যেদিন তুমি এসেছিলে পর্ব-৮+৯

0
578

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
শুভ্র আলোক ছটায় আহনাফের ফরসা পিঠটিতে আলতো কাঁপা হাতে রক্ত তুলা দিয়ে মুছে দিচ্ছে অর্ষা। পাশেই তুলোর প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে রেণু। আহনাফের লজ্জা কিন্তু ভাঙেনি। সে তোয়ালে খোলেনি শরীর থেকে। শুধুমাত্র ক্ষতস্থান থেকে কিঞ্চিৎ সরিয়েছে।

অর্ষার কাঁপাকাঁপা হাতের স্পর্শ বুঝতে বেগ পেতে হয় না আহনাফকে। সে অনেকক্ষণ যাবৎ চুপ থাকলেও এবার বলেই ফেলল,’তোমার কি আবার জ্বর এসেছে?’

অর্ষা চমকে উঠে বলল,’না তো!’

‘তাহলে এত কাঁপছ কেন?’

রেণু মুখ টিপে হাসছে। অর্ষার কাঁপাকাঁপা হাতটি সেও লক্ষ্য করেছে তবে এতক্ষণ কিছু বলার সাহস হয়নি। এখন আহনাফ বলায় সে আর না হেসে পারল না। অর্ষা আরো বিব্রতবোধ করতে থাকে।

‘আফায়ও মনে হয় শরমাইতাছে।’ মুখ টিপে হেসেই বলল রেণু।

আহনাফ অর্ষার দিকে ঘুরে বসল। অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,’তাই নাকি? তাহলে তো শরমে শরমে কাটাকাটি হওয়ার কথা। কারণ আমিও শরম পাই।’

রেণু এবার শব্দ করে হেসে ফেলে। আহনাফ ধমক দিয়ে বলে,’হাসছিস কেন? লজ্জা পাওয়া কি খারাপ কিছু?’

রেণুর হাসি বন্ধ হয়ে যায়। সে স্ট্যাচুর মতো সোজা হয়ে দাঁড়ায়। অর্ষা ঠিক বুঝতে পারল না আহনাফ তার পক্ষ নিল নাকি তাকে নিয়ে মজা উড়াল। সে আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। আহিলের কাছে শুনেছে লোকটা নাকি ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের। কিন্তু কই? এখন তো তার এমনটা মনে হচ্ছে না। সে তো দিব্যি অর্ষার সঙ্গে মজা লুটছে। এর মানে কী তবে? কিন্তু আহিলও তো আর তাকে মিথ্যে বলবে না!

সে ভাবনা-চিন্তা বাদ দিয়ে যারপরনাই নিজেকে শান্ত করল। নিচুস্বরে বলল,’আমি যাই। আপনি রেস্ট নিন।’

উত্তরের অপেক্ষা না করেই অর্ষা বড়ো বড়ো পা ফেলে আহনাফের ঘর থেকে প্রস্থান করে।
.
আমেনা বেগমদের বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা পার হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে ছেলের এই অবস্থা দেখে তিনি কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছেন। জহির চৌধুরী অস্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। আহনাফ মূলত তার মতোই হয়েছে। সহজে নিজের সুখ, দুঃখগুলো প্রকাশ করতে পারেন না; যেমনটা আমেনা বেগম অনায়াসেই পারছেন।

আমেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলছেন,’তুই আমায় আগে কেন জানাসনি বল তো? আমার ছেলের এই অবস্থা, আর আমরা আনন্দ করে এলাম!’

আহনাফ তার মাকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলল,’তেমন ক্ষতি তো হয়নি মা। তোমাদের চিন্তায় ফেলতে চাইনি। তাই জানাইনি।’

তিনি কাঁদতে কাঁদতেই রাগের সহিত বললেন,’এখন কি আগে থেকে জানার জন্য তোর ক্ষতি হওয়া লাগবে?’

