যে গল্পের নাম ছিলনা পর্ব-৪১

0
391

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা
-Farhina Jannat

৪১.
“থ্যাংকইউ” গাড়ি থেকে নেমে বলল রাইয়্যান, “থ্যাংকইউ সো মাচ! এই তিনমাসে আমার জন্য, খালার জন্য, আমাদের সবার জন্য তুমি যা যা করেছো, তার জন্য একবারও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়নি। আজকে সবার পক্ষ থেকে বলছি, থ্যাংকইউ মিস সিদ্রাতুল মুনতাহা, থ্যাংকস ফর এভরিথিং” অনেক কষ্টে মুখে হাসি এনে বলল রাইয়্যান।

“তাহলে তো থ্যাংকস আপনারও প্রাপ্য! এই তিনমাসে অনেক কিছু শিখেছি আমি, অনেক কিছু রিয়েলাইজ করেছি, আমার জীবনে এ দুর্ঘটনাটা না ঘটলে হয়ত সারাজীবনেও সেগুলো অনুভব করতে পারতামনা, তাই আপনাকেও ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন”

বিদায় নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল সিদ্রা।দ্রুতপায়ে হাঁটা দিল চিরপরিচিত রাস্তা ধরে বাড়ির দিকে। কয়েক পা এগিয়ে শেষবারের মতো পেছনে ঘুরতেই দাঁড়িয়ে গেল সিদ্রা। খানিক দূরে রাইয়্যান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মনে হয় ভাবতে পারেনি সিদ্রা পেছনে তাকাবে। চকিতে আশেপাশে কেউ আছে কিনা দেখে নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসল সিদ্রা। ওর কপাল ভালো, এই ভরদুপুরের কড়া রোদে কেউই রাস্তায় নেই।

“আপনি পিছুপিছু আসছেন কেন?” অবাক হয়ে বলল সিদ্রা।

“তুমি সেফলি বাসায় পৌঁছেছো সেটা নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম” আমতাআমতা করে বলল রাইয়্যান, যদিও কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়, সিদ্রা বাসায় গিয়ে কি পরিস্থিতিতে পড়বে আর কিভাবে সবটা সামলাবে, সেটা নিয়ে টেনশন হচ্ছে ওর।

“আমি ঠিক পৌঁছে যাব, আপনি চলে যান প্লিজ” এদিকওদিক তাকাচ্ছে সিদ্রা।

“কিন্তু তুমি আমাকে তোমার সাথে কেন যেতে দিচ্ছোনা একটু বলবা প্লিজ? আমি তোমার আব্বু আম্মুকে খুলে বলব সবটা। এতে উনাদের বিশ্বাস করতে সহজ হবে ব্যাপারটা” অস্থির কণ্ঠে বলল রাইয়্যান।

“না, আপনি গেলে আরো জটিল হবে সবকিছু। আর আমার আব্বু আম্মু বিশ্বাস করলে আমার কথাতেই বিশ্বাস করবে, আপনার সুপারিশের প্রয়োজন হবেনা। আর যদি তাঁরা আমার কথায় বিশ্বাস না করে আপনার স্বীকারোক্তি শুনে আমাকে বিশ্বাস করেন, তাহলে সেটা হবে মেয়ে হিসেবে আমার চরম ব্যর্থতা!”

“ঠিক আছে। তাহলে অন্তত আমাকে উনাদের কাছে ক্ষমা চাইতে দাও। আমি উনাদের কম কষ্ট তো দিইনি”

“তার কোন দরকার নেই। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দোষটা তো আমার বোনেরই। নিজের বোনের পাপের সাজা যেমন আমি পেয়েছি, তেমনি তারা তাদের মেয়ের, আপনি তো উসিলামাত্র। আর তাছাড়া আপনাকে তো বললামই, আপনার সাথে আমাকে দেখলে মানুষ যা নয় তাও রটিয়ে ফেলবে। এলাকায় সবাই আমাদের খুব ভাল করে চিনে। প্লিজ আমাকে নিয়ে আপনি চিন্তা করবেননা। আল্লাহ্‌ আছেন তো আমার জন্য” আসলে সিদ্রা খুব ভালো করে জানে, ওর আব্বু সব জানার পর এই লোককে সামনে পেলে হয় মেরে আধমরা করে দিবে আর নাহয় পুলিশে দিবে । সেই রিস্কটা ও নিতেই চাচ্ছেনা।

