রইলো তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-২০+২১

0
315

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[২০]

প্রাইমারি স্কুলের অংকের শিক্ষক ছিলো এক বাবা। মা ছিলো গৃহিণী। বাবা যেমন সৎ ন্যায়পরায়ণ ছিলো তেমন ছিলো স্পষ্টভাষি। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে দু’বার ভাবতো না সে। সব সময় সত্যের পথে চলেছে অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করতো না সেই বাবা। বাবার আদর্শ মেনে বড় হতে লাগলো তার দুই সন্তান। ছেলে যে বছর ক্লাস ফাইভে আর মেয়ে থ্রিতে সে বছর গ্রামের কলেরা রোগ আসে। গ্রামের প্রায় অর্ধেক মানুষ কলেরায় মারা যায় সেই সাথে মারা যায় সেই আদর্শবান বাবা মা’। রেখে যায় তাদের দুই সন্তান। চাচা চাচি সন্তান দুটোর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো সাথে নিলো গ্রামবাসী। একবেলা খাবারের জন্যে গ্রামের সকলের ধারে ধারে ঘুরলো ছেলেটা। ছেলেটা না হয় বড়, বোন। বোনটা তো ছোট ছিলো। পেটের জ্বালায় মেয়েটা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যেত। দু’দিন পর চাচা চাচি ক্ষুদার্থ দুই বাচ্চাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। কারন, ছেলেটা তার চাচির হাড়ি থেকে ভাত চুরি করে বোনকে খাইয়েছিলো। সেদিন সন্তানদুটো বাবা মায়ের কবরের পাশে বসে কান্না করলো। গ্রামের একজন মানুষও তাদের দিকে ফিরে তাকায়নি। অন্নতুলে দেয়নি। ক্ষুধার গ্রামের এক বাড়িতে রাখলের কাজ করলো ছেলেটা। রাতের বেলা দুই ভাইবোনকে এক প্লেট ভাত দিলো। দু’জনেই সেই ভাত খেয়ে রাতে মাটিতে ঘুমিয়ে যায়। তিনদিন সেই বাড়িতে রাখালের কাজ করার পর তারাও কাজ থেকে তাড়িয়ে। অসহায় হয়ে পরে ছেলেটা। ছোট্র বোনটাকে নিয়ে কোথায় কার কাছে দাঁড়াবে সে। গ্রাম ছেড়ে চলে আসে তারা। তারপর তারা দু’জনেই অনাথ আশ্রমে আশ্রয় পেলো। ছয়মাস পর শহরের এক ধনী ব্যবসায়ী আসে অনাথ আশ্রমে। যার কোন সন্তান ছিলোনা। একটা বচ্চার জন্যে তিনি অনাথ আশ্রমে আসেন আর সেখানে ব্যবসায়ী লোকটার বউ মেয়েটাকে পছন্দ করে। মেয়েটাকে তারা নিয়ে যেতে চাইলে মেয়েটা যেতে চায়না। তারা মেয়েটাকে ভালো খাবার ভালো পোষাক আর ভালো স্কুলের লোভ দেখায় তাতেও রাজি করাতে পারেনা। মেয়েটার এক কথা সে তার ভাইকে ছাড়া যাবে না। কিন্তু ওই লোকগুলো তো একটা বাচ্চা নিতে এসেছিল সেখানে দুজন তারা নিবে না। মেয়েটাকে একা নিবে। মেয়েটা একা যাবে না। অবশেষে মেয়েটার জেদের কাছে হার মেনে তারা ছেলেটাকেও সাথে নেয়। তারপরের সময়গুলো ভালোই কাটছিলো। একবছর, একবছর পর থেকে তাদের পালিত বাবা বদলে যেতে লাগে। দু ভাইবোনকে অপমান করতো। এটা নিয়ে তাদের পালিত মায়ের সাথে খুব ঝগড়া হলো। তারা মাঝে মাঝেই ঝগড়া করতো। ওরা দু ভাইবোন দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনতো আর ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে থাকতো। তাদের পালিত বাবা আর তাদের মানতে চাইতো না।তাদের আশ্রমে ফিরিতে দিতে চাইতো। তাখন তাদের পালিত মা আর তার মধ্যে খুব ঝগড়া হয়। এতটাই ঝগড়া হয় যে তাদের পালিত বাবা তার উপর হাত তুলে। এভাবেই চলে ছয় সাত মাস। তারপর একদিন রাতে ঘুম থেকে উঠে ছেলেটা দেখে বাড়ি ভর্তি মানুষ। বাড়িতে এত মানুষের কারন বুঝতে পারলো না। তাই সামনে এগিয়ে যায় সে। বসার ঘরে আসতেই দেখে তাদের পালিত মা মেঝেতে পরে আছে। হ্যাঁ রাতেই স্ট্রোক করে সে মারা গিয়েছিলো। সেদিন খুব রেগে গিয়েছিল তাদের পালিত বাবা আর দুভাইবোনকে পরে খুব মেরেছিলো।”