‘শান্ত হও মা।’

‘কী শান্ত হব? তুই কি বুঝবি সন্তানের জন্য মায়ের কত চিন্তা হয়।’

‘সেটাই তো! আমাদের পেটে তো কখনো বাবু হবে না।’ চিন্তিত হওয়ার ভান ধরে বলল আহিল।

আহনাফ মুচকি হাসে। আমেনা বেগম আগুন দৃষ্টিতে ছোটো ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন,’খবরদার! আমার সাথে একদম মজা নিবি না।’

আহনাফ ইশারায় আহিলকে বলল মাকে আর না রাগাতে। সে নানানভাবে মাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। তবে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছেন না। না পেরে আহনাফ শুয়ে পড়ে বলল,’অনেক রাত হয়েছে মা। শরীরটা খুব খারাপ লাগছে।’

তিনি চোখের পানি মুছে বললেন,’তুই ঘুমা বাবু। আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।’

‘তোমাকে রাত জেগে বসে থাকতে হবে না। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।’

‘চুপ করে থাক। কোনো কথা বলবি না। তুই অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকবি আর আমি কাছে থেকেও ঘুমাব? বিদেশ-বিভূয়ে তো অসুস্থ হলেও জানাস না কখনো।’

‘জানিয়ে কী হবে? তুমি তো যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি জুড়ে দেবে। এখনো একই কাজ করছ। যাও তো ঘুমাও।’

‘আমি কী বললাম তুই শুনিসনি? তুই আগে বিয়েটা কর। বউয়ের হাতে তোর সব দায়িত্ব দিয়ে তারপর আমি শান্তিতে ঘুমাব।’

‘তুমি তাও ঘুমাবে না মা। আমি জানি ভালো করে।’

তিনি ফ্যাকাসে মুখে বললেন,’না ঘুমালে নাই। প্রয়োজনে বউ-শাশুড়ি মিলে ছেলের সেবা করব।’

জহির চৌধুরী বললেন,’ছেলেটাকে এবার একটু ঘুমাতে দাও।’

‘ওষুধ খেয়েছ ভাইয়া?’ জিজ্ঞেস করল আহিল।

‘হ্যাঁ। আমি খেয়েছি। অর্ষা ঠিকমতো খাচ্ছে নাকি, ওষুধ খেয়েছে নাকি ওর খবর নে আগে। যেহেতু তোর কারণেই এই বাড়িতে আসছে, সূতরাং অর্ষা এখন তোর রেসপন্সিবিলিটি।’

‘ও ঘুমাচ্ছে ভাইয়া। রেণু আপার থেকে জেনে নিয়েছি।’

আমেনা বেগম বললেন,’ঠিক আছে। তোরাও গিয়ে এখন ঘুমিয়ে পড়।’

আমেনা বেগম রয়ে গেলেন। তিনি ছেলের মাথায় চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন। এতক্ষণ ক্ষতস্থানে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছিল আহনাফের। তবে এখন মায়ের মমতাময়ী হাতের স্পর্শে দু’চোখের পাতায় শান্তির ঘুম ভর করেছে।
______
সকালে কলেজে যাওয়ার সময় কেয়া এসে উপস্থিত হলো এই বাড়ি। সকলের নাস্তা প্রায় শেষ। আহিল আর অর্ষা বের হচ্ছিল তখন মেইন গেইটে কেয়ার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। অর্ষা দৌঁড়ে গিয়ে কেয়াকে জড়িয়ে ধরে।

কেয়াও অর্ষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,’কেমন আছিস?’

‘আলহামদুলিল্লাহ্‌, আপু। তুমি কেমন আছো?’

‘আমিও ভালো আছি। গতকাল তো তোর সাথে দেখা হলো না। তাই ভাবলাম আজ দেখা করে যাই। তোর শরীর কেমন এখন?’

‘আলহামদুলিল্লাহ্‌। এখন অনেকটাই সুস্থ। তুমি আজ শো-রুমে যাওনি?’

‘গিয়েছি। ভার্সিটিতে যাব আজ। পরীক্ষা আছে।’

‘পরীক্ষা কয়টায়?’

‘সাড়ে দশটায়। তোরা মনে হয় কলেজে যাচ্ছিলি। তাহলে আর দেরি করিস না। সাবধানে যা।’

আহিল বলল,’আমরা যাচ্ছি। তুমি ভেতরে যাও।’

‘না, না। এসেছিলাম অর্ষাকে দেখতেই।’

অর্ষা অসহায়ভাবে বলল,’ওর ভাই এক্সিডেন্ট করেছ জানো? করুণ অবস্থা!’

‘বলিস কী? কোথায় এখন?’