কিন্তু সেটা তো আর বুঝলনা রাইয়্যান, উল্টো কষ্ট পেল। তুমি আমাকে এতটা ঘৃণা করো যে তোমার বাসা পর্যন্ত যাওয়ার, তোমার বাবা মার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটুকু দিলেনা!

“বেশ, তুমি যা চাও তাই হোক। আমি আর আগাবনা, এখানেই দাঁড়িয়ে থাকছি, তুমি গেইটের ভেতরে ঢুকে গেলেই আমি চলে যাব, কথা দিলাম। প্লিজ সিদ্রা, এটুকু মেনে নাও”

“আচ্ছা ঠিক আছে” নিরুপায় হয়ে মেনে নিল সিদ্রা, আবারও সালাম দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে হাঁটা শুরু করল ও। দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় নেমে এল অশ্রুধারা। এতো কষ্ট হচ্ছে কেন আমার? উনি আমাকে তো প্রস্তাব দিলেন, আমিই তো ফিরিয়ে দিলাম! তাহলে কেন কাঁদছি আমি? কারণ উনি আমাকে চাননা, শুধুই উনার ভুল সংশোধন করতে চান, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চান। এক ভুল শোধরাতে গিয়ে আমি উনাকে আরেকটা ভুল করতে দিতে পারিনা। শুধুমাত্র আমাকে সুখী জীবন দেয়ার জন্য উনি নিজের জীবন স্যাক্রিফাইস করবেন, আমি সেটা কেন মেনে নিব? ভুলে যাও সিদ্রা, সব ভুলে যাও। ওই লোকের সাথে আর কোনদিন দেখা হবেনা তোমার, তোমাদের পথ কখনওই এক ছিলনা আর হবেওনা, সব ভুলে যাওয়াই উত্তম তোমার জন্য। নেকাবের নিচে হাত ঢুকিয়ে চোখ দুটো মুছে নিল সিদ্রা।

গেইটে ঢুকার আগে শেষবারের মত ঘুরে এক পলক দেখে নিল রাইয়্যানকে, তারপর শরীর আর মনের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে ঢুকে গেল ভেতরে।

***
কলিংবেল বেজে উঠতেই বিরক্ত হল মুনিরা, এখন আবার কে এল? মাত্রই ঘুমিয়েছে জাহানারা বেগম। আজ সকালেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়েছে উনাকে। সেদিন পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে গিয়ে রক্তারক্তি অবস্থা হয়েছিল, সাতটা সেলাই লেগেছে! শারীরিক, মানসিক সব ধরণের অসুস্থতা বিবেচনা করে এতদিন হাসপাতালেই ভর্তি রেখেছিল ওরা। এখন একটু সুস্থ হওয়ায় রিলিজ তো দিয়েছে, কিন্তু কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হবে।

আইহোলে চোখ রাখতেই যেন শক খেল মুনিরা, সিদ্রার মতো লাগছেনা? ভুল দেখছিনা তো! দরজা খুলতেই খুশিতে পাগল হয়ে গেল ও।

“সিদ্রা……….” চিৎকার করে সিদ্রাকে জড়িয়ে ধরল মুনিরা। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল দুইবোন, এতোদিনের নিরব কান্না যেন ভাষা পেয়েছে আজ।

চিৎকার শুনে নিজাম সাহেব দৌড়ে বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। চোখেমুখে প্রথমে অবিশ্বাস, তারপর বিস্ময় আর সবশেষে আনন্দের রেখা ফুটে উঠল তার। সেখানেই শুকরিয়া আদায় করতে সেজদায় পড়ে গেলেন তিনি, এতদিনের দোয়া যে আল্লাহ্‌ কবুল করেছেন! সেজদা থেকে উঠে তিনিও কাছে এসে জড়িয়ে ধরলেন দুইবোনকে। তিনজনের আনন্দাশ্রু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।