নরম আবেগ জড়ানো কন্ঠে কথাগুলো বলল ডেথ। ডেথ এর চোখ জ্বলজ্বল করছে।গলায় কথাগুলো আটকে গেছে।আর কোন কথা সে বলতে পারছে না। আরাভ বলল,
” গ্রামের লোকগুলো তোমার সাথে যা করেছে সেটা অন্যায়। তাই বলে তুমি নিরিহ মানুষের সাথে যা করছো সেটা কি ঠিক। কেন এতগুলো মানুষের প্রান নিলে তুমি। কি দোষ করেছিল ইশান মিমি দিয়া ইমাদ। গ্রামের ওই মানুষগুলোর সাথে তোমার পার্থক্য রইলো কই? আর ভূমি? তার অপরাধ কি ছিলো। কেন সকলের সামনে ওর সম্মান নষ্ট করলে। তুমি যানো এটা রিতিমতো সে*ক্সওয়াল হ্যারেজমেন্ট।”

আরাভের কথাশুনে শব্দকরে হাসলো ডেথ। ফোনের অপর পাশ থেকে সেই হাসি বিদঘুটে শুনালো। ডেথ তার গলার স্বর করো কঠিন করে বলল,
” যে ছেলেটা মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তার পালিত বাবার যৌ*ন চাহিদার শিকার হয়েছে তাকে তুমি সে*ওয়াল হ্যারেজমেন্ট শেখাচ্ছো। ।”

” মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?”

” আগে পুরো গল্পটা তো শুনো। মাঝখানে এত প্রশ্ন করলে হয় নাকি। ছেলেটার পালিত মায়ের মৃত্যর পর ওই নরপিশাচটা ছেলেটাকে দিয়ে তার শারীরিক চাহিদা মিটিয়েছে। যন্ত্রনায় ছটফট করেছে ছেলেটা। কত চিৎকার করেছে তার চিৎকার শুনার মতো কেউ ছিলো। তখন শুধু চিৎকার করে ছেলেটা তার মৃত্যু চাইতো। মেয়েটার কথা মনে হতেই পারেনি সে নিজের জিবন শেষ করতে। ছেলেটা না থাকলে যে মেয়েটাও এই নরপিশাচের শিকার হবে। শেষ রক্ষা আর হলো না। একদিন বাজারে গিয়েছিলো ছেলেটা , বাড়ি ফিরে দেখে তার বোনের রক্তাক্ত দেহ। ওই নরপিশাচ মেয়েটাকেও ছাড়েনি। মদ খেয়ে বারো বছরের একটা মেয়েকে রে*ব করে। বোনের রক্তাক্ত দেহ দেখার পর ছেলেটা ঠিক ঠিক করলো ওই নরপিশাচকে নিজ হাতে খুন করবে। করলও সেটাই। সেদিন, সেই মুহূর্তে ছেলেটার হাতে খুন হলো তার পালিত বাবা । আর বোনকে নরেন কাকার সাহায্যে হাসপাতালে নেয় । বাড়িতে সবাই যখন ছেলেটার পালিত বাবার মৃত্যর কারন জানতে চাইলো তখন ছেলেটা অনায়াসে মিথ্যে বলে দিলো, বাড়িতে ডাকাত এসেছিল, ডাকাতের দল তার পালিত বাবাকে খুন কর সব নিয়ে পালিয়েছে।” বিশ্বাস করো আরাভ, সেদিন সেই মিথ্যে শুনে সবাই ছেলেটার প্রতি সহানুভূতি দেখালো কতজন ছেলেটাী মাথায় হাত রেখে তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করলো। ছেলেটা সেদিন-ই বুঝেছিল, এই পৃথীবিতে বাচতে হলে, ভালো নয় খারাপ কাজ করে মিথ্যারে আশ্রয়ে বাচতে হবে।” একটা মিথ্যে ছেলেটাকে সবার সামনে ভালোমানুষ বানিয়ে দিলো। আর ছেলেটার ভিতরের থাকা খুনি মানুষটাকে কেউ জানতেই চাইলোনা। তারপর থেকেই ছেলেটা প্রতিজ্ঞা করলো, বাচতে হলে খারাপ মানুষ হয়ে বাচবে আর সবাইকে তার হাতের মুঠোয় নিয়ে নাচাবে।

” তোমার বোন এখন কোথায়?”