‘বাসায়ই আছে। দেখে আসো।’ বলল আহিল।

কেয়া হাতঘড়িতে সময় দেখে বলল,’ঠিক আছে। তোরা সাবধানে যাস। আল্লাহ্ হাফেজ।’

‘আল্লাহ্ হাফেজ।’

অর্ষা এবং আহিল যাওয়ার পর কেয়া বাড়িতে ঢোকে।

আমেনা বেগম ড্রয়িংরুম থেকে বেডরুমের দিকে যাচ্ছিলেন। রেণু দরজা খুলে দেওয়ার পর কেয়াকে দেখে দাঁড়িয়ে যান। হেসে বলেন,’আরে কেয়া তুমি! এসো ভেতরে এসো।’

কেয়াকে নিয়ে তিনি সোফায় বসলেন। কেয়া জিজ্ঞেস করল,’ভালো আছেন আন্টি?’

‘আলহামদুলিল্লাহ্‌ মা, ভালো। তোমার কী খবর বলো? কাল আসলে দেখা করোনি কেন?’

‘জি আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো। সময় ছিল না আন্টি। আজ পরীক্ষা আছে তো তাই ছুটি নিয়েছি। ভাবলাম যাওয়ার আগে অর্ষাকে দেখে যাই।’

‘ওরা তো কিছুক্ষণ আগেই বের হলো।’

‘দেখা হয়েছে। আহনাফ ভাইয়া নাকি এক্সিডেন্ট করেছে?’

আমেনা বেগমের হাসি হাসি মুখটিতে আঁধার নেমে আসে। মুখটা প্রায় কাঁদো কাঁদো। ধরে আসা গলায় বললেন,’হ্যাঁ। কী যে হয়ে গেল!’

‘খুব বেশি অসুস্থ?’

‘হ্যাঁ। একটু আগে খাইয়ে ওষুধ খাওয়াই দিলাম। এখন ঘুমাচ্ছে।’

ঘুমাচ্ছে যখন তখন তো আর দেখতে যাওয়ার কিছু নেই। তাই কেয়া ছোটো করে বলল,’ওহ!’

‘তুমি খেয়ে এসেছ?’

‘জি আন্টি।’ একটু থেমে কেয়া হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলল,’এখন তাহলে উঠি আমি। ভার্সিটিতে যেতে হবে।’

‘আচ্ছা। ভালোমতো পরীক্ষা দিও। আর সময় করে একদিন এসো।’

‘ইন-শা-আল্লাহ্ আসব।’ বলে কেয়া চলে যায়। আমেনা বেগম একবার আহনাফের রুমে উঁকি দিয়ে দেখেন জেগেছে কিনা। না, জাগেনি।
.
.
কলেজে আসার পর থেকে ফোনে ঘুটুর-মুটুর প্রেমালাপে ব্যস্ত লামিয়া। ওর ফিসফিসানি প্রেমালাপে বিরক্ত গ্যাঞ্জাম পার্টির বাকি সদস্য। এমনকি সে ক্লাসে বসেও পর্যন্ত বেঞ্চের নিচে মাথা লুকিয়ে ফিসফিস করে কথা বলছে।

রেশমি প্রায় অতিরিক্ত বিরক্ত হয়েই লামিয়ার কোমরে খোঁচা দিয়ে বলল,’দুনিয়াতে একলাই কি তুই পিরিত করস? ফোন রাখ কইতাছি। এক্ষুণী ফোন রাখবি।’

লামিয়া বিরক্ত চোখে তাকায়। ফোন কেটে ফিসফিস করে বলে,’এখন প্রেম করব না তো কখন করব? বিয়ের পর?’

‘বিয়ের পরেই করবি। বিরক্ত লাগতাছে তোর লুলামিগিরি!’

‘রেশমি বাজে কথা বলবি না।’

অর্ষা যথাসম্ভব চেষ্টা করছিল ওদের কথোপকথনে কান না দিয়ে স্যারের লেকচারে মনোযোগ দেওয়ার জন্য। ওর বামপাশে বসেছে জুঁই। সে কারো সাথে ম্যাসেজিং করছে আর মিটমিট করে হাসছে। ডানপাশে রেশমি আর লামিয়া ফিসফিস করেই তুমুল ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়েছে। একেই না বলে গ্যাঞ্জাম পার্টি?

স্যারের অনেকক্ষণ যাবৎ ওদের লক্ষ্য করছিলেন। এবার তিনি কড়াকণ্ঠে লামিয়া ও রেশমির উদ্দশ্যে বলল,’কী হচ্ছে?’