“আমি জানতাম, আল্লাহ্‌ আমার মুনতাহা মাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবেন, কিছু হবেনা ওর, আমি ঠিক জানতাম” বললেন নিজাম সাহেব।

আহ! কতদিন পর আব্বুর মুখে ডাকটা শুনলাম! আব্বু ছাড়া আর কেউ ওকে মুনতাহা বলে ডাকেনা। আব্বুকে আবার দেখতে পাচ্ছে, জড়িয়ে ধরতে পাচ্ছে, আব্বু আদর করছে, সব যেন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে সিদ্রার। মনে মনে দোয়া করছে, এটা যেন ওর সুখস্বপ্ন না হয়, চোখ খুললেই যেন সবটা হারিয়ে না যায়।

কান্নাকাটির মধ্যেই ওরা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে, কোথায় গিয়েছিল, কি হয়েছিল ওর, একটা খবর কেন দেয়নি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সিদ্রা কান্নার দমকে কথাই বলতে পারছেনা। হঠাৎ খেয়াল হতেই জিজ্ঞেস করল, “আম্মু কোথায়?”

মুনিরা ওকে ঘরে নিয়ে গেলে বিছানায় মাথায় ব্যান্ডেজ সহ জাহানারা বেগমকে দেখে জোরে কেঁদে উঠতে যাচ্ছিল সিদ্রা, ওর মুখ চেপে ধরে আবার বসার ঘরে নিয়ে এল মুনিরা। “কি হয়েছে আম্মুর?” হাতটা সরিয়ে বলল সিদ্রা।

“ঘুমাচ্ছে, ঘুমের ওষুধ খেয়েছে তো” বলল মুনিরা।

“ঘুমের ওষুধ কেন?” উদ্বগের সুর সিদ্রার কণ্ঠে।

“তোর চিন্তায় নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল তোদের আম্মু, সারাদিন এইখানে বসে থাকতো। কলিংবেল বাজলেই মনে করতো তুই ফিরে এসেছিস, পাগলের মত ছুটে যেতো দরজায়। আর যখন দেখত তুই না অন্য কেউ, তখন শকটা নিতে পারতনা, অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল। এই কয়েকদিন আগে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেয়ে মাথা ফেটে গেছিল, আজকেই নিয়ে এলাম হাসপাতাল থেকে” উত্তর দিলেন নিজাম সাহেব।

আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সিদ্রা, সান্ত্বনা দিল মুনিরা, “চিন্তা করিসনা। তুই এসে গেছিস না, তোকে দেখলেই ইন শা আল্লাহ্‌ আম্মু একদম ঠিক হয়ে যাবে”

“ইন শা আল্লাহ্‌” বলল সিদ্রা।

মুনিরা এবার সিদ্রার দিকে ভাল করে খেয়াল করল। চোখেমুখের লাবণ্য তেমন কমেনি, দুঃখকষ্টের কোন ছাপ নেই, স্বাস্থ্যও খারাপ হয়েছে বলে মনে হচ্ছেনা, বোরকাটাও নতুন। কেন মনে হচ্ছে, সুখেই ছিল ও! তাহলে কি ওই গোয়েন্দাটা সত্যি কথা বলছিল?

জেরার ভঙ্গিতে বলল মুনিরা, “কোথায় ছিলি তুই? তোর চেহারা সুরত, পোষাকের অবস্থা দেখে এটা অন্তত মনে হচ্ছেনা যে তুই কোন বিপদে পড়েছিলি। আর কোন এক্সিডেন্ট হলেও তো আমাদের জানাতে পারতি! তুই কি সত্যি সত্যি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিস?” কথাটা নিজে বিশ্বাস না করলেও কেন যেন বেরিয়ে গেল মুখ দিয়ে।

এতদিনের জমে থাকা রাগ আর অভিমানে যেন দপ করে আগুন ধরে গেল। তড়িৎ গতিতে এগিয়ে গিয়ে ঠাস করে একটা চড় মারল সিদ্রা মুনিরার গালে, এতই জোরে যে ফর্সা গালে সাথে সাথে আঙুলের দাগ বসে গেল।

“আমি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি! বলতে পারলি তুই এটা! তুই নিজে যা করেছিস, তারপরে আমাকে এই নোংরা কথাটা জিজ্ঞেস করতে লজ্জা করলনা তোর? বিবেকে বাঁধলনা একটু?”