” সেই ঘটনার চারদিন পর বোন হসপিটালেই মারা যায়।”

আরাভের এখন কি বলা উচিৎ বুঝতে পারলো না। তাই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো সে। ডেথ এর সাথে যেটা ঘটেছে সত্যিই খুব খারাপ হয়েছে। এটা ওর প্রাপ্য ছিলো না। ডেথ ও বাকি সবার মতো পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারতো। আরাভ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
” তোমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা সত্যিই অন্যায়। তাই বলে তুমিও কি তোমার গ্রামের ওই পঙ্চাতের লোকেদের মতো করবে। এতগুলো মানুষের প্রান নিয়েও কি তোমার এই প্রতিশোধ পূর্ণ হলো না। আর ভূমির সাথে যেটা করেছো তাতে তো তোমার আর তোমার পালিত বাবার মাঝে কোন পার্থক্য দেখছি না আমি। ডেথ একখনো সময় আছে আইনের কাছে নিজেকে সমর্পণ করো, তহলে হয়তো তোমার শাস্তি কিছু কম হবে। না হলে মৃত্যু যেদিন তোমায় দু হাতে ডাকবে সেদিন কোন নিস্তার নেই।আর সেই দিনটা খুব তাড়াতাড়ি আসবে।”

” ওসব নীতিকথা আমাকে শুনিয়ে লাভ নেই আরাভ। আমি অকারনে কারো প্রান নেইনি। একটু ভালো কিছুর জন্যে তো জিবন দিতেই হবে। স্বপ্ন দেখার বয়সে স্বপ্নকেই হাড়িয়েছি আমি। তাহলে অন্যকে স্বপ্ন দেখতে দিবো কেন? তোমাকে চব্বিশঘন্টা সময় দিলাম। পারলে নিজের দেশকে বাঁচিয়ে নাও।”

কথাগুলো বলেই কল ডিসকানেক্ট করে দিলো ডেথ। আরাভ হেডফোন খুলে বাকি সবার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর সবাইকে ডেথ এর কথাগুলো বলল। সব শুনে তাহমিদ বলল,
” তাহলে মিমির মৃত্যুটা,,,,
” এক্সপেরিমেন্ট। আসলে একটা মানুষকে কি পরিমাণ দ্যা ফরবিডেন ড্রা*গ দেওয়া যাবে তার এক্সপেরিমেন্ট করেছিলো ডেথ। তাই এ ডেথ এটাকে ভালো কাজ বলেছিলো।”

তুহিন বলল,
” দ্যা ফরবিডেনের পরিমাপ তাইতো।”

” হ্যাঁ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে “দ্যা ফরবিডেন” ড্রা*গ এর প্রচলন ছিলো। তারা এই ড্রা*গ ব্যাবহার করে শত্রু নিধন করতো। সামাজিক ধন্ধ এক দেশের সাথে আরেক দেশের ধন্ধ, এসব কারনে তারা এই ড্রা*গ ব্যাবহার করতো। তখন প্রায় দু লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয় এই ড্রা*গের কারনে। আসলে তারা জানতো না এই ড্রা*গ কি পরিমান ব্যাবহার করা যেতে পারে। তাই এত মানুষের মৃত্যু। পরে যখন এই ড্রা*গ নিয়ে গবেষনা করা হলো তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ড্রা*গ ব্যাবহার নিষিদ্ধ করা হলো। এবং এই তথ্য গোপন করা হলো। কারন এই ড্রা*গ সামান্য পরিমান ব্যবহারের ফলেই মানুষ তার ভারসাম্য হাড়িয়ে ফেলে। সে আর নিজের মধ্যে থাকে না। যন্ত্রে চালিত মানব হয়ে যায়। তাকে দিয়ে যে কোন কাজ করানো সম্ভব নয়। মানে রোবটের মতো আর কি। আর পরিমানের বেশী ব্যবহারের ফল ততক্ষণিৎ মৃত্যু। তখনকার সময় মানুষ নিজের কাজ হাসিল করার জন্যে এই ড্রা*গ অন্যের উপর প্রয়োগ করতো। যার ফলে মারামারি কাটাকাটি গেলেই থাকতো। তাই মাত্র দু মাসের মধ্যে এই ড্রা*গ কে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। ইশান মিমি আর কুড়িজন ছেলের মেয়ের মাধ্যমে ডেথ এই ড্রা*গের এক্সপেরিমেন্ট করেছে।”

একদমে কথাগুলো বলে থামলো আরাভ। মাথার চুলগুলো উপরের দিকে ঠেলে লম্বা শ্বাস নিলো। সোহান বলল,
” ডেথ তো চব্বিশঘন্টা সময় দিলো। আচ্ছা এই ডেথ করতে চাইছে কি?”

