যদি দেখার ইচ্ছে হয় পর্ব-০৪

0
160

#যদি_দেখার_ইচ্ছে_হয়
#আফসানা_মিমি
|পর্ব: চার|

“ আপনার দাদী কী এই কথা কখনে বলেনি যে, যখন তখন যার তার সামনে সব কথা বলতে নেই!”

হাতের পো’ড়া স্থানে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে অন্তিক। গালে হাত দিয়ে মনোযোগ সহকারে তাকে দেখছে মিষ্টি। অন্তিকের কথার জবাবে বলে, “ দাদী বলে দিয়েছে, স্বামীর সামনে লজ্জা শরমকে কৌটায় ভরে রেখে দিতে।”

কথাটা শুনে অন্তিক বিষম খায়। মিষ্টির মুখে তখনো দুষ্ট হাসি। হাতের যন্ত্রণা নিবারক ঔষধি যে তার সামনে। কতশত কল্পনা ঝল্পনা করেছে সে মানুষটার জন্য! তা কী অন্তিক জানতে পারবে? উম! কখনোই না।মিষ্টি না বললে অন্তিক কী, তার বাবা মাও জানতে পারবে না।

“ মেয়ে এতোটাও বোকা হইয়ো না। নিজের জীবনকে ভালোবাসো। অন্যের জন্য সময় ফুরালে শেষে পথ ভুলবে।”

অন্তিকের কথার মর্মার্থ মিষ্টি বুঝতে না পারলেও তাকে জ্বালাতে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এঁটে। হাত নাড়াচাড়া করে থাকে। অন্তিক মিষ্টির থেকে যতোই দূরে সরে আসতে চাইছে মিষ্টির দুষ্ট মিষ্টি কার্যকলাপে ততোই কাছে চলে আসছে। হাত নড়াচড়ায় অন্তিক একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে মিষ্টির গাল চেপে ধরে বলে, “ ঘুমন্ত বাঘকে জাগিয়ে দিও না, মেয়ে! শেষে সইতে পারবে না।”

“ আমার সামনে বাঘ সিংহ সাজতে পারলে চাচীর সামনে ভেজা বিড়াল সাজার ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করবেন, অন্তু?”

অন্তিকের হাত নরম হয়ে আসে। নজর এলোমেলো তার। মিষ্টির উদ্দেশ্যে বলে,“ তেমন কিছু নয়। আমার বিষয়ে এতো ভাবার প্রয়োজন নেই।”

“ কথা লুকাচ্ছেন? আমার কাছে থাকলে কথার জালে ফাঁসিয়ে দিব একদম। মনে সংশয় না রেখে পেটে যা আছে বলে ফেলুন। আমি মেয়েটা দুষ্ট হতে পারি কিন্তু খারাপ নয়!”

অন্তিক নিশ্চুপ থেকে মিষ্টির থেকে দূরে সরে আসে। তার জীবনের সবচেয়ে সত্যি কথা চাইলেও সে জানাতে পারবে না মিষ্টিকে। ভাবনায় বিভোর থেকেই সে পরিধানের বস্ত্র খুলে ফেলে মিষ্টি নামক নব বঁধুর কথা ভুলে। মিষ্টি এক হাতে চোখ ঢেকে নিয়ে চিৎকার করে বলে,“ আমি সব দেখে ফেলছি, অন্তু! আপনি আরো বিবস্ত্র হোন, আমি কিন্তু চোখ বন্ধ করব না!”

অন্তিক এবার হেসে ফেলে। এক মুহূর্তের জন্য মিষ্টি নামক মিষ্টির স্বাদ নিতে ইচ্ছে জাগে। দুষ্ট মেয়েটা মন ভালো করার ঔষধ। জাদু টোনা জানে হয়তো। তাইতো অন্তিক কয়েক ঘণ্টায় মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ হয়তো এভাবেই হয়। পবিত্র বন্ধনের মাধ্যমে সম্পর্ক আরো সহজ ও মজবুত হয়। অর্ধ বস্ত্রেই সে মিষ্টির কাছে আসতে থাকে। চোখ ঢাকার কথা বললেও মিষ্টি আঙ্গুলের ফাঁকে ঠিকই অন্তিককে চোখ দ্বারাই গিলে খাচ্ছিল। অন্তিকের এগিয়ে আসায় সে জিহ্বায় কামড় বসায়। বিছানা থেকে নেমে ঘরেই দৌঁড়াতে শুরু করে। অন্তিকও তার পিছনে ছুটছে। খিলখিল করে হেসে অন্তিকের আকর্ষণ আরো বৃদ্ধি করে দিচ্ছে মিষ্টি। উচ্চস্বরে শুধায়,“ আমি দুষ্টুমি করছিলাম। সত্যি আমি কিছু দেখিনি। অন্তু, আপনি আমাকে শাস্তি দিবেন না!”