সিদ্রার এমন রূপ কোনদিন দেখেনি মুনিরা, ওর আব্বুও না। হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল দুজনে। কিন্তু থাপ্পড়টা হজম করতে পারলনা মুনিরা, বলল, “আমি আবার কি করলাম!”

“কি করেছিস? কার জন্য এই তিনমাস বন্দী জীবন কাটাতে হয়েছে আমাকে? কার জন্য আমার সারাজীবন নষ্ট হতে বসেছিল? এতো বড় বড় কথা যে বলছিস, তুই আসলে কতবড় পাপ করেছিস জানলে থাকবে তো গলার জোর? মুখ দিয়ে কথা বের হবে তো?” হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল মুনিরা, যেন বুঝতে পারছেনা কি বলছে সিদ্রা।

“মুনতাহা মা, পরিষ্কার করে বলতো, কি হয়েছিল তোর?”

“আব্বু, আমাকে একটা লোক কিডন্যাপ করেছিল”

“কি!” চমকে উঠেছে দুজন শ্রোতাই।

“হ্যাঁ আব্বু, কিন্তু ভয় পেয়োনা, কোন অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য না, প্রতিশোধ নেয়ার জন্য।”

“প্রতিশোধ! কিসের প্রতিশোধ?”

“ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ, আব্বু। উনার ভাই কয়েক মাস আগে আত্মহত্যা করেছে, তার জন্য আমাকে দায়ী মনে করে ভুল করে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, সারাজীবনের জন্য বন্দী করে শাস্তি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আসলে এর জন্য কে দায়ী জানো? এই যে আমার বোন, জোর গলায় কথা বলছে। কিরে, ফারহানের সাথে প্রেম করার সময় বুঝতে পারিসনি ছেলেটা তোকে ভালবেসে জীবন দিয়ে দিতে পারে?” শেষের বাক্যটা মুনিরার দিকে তাকিয়ে বলল সিদ্রা।

মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল মুনিরার, “কি বলছিস তুই? ফারহান! ফারহান আত্মহত্যা করেছে? কেন?”

“বুঝতে পারছিসনা কেন? তোর ভালবাসা ভালবাসা খেলাটা বড্ড সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছিল রে ছেলেটা, তোকে এতই ভালবেসে ফেলেছিল যে তুই ওকে এতোদিন ধরে ভালবাসার নাম করে বোকা বানিয়েছিস, এই আঘাতটা ও সহ্য করতে পারেনি। একসাথে কতগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ইহকাল পরকাল সব নষ্ট করে ফেলেছে ছেলেটা। কি মনে হয় তোর? এর জন্য তুই কতটা দায়ী?” সিদ্রা নিজেও বুঝতে পারেনি এতটা ক্ষোভ ওর মনে জমে ছিল, আজ যেন সব বেরিয়ে আসছে এক লহমায়।

পা দুটো যেন অবশ হয়ে গেল মুনিরার, কাঁপতে কাঁপতে সোফার সাইড ধরে বসে পড়ল, চোখ থেকে উপচে পড়ল পানি, হু হু করে কাঁদতে লাগল ও।

“ও….ও….ও এত ভালবাসত আমাকে! আমার জন্য……. আ…..আমার জন্য…… নিজের জীবনটা শেষ করে দিল?”

এদিকে নিজাম সাহেব তো কিচ্ছু বুঝতে পারছেননা, হতভম্ব হয়ে একবার সিদ্রার দিকে আর একবার মুনিরার দিকে তাকাচ্ছেন।

“কি বলছিস তোরা? একটু পরিষ্কার করে বলবি? এসব প্রেম ভালবাসা! এসবের মানে কি?”

