপা কে ওর মা-বাবার কাছে দিয়ে আসতে। অন্যের মেয়ের জন্য নিজের মান- সম্মান নষ্ট করতে কেউই চাইবে না।
সারা পথে রুপাকে রাগালো সাহেলা বেগম। রুপার এমন আচরণের জন্য সাহেলা বেগম সত্যিই লজ্জিত।
মেয়েটা রুপাকে এমন কি বললো যার জন্য রুপা এভাবে রেখে আছে? সাহেলা বেগম যত যাই জিজ্ঞেস করছে রুপা নির্বিকার। একটা কথাও বলছে না।
একটু পর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে রুপা। অভিমানী গলায় বলল,
-‘ সবাই আমায় পাগলা গারদে দিয়ে আসতে বলো। আমায় পাগলা গারদে দিয়ে আসো।’
রুপা কে পাগলা গারদে দিয়ে আসাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত? রুপার যদি মানসিক উন্নতিই না হয় তবে ওকে এভাবে সাহেদা বেগমের কাছে রেখেই কি লাভ?
চলবে…

#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_25
হঠাৎ রুপার এমন এবনরমাল আচরণের কারন খুঁজে পাচ্ছেনা তুরান। রুপা ওকে ক্যারেক্টারলেস বললো কিন্তু কেন? আর হঠাৎ মালিহার গালে চড় দিলো কেন? অনেকক্ষণ পর আসল বিষয়টা তুরানের মাথায় আসলো। মালিহার সাথে কথা বলার কারনে কি রুপা ওকে ভুল বুঝেছে। কোন মেয়ের সাথে কথা বলার কারনে কেউ এমন সিন ক্রিয়েট করে? রুপার অন্তত জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো মেয়েটা কে? সেই কতক্ষন ধরে রুপা কে খুঁজতে ছিলো তুরান। কোথায় ছিলো এতক্ষন রুপা?
হঠাৎ একটা বিষয় মনে মনে পড়তেই তুরান চিন্তায় পড়ে গেলো।‌‌‌রুপা তো আর পাঁচটা মানুষের মত স্বাভাবিক না । রুপার আচরণে স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। রুপা ছোট খাটো বিষয় নিয়ে অনেক বড় কান্ড ঘটাতে পারে। এমনকি রুপা কোন কারনে কষ্ট পেলে নিজের শরীরে আঘাত করতেও বিন্দু মাত্রও বিচলিত হয় না। তুরানের চিন্তা ক্রমে ক্রমে গাঢ় হতে লাগলো। সত্যিকারের একটা চিন্তায় পড়ে গেলো তুরান। রুপা তো তুরানের কথা কোন যুক্তিই শুনতে চাইবে না। রুপা যেমনি হোক তুরান তো রুপা কে ভালোবাসে। আর এই ভালোবাসা সব ধরনের সমস্যা কে উপেক্ষা করতে পারে। তুরানের মাথায় এখন একটা চিন্তাই কাজ করছে রুপা যেন ওর ক্ষতি না করে । যেভাবে হোক রুপাকে বুঝিয়ে ঠিক করতে হবে। রুপা তো এমনই ওর প্রতি রাগ করেই বা কি হবে?