একসময় অন্তিক মিষ্টিকে ধরে ফেলে। দু’জনই হাঁপাচ্ছে। মিষ্টির হাসি তখনও থামেনি। অন্তিকের রোমান্টিক ভাবটাও তার কাছে নিছক মজা মনে হচ্ছে। অন্তিক মিষ্টিকে দেখে শুধায়,“ আমাকে ভয় পান না?”

” বাঘকে ভয় পাওয়া যায়, কচ্ছপকে না।”

“ ছোট প্রাণী বলে দুর্বল ভেবো না মেয়ে! ভুলে যেও না কচ্ছপই কিন্তু একদিন বিজয়ী হয়েছিল।”

“ হ্যাঁ হ্যাঁ এই কচ্ছপের দৌড় কতটুকু তা জানার আছে, চাচীর ভয়ে চুপসে থাকে সদা।”

হাসির ছলে মিষ্টি কথা বললেও অন্তিক ভাবনায় পড়ে। মিষ্টি একদিনে তার পরিবার সম্পর্কে এত বিষয় কীভাবে জানে? পরমুহূর্তে সে ভাবে, দাদা হয়তো সব বলেছে। অন্তিকের মনে তবুও সন্দের বীজ বুনে সে মিষ্টিকে দেয়লের সাথে আটকে ধরে। পেশীবহুল শরীরের আড়ালে এইটুকু মিষ্টিকে দেখা মুশকিল। মিষ্টিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে,” আমার পরিবার সম্পর্কে এতকিছু জানো কীভাবে?”

মিষ্টির হাসি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। হাসির চোটে, মজার ছলে সে এবাড়িতে প্রবেশ করার রহস্যের আধঅংশ বলে ফেলেছে।মিষ্টির বলা কথা আধা ধরলে ভুল হবে সে যেন পূর্ণ কথার সারমর্ম তুলে ধরেছে অন্তিকের সামনে। যা একটু বিশ্লেষণ করলেই অন্তিক বুঝতে পারবে। কথা ঘুরানোর জন্য মিষ্টি হাত বাড়িয়ে অন্তুিকের গলায় ঝুলে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,“ আপনি যদি গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি নিতেন কতো ভাল হতো! অন্ততপক্ষে আমার হাত পোড়ার রহস্য উদঘাটন করতে পারতেন!”

অন্তিকের টনক নড়ে।চিন্তায় ভ্রু যুগল কুঁচকে আসে। সে ভাবে, সত্যিই তো! মতো মিষ্টির হাত কীভাবে পুড়েছে তার কথা সে একবারও জিজ্ঞেস করেনি। অন্তরে অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে মিষ্টির থেকে সরে আসতে নিলে মিষ্টি বাঁধা দেয়। পূর্বের চেয়েও আরো গভীরভাবে অন্তিকের শরীর ঘেঁষে বুঝায় সে নড়তে নারাজ। অন্তিক অযথা সময় নষ্ট না করে জিজ্ঞেস করে,“ হাত পুড়লে কীভাবে? চাচীকে বললেই তো চাচী সব দেখিয়ে দিত।”

মিষ্টি এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিল। অন্তিক প্রশ্ন করলেই সে অন্তিকের বুজে যাওয়া চোখ খুলতে পারবে এবং পুরোনো অপরাধীর অপরাধ সম্মুখে আনতে পারবে। মিষ্টি অন্তিকের উন্মুক্ত বক্ষস্থলে মাথা রেখে বলতে শুরু করে,“ চা বসিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। চাচী এসেছেন সেটা দেখে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম তখনই চাচী আমার হাত হাত নাড়া দেয়, অল্পের জন্য চাচীর হাতে গরম চা পরেনি কিন্তু আমার হাতে অনেকটুকু পরে যায়। যতটুকু বুঝতে পেরেছিলাম আপনার চাচী নিজে পো’ড়া’র জন্য এসেছিল। এছাড়াও সকালে উনি যা করেছিল তাতে বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে উনার পছন্দ হয়নি। উনি আমাকে দাদা ও বাবার সামনে খারাপ বানাতে চেয়েছিলেন।আমি তো বিশেষ কিছু করিনি। চা পরে যাওয়ার পর হাত জ্বলা শুরু করতেই চায়ের পাত্র চাচীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চিৎকার করেছি মাত্র।”

অন্তিকের যা বুঝার বুঝে এসেছে। লায়লা বেগম তার জীবনের সাথে মিষ্টির জীবন গড়তে দিবে না, তাই হয়তো মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছে। অন্তিক হৃদয়ে পাথর চেপে মিষ্টিকে বক্ষস্থল থেকে সড়িয়ে নেয়। মিষ্টির কাঁধে নিজের দুই হাত খুব শক্ত করে চেপে ধরে বলে, “ আমার থেকে যতটুকু সম্ভব দুরত্ব বজায় রাখবেন। আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি।”

আকাশের বুকে যেমন হঠাৎ মেঘ জমে মিষ্টির মনের অন্তিকের কথা শুনে তেমন মেঘ জমে আসে।সে মন খারাপ করে প্রশ্ন করে, “ আপনার মনে কী তবে পর নারীর বাস, অন্তু?”