“আমি বুঝিয়ে বলছি আব্বু, প্লিজ তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো। তোমার বিপি হাই হয়ে যাবে নাহলে” হাতধরে আব্বুকে সোফায় বসাল সিদ্রা, তারপর বলতে শুরু করল ও,“মুনিরা মিথ্যে নাম দিয়ে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলেছিল। আশেপাশের সবাইকে দেখে ওরও হয়ত ইচ্ছে হয়েছিল ফেসবুকে ছেলে বন্ধু বানানোর। তখন সম্ভবত ফারহানের সাথে ওর পরিচয় হয়। কিন্তু প্রতিদিন চ্যাট করতে করতে ছেলেটা দুর্বল হয়ে যায় ওর প্রতি। ও মুনিরাকে নিজের মনের কথা জানায় আর মুনিরাও মনে হয় মজা করতে রাজি হয়ে যায় ওর প্রস্তাবে? কিরে তাইতো? ঠিক বলছি আমি?” শেষের কথাদুটো মুনিরার দিকে তাকিয়ে বলল সিদ্রা।

কিন্তু মুনিরার সিদ্রার দিকে কোন খেয়াল নেই, অপ্রকৃতিস্থের মত বিড়বিড় করছে, “ও….আমাকে এত ভালবাসত! ও….. আমাকে এত ভালবাসত!”

অলরেডি মাথা ঘুরছে নিজাম সাহেবের। উনার মেয়ে এসব করেছে, বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। কিন্তু সিদ্রা তো মিথ্যে বলার মেয়ে না, আর মুনিরার আচরণই বলে দিচ্ছে কথাগুলো কতটা সত্যি।

“তুই বলে যা” নিজেকে শক্ত করে বললেন নিজাম সাহেব, আরো খারাপ কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত করছেন নিজেকে।

“কিন্তু এক পর্যায়ে মুনিরা বুঝতে পারে, ছেলেটা বেশি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে, তখন ও সত্যিটা বলে দিয়ে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তারপর কি হয়েছে সেটা তো আগেই বললাম”

“ঠিক আছে, সব বুঝলাম। কিন্তু নিয়ে গেলে তো ওকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তোকে কেন?”

“সেকথার উত্তরও তোমার মেয়ে দিতে পারবে, ও কেন নিজের নাম না বলে আমার নাম করে এসব করেছে”

“হোয়াট? ওর এত অধঃপতন হয়েছে যে পাপ করেছে তো করেছে আবার নিজের বোনের নাম দিয়ে! ছিঃ এমন মেয়েকে আমি জন্ম দিয়েছি, এতো শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে বড় করেছি, আমি তো ভাবতে পারছিনা” রাগে দুঃখে রীতিমতো কাঁপছে ওর বাবা।

“শান্ত হও আব্বু! প্লিজ শান্ত হও তুমি” হাত ধরে সোফায় বসাল ও আব্বুকে, “ আমি তো ফিরে এসেছি বলো, সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায়। আল্লাহ্‌ আমাকে হেফাজত করেছেন আব্বু, কোন ক্ষতি হয়নি আমার” মেঝেতে বসে আব্বুর কোলে মাথা রাখল সিদ্রা।

“আমি শান্ত হতে পারছিনা। মুনিরার বিচার আমি পরে করছি। তুই আগে আমাকে ওই লোকের নাম বল। আমি……আমি কেস করব ওর নামে। দুনিয়াতে আইন আদালত কিছু নাই? আর কেউ প্রেম করেনা? ওর ভাই নিজে কিছু করেনি? কোন সাহসে ও আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল?”

এবার যেন মাথায় বাজ পড়ল সিদ্রার। নাম! তাইতো, উনার নাম কি? এতগুলো দিন যার কাছে থেকে আসলাম, তার নামটা পর্যন্ত জানিনা আমি!

চলবে।