রইলো তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-১১

0
342

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১১]

ক্লাস শেষ করে ভূমি এসে দাঁড়ায় পার্কিং লটে। আরাভ এখনো আসেনি। হয়তো ক্লাস থেকে বের হয়নি। আসার সময় অফিসে একবার উকি দিয়েছিলো ভূমি, দেখা মিলেনি আরাভের। পার্কিং লটে এসে আরাভের গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পার্কিং এড়িয়ায় কয়েকজন ছেলেমেয়েরা যে যার গাড়ি বের করছে। দুটো মেয়ে দুজনেই বাইক নিয়ে বের হলো। আর তিনটা ছেলে যার একজন গাড়ি আর দুজন একটা বাইক নিয়ে গল্প করতে করতে চলে গেলো। ওদের দিকে তাকিয়ে ভূমির চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো। মনে পরে দিয়ার কথা। এই রাস্তায় দিয়ার সাথে কতটা সময় দাড়িয়ে থেকেছে সে। দিয়ার অস্বাভাবিক ব্যাবহার বাচালের মতো কথা বলা সবটা মনে পরতেই চোখ দিয়ে জল পরতে লাগলো ভূমির। দু-হাতে মুখ চেপে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো ভূমি। কিছুক্ষণ পর আরাভ আসলো। ভূমির চোখেী জল দেখে ব্যস্থ হয়ে পরে আরাভ। দু-হাতে ভূমির কাধ করে প্রশ্ন করে,

” কাঁদছো কেন? কেউ কিছু বলেছে?”

ভূমি কোন উত্তর দেয়না। আরাভ আবার প্রশ্ন করে,
” কে কি বলেছে। বলো আমায়।”

ভূমি তার চোখের জল মুছে নেয়। আরাভের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,
” আমাকে কেউ কিছু বলেনি। দিয়ার কথা মনে পরছে। ওকে খুব মিছ করছি। আচ্ছা ওর সাথে তো এমনটা না হলেও পারতো।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরাভ। ভূমির গালে হাত রেখে বলে,
” গাড়িতে বসো। আজ তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।”

ভূমি দ্বিরুক্তি না করে গাড়িতে বসে। আরাভ ও ড্রাইভিং সিটে বসে ভূমির সিটবেল্ট লাগিয়ে দেয়। তারপর নিজের সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্চ দেয়।

একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে গাড়িয়ে ব্রেক করে আরাভ। পুরো রাস্তা কেউ কোন কথা বলেনি। দুজনে গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করে। তবে ভিতরে জনমানবশূন্য। ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ-ই নেই সেখানে। ভূমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
” রেস্টুরেন্ট আজ বন্ধ নাকি। তেমন কাউকেই তো দেখছি না।”

আরাভ সামনের দিকে হাটতে হাটতে জবাব দেয়,
” দু ঘন্টার জন্যে বুক করেছি। বাহিরের কেউ আসতে পারবে না।”

” পুরোটাই।”

” হুম। আমার সাথে একা আসতে ভয় লাগছে? ”

ভূমি আর কিছু বলল না। আরাভের সাথে ভিতরে গেলো
সে। এই দুমাসে আরাভের প্রতি তার এতটাই বিশ্বাস জন্মেছে যে, সে চোখ বন্ধকরে আরাভের হাতে হাত রেখে চলতে পারবে। বরং আরাভ পাশে থাকলে তার নিজেকে নিরাপদ মনে হয়। ভিতরে একটা সাদা লাল আর কালো গোলাপের কম্বিনেশনে সাজানো একটা টেবিলে বসলো দুজনে। ভূমি চুপচাপ। আাশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে। আরাভ প্রশ্ন করলো,
” ভয় লাগছে?”

” ভয় কেন লাগবে?”