জুঁই ভয়ে আঁৎকে ওঠে। যদিও স্যার ধমক দিয়েছিলেন ওদের দুজনকে, তবে জুঁই ভেবে নিয়েছে স্যার ও’কে ফোন চালাতে দেখে ফেলেছে। যার দরুণ ভয়ের চোটে ফোন হাত থেকে ছিটকে অর্ষার পায়ের কাছে পড়েছে। ক্লাসের সকলের দৃষ্টি এখন ওদের বেঞ্চে বসা ওদের চারজনের ওপর স্থির। অর্ষা ফোন তুলে বেঞ্চের নিচ থেকে মাথা উঠাবে তখনই ফোন ভাইব্রেট হওয়া শুরু হয়। স্যারও তখন ওদের বেঞ্চের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

স্যার ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে আছেন অর্ষার দিকে। গম্ভীরকণ্ঠে বললেন,’কী? প্রেম করছ?’

বিস্ময়ে হা হয়ে যায় অর্ষার মুখ। প্রেম আর সে? সে তো এসবের আগেও নেই, পিছেও না। সে তড়িঘড়ি করে বলল,’না, না স্যার।’

‘কী না, না? দেখি ফোনটা দাও।’

জুঁই চোখ বন্ধ করে মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। স্যার ফোন হাতে নিয়ে দেখেন স্ক্রিনে লেখা ‘সন্টুমন্টু জান’। তিনি নামটা দেখে দু’ভ্রুঁ উঁচু করে জোরে বললেন,’সন্টুমন্টু জান?’

এই নাম শুনে ক্লাসের সবাই সমস্বরে হেসে ওঠে। স্যারও কেন জানি হেসে ফেলল। কিয়ৎক্ষণ বাদে সকলকে ধমক দিয়ে বলল,’সাইলেন্ট!’

দ্বিতীয় দফায় ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। এবার স্যার নিজেই ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দেন। তিনি কিছু বলার পূর্বেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে রাশভারী কণ্ঠে ভেসে আসে,’এই বেয়া’দব, ফা’জিল মেয়ে এখন কেন উত্তর দিচ্ছেন না? আপনার জান জান বলা বের করব আমি। আপনি চেনেন আমায়? খবরদার বলে দিচ্ছি আমায় ডিস্টার্ব করবেন না।’ বলে ফোন লাইন কেটে দেয় ছেলেটি।

এবার সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। এমনকি স্যারও। স্যার বিস্ময় নিয়ে বললেন,’তোমায় আমি অনেক সহজ-সরল ভাবতাম অর্ষা। সন্টুমন্টু জান লেখা দেখে ভাবলাম, থাক দু’দিন পর ভার্সিটিতে যাবে; এখন তো প্রেম করতেই পারে। কিন্তু এখন তো দেখছি ঘটনা ভিন্ন! তুমি একটা ছেলেকে ডিস্টার্ব করছ?’

স্যারের কথা কর্ণকুহরে আঘাত করার পূর্বেই অর্ষার হাত-পা কাঁপছে। এমনকি জুঁই বাদে গ্যাঞ্জাম পার্টির সকলেও অবাক। কারণ ওপাশে কথা বলা ছেলেটি ছিল আহনাফ!

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৯
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________
সকলকে অবাক করে দিয়ে জুঁই ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দেয়। স্যার থতমত খেয়ে যান ওর কান্না দেখে। জুঁইয়ের দেখাদেখি লামিয়া আর রেশমিও কান্না শুরু করে দেয়। এদিকে অর্ষার তো স্যারের ধমক খেয়ে আগে থেকেই কাঁদোকাঁদো ভাব। এবার সেও পুরোপুরি কান্না শুরু করে। উপস্থিত সকলের চক্ষু চড়কগাছ। সকলেই বিড়বিড় করছে,’ড্রামাবাজগুলা নতুন ড্রামা শুরু করেছে আবার!’

স্যার বিস্মিত হয়ে বললেন,’কী আশ্চর্য! তোমরা কাঁদছ কেন?’

তখন ছেলেদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে উঠে আসে। ছেলেটি জুঁইয়ের প্রাক্তন। সে সুযোগটা হাতছাড়া করল না। কারণ জুঁইও সুযোগ পেলে কখনো তাকে হেনস্তা করতে ছাড়ে না। সে স্যারের কাছে এসে বলল,’স্যার, ফোন তো এটা জুঁইয়ের। অর্ষার নয়।’

জুঁইয়ের কান্না বাড়ে এবার। স্যার অবাক হয়ে বলেন,’এই সন্টুমন্টু জান তাহলে তোমার? এজন্যই ধরা পড়ে তুমি কাঁদছ?’