তাহমিদ বলল,
” ইচ্ছে করছে একে এখুনি গলা টিপে হত্যা করি।

তুহিন আরাভের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” কি ভাবছিস? এখনো পযন্ত এই ডেথকে শনাক্ত করতে পারলাম না। ওর মাথায় কি চলছে সেটা জানবো তো দূর।”

আরাভ উঠে দাঁড়াল। সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
” কাল সকালের মধ্যে হয়তো ডেথ এর পরিচয় পাবো। এবার তোরা যায় ঘুমিয়ে পর। এত টেনশন করিস না। কাল অনেক কাজ করতে হবে।”

আরাভ টেবিল থেকে চাবি নিয়ে বলল,
” আমার বের হচ্ছি। আজ আর ফিরবো না।”

আরাভ বেড়িয়ে যায়। বাকি সবাই ওর চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঘুমাতে যায়।

_________________________
ঘড়ির কাটা রাতের দুটো বাজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আরাভের বাইক এসে থামলো ভূমির বাড়ির সামনে। ভূমির বেলকনি বরাবর দাঁড়িয়ে কল করলো ভূমির নাম্বারে। ভূমি তখন গভীর ঘুমে নিমগ্ন। বিছানায় কম্পনের ফলে ঘুম ভাঙে তার। ঘুম ঘুম মোবাইল হাতরে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুনতে পেল,
” আমি ক্লান্ত, বড্ড তৃষ্ণার্থ। একটু তোমার সঙ্গ চাই। নীলাদ্রিতা, তোমার প্রেমের পরশে আমার ক্লান্ত মনটাকে একটু শান্ত করে দিবে। আমি অপেক্ষা করছি। প্লিজ নিচে এসো।”

কল কেটে দেয় আরাভ। ভূমি মোবাইল হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকে। আসলে ঘুমের ঘোরে আরাভের কথাগুলো বুঝতে পারেনি। আর যখন বুঝতে পারলো তখন উঠে তাড়াতাড়ি বেলকনিতে চলে যায়। রাস্তার পাশে বাইকের উপর বসা যুবকটাকে তার চিনতে অসুবিধা হলো না। রুমে এসে একটা উড়না গলায় জড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

ভূমি আরাভের কাছে এসে দাঁড়াতেই আরাভ বাইক থেকে নেমে ভূমির কোমড় জড়িয়ে ওকে কাছে টেনে নেয়। ঠোঁটে আলতো চুমু খেয়ে বলে,
” অনেক কেঁদেছো?

ভূমি কথা বলল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আরাভ ভূমির চিবুক ধরে মুখটা উচু করে বলল,
” মাথা নিচু করে উঁচু করে দাঁড়াও। তুমি কোন ভুল করোনি নিলাদ্রিতা। আর আমার সামনে কখনো মাথা নিচু করে দাঁড়াবে না। তোমার সামনে মাথা নত করবো আমি। এবার উঠতো। বাইকে বস।”

আরাভ ভূমিকে ছেড়ে বাইকে গিয়ে বসলো। ভূমি বলল,
” কোথায় যাবো?”
” জানিনা। দু’চোখ যেদিকে যা চলে যাবো। আমি আমরা মুক্ত পাখি ন্যায় ডানা জাপ্টাবো। চলে যাব দূর থেকে বহু দূরে।”

চলবে,,,,,,,,,,,
#Mahfuza Afrin Shikha.

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[২১]