দিন টা ভালোই যাচ্ছিলো তুরানের। হঠাৎ ঝামেলা বেঁধে গেলো। রুপার ঠোঁটে চুমু খাওয়ার মুহূর্তের কথা ভাবতেই শিউরে উঠছে তুরান।কত সুন্দর মুহূর্ত নষ্ট হয়ে গেলো কি এক আজাইরা কারনে।সব ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো তুরান। রুপার জন্য মনটা বড্ড ছটফট করছে।‌
বিছানার উপর আধশোয়া অবস্থায় বসে রইল রুপা। অশান্তি লাগছে রুপার।‌‌‌‌‌কখনো উঠে বসে,কখনো একটু হাঁটে। আবার বালিশে হেলান‌ দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় বসে থাকে। অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না রুপা।‌ রুপার মনে এখন ঠিক অস্থিরতা কাজ করছে না, রুপার মনে এখন কাজ করছে তুরানের উপর ক্ষোভ।রুপা মনে মনে তুরানের সাথে কথা না বলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছে। তুরান কেন অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলো? তুরানের সামনে বসে ওই মহিলা আর মেয়েটা অপমান করলো রুপাকে অথচ তুরান কোন প্রতিবাদ করলো না । তীব্র অভিমানে ছেয়ে যাচ্ছে রুপার মন। চাপা কষ্ট কাজ করছে রুপার মনে। রুপা মনে মনে ভেবে নিলো রুম থেকে কয়েক দিনে বের হবে না। তুরানের সামনেও পরবে না। যত ইচ্ছা মেয়েদের সাথে কথা বলুক, রং ঢং করে কথা বলুক। বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে মন থেকে কষ্ট দূর করতে চাচ্ছে রুপা। অবাধ্য চোখ জোড়া বুঁজে শুয়ে রইলো, নিজেকে ঘুমে মগ্ন রাখার চেষ্টা করছে যথারীতি।
তুরান বাসায় এসে রুপার রুম টার দিকে তীব্র কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। চার দিকে নিরব একটা পরিবেশ বিরাজ করছে। তুরান হয়ত আশা করেছিলো বাসায় এসে রুপার চেঁচামেচি শুনবে ‌। কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না। সাহেলা বেগম রুপার রুমের পাশে একটা ইজি চেয়ারে ‌ খুব আয়েশ করে বসে রইলো। সাহেলা বেগমের ভাব- ভঙ্গিমা খুব স্বাভাবিক। তুরান আড়ালে দাঁড়িয়ে সাহেলা বেগমের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করে রুপার রুমটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো তুরান তেমন কোন লাভ হলো না। রুপার কোন খোঁজ নিতে পারলো না। তুরান হতাশ হয়ে রুমে চলে গেলো। তুরান এরকম পরিস্থিতির উপর যেন বিরক্ত হচ্ছে খুব।‌ বিকালে রুপা ছাদে গেলে সবটা বুঝিয়ে বলবে ,এ ছাড়া এখন আর কোন উপায় নেই। তুরান রুমে এসে গোসল সেরে নিলো। শরীরটা খুব ফ্রেশ লাগছে এখন। গোসলের পর চা বা কফি খাওয়া তুরানের অভ্যাস। দক্ষ হাতে চা তৈরি করে নিলো দ্রুত। দীর্ঘ দিন এভাবে ব্যাচেলর থাকতে থাকতে মেয়েলি সব কাজই মোটামুটি নিজের প্রয়োজনে শিখে ফেলেছে।তুরান বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর বইয়ের পাতায় একটু- আধটু চোখ বুলাচ্ছে। তুরানের চোখে ডাক্তারের দেওয়া সেই মোটা ফ্রেমের চশমা টা। বই পড়ার সময় ছাড়া চশমাটা চোখে দেয় না তুরান। চশমা পড়তে তেমন ভালোলাগে না।‌ আর চশমা পড়লে চেহারায় কেমন একটা হাবা হাবা‌ ভাব চলে আসে।