জুঁইয়ের কান্নার গতি বাড়ে। লামিয়া আর রেশমি থেমে যায়। লামিয়া বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বলে,’ধুর বাল! এই মাইয়ার দোষ! আমি আরো ভাবলাম জুঁইয়ের ফোন দিয়েই মনে হয় অর্ষা আহনাফকে জ্বালাচ্ছে। বেচারি বোকারানী বকা খাচ্ছে বলে কাঁদছিলাম। এখন দেখি আসল কালপ্রিট জুঁই!’

স্যার লামিয়াকে বিড়বিড় করতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,’অর্ষাকে ধমক দেওয়ায় অর্ষা কাঁদছে। জুঁই না হয় কাঁদছিল ভয়ে, যদি অর্ষা আমায় সব বলে দে তাই। কিন্তু তুমি কেন কাঁদছিলে?’

লামিয়া বিমর্ষতা প্রকাশ করে বলল,’আমি ভেবেছি জুঁই অর্ষার জন্য কাঁদছে। ভাবলাম, আমিও তো অর্ষার বান্ধবী। তাহলে আমি কেন কাঁদব না?’

স্যার অসহায় দৃষ্টিতে রেশমির দিকে তাকিয়ে বললেন,’আর তুমি?’

‘স্যার অর্ষা, লামিয়া, রেশমি তো আমারও ফ্রেন্ড। তাহলে আমি কেন কাঁদব না?’

‘তোমাদের গ্যাঞ্জাম পার্টির ছেলে সদস্যরা কোথায়? ওরা কেন চুপ?’ এটা বলে সে ছেলেদের বেঞ্চের সারির দিকে তাকিয়ে দেখে আহিল, আশিক আর দিদার গলা ধরাধরি করে কাঁদছে।

রেশমি নিচু গলায় লামিয়াকে বলে,’দেখ তিনটায় কুমিরের কান্না শুরু করছে! আমাদের চেয়েও বেশি ড্রামা জানে।’

এদিকে স্যার ওদের কাণ্ড দেখে হাসবে নাকি বকবে বুঝতে পারছে না। তিনি অন্য ছেলেদের বললেন,’আরে এই তিনটাকে থামা তোরা। আমি কোনো পানিশমেন্ট দেবো না।’

কাউকে কিছু বলতে হলো না। ওরা তিনজন নিজেরাই সোজা হয়ে বসে বলল,’থ্যাঙ্কিউ স্যার।’

ক্লাস শেষ হওয়ার ঘণ্টা বেজে যায়। স্যার জুঁইকে ফোনটা ফেরত দিয়ে বোর্ডের কাছে চলে যায়। নিজের ফোন আর নাম প্রেজেন্টের খাতা নিয়ে চলে যাওয়ার সময় মুচকি হেসে বলেন,’গ্যাঞ্জাম পার্টির পাশাপাশি তোদের আরো একটা নাম রাখা উচিত। বিনোদন পার্টি!’

টিফিন পিরিয়ডে সকলে মিলে চেপে ধরেছে জুঁইকে। জুঁইয়ের কান্না দেখে আশিক বলে,’জুঁই এত অসভ্য কেন তুই? খবরদার! এখন করবি না একদম গাঁইগুঁই।’

দিদার আশিকের মাথায় চাটি দিয়ে বলে,’ব্যাটা তোর আজাইরা কবিতা এখানেও শুরু করা লাগবে?’

আহিল একটু গম্ভীর হয়েই জিজ্ঞেস করল,’তুই ভাইয়ার নাম্বার কোথায় পেলি?’

জুঁই কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে,’তোর ফোন থেকে চুরি করেছি দোস্ত!’

লামিয়া অবাক হয়ে বলে,’কিহ! ফ্রেন্ড হয়ে ফ্রেন্ডের ফোন থেকে তার বড়ো ভাইয়ের নাম্বার চুরি? তাও আবার আহনাফের নাম্বারটাই নিতে হলো?’

জুঁই ঝাঁঝের সাথে বলে,’তাতে তোর কীরে? তোর তো এখন হবু বর আছে। তোর কেন জ্বলছে?’