মোটরবাইকে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে একজোড়া কপোত কপোতী। মুক্ত পাখিয়ে ন্যায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। সামনের জন মনে অনাবিল সুখ নিয়ে বাইক চালাচ্ছে আর পিছনের জন তাকে দু-হাতে জড়িয়ে পিঠে মাথা রেখে উপভোগ করছে রাতের শেষভাগের সিগ্ধ হাওয়া। এমন সুন্দর মাতাল করা হওয়া দুজনের মনের ভিতরের সুপ্ত প্রেমকে জাগিয়ে তুলছে। ইচ্ছে করছে এমন করেই কেটে যাক আরো হাজার বছর। তারা এভাবেই পারি দিতে পারবে কয়েক হাজার বছর। আচ্ছা, প্রিয় মানুষটার সংস্পর্শে এত সুখ কেন? মনে হয় সে তার কাছে থাকলে আর কিছু চাওয়ার নাই। ভূমি আরাভের পিঠে নাক ঘসলো। আরাভের পিঠ দিয়ে হীম শীতল শ্রোত বয়ে গেলো। মনে হয় যেন বরফের রাজ্যে ভাচ্ছে সে। অধোর কামড়ে ড্রাইভ করায় মন দিলো সে। ভূমি আরো শক্তকরে আরাভকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
” ফর হোয়াট?”
” আজকের এই মুহূর্তের জন্যে। এমন সারপ্রাইজ আমায় মাঝে মাঝে দিবে।”
আরাভ হাসলো। কিছু বলল না। আরো কিছুক্ষণ পর ওদের বাইক একটা গ্রামের রাস্তায় ডুকলো। গ্রামের কাচা রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে আরাভ। কাচা রাস্তায় আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু, যার ফলে ভূমি আরো বেশী করে লেপ্টে যাচ্ছে আরাভের সাথে। কিছুক্ষণ পর আরাভ একটা নদীর সামনে এসে বাইক থামালো। আরাভ বাইক থেকে নেমে ভূমিকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে চলল নদীর তীরের দিকে। পারে এসে একটা নৌকা বাধা দেখে দু’জনে নৌকায় উঠে বসে। আচমকা ভূমিকে নিজের বুকের সাথ চেপে ধরে আরাভ। আকস্মিক ঘটনায় ভুমি কিছুক্ষণ চুপকরে থাকে তারপর আরাভের পিঠে নিজের হাত বুলায়। তারপর ভূমিকে ছেড়ে দিয়ে ভূমির মুখের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। চাঁদের সিগ্ধ আলোতে ভূমির মুখটা আরো বেশী সিগ্ধ লাগছে। আকাশের দিকে তাকালো আরাভ, ওর খুব বলতে ইচ্ছে, হেই অন্ধকারের সিগ্ধ আলোর রশ্মি, তোমার এখন ডুবে যাওয়া উচিৎ, আমার কাছে তোমার চেয়েও সিগ্ধ আমার চাঁদ আছে। মুখে বলল, “কে বেশী সিগ্ধ, চাঁদ নাকি আমার নীলাদ্রিতা। অবশ্যই আমার নীলাদ্রিতা। আরাভের এমন কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল ভূমি। আরাভ ভূমির মুখটা দু-হাতে তুলে মৃদু হাসলো। তারপর ভূমির অধোরে নিজের অধোর বসিয়ে দিলো। ভালোবাসায় আবেশে ভড়িয়ে দিতে লাগলো ভূমিকে। ভূমিও আরাভের মাথায় হাত রেখে রিসপন্স করলো। আরাভ ভূমির অধোর ছেড়ে ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে। গলায় ঘাড়ে প্রেমের উষ্ণে ভালোবাসার সাগরে ভেসে যেত লাগলো ভূমি। আরাভ ভূমির গলা ছেলে ওকে নিজের কোলে বসিয়ে দুহাতে বুকে জড়িয়ে রাখলো। ভূমিও আরাভের বুকে মাথা রেখে উপভোগ করতে লাগলো তাদের এই ভালোবাসাময় মুহূর্ত। দু’জনে চুপ। কেউ কোন কথা বলছে না। মৌনতা যেন তাদের ব্রত। শুধু একে অপরের হৃদস্পন্দন উপভোগ করছে। কিছুক্ষণ পর মৌনতা ভেঙে আরাভ বলল,

“আগামি কাল ডেথ এর মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমি।”

ভূমি অবাক। এমন সময় এই কথা সে এক্কেবারে প্রত্যাশা করেনি। নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আরাভ আরো শক্তকরে জড়িয়ে ধরে। ভূমি বলল,
” ডেথ! আচ্ছা ডেথ কে জানতে পেরেছো?”

” নাহ তবে সন্দেহ করছি। আমার সন্দেহ সঠিক হলে কাল সকালেই জানতে পারবো।”

” তুমি কাকে সন্দেহ করছো?”

” মনিরুল স্যারকে।”

” মনিরুল স্যার।” অবাক হয়ে বলল ভূমি।

” হ্যাঁ। দিয়াকে ড্রা*গ দিয়ে ওকে হ্যালুশোলেট করা। দিগন্তকে নিজের হাতের তৈরী করা কেক খাওয়ানো আর ডিটেকটিভ বয় ডাকটা। এই ডাকটাই আমার সন্দেহের প্রধান কারন।”

“মনিরুল স্যার এমনটা করেছেন। ভাবতেই পারছিনা। স্যারকে কত ভালো করছিলাম।”

” প্রত্যেক জিনিসের দুইটা দিক থাকে। একটা ভালো অপরটা মন্দ। মনিরুল স্যারের সাথে যেটা হয়েছে সেটা খুব খারাপ হয়ে। দেশ এবং দেশের প্রতি পচন্ড ঘৃনা আর রাগ থেকে এমন একটা পথ সে বেছে নিয়েছে। অতিরিক্ত রাগ আর ঘৃনা দুটোই মনুষ্যজাতির জন্যে অভিশাপ। ঘৃনার থেকে মানুষের ভিতরে যে প্রতিশোধপরাণ মানুষটা তৈরী হয় সেটা খুব ভয়ংকর। জ্বলন্ত অগ্নিগিরি মতো। সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। হয়তো তার জায়গায় থাকলে আমিও এমন কিছু করতাম। আমার তার প্রতি কোন রাগ নাই। তবে দেশের এই সাধারণ মানুষজনের জন্যে তাকে আটকাতেই হবে।”