তুরান নিজেকে বইয়ের পাতায় মগ্ন রাখতে চাইলে রাখতে পারছে না। বার বার রুপার কথা মনে পড়ছে। তুরান চায়ের কাপ টা বেড সাইডে রাখলো। বইটা আর চশমা‌ টাও রেখে দিলো। তুরান চোখ বুঁজে আজকে‌ পুরো দিনের সব ঘটনা আরেক বার ভেবে নিলো। আজকে দিনটা তুরানের কাছে অনেক টা স্পেশাল। কারন রুপার ঠোঁটে প্রথম চুমো খেয়েছে।‌ সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিলো অনুভূতি টা। কেমন তীক্ষ্ণ একটা অনুভুতি, এমন অনুভূতি কখনো ভোলার নয় । এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো তুরান।
রুপা অনেকক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। ঘুমিয়ে মানুষ সব মান,অভিমান ভুলে থাকতে পারে। ঘুম কি একটা অদ্ভুত জিনিস। রুপা কিছুতেই রুম থেকে বের হতে চাচ্ছে না।
নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাচ্ছে, তাই টেবিলের কাছে রাখা খাতা আর পেন্সিল টা হাতে নিলো। রুপার কেন জানি হঠাৎ মনে হলো সে খুব ভালো ছবি আঁকতে পারে।‌ রুপার সাথে মাঝে মাঝে অদ্ভুত কান্ড ঘটে। মাঝে মাঝে রুপার মনে হয় সে অনেক কিছু জানে। এটা কেন মনে হয় রুপা জানে না। আর জানতেও চায় না। এসব নিয়ে ভাবতে গেলে রুপার মাথায় পেইন হয়। অথচ সাহেলা বেগম সব সময় রুপা কে এসব নিয়ে ভাবতে বলে। মাঝে মাঝে একারনে সাহেলা বেগমের প্রতি চরম বিরক্ত হয় রুপা।
রুপা অবচেতন মনে ছবি আঁকতে চেষ্টা করলো। রুপার ধারনা মিথ্যা না আসলেই রুপা খুব দারুন ছবি আঁকতে পারে। রুপা অবাক হয়ে যায়। এর আগে কেন রুপার মনে হলো না যে ও এত ভালো আঁকতে পারে? যদি জানতো তাহলে তুরানের একটা ছবি আঁকত।‌ এখন তো তুরানের সাথে রাগ রুপা,তাই তুরানের ছবি আঁকার কথা মাথায় আনছে না রুপা।
ঘুম থেকে উঠে তুরান দেখে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তুরান তড়িঘড়ি করে ছাদে যায়। ছাদে নেই রুপা। রুপা হয়ত আরও আগে এসে তুরানের জন্য অপেক্ষা করে চলে গেছে। তুরানের নিজের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। অস্থির হয়ে ছাদে পাঁয়তারা করতে লাগলো। হঠাৎ তুরানের মনে হলো এখন আর অপেক্ষা করে লাভ নেই। তাই তুরান যেভাবে হোক রুপার রুমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রুমে যাওয়া সম্ভব না হলেও জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া তো যাবে।
রুপার রুমের জানালা ভিতর থেকে আটকে দেওয়া। রুপা কি রাগ করে তুরানের কাছে থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখছে? ক্লিয়ারলি বিষয়টা বুঝতে পারছে না রুপা। এত টাইম রুপা তো কখনো তুরানের চোখের আড়ালে থাকে নেই। আর রুপা যদি তুরানের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করত তাহলে তুরান কে ছাদে না দেখে অবশ্যই তুরানের রুমে যেতো। তার মানে রুপা রাগ করে আছে,ইভেন তুরানের কোন খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করে নি।
তুরান আজিজ চৌধুরীর বাসার সামনে ঘুরঘুর করতে লাগলো। বিকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আজিজ চৌধুরীর রুম থেকে রুপার কথায় শব্দ আসছে। তুরান জানালার ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু দেখা গেলো না কারন জানালার পর্দা গুলো দেওয়া। রুপা রাগ করে নি , করেছে চাপা অভিমান। রাগ করলে হয়ত এতক্ষনে এসে তুরানের গালে কষিয়ে কয়েকটা থাপ্পর দিতো। রুপার এমন শূন্যতায় তুরান অনুভব করছে রুপা কে কতটা ভালবাসে। আসলে মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষ টার সাথে দূরত্ব তৈরি করে , নিজের গুরুত্বটা বুঝাতে হয়।
চলবে…