লামিয়া আমতা আমতা করে বলল,’জ্বলছে নাকি? কই না তো! বিশ্বাস হচ্ছে না? দাঁড়া ফোন থেকে আইডি বের করে দেখাচ্ছি। তাকে যে রিকোয়েস্ট দিয়েছিলাম সেটাও ক্যানসেল করে দিয়েছি।’

‘খুব উদ্ধার করেছিস। এখন থাম তুই।’ লামিয়াকে থামিয়ে রেশমি জুঁইকে বলল,’লামিয়ার জ্বলুক বা না জ্বলুক তুই আমাদের অগোচরে কাজটা কীভাবে করলি?’

অর্ষা বিরসমুখে বলল,’সবসময় উলটা-পালটা কাজ করিস তোরা আর বকা খাই আমি। উনিও বকল আর স্যারও!’

লামিয়া অর্ষাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,’মন খারাপ করে না বোকারানী। সে তো আর জানত না যে এটা তুই!’

‘ভাইয়া জানে, মেয়েটা যে তুই?’ জুঁইকে জিজ্ঞেস করল আহিল।

জুঁই নতমুখে বলল,’না।’

‘আর ডিস্টার্ব করিস না ভাইয়াকে।’

‘ডিস্টার্ব করি না তো দোস্ত! শুধু একটু মজা করছিলাম।’

‘তাও করিস না। এমনিতে আমাদের সামনে ভাইয়াকে নিয়ে মজা করিস তোরা তাতে সমস্যা নেই। তবে ভাইয়ার সাথে ডিরেক্ট এমন কোনো মজা আর কেউ করিস না। একবার ভাব তো, ভাইয়া যদি জানতে পারে তখন কী ভাববে?’

জুঁই অনুনয় করে বলল,’স্যরি দোস্ত। আর এমন হবে না। সত্যি বলছি।’

আহিল মুচকি হাসল। জুঁই অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বলল,’তোকেও স্যরি জান।’

অর্ষাও মুচকি হেসে বলল,’স্যরি বলতে হবে না পাগলী।’
______
আফরিন বাড়িতে এসেছে ঘণ্টাখানেক হবে। এসেই সে আহনাফের রুমে বসে আছে। মায়া মায়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহনাফের দিকে। তার মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে, তার ভাই এত সুদর্শন কেন? আসলেই এত সুদর্শন? নাকি তার ভাই বলে, এত সুদর্শন লাগে? কী জানি বাবা!

আফরিনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহনাফ জিজ্ঞেস করে,’কী দেখিস?’

আহনাফ আধশোয়া অবস্থায় কোলের ওপর বালিশ রেখে আর বালিশের ওপর ল্যাপটপ রেখে অফিসের মেইল দেখছিল। আফরিন নিজের জায়গা থেকে উঠে ভাইয়ের কাছে যায়। গা ঘেঁষে বসে আদুরেকণ্ঠে বলে,’তোমাকে।’

আহনাফ মৃদু হাসে। ল্যাপটপের দিকেই দৃষ্টি রেখে বলে,’তুই আর বড়ো হবি না?’

‘না। আমি ছোটোই থাকব। বড়ো হতে মন চায় না।’

‘কেন? ছোটো থাকলে সবাই অনেক আদর করে। অনেক ভালোবাসে।’

‘তুই আজীবন ছোটোই থাকবি। আহিলের থেকেও তোকে ছোটো লাগে। আর আহিলও তো তোকে ছোটো বোনের মতোই ট্রিট করে।’

আফরিন শব্দ করে হেসে বলে,’ও তো সবসময়ই আমায় আগলে রাখত ভাইয়া। তোমার অবর্তমানে ওই আমাকে বড়ো ভাইয়ের মতো টেক কেয়ার করত।’

‘এজন্য তোর প্রতি ওর আর ওর প্রতি তোর ভালোবাসা অনেক বেশি।’

আফরিন এবার সোজা হয়ে বসে। চোখ পাকিয়ে বলে,’এর মানে কী? আমরা তোমায় ভালোবাসি না?’

‘বাসিস। কিন্তু কম।’

‘একদম না। আমরা সবাই তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক অনেক মিস করি। কিন্তু তুমি তো স্বার্থপর। সুইজারল্যান্ডে পড়তে গিয়ে ঐ দেশের প্রেমে পড়ে গেলে। পড়া শেষ করে ওখানেই জব নিলে। এমনকি ওখানেই স্যাটেল হয়ে গেলে। তাহলে এতসব কিছুর মানে কী দাঁড়ায় বলো তো? আমরা তোমাকে ভালোবাসলেও তুমি আমাদের একটুও ভালোবাসো না।’

‘তাই?’