কথা বলতে বলতে আরাভের হাত আলগা হয়ে আসলো। ভূমি সোজা হয়ে বসে বলল,
“দেশের প্রতি তার এত ঘৃনা?”
” হুম।আমার একটা কথা রাখবে নীলাদ্রিতা?”
” বলো।”
” কাল রাত বারোটার ওর কি হবে সেটা কারো জানা নেই। তবে ডেথ এমন কিছু যা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তুমি আমায় কথা দাও, যা কিছু হোক তুমি নিজেকে শক্ত রাখবে। একদম ভেঙে পরবে না।আমি না ফেরা পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হবে। নিজেকে শক্তরেখে সত্যের মুখোমুখি হয়ে সবটা সামলাবে।”

ভূমির মন অজানা আতঙ্কে শিউরে উঠলো। দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো। কম্পায়িত হাত রাখলো আরাভের গালে। আরাভ ভূমির হাতের উপর হাত রেখে তাতে ঠোট ছোঁয়ালো। ভূমি বলল,
” তোমার কিছু হবে না তো।”
” আমার কিচ্ছু হবে না। আমার কিছু হতেই পারেনা, না হলে আমার নীলাদ্রিতার কি হবে। আমার নীলাদ্রিতার জন্যে হলেও আমাকে ঠিক রাখতে হবে। তুমি শুধু কথা দাও নিজের খেয়াল রাখবে।”

ভূমি শক্তকরে আরাভকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” তুমি ঠিক থাকলেই আমি ঠিক থাকবো।”

আরাভ ভূমিকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো চুপচাপ। ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটে উঠছে। চাঁদমামা ডুবে যাচ্ছে তার কুলায়।চারিদিকের নিকষ কালো অন্ধকার কাটিয়ে একটু একটু করে দিনের আলোয় আলোকিত হচ্ছে এই রঙিন দুনিয়া। আরাভ আর ভূমি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উপভোগ করে ভোরের আলো ফুটে উঠার দৃশ্য।পূর্ব আকাশে যখন সূর্যিমামা উকি দিচ্ছে তখন আরাভ ভূমিকে নিয়ে সেখান চলে আসে। প্রায় সাতটার দিকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো আরাভ আর ভূমি। ভূমি আরাভের রুমে দিয়ে এলো ঘুমানোর জন্যে। আর নিজে গেলো মায়ের রুমে। অনিমা বেগম বিছানা ঘুচাচ্চিলেন এমন সময় আরাভ বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,

” মা, মাথায় একটু জাত বুলিয়ে দাওয়া ঘুমাবো।”
” সে কিরে এখন ঘুমাবি কেন? কলেজে যাবিনা আজ?”
” আজ যাবোনা। তুমি এখানে বসতো। আমায় মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।”

অনিমা বেগম মুচকি হাসলেন। এই ছেলের পাগলামি এখনো গেলো না। মৃদু হেসে ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আরাভ অনিমা বেগমের কোলে মাথা তুলে দিলেন। দু’চোখ বন্দ করে বলে,
” ঠিক দশটার দিকে ডেকে দিবে। আচ্চা মা আজ সকালের মেনু কি?”
” কি খাবি বল।”
” তোমার হাতের স্পেশাল ভুনা খিচুড়ি খাওয়াবে।”
” ঠিক আছে। তুই ঘুমা আমি রান্না করবো।”

আরাভ আর কিছু বলল না। চোখ বন্ধকরেই ঘুমানোর প্রচেষ্টা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে বলে উঠলো,
” আমার রুমে ভূমি আছে। ওর জন্যেও রাধবে মা।”

অনিমা বেগম হাসলেন। মৃদু হেসে মাথা নাড়ালেন। তবে সেটা আরাভের চোখে পরলোনা। মনের সুখে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন অনিমা বেগম।”

_____________________
দ্রুত হাতে লেপটপে কিছু টাইপ করছিলো মনিরুল ইসলাম। তার কিসের এত ব্যাস্ততা কে জানে। সমস্ত ধ্যানজ্ঞান দিয়ে লেপটপে কিছু টাইপিং করছে। এদিকে দিগন্ত কখন থেকো ডোর নক করছে শুনতে পারছে না সে। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুখের বিরক্তির শব্দ করলো। তারপর বিনা পারমিশনের রুমে ডুকে পরলো। সামনে কারো ছায়া দেখে হচকচিয়ে উঠেন মনিরুল ইসলাম। চমকে উঠে সামনে তাকিয়ে দিগন্তকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি তুলার বৃথা চেষ্টা করলো। দিগন্ত স্মিত হেসে বলল,
” সরি। আসলে অনেকবার নক করার পরেও আপনি রিসপন্স করছিলেন না তাই বিনা পারমিশনল চলে আসলাম। আপনি কি ব্যাস্ত।”

মনিরুল ইসলাম ইতস্ততভাবে একটু হাসলো। যেটা চোখ এড়ালো না দিগন্তের। অতঃপর বলল,
” না না একদম-ই নয়। আপনি বসুন না প্লিজ।”