মিষ্টির আঁধারে ছেয়ে যাওয়া মুখশ্রী দেখে অন্তিক নজর ঘুরিয়ে ফেলে। মিষ্টির কাছ থেকে দূরে সরে যেতে নিতেই মিষ্টি রেগে অন্তিকের অর্ধবিবস্ত্র বক্ষস্থলের খামচে ধরে।বিবস্ত্রহীন বক্ষে সঙ্গে সঙ্গেই দা ব’টি’ র চেয়েও অধিক ধারালো পদার্থ প্রবেশ করে। মিষ্টির ভ্রুক্ষেপহীন বাঘিনীর ন্যায় অন্তিককে আক্রমণ করে বসে। পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করে, “ বলুন, আমার প্রতি অনীহার কারণ কী অন্য কেউ?”

চোখ বন্ধ করে অন্তিক উত্তর দেয়, “ যদি হ্যাঁ বলি তবে কী মুক্তি পাব?”

“ বলেই দেখুন।”

“ তবে হ্যাঁ! আপনাকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে আমি বাছাই করিনি। আমার মন প্রাণ অন্যথায়।”

মিষ্টি অন্তিকের থেকে সরে বসে। অভিমানে অন্তর ক্ষরণ হয় তার। তা কী অন্তিক বুঝতে পারছে? মন খারাপ করে অন্তিকের কাছে পুনরায় ফিরে হাত অন্য প্রান্তে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,“ আমার ফোনটা দিন।”

অন্তিক বিনাবাক্যে মিষ্টির ফোন ফেরত দেয়। বিছানায় বসে কাউকে ফোন করে সে। দুই একবার রিং হতেই কাঙ্খিত ব্যাক্তি ফোন ধরলে মিষ্টি বলতে শুরু করে,“ তুমি না বলেছিলে,বিয়ে করলেই ঝামেলা শেষ! বিয়ের পর স্বামীভক্ত হলে স্বামী খুশি হয়! কই, আমার স্বামী তো অখুশি। বজ্জাত খরগোশের মা, মিথ্যা বলে আমাকে পরের ঘরে পাঠালে! নিজে মুক্তি পেয়ে আমার জীবন জাহান্নাম বানালে? একবার বাড়ি আসি,তোমার চামড়া কে’টে নুন দিয়ে খাব বলে দিলাম।”

কথা শেষ করে অপরপক্ষকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মিষ্টি ফোন কে’টে বিছানায় ছুঁড়ে মারে। অন্তিক বোকার ন্যায় কথাগুলো শুনে অবাক হয়। কিয়ৎ সময় পাড় হতেই মিষ্টি অন্তিককে শক্ত কথা শোনাবে বলে প্রস্তুতি নিতেই অন্তিকে বিবস্ত্র বক্ষস্থলে নজর পরে। পাঁচ আঙ্গুলের নখের গর্ত হয়ে আছে সেখানে। কয়েক জায়গায় ছোপ ছোপ র’ক্তে’র দাগ বিদ্যমান। মিষ্টির খুবই আফসোস হয়!সে নিজের প্রিয় নখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,“ চিন্তা করিস না। আজই তোর ক’ত’ল হবে।”

ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে ঔষধের বাক্স দেখতে পায় সে। সেখান থেকে স্যাভলন ক্রিম নিয়ে বিনাবাক্যে অন্তিকের বক্ষস্থলে দিতে শুরু করে। মিষ্টির জীবনে দুঃখ নামক ঝড় আসা নিষেধ। সবকিছুই যেন তার কাছে পানিভাত। অন্তিকের বুকে ফু দিয়ে ক্রিম লাগাতে লাগাতে বলে,“ আপনি আপনার বাবার মতো হয়েছেন, অন্তু! বাবাও মিথ্যা বলতে পারে না; আপনিও না। আমার প্রতি অমনোযোগীর কারণ জেনে নিব। তার আগে আপনাকে মিথ্যা বলা শেখাবো।”

মিষ্টির কথা শেষ হতেই কেউ একজন জোরে দরজা খুলে নেয়।মিষ্টি ঠোঁট তখন অন্তিকের বিবস্ত্র বক্ষস্থল ছুঁই ছুঁই। দরজা খোলার উচ্চ আওয়াজে ভয়ে মিষ্টির ঠোঁট জোড়া অন্তিকের বুকে ঠেকে।তখনই কারো ভরাট কণ্ঠস্বর শোনা যায়। আগন্তুক গগনবিদারী চিৎকার করে বলে উঠে,“ এখানে এসব কি হচ্ছে?”

মিষ্টি সেই অবস্থায়ই দরজার দিকে তাকায়। মানবী কাউকে দেখে টনক নড়ে। শাড়ির আঁচল অন্তিকের উন্মুক্ত বক্ষস্থলের উপর মেলে ধরে বলে,“ এ কোন আপদের আগমন ঘটলো জীবনে?

চলবে……………….