” প্রশ্নটা আমি করেছি।”

” নাহ, নিরাপদ মনে হচ্ছে।”

প্রসন্ন হাসলো আরাভ। হয়তো এটা তার প্রাপ্তি। ভূমি এতটা বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে সে। মনে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো। হাসি মুখে তাকিয়ে রইলো ভূমির মুখ পানে। কিছুক্ষণ পর একটা ওয়েটার আসতে খাবার অর্ডার করলো আরাভ। তারপর ওয়েটার খাবার সার্ভ করতেই দুজনে খেয়ে নিলো। খাওয়ার সময় আরাভ খাচ্ছিল কম ভূমিকে দেখছিলো বেশী। খাওয়া শেষ করে দুজনে বসে রইলো কিছুক্ষণ। দুজনের মনেই চলছিলো কিছু সাজানো স্বপ্নের মেলা। আরাভ তার হাতের গোল্ডেন ওয়াচের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোমাকে কিছু বলার ছিলো।”

চমকে উঠে ভূমি। ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটলে যা হয় আর কি। পাশ ফিরে দেখে আরাভ একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে নিয়ে তার সামনে হাটুগেরে বসে আছে। ভূমি তো অবাক। এটা কি করছে আরাভ বুঝতে পারলো না। সে এটাও বুঝতে পারলো না সে বসে থাকবে নাকি দাঁড়াবে। তাই সে হা করে তাকিয়ে বসে রইলো। আরাভ লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,

” সেদিন বসন্ত এসেছিলো হৃদয় মাঝে, যেদিন তোমার মতো সুন্দর, নিষ্পাপ গোলাপের দেখা পেয়েছিলাম। সেদিন কোকিলের কন্ঠ কানে শুনেছিলাম অসময়ে ,যেদিন ঝর্নার কলকল ধ্বনির মতো তোমার কন্ঠ কানে এসেছিলো। সেদিন বলতে পারিনি তোমায়, তুমি খুব সুন্দর। তোমার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়িবো সখি বারেবারে।তোমার ওই মায়াবী মুখখানি আমার সর্বনাশ করেছে, ঠিকমতো ঘুমাতে দেয় না। কোনো কিছুতেই আর মন বসে না, শুধু বারবার তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করে।জেগে থাকলে তোমার কল্পনাতে ডুবে থাকি, ঘুমন্ত আমি তোমায় স্বপ্নে দেখি। তোমাকে বারেবারে দেখতে চায় এমন, যদি অনুমতি দাও ঐ দুহাত ধরার সারাজীবন, ভালোবাসায় বেঁধে রাখবো কথা দিলাম।ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার জানা নেই। যদি কাউকে দেখার জন্য বারবার মন আনচান করার নাম ভালোবাসা হয়, তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি। যদি শয়নে স্বপনে তাঁকে নিয়েই হৃদয় মাঝে ছবি আঁকানোর নাম ভালোবাসা হয় তবে আমি তোমায় ভালোবাসি। যদি অনুমতি দাও, সারাজীবন ভালবাসতে চাই। ভালোবেসে সারাজীবন ভালোবাসায় বেঁধে রাখবো,যদি একটি বার সাড়া দাও। জীবনে মরণে বেঁধে রাখিবো প্রিয়তমা জনম জনম ধরে, সখি যদি হাত দুটি বাড়াও।”

বাম হাতটা বাড়িয়ে দিলো ভূমির দিকে। ভূমির চোখের জল কোটর গড়িয়ে গাল বেয়ে পরছে। দু-হাতে মুখ চেপে সে তাকিয়ে আছে আরাভের দিকে। এখন তার কি প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিৎ বুঝতে পারছে না। সে কি দাঁড়াবে। বুঝতে পারলো না। কান্নায় চোটে কোথাও বলতে পারছে না। গলায় আটকে আছে। ভূমি বসে পরলো আরাভের বরাবর। তারপর আরাভের থেকে গোলাপ গুচ্ছ নিয়ে ওর বাম হাতের উপর নিজের হাত রাখলো। সেই হাত মুখের কাছে নিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। আরাভ ভূমিকে উঠিয়ে বলল,

” এখানে কাদার মতো কি বললাম আমি। আচ্ছা তুমি কি আমার ভালোবাসা এক্সসেপ্ট করতে পারছো না।”

” আমি আসলে ভাবতে পারিনি আপনি এমন করে সারপ্রাইজ দিবেন।”

আরাভ ভূমির হাতে নিজের অধোর ছুইয়ে বলল,
” আমার কিছু চাই দিবে?”