দিগন্ত স্মিত হেসে মনিরুল ইসলামের সামনের চেয়ার টেনে বসে পরলো। তারপর তার সাথে কিছু কথা বলে নিলো। দিগন্ত উঠে চলে যাচ্ছিল এমন সময় বলল,
” আজ তো আপনার আমাদের ডিপার্টমেন্টে যাওয়ার কথা। কখন যাচ্ছেন।”

” এইতো কিছুক্ষণ পরেই রওনা দিবো।”

” আমি কি যাব আপনার সাথে। না যদি কোন প্রয়োজন পরে।”

” তার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি আপনার কাজ করেন। আমি চলে যেতে পারবো। আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন?”

” আরাভের বসায় যাবো। একটু কাজ আছে।”

” আচ্ছা।” দিগন্ত চলে যাওয়ার জন্যে সামনের দিলে পা বাড়াতেই মনিরুল ইসলাম পিছু ডাকলো। তারপর একটু ইতস্তত টেবিলের উপর একটা চকলেট রাখলো। তারপর বলল,
” আমার নিজের হাতের বানানো। খেয়ে দেখেন ভালোলাগবে।”

দিগন্ত চকলেট হাতে নিয়ে মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলল,
” পরে খেয়ে নিবো।”

” এই না না, আপনি এখুনি খেয়েনিন।” তড়িৎগতিতে বলল মনিরুল ইসলাম। দিগন্ত তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো এময় তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। দিগন্ত চকলেট পকেটে পুরে মোবাইল হাসে নিয়ে মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলল, চকলেটের জন্যে ধন্যবাদ। খেয়ে অবশ্যই জানাবো।” তারপর কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে যায়।

দিগন্তের চলে যাওয়ার পর মনিরুল ইসলাম রহস্যময় হাসি দিলো। তার এই হাসির এই অর্থ বুঝা দায়। দ্রুত হাতে টাইপিং করতে করতে বিড়বিড়াল,
” তোমদের চলন ডালে ডালে আর আমি থাকি মূলে। কান্ড সহ পাতার খবর আমার জানা। যাই হোক এবার তাহলে মুখোমুখি দেখা হচ্ছে।”

আরাভ ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই চোখ আটকে গেলো রান্নাঘরে যেখানে অনিমা বেগম রান্না করছেন আর ভূমি তাকে হেল্প করছে। আরাভ নিঃপলক সেদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ঠোঁটের কোনে তার হাসির আভা। মনে মে বলল,
” আমি তো এভাবেই দেখতে যেচেছি আমার পরিবারকে। তবে একটু কমতি লাগছে। ছোট্টবাচ্চা ছাড়া বাড়িটা শূন্য কুলার মতো মনে হয়। আজকের কাজটা শেষ করি। তারপর খুব তাড়াতাড়ি আমি আমার বাড়ি পূর্ণ করে ফেলবো।”

আরাভ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
” মা আর কতক্ষণ লাগবে।”

অনিমা বেগম রান্নাঘর থেকে জবাব দিলেন,
” এইতো হয়েগেছে তুই ড্রাইনিং এ বস।”

অনিমা বেগম খাবার পরিবেশন করছেন আরাভ আর ভূমি পাশাপাশি বসে আছে। ভূমি অনিমা বেগমকে বলল,
” মামনি তুমিও বসোনা। আমরা সবাই একসাথে খাই।”

” তুই শুরু কর আমি বসছি।”

সবাই মিলে এক সাথে গল্প বলার ফাকে খাবার খাচ্ছে। এমন সময় আরাভের সেলফোনটা বেজে উঠে। স্কিনে ডিটেকটিভ নামটা জ্বলজ্বল করছে। আরাভ কিছুক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থেকে কল রিসিভ করলো। নরম কোমল শান্ত কন্ঠে বলল,
” কাজ হয়েছে?”
ওপাশ থেকে দিগন্ত বলল,
” হুম। ভাগ্যিস ঠিক সময়ে সোহান কল করেছিলো না হলে আমাকে হয়তো চকোলেটটা খেতে হতো।”
” ওটা ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠিয়ে দাও। আর হ্যাঁ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি ফরেন্সিক রিপোর্ট চাই।”
” ঠিক আছে।”
কল কেটে দিলো দিগন্ত। আরাভ আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