‘আমি এতগুলো কথা বললাম, আর তুমি শুধু ‘তাই’ বললে?’

‘আর কী বলব বল তো? তুই যে ঝগড়ুটে! আমি ভাই শান্তিপ্রিয় মানুষ। ঝগড়ার আগে-পিছে নেই।’

‘আমি ঝগড়ুটে না? তোমার বউ হবে ঝগড়ুটে দেখিও।’

‘তাহলে বউকে তোদের কাছে রেখে যাব।’

‘ইশ! আমাদের থেকে দূরে থাকলেও, বউকে দূরে রাখবে না। জানা আছে আমার সব।’

‘ওরে বাবা! তুই তো দেখি সব জানিস।’

‘হু জানবই তো। আমি অবুঝ নাকি?’

আহনাফ হাসে। ওর গালে হাত বুলিয়ে বলে,’না। তুই আমার বুঝদার বোন।’

আফরিনও হাসে। এরপর আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলে,’তোমার অনেক কষ্ট হয় তাই না ভাইয়া?’

‘কেন?’

‘আবার বলে কেন! এক্সিডেন্ট করেছ। ব্যথা করছে না?’

‘তা তো করবেই।’

‘আচ্ছা বলো কী খাবে। আজ আমি তোমার জন্য রান্না করব।’

‘রান্না? তাও আবার তুই?’

‘এভাবে বলছ কেন? আমি এখন মোটামুটি রান্না জানি।’

‘ঐ মোটামুটি রান্না খেয়ে আমাকে আবার ওয়াশরুমে দৌঁড়াতে হবে না তো?’

‘মজা নিচ্ছ না? খেয়ে তো দেখো আগে।’

আহনাফ মৃদু হেসে বলল,’আচ্ছা তোর যা ইচ্ছে রান্না কর।’

‘না, তুমি বলো।’

‘তাহলে হালিম রান্না কর। হঠাৎ করে খেতে ইচ্ছে করল।’

‘ওকে। তুমি অপেক্ষা করো। আমি ঝটপট রান্না করে নিয়ে আসছি।’ বলে দৌঁড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আফরিন।

আহনাফ পেছন থেকে একটু জোরেই বলে,’সাবধানে। হাত যেন না পুড়ে।’
.
.
আফরিনের রান্না শেষ হতে হতে আহিল আর অর্ষা কলেজ থেকে চলে আসে। রেণু গেছে দরজা খুলতে। ওরা দুজনে যখন বাড়ির ভেতর ঢুকছিল তখন আফরিন হালিম নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছিল।

আফরিনকে দেখে আহিল চিৎকার করে ওঠে। দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। এদিকে হাতের বাটি পড়ে যাবে যাবে অবস্থা। অর্ষা এসে আফরিনের হাত থেকে বাটিটা নিয়ে নেয়।

আফরিনও এবার ছোটো ভাইকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। আহিল খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে,’সারপ্রাইজড হয়ে গেছি আপু। তুই বলিসনি কেন যে এসেছিস?’

‘তাহলে কি আর সারপ্রাইজ পেতি?’

আফরিনকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় আহিল। মাথা দুলিয়ে বলে,’তাও ঠিক।’

‘কেমন আছো অর্ষা?’ অর্ষার দিকে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করল আফরিন।

অর্ষাও প্রত্যুত্তরে হেসে বলল,’আলহামদুলিল্লাহ্‌ আপু। তুমি কেমন আছো?’

‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। ঐ দেখো, এখনো বাটিটা তোমার হাতে। আমায় দাও।’

‘সমস্যা নেই আপু।’

আহিল আফরিনকে টেনে নিজের ঘরে নিতে নিতে বলল,’হালিম পরে খাবি। আগে আমার ঘরে আয়। কত গল্প জমে আছে।’

সে আফরিনের কোনো কথাই শুনল না। এদিকে হালিমের বাটি হাতে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা। সে এখন কী করবে? বাটি ধরে এভাবে দাঁড়িয়েই থাকবে? নাকি গিয়ে দিয়ে আসবে? ভাই-বোনের মধ্যে গিয়ে থার্ড পার্সন হওয়া কি ঠিক হবে? ওর সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে রেণু রান্নাঘর থেকে বের হয়।

রেণুর চোখে বিস্ময় ঠিকরে পড়ছে। সে বলল,’ওমা! আপনে এমনে বাটি নিয়া দাঁড়ায় আছেন ক্যান আফা?’