” বলুন কি চাই আপনার।”

” আপনি নশ তুমি করে সম্বোধন করবে। এটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সবাইকে তুমি করে সম্বোধন করো শুধু আমি ছাড়া। আমি কি তোমার প্রিয় নই।”

” আসলে,,,

” কোন আসলে টাসলে শুনতে নারাজ। তুমি করে সম্বোধন করে। নাও এখনি শুরু করো।”

” এখনি।”

” হুম।

” হবে না।”

” হবে। আর না হলে আজ এখান থেকে তোমার ছুটি নেই। আপনি ডাকার অপরাধে এখানে তোমার সাথে রোমান্টিক সিন ও ক্রিয়েট করতে পারি।”

লজ্জা পেল ভূমি। লজ্জায় ভূমি মাথা নিচু করে নিলো।আরাভ ভূমির চিবুক ধরে মাথা উঁচু করিয়ে বলল,
” সবসময় মাথা উঁচু করে বাচবে। আমার সামনে একদম-ই মাথা নিচু করবে না। বরং তোমার সামনে আমি মাথা নুইয়ে রাখবো। উহঃ নিলাদ্রিতা, আমি ধৈর্য হারা হয়ে পরছি।”

” আরাভ আপনি,,, জিহ্বায় কামড় দিলো ভূমি। তারপর আমতা আমতা করে বলল, তু্ তু তুমি এবার বেশী বকছো।”

ব্যাস কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ভূমিকে বুকে জড়িয়ে নিলো আরাভ। ভূমিও দুহাতে আরাভকে জড়িয়ে ধরলো।

রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে ভূমিকে নিয়ে লং ড্রাইভে বের হয় আরাভ। তারপর সন্ধার দিকে ফিরে আসে নিজ শহরে। চারিদিকে যখন ঘনকালো অন্ধকার নেমে আসছে। শহরের রাস্তায় সোডিয়ামের আলোয় আলোকিত ঠিক তখন আরাভ ভূমিকে নিয়ে একটা ফ্লাটে যায়। একটা নতুন জায়গা, নতুন ঘর দেখে অবাক হয় ভূমি। ভ্রু কুঁচকে আরাভের দিকে তাকাতেই আরাভ ভূমিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে,

” ভয় নেই। আমি আছি তো নাকি।”

কলিং বেল বাজালে রেদওয়ান এসে দরজা খুলে। আরাভের সাথে ভূমিকে দেখে রেদওয়ান বাকরুদ্ধ হয়ে প্রশ্ন করে,
” ভাবি আপনি?”

রেদওয়ানকে চিনতে অসুবিধা হলো না ভূমির। এইনগেজমেন্টের দিন রেদওয়ানকে দেখেছিল সে। ভূমি আরাভের দিকে তাকাতেই আরাভ বলে,

” ভিতরে আসবো তো নাকি। এখানে দাঁড়িয়ে তোর প্রশ্নের জবাব দিবো।

” হুম আয়। রেদওয়ান দরজা ছেড়ে দাঁড়ায়। আরাভ ভূমির হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলে,
” সবাই আছে।”

” সোহান নেই। ওর মা অসুস্থ।”

” তাহমিদকে বল ভালোকিছু রান্না করতে। একজন গেস্ট আসবে।”

আরাভ ভূমিকে নিয়ে একটা রুমে আসে। তারপর বলে,
” কাবার্ডের ভিতরে তোমার জন্যে ড্রেস রাখা আছে। ফ্রেস হয়ে নাও।”

” এখানে আমার ড্রেস!”

” হ্যাঁ, সেদিন শপিং করতে বেড়িয়েছিলাম। পছন্দ হলো তাই নিয়ে নিলাম। আর হ্যাঁ আমি না ডাকলে বের হবে না।”

আরাভ চলে যায়। আর ভূমি মনে হাজরো প্রশ্ন নিয়ে কাবার্ড থেকে একটা ব্লু ডেনিম জিন্স আর একটা গোলাপি কুর্তি নিয়ে ওয়াশরুমে যায়।

চলবে,,,,,,

Mahfuza Afrin Shikha.