________________________
রুমজুরে পায়চারী করছে আর হাতের তালু ঘসছে আরাভ। তাহমিদ তুহিন আর সোহান পিসির সামনে বসে মনিরুল ইসলামের এর সম্বন্ধে তথ্য বের করার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ আগেই দিগন্ত ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে দিয়েছে। হ্যাঁ দিগন্তকে দেওয়া সেই চকলেটের মধ্যে “দ্যা ফরবিডেন” ড্রা*গ পাওয়া গেছে।এখন সবাই সিউর এই ডেথ আসলে মনিরুল ইসলাম। তাই তারা সকলে মিলে মনিরুল ইসলামের বায়োডাটা চেক করছে। এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে মধ্যে মনিরুল ইসলামের পালিত বাবা মায়ের নাম আর ওনার বর্তমান বাসস্থান সম্পর্কে জেনেছে। তবে মনিরুল ইসলাম কি করতে চাইছে সেটা এখনো অজানা। আরাভ সারা রুমজুরে পায়চারী করেও কিছু বুঝতে পারলো না। এদিকে বিকাল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে প্রায়। কোন কোল খুঁজে পাচ্ছে না আরাভ সহ তার সঙ্গিরা। কিছুক্ষণ পর আরাভের ফোনে দিগন্তের কল আসলো। ওপাশ থেকে দিগন্তের কথা শুনে আরাভ স্তব্ধ হয়ে গেল। পুরো জ্ঞান শূন্য হয়ে পরে আরাভের মাথা। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠে,
” স্যারকে এখনি হসপিটাল এডমিট করো।”

দিগন্তের সাথে কথা বলার সময় আরাভের উত্তেজনা দেখে তাহমিদ প্রশ্ন করে,
” এমন ছটফট করছিস কেন? ওদিকে সব ঠিক আছে তো?”
” না ঠিক নেই। কিচ্ছু ঠিক নেই।”
” কি হয়েছে?”
” ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের গোপন ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। যেহেতু এটা স্ট্রোং পাসকোড দেওয়া ছিলো এবং সিকিউরিটি খুব প্রবল। পাসকোড ছাড়া এটার ভিতরে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে সাইলেন বেজে উঠলো। তাই ডেথ আজ ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সেখানকার প্রধান রফিক মির্জাকে দ্যা ফরবিডেন ড্রা*গ দিয়ে তাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পাসকোড জেনে নিয়েছে।”

” ওহ মাই গোড। এটা তো সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার। এবার উপায় কি?” উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করলো তুহিন।”

” রাত বারোটার পর ডেথ দেশের সমস্ত গোপন তথ্য নিয়ে অন্যদেশ চলে যাবে। তারপর সেখানে আমাদের দেশের তথ্য বিক্রি করে দিবে। তোরা বুঝতে পারছিস আমাদের দেশ এখন কতটা হুমকির মুখে।”

” এমনটা হতে দেওয়া যাবে না।”

” আমি বের হচ্ছি। তোরা ডেথ এর সমস্ত ইনফোরমেশ কালেক্ট কর। তারপর চলে আসবি মনিরুল স্যারের এর ঠিকানায়। আর তাহমিদ তুই আমাকে মনিরুল স্যারের পালিত বাবা ঠিকানা দেয়।”

” মনিরুল স্যারের পালিত বাবার ঠিকানা দিয়ে তুই করবি।”

” স্যার ওখানেই আছেন। চারিদিকে যখন ঘৃনা আর বিতৃষ্ণায় মন ভরে উঠে তখন একটু ভালোবাসা পেলে মন সেখানেই ঠায় পেতে চায়। মনিরুল স্যার তার পালিত বাবাকে যতটা ঘৃনা করতেন ঠিক ততটাই ভালোবাসতেন তার পালিত মাকে। তাই তার শেষ সময়টুকু তিনি তার পালিত মায়ের স্মৃতি সাথে কাটাতে চান। আর এটাই হিউম্যান সাইকোলজি।”

কথাগুলো বলে বেড়িয়ে যায় আরাভ। আর বাকিরা তাদের কাজে লেগে পরে। আরাভ সেখান থেকে সোজা নিজের বাড়ি চলে আসে। ভূমও তখনো ওদের বাড়িতেই ছিলো। আরাভ বাড়ি যেতেই ভূমি একগাল হেসে আরাভের সামনে এসে দাঁড়ায়। আরাভ ভূমিকে পাশ কাটিয়ে নিজের কাবার্ড থেকে একটা লাল হুডির মতো জ্যাকেট নিয়ে ভূমির সামনে এসে দাঁড়িয়ে ভূমির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়। পিছন থেকে ভূমি প্রশ্ন করে,
” এটা কিসের জ্যাকেট?”
” এটা বুলেট প্রুফ।”

আরাভ পিছন ফেরে বলে, মায়ের একটু খেয়াল রেখো। আমি আসছি।” আরাভ বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার সময় অনিমা বেগমের রুমে উকি দিয়ে দেখে অনিম। বেগম মনের যত্নে আরাভের জন্যে সুতার গেঞ্জি তৈরী করছে। আরাভ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর সে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে।

চলবে,,,,,,,,,

#Mahfuza Afrin Shikha.