অর্ষা যেন একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বলল,’আপা, হালিমের বাটি আফরিন আপুকে দিয়ে আসবেন?’

রেণু দু’হাতে মাছের পলি দেখিয়ে বলল,’আমার হাতে মাছ আফা। কেবল কাটলাম। ফিরিজে (ফ্রিজে) রাখতে আইছিলাম। এই হাত দিয়া খাওন নিয়া গেলে আমারে দৌঁড়ানি দিব বড়ো ভাইজানে।’

‘খাবার আফরিন আপুর না?’

‘না। বড়ো ভাইজানে খাইব। একটু কষ্ট কইরা দিয়া আহেন।’

‘আচ্ছা।’ বলেও অর্ষা সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এই মানুষটার সামনে গেলেই দুনিয়ার সকল জড়তা তার মাঝে কাজ করে। সকালের ঝাড়িগুলোর কথাও মনে পড়ে যায় তার। হোক না জেনে দিয়েছে, তবুও তো ঝাড়িগুলো সে-ই খেয়েছে!

রেণু মাছ ফ্রিজে রেখে ফিরে এসে বলল,’এহনো খাড়াই আছেন? আমিই দিয়া আসমু?’

অর্ষা ইতস্তত করে বলল,’না, সমস্যা নেই। আমিই দিয়ে আসছি।’

ব্যাগটা সোফার ওপর রেখে গুটিগুটি পায়ে সে আহনাফের রুমের দিকে যায়। দরজা ভেতর থেকে চাপানো। সে বাইরে দাঁড়িয়ে দু’বার নক করে।

আহনাফ ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করে,’কে? আফরিন?’

‘না। অর্ষা।’ চাপাস্বরে বলল অর্ষা। গলা থেকে যেন শব্দও বের হচ্ছে না।

অর্ষার কথা আহনাফ শুনতে পেল না। তাই কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,’দরজা খোলাই আছে।’

অর্ষা এবার ভেতরে যায়। সাথে সাথে দু’জোড়া চোখ এক হয়ে যায়। দৃষ্টি নামিয়ে নেয় অর্ষা। নতমুখে বলে,’আপনার খাবার।’

‘তুমি এনেছ কেন? আফরিন কোথায়?’

‘আহিল আপুকে টেনে নিয়ে গেল।’

অর্ষার কথার ধরণে আহনাফের হাসি পেলেও হাসল না। হাসি চেপে গিয়ে বলল,’ওহ। আচ্ছা এখানে রাখো।’
পাশের টি-টেবিল দেখিয়ে বলল আহনাফ।

টি-টেবিলের ওপর অনেকগুলো কাগজ এলোমেলো করে রাখা। অর্ষা কী করবে বুঝতে পারছে না। সে না বুঝলেও আহনাফ ঠিকই বুঝে ফেলে। সে হাত বাড়িয়ে কাগজগুলো নিয়ে বিছানায় রেখে বলল,’এখন রাখো।’

টেবিলের ওপর হালিমের বাটি রাখার সময়ে আহনাফ জিজ্ঞেস করে,’পরীক্ষা কবে থেকে?’

‘আগামী সপ্তাহ্ থেকে।’

‘প্রিপারেশন কেমন?’

‘ভালো।’

আহনাফের মনে অনেকক্ষণ যাবৎ একটা প্রশ্ন ঘুরঘুর করছিল। অন্যদিনের তুলনায় অর্ষার আজকের আচরণ অনেকটা অন্যরকম লাগছে। তাই সে প্রশ্ন করেই বসল,’তুমি এমন চোরের মতো করছ কেন?’

অর্ষা থতমত খেয়ে তাকায়। আমতা আমতা করে বলে,’কই? না তো! আমি কী চুরি করব?’

‘চুরি করেছ বলিনি। চোরের তো করছ বলেছি।’

‘আমি ঠিক আছি।’

‘আচ্ছা ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।’

অর্ষা যেন এতক্ষণ এ কথাটিই শোনার জন্য অপেক্ষা করে ছিল। আহনাফ বলা মাত্রই সে একছুটে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ওর এই কাণ্ডে হকচকিয়ে যায় আহনাফ। বিষয়টা কী হলো?

পরক্ষণে সে নিজেকে ধাতস্থ করে সগতোক্তি করে বলল,’মেয়েটা একটু বেশিই যেন সহজ-সরল আর অদ্ভুত!’

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]